আলমারি – নরেন্দ্রনাথ মিত্র

আলমারি – নরেন্দ্রনাথ মিত্র

স্ত্রীর সঙ্গে রোজ ঝগড়া হয় পরিতোষ সরকারের। দামি কাপড়চোপড় রাখবার মতো একটা আলমারি নেই ঘরে। ট্রাঙ্কে সুটকেসে অতি কষ্টে জিনিসগুলি গুঁজে গুঁজে রাখতে হয়। একটা কিছু বার করতে হলে একেবারে লণ্ডভণ্ড, কুরুক্ষেত্র কাণ্ড। সুপ্রীতি বলে, “আমি আর পারব না তোমার ঘর গোছাতে। আর এই দামি দামি জিনিসগুলি যদি নষ্ট হয় তার জন্যেও আমাকে দায়ী করতে পারবে না।” পরিতোষ নির্লিপ্ত থাকবার ভাণ করে বলে, “বেশ, করব না দায়ী। সব দোষ তুমি আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ো।” সুপ্রীতি রাগ করে বলে, “দোষ চাপালে আর কী হবে! গেলে আমার জিনিসই সব যাবে।”

তা ঠিক। বসনভূষণের ভাগ সুপ্রীতিরই চৌদ্দ আনা। পরিতোষের নিজস্ব বলতে আছে একটা গরদের পাঞ্জাবি, পৈতৃক আমলের একখানি শাল। বিয়ের পাওয়া আংটি আর সোনার বোতাম। পরিতোষ কিছুতেই ব্যবহার করে না। ওর নাকি লজ্জা করে। তবে ঘড়ি আর পেনটি সঙ্গে সঙ্গেই রাখে। সুপ্রীতি খোঁচা দিয়ে বলে, “ও-সবও তো গয়না। ওগুলিও তো আমার বাবার দেওয়া জিনিস।”

পরিতোষ জবাব দেয়, “তোমার বাবার দেওয়া সব জিনিসের ওপরই যে আমার বিরাগ একথা, বলতে পার না।” সুপ্রীতি বলে, “থাক থাক, আর রসিকতা করতে হবে না। তুমি যে কত ভালবাস আমাকে তা জানা আছে।”

বছর দশেক হল বিয়ে হয়েছে ওদের। তার এক বছর পর থেকেই এ ধরনের খোঁটা শুনতে হচ্ছে পরিতোষকে। শুনতে শুনতে কান-সওয়া হয়ে গেছে।

কিন্তু পত্নীপ্রীতির যে নিদর্শন সুপ্রীতি স্বামীর কাছে চায় তা এনে দেওয়া তার পক্ষে দুঃসাধ্য। গ্লাস-বসানো ইস্পাতের আলমারির দাম অন্তত শ’তিনেক টাকা। পরিতোষের দেড় মাসের মাইনে। বিমা কোম্পানির কেরানি যদি অমন নবাবি করে তার সংসার থেকে ছ’মাসের মধ্যে অভাব-অনটন দূর হবে না। শুধু স্ত্রীর আবদার মেটালেই তো চলবে না পরিতোষকে। সংসারে পোষ্য অনেক। দুটি ছেলেমেয়ে হয়েছে। একটি বোন কলেজে পড়ে। ভাইটিও সামনেবার স্কুলের গণ্ডি ছাড়বে। খরচ কি কম! পরিতোষ আরও যুক্তি দেখায়, “তা ছাড়া অমন দামি আর ভারী জিনিস ভাড়াটে বাড়িতে এনে রাখতে নেই। টানাটানিতে কম হাঙ্গামা-হুজ্জোত পোহাতে হয়? কোথায় কখন থাকি তার কি কিছু ঠিক আছে? আমাদের তো সারা শহর ভরে বাসঘর আর বাসরঘর ছড়ানো। আজ বেলেঘাটা—কাল পাথুরেঘাটা, আজ টালা, কাল টালিগঞ্জ। একটু স্থিত হয়ে বসে নিই—।”

সুপ্রীতি বলে, “হুঁ, কবে তুমি চৌরঙ্গিতে বাড়ি করবে তারপর সব ফার্নিচার আসবে, সেই ভরসায় থাকি।” দু-চারদিন যায়, আর সুপ্রীতি সেই আলমারির কথা তোলে। বলে “আজও গিয়েছিলাম বিডন রোয়ে সুচিরাদের বাড়ি। কী চমৎকার আলমারিই না কিনেছে। শাড়ি রাখ, গরম কাপড়চোপড় রাখ, সব ব্যাপারেই সুবিধে। গয়নাগাটিও বেশ নিশ্চিন্তে রাখা যায়। কেউ খুলে নিয়ে যাবে এমন সাধ্য নেই। অনেকগুলি ড্রয়ার। যেটায় যা খুশি রাখ। তারপরে গ্লাস সেট করা আছে। তুমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে তার সামনে বসে দিব্যি দাড়ি কামাতে পারবে।” পরিতোষ চোখ কপালে তুলে বলে, “ওরে বাবা। ওই আলমারি যদি একবার কিনে বসি তা হলে কি সারা জীবনের মধ্যে আমার ব্লেড কেনার পয়সা জুটবে?”

সুপ্রীতি রাগ করে পাশ ফিরে শুতে শুতে বলে, “না জোটাই উচিত। তুমি দাড়ি গোঁফ রেখে বনে চলে যাও। বিয়ে করাই তোমার ভুল হয়েছিল।”

পরিতোষ স্বীকার করে, বলে, “ভুলটা বড় পরে ধরা পড়েছে। এখন আর শোধরাবার জো নেই। কিন্তু তুমি বোধ হয় এখনও শোধরাতে পার। সুচিরাদের বাড়িতে কিছুদিন যাতায়াত বন্ধ করে দাও। তাহলে জিনিসটা তোমার চোখেও পড়বে না, মনও খারাপ হবে না।” সুচিরা দত্ত কলেজে বছর দুই সুপ্রীতির সহপাঠিনী ছিল। বড় ডাক্তারের মেয়ে। মেজো ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে।

সে-রাত্রে সুপ্রীতি পরিতোষের সঙ্গে কিছুতেই কথা বলল না। তাতে পরিতোষ যে খুব চিন্তিত হল তা নয়। এমন মানভঞ্জনের পালা দাম্পত্য-জীবনে ঘুরে ফিরে আসে। না আসলেই বরং জীবন একঘেয়ে হয়ে যায়। কিন্তু দিন দুই বাদে যে কাণ্ড ঘটল তাতে পরিতোষ আর অত অবিচলিত থাকতে পারল না। অফিস থেকে ফিরে ঘরে এসে ঢুকতে না ঢুকতেই ছোট ভাই অঞ্জলি আর তার ছোট রন্টু একসঙ্গে এসে খবর দিল, “দাদা, সর্বনাশ হয়েছে।”

পরিতোষ উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “কী হয়েছে রে? খোকন আর বুড়ি কোথায়? কোন অ্যাকসিডেন্ট টেন্ট?” অঞ্জলি আশ্বাস দিয়ে বলল যে, সে সব কিছু নয়। পরিতোষের ছেলেমেয়ে দুটি ভালই আছে। কিন্তু সর্বনাশ হয়েছে তার স্ত্রীর। ট্রাঙ্কের ভিতরে পোকা ঢুকে বেনারসি আর মুর্শিদাবাদি সিল্ক দু’খানাই কেটে ফেলেছে। ঘরের দিকে ভাল করে তাকিয়েই ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার বুঝতে পারল পরিতোষ। সারা ঘরময় সুপ্রীতির পোশাকি শাড়িগুলি ছড়ানো। পুজোর সময় আর বিবাহবার্ষিকীতে পঁচিশ ত্রিশ টাকার যে সব শাড়ি পরিতোষ স্ত্রীকে উপহার দিয়েছে। সব মেঝেয় লুটোপুটি খাচ্ছে। আর পাশের ঘরে তক্তাপোষের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ফুলে ফুলে কাঁদছে সুপ্রীতি। এক পাশে কীটদষ্ট বেনারসিখানা পড়ে রয়েছে। দোরের কাছে বিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে খোকন আর বুড়ি। পরিতোষের সাত আর পাঁচ বছরের দুটি পুত্রকন্যা। পরিতোষ স্ত্রীর পিঠে সস্নেহে হাত রেখে বলল, “বোধহয় এখনও রিপু করিয়ে নিলে চলবে। আর অন্য শাড়িগুলিও বাক্সে তুলে রাখ। নষ্ট করে লাভ কী।”

সুপ্রীতি বলল, “তুলে আর কী হবে। ওই ভাঙা বাক্সে তুলে রাখাও যা, বাইরে ফেলে দেওয়াও তাই। একই কথা। আমার কিছু আর রাখবার দরকার নেই। তুমি রাখতে হয় রাখো।” শেষ পর্যন্ত পরিতোষ প্রতিশ্রুতি দিল, এক সপ্তাহের মধ্যে সুপ্রীতির পছন্দমতো আলমারি সে কিনে আনবে। একই সঙ্গে যা মজবুত আর শৌখিন। বড় আয়না-বসানো আলমারি। পাশাপাশি দাঁড়ালে, দু’জনের প্রতিচ্ছবি যাতে ফুটে উঠবে। ঘরে একখানা বড় আয়না না থাকলে কি চলে। আয়নায় তো শুধু মুখই দেখা যায় না, সুখও দেখা যায়। দু’খানা সুখী পরিতৃপ্ত মুখের প্রতিবিম্ব। তার চেয়ে বড় ঐশ্বর্য আর কী আছে।

আলমারি তো কিনবে। কিন্তু তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা কোথ্থেকে জোগাড় করবে পরিতোষ। হাজার দুই টাকার ইনসিওরেন্স আছে। তার থেকে… ধার নেওয়া যায়। কিন্তু সুপ্রীতি বলল, “খবরদার ও টাকায় তুমি হাত দিতে পারবে না।”

ব্যাঙ্কে একটা নামমাত্র অ্যাকাউন্ট আছে। সর্বসাকুল্যে তাতে শখানেক টাকাও হবে কি না সন্দেহ। পরিতোষ বলল, “নিজেদের আলমারি কিনতে গিয়ে কি পরের সিন্দুকে হাত দেব?”

সুপ্রীতি বলল, “কে তা দিতে বলছে? দরকার নেই এখন কিনে। পুজোর সময় যদি বোনাস টোনাস পাও তখন দেখা যাবে।”

কিন্তু পরিতোষের মনটা খুঁত খুঁত করতে থাকে। কথা যতদিন দেয়নি ততদিন একরকম ছিল। কিন্তু কথা দেওয়ার পর জিনিসটা কিনে না আনতে পারলে স্ত্রীর কাছে আর মান থাকে না। সুপ্রীতি তাহলে ভাববে পরিতোষ একেবারেই পথের ফকির। এত বড় শহরে তিনশো সাড়ে তিনশো টাকা সংগ্রহ করে আনবার মতো ক্ষমতা নেই তার।

সুতরাং পরিতোষ ধারের চেষ্টায় নামল। ক্রেডিট মানে কৃতিত্ব। যার যত ধার বেশি, তার বুদ্ধির ধার তত অসামান্য। গোপনে দুজন সহকর্মী অফিসারের কাছ থেকে শ’খানেক টাকা নিল। পুরনো সহপাঠীদের মধ্যে একজন ইটের কারবার করে। টোকা দিয়ে দেখল সুরথের হৃদয় অতখানি শক্ত হয়ে যায়নি। জরুরি দরকার এবং অসুখবিসুখের দোহাই দেওয়ায় সে শ’দুই টাকা দিল। বাকি পঞ্চাশ টাকা তুলল। নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে। মনটা তবু খুঁতখুঁত করতে লাগল, কোথায় যেন হীনতা আছে এই ধার করার মধ্যে। বন্ধুদের কাছে হাত পাততে গেলে যে হতমান হতে হয় তাতে পরিতোষের কোনও সন্দেহ নেই।

টাকা জোগাড় হওয়ার পর সেদিন বিকাল বেলায় স্ত্রীকে নিয়ে যখন জিনিস কিনতে বেরুল তখন মনে আর তেমন কোন গ্লানি রইল না পরিতোষের। এই উপলক্ষে সে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। সুপ্রীতির নিষেধ সত্ত্বেও শ্যামবাজার থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে চলল বড়বাজারের দিকে। পথে স্ত্রীকে নিয়ে ভাল একটা রেস্টুরেন্টে খেল। সুপ্রীতি হেসে বলল, “জিনিসটা আগে কেনা হোক। পথেই যদি এত টাকা উড়িয়ে দাও তাহলে জিনিস কিনবে কী করে।”

পরিতোষ বলল, “বিশ্বাস কর, এই কটা টাকা ওড়াবার শক্তি আমার আছে।”

সুপ্রীতি বলল, “কিন্তু কেন এত ব্যয় করছ শুনি। আজ তো আমার ম্যারেজ অ্যানিভারসারি নয়, কি অন্য কোন উৎসব-টুৎসব নয়।”

পরিতোষ বলল, “আজ আলমারির জন্মোৎসব। আর সে আলমারি শুধু ইস্পাত দিয়ে তৈরি নয়, আমাদের দু’জনের আনন্দ দিয়ে তৈরি।”

সুপ্রীতি বলল, “থাক, কবিত্ব রাখ। ফুলটুল কেনার সময় ওরকম কবিত্ব মানায়।”

পরিতোষ প্রতিবাদ করল, “আর আলমারির বেলায় বুঝি কবিত্ব বেমানান? আজকালকার কবিদের ও ধরনের পক্ষপাত নেই।” নেতাজী রোডে গাড়িটাকে জোর করে ছাড়িয়ে দিল সুপ্রীতি। বলল, “আর মিটার বাড়িয়ে লাভ নেই। এবার হেঁটে হেঁটে দেখতে দেখতে চল।”

পরিতোষ বলল, “অন্য জিনিস দেখব কী। তোমাকে দেখে দেখেই কূল পাইনে।”

সুপ্রীতি মুখ টিপে হেসে বলল, “সত্যি?”

পরিতোষ বলল, “সত্যি ছাড়া কী। এমন সাজ সেজে এসেছ যে চেনাই যায় না।”

সুপ্রীতি খুশি হয়ে বলল, “বাড়াবাড়ি কোরো না।”

ওরা প্রথমে নামজাদা দোকানের দামি জিনিসগুলি দেখতে লাগল। জিনিস দেখে চোখ লুব্ধ হয়, কিন্তু দাম শুনে সেই চোখই আবার কপালে ওঠে। সুপ্রীতি বলল, “অত দামি জিনিস কিনে দরকার নেই। তা ছাড়া দেখেনি আরও পাঁচটা দোকান। এত দামের জিনিস নেব, যাচাই করে নেব না?”

দেখতে দেখতে ওরা অপেক্ষাকৃত ছোট একটা দোকানে উঠল। চন্দ অ্যাণ্ড কোম্পানি। কয়েকটা আলমারি ভালই দেখা গেল। বড় দোকানের অনুকরণে তৈরি হলেও জিনিস খারাপ নয়, দেখতেও বেশ সুন্দর। সেলসম্যান দাম বলল, আড়াইশো। আশ্চর্য, সুচিরার ঘরে যা দেখে এসেছে সুপ্রীতি, অবিকল সেই রকম। শুধু কোম্পানির নাম আলাদা। কত বেশি কমিশন চন্দ কোম্পানি দিতে পারবেন তাই নিয়ে কথাবার্তা চলছে হঠাৎ পিছনের অফিসরুম থেকে স্যুটপরা সুদর্শন এক ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন। বয়স বছর পঁয়ত্রিশ ছত্রিশের বেশি নয়। ছিমছাম শৌখিন পুরুষ।

সুপ্রীতি তার দিকে চেয়ে একটুকাল অবাক হয়ে থেকে বলল, “নির্মলদা তুমি এখানে?”

সেলসম্যান বলল, “আমাদের বড়বাবু মিঃ চন্দ। ওঁদেরই তো কোম্পানি।”

সুপ্রীতি খুশি হয়ে বলল, “তাই বল!”

নির্মল বলল, “এবার আমি জিজ্ঞেস করছি, তুমি এখানে!”

সুপ্রীতি বলল, “আলমারি কিনতে। কিন্তু বড্ড বেশি দাম তোমাদের দোকানে।”

নির্মল স্মিতমুখে বলল, “তা দাম তো একটু হবেই। জিনিস নেবে দাম দেবে না?”

নির্মল নিজেই যেচে পরিচয় করল পরিতোষের সঙ্গে। নিজেরও পরিচয় দিল। বলল, “সুপ্রীতি আমাদের অঙ্কের প্রফেসারের মেয়ে। অঙ্কের চেয়ে বেশি ভয় করতাম ওকে। এত উৎপাত করত। রাজসাহী শহর সুদ্ধ লোক ওর জ্বালায় অস্থির ছিল।”

জ্বালাটা কী রকমের, অস্থিরতাই বা কী ধরনের তা পরিতোষ নির্মলের মুখের দিকে চেয়ে অনুমান করতে চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠল না। নির্মলের মুখে হাসি, চোখে চাতুর্য। চেহারায় আভিজাত্য।

খানিকক্ষণ ধরে কুশল প্রশ্নের বিনিময় চলল। পরিতোষের কানে কয়েকটি অশ্রুতপূর্ব সর্বনাম। যেন সাঙ্কেতিক শব্দ কয়েকটি। যে সঙ্কেত ভেদ করবার চাবি তার কাছে নেই। তারপর নির্মল জিজ্ঞাসা করল, “কোন আলমারিটা তোমার পছন্দ তাই বল।” সুপ্রীতি উল্লাসের সুরে বলল, “পছন্দ তো সবগুলিই।”

নির্মল বলল, “বেশ তো, সবই নাও। পাইকারি দরে দিতে পারব।”

পরিতোষ হাতঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল, “আমার একটু তাড়া আছে। একটা আলমারিই নেব আমরা।”

নির্মল বলল, “বেশ তো।” কিন্তু মুশকিলের কথা হল, নির্মল কিছুতেই দাম নেবে না। সুপ্রীতি দামের কথা তোলায় হেসেই উড়িয়ে দিল নির্মল। ধমকও দিল দুটো-একটা। পরিতোষের দিকে চেয়ে বলল, “ওর বিয়ের সময় দেশে ছিলাম না। তখন কিছুই প্রেজেন্ট করতে পারিনি। আজ এটা ওকে দিলাম।”

সুপ্রীতি তবু বলল, “না না সে কি হয়।”

নির্মল বলল, “না হয় তো তোমার মাসিমার কাছে দাম দিয়ে এসো। আমি নিতে পারব না।” মাসিমা মানে নির্মলের মা। তিনি এখনও বেঁচে আছেন। শেষ পর্যন্ত আলমারিটা বিনামূল্যেই সুপ্রীতিকে গছিয়ে দিল নির্মল। সুপ্রীতি একান্তে স্বামীকে বলল, “আচ্ছা দানটা আমরা অন্যভাবে শোধ দিয়ে দেব।”

পরিতোষ নিঃশব্দে রাস্তায় নেমে এল। ধার করা টাকাগুলি এবার সে অনায়াসে শোধ দিতে পারবে। কিন্তু অত বড় আলমারিটা যে ঘর জুড়ে থাকবে তাকে ভুলবে কী করে?

১০.০৬.১৯৫৬

লেখক পরিচিতি

নরেন্দ্রনাথ মিত্র: ৩০ জানুয়ারি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলার সদরদিতে জন্ম। শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে সেখানেই। তার পর কলকাতায়। ১৯৩৬-এ প্রথম গল্প ‘মৃত্যু ও জীবন’ প্রকাশিত হয়। ১৯৪৫-এ বেরোয় প্রথম গল্প সংকলন ‘অসমতল’। গল্পগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। ১৯৬২ সালে আনন্দ পুরস্কার। মৃত্যু: ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *