আমাদের সন্তান পর্ন দেখে!!
প্রথম পরিচয় ক্লাস নাইন-টেনের সময়টাতে গান শোনার প্রচণ্ড নেশী ছিল। স্কুল আর ঘুমানোর সময় বাদ দিয়ে প্রায় পুরোটা সময় একটার পর একটা গান শুনতাম। গান শোনা ছাড়া কেন জানি থাকতে পারতাম না। সে সময় আমার নিজের পিসি বা ফোন কিছুই ছিল না। গান শোনার একমাত্র সম্বল ছিল সনির এমপি ফাইভ। তখনো অ্যান্ড্রয়েড ফোনের যুগ শুরু হয়নি। বাজার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নকিয়া ২৭০০ ক্লাসিক আর চায়না ফোন। বন্ধুদের চায়না ফোনের লাউডস্পীকার থেকে তাহসানের গান। ভেসে আসত, আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলতাম আর ভাবতাম কবে আমি একটী এ রকম “অস্থির” ফোনের গর্বিত মালিক হব। সারাক্ষণ যেহেতু গান শুনতাম তাই একটা গানে অল্প দিনেই অরুচি ধরে যেত। ইন্টারনেট তখন আমার কাছে স্বপ্নের মতো। গলির মোড়ের কম্পিউটারের দোকানই ভরসা। কয়েকদিন পর পর গলির মোড়ের কম্পিউটারের দোকানে যেতে হতো নতুন গান ডাউনলোড দিতে। দশ-বিশ টাকা দিলেই পুরো এমপি ফাইভ ভর্তি করে গান দিয়ে দিত। এভাবে বার বার যাবার কারণে দোকানদারের সাথেও বেশ খাতির জমে গেল। তো একবার সে লোক আমার এমপি ফাইভ লোড করে দিয়ে একটু বেশি টাকা চাইলো। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাতেই সে একটা চোখ টিপ দিয়ে বলল, “মাল দিছি ছোট ভাই”। পরে আমার অনেক বন্ধুবান্ধবের কাছে অনেকটা একই রকমের গল্প শুনেছি। কেউ দোকানে গেছে কলকাতার বাংলা সিনেমা ডাউনলোড করে নিতে, কম্পিউটারের দোকানদার সেই সিনেমা তো দিয়েছেই সেই সাথে ফাউ হিসেবে কিছু নীল সিনেমাও দিয়ে দিয়েছে। তারপর আস্তে আস্তে তাকে পর্ন ভিডিওতে আসক্ত বানিয়ে ফেলে দোকানের ক্যাশ বাক্স ভরিয়েছে। আমার খুব কাছের অসম্ভব মেধাবী একজন বন্ধু এভাবে পর্ন ভিডিওতে আসক্ত হয়ে পড়াশোনা শিকেয় তুলে ফেলেছিল। খুব কাছ থেকে পর্নোগ্রাফির কারণে ওর বদলে যাওয়া দেখেছি। এই হাইস্পিড ইন্টারনেটের যুগেও প্রতিনিয়ত অনেককে দেখি এভাবে কম্পিউটারের দোকান থেকে মেমোরি কার্ড লোড করে নিতে (বিশেষ করে গ্রাম এবং মফস্বল অঞ্চলগুলোতে)। পঞ্চাশ-ষাট টাকার জন্য জাহান্নাম কিনে নিতে দুবারও ভাবছেন নী এসব দোকানদাররা।
“স্মরণ রেখ যারা কামনা করে মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার হোক, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না”।
{সূরা আন-নূর; ২৪:19)
পর্ন ভিডিওর সাথে পরিচয়ের আরেকটা কমন মাধ্যম হচ্ছে কচি বয়সেই “পেকে” যাওয়া বন্ধুবান্ধব। এই অকালপক্ক বন্ধুবান্ধবের দল কোনোভাবে পর্ন ভিডিওর সন্ধান পেয়ে গেছে। তারপর তারা নিজেরা তো সেই জিনিস দেখেই সাথে সাথে তার ইয়ার দোস্তকেও সেটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মহান দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। শেয়ার ইট, ব্লু টুথ, পেনড্রাইভ, হার্ডডিস্কে চলে লেনাদেনা। ক্লাসের গোলগাল মোটা রিমের চশমা পড়া ভদ্র ছেলেটাকেও জোরাজুরি করে পর্ন ভিডিও দেখার জন্য। বন্ধুদের চাপাচাপিতে নেহায়েত বাধ্য হয়েই ভদ্র, ভালো ছেলেটা হয়তো একবার পর্ন ভিডিও দেখে ফেলে। প্রথমবার দেখে তার বমি আসতে চাইলেও, পাশাপাশি শরীরে অচেনা এক “ফিলিংস কাজ করে। পরে আবার দেখতে ইচ্ছে করে। তারপর আবার। এভাবেই একসময় ভালো ছেলেটাও আটকা পড়ে পর্নোগ্রাফির জালে। অনেক সময় ১০-১২ বছরের ছেলেরা শরীরে হুট করে আসা পরিবর্তন দেখে চমকে যায়, কিন্তু। ভয়ে বা লজ্জায় বাবা-মাকে এগুলো সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারে না। কৌতূহল। মেটাতে না পেরে বাধ্য হয়ে শেষমেষ আশ্রয় নেয় তাদের বন্ধুদের কাছে। বন্ধুদের সাথে এ কথা, এই আলোচনা সেই আলোচনা হতে হতে একসময় পন, হস্তমৈথুন এ কথাগুলোও চলে আসে। এভাবেও অনেকের পর্ন এবং হস্তমৈথুনের সাথে পরিচয় হয়ে যায়।
আমার বাল্যকালের অনেক ইয়ার দোস্তদের এভাবেই পর্ন এবং হস্তমৈথুনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। পর্ন ভিডিওর সঙ্গে পরিচয় ঘটার আর একটা মাধ্যম হচ্ছে বড়ভাই, কাযিন বা পাড়াতো ভাই-বোনদের (বিশেষ করে গ্রামে এটা খুবই বেশি) পর্ন-আসক্তি। বড়ভাই, বোন বা কাযিন পর্ন ভিডিওতে আসক্ত। তার মোবাইলে বা পিসির মেমোরি ভর্তি পর্ন ভিডিও। ছোটভাই, বোন বা কাযিন সে মোবাইল বা পিসিতে মাঝে মাঝে গেইমস খেলে, ঘাঁটাঘাঁটি করে। হুট করে সে একদিন আবিষ্কার করে বসবে পর্ন ভিডিও। আমার খুব কাছের একজন আত্মীয়ের ছয়-সাত বছরের পিচ্চির এভাবেই পর্নোগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটে গেছে। কথাটা বলতে খুব খারাপ লাগছে কিন্তু তবুও বলি, এভাবে পড়াতো ভাই-বোন বা কাযিনদের মাধ্যমে যেসব বাচ্চাদের পর্নোগ্রাফির সাথে পরিচয় ঘটে, সেই পাড়াতো ভাই-বোন বা কাযিনদের মাধ্যমে সেই বাচ্চাদের যৌন-নিপীড়িত হবার খুব ভালো একটা সম্ভাবনা থাকে। কাজেই এটা খুবই সিরিয়াসলি নেয়া দরকার। তবে পর্নোগ্রাফি এবং হস্তমৈথুনের সাথে টিনেইজার বা বাচ্চাদের পরিচিত হবার সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো ইন্টারনেট এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল। অ্যামেরিকাতে শতকরা ৪৬ ভাগ কিশোর নেট ব্রাউযিং করা অবস্থায় নিজেরা পর্নোগ্রাফি না খুঁজলেও এমনি এমনিই পর্ন ভিডিওর খোঁজ পেয়ে যায়। ১৫-১৭ বছর বয়সী টিনেইজারদের মধ্যে শতকরা ৭০ জন অনলাইনে স্বাস্থ্যবিষয়ক কন্টেন্ট ঘাঁটতে গিয়ে হুট করে পর্ন ভিডিওর সন্ধান পেয়ে যায়। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে আপনার সন্তানকে একদিন না-একদিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতেই হবে। আমরা সেটা নিষেধও করছি না। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো, আপনি ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চার হাতে কেন হাই স্পিড নেট তুলে দেবেন? কেন তাদের হাতে তুলে দেবেন হাই কনফিয়াগেরশীন ফোন? ১০-১২ বছরের একটা বাচ্চা হাই কনফিগারেশন ফোন, হাই স্পিড নেট দিয়ে কী এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে, ঠিক বুঝতে পারছি না। সে কি নেট ঘেঁটে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার ব্যাপারে গবেষণা করবে? ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল নামিয়ে দেখবে? উইকিপিডিয়াতে গিয়ে পড়াশোনা করবে? গুগলে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় সার্চ করবে? ফেইসবুকে বিভিন্ন শিক্ষামূলক গ্রুপে থাকবে? বি প্র্যাক্টিকাল! আপনার সন্তান গুগলে ঠিকই যাবে তবে “সালোক সংশ্লেষণ” নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য না, পর্ন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য। ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল নামাবে না, নামাবে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত পর্দায় “আগুন লাগানো কোনো আইটেম সং। ফেইসবুকের শিক্ষামূলক গ্রুপগুলোতে তাকে খুবই কম পাওয়া যাবে, সে বুঁদ হয়ে থাকবে কারও রঙ্গলীলার কাহিনিতে কিংবা সময় কাটাবে বিপরীত লিঙ্গের কারও সাথে চ্যাট করে।
আপনার সন্তানকে কি ফেরেশতা ভাবেন? সে কি মানুষ নয়? তার কি জৈবিক চাহিদা বলে কিছু নেই? পত্রিকা, বিলবোর্ড, টিভি, সিনেমা, ইন্টারনেট –তার প্রতি চারদিক থেকে ছুঁড়ে দেয়া হচ্ছে যৌনায়িত ইমেজারি। আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে একসাথে ড্রয়িংরুমে বসে বসে ভারতীয় নর্তকীর নাচ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন, দেখছেন আইপিএল-বিপিএলের চিয়ারলিডারদের শরীরের ভাঁজ, মুভি দেখছেন, বাসায় প্রথম আলো টাইপ পত্রিকা রাখছেন, যেটা পর্নস্টার, নর্তকী আর পতিতাদের বাংলাদেশের মানুষজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার “মহান দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে। এখনকার বলিউডের এক একটা আইটেম সং পর্ন ভিডিওর চেয়েও খারাপ। নারী পুরুষের সব রসায়নই সেখানে দেখানো হচ্ছে। আপনার সন্তান এগুলো দেখছে, হয়তো আপনার সাথে একসাথে বসেই দেখছে, কিন্তু আপনি তাকে কিছুই বলেন না। এখন কোনো আইটেম সং তাঁর ভালো লেগে গেলে সে সেটী ডাউনলোড করার জন্য নেটে তো ঘুরে বেড়াবেই। সেই আইটেম গার্লের নাম লিখে গুগল সার্চ তো করবেই। আর এসব জায়গা থেকেই সে খোঁজ পেয়ে যাবে পর্নোগ্রাফির জগতের। আর বীর বাঙালি গুগলের এমন অবস্থা করে ছেড়েছে যে, গুগলে কোনো বাংলা ওয়ার্ড লিখে সার্চ দিলেই অমুকের স্ক্যান্ডাল, তমুকের রাতের আঁধারে ধর্ষণ, এ জাতীয় খবরের লিংক চলে আসে। আপনার সন্তান এমন এক সমাজে, এমন এক পরিবেশে আছে যেখানে প্রতিনিয়ত তার জৈবিক চাহিদাকে উসকে দেয়া হচ্ছে। আপনার সামনেই সেটা হচ্ছে, আপনি এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, আপনার সন্তানকে এ যৌনতা-তাড়িত সংস্কৃতি থেকে রক্ষার জন্য কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন। না–সে তো আগুন নেভানোর রাস্তা খুঁজবেই। পরের বার টিভিতে যখন কোনো আইটেম সং চলবে, একটা ছোট পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। অন্যান্য বারের মতো অন্যমনস্কভাবে চ্যানেল স্কিপ করে যাবেন।
ভালো করে খেয়াল করবেন। একটা ১০-১২ বছরের ছেলে কিংবা মেয়ের চোখে ভিডিওর প্রতিটি ফ্রেম দেখার চেষ্টা করবেন। গানের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। এ ধরনের ডজন ডজন বা শত শত আইটেম সং বর্তমান সমাজ ও সংস্কৃতিতে একটা ১০-১২ বছরের কিংবা আরও ছোট ছেলে অথবা মেয়ের চিন্তা ও আচরণের ওপর ঠিক কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার চেষ্টা করবেন। আশা করি সত্য অনুধাবনে কষ্ট হবে না। এ আইটেম সংগুলো পর্ন আসক্তি তৈরি করে চলেছে। পর্নোগ্রাফির সাথে বাচ্চাদের পরিচয় হচ্ছে হয়তো ১০-১২ বছর বয়সে, গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে বাচ্চারা এগুলো দেখছে। কিন্তু আপনি নিজেই সারাদিন টিভি ছেড়ে রেখে, খাওয়ানোর সময় বলিউডের গান ছেড়ে রেখে, একেবারে ছোট ছোট শিশুকে আইটেম সংয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই পর্নোগ্রাফির চেয়েও বেশি উত্তেজকভাবে নারী-পুরুষের রসায়ন দেখানো হচ্ছে। মাঝে মাঝে বাজারের কোনো “হিট” গান ছেড়ে ওকে বলছেন, “বাবু! একটু নেচে দেখাও তো” বা “বাবু একটু গেয়ে শোনাও তো”। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, নিজ হাতে আপনি ওর কত বড় সর্বনাশ করছেন?
যেভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান পর্ন–অসিক্ত :
১) পর্ন দেখার পর সাধারণত ব্রাউযারের হিস্ট্রি ডিলিট করে ফেলা হয়। আপনি যদি লক্ষ করেন আপনার সন্তান ব্রাউযিং হিস্ট্রি ডিলিট করে ফেলছে, তাহলে বুঝবেন সে অনলাইনে এমন কিছু করছে যেটা সে অন্য কাউকে দেখতে দিতে চাচ্ছে না। হতে পীরে সে অনলাইনে প্রেম করছে অথবা পর্ন ভিডিও দেখছে। শেষেরটি হবার সম্ভাবনাই বেশি। ২০১২ সালে করা True Research এর জরিপ অনুসারে ১৩-১৭ বছর বয়সী টিনেইজারদের ৭১ শতাংশ তাদের ব্রাউযার বা চ্যাট হিস্ট্রি মুছে ফেলে, যাতে তাদের বাবা-মা কোনো আন্দাজ করতে না পারে তারা অনলাইনে কী করে।
২) আপনার সন্তান প্রাইভেসী নিয়ে খুবই খুঁতখুতে হয়ে পড়বে। তার নিজের ঘরের দরজা লাগিয়ে রাখবে।
৩) আপনি হুট করে ঘরে ঢুকলে সে চমকে যাবে। তার মধ্যে অস্বাভাবিক নড়াচড়া লক্ষ করবেন। ক্ষিপ্রগতিতে সে ট্যাব মিনিমাইয করে ফেলবে। ডেস্কটপ ওয়ালপেপীরের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। হাত মাউসের ওপরে রেখে দ্রুত ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ক্লিক করতে থাকবে, পেইজ রিফ্রেশ করতে থাকবে। “কী করছ?” জিজ্ঞাসা করলে সে লাজুক হাসি হাসবে, এই সেই বলে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে অথবা রেগে যাবে।
৪) কাঁথা/কম্বলের নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে মোবাইল ব্যবহার করবে।
৫) রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার করবে। বাইরে ঘোরাফেরা বা খেলাধুলা করার চেয়ে সারাদিন ঘরের কোণে পিসিতে বসে থাকবে। একদম চুপচাপ হয়ে যাবে। আপনার পাশে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকবে, তেমন কোনো নড়াচড়াও করবে না, কোনো কথাও বলবে না। আপনি তার চেহারায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ করবেন। যেমন : মুখ লাল হয়ে যাবে, জোরে জোরে নিশ্বাস পড়বে।
৬) বাথরুমে মোবাইল নিয়ে যাবে। বাথরুমে আগের চেয়ে দীর্ঘ সময় কাটাবে।
৭) পিসির স্ক্রিন দেয়ালের দিকে ঘুরিয়ে নেবে, যেন স্ক্রিনে কী চলছে তা দেখা না যায়।
৮) পর্নসাইট ভিযিট করলে সাধারণত পপআপের পরিমাণ বাড়তে থাকে। নেট ব্রাউযিং করার সময় আপনি প্রচুর পরিমাণ পপআপ নোটিফিকেশীন যন্ত্রণায় ভুগলে ধরে নেবেন, ডালমে কুচ কালা হ্যায়।
৯) যৌনতার প্রতি সে অস্বাভাবিক কৌতূহল দেখাবে। এমনকি আপনি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন।
১০) তার আচার-আচরণে, অঙ্গভঙ্গিতে পর্নস্টারদের অনুকরণের ছাপ থাকবে।
১১) আপনি আবিষ্কার করবেন সে হস্তমৈথুন করছে। এ লক্ষণগুলো থাকলে বুঝবেন, আপনার সন্তান পর্ন দেখছে। এর কিছু কিছু অবশ্য (২, ৪) এটাও ইঙ্গিত করে যে, আপনার সন্তান অন্য কারও সঙ্গে “মনের” লেনদেন করেছে।
এখন উপায়?
এক সকালে আপনি আবিষ্কার করলেন যে, আপনার সন্তান পর্নোগ্রাফি দেখে। প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেলেন। আপনার সন্তানের নিষ্পাপ পবিত্র মুখটা আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠল। আপনি কিছুতেই বুঝতে পারলেন না, আপনার শরীরের একটা টুকরো কীভাবে এ জঘন্য নেশায় আসক্ত হয়ে গেল আর আপনি টেরও পেলেন না। এখন কী করবেন আপনি? ল্যাপটপ-পিসি ছিনিয়ে নেবেন? দুটো থাপ্পড় দিয়ে বকাঝকা করবেন? ঘর থেকে বের করে দেবেন ঘাড় ধরে, নাকি বিয়ে দিয়ে। দেবেন? কীভাবে সন্তানকে ফেরাবেন সে নীল রঙের অন্ধকার জগৎ থেকে? লজ্জাজনক এ বিষয় নিয়ে কীভাবেই-বা কথা বলবেন তার সাথে? এসব জটিল সমস্যার সম্ভাব্য কিছু সমাধান নিয়ে আলোচনা করব আমরা ইন শী আল্লাহ।
১) প্রথমত ঘাবড়ে যাবেন না।
অধিকাংশ বাবা-মাই যে ভুলটা করে বসেন সেটা হলো, সন্তানকে পর্ন দেখী অবস্থায় হাতেনাতে ধরে ফেললে বা সন্তান পর্ন দেখছে, কোনোভাবে এটা বুঝতে পারলে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এ ভুল কখনোই করবেন না। আপনার সন্তানকে আপনার সঙ্গে মন খুলে কথা বলার সুযোগ দিন। আপনি রেগে গেলে সে।
পরবর্তী সময় হয়তো আপনার চোখের আড়ালে অনেক কিছু করে বেড়াবে যা আপনি কোনো দিন জানবেনও না। “শেষমেষ আমার ছেলের এ পরিণতি”, “এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে”, “নিজের মুখ দেখাবা না আমার সামনে, দয়া করে এসব বলবেন না। একটু ধৈর্য ধরুন। বিশ্বাস করুন, দোষী প্রমাণিত হবার পর আপনার বাচ্চার মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করবে। এ লজ্জাবোধ তার জন্য যথেষ্ট। তাকে বাড়তি লজ্জা দেবেন না অহেতুক ধমকে দিয়ে। মনে রাখবেন যৌনতা-সংক্রান্ত কৌতূহল অস্বাভাবিক না। যৌনচাহিদা ও যৌনতা নিয়ে জানার আগ্রহ আমাদের সবার মাঝেই আছে। এটি আমাদের সহজাত ফিতরাত। আপনি নিজে থেকে আপনার সন্তানের সাথে এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেননি বা আপনার সাথে ওর কমিউনিকেশন গ্যাপ থেকে গেছে, পাশাপাশি চারপাশের যৌনতা-তাড়িত পরিবেশের কারণে সে ভুল জায়গায় জ্ঞান আহরণ করতে গেছে। আপনার সন্তান পর্নোগ্রাফির ফাঁদে পা দেয়া এক নিরীহ শিকার মাত্র। আপনার সন্তান হয়তো তার বন্ধুদের বা অন্য কারও প্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে তাদের মোবাইলে বা ল্যাপটপে পর্নোগ্রাফি দেখতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। পর্নোগ্রাফির বাজার যেভাবে ইন্টারনেট ছেয়ে গেছে তাতে এর বিধ্বংসী ও বিষাক্ত প্রকোপ থেকে বাঁচা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া যে ওয়েবসাইটগুলোতে অশালীন কিছু নেই সেগুলোতে যেসব বিজ্ঞাপন দেয়া হয়, তাও অনেক সময় পর্নোগ্রাফির দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই আবারও বলছি, দয়া করে রাগ করবেন না। প্রথম প্রথম আপনার হয়তো ছেলে বা মেয়ের জন্য আফসোস হতে পারে। কিন্তু তারপরও যথেষ্ট সহানুভূতি নিয়ে সন্তানের সাথে কথা বলুন। তাকে বোঝান, “দেখে বাবা, আমার খারাপ লাগছে যে তুমি ওগুলো দেখেছ। বিশ্বাস করো আমি তোমার ওপর রাগ করিনি। আমার রাগ তাদের। ওপর যারা এভাবে এসব ছড়িয়ে দিয়েছে তোমাদের মাঝে।” আপনার সন্তানকে ভালোমতো বোঝান যে যৌনতা নোংরা কিছু না। বাচ্চাদের যৌনতা-সংক্রান্ত বাস্তবতা জানাতেই হবে। আর সেটা আপনার চেয়ে কে ওদের ভালোমতো জানাতে পারবে? লজ্জা করবেন না একদম! বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের মধ্যে যৌনতা নিয়ে কৌতূহল জাগবে। আপনি যদি আপনার সন্তানের সঙ্গে যৌনতা নিয়ে তাদের বয়সের সাথে যায় এমন পরিমিত আলোচনা না করেন, তাহলে সে তাঁর কৌতূহল মেটানোর জন্য অন্য কারও কাছে যাবে। সেটা হতে পারে বন্ধু, কাযিন, ইন্টারনেট। আর এখান থেকেই পর্ন-আসক্তির সূচনা হতে পারে। সেই সাথে যৌন-নিপীড়িত হবার আশঙ্কাও থাকে। আপনার বাচ্চার যৌনশিক্ষার জন্য কখনোই স্কুলের ওপর নির্ভর করে বসে থাকবেন না। সেই সাথে স্কুল থেকে আপনার বাচ্চাকে সেক্স এডুকেশন কোর্সে কী শেখানো হচ্ছে সেই দিকে কড়া নজর রাখুন, মাঝে মাঝে তার বই ঘেঁটে দেখুন।
সেক্স এডুকেশন নিয়ে পুরো বিশ্বে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র চলছে। যৌনশিক্ষার নামে বাচ্চাদের বিকৃত এবং নিষিদ্ধ যৌনতার দিকে আকৃষ্ট করা হচ্ছে। কিন্ডারগার্ডেনের বাচ্চাদেরও রেহাই দেয়া হচ্ছে না। জার্মানিতে পাঁচ বছরের বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে কীভাবে কনডম ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে চরমানন্দে (orgasm) পৌঁছাতে হয়! সেক্স এডুকেশনের নামে কীভাবে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি নিষ্পাপ বাচ্চাদের জীবন ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে তার ওপর অসাধারণ গবেষণামূলক কাজ করেছেন। ড. জুডিথ রাইম্যান, তবে সমাজকে যৌনায়িত করার এজেন্ডার বিপক্ষে যাবে বলে মিডিয়ায় এ খবরগুলো উঠে আসছে না। আমরা বিশেষভাবে অনুরোধ করব ড. জুডিথ রাইম্যানের ওয়েবসাইট থেকে নিচের ভিডিওটি দেখতে, The War on Children: The Comprehensive Sexuality Education Agenda—
http://bit.ly/2AxY487
এবং এ বইটি পড়ার জন্য, Sex Education as Bullying—
http://bit.ly/2AztXgu
আপনার বাচ্চাকে বোঝান, যৌনতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি উপহার, যার অধিকার বিয়ের মাধ্যমেই অর্জন করতে হয়। পৃথিবীতে বংশধীরা। টিকিয়ে রাখার পদ্ধতি এটি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে সুদৃঢ় ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হই। পরিবারের ভারসাম্য বজায় রাখতে আল্লাহর নির্ধারিত একটি পরিকল্পনা এটি। নিজেদের পশুবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলার জন্য যৌনতা নয়। আপনার ৮-১০ বছরে বয়েসী বাচ্চা পর্নোগ্রাফির ফাঁদে পা দিয়ে ফেললে, তাকে ভালোমতো বিষয়টি বুঝিয়ে বলুন। “দেখো, আমি জানি তুমি যা দেখেছ তা দেখে প্রথমে তুমি ঘাবড়ে গিয়েছ, তোমার কাছে এসব মৌটেও আনন্দের লাগেনি। তোমার বয়সের একজন ছেলে বা মেয়ের জন্য সেটাই স্বাভাবিক। এসবের সাথে মানিয়ে নেয়ার বয়স এখনো তোমার হয়নি। তুমি কি জানো, আমাদের স্রষ্টাই আমাদের জন্য এ সিস্টেম তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু এটি শুধু আম্মু-আব্বদের জন্যই, যারা কেবল বিয়ের মাধ্যমেই এটি করতে পারেন। এটি খুব গোপন একটি বিষয়। আল্লাহ্ কখনোই তা ঢাকঢোল পিটিয়ে করার আদেশ দেননি। এ রকম কাজ তিনি মোটেও পছন্দ করেন না। সবকিছুর ভালো ও খারাপ আছে। সেক্সের বেলাতেও তা-ই। সেক্সকে নিয়ে এ রকম নোংরামি আমাদের স্রষ্টাকে রাগিয়ে তোলে। দেখো, তুমি যেসব দেখছ তাতে তোমার দৃষ্টির হেফাযত হচ্ছে না। অথচ আল্লাহ কুরআনে আমাদের আদেশ করেছেন, দৃষ্টি এবং লজ্জাস্থানের হেফাযত করতে। তাঁর কথামতো চললে তিনি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসবেন। তিনি তোমাকে এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যেখানে তোমার মন যা চায়, তুমি তা-ই করতে পারবে। সেখানে তোমাকে হোমওয়ার্ক করতে হবে না, স্কুলে যেতে হবে না। তোমার যে কাজগুলো সবচেয়ে ভালো লাগে তুমি সেখানে তার সবকিছুই চাওয়ামাত্রই করতে পারবে। আর আল্লাহর কথা অমান্য করে এসব দেখলে তোমাকে আল্লাহ্ জাহান্নামের আগুনে শাস্তি দেবেন। সেখানে শুধু কষ্ট আর কষ্ট। এবার বলো তুমি কোনটী চাও?” আপনার সন্তানের বয়স যদি আরেকটু বেশি হয়, তাহলে তাকে তার বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বোঝান, কিন্তু কথার মূল টোন এ রকম রাখার চেষ্টা করুন।
২) পরের ধাপটি হচ্ছে আপনার সন্তানকে পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতা বোঝানো। এটা খুব, খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওর যদি পর্নোগ্রাফির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণী না থাকে, তাহলে আজ হোক বা কাল হোক সে পর্ন ভিডিও দেখা শুরু করবেই করবে। ২০১০ সালে North London Secondary School এর ১৪-১৬ বছর বয়সীদের নিয়ে সার্ভে করা হয়। দেখা যায় যে শতকরা ৩০ জন ১০ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সেই অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখে ফেলেছে। শতকরা ৭৫ জন জানিয়েছে তাদের বাবা-মা কখনোই পর্নোগ্রাফি না দেখার ব্যাপারে তাদের সাথে আলোচনা করেননি। আপনার সন্তানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করুন। আপনার আলোচনাতে কী কী বিষয় উঠে আসবে বা আপনার উপস্থাপনা কেমন হবে সেটা নির্ভর করবে আপনার সন্তানের বয়সের ওপর। নিজে আপনার বাচ্চার সঙ্গে কথা বলতে লজ্জাবোধ করা উচিত না। নিরুপায় হলে আপনার বাচ্চাকে পর্নোগ্রাফির। ভয়াবহতার ওপরে বই পড়াতে পারেন, ভিডিও দেখাতে পারেন। তবে নিশ্চিত করতে হবে যে, সে পর্নোগ্রাফির ভয়াবহতার ওপর স্বচ্ছ একটা ধারণী পাচ্ছে।
৩) আপনীর সন্তানকে পর্ন-আসক্তি কাটানোর জন্য মোটিভেট করা শুরু করুন। এই বইয়ে দেয়া টিপসগুলো ফলো করতে বলুন।
৪) আপনার সন্তানকে পারতপক্ষে একা থাকতে দেবেন না, বিশেষ করে অলস সময়ে। কারণ, অলস সময়ই পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হবার অন্যতম কারণ। তাকে নানা ধরনের খেলাধুলা বা প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যস্ত রাখুন। ভিডিও গেইমস থেকে যতটা পারুন দূরে রাখুন। অনলাইন ভিডিও গেইমসের পপআপ অনেক সময়ই পর্ন সাইটের সন্ধান দিয়ে দেয়। তাকে নিয়ে ঘুরুন বা পারলে প্রতি সপ্তাহে একবার ফ্যামিলি ট্রিপে বের হন। ওকে সময় দিন।
ফিরিঙ্গিদের অন্তঃসারশূন্য সভ্যতার চাকচিক্যে আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছে। তাদের মতো হওয়াটাকেই আমরা আমাদের জীবনের পরম ব্রত বানিয়ে ফেলেছি। দিন-রাত টাকা, স্ট্যাটাস আর ক্যারিয়ারের পেছনে ছুটতে ছুটতে পরিবারকে সময় দেয়ার সুযোগ হয় না আমাদের। মমতাময়ী মায়েরাও আজকাল সন্তানের বুকভাঙা কান্নাকে ভুলে স্বাধীন হবার মিথ্যে অশীয় ঘরের বাইরে অফিস-আদালতে চাকরি করতে চলে এসেছেন। সন্তান মানুষ হচ্ছে বুয়ার কাছে। বাবা-মা ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে সন্তানকে স্নেহ-মমতা, আদর-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করে সেই শূন্যস্থান পূরণ করছেন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটস, খেলনা, দামি জামাকাপড় আর এক আকাশ স্বাধীনতা দিয়ে। সেই স্বাধীনতা ইট-কাঠ-পাথরের খাঁচায় বন্দী বাচ্চাদের বানাচ্ছে পর্ন-আসক্ত কিংবা মাদকাসক্ত। ছোটবেলায় ভাত খাওয়া নিয়ে আমি আমার মাকে অনেক জ্বালিয়েছি। মা কত কষ্ট করে, ধৈর্য ধরে, ডালিমকুমারের গল্প শুনিয়ে, কাঠবিড়ালি আর পেয়ারা গাছের পাতার আড়ালের বুলবুলি দেখিয়ে ভাত খাইয়েছেন। এ রকম গল্প আমাদের জেনারেশনের প্রায় প্রত্যেকটি ছেলেমেয়ের। এই যুগের চাকরিজীবী মায়েরা সারাদিন তো সন্তানদের তাদের স্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেন, দিন শেষে ঘরে ফিরলেও সেই গল্পের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। হয়তো সারাদিন আপনার সন্তান চাতক পাখির মতো আপনার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। কিন্তু ক্লান্ত শরীরে খুব বেশিক্ষণ আপনি তাঁকে সময় দিতে পারেন না। ভাত খেতে না চাইলে কার্টুনের সামনে বসিয়ে দেন। সন্তানের হাতে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট ধরিয়ে দিয়ে আপনি বিশ্রাম নেন। ধীরে ধীরে তার ছোট্ট মনটাতে ক্ষত সৃষ্টি হতে থাকে। গ্যাজেট-আসক্তি তাকে বানিয়ে দেয় পর্ন-আসক্ত। একটু স্থির হয়ে বসে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। কেন আপনি রাত-দিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন? কেন টাকার পেছনে ছুটছেন? টাকার জন্যই কী বেঁচে থাকা, নাকি বেঁচে থাকার জন্য টাকা? আপনার সন্তানকেই যদি আপনি সময় দিতে না পারেন, আপনার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে না পারেন, তাহলে এত টাকা-পয়সা, ক্যারিয়ার দিয়ে কী করবেন? বোন, আপনারা স্বাধীন হয়ে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে কী করবেন, যদি আপনার দেহের একটি অংশ মনে মনে আপনার ওপর অভিমান নিয়ে সারা জীবন পার করে দেয়, আপনাকে ঘৃণা করে?
ও কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে এগুলো খেয়াল করুন। বন্ধুবান্ধব বা অন্য কেউ ওকে পর্ন দেখার জন্য জোরাজুরি করলে কীভাবে টেকনিক্যালি “না” বলতে হবে শেখান। কাযিনদের সাথে ও কী নিয়ে গল্পগুজব করে সেগুলো কথায় কথায় জানুন। ছোট থেকেই ওকে পর্দা করাতে, নজরের হেফাযত করতে অভ্যস্ত করে তুলুন। বিপরীত লিঙ্গের কাযিন বা বন্ধুদের সঙ্গে পর্দা করার জন্য উৎসাহিত করুন।
অনেক বাবা-মাই এটাকে গুরুত্ব দেন না। ভাবেন ওরা তো নিজের ভাইবোনের মতোই, তা ছাড়া ছোট মানুষ…সমস্যা কী? বিশ্বাস করুন, পর্ন-আসক্তি তো বটেই, যিনার মতোর ভয়ঙ্কর পাপের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে বিপরীত লিঙ্গের কাযিন বা বন্ধুদের সাথে অবাধ মেলামেশী। ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। মামি, চাচি এই ধরনের গাইরে মাহরামদের সাথেও যেন সে পর্দা মেনে চলতে পারে, সেটাও আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে। কাজের মেয়ের ব্যাপারেও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। ঘন ঘন অন্য কারও বাসায় রাতে থাকতে চাইলে ভালোমতো খতিয়ে দেখতে হবে ব্যাপারটা কী। ওর শোয়ার বিছানা আলাদা করে দিতে হবে। অন্য কারও সঙ্গে ও বিছানা শেয়ার করবে না। এগুলোর অনেক কিছুই আপনার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ অলাদা। এই বিষয়গুলো না মেনে চলার কারণে কত মানুষ যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে, পর্ন-আসক্ত কিংবা বিকৃত যৌনাচারে অভ্যস্ত হয়েছে। তার ইয়ত্তা নেই।
৫) তাকে মুসলিম ইতিহাসের হিরোদের সঙ্গে পরিচিয় করিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাহাবা, সালাফগণ, সুলতান নুর উদ-দ্বীন জঙ্গি, সালাহ উদ-দ্বীন আইয়ুবী, তারিক বিন যিয়ীদ, মুহাম্মদ বিন কাসিমদের যেন সে রোল মডেল। হিসেবে নেয় সে চেষ্টা অব্যাহত রাখুন। আপনার সন্তানের রোল মডেল যদি হয় বলিউড, হলিউডের চরিত্রহীন নায়ক-নায়িকা কিংবা কোনো স্পোর্টস পারসোনালিটি, তাহলে নিশ্চিত থাকুন দিন দিন সে নৈতিকভাবে অধঃপতিত হবে, পর্ন ভিডিওর সঙ্গে সখ্যতা গড়বে। সেই সঙ্গে পর্ন-আসক্তি থেকে ফিরে আসতে চাইলেও খুব সহজেই ফিরতে পারবে না।
৬) বাসায় এমন কিছু রাখবেন না যা পর্নোগ্রাফির দিকে ধাবিত করে। প্রথম আলোর “নকশী”, “অধুনী”, “কিশোর আলো” “আনন্দ” কিংবা দৈনিক বিনোদন পাতা, সানন্দা, আনন্দলোক বা এ ধরনের ম্যাগাযিনও না। আইটেম সং, মিউযিক ভিডিও, বলিউড এবং হলিউডের সিনেমা–এগুলোও আপনার সন্তানের পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে যাবার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৭) বাসায় যে পিসি বা ল্যাপটপ আপনি আপনার সন্তানকে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন, তা ড্রয়িংরুম বা এমন কোনো রুমে সরিয়ে নিন, যেখানে আসতে যেতে সকলের চোখ একবার হলেও পড়বে।
৮) ইন্টারনেটে আপনার সন্তান কী পরিমাণ সময় কাটাবে তা ঠিক করে দিন।
৯) আপনার সন্তানকে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার নফল রোজা পালনের জন্য উৎসাহিত করুন। এটি যৌন-প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রাসূলুল্লাহর (6) জানিয়ে দেয়া পদ্ধতি।
১০) চাইলে সন্তানের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। বিয়ে পর্নহস্তমৈথুন আসক্তির পুরোপুরি সমাধান নয়, এ নিয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। তবে আসক্তির মাত্রা কমানোর জন্য এবং যারা এখনো আসক্ত নয় তাদের আসক্ত হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে বিয়ে।
১১) প্রচুর পরিমাণ দু’আ করুন। দান-সাদকাহ করুন।
১২) পর্ন ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করার সফটওয়্যার বা অ্যাপ্স ব্যবহার করুন। “বিষে বিষক্ষয়” শিরোনামের লেখায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন।
১৩) আপনার সন্তানকে পর্ন-আসক্তি কাটানোর জন্য কিছুটা সময় দিন। একবারেই হুট করে সে পর্ন দেখা ছেড়ে দিতে পারবে না। সময় লাগবে। ট্রিটমেন্টের সময় পর্ন দেখী অবস্থায় তাকে হাতেনাতে ধরে ফেললেও রাগারাগি করবেন না। সর্বোপরি আল্লাহ্ ওপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। আল্লাহ কাছে দু’আ করতে হবে প্রচুর পরিমাণে।