তৃতীয় খণ্ড (স্নেহের চুমকিকে)
3 of 6

আর বোলো না ভাই!

আর বোলো না ভাই!

‘আর বোলো না ভাই।’

এই একটি সম্প্রদায়। সারাদিনে বারকয়েক এঁদের দর্শন পাওয়া যেতে পারে চলতে ফিরতে।

‘আরে বোলো না ভাই!’

‘কেন কী হল?’

‘কাল সারাটা রাত যে কীভাবে কেটেছে। মেয়েটা মানিকতলায় পড়তে যায় প্রাইভেট কোচিং। সে আর ফেরেই না, ফেরেই না। আটটা বাজল, নটা বাজল, দশটা বাজল। কে একজন বললে মানিকতলায় একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। এগারোটা বাজল, বারোটা বাজল।’

‘তারপর?’

‘তারপর রাত দুটোর সময় আমার বউ হঠাৎ লাফিয়ে উঠল। কী ব্যাপার? সে তো আজ পড়তে যায়নি। তা হলে গেছে কোথায়? বাগুইআটিতে মামার বাড়ি। বলেই তো গেল, আজ ফিরবে না। বোঝো ঠ্যালা। তখন আমরা খেতে বসলুম। যখন উঠলুম তখন কাক ডাকছে।’

‘আর বোলো না ভাই!’

‘আপনার আবার কী হল?’

‘পাম্প। বলা নেই কওয়া নেই ফেঁসে গেল।’

‘ফেঁসে গেল মানে? পাম্পের মিস্ত্রি ঘুড়ি না কি?’

‘আরে না। ঘুরছে, জল উঠছে না। ব্রংকাইটিসের কাশির মতো একটা শব্দ। হাওয়া ঢুকে গেছে। গেলুম পাম্প পঞ্চাননের কাছে। বাড়ি নেই বিয়ে করতে গেছে। এইবার কী হবে! কলে এক ফোঁটা জল নেই। কল খুললেই একটা শব্দ। যেন অন্য গ্রহের মানুষ কথা বলছে। বাসনের ডাঁই কলতলায়। যে বাসন মাজে সে চেঁচাচ্ছে—এসব কি চোখের জলে ধোয়া হবে!’

‘এখন চললেন কোথায়?’

‘আর বোলো না ভাই! আর কতক্ষণ চেপে থাকা যায়! যাই পে-টয়লেটে!’

‘আর বোলো না ভাই!’

‘আপনার সমস্যা?’

‘সামনেই ফাইনাল।’

‘মাধ্যমিক দিচ্ছেন বুঝি?’

‘আমার আর সে বয়স আছে?’

‘তা হলে?’

‘আমার মেয়ে।’

‘তা দিতে হয় দেবে।’

‘কী দেবে? বই খুলে বসে আছে আর নীরবে কাঁদছে। জল ঝরছে তো ঝরছেই। এখন বলে কি না, ডিহাইড্রেসান হয়ে গেছে, স্যালাইন চালাতে হবে। বেরিয়েছি, দেখি, কে স্যালাইন চালাতে পারে। আর বোলো না ভাই, এমন জানলে, কে সংসার করত।’

‘আর বোলো না ভাই!’

‘আপনার আবার কী হল?’

‘এই যে! কেশে কেশে মরে যাচ্ছি, এক শিশি কাফ মিকশ্চার কিনলুম, কার বাপের সাধ্য ছিপি খোলে। সারারাত ধরে সপরিবারে চেষ্টা করেও হল না।’

‘এখন চললেন কোথায়?’

‘নিবারণের ছেলে জিম খুলেছে, বউ বললে, ওখানে একবার গিয়ে দ্যাখো।’

‘তা হলে এই দেখুন।’

আমার পকেট থেকে বের করলুম, আধুনিক মোড়কে একটি লঞ্জেন্স। ‘এটা একমাস আমার পকেটে পড়ে আছে, রোজ সবাই মিলে খোলার চেষ্টা করি। হাতে হাতে ঘুরে আবার ফিরে আসে পকেটে।’

‘আরে কাঁচি দিয়ে কেটে ফেললেই তো পারো?’

‘আজ্ঞে না, একটা লজেন্সের কাছে শক্তির পরীক্ষায় হেরে যেতে রাজি নই।’

অ্যায়! ঠিক বলেছ, আমারও ওই এক মনোভাব।’

‘তা ছাড়া আরও একটা দিক আছে—আমার স্ত্রী যখন খুব গজ গজ করে তখন এইটা ধরিয়ে দি, ‘খোলো,’ ব্যাস, ঘণ্টাখানেক গৃহ শান্ত।’

‘ঠিক বলেছ হে। আমার বউও কাল সন্ধেবেলা থেকে খুব শুরু করেছিল, এটা ধরিয়ে দিলুম। আমার কাশি শান্ত না হলেও সে শান্ত হয়ে গেল। তা হলে কি বলছ—এটা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাই।’

‘অবশ্যই। নিজেও চেষ্টা করবেন, মনে মনে ভাববেন, ওটা খুললেই বরাতও খুলে যাবে। সংস্কারের মতো সামনে রাখবেন। সাধনার মতো।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *