আমরা কেউ বাসায় নেই – ০৩


পদ্ম এবং তার মা এ বাড়িতে আছে দশ দিন ধরে। পদ্মর মায়ের নাম সালমা। ভাইয়া তাকে ডাকছে ‘ছোট মা’। আমি ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, ওনাকে ছোট মা ডাকছ কেন?
ভাইয়া উদাস গলায় বলল, ঝামেলা লাগানোর জন্যে ‘ছোট মা’ ডাকছি, রগট ধর্মের অনুসারীরা ঝামেলা লাগাবে—এটাই তো স্বাভাবিক। আমার ‘ছোট মা’ ডাক শুনে বাবা আগুনলাগা মরিচবাতির মতো বিড়বিড় করে জ্বলবেন। মা ঘন ঘন ফিট হবেন। মজা না? দেখ, কেমন ঝামেলা লাগে।
ঝামেলা ভালোমতোই লেগেছে। পদ্ম-পরিবারের দশ দিন পার করার পর আমাদের সবার গতি ও অবস্থান জানানো যেতে পারে, যদিও কোনো কিছুরই গতি ও অবস্থান একসঙ্গে জানা যায় না। গতি জানলে অবস্থান বিষয়ে কিছু অনিশ্চয়তা থাকে, আবার অবস্থান জানলে গতির অনিশ্চয়তা। এসব জ্ঞানের কথা ভাইয়ার কাছ থেকে শোনা।

বাবা
তাঁর উঠানে চক্রাকার হণ্ঠন এবং ফ্রিহ্যান্ড একসারসাইজ এই কদিন বন্ধ। ভাইয়ার সঙ্গে তিনি কয়েকটা গোপন বৈঠক করেছেন। তাঁদের মধ্যে কী কথাবার্তা হয়েছে, জানি না। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভাইয়া কিছু বলেনি, শুধু মধুর ভঙ্গিতে হেসেছে।
বাবার সঙ্গে আমার একবারই কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছেন, তোমার বড় ভাই পদ্মর মাকে ছোট মা ডাকছে কেন?
আমি জানি না, বাবা।
তুমি কী ডাকো?
ওনার সঙ্গে আমার এখনো কোনো কথা হয়নি বলে কিছু ডাকার প্রয়োজন হয়নি।
প্রয়োজন হলে কী ডাকবে?
তুমি যা ডাকতে বলবে, তা-ই ডাকব। নাম ধরে ডাকতে বললে, সালমা ডাকব।
তোমার বড় ভাইকে আমি মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় দিয়েছি, এটা জানো?
না।
মঙ্গলবার দুপুর বারোটার মধ্যে সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।
ভাইয়া রাজি হয়েছে?
তার রাজি হওয়া-হওয়ির কী আছে? দিস ইজ মাই হাউস। তুমি যদি মনে করো তুমি তোমার ভাইয়ার সঙ্গে চলে যাবে, তুমিও যেতে পারো।
জি আচ্ছা, বাবা।
বিএ পাস করে ঘরে বসে আছো কেন? নড়াচড়া করবে না?
চাকরি খুঁজছি, বাবা। একটা মনে হয় পেয়েও যাব। ইন্টারভ্যু ভালো হয়েছে।
কী চাকরি?
শকুনশুমারির চাকরি। একটা এনজিওর সঙ্গে কথাবার্তা প্রায় ফাইনাল হয়ে গেছে। এনজিওর কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের শকুনের পরিসংখ্যান করা।
ফাজলামি করছ?
জি না, বাবা। এনজিওর নাম Save the vulture. বাংলায় ‘শকুন বাঁচাও’।
বাবার চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি মরিচবাতির মতো জ্বলছেন।

মা
মা পুরোপুরি শয্যা নিয়েছেন। আগে তাঁর হাঁপানি গ্যাপ দিয়ে দিয়ে হতো, এখন মেগাসিরিয়ালের মতো প্রতিদিনই হচ্ছে। হাঁপানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাশি।
সারাক্ষণই খক খক। মা ঘন ঘন আমাকে ডেকে পাঠান এবং ঘণ্টাখানেক কথা বলে নেতিয়ে পড়েন। প্রতিদিনই কথা শুরু হয় কাক দিয়ে এবং শেষ হয় পদ্মর মা দিয়ে।
মনজু, শোন। যেদিন ওই হারামজাদা কাকটা মানুষের চোখ ঠোঁটে নিয়ে বারান্দায় এসে বসেছে, সেদিনই বুঝেছি আমার সব শেষ।
মা, তুমি শোনো! মানুষের চোখ ওই কাক কোথায় পাবে? মরা গরু-ছাগলের চোখ নিয়ে এসেছে।
ওইটা ছিল মানুষের চোখ। গরু-ছাগলের চোখ আমি চিনি। আমি কচি খুকি না। এখন বল, টগর কেন পদ্মর মাকে ছোট মা ডাকে?
জানি না, মা।
আমার মনে সন্দেহ, তোর বাবা ওই মহিলাকে গোপনে বিয়ে করেছে। টগর বিষয়টা জানে বলে তাকে ছোট মা ডাকে।
হতে পারে।
হতে পারে না, এইটাই ঘটনা। টগর চিন্তাভাবনা ছাড়া কিছু করে না। সারা জীবন ফার্স্ট-সেকেন্ড হওয়া ছেলে। ছোট মা ডাকা উচিত বলেই সে তাকে ছোট মা ডাকছে।
এখন, মা, আমিও কি ওনাকে ছোট মা ডাকব?
কথাবার্তার এই পর্যায়ে মায়ের হাঁপানির টান প্রবল হলো। তিনি ডাঙার বোয়াল মাছের মতো একবার হাঁ করছেন, একবার মুখ বন্ধ করছেন।
একজন খাবি-খাওয়া মানুষের পাশে বেশিক্ষণ বসে থাকা যায় না। আমি উঠে পড়লাম।
মা বললেন, যাচ্ছিস কোথায়? বসে থাক। টগরকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারবি তোর বাবা ওই মহিলাকে বিয়ে করেছে কি না।
তুমি সরাসরি বাবাকে জিজ্ঞেস করো।
তোর বাবাকে এ রকম একটা কথা কীভাবে জিজ্ঞাসা করব?
ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করো। বাংলা ভাষা আমাদের কাছে খোলামেলা, ইংরেজির আব্রু আছে। ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে বাবা খুশিও হবেন। তুমি বললে, ‘Is it true that you got married to Salma?’
মা কাঁদো কাঁদো গলায় বললেন, একটা কাগজে লিখে দে। আমার মনে থাকবে না।

ভাইয়া
বাবা উঠানে চক্রাকারে ঘোরা বন্ধ করেছেন বলেই হয়তো ভাইয়া শুরু করেছে। প্রতি সন্ধ্যায় সে এই কাজ করছে। রাতে সে তার রগট ধর্ম নিয়ে খাতায় কী সব লিখছে! লিখছে উল্টা করে, কাজেই সরাসরি পড়ার উপায় নেই। আয়নার সামনে ধরে পড়তে হয়। একজন মানুষ পাতার পর পাতা উল্টা করে লিখে যাচ্ছে, এই ঘটনা বিস্ময়কর।
ব্যাঙা ভাই একদিন এসেছিল। অনেকক্ষণ ভাইয়ার সঙ্গে গুজগুজ করল। আমি আড়াল থেকে শুনলাম।
ওস্তাদ, দুই-একটা ভালো কথা বলেন, শুনি।
কোন বিষয়ে কথা শুনতে চাও?
আপনার যা ইচ্ছা বলেন।
শত্রু বিষয়ে বলব?
বলেন, শুনি।
একজন মানুষের মহা শত্রু হলো ঋণগ্রস্ত পিতা। সংস্কৃতে এই জন্যেই বলে ‘ঋণগ্রস্ত পিতা শত্রু’।
বলেন কী! জন্মদাতা পিতা শত্রু?
‘কান্তা রূপবতী স্ত্রী শত্রু’, অর্থাৎ, রূপবতী স্ত্রী শত্রু।
খাইছে আমারে! আমি পয়েন্টে পয়েন্টে ধরা খাইতেছি।
‘পুত্রঃ শত্রুরপণ্ডিতঃ।’ অর্থাৎ, মূর্খ পুত্রও শত্রু।
আমি গেছি ওস্তাদ, আমার চাইর দিকেই শত্রু। কাশেমের মা পরির চেয়েও সুন্দর। আর কাশেম মহামূর্খ। ক্লাস ওয়ান থাইকা টুতে উঠতে পারতেছে না, তিনবার ফেইল করছে। আমার বাবার কাজই ছিল ঋণ করা। ওস্তাদ, আরও দুই-একটা জ্ঞানের কথা বলেন, শুনি।
সাপ যখন মানুষের সামনে ফণা তোলে, তখন স্থির হয়ে থাকে না। ডানে-বামে সারাক্ষণ মাথা দোলায়। কেন, জানো? সাপের চোখ ফণার দুই দিকে। স্থির হয়ে থাকলে সে সামনের কিছু দেখতে পারে না বলেই সারাক্ষণ ফণা দোলায়। তার সামনে কী আছে, তা দেখার জন্যেই সাপকে ফণা দোলাতে হয়।
বিরাট একটা জিনিস শিখলাম। ওস্তাদ, পা-টা আগায়ে দেন। পা ছুঁইয়া সালাম করি।
ভাইয়াকে তার অদ্ভুত বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম। ভাইয়া বলল, ওদের মাথায় শুধু একটা বিষয়ই আছে—তার নাম ‘অপরাধ’। ওরা সিঙ্গেল ট্র্যাক হয়ে গেছে। অপরাধ ছাড়া আর কিছুই এরা ভাবতে পারে না। তাদের মাথার পুরোটাই খালি। সেই শূন্য মাথায় বুদ্ধিমান মানুষ অনায়াসে ঢুকে ওদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমি তা-ই করছি।
তুমি কি ক্রিমিনাল?
আমরা সবাই ক্রিমিনাল। মানুষ হয়ে জন্মানোর প্রধান শর্তই হচ্ছে, তাকে ক্রিমিনাল হতে হবে।
তাহলে মহাত্মা গান্ধীও ক্রিমিনাল?
ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল, তুই আমার সঙ্গে তর্ক করতে আসবি না। তর্কে পারবি না।

রহিমার মা
রহিমার মা কয়েক দিন ধরে ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিচ্ছে। অনেক সময় নিয়ে ভাইয়ার ঘর ঝাঁট দিচ্ছে, ঘর মুছছে। ভাইয়া একদিন তাকে বলল, রহিমার মা, ঠোঁটে লিপস্টিক দেওয়ার জন্যে তোমার চেহারায় বেশ্যা ভাব চলে এসেছে। তোমাকে দেখাচ্ছে বেশ্যাদের মতো।
হতভম্ব রহিমার মা বলল, ভাইজান, এইটা কী কন?
যেটা সত্যি, সেটা বললাম। তুমি ঠোঁটে শুধু যে লিপস্টিক দিয়েছ তা না, গায়ে একগাদা সস্তা সেন্ট মেখেছ। সস্তা সেন্ট থেকে পচা বিষ্ঠার গন্ধ আসে। তোমার গা থেকে পচা বিষ্ঠার গন্ধ আসছে।
বিষ্ঠা কী?
বিষ্ঠা হচ্ছে গু। তুমি আমার ঘর থেকে বের হও। গুয়ের গন্ধে তুমি আমার ঘর গন্ধ করে ফেলছ।
ভাইয়ার কথা শুনে রহিমার মা সেদিন আর কোনো কাজকর্ম করল না। কলের পাশে বসে সারা বিকেল কাঁদল। পদ্মকে দেখলাম ঘটনা আগ্রহ নিয়ে লক্ষ করছে।

পদ্ম
পদ্ম যে পদ্মর মতোই সুন্দর তা যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কেন জোর করে তাকে বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল, এখন তা স্পষ্ট। অতিরূপবতীদের আশপাশে থাকা অস্বস্তির। আমি অস্বস্তির মধ্যে আছি। তার সঙ্গে দুবার আমার কথা হয়েছে। প্রথমবার সে আমাকে কঠিন গলায় বলল, আপনি আমাকে নিয়ে যখন এ-বাড়িতে আসেন, তখন আমি জ্বরে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম, না?
হুঁ।
সেই সুযোগে আপনি কি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন?
হুঁ।
আশ্চর্য! প্রথম সুযোগেই গায়ে হাত দিলেন?
তুমি সিট থেকে নিচে পড়ে গিয়েছিলে। তোমাকে টেনে সিটে তুলতে হয়েছে। গায়ে হাত না দিয়ে সেটা করা সম্ভব ছিল না।
গায়ে হাত দেওয়ার একটা অজুহাতও বের করে ফেলেছেন? আমি লক্ষ করেছি প্রায়ই আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন। আরেকবার এ রকম দেখলে উলের কাঁটা দিয়ে চোখ গেলে দেব।
স্ত্রীর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা তো দোষের কিছু না।
স্ত্রী মানে? আরেকবার এই ধরনের রসিকতা করলে গলা টিপে মেরে ফেলব।
দ্বিতীয় দফায় তার সঙ্গে যে কথা হয় তা হলো—
আপনাদের ওই কাজের মেয়ে, রহিমার মা, তাকে দেখলাম আপনার ভাইয়ার ঘর থেকে বের হয়ে সারা বিকেল কলের পাড়ে বসে কেঁদেছে। ঘটনা কী?
রহিমার মা ভাইয়ার প্রেমে পড়েছে, এই হলো ঘটনা।
কাজের ঝির সঙ্গে আপনার ভাইয়ের প্রেম?
হুঁ। একপক্ষীয় প্রেম। ভাইয়া এখনো কোনো সাড়াশব্দ করছে না। তবে করতেও পারে। ভাইয়াকে বোঝা মুশকিল।
আপনি এমনভাবে কথা বলছেন যেন এটা ঘটনাই না।
বড়লোকের মেয়ে যদি প্রেমে পড়তে পারে, তাহলে কাজের বুয়াও প্রেমে পড়তে পারে।
আমার গা ঘিনঘিন করছে।
তাহলে যাও, গোসল করে ফেলো। সাবান ডলা দিয়ে হেভি গোসল করলে গা ঘিনঘিন দূর হবে।
পদ্ম মেয়েটির বিষয়ে একটা কথা বলা বিশেষ প্রয়োজন। মেয়েটির স্লিপ ওয়াকিং সমস্যা আছে। এক রাতের কথা। একটা বা দুটা বাজে। ঘুম আসছে না বলে বাইরে বসে আছি। হঠাৎ দেখি দরজা খুলে পদ্ম বের হলো। তার চোখমুখ শক্ত, সে উঠানে দুটা চক্কর দিল। আমি ডাকলাম, এই পদ্ম, এই। সে ফিরে তাকাল না। আবার নিজের ঘরে ঢুকে গেল।

ভাইয়ার ছোট মা
এই মহিলার বিষয়ে প্রথম কথা হচ্ছে—ওনার গলার স্বর অস্বাভাবিক মিষ্টি। আমি এত মিষ্টি কণ্ঠস্বর আগে শুনিনি।
এমন মিষ্টি কণ্ঠস্বরের মহিলা, কিন্তু আচার-আচরণ কঠিন। তাঁর একমাত্র কাজ মেয়েকে চোখে-চোখে রাখা। পদ্ম যেখানে যাচ্ছে, উনি তার পেছনে পেছনে যাচ্ছেন।
কানায় কানায় পূর্ণ কলসির মতো তার অন্তর হিংসায় পূর্ণ। মহিলা ভাইয়ার রগট ধর্মে যোগ দিতে পারেন।
তাঁর সঙ্গে আমার এক দিনই কথা হয়েছে। তিনি আমাকে ঘরে ডেকে নিয়ে বলেছেন, তোমার বড় ভাইকে ডেকে বলবে, সে যেন আমাকে ছোট মা না ডাকে। মা-মা খেলার অর্থ আমি জানি।
আমি বললাম, কী অর্থ, বলুন?
আমাকে ভজানো। আমাকে ভজিয়ে আমার মেয়ের কাছে যাওয়া।
আমি সরল মুখ করে বললাম, অন্যের বউয়ের কাছে ভাইয়া যাবে না। এই সব ঝামেলা ভাইয়ার মধ্যে নেই।
অন্যের বউ মানে? তুমি কী বলছ?
পদ্মর বিয়ে হয়েছে আমার সঙ্গে। চার লাখ টাকা দেনমোহর। অর্ধেক উসুল।
তোমার ভাইয়ার মধ্যে যে ফাজলামি স্বভাব আছে, তা তোমার মধ্যে আছে। ভুলেও আমার সঙ্গে ফাজলামি করবে না। মুখ হাঁ করিয়ে মুখে এসিড ঢেলে দেব।
এসিড কোথায় পাবেন?
এসিড আছে আমার সঙ্গে। দেখতে চাও। দাঁড়াও, দেখাচ্ছি।
ভদ্রমহিলা ছুটে ঘরে ঢুকলেন, নীল রঙের একটা বোতল নিয়ে বের হলেন। বোতলের মুখ খুলে তরল কিছু একটা ঢালতেই বিজবিজ শব্দে উঠান পুড়তে লাগল। উঠান থেকে ধোঁয়া উঠল।
আমি কাণ্ড দেখে স্তম্ভিত। ‘ছোট মা’ না ডেকে তাঁকে ‘এসিড-মা’ ডাকা দরকার।

এসিড মাতা বললেন, পদ্ম স্যান্ডেল কিনবে। তুমি তার সঙ্গে যাও। আমার শরীর খারাপ, আমি যেতে পারছি না। আমার মেয়েকে আমি একা ছাড়ি না। নিয়ে যেতে পারবে?
পারব।
এক রিকশায় যাবে না। আলাদা রিকশায় যাবে।
আমি বললাম, আলাদা রিকশায় গেলে চোখের আড়াল হবার সম্ভাবনা থাকে, এক রিকশাতেই যাই। আমি পাদানিতে বসলাম, পদ্ম সিটে বসল।
পদ্ম আমার কথায় শব্দ করে হেসে ফেলেছে। তার মায়ের কঠিন দৃষ্টির সামনে তার হাসি দপ করে নিভে গেল।
ড্রাইভার ইসমাইল। তার সম্পর্কে বেশি কিছু বলতে পারছি না। এই কদিন সে কাকরাইল মসজিদে চিল্লায় গিয়েছিল। সাত দিন পার করে জ্বর নিয়ে ফিরেছে। রহিমার মা তার মাথায় পানি ঢালছে, স্যুপ বানিয়ে খাওয়াচ্ছে। রহিমার মায়ের কাছেই শুনলাম, ড্রাইভার চিল্লা থেকে একটা জিন নিয়ে ফিরেছে। জিনের কারণেই তার প্রবল জ্বর। জিনের নাম মফি। বয়স তিন হাজার বছর।
চরিত্র-পরিচিতিমূলক লেখা শেষ হয়েছে। সবার গতি ও অবস্থান যতটুকু সম্ভব বলা হলো। এখন মূল গল্পে যাওয়া যেতে পারে।

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২০, ২০১১

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *