আমার সাহিত্যিক বিকাশ : উৎকল পর্ব

আমার সাহিত্যিক বিকাশ : উৎকল পর্ব

মোগলরা যখন ওড়িশা জয় করে নেয় তখন তাদের রাজকার্যের সুবিধার জন্যে ফারসি জানা কর্মচারীর দরকার হয়। তা ছাড়া এমন কর্মচারীর দরকার হয় যিনি মোগল প্রশাসন পদ্ধতিতে অভিজ্ঞ। রাজা টোডরমলের সঙ্গে কাজ করতে করতে সেরকম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন হুগলি জেলার কোতরংনিবাসী আমার পূর্বপুরুষ। ওড়িশার রাজস্ব বন্দোবস্ত সারা হলে তিনি সেইখানেই বসবাস করতে শুরু করেন। রাজসরকার থেকে মিলে যায় জাহাঙ্গিরি তালুক। পুরুষানুক্রমে লাখেরাজ প্রধানত বালেশ্বর জেলায়। বংশের নাম হয় মহাশয় বংশ।

মোগল আমলের মতো ইংরেজ আমলেও ঘটে অনুরূপ ঘটনা। এবার ফারসি জানা কর্মচারীর নয়, ইংরেজি জানা কর্মচারীর বা উকিলের দরকার। সেইসূত্রে ওড়িশায় গিয়ে বসবাস করেন আমার মাতৃকুল। এঁদের আদিনিবাস কোথায় ছিল জিজ্ঞাসা করিনি। তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্রের বংশ এঁদের আত্মীয়। তার থেকে অনুমান হয় এঁরাও কলকাতার কাছাকাছি অঞ্চল থেকে স্থানান্তরী হন। এঁদের চালচলনও তার প্রমাণ। কলকাতার আধুনিকতম রেওয়াজ কী তা জানতে হলে এঁদের ওখানে যাওয়াই যথেষ্ট। দুই পরিবারের মাঝখানে দুই শতাব্দীর ব্যবধান। আমার মাতুলালয় কটকে। বাবা কাজ করতেন ঢেঙ্কানল রাজসরকারে।

বাংলাদেশ থেকে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক কোনো অর্থেই বিচ্ছিন্ন না হলেও আমার পিতৃকুল স্বেচ্ছায় ও সানুরাগে ওড়িশার সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলেন। ওড়িয়া বলে পরিচয় না দিলেও ওড়িয়াদের সঙ্গেই ছিল তাঁদের অন্তরের মিল। ওড়িয়ারাও তাঁদের পর মনে করতেন না। এঁদের বাড়ি ছিল ওঁদের বাড়ি। ওঁদের বাড়ি ছিল এঁদের বাড়ি। পরস্পরের সঙ্গে আত্মীয় সম্পর্ক পাতিয়ে তাঁরা একান্ত অন্তরঙ্গ বোধ করতেন। ভাষা এক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করত না। প্রত্যেক বাঙালিই ওড়িয়া জানতেন। শিক্ষিত ওড়িয়ারা তো বাংলা জানতেনই, অশিক্ষিতরাও বাংলা কীর্তন গাইতেন। বাদী পালা বলে একরকম কবিগান ছিল। তার ভাষা বাংলা। গাইয়েরা সবাই ওড়িয়া যাত্রায় বা নাটকে অভিনয় করতেন। ওড়িয়া ভাষা ও সাহিত্যের ওপর তাঁদের ঠিক ততখানি টান ছিল যতখানি বাংলার ওপর। তাঁদের বাড়িতে কাশীদাসী মহাভারত, কৃত্তিবাসী রামায়ণ, কবিকঙ্কণ চন্ডী-ও পড়া হত, বৈষ্ণব পদাবলী-ও গাওয়া হত, আবার উপেন্দ্র ভঞ্জ ও অভিমন্যু সামন্তসিংহারের ছান্দ অনুশীলন করা হত।

এই হল মোগল আমলের বাঙালিদের ঐতিহ্য। ইংরেজ আমলের বাঙালিদের ঐতিহ্য অন্যরূপ। প্রাচীন ওড়িয়া সাহিত্য তাঁদের কাছে গ্রিক। অথছ অত বড়ো রসের খনি আর নেই। আধুনিক কাব্য—তা সে বাংলাই হোক আর ওড়িয়াই হোক—এর কাছে স্বাদহীন। ওড়িয়ারা যে তাদের প্রাচীন সাহিত্যের জন্যে গর্বিত এর কারণ তাদের সাহিত্যও তাদের শিল্পের সঙ্গে একই সুরে বাঁধা। তবে তাদের ভুলটা এইখানে যে আর একটা কোণার্ক বা ভুবনেশ্বরের মন্দির যেমন চাইলেই গড়া যায় না, আর একটি রসসাহিত্যও তেমনি চেষ্টা করলেই রচা যায় না। শুধু ‘ছান্দ’ সাজিয়ে গেলেই হয় না। রাধানাথ রায়, মধুসূদন রাও, ফকিরমোহন সেনাপতি বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রাচীনের দিন গেছে। তাকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস বৃথা। তারচেয়ে আধুনিক বাংলার মতো আধুনিক ওড়িয়া গদ্য ও পদ্য প্রবর্তন করা শ্রেয়। হয়তো রসের ভাগ কম পড়বে, নীতির ভাগ বেশি হবে। তবু সেই একমাত্র পথ। অন্য পন্থা নেই।

আমার ছেলেবেলায় আমাকে অবধানের পাঠশালায় পাঠানো হয়। সেখানেই বোধ হয় ‘কেশব কোইলী’ সুর করে পড়তে শিখি। আদিমতম ওড়িয়া ‘ছান্দ’। কিন্তু স্কুলে গিয়ে যে ওড়িয়া কবিতার সঙ্গে পরিচয় হয় তার সুর জানানো সত্ত্বেও কেউ সুর করে পড়ত না। আমিও শিখিনি। তবে আধুনিক কবিতাও সুর করে পড়ার প্রথা তখনও যায়নি। স্কুলের বাইরে শুনেছি। আমাদের যুগেই এ অভ্যাস উঠে যায়। আমরা যখন লিখি তখন পড়ার মতো করে লিখি, গাওয়ার মতো করে নয়। তবু তো ছন্দ মিল রেখে লিখেছি। এখন যাঁরা লিখছেন তাঁরা ওসব মানেন না।

সাহিত্যে অনুরাগ আমাদের বাড়িতে সকলের মধ্যে লক্ষ করেছি। বাংলা আর ওড়িয়ার সঙ্গে ছিল ইংরেজি আর সংস্কৃত। মা জয়দেবের গীতগোবিন্দ গান করে গোপালের আরতি করতেন। বাংলা আমি স্কুলে পড়িনি, পড়েছি বাড়িতেই। বাবা বসুমতী নিতেন, বছর বছর বসুমতী-র উপহার পেতেন। বসুমতী সংস্করণ গ্রন্থাবলি তো ছিলই, আরও ছিল কতরকম রাজনৈতিক গ্রন্থ। নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, ফ্রঙ্কোপ্রাশিয়ান যুদ্ধের ইতিহাস, দারোগার দপ্তর, দেশের কথা, গার্হস্থ্য কোষ ইত্যাদি। বাবা ইংরেজি অর্ধসাপ্তাহিক বেঙ্গলিও নিতেন। আমাকে বলতেন পড়ে শোনাতে। ভারি তো আমার বিদ্যে! বুঝতে না পারলে বলতেন ডিকশনারি দেখতে। আলস্য কাটিয়ে ডিকশনারি দেখতে হত। এমনি করে ডিকশনারি দেখার অভ্যাস হয়। ইংরেজি আমি স্কুলে যেটুকু শিখেছি তার চেয়ে অনেক বেশি শিখেছি নিজের চেষ্টায়।

আমাদের স্কুলের লাইব্রেরিতে ইংরেজি বাংলা ওড়িয়া বই এন্তার ছিল। সব বাছা বাছা। ঢেঙ্কানলের মতো বহুদূরবর্তী দেশীয় রাজ্যে আমাদের স্কুলের লাইব্রেরিটি অপ্রত্যাশিত এক সৌভাগ্য। নোবেল প্রাইজ পাবার আগে রবীন্দ্রনাথের বাংলা বই ওড়িশার ছোট্ট একটি বুনো জায়গায় আনিয়ে রাখা কার আইডিয়া ছিল জানিনে। তবে আমার হাতে যখন পড়ে তখন তিনি নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। হেডমাস্টারমশায় ছিলেন বাঙালি থিয়োসফিস্ট। আর অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টারও উদারমতি বাঙালি। একজনের কাছে পেয়েছি বাংলায় রুচি, আরেক জনের কাছে ইংরেজিতে রুচি। হেডমাস্টারমহাশয় কেন জানিনে একদিন আমার হাতে স্কুলের ম্যাগাজিন সেকশনের ভার দেন। কী করে জানলেন যে আমি পড়ার বই ফেলে মাসিকপত্র পড়তে ভালোবাসি। আমাদের ম্যাগাজিন সেকশনে ছিল ভারতী, মানসী ও মর্মবাণী প্রমুখ সেকালের যাবতীয় প্রসিদ্ধ মাসিকপত্র। তারই মধ্যে সবুজপত্র। পড়ি সবই, কিন্তু সবচেয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ি সবুজপত্র। বারো বছর বয়সে আমি সবুজপত্র-এর আস্বাদন পাই ও মনে মনে সেই ভাবের ভাবুক হই।

দশ বছর বয়সেই আমার বঙ্কিমচন্দ্র পড়া হয়েছিল। শরৎচন্দ্রের আদি পাঠকদের মধ্যে আমিও একজন। আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে কয়েক জন ছিলেন যাঁদের বাড়িতেও বিস্তর বাংলা বই ছিল। মাঝে মাঝে পড়তে পেতুম। দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন ব্রাহ্ম। তাঁর লাইব্রেরিতে বসে অসংখ্য বাংলা বই পড়েছি। এমনি করে বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে আমার ব্যাপক পরিচয় ঘটে। ঠিক অতখানি ব্যাপক পরিচয় ওড়িয়া সাহিত্যের সঙ্গে হয়নি। তখনকার দিনে ওড়িয়া সাহিত্য বলতে সাধারণত যা বোঝাত তা প্রাচীন সাহিত্য ও আধুনিক পাঠ্যপুস্তক। তার বাইরে খুব বেশি বই ছিল না। থাকলে আমি নিশ্চয় পড়তুম। স্কুলের লাইব্রেরিতে অগুনতি ইংরেজি বই ছিল, যা পাঠ্য নয়। অপাঠ্যেই আমার অধিকতর রুচি। স্কট, ডিকেনস ইত্যাদি তো পড়তুমই, পড়তুম ইতিহাসের বই, ভূবৃত্তান্ত, কোষগ্রন্থ। যেমন—চিলড্রেন্স এনসাইক্লোপিডিয়া, সেলফ এডুকেটর। মাসিকপত্রের মধ্যে মাই ম্যাগাজিন।

বছর খানেক আমি একাই একটি মাসিকপত্র সম্পাদনা করি। ওড়িয়া ভাষায়। প্রভা তার নাম। অধিকাংশ রচনাই ছিল আমার। গদ্য, পদ্য, কাহিনি, নিবন্ধ। গম্ভীর ভাবের ও ভাষার সম্পাদকীয়। নাটক লিখে অভিনয়ও করিয়েছি বন্ধুদের দিয়ে। রাজবাড়িতে প্রায়ই থিয়েটার দেখতে যেতুম। থিয়েটারের ম্যানেজার ছিলেন আমার বাবা। আমার সমবয়সিদের কেউ কেউ অভিনয় করছে অথচ আমি তার সুযোগ পাচ্ছিনে, যদিও আমার বাবা স্বয়ং ম্যানেজার। লজ্জার মাথা খেয়ে তাঁকে জানাই আমার অভিলাষ। তিনি এককথায় উড়িয়ে দেন। সেইজন্যেই তো আমি বাড়িতেই থিয়েটার খুলে বসি। বাবা একদিন রাগ করেন, তাই সে-থিয়েটার ভেঙে যায়।

আমার ছোটোকাকা ছিলেন উৎকল সাহিত্য মাসিকপত্রের গ্রাহক তথা লেখক। তাঁর সৌজন্যে ওই পত্রিকার একরাশ পুরোনো সেট আমার হাতে পড়ে। দিনরাত পড়ি। পড়তে পড়তে ওয়াকিবহাল হই। আধুনিক ওড়িয়া সাহিত্য গড়ে ওঠে যেসব পত্রিকা অবলম্বন করে তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ উৎকল সাহিত্য। সম্পাদক বিশ্বনাথ কর মহাশয় ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের একটি স্তম্ভ। সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যেরও। বাংলাদেশে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের যে স্থান, ওড়িশায় বিশ্বনাথ কর মহাশয়েরও সেই স্থান। সাহিত্যের মান যাতে উচ্চ হয় এই ছিল উভয়ের ধ্যান। এরজন্যে রামানন্দবাবুকে লোকসান দিতে হয়েছিল, বিশ্বনাথবাবুকেও। আমার পরবর্তী জীবনে আমি এই দুই মহাপ্রাণ সাধকের সংস্পর্শে এসেছি। এঁরা দুজনেই আমাকে সাহিত্যের রাজ্যে পরিচিত হতে দিয়েছেন।

আমার উচ্চাভিলাষ ছিল আমি প্রবাসী-তে ও উৎকল সাহিত্যে লিখব। বছর ষোলো যখন বয়স তখন প্রবাসী-তে আমার টলস্টয়ের কাহিনির অনুবাদ বেরোয়। আঠারো বছর যখন বয়স তখন উৎকল সাহিত্যে আমার একটি সামাজিক প্রবন্ধ ছাপা হয়। ইতিমধ্যে আমার পিতৃব্যবন্ধু লক্ষ্মীনারায়ণ সাহু মহাশয় আমার একাধিক ওড়িয়া রচনা তাঁর সহকার মাসিকপত্রে প্রকাশ করেন। সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজিতেও লিখতুম আর কটকের কলেজ ম্যাগাজিনে তা পত্রস্থ হত। পরে পাটনা কলেজ ম্যাগাজিনে। প্রবাসী ছাড়া ভারতী-তে আমি লিখেছি। উনিশ-বিশ বছর বয়সে এমন একটি সমাজবৈপ্লবিক প্রবন্ধও লিখি যার সুদীর্ঘ প্রতিবাদ লেখেন অমিয় চক্রবর্তীর জননী অনিন্দিতা দেবী, ছদ্মনাম ‘বঙ্গনারী’। ঢেঙ্কানল ছেড়ে পুরীতে কিছুদিন পড়েছি, সেখানে সমুদ্রতীরে বেড়াবার সময় তাঁকেও বেড়াতে দেখেছি। তিনি আমার পরিচয় জানতেন না, জানলে অর্বাচীনকে বয়স্ক ব্যক্তি ভেবে অতটা সিরিয়াস হতেন না।

পুরী জেলা স্কুলে যে কয় মাস পড়ি তার অমৃতফল কালিন্দীচরণ পাণিগ্রাহীর সঙ্গে বন্ধুতা। তিনি জানতেন না যে আমি একজন প্রচ্ছন্ন সাহিত্যিক। আমিও জানতুম না যে তিনিও তাই। পরস্পরের প্রতি একটা টান অনুভব করতুম। সমুদ্রের ধারে বেড়াতুম। কালিন্দী গান গেয়ে শোনাতেন। এখনও মনে আছে তাঁর সুর আর কথা। তাঁর স্বকীয় নয়, ভিখারীচরণ পট্টনায়কের। আমাদের সেই আলাপই পরবর্তীকালে সবুজযুগ প্রতিষ্ঠার ভিত্তিশিলা। তখন কিন্তু সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। সাহিত্য নিয়ে নাড়াচাড়া করলেও আমার কল্পনা ছিল পক্ষীরাজের পিঠে চড়ে দেশ-বিদেশে যাব। সাংবাদিকতা করে নিজের খরচ চালাব। আমেরিকাই ছিল আমার আপাত লক্ষ্য।

ভূভারতের বিশিষ্ট সংবাদপত্রগুলির নমুনা আমি চিঠি লিখে আনিয়েছিলুম, পড়েছিলুম। ইংরেজি আমি অমনি করেই আয়ত্ত করেছিলুম। আমার ধারণা ছিল আমিও ইংরেজিতে সম্পাদকীয় লিখতে পারি। ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার দিন আমি পাঠ্যপুস্তক ছেড়ে মডার্ন রিভিউ পড়ি। তখন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে। কী হবে পাশ করে, যদি ইংরেজদের গোলামখানায় উচ্চশিক্ষার জন্যে যেতে না হয়? যাচ্ছি তো আমেরিকা, সেখানে কেই-বা জানতে চাইছে আমার পরীক্ষার ফলাফল? আর ইংরেজি যদি ঠিকমতো লিখতে পারি তো সার্টিফিকেট দেখতে চাইবে কে?

পরীক্ষাটা গুরুজনদের খাতিরে কোনোরকমে দেওয়া গেল। তারপরে রওনা হলুম কলকাতা। সেখানে সাংবাদিকতা হাতে-কলমে শিখে পালিয়ে যাব আমেরিকায়। কিন্তু বিধাতা বাম। বসুমতী সম্পাদক হেমেন্দ্রপ্রসাদ ঘোষ আমাকে উপদেশ দিলেন শর্টহ্যাণ্ড শিখতে। সেইসঙ্গে টাইপরাইটিং। এখন বুঝতে পারছি উদীয়মান সাংবাদিকের পক্ষে সেটা অবশ্য শিক্ষণীয়। তখন কিন্তু ভুল বুঝেছি—কী! আমি বাংলা লিখতে পারিনে! সার্ভ্যান্ট সম্পাদক শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী আমাকে প্রুফ সংশোধন করতে দেন। এখন বুঝতে পারছি সম্পাদক হতে হলে প্রুফ দেখা অপরিহার্য। তখন কিন্তু বিরক্ত হয়েছি—কী! আমি ইংরেজি লিখতে পারিনে! মন তো খারাপ হবেই। শরীরও খারাপ হল অর্থাভাবে যা-তা খেয়ে। ছোটোকাকার চিঠি পেয়ে ফিরে গেলাম ওড়িশায়। ভরতি হলুম কটক কলেজে। ইতিমধ্যে পাশ করেছিলুম। সামান্য একটা স্কলারশিপও জুটে গেল।

আমার পুরীর সহপাঠী কালিন্দীচরণ পাণিগ্রাহী ও আমার ঢেঙ্কানলের সহপাঠী বৈকুন্ঠনাথ পট্টনায়ক কটকেও আমার সতীর্থ হন। এদের সঙ্গে যোগ দেন শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও হরিহর মহাপাত্র। আমরা পাঁচ জনে মিলে একটা ক্লাব করি, তার নাম ‘ননসেন্স ক্লাব’। তার থেকে আসে একটি পত্রিকা চালানোর সংকল্প। হাতে লেখা পত্রিকা। কেউ লিখত ইংরেজিতে, কেউ ওড়িয়ায়, কেউ বাংলায়। আমি লিখতুম তিন ভাষায়। হাতে লেখা পত্রিকার পাঠক কোথায়? পাঠক না থাকলে জানব কী করে লেখা কেমন হচ্ছে? অথচ আমাদের এমন সামর্থ্য নেই যে পত্রিকাখানা ছেপে বার করব। তাই অন্যত্র লেখা দিই। ইংরেজি রচনা কলেজ ম্যাগাজিনে সাদরে গৃহীত হয়। বাংলা রচনা প্রবাসী-তে প্রকাশিত হয়। ওড়িয়া রচনা সহকার ও উৎকল সাহিত্য-তে। পরে ভারতী-তেও বাংলা রচনা পত্রস্থ হয়।

ইন্টারমিডিয়েটে আশাতীত সফল হয়ে আমি পাটনা কলেজে ভরতি হই। সেখান থেকে লেখা পাঠাই কলকাতায় ও কটকে। আমাদের পাঁচ জনের সেই হাতে লেখা পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। ক্লাবও বিলুপ্ত। শরৎচন্দ্র পাটনার সহপাঠী হন, আর তিনজন কটকেই বিএ পড়েন। লেখার কাজ চালিয়ে যান। তাঁদের লেখা ও আমাদের লেখা একই পত্রিকায় দেখতে পাওয়া যায়। তখনও আমাদের মনে হয়নি যে আমরা একটা সাহিত্যিক গোষ্ঠী ও আমাদের নাম ‘সবুজ দল’। কবে আর কেমন করে এই নামটার উদ্ভব হয় তা জোর করে বলতে পারব না। তবে ‘সবুজ’ এই শব্দটা ওড়িয়া ভাষায় নতুন। অথচ আমরা আমাদের ওড়িয়া রচনায় চালিয়ে দিয়েছিলুম। তাতে অনেক প্রাচীনপন্থীর আপত্তি ছিল। তা ছাড়া আমাদের সৃষ্টির মধ্যেই ছিল নতুনত্ব বা সবুজত্ব। ‘সবুজপত্রে’র ভাবে ও ভাষায় যে জিনিস ছিল। আমাদের দৃষ্টিও নতুন বা সবুজ। আমরা সমস্ত অন্তঃকরণের সঙ্গে আধুনিক বিশ্বকে বন্দনা করেছিলুম, কেবলমাত্র দেশকে বা দেশের ঐতিহ্যকে নয়। দেশের চেয়ে যুগই ছিল আমাদের কাছে বড়ো, সেইজন্যে পরবর্তীকালে ‘সবুজ সাহিত্য সমিতি’র মুখপত্রের নাম রাখা হয় যুগবীণা। হরিহর মহাপাত্র হন তার সম্পাদক। আর সমিতির কর্ণধার হন শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।

এসব ঘটনা ঘটার আগেই আমি ওড়িয়া সাহিত্য থেকে বিদায় নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আত্মনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিই। এমএ পড়তে পড়তে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেশ কিছুদিন থেকে আমি অনুভব করেছিলুম যে সব্যসাচী হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি সাহিত্যের ভান্ডারে স্মরণীয় কিছু রেখে যেতে চাই তো আরও মন দিয়ে লিখতে হবে। আরও সময় দিয়ে লিখতে হবে। সাময়িক পত্রিকায় লিখে তৃপ্তি হয় না। বই লিখতে হবে। সাংবাদিক হওয়া আমার শেষ লক্ষ্য নয়, সাহিত্যিক হওয়াই শেষ লক্ষ্য। আমেরিকার স্বপ্নও মিলিয়ে আসছিল। চিত্ত জুড়ে ছিল ইউরোপ। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে প্রবেশের উদ্যোগ করছিলুম। অকস্মাৎ একদিন স্থির করে ফেললুম যে এখন থেকে একটা ভাষাতেই সাহিত্য সৃষ্টি করব, সে-ভাষা ইংরেজি নয়, ওড়িয়া নয়, বাংলা।

তখনকার দিনে আমার ওড়িয়া কবিতা উৎকল সাহিত্যে-র প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান পেত। আমার প্রবন্ধও স্বনামে ও বেনামিতে ওর অনেকখানি জুড়ত। বিশ্বনাথ কর মহাশয় আমাদের সবাইকে স্নেহ করলেও আমাকেই সবচেয়ে বেশি জায়গা দিতেন। সম্মানের স্থানও। প্রবাসী একবার আমার একটি বৃহৎ কবিতাকে রামানন্দবাবুর ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’-এর অব্যবহিত পরে স্থান দিলেও সেটা ছিল একটা ব্যতিক্রম। ওড়িয়ায় আমার একটা প্রতিষ্ঠা ছিল, বাংলায় তা নয়। ওড়িয়ায় আমি সুপরিচিত লোক, ‘সবুজ দল’-এর একজন পান্ডা। বাংলায় আমি কেউ নই। ‘কল্লোল’ থেকে আমি দূরে। যদিও মনে মনে ওর কাছাকাছি।

একমাত্র বাংলা ভাষাই হবে আমার সাহিত্যের ভাষা, এমন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া তখন ছিল জুয়া খেলার শামিল। ওড়িয়া ভাষার প্রথম শ্রেণির লেখক না হয়ে হব হয়তো বাংলা ভাষার দ্বিতীয় শ্রেণির লেখক। কী লাভ? কে মনে রাখবে? তখন কিন্তু আমি এসব গণনাকে মনে ঠাঁই দিইনি। আমার যদি কিছু বলবার থাকে আমি কোন ভাষায় সবচেয়ে সহজ ও সরসভাবে ব্যক্ত করতে পারব? এর উত্তর বাংলা ভাষায়। এর প্রধান কারণ বাংলা ভাষায় বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীর সাধনায় কোদাল চালানোর কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ওড়িয়াতে এখনও অনেক বাকি। কোদাল চালানোর দায় আমি নিতে পারব না। আমি চাই তৈরির সড়ক। ওড়িয়াতে আধুনিক সাহিত্যের পথিকৃৎ যাঁরা তাঁদের কারও অনুসরণ করতে আমি নারাজ। আমার কবিতা রাধানাথ রায় বা মধুসূদন রায়ের ধারানুসারী নয়। গদ্যেও আমি ফকিরমোহনের উত্তরসূরি নই। আমি ভেবে দেখলুম যে এঁদের ঐতিহ্যের উপযুক্ত হতে গেলে আমাকে স্বকীয়তা হারাতে হবে। অথচ লাভ যে বেশি কিছু হবে তাও নয়। আমার বন্ধুরা আমাকে ছাড়িয়ে যাবেন।

কমলবিলাসীর বিদায় লিখে আমি ওড়িয়া সাহিত্যের আসর থেকে বিদায় নিই। আমার আসরপ্রবেশ ১৯২১ সালে। বিদায় ১৯২৬ সালে। মাত্র পাঁচ বছরের সাহিত্যিক জীবন কি সার্থক হতে পারে? এর এক বছর বাদে আমি বিলেত চলে যাই। বিলেত থেকে ফিরে আসার পর আমার কর্মস্থল হয় বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে বিচিত্রা-য় আমার ভ্রমণকাহিনি পথে প্রবাসে প্রকাশকালে রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরী উভয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরে উভয়ের স্নেহভাজন হই। কাজকর্মের ধান্দায় বাংলা সাহিত্যের চর্চায় যে একমনা হব তার জো ছিল না। তাই একুশ বছর পরে চাকরি থেকে অকালে অবসর নিতে হল। সেটাও একটা কঠিন সিদ্ধান্ত। কেন, চাকরিতে থেকেও কি সাহিত্যসৃষ্টি করা যেত না? অনেকেই জিজ্ঞাসা করতেন। যেত, কিন্তু মোমবাতি দুই দিক থেকে জ্বলতে জ্বলতে অকালে নিবত। আরও বিশ বছর আমি বেঁচে থাকতুম না।

আমার প্রস্থানের পর আমার বন্ধুরা সংঘবদ্ধ হয়ে ‘সবুজ সাহিত্য সমিতি’ স্থাপন করেন। তারপরে যুগবীণা পরিচালনা করেন। কর্মজীবনে প্রবেশ করে আমার বিদায়ের পাঁচ-ছয় বছর বাদে তাঁদের উৎসাহ নিঃশেষ হয়ে যায়। এরপরে যিনি যা লেখেন তা ব্যক্তিগতভাবে। গোষ্ঠীগতভাবে আর নয়। মোটামুটি ১৯২১ থেকে শুরু করে ১৯৩১ বা ১৯৩২ পর্যন্ত ওড়িয়া সাহিত্যের ‘সবুজ যুগ’। এর আগের যুগটিকে বলা হয় ‘সত্যবাদী যুগ’। সত্যবাদী শান্তিনিকেতনের অনুকরণে স্থাপন করা হয়েছিল, সেখানে আমার কাকার সাথে একবার গেছি। সত্যবাদী মাসিকপত্র, সমাজ সাপ্তাহিক পত্রিকা এসবের সূচনাও দেখেছি। গোপবন্ধু দাশ, নীলকন্ঠ দাশ, গোদাবরীশ মিশ্র এঁদের সাহিত্যকীর্তির সঙ্গেও আমার পরিচয় ছিল। এঁরা ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে ঝাঁপ দেন। ফলে সাহিত্যে এক শূন্যতার উদ্ভব হয়। গঙ্গাধর মেহের, চিন্তামণি মহান্তি, নন্দকিশোর বল, পদ্মচরণ পট্টনায়ক এঁদের দিনও বিগত হয়েছিল। সেইজন্যে এত সহজে ‘সবুজরা’ শূন্যতা পূরণ করে।

‘সবুজ’ নন এমন অনেক সমবয়সি ও বয়সিনিও ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কুন্তলাকুমারী সাবত ও মায়াধর মানসিংহ পরে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। ‘সবুজ’ না হলেও এঁরা প্রাচীনপন্থী ছিলেন না। সত্যিকার প্রাচীনপন্থী ছিলেন বিচ্ছন্দচরণ পট্টনায়ক ও তাঁর দলবল। এঁদের বিশ্বাস ছিল ‘ছান্দ’ না হলে কবিতা হয় না, আর সব ইংরেজি বা বাংলার অনুকরণ। এঁদের চোখে আমরা ছিলুম রবিঠাকুরের চেলা, ওড়িয়াকে আমরা বিজাতীয় করে তুলছি। এ ধারণা শুধু যে এঁদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। ‘ছান্দ’ যাঁরা লিখতেন না তাঁরাও মনে করতেন যে, আমরা ওড়িয়া কবিতার ঐতিহ্য থেকে সরে গেছি।

ইংরেজি ও বাংলার থেকে প্রেরণা না পেলে আমরা সত্যি এগোতে পারতুম না। বাংলা ভাষায় বারোয়ারি উপন্যাস দেখে আমাদেরও সাধ যায় ওড়িয়া ভাষায় বারোয়ারি উপন্যাস লিখতে। বৈকুন্ঠ তো কবিতা ভিন্ন লিখবেন না, বাকি চার জনে বড়োজোর একখানা চার-ইয়ারি উপন্যাস লিখতে পারি, বারোয়ারি লিখতে হলে আরও আট জনকে বাইরে থেকে নিতে হয়। তাঁরা সবাই হয়তো ‘সবুজ’ নন। কালিন্দীর সম্পাদনায় লেখা হয় বাসন্তী। বিশ্বনাথ কর মহাশয় উৎসাহ দিয়ে উৎকল সাহিত্য পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশ করেন। উপন্যাস লিখতে আমার ভয় ছিল, কিন্তু এই উপন্যাস লিখতে গিয়ে এমন একটি ব্যাপার ঘটে যার প্রভাবে আমি ঔপন্যাসিক হয়ে উঠি ও উপন্যাসের পাথেয় পাই।

আমাদের পাঁচ বন্ধুর কবিতা একসূত্রে গেঁথে ‘সবুজ কবিতা’ নামে সংকলিত হয়। আমার অজ্ঞাতসারে আমার বন্ধুরা আমাকেই অগ্রস্থান ও অধিকাংশ জায়গা দেন। আমার কবিতা ও প্রবন্ধ একত্র করে আমার একার নামে ‘সবুজ অক্ষর’ বলে একখানি বই বহুকাল পরে প্রকাশিত হয়।

সতেরো থেকে বাইশ বছর বয়সের মধ্যে লেখা দশ-বারোটি কবিতা, উনিশ-কুড়িটি প্রবন্ধ, একটি গল্প ও একখানা বারোয়ারি উপন্যাসের তিনটি পরিচ্ছেদ—ওড়িয়া সাহিত্যে এইটুকুই আমার কাজ। কোনোদিন ভাবতেই পারিনি যে এইটুকুর জন্যে কেউ আমাকে মনে রাখবে বা আমার রচনাকে ওজন দেবে। আশ্চর্য হয়ে যাই যখন দেখি ওড়িয়া সাহিত্যের ইতিহাসে ‘সবুজ যুগ’ বলে একটা যুগ চিহ্নিত হয়েছে, তাতে আরও চার জনের পাশে আমার স্থান নির্দিষ্ট হয়েছে। ওড়িয়া সাহিত্যের বৈষ্ণব যুগের পঞ্চসখার মতো আমরাও নাকি পঞ্চসখা। কিন্তু সখাদের মধ্যে কার্যকাল আমারই সবচেয়ে কম।

আমি যখন ভাষান্তরি ও দেশান্তরি হয়ে পথে প্রবাসে লিখছিলুম তখন আমার বন্ধুরা ধীরে ধীরে ‘সবুজ দল’ রূপে পরিচিত হচ্ছিলেন। পরে একদিন তাঁরা ‘সবুজ সাহিত্য সমিতি’ গঠন করে পুস্তক প্রকাশনায় উদ্যোগী হন। তাঁদের প্রথম উদ্যম সবুজ কবিতা। সেটি কেবল আমাদের পাঁচ জনারই পুষ্পাঞ্জলি। দ্বিতীয় উদ্যম বাসন্তী। তাতে ছিল আমাদের চার জন ও বাইরের পাঁচ জনের অংশ। এরপরে বাইরের লেখকদের বইও প্রকাশ করা হয়। যুগবীণা পত্রিকার দুয়ার সকলের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। ততদিনে আমাদের দল না বাড়লেও সাহিত্যিক আদর্শের আদর বেড়েছে। ওড়িয়া সাহিত্যের সব্যসাচী লেখক হিসেবে কালিন্দীচরণ পাণিগ্রাহী ক্রমে ক্রমে সুপ্রতিষ্ঠিত হন। এখন তো তিনি ‘পদ্মভূষণ’ সম্মান পেয়ে ওড়িশার অদ্বিতীয় সাহিত্যিক হয়েছেন। তাঁর কন্যা নন্দিনী শতপথী ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজেও একজন সুলেখিকা। নারীপ্রগতির যে ধ্যান আমরা করেছিলুম নন্দিনীতে সে-ধ্যান প্রমূর্ত হয়েছে। আর হয়েছে বিখ্যাত গায়িকা সুনন্দাতে। বৈকুন্ঠনাথ পট্টনায়কের কন্যা সুনন্দা পট্টনায়ক। বৈকুন্ঠও ‘সাহিত্য আকাদেমি’ পুরস্কার লাভ করে কবিরূপে বন্দিত হয়েছেন।

আমাদের সমসাময়িক ওড়িয়া সাহিত্যে আর একটি ধারা ছিল। ছান্দরসিক বিচ্ছন্দচরণ পট্টনায়ক যার প্রাণস্বরূপ। বিচ্ছন্দচরণকে আমি প্রতিক্রিয়ার নায়ক বলেই জানতুম। পরে দেখা গেল তিনি ও তাঁর বন্ধুরাও ‘প্রাচী সমিতি’ বলে অপর একটি সংগঠনে সংঘবদ্ধ হয়েছেন। প্রাচীন ওড়িয়া গ্রন্থ পুনরুদ্ধার করে সম্পাদনা ও প্রকাশনার ব্রত নিয়েছেন। তাঁদের প্রবর্তনা দিচ্ছেন আমাদের প্রিয় অধ্যাপক আর্তবল্লভ মহান্তী। নতুন কিছু সৃষ্টি না করলেও এঁদের নিষ্ঠার তুলনা হয় না। ওড়িশার গৌরব তার প্রাচীন রসসাহিত্য। ‘প্রাচী সমিতি’ প্রতিদ্বন্দ্বীর বেশে অবতীর্ণ হলেও ‘সবুজ সমিতি’র পরিপূরক।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *