আরোগ্য
আরোগ্য!
একেই কি আরোগ্য বলে? কে জানে! নার্সিংহোমের বিশাল জানালার পর্দাটা আজ সরানো। ভোরের আলোয় ভরে আছে ঘরখানা। টেবিলের ওপর ফুলদানিতে একগোছা পাঁচমিশেলি ফুল। এ ঘরে কোনও গন্ধ নেই। কিংবা থাকলেও তা নাকে সয়ে গেছে বলে শান্তশীল সাধারণত কোনও গন্ধ পায় না। আজ এয়ারকন্ডিশনিং বন্ধ এবং জানলার কাঁচের শার্সি খোলা বলে সাত তলার এই ঘরে বঙ্গোপসাগর থেকে নোনা বাতাস এসে ঢুকে পড়েছে বুঝি!
শান্তশীল খুব গভীর শ্বাস নিল।
মাত্র বিয়াল্লিশ বছর বয়েস তার। দুরন্ত স্বাস্থ্য ছিল এককালে। তবু যে কেন হৃদযন্ত্র এমন। গণ্ডগোল পাকিয়ে বসল কে জানে! মনে হচ্ছে, আজ তার আরোগ্যের দিন।
কয়েকবার শ্বাস নিল শান্তশীল। তার ওঠা বারণ, হাঁটা বারণ। ডাক্তার অনুমতি না দিলে উঠে বসা অবধি বারণ। নিষেধের বেড়াজাল তাকে ঘিরে ছিল কাল অবধি। আজ কি সে মুক্তি পাবে?
ধীরে, খুব ধীরে শান্তশীল পাশ ফিরল। জানালার দিকে। কলকাতার আকাশরেখা কী মনোরম! ভোরের আলোয় কী পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন দেখাচ্ছে সাততলা থেকে কলকাতা! এ পাড়াটায় কোথাও নোংরা নেই, ভাঙা বাড়ি নেই, কুশ্রীতা নেই।
শরৎকাল। শান্তশীলের বড় প্রিয় ঋতু। শরতে শিউলি আর কাশফুল ফোটে, শরতে ঘাসের ওপর ঝরে পড়ে শিশিরের মুক্তো, শরতে ঢাকের বাদ্যি আর আগমনী গান।
শান্তশীল কি উঠবে একটু? বসবে? দু-এক পা হাঁটবে? বড্ড ভয় করে। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল সে। ডাক্তার গুহ বলেছেন, যদি পৃথিবীতে আরও কিছুদিন বাঁচতে চান তাহলে ক’টা দিন নড়াচড়া অবধি বন্ধ রাখুন।
ডাক্তার গুহ রুগিদের একটু ভয় দেখাতে ভালোবাসেন। তাঁর অভিমত হল, হার্টের রুগিদের একটু ভয় খাওয়ানো ভালো, তাতে দুষ্টুমিটা কমবে।
শান্তশীলের বাঁ-দিকে পাশ ফিরে শোয়া অবধি বারণ। ভাগ্য ভালো জানালাটা তার ডান দিকে।
নিজের হৃদযন্ত্রকে ভারী ভয় পায় আজকাল শান্তশীল। নিজের শরীরকেই ভয় পায়। এই রহস্যময় দেহযন্ত্রকে সে এতকাল টেরই পেত না।
বিশাল এ-দেওয়াল ও-দেওয়াল জোড়া জানালা দিয়ে প্যানোরামিক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আজ যেন বাইরেটা হুহু করে ঢুকে আসছে ঘরে। রোদ, বাতাস, দৃশ্য। কতকাল সে শুয়ে আছে বিছানায়! কতকাল বাইরে যায়নি। এমনকী কাল অবধি তার কেটেছে আধা ঘরের মধ্যে। যন্ত্রণায় ডুবে থেকে কতগুলো দিন বেঘোরে কেটে গেল!
বুকে একটু ভার এখনও বোধ করে শান্তশীল। দিনে কত যে ট্যাবলেট খেতে হয় তার কোনও হিসেব নেই। জিব বড় বিস্বাদ। সারাক্ষণ এক ক্লান্তিকর পুকুরে ডুবে থাকা।
কফির গন্ধে মুখখানা আস্তে ফেরাল শান্তশীল।
গুড মর্নিং, স্যার।
শান্তশীল তার নার্সের দিকে পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। মধ্যবয়স্কা, কালো, দেখতে সুন্দর নয়। তবু এই সকালের আলোয় মহিলার চেহারায় বেশ নতুন মাত্রা যোগ হল আজ।
হাসিমুখে সে বলল , ফাইন মর্নিং। আমি কি আজ কফি খাব?
মেয়েটি ভাঙা বাংলায় বলল , আজ কয়েকটা সিপ ড্রিংক করবেন। ব্ল্যাক কিন্তু। নো সুগার।
অনেকদিন বাদে আজ কফি খাবে বলে শান্তশীল উঠতে যাচ্ছিল।
মেয়েটি বলে উঠল, উঁহু ডোন্ট একজার্ট। আমি বসিয়ে দিচ্ছি।
হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে খাটের আধখানা ধীরে-ধীরে ওপরে তুলে দিল মেয়েটি।
অবসাদ। বড় অবসাদ। শান্তশীল কফির জন্য হাতখানা পর্যন্ত নাড়াল না কিছুক্ষণ।
মহিলাটি তার বুক থেকে পেট অবধি ন্যাপকিনে ঢেকে দিলেন যত্ন করে। তারপর ফিডার কাপটি হাতে নিয়ে বললেন, জাস্ট এ ফিউ সিপস।
শান্তশীল পাতলা হালকা কফির লিকারে প্রথম চুমুক দিয়েই টের পেল, যতটা ভালো লাগবে বলে ভেবেছিল ততটা লাগছে না। তবু খেলো।
মুখটা সযত্নে মুছিয়ে দিলেন মহিলা। খাটটা নামাতে যাচ্ছিলেন, শান্তশীল হাত তুলে বলল , থাক, একটু বসে থাকি।
বেশিক্ষণ নয় কিন্তু। ডাক্তার অ্যাডভাইস করেছেন, শুয়ে থাকতে হবে।
শান্তশীল কলকাতা শহরের বিশাল পটভূমির ওপর ভোরের আলোর নরম আভা দেখতে লাগল। সে যেন বড় ভাগ্যবান। সাততলা থেকে কলকাতার এই শোভা যে সে আজ দেখতে পাচ্ছে তা তার নিজের কৃতিত্ব নয়। সে দরিদ্র ঘরের মেধাবী ছেলে। একটা সময়ে জীবনে সে বেশ কষ্ট পেয়েছে অভাবে। মেধাবী বলেই চটপট পাশটাশ করে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে ভালো চাকরি পেয়েছে। তার কোম্পানি তাকে ফ্ল্যাট দিয়েছে, গাড়ি দিয়েছে। এই চিকিৎসার বিপুল খরচও বহন। করবে কোম্পানি। তার কোনও মাথাব্যথা নেই। গরিবের ছেলে হয়ে যেদিন সে টাকার মুখ দেখতে লাগল, যেদিন থেকে স্ট্যাটাস এবং এটিকেট নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করল, সেদিন। থেকেই কিন্তু বদ অভ্যাসও ধরে ফেলল তাকে। সাধারণত সুরা–মদির ঘুম তার এত ভোরে ভাঙে না, যদি বা ভাঙে শরীরে থাকে রাজ্যের জড়তা, হ্যাং ওভার। আজ সেসব নেই। আজ ভারী ভালো লাগছে তার।
সিস্টার, ডাক্তার কখন আসবেন?
সিস্টার ঘড়ি দেখে বললেন, ন’টা হয়ে যাবে।
আমি একটু হাঁটতে চাই।
সিস্টার মাথা নাড়লেন, ইমপসিবল। ইউ আর নট আউট অব ডেনজার।
শান্তশীল সেটা জানে। তাকে টানা সাতদিন ইনটেনসিভ কেয়ারে রাখা হয়েছিল। যমে মানুষে টানাটানি গেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে তাকে আনা হয়েছে কেবিনে।
অবসন্ন শান্তশীল ক্লান্ত গলায় বলে, কতকাল খবরের কাগজ পড়ি না, টেলিফোন করি না, গাড়ি চালাই না।
সব হবে। হ্যাভ পেশেন্স। কথা বেশি না বলাই ভালো। টেক রেস্ট।
রেস্ট! বলে শান্তশীল হৃ কোঁচকাল। বিশ্রাম অনেক হয়েছে। তবু এত অবসাদ যে কেন!
