আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশী

১০. আমাদের সৌরজগতের প্রতিবেশী

একটা এলিয়েন যদি আমাদের সৌরজগতের দিকে তাকায়, তাহলে সে হয়তো একসময় সিদ্ধান্তে আসবে যে এটা দেখতে শূন্য। সূর্য, সব কটি গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহগুলো আসলে সৌরজগতের অতি অল্প জায়গা দখল করে রেখেছে। কিন্তু আমাদের সৌরজগৎ খালি বা শূন্য নয়। অবশ্য জায়গা ঠাসাঠাসি করে থাকা বস্তুতে পরিপূর্ণও নয়। গ্রহগুলোর মাঝখানের জায়গায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খণ্ড খণ্ড পাথর, নুড়ি, আইস বল, ধূলি, চার্জিত কণার স্রোত এবং দূরে ছোড়া অনুসন্ধানী যান।

আমাদের সৌরজগৎ অতটা খালি নয়। কারণ, পৃথিবী নিজের কক্ষপথের ভেতর দিয়ে ছোটার সময় প্রতিদিন কয়েক শত টন উল্কার বাধাবিপত্তি ঠেলে নিয়ে যায়। এদের বেশির ভাগ বালুদানার চেয়ে বড় নয়। এদের বেশির ভাগ আবার পৃথিবীর ওপরের বায়ুমণ্ডলে জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। বাতাসের এই স্তরটা পৃথিবীর চারদিকে ঘিরে থাকে। উল্কাগুলো বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে এত বেশি শক্তি নিয়ে ধাক্কা খায় যে,

ভয়েজার ১ ও ভয়েজার ২
এই নভোযান দুটি উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। এরপর থেকে সেগুলো মহাকাশের ভেতর দিয়ে ছুটে চলেছে। ২০১২ সালে আমাদের সৌরজগতের সীমা ছাড়িয়ে চলে যায় ভয়েজার ২। মানুষের বানানো কোনো যানের ক্ষেত্রে এটাই ছিল প্রথম কোনো ঘটনা। এখানে ভয়েজার ১ দেখা যাচ্ছে। এটিও পিছিয়ে নেই। এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানা যাবে নিচের লিংকে : https://voyager.jpl.nasa.gov/mission/status/

ভয়েজার ১
ভয়েজার ১

সেগুলো এর সংস্পর্শে এলেই বাষ্পীভূত হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য ভালো। বাতাসের এই প্রতিরক্ষা চাদর ছাড়া আমাদের পূর্বপুরুষেরা হয়তো মহাকাশের পাথরের আঘাতে অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত। সেটা ঘটলে আমরা ইনস্ট্রাগ্রামে কোনো পোস্ট দেওয়ার জন্য এত দূর পর্যন্ত বিকশিত হতে পারতাম না।

গলফ সাইজের চেয়ে বড় আকৃতির উল্কা প্রায়ই বাষ্পীভূত হওয়ার আগে ছোট ছোট খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। তারপরও বড় আকৃতির উল্কাপৃষ্ঠ বায়ুমণ্ডলের ভেতর সংঘর্ষের চিহ্ন বহন করে। তা না হলে সেগুলো ভূপৃষ্ঠে অক্ষত পাওয়া যেত। পৃথিবীর আদিম ইতিহাসে এত বেশি আবর্জনা বর্ষিত হয়েছে যে ওই সব সংঘর্ষের শক্তি বা উত্তাপের কারণে আমাদের গ্রহের বাইরের শক্ত স্তর বা ভূত্বক গলে গেছে।

এ রকম বিপুল পরিমাণ স্পেস জাঙ্কের মাধ্যমে আমাদের চাঁদ গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে মঙ্গল গ্রহের সমান একটা বস্তু আমাদের তরুণ গ্রহের ওপর আছড়ে পড়েছিল। এই বিপুল সংঘর্ষে ধূলিকণা এবং পাথর পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথে উঠে গিয়েছিল। এই আবর্জনা পর্যায়ক্রমে একত্র হয়ে গঠন করেছে আমাদের প্রিয় নিম্ন ঘনত্বের চাঁদ।

মহাকাশ থেকে আসা পাথরের বোমাবর্ষণ শুধু পৃথিবী নয়, অন্যান্য গ্রহ বা উপগ্রহেও হয়। চাঁদ ও বুধের পৃষ্ঠতলের খাদ বা ক্রেটার অতীতকালের সংঘর্ষের সাক্ষ্য দেয়। মহাকাশ সব আকারের পাথরে পরিপূর্ণ। মঙ্গল গ্রহ, চাঁদ ও পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো উচ্চ গতিসম্পন্ন বস্তু আঘাত করলে আঘাতের ফলে এসব পাথর ছিটকে মহাকাশে বেরিয়ে যায়। মঙ্গলের প্রায় এক হাজার টন পাথর প্রতিবছর পৃথিবীতে বর্ষিত হয়। হয়তো একই পরিমাণ পাথর চাঁদ থেকে পৃথিবীতে আসে। কাজেই আমরা হয়তো চাঁদের পাথর সংগ্রহ করে আনার জন্য সেখানে নভোচারী না পাঠালেও পারতাম। কারণ, এমনিতেও প্রচুর পরিমাণ পাথর সেখান থেকে পৃথিবীতে আসে।

*

সৌরজগতের বেশির ভাগ গ্রহাণু থাকে প্রধান গ্রহাণুবলয়ে বা অ্যাস্টরয়েড বেল্টে। এই বলয়টির অবস্থান মঙ্গল গ্রহ ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মাঝখানে মোটামুটি সমতল একটা অঞ্চলে। এর আকৃতি একটা সত্যিকারের বেল্টের চেয়ে বরং একটা চ্যাপ্টা ডোনাটের মতো। সৌরজগতের ছবিতে এই এলাকাটি প্রায়ই তালগোল পাকানো, আঁকাবাঁকা পথে ছুটে চলা পাথরে আঁকা হয়। এসব গ্রহাণুর যেকোনো একটি দল হয়তো কোনো একদিন পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে। দলটিতে হয়তো থাকবে কয়েক হাজার গ্রহাণু। এদের বেশির ভাগই আমাদের গ্রহকে এক শ মিলিয়ন বছরের মধ্যে আঘাত করবে। ১ কিলোমিটারের বড় লম্বা কোনো গ্রহাণু অনেক অনেক বেশি শক্তি নিয়ে আমাদের পৃথিবীকে আঘাত করতে পারে; যাতে পৃথিবীর সব স্থলচর প্রাণীর বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মহাকাশের পাথর থেকে টাকা
বেশির ভাগ উল্কা মহাসাগরে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, পৃথিবীর পৃষ্ঠতলে ৭২ শতাংশই পানি। কিন্তু উল্কাখণ্ড সংগ্রহ করা অনেকের কাছেই একটা দারুণ অভ্যাস। মাঝেমধ্যে তা ব্যয়বহুলও বটে। এক উল্কাশিকারি একবার একে বলেছিল, ‘আকাশ থেকে নেমে আসা টাকা’। আসলে ভালো স্পেস রক থেকে তুমি কিছু টাকা আয়ও করতে পারো। ২০১২ সালে এক লোক চাঁদ থেকে আসা একগাদা পাথর বিক্রি করেন ৩৩০,০০০ মার্কিন ডলারে।

সেটা বেশ খারাপ ব্যাপার হবে বলা বাহুল্য।

পৃথিবীর জীবসত্তার জন্য হুমকি নিয়ে আসে ধূমকেতুও। ধূমকেতুর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হ্যালির ধূমকেতু। এটি প্রায় ৭৫ বছর পর পর আমাদের রাতের আকাশে দেখা দেয়। বরফ আর

পাথরের এই বিশাল পিণ্ডটি আমাদের পৃথিবীর চেয়ে পুরোনো। ধূমকেতুটি সর্বশেষ দেখা দিয়েছিল ১৯৮৬ সালে। সেটা যদি আমাদের পৃথিবীতে আঘাত হানত, তাহলে তার বলের পরিমাণ হতো ১০ মিলিয়ন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সমান।

এটাও খুব খারাপ ব্যাপার হতো।

হ্যালির ধূমকেতু। এটি পর্যবেক্ষণ করা বেশ আনন্দের। কিন্তু আমরা চাই না যে ধূমকেতুটা পৃথিবীর খুব কাছে আসুক। সেটা খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
হ্যালির ধূমকেতু। এটি পর্যবেক্ষণ করা বেশ আনন্দের। কিন্তু আমরা চাই না যে ধূমকেতুটা পৃথিবীর খুব কাছে আসুক। সেটা খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

কিন্তু হ্যালির ধূমকেতু ২০৬১ সালের আগে আমাদের কাছে আর ফিরে আসবে না। এমনকি আমাদের সভ্যতা ধ্বংস করে দেওয়ার মতো তত কাছেও আসবে না। তুমি যদি তখন বেঁচে থাকো এবং চাঁদের কোনো হোটেলে যাওয়ার জন্য বা বাড়ির রোবট মেরামতে খুব বেশি ব্যস্ত না থাকো, তাহলে আমার পরামর্শ হলো, একটা ভদ্রগোছের টেলিস্কোপ খুঁজে বের করো।

কুইপার বেল্ট আমাদের পার্শ্ববর্তী নক্ষত্রের দূরত্বের অর্ধেক পর্যন্ত প্রসারিত। এই বলয় ছাড়িয়ে একদল ধূমকেতুর বসবাস। এদের বলা হয় ওর্ট ক্লাউড। এই অঞ্চল আসলে দীর্ঘমেয়াদি ধূমকেতুর জন্য দায়ী। এদের কক্ষপথ এতই বড় যে সূর্যের চারপাশে একটা ঘূর্ণন সম্পূর্ণ করতে একটা মানুষের জীবনকালের চেয়েও বেশি সময় লেগে যায়। ১৯৯০-এর দশকে দুটি উজ্জ্বল ধূমকেতু এসেছিল ওর্ট ক্লাউড থেকে। এদের নাম ছিল হেল-বব এবং হায়াকুটেক। খুব শিগগির তারা ফিরে আসবে না। কাজেই তাদের দেখার সুযোগ হারিয়েছ তুমি। কিন্তু তোমাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, দুটোই ছিল বিস্ময়কর হায়াকুটেক এতই উজ্জ্বল ছিল যে তাকে দুরবিন ছাড়াই নিউইয়র্ক শহরের টাইম স্কয়ারের মাঝখান থেকেও দেখা যেত।

*

সর্বশেষবার আমি গুনে দেখেছি, সৌরজগতে বিভিন্ন গ্রহ মিলিয়ে ৫৬টি উপগ্রহ আছে। এরপর একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে জানতে পারলাম, শনির চারপাশে আরও ডজনখানেক উপগ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ঘটনার পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এখন থেকে আর উপগ্রহের সংখ্যার কোনো খোঁজখবর রাখব না। এখন আমি শুধু এটুকুই জানতে চাই যে এসব উপগ্রহের কোনোটা ভ্রমণ কিংবা গবেষণার জন্য মজার হবে কি না। আমার ধারণা, অন্তত বেশ কয়েকটি উপগ্রহ এ তালিকায় স্থান পাবে। কিছু মানদণ্ডে সৌরজগতের উপগ্রহগুলো তার গ্রহগুলোর চেয়েও অনেক বেশি চিত্তাকর্ষক।

টাইটান হলো আমার দ্বিতীয় প্রিয় গ্রহের সবচেয়ে বড় চাঁদ। এতে নদীর প্রবাহ আছে। সেগুলো আবার বিশালাকার হ্রদে গিয়ে পড়েছে। এই হ্রদের তরল হলো মিথেন, পানি নয়। এই উপগ্রহটি নিয়ে গবেষণা করতে আমরা সেখানে নভোযান পাঠিয়েছি। কিন্তু নিবিড়ভাবে দেখতে পেলে, সেখানে যে আরও মজার মজার বিষয় আবিষ্কৃত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বৃহস্পতি গ্রহের চারপাশে যেসব চাঁদ ঘুরছে, তার মধ্যে একটি আমার প্রিয়। এই সিস্টেমে অদ্ভুত সব ঘটনা দেখা যায়। বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছের উপগ্রহটির নাম আইও। সৌরজগতে এ জায়গায় আগ্নেয়গিরি সবচেয়ে সক্রিয়। এ চাঁদটি এত উত্তপ্ত যে সেখানে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব নয়। বৃহস্পতির আরেকটি চাঁদের নাম ইউরোপা। এটি বরফ দিয়ে মোড়া। কাজেই এটাও ছুটি কাটানোর জন্য ভালো কোনো জায়গা নয়। কিন্তু ভিনগ্রহের জীবসত্তার জন্য আমাদের যে অনুসন্ধান, সেটা বিচার করলে সৌরজগতে এটাই সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। জীবসত্তার খোঁজে কখনো যদি দ্বিতীয় কোনো জায়গার খোঁজ করতে হয়, তাহলে এটাই সেই জায়গা।

প্রথম দর্শনে জ্যোতিঃপদার্থবিদেরা হয়তো জীবনধারণের জন্য ভালো জায়গা হিসেবে ইউরোপাকে বেছে নেবেন না। সাধারণত আমরা এমন গ্রহ বা উপগ্রহের খোঁজ করি, যার অবস্থান গোল্ডিলকস জোনে। এ বিষয়ে প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। ওই ছোট্ট স্বর্ণকেশী মেয়েটি খুব গরম বা খুব ঠান্ডা পরিজ খেতে পছন্দ করত না। জীবনধারণের জন্য যোগ্য গ্রহ সম্পর্কেও জ্যোতিঃপদার্থবিদদের অনুভূতি একই রকম। আমরা এমন একটা এলাকার খোঁজ করি, যেটা মাতৃনক্ষত্রের খুব কাছেও নয়, আবার খুব দূরেও নয়। নক্ষত্রের খুব কাছে থাকলে গ্রহটির পৃষ্ঠতলের সব পানি বাষ্পীভূত হয়ে যাবে। আর আমরা জানি, জীবসত্তার জন্য পানি অতি দরকারি। কিন্তু মাতৃনক্ষত্র থেকে গ্রহ বা উপগ্রহটা বেশি দূরেও হতে পারবে না। মানে ইউরোপার মতো। তাহলে পানি জমাট বেঁধে যাবে। জায়গাটাও হয়ে যাবে খুব ঠান্ডা। আমরা এমন গ্রহ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি, যেটা খুব গরমও নয়, আবার খুব ঠান্ডাও নয়।

ইউরোপার অবস্থান গোল্ডিলকস জোনের বাইরে। এর জমাটবাঁধা পৃষ্ঠতল কোনো প্রাণের বেঁচে থাকার উপযোগী বলে মনে হয় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে ইউরোপার সূর্যের প্রয়োজন হয় না। উপগ্রহটি বৃহস্পতির চারপাশে ঘোরার সময় এর আকৃতি বদলে যায়। বৃহস্পতির চারপাশে ঘোরার সময় গ্রহটির মহাকর্ষ টান উপগ্রহটিকে সংকুচিত করে এবং ছেড়ে দেয়। সংকোচন ও ছেড়ে দেওয়ার এই প্রক্রিয়ায় উপগ্রহটি আসলে ইউরোপায় শক্তির জোগান দেয়। এতে বরফে ঢাকা মহাসাগরের নিচের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে। এই গরম পানি কোটি কোটি বছর ধরে সেখানে ছিল না, তা ভাবার কোনো কারণ নেই। আমরা যদি পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব খুঁজে পাই, তাহলে পরবর্তী গন্তব্য হওয়া উচিত ইউরোপাই।

মিশন ইউরোপা
আমরা সবাই ইউরোপায় যেতে চাই। তবে পর্যায়ক্রমে। সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো অসাধারণ। কিন্তু প্রথমে কিছু বিস্ময়কর ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথমত, ওই চাঁদে একটা নভোযান পাঠাতে হবে। এরপর ওই নভোযান বা ওর ভেতরে আঁটানো সম্ভব তার চেয়ে ছোট একটা নভোযান কক্ষপথ থেকে ইউরোপার জমাটবাঁধা পৃষ্ঠে অবতরণ করবে। আমাদের আইস ফিশিং করতে হবে। ওখানকার মহাসাগরের ওপরের বরফের স্তর সম্ভবত এক মাইল পুরু। একটা টানেল খুঁড়ে বা ড্রিল করে নিচের পানির কাছে পৌঁছাতে হবে। পরের মিশনের জন্য আরেকটা অনুসন্ধানী যান বা সাবমেরিনের মতো যান প্রয়োজন হবে, যা দিয়ে পানির চারপাশে সাঁতার কাটতে ও তথ্য সংগ্ৰহ করতে পারবে। তারপর তথ্যগুলো পাঠাতে পারবে পৃথিবীতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করা বিজ্ঞানদের কাছে। এটা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু কল্পনা করে দেখো, আমরা এ অভিযান থেকে কী পেতে পারি।

*

ঐতিহ্যগতভাবে গ্রহগুলোর নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবতাদের নামে। উপগ্রহগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে গ্রিক পুরাণের বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের নামে। চিরায়ত দেবতারা জটিল সামাজিক জীবনে বসবাস করত। কাজেই এমন চরিত্রের অভাব নেই। এই নিয়মের একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায় ইউরেনাসের চাঁদগুলোর ক্ষেত্রে। এসব চাঁদের নাম দেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ নাটক ও কবিতা থেকে। ইউরোপা ও আইওর বদলে সেখানে খুঁজে পাবে পাক আর এরিয়েলকে। এই দুই পরির দেখা পাওয়া যায় শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোতে। আগেই বলেছি, উইলিয়াম হার্শেল অদৃশ্য আলো আবিষ্কার করেছিলেন। আবার তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ১৭৮১ সালে এমন একটা গ্রহ আবিষ্কার করেন, যেটা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। গ্রহটাকে তৎকালীন রাজার নামে নামকরণ করতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। এই রাজার অধীনে তিনি বিশ্বস্তভাবে দায়িত্ব পালন করতেন। হার্শেল যদি সে কাজে সফল হতেন, তাহলে গ্রহের তালিকা পড়তে হতো এভাবে : বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি এবং জর্জ। সৌভাগ্যক্রমে এর কয়েক বছর পর ক্ল্যাসিক্যাল নাম ইউরেনাস বা আকাশের দেবতার নামে গ্রহটির নামকরণ করা হয়।

*

আমাদের সৌরজগতের সব কটি গ্রহ এবং উপগ্রহের নাম দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু অসংখ্য গ্রহাণুকে চিহ্নিত করা এখনো বাকি। আবিষ্কারকেরা তাঁদের ইচ্ছামতো গ্রহাণুদের নাম দিতে পারেন। আমি নিজেও এখন সৌরজগতের ওই সব আবর্জনার কিছু অংশের জন্য দায়ী। ২০০০ সালের নভেম্বরে প্রধান গ্রহাণুবলয়ে ১৯৯৪ কেএ আবিষ্কার করেন ডেভিড লেভি এবং ক্যারোলিন শুমেকার। আমার সম্মানে ওই গ্রহাণুর নামকরণ করা হয়েছে ১৩১২৩ টাইসন। এর মাধ্যমে আমি সম্মানিত হয়েছি সত্য। কিন্তু এটা নিয়ে খুব বেশি আত্মতুষ্টির কিছু নেই। কারণ, অনেকগুলো গ্রহাণুর পরিচিত কিছু নাম আছে। যেমন জোডি, হ্যারিয়েট ও থমাস এমনকি মার্লিন, জেমস বন্ড এবং সান্তার নামেও গ্রহাণু আছে। এখন কয়েক লাখ গ্রহাণুর নামকরণ করতে গেলে শিগগিরই হয়তো আমাদের নাম দেওয়ার ক্ষমতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। সেদিনটি আসুক বা না আসুক, আমি জেনে খুশি যে গ্রহগুলোর মাঝখানের জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো আমার মহাজাগতিক ভগ্নাবশেষটি নিঃসঙ্গ নয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *