খুব বুড়ো হয়ে যাচ্ছি,
চুল পেকে যাচ্ছে, ত্বকে ভাঁজ পড়ছে,
মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়ালে চমকে উঠি, এ কি সেই আমি!
যে আমাকে আমি দীর্ঘ দিন ধরে চিনি, এ কি সেই!
এখন প্রায় প্রতিদিনই খবর শুনতে হয় এর হা−র্ট অসুখ, ওর কিডনি চলে
যাচ্ছে,
লিভার যায় যায়।
শুনি জরায়ুতে বিদঘুটে কিছু বড় হচ্ছে, স্তনে ক্যানসার,
শুনি প্রো−স্টটে কিছু একটা ধরা পড়েছে, কারও ফুসফুস নষ্ট, হঠাৎ হাত
পা অবশ।
কবছর আগেও শুনেছি বন্ধুদের বাবার বাবা চলে গেলেন,
মার মা।
এরপর কারও বাবা, কারও মা।
হাহাকার করতে করতে চমকে উঠে দেখেছি আমার পাশে যে মা ছিলেন,
আমার নিজের মা,
আমার দিকে সেই কতকাল স্বপ্ন-চোখে তাকিয়েছিলেন,
হাতটি ধরে ছিলেন, আমার ঠাণ্ডা হাতটি,
নেই।
এখন বন্ধুরাও কেউ কেউ চলে যাচ্ছে , তাকালে বড় ফাঁকা দেখি
চারদিক,
যে ছিল, কালও ছিল, হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই, নেই।
এখন এর ওর মত আমারও শরীরে একের পর এক উপদ্রপ জমছে।
আমাদের যাবার সময় হচ্ছে, আমরা সবাই খুব বুড়ো হয়ে যাচ্ছি —
শুনছো তোমরা?
অসুখগুলো আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে যাইছে না, এত যে তাড়াতে
চাইছি, তারপরও
কি অসভ্যের মত আমাদের টানছে অন্ধকার খাদের দিকে, দেখছো!
এই যে এত বই পত্তর, বেশির ভাগের পাতা এখনো ওল্টানো হয়নি
নাম ঠিকানা লেখা হাজার টুকরো কাগজ, কী হবে এসবের!
এই যে বাড়িগাড়ি, টাকা পয়সা, এই যে হাজারটা স্বপ্ন জড়ো করা আছে,
কী হবে!
জীবন গুছিয়ে নিয়ে বসতে বসতেই শুনি জীবনের একেবারে কিনারে
দাঁড়িয়ে আছি,
একটি কেবল টোকা পড়লেই হল..
শুনছো, আমরা খুব ভয়ংকর রকম, খুব অশ্লীল রকম, খুব জঘন্য রকম
নিঃসঙ্গ হয়ে যাচ্ছি!
সামনে আমাদের আয়না ছাড়া আর কিছু থাকছে না,
ঝকঝকে একটি আয়না, আর নাস্তার টেবিলে লাল নীল বড়ি,
মেপে ভাত, মেপে তরকারি, মেপে নুন চিনি, একশ রকম নিষেধের
কাদায় প্রতিদিন গলা পর্যন্ত ডুবে থাকতে হচ্ছে।
আমরা সবাই এমন বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, আমার ভয় করছে খুব,
ভয় করছে বুড়ো হচ্ছি বলে,
কোথাও কোনও অন্ধকারে যে অন্ধকার থেকে কোথাও আর ফিরব না
কোনওদিন,
যেতে ইচ্ছে করছে না,
আমার ভয় হচ্ছে, রাগ হচ্ছে, অভিমান হচ্ছে, মায়া হচ্ছে,
চোখ খুলতে খুলতেই দেখি জীবনের একেবারে কিনারে দাঁড়িয়ে আছি,
একটি কেবল টোকা পড়লেই হল..
এই এতটুকু এক চিমটি জীবনে আমার শখ মেটে না,
এই এতটুকু এক বিন্দু জীবনে আমার তৃষ্ণা মেটে না,
এই এতটুকু এক তিল জীবনে আমার স্বস্তি হয় না,
এই এতটুকু এক কণা জীবনে আমার কিচ্ছু হয় না..