আমি মারকোনী নই, তাসমিয়া

আমি মারকোনী নই, তাসমিয়া

আমরা ইতালীয় ক্যাথলিক হলেও ধর্মের ব্যাপারে আমাদের পরিবার খুব গোঁড়া ছিলো না। নিজ ধর্মের মতো অন্যসব ধর্মের প্রতি আমাদের সমান শ্রদ্ধা রয়েছে। এটার শিক্ষা দিয়েছিলেন আমার বাবা। মাও ছিলেন কোমল স্বভাবের। মা-বাবা দুজনই মুসলমানদের প্রতি খানিকটা দুর্বল ছিলেন। দীর্ঘদিন মুসলমান প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের কারণেই হয়তো এ দুর্বলতা তৈরি হয়েছিলো।

এজন্য শামসদের সঙ্গেই যে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো তা নয়, আশেপাশের অনেক মুসলিম পরিবারের সঙ্গেও আমাদের সখ্যতা ছিলো। ইউরোপের অনেকগুলো দেশের মানুষ এখানে পাশাপাশি বসবাস করে। কিন্তু ওদের কারো সঙ্গেই আমাদের কারো তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। মুসলমানদের সঙ্গেই আমাদের উঠাবসা।

এন্য অন্যান্য ইউরোপিয়ানদের কেউ কেউ আমাদেরকে কে মুসলমান বলে মনে করতো। একদিন সকালে চার্চে গিয়েছি। চার্চে এমনিতে খুব একটা যাওয়া হয় না। মাসে দুসালে একবার হয়তো যাওয়া হয়। তাও চার্চের শান্তিশিষ্ট পরিবেশটার কারণে। ওখানে গেলে মনটা কেমন পবিত্র হয়ে যায়।

চার্চে তখন লোকজন প্রায় একেবারেই ছিল না। শুধু একজন প্রৌঢ় লোক। তার সঙ্গে তার মেয়ে। ওরা মেক্সিকান। মেয়েটিকে আমি চিনি দূর থেকে। কিন্তু কথা হয়নি কোনদিন। আমি চার্চে ঢুকতেই মেয়েটি এগিয়ে এলো। ছিপছিপে গড়নের বেশ সুন্দরী একটা মেয়ে। যেকোন পুরুষের জন্য দারুণ আকর্ষনীয় পাত্রী। আমার সামনে এসে হাই বলে তার হাত বাড়িয়ে দিলো।

আমি লিলিয়ান! এবং মেক্সিকান। উনি আমার বাবা। এখন উপাসনা করছেন।

আমি মারকোনি। তোমাকে আমি চিনি এবং তিনি যে তোমার বাবা তাও জানি।

 আমিও তোমাকে এবং তোমার মা বাবাকে চিনি। কিন্তু তোমার নাম জানতাম না। শুনেছিলাম বোধহয় দুএকবার। কিন্তু মনে ছিলো না।

ধন্যবাদ।

কিন্তু তোমার নাম শুনে তা মনে হচ্ছে তুমি মুসলমান নও… খ্রিস্টান…,

হ্যাঁ, আমরা ক্যাথলিক খ্রিস্টান। ইতালিয়ান। কেন মুসলমান ভেবেছিলে আমাকে

লিলয়ানের কথায় আমি বেশ মজা পেলাম। লিলিয়ানের নাম শুনেছি আমার স্কুলের বান্ধবীদের কাছে। ও নাকি রোজ রোজ এক একজন ছেলের সঙ্গে ডেটিং করে। কোন ছেলেকেই ওর মনে ধরে না। আর যে ছেলে একদিন ওর সঙ্গে ডেটিংয়ে যায় পরদিন আর সে ওর কাছে ধারে ঘেষে না। কিন্তু লেলিয়ানের মতো এমন রূপসী মেয়ের বেলায় এমন কথা কে বিশ্বাস করবে? ব্যাপারটা রহস্যজনকই লাগলো। আর এখন লিলিয়ানের কথা শুনে একটু বিস্মিতই হলাম। জিজ্ঞেস করলাম।

তা আমার ব্যাপারে তোমার মনে এমন অদ্ভুত ভাবনা এলো কেন?

তোমরা তো মুসলিম কমিউনিটিতেই থাকো। তোমার মা বাবাকে ওদের সঙ্গেই বেশি দখো যায়। চার্চে বা গির্জায় আমি উনাদেরকে কখনো দেখিনি। আর তোমাকে আমি অনেক বার দেখেছি একটা ছেলের সঙ্গে। দারুণ দেখতে ছেলেটা! কি যেন নাম… রাখো রাখো মনে পড়ছে। অনেক কষ্ট করে নাম জোগাড় করেছি সেই ছেলের…যা, মনে পড়ছে… শামসৃ! ঠিক না?

শামসের নামটা শুনতেই আমার ভেতরটা শিহরিত হয়ে উঠলো। আমার মুখটাও হয়তো লাল হয়ে উঠেছিলো। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছিলাম স্বাভাবিক থাকতে। সেটা লিলিয়ানের চোখ এড়ালো না।

নামটা শুনেই অমন লজ্জা রাঙা হয়ে উঠলে? বলতে গিয়ে লিলিয়ানের চোখে মুখে কৌতুক ফুটে উঠলো।

না, না, ওরকম কিছুই না। কি বলছো এসব লিলিয়ান? আমরা এক সঙ্গে লেখাপড়া করি। পাশাপাশি পড়ি। এই তো এর চেয়ে বেশি কিছু না। বলতে সিয়ে আমার গলা কেঁপে উঠলো।

ওরকম কিছু তো আমি বলিনি মারকোনি! আমি শুধু বলেছি এমন লজ্জা রাঙা হয়ে উঠলে কেন? ওতেই তুমি এতগুলো কথা বলে ফেললে। যে কেউ শুনলেই বুঝতত ওই ছেলেকে তুমি প্রচণ্ডরকম ভালোবাসে। কিন্তু তুমি কি ফুসলমান ছেলে ছাড়া আর কোন ছেলে পেলে না? তোমাদের ইতালিয়ানদের মধ্যেই তো কত দারুণ দারুণ ছেলে আছে। তাছাড়া মুসলমানরা তো অন্য ধর্মের লোকদেরকে বিধর্মী বলে। অন্য ধর্মের সবাই ওদের শত্রু। যুদ্ধ, লড়াই, দাঙ্গা, ফাসাদ করতেই ওরা ভালোবাসে…।

চুপ করো লিলিয়ান! আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম অনেকটা উত্তেজিত কণ্ঠে, অনেক বলে ফেলেছে। মানুষ যেটা জানে না সেটাকেই শত্রু বা বৈরী মনে করে। মুসলমানদের ব্যাপারে জানো না বলেই এ ধরনের মন্তব্য করতে পারছে। মুসলমানরা অন্য ধর্মের লোকদেরকে কখনোই শক্র মনে করে না। বরং আমরাই ওদেরকে অকারণে শত্রু মনে করি। বছরের পর বছর ধরে মুসলমানদের সঙ্গে আমরা বাস করে আসছি। কখনো কি ওদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি। শামস আমাকে বলেছে, ইসলামই একমাত্র ধর্ম যেখানে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মিলে মিশে থাকার এক চমৎকার আদর্শ শিক্ষা দেয় তার অনুসারীদের …।

এখন ফ্রান্সীরা অন্যায়ভাবে ওদেরকে ওদের মাতৃভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে বলেই তো ওরা রুখে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া তো ওদের কিছু করারও ছিলো না। এজন্য কি ওদেরকে যুদ্ধবাজ-দাঙ্গাবাজ বলাটা উচিত হবে

তুমি শামসের কথা বলেছে। হ্যাঁ, আমাদের ইতালিয়ান ক্যাথলিকদের মধ্যে অনেক সুদর্শন যুবক আছে। কিন্তু ওদের মধ্যে আর শামসের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। সেই শৈশব থেকে শামস আমার খেলার সঙ্গী। এক সঙ্গে আমরা একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ালেখা করি। এমনকি একই গাড়িতে করে আমরা দিনের পর দিন স্কুলে আসা যাওয়া করেছি। এভাবেই আমরা বড় হয়েছি। সবকিছু বুঝার মতো বয়সে পৌঁছেছি।…

কিন্তু আমি যে ওকে পছন্দ করি এ কথা কখনো ওকে আমি বলিনি এবং সেও আমাকে মুখ ফুটে কখনো কিছু বলেনি। বুও আমাদের মধ্যে যে একটা অব্যক্ত ভালো লাগার সম্পর্ক আছে সেটা আমরা বেশ অনুভব করতে পারি। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় কি জানো? ও আমাকে কখনো ইচ্ছে করে স্পর্শ করেনি। একটু ছুঁয়েও দেখেনি। অথচ তুমি যাদের কথা বলছে ওসব ছেলের সঙ্গে দুঘণ্টার পরিচয়েই তো শুধু সম্পর্ক নয়, অনেক কিছুই ঘটে যায়। খুব সহজেই ওরা মেয়েদের কুমারিত্ব হরণ করে নিতে পারে। এসব ছেলের সঙ্গে শামসের তুলনা?

সরি! মারকোনী! আমি তোমাকে আঘাত করতে চাইনি। তুমি যা বলেছে তাই হয়তো ঠিক। আমি একদিন তোমার শামসকে কলেজের ক্যাম্পাসে একা পেয়ে ডেটিংয়ের অফার করেছিলাম। ও আমাকে এমন হেলা ফেলা করে প্রত্যাখ্যান করলো যে, আমি খুবই ইনসান্ডেট ফিল করলাম। অথচ এই প্রথম কোন ছেলে আমাকে প্রত্যাখ্যান করলো। সম্ভবতঃ সেই ক্ষোভেই তোমাকে ও ভাবে কথাগুলো বলেছি।

***

এ কথা শামস আমাকে বলেনি। এজন্য আমার তেমন খারাপও লাগলো না। কারণ, শামস এসব মেয়ে ঘটিত ব্যাপারগুলো যেমন অপছন্দ করে এসব নিয়ে আলোচনা করতেও অপছন্দ করে। অবশ্য লিলিয়ানের সঙ্গে আমার যে কথা হয়েছে সে ব্যাপারেও আমিও যে কিছু বলিনি! বলার চেষ্টা করলেই নিজে নিজে লজ্জায় লাল হয়ে যেতাম। অবশ্য তেমন সময় সুযোগও আসেনি। এর সপ্তাহ খানেক পরই ওদের বাড়ি ফ্রান্সী পুলিশ রেড করে।

এরপরের ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটে গেলো, আমি দিশেহারার মতো হয়ে গেলাম। আমার ওপর সার্জেন্ট ডোনাল্ডের চোখ পড়া, বিয়ের প্রস্তাব এবং বিয়ে করা কোন কিছুই যে শামসের চোখ এড়ায়নি এটা আমি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছিলাম। একারণে শামসের মনোকষ্ট আমাকে ক্ষত বিক্ষত করেছিলো। সত্যিই, শাস্স ও তার মা এবং আমার বাবার জীবন বাঁচানোর জন্য এ ছাড়া কোন বিকল্প পথ ছিলো না।

ডোনান্ডকে আমি নরপশুর চেয়ে বেশি ঘৃণা করতাম। কিন্তু ও আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। এ কারণেই হয়তো ওর প্রতি আমার ঘৃণার তীব্রতা কিছু কমে এসেছিলো।

এর মধ্যে একদিন খবর এলো, শামস ফ্রালীদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। খবরটা দিলো ডোনাল্ড। শুনে মনে হচ্ছিলো, আমার স্বপ্নের অবশিষ্ট দুনিয়াটাও যেন ভেঙ্গে পড়েছে। আমি ডোনান্ডকে চেপে ধরলাম, তোমার দ্বারা যেন ওর কোন ক্ষতি না হয়।

মারকোনী! লক্ষ্মী! পাগলামি করো না। সে তো এখন আর তোমার কেউ নয়। ওকে নিয়ে তোমার এত দুশ্চিন্তা কেন যেকোন সময় ও ফ্রান্সীদের হাতে মারা পড়বে। এক সময় ওর কথাও তুমি ভুলে যাবে।

বিশ্বাস করো ডোনাল্ড! আমি হয়তো তোমাকে ভুলে যাবে। কিন্তু ওকে কখনো ভুলবো না। আমি ক্ষেপাটে গলায় বললাম।

শান্ত হও মারকোনী! এসব তুমি কি বলছো?

আমার একটা কথার জবাব দেবে?

অবশ্যই দেবো।

 তুমি আমাকে ভালোবাসো?

তোমার কোন সন্দেহ আছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি তোমাকে। বলতে বলতে ডোনান্ড আমার সামনে হাটু মুড়ে বসলো।

তাহলে আমি যা চাইবো তা আমাকে দেবে?

যা চাইবে সব দেবো। কি চাও তুমি?

শামসের জীবনের নিরাপত্তা। যে পর্যন্ত তুমি ওর দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত না হবে, তুমি ওকে বাগে পেলেও মারাবে না এবং গ্রেফতারও করবে না।

ডোনান্ডের চোখে মুখে একজন পরাজিত মানুষের বিষণ্ণ ছায়া নেমে এলো। অনেকক্ষণ কিছুই বললো না। কংক্রিটের ছাদের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

এর বিনিময়ে কি তুমি আমাকে ভালোবাসবে? অনেক্ষণ পর ডোনান্ড ভাঙ্গা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

হ্যাঁ, ভালো না বাসলেও ঘৃণা করতে চেষ্টা করবো না। আর শোন, ভালোবাসার কোন বিনিময় হয় না।

ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো? ডোনাল্ড কাষ্ঠ হেসে বললো।

এরপর আর ডোনাল্ড বেশিক্ষণ রইলো না। চলে গেলো। ডিউটিতে ব্যস্ত থাকায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্লা দিন দিন ভারী হওয়ায় ডোনাল্ড একাধারে কয়েক দিন বাসায় ফিরলো না।

৬ষ্ঠ দিনের দিন রাতে নয়টার দিকে খবর এলো, ডোনাল্ড আলজাযায়েরের মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সম্মুখ লড়াইয়ে নিহত হয়েছে। শুনে খুব খারাপ লাগলো। লোকটা আমাকে খুব ভালোবেসেছিলো। বিনিময়ে ওকে আমি ঘৃণা ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি। কেন জানি খুব কান্না এলো। কাঁদলাম অনেক্ষণ।

পরদিন শামসের বাসায় গিয়েও খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কান্না করলাম। তারপর খালাম্মা আম্মাকে সান্ত্বনা দিয়ে সেই প্রস্তাবটি দিলেন। মুসলমান হওয়ার এবং শামসের…আর বলতে পারছি না। মনে পড়লে এখনো আমার দুচোখ ভরে অশ্রু নেমে আসে।

শামসের আম্মু আমাকে মুসলমান হওয়ার দীক্ষা দিলেন। আমার চমৎকার একটি নামটি রাখলেন। তাসমিয়া। আমিএখন মারকোনী নই, তাসমিয়া।

আর দ্বিতীয় প্রস্তাবটির জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না তখন। যদিও কাংখিত ছিলো। শামসও প্রস্তুত ছিলো না। শামস্ বললো,

আম্মু! মারকোনী মানে তাসমিয়া এখন ওদের বাসাতেই থাকুক।

হ্যাঁ, তাসমিয়া! শামস আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আমিএখন আমাদের ক্যাম্পে চলে যাচ্ছি। আশা করি তুমি বর্তমান অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করবে। মাঝে মধ্যে আম্মুকে এসে দেখে যেয়ো। যেদিন আলজাবায়ের স্বাধীণ করতে পারবো সেদিন তোমাকে তোমাদের ঘর থেকে তুলে আনবো। আল বিদা… আল বিদা তাসমিয়া

এগার মাস পর। আলজাযায়ের স্বাধীন হলো। আলজাযায়েরের মুসলিম মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মাতৃভূমিকে দখলদার ফ্রান্সীদের কবল থেকে উদ্ধার করলো। মুক্তিযযাদ্ধারা দারুণ খুশি। টিভিতে খণ্ড খণ্ড বিজয়-উত্সব এবং ছোট ছোট মিছিলের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে। যুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। সেকি লোমহর্ষক দৃশ্য। দেখানো হচ্ছে লড়াকু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, আহতদের এবং শহীদদের ছবিও।

মুক্তিযোদ্ধারা যার যার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। ফিরে যাচ্ছে আপনজনদের কোলে। কিন্তু শাস ফিরে এলো না। ফিরে আসছে না। এক দিন দুই দিন সাত দিন। শাম্স আসছে না। কিছু বলতে পারছে না। শাম্‌সের আম্মু আর আমি মুক্তিযুদ্ধে ক্যাম্পগুলো চষে ফেললাম। হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোনটাই বাদ গেলো না। কেউ বললো, শামস্ বেঁচে আছে, কেউ বললো, শামস অসাধারণ যুদ্ধ করেছে। দারুণ করিশমা দেখিয়েছে; কিন্তু সামান্য আহত হয়েছে।

সপ্তম দিনে শামসের মার চোখে পানি দেখলাম। এই প্রথম কাঁদতে দেখলাম তাকে। সেকি কান্না! বুক উজাড় করা কান্না। বুক খালি করে কাঁদলাম আমিও।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার দশ দিন পর ঘোষণা এলো, আজ টিভিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পুরস্কৃত করার অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

রাত নয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হলো। একে একে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ অবদানের জন্য পদক দেয়া হলো। সব শেষে উপস্থাপক ঘোষণা দিলো,এখন বারজন। বীরশ্রেষ্ঠকে স্বর্ণপদক দেয়া হবে। তিন নম্বরে ঘোষণা হলো শামসের নাম।

শামসের আম্মা আর আমি দুজনই চমকে উঠলাম। দুজনের দৃষ্টিতে দিশেহারা ভাব ফুটে উঠলো। অধীর প্রতীক্ষার জ্বালা দুজনকেই যেন আগুন অঙ্গার করে দিচ্ছিলো। অবশেষে মঞ্চ এলো। দৃঢ়-ঋজুভঙ্গিতে এক দীপ্তিমান পুরুষ। শাম্স। আমাদের শামসা পদকটি হাতে নিয়ে শুধু বললো,

আমার এই পদক উৎসর্গ করলাম আমার মাকে, আমার প্রিয় মারকোনিকে এবং হাজার হাজার মুক্তিকামী শহীদদেরকে।

মা ঝাপসা চোখে আমার দিকে তাকালেন। স্মিত হেসে বললেন,

তাসমিয়া! তুমি কি এখনো মারকোনি?

না; খালাম্মা। আমি মারকোনী নই, আমি তাসমিয়া আমি হেসে বললাম।

তাহলে ও এসে যে পর্যন্ত তোমাকে তাসমিয়া বলে না ডাকবে তুমি ওর কথার কোন জবাব দিবে না; মা সকৌতুকে বললেন এবং পরম স্নেহে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *