আলতো পায়ের আওয়াজ
‘খস খসখস…’
আওয়াজ হচ্ছে। অনেকটা ফিসফিসানির মতো। এতো হালকা, আলতো আওয়াজে ঘুম ভাঙার কথা নয়, আমার ভাঙল। বেশ কয়েকদিন হল আমার ঘুম হচ্ছিল ছেঁড়া ছেঁড়া। কখনও কখনও কখন ঘুমোই, কখন জেগে থাকি, কখন স্বপ্ন দেখি গুলিয়ে যায়। গত কয়েকদিন অবশ্য ওষুধ খেয়ে সমস্যা সামলেছি। সমস্যা কি আবার ফিরে এল? এই আলতো আওয়াজও কি স্বপ্নের মধ্যে শুনছি? দরজা খুলে একবার দেখব?
‘খস খসখস…’
না স্বপ্ন নয়, সত্যিকারের আওয়াজ। হাঁটবার আওয়াজ। কেউ আসছে। আলতো পায়ে আসছে। পায়ে চটিও নেই। আওয়াজটা খুব দূরের নয়, আবার খুব কাছেরও নয়। এই এই ঘরে তো নয়ই, এমনকি এই ফ্ল্যাটের মধ্যেও নয়। আওয়াজ ভেসে আসছে বাইরে কোথাও থেকে। সিঁড়ি দিয়ে কেউ উঠে আসছে? কে আসছে চন্দন? চন্দন কি তবে মাঝপথেই ট্যুর থেকে ফিরে এল? কিন্তু চন্দন তো হেঁটে উঠবে না। লিফট আছে। বেশি রাতে লিফট বন্ধ করে দেয় নাকি? কই জানি না তো! কাল সিকিউরিটিকে জিজ্ঞেস করতে হবে। অবশ্য লিফট খারাপও হতে পারে। এখন রাত কত হবে? মনে হয় . একটার বেশি। মোবাইল উলটে ঘড়ি দেখতে ইচ্ছে করছে না।
‘খস খসখস…’
ওই যে আবার আওয়াজ। চন্দন হতে পারে। ট্যুরে গেলে ও মাঝেমধ্যে না বলে কয়ে দুমধাড়াক্কা ফিরে আসত। রাতের কোনও ফ্লাইট বা ট্রেন ধরে নিত। আমাকে আগে থেকে খবর দিত না। এই ফিরে আসবার নাম দিয়েছিল ‘সারপ্রাইজ রিটার্ন’। নিচের লোহার গেট এবং সদর দরজার ডুপ্লিকেট দরজার চাবি ওর কাছে আছে। ফ্ল্যাটের চাবিও থাকে। ডোরবেলও বাজাতেও হবে না। টুক করে ঢুকে পড়বে। একবার হয়েছিল কী, ঘুমের মধ্যে মনে হল, আমার মুখে কেউ গরম নিঃশ্বাস ফেলছে। ঘুম গেল ভেঙে। চোখ মেলে দেখি, ওমা, এতো আমার বর! আমি ধড়ফড় করে উঠে বসে বসলাম, ‘তুমি! তুমি কোথা থেকে?
চন্দন মুখ আরও কাছে নামিয়ে বলল, ‘আকাশ থেকে। তুমি উঠলে কেন? আমি দেখছিলাম, ঘুমোলে তোমাকে বেশি সুন্দর দেখায় না জেগে থাকলে?’
আমি চোখ কুঁচকে বললাম, ‘তা বাবুর কী দেখা হল?’
বিয়ের পর এসব কী যে ভালো লাগত! মনে হত, যে মেয়ে বিয়ে করেনি এবং চন্দনের মতো ছেলেকে বিয়ে করেনি সে অভাগা। চন্দনের ‘সারপ্রাইজ রিটার্ন’ যেমন প্রেম ছিল, দাম্পত্যের মজাও ছিল। আমি চোখ পাকিয়ে রাগ দেখাতাম।
‘আগে ফ্রেশ হয়ে এসো। নইলে গায়ে হাত দিতে দেব না।’
এখন সারপ্রাইজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিয়ের পর কমদিন তো হল না। শরীরের বিস্ময় তো ফিকে হবেই।
আবার আওয়াজ। ‘খস খসখস…’
বুকটা ধক করে উঠল। মনে হচ্ছে, কেউ সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে। চেনা পায়ের আওয়াজ নয়, অচেনা আওয়াজ। খুব সহজ ভাবে উঠছে। যেন এত রাতে কোনও বাড়িতে চলে আসাটা কোনও ব্যাপারই নয়। কে আসছে? আমার দুটো হাতের আঙুলগুলো ঠান্ডা হয়ে আসছে। বেশি ভয় পেলে আমার হাতের আঙুল ঠান্ডা হয়ে যায়। এটা শুরু হয়েছিল বারো বছর বয়েসে। কোন্নগরে মামাবাড়িতে। মামাবাড়ির চারতলার ছাদ থেকে গঙ্গা দেখা যেত। কী সুন্দর যে লাগত! আমি মামাবাড়ি গেলেই ছাদে বসে থাকতাম আর মনে মনে গঙ্গায় ভেসে বেড়াতাম। সন্ধের মুখে নেমে আসতাম। অতবড় ছাদে একা ভয় করত। তাছাড়া মামাবাড়িতে লোকজন খুব কম ছিল। ওপরের তলায় তো কেউ থাকতই না। একদিন সন্ধেবেলা ছাদ থেকে নামবার সময় মনে হল, আমার পিছু পিছু আর একজন কেউ নামছে। সিঁড়িতে তার ছায়া পড়েছে। মন শক্ত করে আমি পিছন ফিরে তাকাই। দেখি কেউ কোথাও নেই, শুধু ছায়াটা রয়েছে। গল্পটা শুনে মনে হবে, আমি ভুল করেছি, ছায়া আমারই ছিল। সিঁড়ির দরজা দিয়ে দিনের শেষ আলো এসে আমার ওপর পড়েছে। তার ছায়া। প্রথমে নিজেকে সাহস দেবার জন্য আমিও সেরকম ভাবলাম। আরও তিনটে না চারটে ধাপ নামবার পর বুঝতে পারলাম, ছায়া আমি নই, ছায়া কোনও পুরুষমানুষের। গায়ে পায়জামা, লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি। ছায়াতে সেই পাঞ্জাবি উড়ছে। মানুষটার হাতে একটা ছুরি। আমার হাতের আঙুলগুলো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল। তারপর…।
থাক, সেটা অন্য গল্প।
আজ আবার আঙুলগুলো বরফ হয়ে যাচ্ছে। আমি ভয় পাচ্ছি। খুব ভয় পাচ্ছি। খাটে উঠে বসেছি। ঘর অন্ধকার। তারপরেও সরের মতো সাদা আলো এসে পড়েছে আমার বিছানার ওপর। মনকে শক্ত করতে চাইলাম। পারলাম না। মন খুব গোলমেলে জিনিস। সে চলে নিজের খুশিতে। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলাম। কতক্ষণ রইলাম জানি না। এক মিনিট-দুমিনিট হতে পারে, আবার এক ঘণ্টাও হতে পারে। কান পাতলাম ফের। পায়ের আওয়াজ কি থমকাল? হ্যাঁ, থমকেছে। তবে কি ভুল শুনছিলাম? অবশ্যই তাই। রাতদুপুরে সিঁড়ি দিয়ে আমার পাঁচতলার ফ্ল্যাটে কে উঠে আসবে? এলেও খালি পায়ে! হতেই পারে না। আর যদি কেউ এসেও থাকে আমি তার পায়ের আওয়াজ কীভাবে শুনব? মাঝখানে দু-দুটো দরজা রয়েছে। আমার বেডরুমের দরজাটা যদি বা হালকা হয়, ফ্ল্যাটের মূল দরজাটা তো মোটা। সেগুন কাঠের। দুটো দরজা টপকে পায়ের আওয়াজ আসতে পারে না।
আমি আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। না, সত্যি আর আওয়াজটা হচ্ছে না। এবার শুলাম। ঘুম হচ্ছে না। এপাশ ওপাশ করে আবার উঠেও পড়লাম। হাত বাড়িয়ে বেড সুইচ অন করে বিছানা থেকে নামলাম। বিছানার মাথার কাছে একটা চেস্ট অব ড্রয়ারস্ রয়েছে। চার দেরাজের। একেবারে ওপরেরটা খুলে দেখলাম, ডুপ্লিকেট চাবি পড়ে রয়েছে। চন্দন নিয়ে যায়নি। তার মানে কিছুতেই সে নয়। আর কীভাবেই সে হবে? সে তো আর জুতো খুলে খালি পায়ে আসবে না। বাথরুমে গেলাম। চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিলাম। পা ধুলাম। ছোটবেলায় মা শিখিয়েছিল, রাতে ঘুম ভেঙে গেলে, একটু পায়ের পাতা ধুয়ে নিতে হয়। এতে নাকি চলে যাওয়া ঘুম ফিরে আসে। কী অদ্ভুত কথা! ঘুমের সঙ্গে পায়ের পাতার কী সম্পর্ক? যাক, বাথরুম থেকে এসে আলো নিভিয়ে আবার শুলাম।
এখন অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগছে। চন্দন আসতে পারবে না বলে নয়, নিশ্চিন্ত লাগছে, নিজের ভুল ধরতে পেরেছি তাই। আসলে অতীতে চন্দনের গভীর রাতে চুপিচুপি বাড়ি ফেরবার ঘটনাই আমার ঘুমের মধ্যে ফিরে এসেছিল। শুধু পায়ের আওয়াজটাই যা হালকা হয়েছে। মিথ্যে আর সত্যি ঘটনার মধ্যে এইটুকু তফাত তো থাকবে।
এবার বলি, রাতে কেন আমার ঘুমের সমস্যা হয়েছে।
গত চার মাস ধরে আমি আমার স্বামীকে সন্দেহ করছি। আমার সন্দেহ, সে প্রেম করছে। দুজন মেয়ের নামও আন্দাজ করেছি। দুজন না বলে আড়াইজন বললেও ঠিক হয়। একজনের কথা আধখানা মনে হচ্ছে। তাকে হিসেবে ধরাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। যত দিন যাচ্ছে সন্দেহ গভীর হচ্ছিল।
এমন নয় স্বামীকে আমি আমার সন্দেহের কথা বলিনি, বলেছি। বেশ কয়েকবার বলেছি। নরম ভাবেই বলেছি। রাগারাগি কিছু করিনি। প্রথমবার সে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে, দ্বিতীয়বার ভীষণ রেগে গেছে। পুরুষমানুষের এই এক ক্ষমতা। যখন তার ওপর রাগ করবার কথা, তখন সে রাগ দেখিয়ে বসে। আমি রাগারাগি পারি না। একেই শান্তশিষ্ট, তারওপর স্বামীকে বাড়াবাড়ি ধরনের ভালোবাসি। এতটাই বাড়াবাড়ি যে কারও মনে হতে পারে, এটা পাগলামি। এই ‘পাগলামি ভালোবাসা’ আজ শুরু হয়নি, বিয়ের আগে থেকে শুরু হয়েছে। একসময়ে আমি এই লোকটার ভয়াবহ ধরনের প্রেমে পড়েছিলাম। এমন প্রেম যে দিগ্বিদিক জ্ঞান ছিল না। শুধু ভেবেছি, একে আমার চাই। কাউকে ভাগ দেব না। কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এর জন্য আমি এমন কাজ করেছিলাম যাকে ‘ভয়ংকর’ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় না। সেই কারণেই আমার প্রেম হল ভয়ংকর প্রেম। সেই প্রেমের কথায় পরে আসছি। আগে সন্দেহের কথাটা বলে নিই।
আবার কি পায়ের আওয়াজটা শুরু হল? খস, খস, খস…? না, হয়নি। প্রথমে ভেবেছিলাম, কোনও প্রাইভেট গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলব। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেছি। ওরা নাকি বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর খবর জোগাড় করে দেয়, স্বামী-স্ত্রীর গোপন প্রেম বলে দেয়, ছেলেমেয়ে ঠিকমতো কোচিং ক্লাসে পড়তে যাচ্ছে কিনা জানাতে পারে। তারপর ভাবলাম, না থাক। নিজের চোখে দেখব, সন্দেহ সত্যি না মিথ্যে। সন্দেহ সত্যি হলে প্রমাণ জোগাড় করব। আমি সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সুযোগ নানা ভাবে আসতে পারে। আমি আমার স্বামীর পিছু নিতে পারি, দরজার আড়াল থেকে ফোনের ফিসফিসানি শুনতে পারি, মোবাইল ফোন ঘাঁটতে পারি। মেয়েটা কে জেনে যেতে পারব। কোন সুযোগটা নেব সেটা দেখতে হবে। তবে সেসব কিছুই করতে হল না, সুযোগ এল অন্যভাবে।
এই ফাঁকে পরিচয়পর্বটা শেষ করি।
আমি মালা। আমার স্বামীর নাম চন্দন। আমার বয়স পঁয়ত্রিশ। চন্দনের উনচল্লিশ। আমাদের বিয়ে হয়েছে ছ’বছর। এখনও আমাদের কোনও ছেলেপুলে হয়নি। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে, এর মধ্যে ছেলেপুলে হয়ে যাওয়ার কথা।
ডাক্তারবাবু বলেছেন, ‘কোনও ব্যাপার নয়। সময় আছে। চিন্তা করবেন না।’ ডাক্তারবাবু যাই বলুন, আমার চিন্তা হয়। চন্দনের কোনও চিন্তা নেই। আগে এই বিষয় কথা বললে নরম গলায় উত্তর দিত।
‘চিন্তা করো না সোনা। উনি খুব বড় ডাক্তার। উনি যখন বলেছেন, চিন্তা নেই, তখন নিশ্চয় চিন্তা নেই।’
আমি চন্দনের গায়ে হাত রেখে বলতাম, ‘ভুল তো হতে পারে। বড় ডাক্তারের কি ভুল হয় না? হয়তো কোনও সমস্যা আছে। একবার অন্য কারও পরামর্শ নাও।’
চন্দন আমাদের দিকে ফিরত। হেসে বলত, আমাদের অফিসে নীলাঞ্জনদা কত বছর বয়েসে বাবা হয়েছে জানো? আমরা ঠাট্টা করে বলি, নীলাঞ্জনদা হল টেস্ট ম্যাচের প্লেয়ার। সময় নিয়ে সেঞ্চুরি করেছেন। হা হা।’
আমি হাসতে পারিনি। শুকনো গলায় বলতাম, ‘তাও আমার ভয় করে।’ চন্দন আমাকে কাছে টেনে বলত, ‘দূর বোকা, কীসের ভয়? ঝাড়া হাত-পায়ে আছি সেটা পছন্দ হচ্ছে না? ট্যাঁ ভ্যাঁ, সিকনি, স্কুলে ভর্তির লাইন, এসব না হলে চলছে না? যতদিন পারা যায় ফূর্তিসে থাকো দেখি।’
আমি একই কথা বলতাম।
‘তুমি একবার অন্য কারও সঙ্গে কথা বল।’
চন্দন আমাকে কাছে টেনে গলা নামিয়ে বলত, ‘অ্যাই, ওসব বাদ দাও। এখন চোখ বোজো তো, একটা ম্যাজিক করব, তোমার সব চিন্তা ভ্যানিশ হয়ে যাবে।’
আমি চোখ বঁজতাম। চন্দন ‘ম্যাজিক’ করত। শরীরে শিহরণ জাগত, তবে চিন্তা দূর হত না।
এসব আগের কথা। এখন এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে চন্দন বিরক্ত হচ্ছে, রেগে যাচ্ছে।
‘তোমার ইচ্ছে হলে তুমি একজন কেন, একশোজন ডাক্তার দেখাও। আমি যাব না।’
এটা তিনমাস আগের ঘটনা। নাকি তিনমাসের থেকে একটু বেশিই হবে। ফুলদি বলল, ‘মালা, তুই একবার ভালো করে ডাক্তার দেখা। চন্দনকেও বল।’
আমি কাঁচুমাচু মুখ করে বললাম, ‘ভালো করেই তো দেখিয়েছি। ডাক্তারবাবু আমাদের দুজনকেই নানারকম টেস্ট করিয়েছেন। সব টেস্ট রিপোর্ট ঠিক আছে।’
ফুলদি গম্ভীর হয়ে মাথা নেড়ে বলল, ‘ওটাই তো চিন্তার। সব ঠিক থাকলে সমস্যা কোথায়? তোর জামাইবাবুর অনেক ডাক্তার চেনা। তুই বললেই ব্যবস্থা করে দেবে।’
কথাটা চন্দনকে বলতেই সে খেপে আগুন হয়ে গেল।
‘ফালতু জিনিস নিয়ে বিরক্ত করবে না তো। ঘুমোতে দাও। সারাদিন কাজ করতে হয়। তোমার মতো ঘরে বসে থাকি না। তোমার ওই ফুলদি, পাতাদিকে আমাদের বিষয়ে নাক গলাতে বারণ কর।’
এরপর থেকেই চন্দনকে সন্দেহ করতে শুরু করি। সে আমার উদ্বেগের প্রতি এতো নিস্পৃহ কেন? আমাকে আর আগের মতো আদর করে না, বেড়াতে নিয়ে যায় না। অফিস যাওয়ার সময় চুমু খায় না, অফিস থেকে ফিরে পাশে বসে দুটো কথা বলে না। রেগেই বা যাচ্ছে কেন? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাৎ একদিন দুপুরে মনে হল, চন্দন নিশ্চয় কোনও মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে। বিয়ের আগে একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেম করবার অভ্যেস ওর ছিল। প্রেম না হলে ফ্লার্ট। আমি তাদের মধ্যে ছিলাম না। ছিলাম বাইরের একজন। একটা পার্টিতে
ওকে দেখে প্রেমে পড়ি। পড়ে হাবুডুবু খাই। ওর সেই প্রেমের স্বভাব নিশ্চয় ফিরে এসেছে। তাই আমাকে আর পাত্তা দিচ্ছে না। ব্যস হয়ে গেল। সন্দেহ জিনিসটা মারাত্মক। আগাছার মতো। জল, হাওয়া, সার কিছুই লাগে না। এমনকি উপড়ে ফেললেও কিছু হয় না। ফন ফন করে বাড়তে থাকে। আমার বেলাতে তাই হল। সন্দেহ বাড়তে লাগল। তার ওপর আমি যুক্তি দিয়ে সন্দেহকে শক্তপোক্ত করলাম। নানারকম যুক্তি। অবশ্য আকাশ থেকে যুক্তি বানাইনি। বরকে টানা নজরে রেখেছিলাম।
পায়ের আওয়াজটা আবার হচ্ছে? ওই তো খস, খস খস…। হচ্ছে না? নানা, এটা গাছের পাতা আওয়াজ। আমাদের বাড়ির পাশেই একটা জামগাছ আছে। হাওয়া দিলে পাতা পাতা লেগে আওয়াজ হয়।
পুরুষমানুষের প্রেমে পড়েছে কিনা বুঝতে সময় লাগে না। কম বয়েসের প্রেম হলে সে সাজগোজ এলোমেলো করে ফেলে। আঁচড়ানোর পর নিজেই চুল ঘেঁটে দেয়, জামা ঠিক মতো গোঁজে না, দাড়ি কামাতে ভুলে যায়, খাতায় কবিতা লেখে। উদাসীন সাজে। বেশি বয়েসের প্রেম মানে উল্টো সিম্পটম। হঠাৎ সাজে বেশি মন দেওয়া, পরিপাটি হতে চেষ্টা, পাকা চুল বেছে ফেলে দেওয়া। বেশি সাদা হলে রঙের পোঁচ মারা। চন্দন তাই শুরু করল। অফিস যাওয়ার সময় এক ঘণ্টা করে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। সেন্টও মাখে। দেরি করে বাড়ি ফিরতে লাগল। কেন দেরি হল জিজ্ঞেস করলে আমাকে খেঁকিয়ে উত্তর দিল।
‘সারদিন কত মিটিং করেছি জানও? তারপরেও জেরা করছ?
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘জেরা করলাম কোথায়! তোমার ফোন বন্ধ ছিল তাই জিজ্ঞেস করছি।’
চন্দন খেঁকিয়ে উঠল, ‘বকবক করে আমার গলা ব্যথা করছে, একটা কথাও বলব না।’
গলা ব্যথা, তারপরেও বাথরুমে ঢুকে শাওয়ার খুলে চিৎকার করে গান শুরু করে চন্দন ‘খোয়া খোয়া চাঁদ, খোয়া আসমান।
এরপরে আরও প্রমাণ পেলাম। দুটোর কথা বলব। দুটোই খুব কমন। তবে জোর আছে। একটু ‘শরীর’ আছে বলেই জোর আছে হয়তো। বেশি বয়েসের প্রেমে ‘শরীর’ তো থাকবেই।
‘খস খসখস…’
আওয়াজটা ফিরে আসছে? আমি এক পাশ ফিরে শুয়ে আছি। মাথাটা বালিশ থেকে অল্প তুললাম। যাতে দুটো কান দিয়েই শুনতে পারি। না, শুনতে পাচ্ছি না। আসলে আওয়াজটা কানের মধ্যে ঢুকে গেছে বারবার ভুল হচ্ছে।
একদিন চন্দনের অফিস ফেরত জামায় লাল রঙের দাগ পেলাম। ঠিক লাল নয় গোলাপি। টিপ, লিপস্টিক বা গালে মাখা ব্লাশার থেকে এসেছে। কলারের কাছে দাগটা রয়েছে। তার মানে মেয়েটা মুখ চন্দনের ঘাড়ের কাছে ছিল? আর একদিন দেখলাম ও অনলাইন একটা দামি পারফিউমের অর্ডার দিল। আমার সামনে বসেই দিল। আমি পারফিউম মাখি না। অ্যালার্জি হয়। তাহলে কার জন্য দিল? ভাবলাম জিগ্যেস করি। তারপর ঠিক করলাম, না হাতেনাতে ধরব।
চন্দন গম্ভীর মুখে বলল, ‘একটি মেয়ে কিনতে দিয়েছে।’
আর প্রমাণের কোনও দরকার আছে? কোনও দরকার নেই। তারপরেও একটা তিন নম্বর ঘটনা ঘটল। একদিন চন্দনের প্যান্টে দেখি বালি! বালি কোথা থেকে এল? ও কি মেয়েটাকে নিয়ে বালিয়াড়িতে প্রেম করতে যায়? কাছাকাছি বালি কোথায়? তবে কি ওরা কোনও নির্মিয়মাণ বাড়িতে যায়? যেখানে ইট, বালি, সুড়কি রয়েছে। নিউটাউনে?
মেয়েটা কে? ঝাড়াইবাছাই করে একটা লিস্ট করে ফেললাম। আড়াইজনের লিস্ট। বিয়ের আগে এবং বিয়ের পরে কারা চন্দনের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিল। বিয়ের আগে চন্দনের দুজন হালকা ধরনের সম্পর্ক ছিল। অনুমিতা আর শর্মিষ্ঠা। চন্দনের সঙ্গে আমার বিয়ের কথা শুরু হতেই অনুমিতা দেশের বাইরে চলে গেল। খবর পেয়েছি, বিয়েও করেছে। সে কি ফিরে এসেছে? ফের যোগাযোগ হয়েছে চন্দনের সঙ্গে? হতে পারে। পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে, পুরোনো প্রেম বাড়বে না কেন? আর শর্মিষ্ঠা? সে তো গ্রামে গিয়ে কোন স্কুলে পড়ায়। তার কাছেই আবার চন্দন ফিরল নাকি? আর রয়েছে ওর অফিসের সানাই। পাঞ্জাবি মেয়ে। ওকে হিসেবে আধখানা ধরেছি। শুনেছি, সানাইয়ের পিছনে চন্দনের বসও লেগে আছে। চন্দন কি বসকে টাপকাতে সাহস পাবে? তবে এসব ছিল হালকা পলকা। খেলা খেলা। একজনের সঙ্গেই ঘোর লাগা প্রেম ছিল চন্দনের। দক্ষিণি। চোখ ধাঁধানো সুন্দরী। চন্দনের মতো খেলুড়ে প্রেমিকও তার কাছে কুপোকাত হয়েছিল। দক্ষিণি একেবারে শক্ত হয়ে বসেছিল। চন্দনকেই বিয়ে করবে। আমার কাঁটা। তার হাত থেকে চন্দনকে মুক্ত করতে আমাকে ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। পরিণতি হয়েছিল ভয়ংকর। তবে আমার জন্য আনন্দের। ভয়ংকর প্রেমের কথা বলছিলাম না? এই সেই ভয়ংকর প্রেম।
এত প্রেম সত্ত্বেও দক্ষিণিকে লিস্টে রাখার কোনও মানে হয় না।
আওয়াজ কি সত্যি মিলিয়ে গেছে? মনে তো হচ্ছে। কত বাজল? ঘুমও তো আসছে না। আসবে কী করে? বাইরে না হোক, আওয়াজ কানের ভিতরে রয়েই গেছে।
‘খস খসখস…।’
লিস্ট থেকে বাদ গেলেও সেদিন দক্ষিণিকে দেখলাম। সাত বছর পর। সেই ঝকঝকে চোখমুখ, টিকোলো নাক। ঘাড় পর্যন্ত চুল। ছিপেছিপে চেহারা। দেখে মনে হল, একটুও বয়স বাড়েনি। বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে জাঙ্ক জুয়েলারি কিনছে। আমি ছিলাম ক্যাবে। গাড়ি ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে ছিল। জানলা দিয়ে দক্ষিণিকে দেখে চমকে উঠলাম। এই মেয়ে আর যেই হোক, দক্ষিণি নয়। হয় ওর মতো দেখতে, নয় ওর যমজ বোন। তবে দক্ষিণির যমজ বোন আছে বলে তো জানতাম না! ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে ছাড়া পেয়ে ক্যাব এগিয়ে যেতেই আর একটা ভয়ংকর দৃশ্য দেখলাম।
দক্ষিণির মতো দেখতে মেয়েটার পাশে চন্দন!
চন্দন দাঁড়িয়ে আছে গা ঘেঁষে। অফিসের পোশাক। সেই মেয়ে একটা করে হার নিয়ে গলায় পেতে দেখছে, চন্দন হেসে হেসে কিছু বলছে।
আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠল। শরীর ঝিমঝিম করে উঠল। আমি ক্যাবের মধ্যেই মুখে হাত চাপা দিয়ে বসলাম। নিশ্চয় অন্য কেউ।
না অন্য কেউ নয়। সন্ধের পর চন্দন অফিস থেকে বাড়ি ফিরল বাকি পাঁচটা দিনের মতো। জামাকাপড় খুলে, তোয়ালে পরে শিস দিতে দিতে বাথরুমে ঢুকল। এবার স্নান করবে। আমি ওর জন্য চা বানাতে গেলাম। টেবিলের ওপর ফেলে যাওয়া চন্দনের মোবাইলটা বাজতে লাগল একটানা। আমি বিরক্ত হয়ে একঝলক স্ক্রিনের দিকে তাকাই। বুক ধড়াস করে ওঠে।
দক্ষিণি…দক্ষিণি…দক্ষিণি …।
দক্ষিণি আর কারও নাম হতে পারে না? পারেই তো। আমি কি চন্দনকে জিজ্ঞেস করব? চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে চন্দন বলল, ‘মুখটা অমন থমথমে করে আছো কেন? নিশ্চয় মাথার মধ্যে এখনও ছেলেপুলের কথা ঘুরচ্ছে। এসব বন্ধ কর।’
আমি দক্ষিণির কথা বলতে গিয়েও চুপ করে গেলাম। কী বলব? আমি একটা ভুল করেছি, তুমি ভুলটা ঠিক করে দাও? ভুল এমনিই ঠিক হবে।
ঠিক হল না। তিনদিন পরে আমি আবার স্বামীর সঙ্গে দক্ষিণিকে দেখলাম। শপিং মলের রেস্টুরেন্টে। আমি অবশ্য ছিলাম বাইরে। চন্দনের জন্মদিন আসছে, ওর জন্য শার্ট কিনতে গিয়েছিলাম। তিনতলায় খানিকটা এলোমেলো ঘুরছি। উনডো শপিং এর মতো। হঠাৎই বিখ্যাত এক রেস্টুরেন্টের ভিতরে চোখ পড়ল। বাদামি রঙের ধোঁয়া ধোঁয়া কাচ। আবছা অথচ স্পষ্ট। এক কোণে নিচু সোফায় চন্দন আর দক্ষিণী। মুখোমুখি নয়, বসেছে পাশাপাশি। দক্ষিণি এক হাতে চন্দনকে জড়িয়ে আছে। আমার স্বামী চন্দন? নাকি তার প্রেমিক? দক্ষিণি যেন মুখ তুলে আমাকে দেখতে পেল। ঠোঁটের কোণে হাসল। একেবারে সেই হাসি!
আমার মাথা ঘুরে যায়। আমি এগিয়ে একটা বসবার জায়গা খুঁজে নিই।
আলতো পায়ের আওয়াজটা ফিরে আসছে মনে হচ্ছে না? হ্যাঁ, ফিরে আসছে। ওই তো ‘খস খসখস…’।
সোমবার রাতে চন্দনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
‘মেয়েটা কে?’
চন্দন কোনওরকম ধানাইপানাই না করে বলে, ‘চিনতে পারোনি?’
আমি চাপা গলায় বলি, ‘পেরেছি, কিন্তু ও হতে পারে না।’
চন্দন একটু চুপ করে থেকে বলল, ‘তাহলে হতে পারে না।’
আমি হিসহিসিয়ে বলি, ‘একবারে একরকম দেখতে।’
চন্দন হেসে বলল, ‘খুঁজলে তোমার মতো দেখতেও আর একজন পাওয়া যাবে। তার মানেই সে তুমি নও। আর ওসব প্রেমট্রেম বাজে কথা। কতদিন পরে দেখা হল, কদিন ঘোরাফেরা করলাম।’
আমি বললাম, তুমি কি একরকম দেখতে, একরকম ভাবভঙ্গি বলেই ওর প্রেমে পড়েছ?’
চন্দন বলল, আরে বাবা, বলছি তো প্রেমট্রেম কিছু নয়। ফেসবুকে দেখে তোমার মতোই চমকে উঠেছিলাম। তাই আলাপ।’
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘ও তাই বল। ভার্চুয়াল।’
চন্দন পাশ ফিরতে ফিরতে বলল, ‘আমিও তাই ভেবেছিলাম। পরে দেখলাম না ভার্চুয়াল নয়, সত্যি।’
আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। তীক্ষ্ণ গলায় বললাম, ‘হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না। দক্ষিণি কীভাবে সত্যি হবে?’
চন্দন হাই তুলে বলল, —তাহলে সত্যি নয়। তাছাড়া সত্যি মিথ্যে কোনওটা নিয়েই আমার মাথাব্যথা নেই। ওই মেয়ে অফ হয়ে গেছে। ফোনে অফ, ফেসবুকে অফ, অ্যাপয়েনমেন্টে অফ। তুমি আর বিরক্ত করও না তো। ঘুমোতে দাও। কাল ট্যুরে বেরিয়ে যাব। সাতদিন প্রচুর ঘুরতে হবে।’
আমি চন্দনের জামা টেনে ধরে হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, ‘না। তুমি ঘুমোবে না। তুমি আমাকে আদর কর…আদর কর…আদর কর।’
চন্দন আমার এই অস্বাভাবিক আচরণ প্রথমটায় ভেবাচাকা খেয়ে যায়। তারপর ধাক্কা মারে। খাটের কোণায় মাথা লাগে। কেটেও গেছে।
চন্দন ট্যুরে বেরিয়ে যাওয়ার পরদিনই ফুলদিকে ফোন করি। ফুলদি একজন সাইক্রিয়াটিস্টের ফোন নম্বর দেয়। ওদের চেনা জানা। উনি আমাকে বিকেলে সময় দিলেন। আমি ল্যান্সডাউনের চেম্বারে যাই। দক্ষিণির কথা শুনে বললেন, ‘বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে বড্ড টেনশন করছেন। সেখান থেকে বরের ওপর সন্দেহ। আবার সেই সন্দেহ থেকেই ওই মেয়েটাকে দেখছেন। আপনি যা বলছেন তা যদি সত্যি হয়, ওই মেয়ে তো দক্ষিণি না কী নাম বললেন? সে তো হতে পারে না। পারে কি?’
সুন্দর দেখতে হাসিখুশি মুখের ডাক্তার। আমি বললাম, ‘না, পারে না।’
ডাক্তারবাবু বললেন, ‘ঘুমের ওষুধ খেয়ে ভালো করে কটাদিন ঘুমোন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আজ থেকেই শুরু করুন। মনে সাহস আনুন। জোর আনুন।’
তিনদিন ওষুধ খেয়েছি। খুব ভালো আছি। মেয়েটা যে দক্ষিণি ছিল না বিশ্বাস করছি। আজও প্রথম রাতে ঘুম ভালোই হয়েছে। হঠাৎই আলতো পায়ের আওয়াজে ঘুম ভাঙল।
‘খস খসখস…।’
না, অনেক ভয় পাওয়া হয়েছে, আর নয়। এর শেষ দেখতে হবে। নিজের মনে সাহস আনলাম। জোর আনলাম। ডাক্তারবাবু যেমন বলেছেন। নেমে পড়লাম বিছানা থেকে। পাশে পড়ে থাকা হাউসকোটটা চাপিয়ে নিলাম নাইটির ওপর।
‘খস খসখস…।’
আওয়াজ কাছে চলে এসেছে। বিড়াল নয় তো? সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করছে। বেরোনোর পথ খুঁজে পাচ্ছে না। তাই হবে। আমি বেডরুমের দরজা খুললাম। অন্ধকার ডাউনিং-এ আলো জ্বাললাম। বসবার ঘর এলাম। কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কেউ একজন ফ্ল্যাটের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হতেই পারে না। বসবার ঘরের দুটো আলো জ্বাললাম। সব মিলিয়ে গোটা ফ্ল্যাট আলোয় ঝলমল করছে। আর কোনও ভয় আছে? না নেই। বিড়াল তাড়াবার জন্য একটা লাঠি পেলে হত।
দরজার চেন খুললাম। ছিটকিনি খুললাম। লক খুললাম। একটু থমকালাম। খুলব? নাকি থাকবে? এক টানে দরজা খুলে ফেললাম।
দক্ষিণি দাঁড়িয়ে আছে অন্ধকারে। খালি পা। তার চুল, শাড়ি, ব্লাউজ ভিজে একসা। জল পড়ছে টপটপ করে। একি সমুদ্রের জল? চন্দনের সঙ্গে আমার রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে, এই মিথ্যে খবর তাকে আমি নিজের মুখে বলে এসেছিলাম। নকল সার্টিফিকেট দেখিয়েছিলাম। বলেছিলাম, চন্দন তাকে ঠকাচ্ছে। দুদিন পরে দিঘার সমুদ্র থেকে মেয়েটার দেহ পাওয়া যায়। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানা যায়, গাদাখানেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে জলে নেমেছিল। চন্দন প্রথমে খুব আপসেট হয়ে পড়ে। তারপর মেনে নেয়। এরও তিনমাস পরে আমাদের বিয়ে হয়েছে।
সিঁড়ির অন্ধকার সবসময়েই কেমন ভয়ের। সেই অন্ধকারে দাঁড়িয়ে দক্ষিণি হাসল। এখনও আগের মতো হাসি সুন্দর। ফিসফিস করে বলল, ‘একটা শুকনো কাপড় হবে? এতদিন জলে ভিজে আছি তো বড্ড শীত করে।’ আমি শুকনো কাপড় আনতে ভিতরে গেলাম।