তিন
জোসেফ আমাকে রাতভর কিছু খেতে দিল না। ভোরে কিছু খেতে দেবে, তাও দিল না। কিছু না খেতে দিয়েই আমাকে নিয়ে বান্দ্রা রওনা হল। ক্ষুধায় আমার পেটের নাড়িভুঁড়ি চোঁ চোঁ করতে লাগল। আমার চলৎশক্তি রহিত হয়ে আসছিল।
অবশ্য আমাকে ভুখা রাখতে পেরে জোসেফ খুশীই হয়েছিল। কারণ, আমাকে যত বেশি ভুখা রাখতে পারবে ততই তার লাভ। বেশি বেশি মদ ধরাতে পারবে আমার পেটে। আমি আগে থাকতেই জানতাম, এ কাজ করতে হলে আমাকে দিনভর মাত্র একবার খেতে দেবে। আর তাও দিনের দশটা এগারটায়, যখন স্মাগলিং এর কাজ সারা হবে। উপবাস থাকা খুব কষ্ট। কিন্তু আমি একথা ভেবে মনকে সান্ত্বনা দিলাম যে, পৃথিবীতে কোটি কোটি লোক অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। আর আমি তো হলাম গিয়ে এক গাধা। দিনভর একবারও যদি এক আধ আঁটি ঘাস পাওয়া যায়, তাই আমার জন্যে ঢের।
বান্দ্রার গোপন ঘাঁটিতে পৌঁছে জোসেফ আমাকে জিজ্ঞেস করল,
‘এখন কি করব?’
‘এখন বালতিতে মদ এনে আমার সামনে রাখ। আমি তা পান করে নিই।’
জোসেফ একটা ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সে ঘর থেকে দু’জন লোক বেরিয়ে এল। একজন জোসেফ, অন্যজন কামতাপ্রসাদ। কামতাপ্রসাদ লোকটা হালকা পাতলা এবং খিটখিটে মেজাজের। কিন্তু এক নম্বর ফোরটুয়েন্টি এবং চালাকের হদ্দ। দু’জনে ধরাধরি করে মদভর্তি একটা বড় বালতি নিয়ে এল।
এক বালতি দু’বালতি করে বড় কষ্টে আমি তৃতীয় বালতিটাও পান করলাম। কিন্তু এরপরও কামতাপ্রসাদ আর এক বালতি নিয়ে এল। আমি মাথা নেড়ে অসম্মতি জানালাম ৷ ‘কি যে বল, চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি? দু’তিন বালতি মদ তো একজন তাগড়া লোক এক দিনেই পান করে ফেলতে পারে। আর তুমি গাধা হয়ে কিনা’
‘না, ভাই আমি পারব না। আমার পেট ফেটে যাবে তাহলে।’ ঠিক আছে, না পারলে আর কি করা। তবে তোমাকে রাতের বেলা ইনোজফ্রুটসন্ট বা অন্য কোন ঔষধ দিতে হবে। ভোর বেলা তাহলে পেটটা আরো বেশি খালি হবে। তখন সহজেই চার বালতি পান করতে পারবে তুমি।’
আমি বললাম, ‘এখন ওসব কথা রাখ। যত জলদি পার আগে আমাকে নিয়ে চল। দেরি করলে আমার নেশা হবে। খালি পেটে মদ পান করলে সহজেই নেশা পায়।
ওর দু’জন আমাকে বান্দ্রার মসজিদের কাছে নিয়ে ছেড়ে দিল। আর আমি একটা বেওয়ারিশ গাধার মত ঘোরাফেরা করতে করতে ক্রমশ ফাঁড়ির দিকে এগোতে লাগলাম।
সকালের মৃদুমন্দ হাওয়া আমার বেশ ভালই লাগছিল। মহমক্রাকের কাছে জেলেরা জাল রোদে দিয়েছে। দূরে সমুদ্রে নানা ধরনের নৌকা পাল তুলে চলেছে। ছোট ছোট মেয়েরা রঙ বেরঙের ফ্রক পরে চড়ুই পাখির মত চেঁচামেচি করতে করতে স্কুলে যাচ্ছিল।
আজকের সকাল বেলাটা আমার বেশ ভাল লাগল। আমার মনে একটা গানের কলি গুঞ্জন করছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল গলা ছেড়ে তান ধরি। কিন্তু একালে ইচ্ছা করলেই সবকিছু করা যায় না। আজকাল সর্বত্র ব্যবসা নীতি চলছে। একটা মামুলী জিনিসও পারমিট বা কোটা ছোড়া এদিক-সেদিক করা যায় না। পারমিট বা কোটা না হলে স্মাগলিং বা ঘুষের আশ্রয় নিতে হয়। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতকেও আজকাল রেডিওর লোকরা লাইট মিউজিকের প্রোগ্রামে স্মাগলিং করে থাকে।
আমি এসব ভাবছিলাম আর হেলে দুলে চলছিলাম। হঠাৎ একটা মারাঠি মেয়েকে দেখতে পেয়ে আমি থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। গাঢ় সবুজ রঙের মারাঠি শাড়ি আর সোনালী কাজ করা কাল মতো ব্লাউজে তাকে চমৎকার মানিয়েছিল। সকালের সোনালী সূর্যের আভা পড়েছে তার চোখে মুখে। তার চুল থেকে একটা চমৎকার তেলের গন্ধ আসছিল। ডাগর ডাগর চোখের পলক টেনে টেনে এমন ব্রীড়ানতার ভঙ্গিতে সে চলছিল, দেখে মনে হচ্ছে এ ধূলির ধরার কোন মানবী সে নয়, ইন্দ্রলোকের অপ্সরী। মন্ত্রমুগ্ধের মত আমি তার পেছনে পেছনে চলছিলাম।
পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বেজায় রকম ভিড়। সারি সারি ট্যাক্সি, লরি, বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশ অত্যন্ত সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে সেগুলোকে নিরীক্ষণ করছে এবং এক এক করে যাবার অনুমতি দিচ্ছে।
পুলিশ একটা গাড়ির তল্লাশী নিচ্ছিল। এমনি সময় মারাঠি মেয়েটি সেখানে একটু দাঁড়াল। মেয়েটির হাতে একটা কাঁসার থালা ছিল। মেয়েটি চারদিকে ইতিউতি করে যখন আবার পা চালিয়ে দিল এমন সময় একজন মেয়ে পুলিশ তাকে ডাক দিয়ে দাঁড় করাল।
মেয়ে পুলিশটি কাছে এসে বলল, ‘কোথায় যাচ্ছ তুমি?’
‘মন্দির।’
হঠাৎ মেয়ে পুলিশটি তার দেহ তল্লাশী শুরু করে দিল। সামনে পেছনে হাত চালিয়ে তার শাড়ীর তল থেকে দুটো মদ ভর্তি টিউব বের করে ফেলল।
‘তুমি মদ নিয়ে মন্দিরে যাচ্ছিলে বুঝি।’ মেয়ে পুলিশটি বলল মারাঠি মেয়েটি
জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে দিল।
একজন সিপাই আমার পিঠে একটা ঘা বসিয়ে দিল, বলল,
‘পা-জী গাধাটা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন?’
ঘা খেয়ে আমি দৌড় দিলাম এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘মহম’-এর ঘাঁটিতে যেয়ে পৌছলাম। জোসেফ এবং কামতাপ্রসাদ আগে থাকতেই আমার প্রতীক্ষা করছিল সেখানে। জোসেফ আমার গলায় রশি লাগিয়ে টেনে টেনে অন্ধ গলিতে এসে তারপর সেখান থেকে একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে নিয়ে গেল। আমাকে নিয়ে ওরা সেখানে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর দরজাটা খট খটাল।
‘কে?’ একটা মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে এল।
‘আমি কামতাপ্রসাদ।’
দরজা খুলে গেল। বাদামী রং-এর ব্লাউজ এবং গাঢ় লাল রং-এর ছায়া পরিহিতা এক সুন্দর, সুঠাম মেয়ে এগিয়ে এলো। একটু ঘাড় বাঁকিয়ে বলল, ‘আজ খালি হাতে এসেছ মনে হয়?’
‘মারিয়া আগে দরজাটা ছেড়েই দাঁড়াও না। মারিয়া দাঁড়ালো ওরা আমাকে টেনে আরো ভেতরের কোঠায় নিয়ে গেল।
এবং তারও পরে একটা খোলা আঙ্গিনায় গিয়ে উপস্থিত হলাম আমি। আঙ্গিনার এক কোণে ক’টা ড্রাম রাখা আছে। অন্য কোণে একটা দড়িতে ধোয়া কাপড় শুকাতে দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে খাটিয়ায় এক বুড়ো শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে।
ওরা দুজন হঠাৎ গায়েব হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর একটা রবারের নল এবং একটা বিরাট ড্রাম নিয়ে এলো। ড্রামটা আমার সামনে রেখে আমার গলা দিয়ে নল ঢুকিয়ে দিল।
আমার গলা দিয়ে মদ বেরুচ্ছে দেখে মারিয়া তো হতবাক। হঠাৎ সে এমন জোরে হাসতে শুরু করল যে, আমরা চমকে উঠলাম। হাসতে হাসতে ওর চোখে জল দেখা দিল। জোসেফ মারিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘আমরা বড় লোক হতে আর ক’দিনই বা লাগবে মনে কর। যখন বিরাট শেঠ হয়ে যাব, তখন তো আর তুমি বিয়ে করতে আপত্তি করবে না?’
মারিয়া তার হাতটা ঝটকা দিয়ে সরিয়ে কামতার কাছে যেয়ে বলল, ‘দেখা যাবে।’
তারপর একটু হেসে বলল,
‘তোমরা কি করে এ জানোয়ারটাকে বশ করলে? আশ্চর্য, তোমাদের মাথায় এত বুদ্ধি আছে আগে জানতাম না।’
‘জোসেফ আবার বলল,
‘আমাদের বিয়ে কবে হচ্ছে তাই বলো।’
মারিয়া আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আমার তো এখন এ গাধাকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। এ তো গাধা নয়, সোনার খনি।’
কামতাপ্রসাদ মদগুলোকে বালতিতে ঢেলে মাপল। তারপর বলল,
‘পৌনে তিন বালতি হল। এক চতুর্থাংশ গাধাটা হজম করে ফেলেছে।’ ‘শোকর কর। গাধা বলে তবু পৌনে তিন বালতি ফেরত পেয়েছ। কোন পাকাশরারী যদি পান করত তাহলে এক ফোঁটাও ফেরত পেতে না।’
জোসেফ বলল, ‘গাধাটা যতটুকু হজম করেছে, ততটুকু পানি দিয়ে পূরণ করে নাও।’
আমি মনে মনে হেসে বললাম, দুধেও পানি, মদেও পানি …
কামভাপ্রসাদ জিজ্ঞেস করল, ‘শেঠ কোথায়?’ মারিয়া কামতার কানে কানে কি যেন বলল। তারপর দু’জনে বারান্দার দিকে চলে গেল। এই ফাঁকে আমি জোসেফকে বললাম, তাড়াতাড়ি আমাকে ঘাস দাও নইলে এক্ষুণি আমি ক্ষুধায় মরে যাব ৷
‘এইতো এক্ষুণি দিচ্ছি পার্টনার।’
বলেই সে মারিয়াকে ডেকে বলল, ‘মারিয়া ঘাস নিয়ে এস।’ মারিয়া ঘাস নিয়ে এলো এবং আমার সামনে বসে খাওয়াতে লাগল। তার নরম এবং সুন্দর হাত আমার মাথায় ও কানে বুলিয়ে আদর করতে লাগল। সে হাতের পরশের কি আমেজ, তা একমাত্র আমিই বুঝতে পারি।
দিন দুয়েক পর কামতাপ্রসাদ একটা মোটা টিউব এবং হ্যাণ্ড পাম্প দিয়ে বলল, ‘গাধাটা সত্যিই কামচোর। ওর পেটে এত কম মদ ধরে কি করে?’
জোসেফ বলল, ‘বেচারী যতটুকু সামলাতে পারে, তার চেয়ে বেশি নেবে কি
করে? তার শক্তি পরিমাণ সে পান করে।’
‘জী না, এ পাম্পের সাহায্যে আমি ওর পেটে মদ ভর্তি করবো।’
আমি বললাম, ‘আমার পেটটা একটা জানোয়ারের পেট। এটা কোন মোটরের টিউব না যে, যত পাম্প দেবে ততই ফুলবে।’
কিন্তু কামতাপ্রসাদ আমার কোন কথাই শুনল না। যেমন করে মোটরের টায়ার পাম্প দেয়া হয়, সেভাবে সে আমার পেটে মদ ভর্তি করতে লাগল। শেষ অবধি আমার মনে হল আমার পেট যেন ফেটে যাচ্ছে। পাম্প করতে করতে আমার গলা দিয়ে যখন মদ পড়তে আরম্ভ করলো, তখন সে পাম্প টানা বন্ধ করল।
কামতা প্রসাদ বিজয়ীর হাসি হেসে বলল, পুরো ছ’বালতি মদ ভর্তি করলাম। কোথায় তিন বালতি আর কোথায় ছ’বালতি ৷’
জোসেফ বলল, ‘তালেতো বেশ এখন দেখছি আমাদের ব্যবসা দ্বিগুণ হচ্ছে।’ আমি ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বললাম,
‘তোমরা এত নির্দয়, আমার পেট ফেটে যাচ্ছে।’
‘একটু সহ্য করে থাক দোস্ত। মাত্র পাঁচ মিনিটের রাস্তা বই তো নয়। চোখের পলকের মধ্যে পার হয়ে যাও—আমাদেরকে মহম এর চকে পাবে।’
‘যদি আমাদের এক আধ মিনিট দেরিও হয়, কোন চিন্তা নেই। তুমি সেখানে পৌঁছে একটু অপেক্ষা কর।’ কামতাপ্রসাদ বলল, তারপর জোসেফের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এ খুশীতে এক পেগ হয়ে যাক না।’
‘হোক ৷’ জোসেফ সম্মতি জানাল।
তার পান করছিল আর আমি রওনা হয়ে গেলাম। অন্য দুদিনের মতই আমি নির্বিঘ্নে মহমের চকে যেয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছে তাদেরকে না পেয়ে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ওদের প্রতীক্ষা করতে লাগলাম আমি।
. আমি যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম সেখানে সারি সারি ভাড়াটে ট্যাক্সি দাঁড়িয়েছিল। অপরদিকে ক’জন বিদঘুটে ধরনের লোক চারপেয়েতে বসে লটারীর নম্বরের কথা বলাবলি করছিল আর সকালের নাস্তা খাচ্ছিল।
সেসব দিক আমার খেয়াল খবর ছিলনা। আমি শুধু ওদের প্রতীক্ষা করছিলাম। আমার সাংঘাতিক অসুবিধা হচ্ছিল। আমার পেট ফেটে যাবার উপক্রম হলো।
ওদের প্রতীক্ষায় আমি পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট করে সময় অতিবাহিত করলাম। কিন্তু ওদের টিকিটাও দেখা গেল না। আমি নিজের উপর অভিসম্পাত দিতে লাগলাম। কেন আমি এ বাজে কাজটা আরম্ভ করলাম।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে নেশা পেয়ে গেল। আমার মাথা ঘুরতে লাগল আমার শিরা উপশিলায় মদ প্রবাহিত হয়ে চলল। মনে হল আমি হাওয়াতে ভেসে বেড়াচ্ছি। আমি মাতাল হয়ে আস্তে আস্তে নাচতে শুরু করলাম। সেই সাথে গানও গাইতে লাগলাম। আমার এই অবস্থা দেখে আমার চারিদিকে লোকজন জমা হয়ে গেল।
‘কি আশ্চর্য, গাধা নাচছে।’
‘শুধু নাচছে বল কেন, গাইছে যে তা শুনতে পাচ্ছ না? অপরজন বলল। আমি পাকা নাচিয়ের মত বিলোল কটাক্ষ হেনে বললাম,
‘ইয়ারো মুঝে মাফ কর, ম্যায় নেশে মে হুঁ।’
আমার নেশা যত বাড়তে লাগল, লোকজনও জমা হতে লাগল প্রচুর।
‘বেশ মজার গাধাতো দেখছি।’
‘একজন বলল, কি আশ্চর্য। গাধা মানুষের মত কথা বলছে।’
‘একেই বলে বিংশ শতাব্দী—এ কালে কিনা হয়।’
‘এটা বোম্বাই—বোম্বাইতে সবকিছুই সম্ভব। এখানে গাধা যদি মানুষের গলায় কথা বলে তাতেও আশ্চর্যের কিছু নেই।’
অন্য একজন বলল। লোকটিকে, ওপাশের চার পেয়েতে বসে নাস্তা খেতে দেখেছিলাম। সে তার সাথীকে ডেকে আবার বলল,
‘অদ্যাবধি তুমি কোন গাধাকে কথা বলতে দেখছ জুমন?’ ‘না শেঠজি, শুনিওনি এমন সৃষ্টি ছাড়া কথা ৷’
জুমন এবং শেঠ ভুসুরিমল দু’জনকেই আমি চার পেয়েতে দেখেছিলাম। শেঠ বলল,
‘ইয়ার জুমন—আমার কাছে কেমন যেন গোলমেলে মনে হচ্ছে ব্যাপারটা।’ ‘কি রকম গোলমাল?’
‘আমার মনে হয় আসলে এটা গাধা নয়। কোন সাধু সন্ন্যাসী হবে। দুনিয়ার পাপাচার থেকে দূরে থাকার জন্য গাধার বেশ ধারণ করেছে।’
‘তুমি ঠিকই বলছ শেঠ। আমারও মনে হচ্ছে কোন পীর পয়গম্বরের আত্মা এ গাধার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে।’
‘তাহলে তার পায়ের উপর পড়ে লটারীর নম্বরটা জিজ্ঞেস করি।’ বলেই শেঠজি এত লোকের সামনে গাধার পা জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আমরা চিনে ফেলেছি তোমায় সাধু মহারাজ।’
জুমন অন্য পা ধরে বলল,
‘বাবা ফকির দস্তগীর দয়া করে লটারীর নাম্বারটা দাও।’
‘আমি ঝটকা টানে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম—’কি সব বাজে বকছো। তোমরা ভাগো এখান থেকে।’
‘না ছাড়ব না তোমায়, নম্বর না বললে মোটেই ছাড়ব না, তোমায় বাবা। তুমি জ্ঞানে অন্তর্ধান হয়ে আমাদের নম্বরটা একটু দেখে দাও।’ শেঠ বলল –
‘দয়া করে এ গরীব বেচারাকেও একটা নম্বর বলে দাও বাবা— তুমি রাগ হলে আমরা কোথায় যাব?’
জুমন বলল—তাদের দেখাদেখি আরো কজন লোক আমার পায়ের ওপর এসে পড়ল।
‘তোমাকে প্রতিদিন হালুয়া খেতে দেব। শুধু একবার ওপেন টু ক্লোজ নাম্বারটা গড় গড় করে বলে দে বাবা।’
আমি জানতাম না বোম্বেতে এত লোক লটারী আর রেসের পাগল।
এখন এদের নাম্বারটা বলে আমিই বা বাঁচব কি করে? আমি অনেক সাধু সন্ন্যাসীকে ভুয়ো নাম্বার বলে দিতে শুনেছি। আমি তাই করব কিনা ভাবছিলাম। প্রথমে আমি হাত পা ছেড়ে কিছু জায়গা করে নিলাম। তারপর আবোল তাবোল বকতে শুরু করলাম। ‘অন্তর মন্তর জন্তর—কংগ্রেস লীগ ছু মন্তর। হিন্দু মুসলিম এক মন, ‘দুই প্রাণ ৷’
শেঠ খুশী হয়ে বলল,
‘পেয়েছি পেয়েছি।’
জুমন বাঁধা দিয়ে বললো,
‘আমিও বুঝে নিয়েছি—একের সাথে দুই মিলিয়ে নাও।’