ঘড়ি দেখে সিস্টার চলে গেলেন। ব্রেকফাস্টের সময় হল। বিস্বাদ, অদ্ভুত সব খাবার দেয় এরা। ক্যালোরিহীন, ফ্যাটহীন, চিনিহীন, লবণহীন।
শান্তশীলের শরীর সায় দিচ্ছে না, তবু ইচ্ছে করছে জানলার কাছে গিয়ে একটু বসতে। কী সুন্দর বাতাস বইছে। একটা পাখি এসে জানলার কানায় বসল। চড়াই। চুরুক করে ডেকে ফের উড়ে গেল। রাস্তায় গাড়ির শব্দ হচ্ছে, ঝাঁটার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে কেবিন থেকে। জানলা দরজা বন্ধ থাকলে কোনও শব্দই পাওয়া যায় না।
দুটি চড়াই এসে ঘরে ঢুকল। চক্কর মারল কয়েকটা। তাদের দ্রুত সঞ্চালিত পাখার শব্দ একটা ভাইব্রেশনে ভরে দিল ঘরটা। শব্দটা কি মৃদু ধাক্কা দিচ্ছে তার হৃৎপিণ্ডে? বুকের মধ্যে একটা ডুগডুগি বাজছে।
চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নিতে লাগল সে। রক্তচাপ তার বড় বেশি ছিল। কান ঝাঁ ঝাঁ। করত, ঘাড়ে ব্যথা হত। এখনও যেন সেই অস্পষ্ট লক্ষণগুলি রয়ে গেছে।
আরোগ্য? না, সে এখনও বোধহয় আরোগ্যের চৌকাঠ ডিঙোয়নি।
ব্রেকফাস্ট এসে গেল। আবার ন্যাপকিনে বুক পেট ঢাকা পড়ল। তারপর শিশুর মতো হাঁ করে নার্সের হাত থেকে চামচে–চামচে বিস্বাদ খাবার খাওয়া। তারপর ওষুধ।
মুখ মুছিয়ে খাটটা নামিয়ে দিল নার্স।
কত ঘুম ঘুমোবে শান্তশীল? এত বকেয়া ঘুম জমে ছিল তার শরীরে? নাকি এরা বারবার ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখে? কে জানে কী, তবে শান্তশীল ঘুমোল।
যখন জাগল তখন ঘরের জানালা বন্ধ। এয়ারকন্ডিশনিং চালু হয়েছে। ঘর নিস্তব্ধ। উঁচ পড়লে শোনা যায়।
ডাক্তার এলেন। মুখে পেশাদার অভয় হাসি। দাড়ি নিখুঁত কামাননা। চোখে বুদ্ধির তীক্ষ্মতা। অমায়িকতায় মাখামাখি মুখশ্রী।
কেমন দেখছেন ডক্টর গুহ?
চমৎকার। গুড প্রোগ্রেস।
আমার একটু হাঁটতে ইচ্ছে করছে।
হাঁটবেন। তবে আজ নয়। উইকনেস এখনও আছে। হাঁটতে গেলে মাথা রিল করতে পারে।
পোর্টেবল যন্ত্রে ডাক্তার ইসিজি রিডিং নিলেন। শান্তশীল চোখ বুজে রইল। তার শৈশবে অসুখ হলে একজন সস্তার এলএমএফ ডাক্তার ছিল বাঁধা। ছিল মার্কামারা ওষুধ। মার্কামারা পথ্য। মিকশ্চার, বড়ি, বার্লি, দুধ সাগু, শান্তশীলের সতেরো বছর বয়সে তার স্কুল শিক্ষক বাবা মারা গেলেন। সাত ভাইবোন আর মা নিয়ে বিরাট সংসার। তখন অসুখ হলে ডাক্তারও আসত না। শান্তশীলের এক দাদা ছিল জড়বুদ্ধি। সে মারা যায় মেনিনজাইটিসে, চিকিৎসাই হল না। শুধু ডেথ সার্টিফিকেট লিখতে ডাক্তার এসেছিলেন। চার টাকা ভিজিটও নিয়েছিলেন।
সেই চারটে টাকার কথা আজ খুব মনে পড়ল। চারটে টাকার জন্য তখন হাহাকার ছিল।
বাঃ, অলমোস্ট নরমাল। আর কয়েকটা দিন রেস্ট নিন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
শান্তশীলের চোখের কোণে কি একটু জল? অবসন্ন হাত তুলে সে চোখ মুছে নিল।
নার্সের সঙ্গে চাপা গলায় কথা বললেন, ডাক্তার। তারপর চলে গেলেন।
আজ সে একশো-দেড়শো টাকা পেগের মদ খায়, মহার্ঘ হোটেলে গিয়ে খেয়ে আসে ডিনার।
অথচ, শৈশবে, বেড়ে ওঠার সময়ে এক কাপ দুধও কখনও জোটেনি। সাত ভাইবোনের সেই ছিল সবচেয়ে মেধাবী। তাই তার ওপরে ছিল সকলের আশা আর নজর। একটা পরিবারের সে-ই হয়ে উঠেছিল নিউক্লিয়াস।
কী করেছে শান্তশীল তার পরিবারের প্রতি?
হিসেব করে দেখলে সে তার এক ভাইয়ের চাকরি করে দিতে পেরেছে। দুই বোনের বিয়েতে মোটামুটি সাহায্য করেছে। চাকরি জীবনের প্রথমে সে মাইনে বেশি পেত না।
ধার-কর্জ করতে হয়েছিল। ধীরে-ধীরে সেই ঋণ শোধ হয়েছে।
শান্তশীলের বুকটা ভার লাগছে। ব্যথা নেই, কিন্তু ভার। আর ক্লান্তি।
আমি কি বই পড়তে পারি সিস্টার?
বই! নার্স একটা যেন চিন্তা করে মাথা নেড়ে বলে, না।
অন্তত নিউজ পেপার?
ওঃ, ইউ আর ন্যাগিং। আচ্ছা দেখছি দাঁড়ান।
নার্স চলে গেল। একটু বাদে একটা ইংরেজি খবরের কাগজ এনে দিয়ে বলল , ফর টেন মিনিটস। নো মোর। পড়লে কিন্তু স্ট্রেন হয়।
শান্তশীল কাগজটায় চোখ বোলাল। পৃথিবীর খবর সম্পর্কে তার খিদে ছিল। এখন খিদেটা কেন যেন নেই। কাগজটা বালিশের পাশে ভাঁজ করে রেখে দিল সে। পরে পড়বে। দরজায় টোকা। পড়ল।
শান্তশীল কোনও কৌতূহল বোধ করল না। জানলা দিয়ে বাইরে রোদ আর হাওয়ার খেলা দেখতে লাগল।
একটা ছায়া পড়ল চোখে।
শান্তশীল তার অনাগ্রাহী চোখ তুলে যুবতীটিকে দেখল। যেন অচেনা বা আধোচেনা কেউ। বিয়ের বারো-তেরো বছর পরও শান্তশীল স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি যে, সে তার স্ত্রী মধুশ্রীকে প্রকৃতই ভালোবাসে কি না। আর এখন অসুখের পর, পৃথিবীর সঙ্গে তার এত ব্যবধান রচিত হয়েছে যে, এই মহিলাকে কাছের লোক বলেও মনে হচ্ছে না।
মধুশ্রীর শরীর থেকে ইন্টিমেট পারফিউমের তীব্র গন্ধ আসছে। গন্ধটা ভালো লাগছে না শান্তশীলের। গন্ধটা তার বুকে ধাক্কা দিচ্ছে, শ্বাসবায়ুকে মন্থন করে গাঢ় করে তুলছে। একটু নীচু হয়ে তার কপালে আলতো হাত রাখে মধুশ্রী।
শান্তশীলের দুটি মেয়ে আছে। এ সময়ে তাদের স্কুল। রোজ নয়, তবে মাঝে-মাঝে তারা দুটি করুণ উদ্বিগ্ন মুখ নিয়ে বাবাকে দেখতে আসে। মধুশ্রী আসে রোজ। আসে নিজস্ব গাড়িতে। ফেরার পথে মার্কেটিং করে যায়।
শান্তশীল খুব স্থির অপলক চোখে মধুশ্রীর দিকে চেয়ে রইল। এইভাবে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কটাকে খুঁজে দেখছিল। কীরকম সম্পর্ক, কোন সম্পর্ক, কোথায় তাদের যোগসূত্র? এ একটি নারী, সে একজন পুরুষ সেটাও একটা সম্পর্ক বটে, কিন্তু বড্ড পলকা। আরও গভীর কিছু নেই? আরও অবিনশ্বর কিছু?
তুমি তো ভালোই আছ এখন। ডাক্তার গুহ বলছিলেন–আর এক সপ্তাহ পরে ছেড়ে দেবেন।
এক সপ্তাহ! এক সপ্তাহে ক’টা দিন? কত ঘণ্টা? কত মিনিট? কত সেকেন্ড? মধুশ্রী কি জানে নার্সিংহোমের এই ঘরে এক-একটা সেকেন্ড কত লম্বা হয়?
শান্তশীল নির্বিকার মুখে বলল , ওঃ।
একটা সপ্তাহ দেখতে-দেখতে কেটে যাবে।
যেদিন তার হার্ট অ্যাটাক হয় সেদিন সকালে মধুশ্রীর সঙ্গে তার বিশ্রী একটা শো-ডাউন হয়েছিল। ঝগড়া তাদের মধ্যে কমই হয়। আসলে সেলস ইঞ্জিনিয়ার শান্তশীলকে কলকাতার বাইরে যেতে হয় খুব বেশি, অফিসের কাজ তার সময়টুকু রাক্ষসের খাবার কেড়ে খেয়ে নেয়। দুটি ফুটফুটে মেয়ে আর অভিমানী বউয়ের সঙ্গে কাটানোর মতো সময় আর তার হাতে বিশেষ থাকে না। কিন্তু সেদিন হয়েছিল। সাংঘাতিক শো-ডাউন। বুকের ব্যথার শুরু সেই থেকে। দুপুরে অফিসে ব্যথা বাড়ল। সন্ধেবেলা আরও। রীতিমতো তীব্র ব্যথা। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেল। একটা ক্লাব–ডিনার ছিল বিকেলে। শান্তশীল মদ দিয়ে ব্যথাটাকে ধুয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল। সিগারেট খেয়েছিল পর পর। ব্যথা উঠতে লাগাল মাথায়। বিপদ বুজে সে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল পার্টি থেকে। গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছোতে পারলেই যথেষ্ট।
পারেনি। তবে গাড়ি পার্ক করার চত্বর অবধি চলে গিয়েছিল সে। তারপর বুক চেপে ধরে বসে। পড়ল মাটিতে। ড্রাইভার নঈম তাকে দেখতে পেয়েছিল আরও কিছু পরে। লোক জড়ো করে শান্তশীলকে সে ধরাধরি করে গাড়িতে তোলে এবং বুদ্ধিমানের মতো সোজা নিয়ে আসে নার্সিংহোমে। তারপর বাড়িতে খবর দেয়।
মেয়েরা দাম্পত্য কলহের কথা সহজে ভোলে, ছেলেরা ভোলে না, শান্তশীলের জিবে যে বিস্বাদ এখনও লেগে আছে, তা ওই দিনের ঝগড়ার স্মৃতি জড়িয়েও।
মধুশ্রী এমনিতে দেখতে খারাপ নয়। রাস্তায় ঘাটে পুরুষরা দু-একবার ফিরে তাকাতে পারে। পঁয়ত্রিশ, কিন্তু পঁয়ত্রিশ বলে মনেও হবে না। তা এই মধুশ্রীকে দেখে শান্তশীলের কোনও প্রতিক্রিয়া হচ্ছেনা। লক্ষণটা কী খারাপ?
তুমি নিজে কেমন ফিল করছ?
ভালো।
চোখের কোণে জল কেন বলো তো! কেঁদেছ নাকি?
না। ও এমনিই। চোখ জ্বালা করেছিল।
তোয়ালে দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিল মধুশ্রী। তারপর বলল , এরা এত করছে তোমার জন্য যে, আমার আর কিছু করার থাকছে না। আমি দেখি, চলে যাই, কোনও মানে হয়?
কেন, সেবা করতে চাও?
কিছু করতে পারলে ভালো লাগত।
এই তো ভালো।
জানি। দে আর প্রফেশনাল পিপল। আমরা তো এদের মতো পারব না। তবু মনে হয়, আপনজনের অসুখ করলে কিছু করতে পারলে ভালো হয়।
শান্তশীল চোখ বুঝে বলল , ডোন্ট বি সেন্টিমেন্টাল।
আমাদের সময়ও কাটছে না। ক’দিন যা টেনশন গেল। কাল রাতে একটু ঘুমোতে পেরেছি।
এতদিন ঘুমোওনি?
হয় নাকি? যা টেনশন।
শান্তশীল জানলায় চড়াই দেখতে পাচ্ছিল। এখন শার্সি বন্ধ। কিন্তু শার্সির বাইরে দুটো চড়াই বরাবর চক্কর খাচ্ছে। হয়তো একটা মেয়ে চড়াই, অন্যটা পুরুষ।
শান্তশীল কোনও দিনই আবেগপ্রবণ নয়। আর পৃথিবীর কোনও মানুষের প্রতিই তার কোনও নাড়ি ছেঁড়া টান নেই। তার মা থাকে শান্তশীলের ছোট ভাইয়ের কাছে। জব্বলপুর। এত গুরুতর অসুখের পরও মা’কে দেখতে ইচ্ছে করেনি তার। তার দুটি ফুটফুটে মেয়েকে সে ভালোবাসে বটে, কিন্তু সেরকম বাড়াবাড়ি কখনও করে না। তবে আবেগহীনতা তাকে মাঝে-মাঝে বিপদে ফেলে দেয়। বাবা মারা যাওয়ার পর কাঁদা দূরের কথা, সে এত স্বাভাবিক আচরণ করেছিল যে মা পর্যন্ত ওই শোকের সময়েও তার ওপর রেগে উঠেছিল।
অবসন্ন শান্তশীল চোখ বুঝে ভেবেছিল, সে কি একটু নিষ্ঠুর? হৃদয়হীন?
যখন চোখ মেলল শান্তশীল তখন মধুশ্রী চলে গেছে। শুধু দম বন্ধ করা গন্ধটা রেখে গেছে ঘরের বাতাসে।
নার্স ঘরে নেই। সবসময়ে থাকে না। সে ঘুমোচ্ছে দেখে হয়তো করিডোরে বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা মারছে। অসুবিধে নেই, হাতের কাছেই কলিং বেল আছে। বোতাম টিপলেই দৌড়ে আসবে। কিন্তু তাকে ডাকবার কোনও প্রয়োজন আপাতত নেই। একটু জলতেষ্টা পেয়েছে। তেমন কিছু নয়, একটু পরে জল খেলেও চলবে। শান্তশীল জানলার দিকে চেয়ে হতাশ হল। রোদ্দুর আসছে বলেই বোধ হয় পুরু পরদায় গোটা জানলাটা ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্রেক্ষাগৃহের মতো এই ঘরে আর কতদিন তাকে শরীরে বন্দি হয়ে থাকতে হবে?
শান্তশীল বুকের ভারটা টের পাচ্ছে এখনও। শরীরের অবসাদও। খুব ধীরে সে কনুইয়ের ওপর ভর রেখে উঠে বসবার চেষ্টা করল। মাথার মধ্যে কেমন একটা পাক মেরে চোখে অন্ধকার দেখল কিছুক্ষণ। তারপর সে-ভাবটা কেটে গেল। খুব ধীরে-ধীরে শরীরে যতদূর সম্ভব কম চাপ দিয়ে সে উঠে বসল। এই সামান্য পরিশ্রমেই কি হাঁফ ধরল তার? বড়-বড় শ্বাস ফেলতে লাগল
এইবার? শান্তশীল দেখল তার স্টিলের বেডটা বেশ উঁচু। সে কি নামবে? পারবে নামতে? পড়ে যাবে না তো? উচিত হবে কি নামাটা?
আরও সাত দিন এই অবরোধে কাটানোটা অর্থহীন। তার বাবা মারা গিয়েছিল অনেক অনাদরে, প্রায় বিনা চিকিৎসায়, তার পরিবারের ডাক্তার ডাকার বা ওষুধ খাওয়ার রেওয়াজই ছিল না একটা সময়ে। তার দাদার করুণ মৃত্যুর কথা এখনও এত স্পষ্ট মনে পড়ে। কী হবে তার? মৃত্যুর বেশি আর কী হতে পারে?
শান্তশীল তার পায়জামা পরা পা–দুটো ঝুলিয়ে দিল নীচে। তারপর সামান্য দ্বিধাজড়িত কয়েকটা সেকেন্ড।
শান্তশীল মেঝের ওপর দাঁড়াল। হাঁটু ভেঙে পড়তে চাইছে। শরীরে একটা অদ্ভুত থরথরানি। বিছানায় ভর রেখেই সে এই দুর্বলতা সামাল দিল। হাঁটবার জন্য এখন তাই দুর্জয় সাহস। বুকের থরথরানি, শরীরের অভ্যন্তরে ঝিঝির ডাক, মাথার চক্কর এসব নিয়ে হাঁটবার চেষ্টা করাটাও যে বিপজ্জনক তা শান্তশীল জানে।
এক-পা এক-পা করে সে কয়েক পা এগিয়ে গেল। শরীরে তেমন ভারসাম্য থাকছে না। সে টলছে। সোজা যেতে গিয়ে বেঁকে যাচ্ছে। জানলার কাছ বরাবর এসে পরদাটা সরিয়ে বাইরে তাকাল। বেলা দশটার কাছাকাছি কি এখন? বা আর একটু বেশি? এ-ঘরে একটা দেওয়াল ঘড়ি আছে। কিন্তু সেদিকে তাকাল না সে। ক’টা বাজে জেনে তার লাভ কী? তার জানলার নীচেই একটা পার্ক, পার্কে জলাশয়। নিবিড় গাছপালা আছে চারদিকে।
শান্তশীল খানিকক্ষণ তৃষিতের মতো চেয়ে রইল সেই দিকে। একটা রাধাচূড়া গাছের তলায় বেঞ্চে ময়লা জামাকাপড় পরা একজন বুড়ো মানুষকে দেখতে পাচ্ছিল সে। বসে ঝিমোচ্ছে।
শান্তশীল ধীর পদক্ষেপে হেঁটে দরজার কাছে এল। সাবধানে দরজাটা খুলে দেখল করিডোর ফাঁকা। বাইরে বেরিয়ে এল শান্তশীল। দরজাটা সাবধানে ভেজিয়ে দিয়ে সিঁড়ি ধরে নামতে থাকল। নীচে। লিফট নিল না। দরকার কী?
সাত বা আটতলা থেকে নামারও কিছু পরিশ্রম আছে। শান্তশীল রেলিং–এ হাত রেখে নামতে লাগল। নামতেই লাগল। একটার পর একটা ধাপ। অশেষ। অনেক উর্দিপরা লোক তাকে দেখল। কয়েকজন নার্সও। কিন্তু কেউ কিছু বলল না। যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত। কারও তেমন সময় নেই।
খালি পায়ে নীচে নেমে এল শান্তশীল। বুক ভার, শরীরে অবসাদ, তবু তেমন কিছু ঘটল না তার শরীরে। কোনও বিস্ফোরণ নয়, কোনও যবনিকা নয়।
সামনে চমক্কার কংক্রিটের ড্রাইভওয়ে। ঢালু হয়ে নেমে গেছে রাস্তায়। শান্তশীল ধীর এবং দৃঢ় পদক্ষেপে পথটুকু পেরিয়ে রাস্তায় নামল।
চারদিকে জমজম করছে কলকাতা। অবারিত পৃথিবী। শান্তশীলের মাথার মধ্যে একটা পংক্তি আপনা থেকেই চলে এল, বন্ধন হোক ক্ষয়। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে কতবার গানটা শুনেছে। কিন্তু মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগল ওই একটি লাইন, বন্ধন হোক ক্ষয়…
শান্তশীল এত মুক্ত কোনওদিন বোধ করেনি। তার পকেটে একটি পয়সাও নেই, পায়ে জুতো। নেই, পরনে শুধু পায়জামা আর বুশ শার্ট গোছের। কয়েকদিন দাড়ি কামানো হয়নি। তাকে। কেমন দেখাচ্ছে কে জানে?
শান্তশীল যথেষ্ট সাহস বোধ করছে, আত্মবিশ্বাসও। শরীরের জড়তা কেটেছে, বুকের ভার ততটা অনুভব করছেনা। সে পায়ে-পায়ে পার্কটায় চলে এল। ফটক ঠেলে ঢুকে পড়ল ভিতরে।
একজন দারোয়ান গোছের লোক গম্ভীর মুখে এগিয়ে এসে বলল , ইঁহা ঘুসনা মানা হ্যায় জি।
শান্তশীল তর্ক করল না। বিনয়ের সঙ্গে বেরিয়ে এল। পার্কটাতেই যে তাকে ঢুকতে হবে এমন কোনও কথা নেই। সে তো এখন সব দিকেই যেতে পারে। যেখানে খুশি। সুতরাং সে কিছু চিন্তা না করেই হাঁটতে লাগল।
একটু বাদেই সে যখন বুঝতে পারল যে বাড়ির দিকেই হাঁটছে তখন ইচ্ছে হল পথ পালটাতে।
পথ পালটাল শান্তশীল। কিন্তু কোন দিকে যাবে তা স্থির করতে মন চাইল না। উদাসভাবে হাঁটতে লাগল শুধু। দেখল, কোনও লাভ হচ্ছে না। তার অভ্যস্ত সংস্কার, তার জৈব চেতনা তাকে ঠিক নিয়ে যাচ্ছে একটা চেনা পথের দিকেই। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে।
বাড়ির দারোয়ান তাড়াতাড়ি উঠে একটা অভিবাদন জানাল।
সাব, তবিয়ৎ ঠিক তো হ্যায়?
হ্যাঁ।
সিঁড়ি ভেঙে ওঠা বড় বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে কি? তার অ্যাপার্টমেন্ট পাঁচতলায়। অনেকটা পথ হেঁটেছে শান্তশীল। অন্তত মাইলতিনেক। সে ঘামছে। একটু হাঁফ ধরেছে তার।
একটু ভেবে লিফটে উঠে দরজা বন্ধ করে দিল শান্তহীন। তারপর চোখ বুজে দম নিল শান্তভাবে।
কলিং বেল একবার মাত্র বাজাল সে। কেউ দরজা খুলল না। তাহলে কি মধুশ্রী এখনও ফেরেনি। কাজের মেয়েটা অবশ্য নেই, দেশে গেছে শুনেছে সে। তাহলে কি ফিরে যাবে শান্তশীল?
দরজাটা হঠাৎ সামান্য একটু ফাঁক হল। খুব সামান্য। একটা চোখ সেই ফাঁক দিয়ে তাকে বিদ্ধ করল।
তারপরই একটা ক্ষীণ ভয়ার্ত গলায় আর্তনাদ, কে?
শান্তশীল বুদ্ধের মতো শান্তভাবে চোখটার দিকে ঘুরে তাকাল। কিছু বলল না। চোখটা মধুশ্রীর। তাকে চিনতেও পারছে। তবু দরজাটা হাট করে খুলল না তো!
খুব ধীরে-ধীরে দরজাটা খুলল মধুশ্রী। তার চোখে অপার বিস্ময়।
তুমি! তুমি কী করে এলে?
শান্তশীল দেখল, মধুশ্রীর চুল এলোমেলো, পরনে তাড়াহুড়োয় চাপানো হাউসকোট, যার বোতামের–সঙ্গে–বোতামের ঘর ঠিকঠাক মেলেনি। বাঁ-গালে টাটকা একটা কামড়ের দাগ।
শান্তশীল ভদ্রভাবে চোখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল , আমার আসবার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু কেন যে চলে আসতে হল। এর কোনও মানে হয় না।
দ্বিধাগ্রস্ত মধুশ্রী দরজা মেলে ধরে বলল , এসো।
শান্তশীল ঘরে ঢুকল। মস্ত বড় বসবার আর খাওয়ার ঘর। ইন্টিরিয়র ডেকরেটর দিয়ে সাজানো হয়েছিল। অবিশ্বাস্য রকমের চকচকে। এত সাজানো যে, এই অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে তেমন স্বস্তি হয় না।
শান্তশীল ঘরে ঢুকে বুঝল, মধুশ্রী ভীষণ রকমের নার্ভাস। মুখ বিবর্ণ।
শান্তশীল খুব ঠান্ডা মাথায় বলল , আমি একটু বাথরুমে যাব।
ওঃ, আচ্ছা।
শোওয়ার ঘরের দরজাটা আপনা থেকেই কি বন্ধ হয়ে গেল? নিঃশব্দে? শান্তশীল একটু থামল। মধুশ্রীর দিকে চেয়ে বলল , দশ মিনিটের জন্য।
অ্যাঁ?
দশ মিনিটের জন্য বাথরুমে গেলে তোমার হবে তো? মধুশ্রী অবোধ জন্তুর মতো চেয়ে রইল। বোবা।
দশ মিনিটের বেশিই সময় নিল শান্তশীল। বুকটায় আবার ভার। একটা ঘুনঘুনে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে বুকে। বেসিনে উপুড় হয়ে শান্তশীল মুখেচোখে জলের ঝাঁপটা দিল অনেকক্ষণ। তোয়ালে দিয়ে মুখটা মুছবার সময় টের পেল, শরীর ভেঙে আসছে ক্লান্তিতে, অবসাদে। কিন্তু ঈর্ষা নেই, ক্রোধ নেই, অপমান নেই।
যখন বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল শান্তশীল তখন মধুশ্রীর মুখ বিবর্ণ, চোখে ভয় তবে সামলে নিয়েছে অনেকটা। হাউসকোটের বোতাম ঠিকঠাক লাগানো, চুল এলোখোঁপায় বাঁধা, শুধু বাঁ গালে একটা দাঁতের দাগ জ্বলজ্বল করছে। সামান্য পাউডারের প্রলেপ সেটা ঢাকতে পারেনি।
শান্তশীল এই শরীরে কী করে নার্সিংহোম থেকে চলে এল, কেন এল এইসব জরুরি প্রশ্ন মধুশ্রী করল না। সে শান্তশীলের দিকে তাকাতেই পারছেনা।
শান্তশীল বাইরের ঘরেই সোফায় বসল। বুকে ঘনিয়ে উঠছে ব্যথা। ঘাম হচ্ছে। ঘাড়ে দপদপ করছে একটা রগ। মাথার মধ্যে চক্কর। তবু শক্ত গলায় বলল , বিছানার চাদরটা পালটে দাও। যাও।
মধুশ্রী ছুট পায়ে চলে গেল।
শান্তশীল বুকে হাত রাখল। দুষ্ট হৃদযন্ত্র এখনও রক্ত পাম্প করে যাচ্ছে। কিন্তু বড্ড দ্রুত। বড্ড বেশি দ্রুত। কান ঝাঁঝা করছে। সে কি মরে যাচ্ছে?
মাথাটা একবার ঝাঁকাল শান্তশীল। একবার ককিয়ে উঠল। তারপর হঠাৎ টের পেল, তার ভারী ঈর্ষা হচ্ছে। ভীষণ। তার রাগ হচ্ছে। তার খুন করতে ইচ্ছে করছে–
মধুশ্রী যখন তাকে নিতে এল ঘরে তখন এলিয়ে পড়ে আছে শান্তশীল। চোখ বোজা। ঘামে ভিজে যাচ্ছে গা।
মধুশ্রী ফোনের কাছে ছুটে গেল।
শান্তশীল তার যন্ত্রণার মধ্যেও বুদ্ধের মতো শান্ত গলায় বলল , আমি ভালো আছি। ফোন কোরো না। বরং কিছু খেতে দাও।
খুব ধীরে-ধীরে ফোনটা নামিয়ে রাখল মধুশ্রী। তারপর স্বামীর দিকে ফিরে তাকাল।
শান্তশীল মৃদুস্বরে বলল , আরোগ্য।
কিছুই বুঝল না মধুশ্রী। শুধু মনে হল, তার পাথরের মতো প্রতিক্রিয়াশীল স্বামী বোধ হয় আসলে রক্তমাংসেরই মানুষ।