আমার কোনো বন্ধু নেই…
‘আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি।
যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।
সত্যি বলতে আমার কোনো বন্ধু নেই।
বন্ধু বলতে জেনেছি যাদের, তারা কেবল পথ চলতে সঙ্গী ছিল।
দূরের পথে ট্রেনে যেমন থাকে, পাশের সিটে। গল্প হয়, দু পেয়ালা লেবু চায়ের দাম মেটাতে ‘আমি দিচ্ছি, আমি দিচ্ছি’ যুদ্ধ হয়। সিগারেটের বাড়িয়ে দেয়া টুকরো ফুকে, এই যে নিন ফোন নম্বর, এদিকটাতে আবার এলে ফোন করবেন,’ বলা শেষে অচেনা এক স্টেশনে উধাও হয়।
এই যে আমি পথ হাঁটছি, রোজ ঘাটছি বুকের ভেতর কষ্ট, ক্লেদ,
এই যে আমি ক্লান্ত ভীষণ, বুকের ভেতর জমছে কেবল দুঃখের মেদ,
তবুও আমার নিজের কোনো বৃক্ষ নেই।
প্রবল দহন দিনের শেষে, যার ছায়াতে জিরোবো ভেবে ফিরে আসার ইচ্ছে হয়,
তেমন একটা ছায়ার মতন, আগলে রাখা মায়ার মতন আমার কোনো বন্ধু নেই।
একলা দুপুর উপুড় হলে বিষাদ ঢালা নদীর মতন,
একলা মানুষ ফানুশ হলে, নিরুদ্দেশ এক বোধির মতন,
হাতের মুঠোয় হাত রাখবার একটা কোনো মানুষ নেই।
আমার কোনো বন্ধু নেই।
আমি কেবল কোলাহলে ভিড়ের ভেতর হারিয়ে যাই,
ভুল মানুষে, যত্নে জমা ফুলগুলো সব বাড়িয়ে যাই,
হাওয়ায় ভাসা দীর্ঘশ্বাস বাতাস ভেবে,
নির্বাসনের একটা জীবন মাড়িয়ে যাই।
আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি।
যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।
#
কতকাল ভালোবাসা হয় না নিজেকে।
অথচ, যেই মানুষটা উধাও হলো একলা রেখে, তার জন্য বুকের ভেতর কান্না জমে, রাত্রি জানে ঘুম জমে না চোখের পাতায়, যন্ত্রণাতে!
কই? এই আমিতো আমায় ছেড়ে যাইনি কোথাও! দুঃখ দিইনি!
ওই যে মানুষ দুঃখ দিল, ভাসিয়ে দিল অথৈ জলে। যার জন্য হৃদয় জানল, বিষাদ ছাড়া চোখের কোনো ভাষা হয় না।
কান্না ছাড়া এই জনমে ভালোবাসা হয় না।
তার জন্য তবু কেন বুক ভাঙল? গভীর রাতে গহিন কোথাও কুহক ডাকল!
এবার খানিক সময় পেলে গুছিয়ে নেব। কান্না এবং হাসিটুকু নিজের থাকবে। নিজের জন্য মেঘ থাকবে, রোদ থাকবে। উদাস দুপুর, পদ্মপুকুর নিমগ্নতায় চুপ থাকবে। ইচ্ছেমতো এই আমাকেই ভালোবাসব।
ভালোবাসতে বাসতে অন্য মানুষ, আজ কতকাল ভালোবাসা হয় না নিজেকে।
আর কতকাল, দুঃখ এবং দহন পুষব ভালোবাসতে?
এবার আমি ভালোবাসব এই আমাকে।
আর কতকাল, অনুভূতির মৃত্যু হবে, বুকের কোনার হিমঘরেতে সারি সারি কফিন থাকবে!
এবার তবে অন্ধকারে আলো জ্বলুক, বলুক হৃদয়- মেঘলা দুচোখ আলোয় ভাসতে,
অনেকটা পথ হেঁটে এসে, শিখব এবার সত্যি সত্যি ভালোবাসতে!
#
জানি যাচ্ছি, ফেলে সন্ধ্যা,
সাথে তোমাকেও, স্মৃতিগন্ধা।
জানি যাচ্ছি, ফেলে রাত্তির,
সাথে স্বপ্ন, একা যাত্রীর।
যাবো নির্ভার, পথে একলা,
হোক দুঃখভার, বুক মেঘলা।
তবু ছায়াটার, সব মাড়িয়ে,
যত সঞ্চয়, সব হারিয়ে।
হয়ে নিঃস্ব, যাবো একাকী,
কেউ পড়েনি, বুকে লেখা কী!
তবু জলহীন, মরু পথটুক,
তুমি তেষ্টায়, থাকে যতটুক!
জানি ফিরছি, চেনা সন্ধ্যা,
পেতে তোমাকেই, স্মৃতিগন্ধা।
#
আর কখনো হয়নি দেখা, হবেও না।
সেই যে হঠাৎ নদীর ধারে নৌকো এলো,
বাদামি রং পালের সাথে তুমুল হাওয়া,
হাওয়ায় সওয়ার ঘোড়ার মতন ঝড়ও এলো।
সেই ঝড়ে আর ঘর ভাঙেনি, কেবল বুকের পাড় ভেঙেছে।
যার ভেঙেছে, জানলো কেবল একলা সে-ই, আর কেউ না।
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এলো গভীর রাতে, দেখলো সবাই।
কিন্তু কারো চোখের কোলে ঝরনা নামে রোজ নিশীথে,
দায় পড়েনি, দেখার কারও।
তোমরা কেবল মেঘলা আকাশ, বৃষ্টিটুকুই দেখতে পারো।
বুকেও যে আকাশ থাকে, সেই আকাশেও মেঘ জমে যায়,
উথাল-পাথাল ঝড় নেমে যায়, বেহিসেবি বৃষ্টি নামে,
কেউ দেখে না।
পাড় ভাঙা ওই নদীর দুঃখ সবাই জানে,
কেবল কারো বুকে জমা ঢেউটুকু আর কেউ দেখে না।
আর কখনো হয়নি দেখা, হবেও না।
দখিন হাওয়ায় নাও ভেসে যায় তেপান্তরে, তুমিও যাও,
অমন ঢেউয়ে নামবো ভেবে হঠাৎ দেখি, সাঁতারটুকুও হয়নি জানা।
সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার কোথায়, তোমার ঠিকানা?
আর কখনো হয়নি দেখা, হবেও না।
আমি কেবল শিখেছিলাম ভালোবাসতে,
এক শ আকাশ, এক শ নদী, অযুত স্বপ্ন বুকে পুষতে।
কেউ বলেনি, আকাশ এবং নদী মানেই তুমুল জলোচ্ছ্বাসের আভাস,
সাঁতারটুকুও শিখতে হবে।
নদীর পরে সমুদুরে, নৌকো তোমার জাহাজ হলো,
আমার কেবল সাঁতার শেখার ইচ্ছেটুকুই রয়ে গেল।
হয়নি শেখা।
সবাই কী আর শিখতে পারে!
এই পৃথিবীর জটিল হিসেব পাশ কাটিয়ে সহজ হয়েও কেউ রয়ে যায়।
না পাওয়াদের দুঃখগুলোও, একলা একা চুপ সয়ে যায়।
হঠাৎ ভীষণ কান্না পেলে, লুকিয়ে ফেলে ঝাপসা দুচোখ,
বৃষ্টি এলে জলের ভেতর লুকিয়ে ফেলে অশ্রু-অসুখ।
তোমরা কেবল ভালো থেকো, ভালোই থেকো।
আর কখনো হয়নি দেখা, হবেও না,
জেনেও এই অবাক বোকা মানুষটাকে
একটু কেবল মনে রেখো। মনে রেখো।
#
এই যে তোমাকে আর পেতে চাইনা,
একবারও আর তাকিয়ে দেখিনা পিছে!
তুমি ডাকছো জেনেও নির্বিকার হেঁটে যাই দূরে,
এই যে উপেক্ষা করি, অবহেলায় ফিরিয়ে দেই অজস্রবার।
প্রতিক্ষা আর প্রত্যাখ্যানে ভরিয়ে দিতে থাকি তোমার স্মৃতির খাতা।
এই যে আমি ভালোবাসা দু হাতে সরিয়ে রেখে কেবলই তোমার ঘৃণা কুড়াই,
আদিগন্ত তোমায় ফেলে রেখে সতর্ক পা ফেলে হেঁটে যাই সংকীর্ণ আলপথ,
কেনো জানো?
কারণ–
আবারও তোমায় পেয়ে হারানোর ভয়ে,
এই আমি নতজানু!
#
মন ভাল নেই মন খারাপের দিনে
তোমার থেকে
অনেক দামে
কান্না নিলাম কিনে।
মন ভাল নেই মন খারাপের রাতে
তোমার চোখের
বিষাদ নিলাম
মেঘলা সে প্রভাতে।
মন ভাল নেই মন খারাপের প্রহর
কোথাও তোমায়
পায়না খুঁজে
বিষণ্ণ শহর।
মন ভালো নেই মন খারাপের ক্ষণ
বুকের ভেতর
তবুও থাকো
একলা অনুরণন।
#
অল্পতেই মন খারাপ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোই কেবল জানে, জগতে ভালোবাসার কী দরকার, কতটা তীব্র দরকার!
জীবনের দহন পথজুড়ে একা একা ছায়াহীন হেঁটে যাওয়া ক্লান্ত কোন পথিকই কেবল জানে, মমতা আর ভালোবাসার বিস্তৃত কোন বৃক্ষের ছায়া জীবনে কত প্রয়োজন, কত!
অথচ রোজগেরে দিন, হাপিত্যেশের রাত্রি, শ্রম আর ব্যস্ততার দুনিয়া সে সকল তেষ্টাদের কী অসঙ্কোচেই না আড়াল করে রাখে!
বুকের ভেতরের জল জমে গিয়ে কঠিন বরফ হতে হতে ক্রমশই পাথর হয়।
শক্ত কঠিন পাথর।
কিন্তু কখনও কখনও কেউ কেউ জানে, খানিক মমতার স্পর্শ, খানিক নরম গলায় আদুরে ডাক, একটু গভীর চোখের দৃষ্টি কিংবা শক্ত করে বুকের ভেতর জড়িয়ে ধরা ওম কী অদ্ভুতভাবেই না সেই আড়ালের আবডালের জমে থাকা পাথর আর পাথুরে নদীর বুকে ছলছল জলে বান ডাকিয়ে দেয়।
কী অদ্ভুত!
কেবল জলই জানে ভালোবাসা কত তীব্র, মমতা কত প্রগাঢ়!
কিংবা ভালোবাসা, মমতা জানে, জীবনে জলের কী প্রয়োজন, কান্না
কী অপরিহার্য।
#
আমার হেঁটে যাওয়া পথে একটা মাটির ঢেলা আচমকা পা মচকে দিয়ে বলল, ‘তোমার চোখ চায় না তুমি এই পথে হাঁটো। তাইতো সে ইচ্ছে করেই আমায় দেখল না। কেমন বেখাপ্পা পা ফেলল আমার ওপর’।
আমি চোখকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, ‘আমি না, তোমার পা। সে আর এগুতে চায় না সামনে। বড্ড ক্লান্ত সে। তার খানিক বিশ্রাম চাই।’
আমি খানিক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে বসে পড়লাম মাটির রাস্তার পাশের সবুজ দূর্বা ঘাসে।
ঘাসের ভেতর থেকে সুচের ডগার মতন ধারালো, তীক্ষ্ণ কিছু ঘাসের ডগা আমায় খুঁচিয়ে দিয়ে বলল, ‘লম্বা পথ হাঁটতে হলে শরীরে তাগদ থাকতে হয়। যেখানে সেখানে এমন বসে পড়া দুর্বলতা। এমন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি নিয়ে বহুদূর পথ হেঁটে যাওয়া যায় না।’
আমি দ্বিধা নিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর হেঁটে চললাম বহুদূর পথে। ওখানে দিগন্তে এসে আকাশ নেমেছে। মেঘেরা হয়েছে সোনালি আর বৃষ্টিরা সব আদুরে স্পর্শ।
আমি পা ফেলতেই একটা সাপ ফোঁস করে ফণা তুলে বলল, ‘এ পথে আমাকে মাড়িয়ে যেতে নেই। দংশন আর বিষে তোমায় নীল করব।’
আমি বললাম, ‘আমি তোমায় মাড়িয়ে দেব না। সন্তর্পণে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চাই। তুমি আমায় দংশন করবে কেন? তোমার সাথেতো আমার কোনো বিদ্বেষ নেই, বিরোধ নেই।’
সাপ খানিক চুপ করে থেকে বলল, কেউ আমায় পার হয়ে গেলে আমার খুব ঈর্ষা হয়।’
আমি বললাম, ‘কেন?’
সে বলল, ‘তোমার সামনের ওই বরফ শীতল পথ পেরিয়ে বহুদূরের সেই আকাশ মিশে যাওয়া দিগন্ত, সোনালি মেঘ আর ঈষদুষ্ণ আদুরে বৃষ্টির দেশে আমি যেতে পারি না বলে!’
আমি বললাম, ‘আমাকে যেতে দাও। হয়তো আমার মতো কেউ না কেউ গিয়েই একদিন বরফ শীতল পথটাকে তোমার জন্য করে তুলবে উষ্ণ আর আরামদায়ক!’
সাপটা গভীর তন্ময়তায় কিছু ভাবছিল। আমি পা ফেলে এগিয়ে গেলাম সামনে। সেখানে অপেক্ষায় ছিল প্রকাণ্ড খাদ। আমি বললাম, তুমি এমন রাক্ষুসে হা করে আছো কেন?
সে বলল, ‘আমার বুকের ভেতর এক বিশাল পাথর। সেও চেয়েছিল গড়িয়ে গড়িয়ে গিয়ে ওই সোনালি মেঘের দিগন্ত ছুঁতে। কিন্তু পারেনি। খানিক অসাবধানতায় ধ্বসে পড়েছে ফাঁপা মাটি। সে আটকে গেছে আমার বুকের ভেতর।’
আমি বললাম, ‘একদিন কেউ একজন পাথরটাকে তোমার বুকের ভেতর থেকে তুলে ওই দিগন্তে নিয়ে যাবেই। তুমি কী খানিক তোমার রাক্ষুসে হাঁ খানা বন্ধ করবে?’
খাদের ভেতর থেকে শক্ত পাথরটা তখন ছড়াচ্ছিল ক্রোধ আর ঘৃণার বিষবাষ্প। আমার মচকে যাওয়া পা, দ্বিধান্বিত চোখ আমায় বলল, ‘চলো, ফিরে যাই। এ বড় শ্বাপদসঙ্কুল পথ। এখানে পদে পদে ঘৃণা আর বিদ্বেষের ছড়াছড়ি।’
আমি বললাম, কাউকে না কাউকে সেই ঘৃণা জয় করতেই হবে, বিদ্বেষ আর বিবাদের বুকের ভেতর ছড়িয়ে দিতে হবে ভালোবাসার সৌরভ। তারপর এগিয়ে। যেতে হবে সোনালি মেঘ আর আদুরে বৃষ্টির দেশে।
আমি খাদ পেড়িয়ে চলে এলাম শুকনো মরুর দেশে। প্রবল তেষ্টায় পুড়ে যাওয়া গলার ভেতর থেকে চিৎকার করে জল চাইছিল আমার কণ্ঠনালি। আমি বললাম, আর খানিক অপেক্ষায় থাকো, এইতো খানিক। তারপরই বসন্তের দেশ। সেখানে জল আছে, ঝরনা ও নদী আছে। আছে ফুল ও ফসল।
কিন্তু আমার হাত ক্লান্ত, আমার পা ক্ষতবিক্ষত, আমার চোখ আগুনে ঝলসে ঝাপসা। তারা সব ‘অসহযোগ’ ডেকে আমায় বলল, থামো। এই পথ এখানেই শেষ। এখানে, এই নির্জন মরুভূমিতেই তোমার মৃত্যু। তোমার স্বপ্নের সমাধি।
কিন্তু আমার মন বলল, আর মাত্র দু কদম পথ, তারপরই সুললিত ঝরনা, তারপরই হাওয়া, তারপরই নদী, তারপরই পাখি, তারপরই আকাশ ছুঁয়ে গেছে। দিগন্ত, সোনালি মেঘ দলবেঁধে এসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে, আমায় ছুঁয়ে দাও। তারপর ছুটে যাও পেছনে ফেলে আসা অজস্র ঈর্ষা আর দ্বেষ, হিংসা আর বিভেদ, সংশয় আর পরর্শিকাতর আত্মাদের কাছে। তারপর তাদের বুকের ভেতর ছড়িয়ে দাও ভালোবাসার আতর। তারা সুবাসিত হোক প্রেমে ও শ্রমে, বোধে ও বন্ধুত্বে।
আমি যখন দিগন্তের শেষ সীমায় দাঁড়ালাম, তখন সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে, সোনালি মেঘ ছুঁয়ে যাচ্ছে চুলের ডগা। চাইলেই আকাশটাকে ছুঁয়ে দেয়া যাচ্ছে হাতের তালুর স্পর্শে। তখন আকাশ, তখন সোনালি মেঘ, তখন আদুরে বৃষ্টি আমায় বলল, তুমি পেরেছ।
আমি ঘোরগ্রস্ত গলায় বললাম ‘আমি পেরেছি?’
তারা বলল, ‘হ্যাঁ, পেরেছ।’
আমি আমার পায়ের দিকে তাকালাম, আমার হাত, হাঁটু, শরীর, এমনকি ঝরনার জলে দেখে নিলাম চোখকেও।
কী অসহ্য শ্রমে আর ঘামে তারা আমায় নিয়ে এসেছে স্বপ্নের বহুদূর দিগন্তে।
কিন্তু সোনালি মেঘ এসে আমায় ফিসফিস করে বলল, ‘এরা কেউ তোমায় নিয়ে আসেনি। তোমায় যে নিয়ে এসেছে, তার নাম মন। তার নাম সংকল্প। জগতের সবচেয়ে পেশিবহুল বাহু, দৃঢ়তম হাত, ইস্পাতের কঠিন পা, কিংবা বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ চোখও এ পথে আসতে পারেনি। এইসব ঝঞ্ঝা, এইসব ক্রোধ, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা কিংবা এই বিভীষণ বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে। কারণ, তাদের বুকের ভেতর এমন প্রাণ ও প্রতিজ্ঞা ছিল না। এমন মন ও মানুষ ছিল না।’
আমি তখনও দাঁড়িয়ে আছি। আমার বুকের ভেতর তখন বয়ে যাচ্ছে পুষ্পগন্ধা নদী, সেখানে ভেসে বেড়াচ্ছে প্রজাপতির দল। আমি তাদের আলতো হাতে ছুঁয়ে দিয়ে বললাম, মানুষের এমন মন থাকলে আমরা ছুঁয়ে দেব ভালোবাসার আকাশ, মমতার সোনালি মেঘ, আর ভিজে যাবো আদুরে স্নেহের বৃষ্টিতে। আমরা ভিজবোই। আমরা ভাসবোই।
তোমরা এসো।
#
চোখে কার ছায়া পড়ে বৃক্ষ না পাতার?
ঢেউ এলে আর কেউ জানেনা সাঁতার।
যাকে তুমি চেনো নাই, অথচ সে-ই
ডুবেছে তোমার চোখে অজান্তেই।
মুছে যায়, ঘুচে যায়, সব অবয়ব,
বৃক্ষে বিহঙ্গ ডাকে, হোক কলরব।
তবু যদি ওই চোখে থেমে যায় ঢেউ,
আবার গহিন জলে ভাসবে যে কেউ!
###