ছোটো গল্প
উপন্যাস
প্রবন্ধ
ফিচার
কবিতা

আফ্রিকার কেপ বাফেলো

আফ্রিকার কেপ বাফেলো

মহিষগোষ্ঠীর কোনো জানোয়ারকেই নিরীহ বলা চলা চলে না, মহিষমাত্রেই ভয়ংকর জীব। গৃহপালিত মহিষও উত্তেজিত হয়ে মানুষের প্রাণ হরণ করেছে এমন ঘটনা খুব বিরল নয়, বন্য মহিষের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। তবে মহিষগোষ্ঠীর অন্তর্গত বিভিন্ন ধরনের জানোয়ারের মধ্যে সম্ভবত কেপ বাফেলো নামক আফ্রিকার মহিষই সবচেয়ে ভয়ানক জীব।

মহিষ পরিবারের সকল পশুরই প্রধান অস্ত্র শিং আর খুর। কেপ বাফেলো নামে আফ্রিকার অতিকায় মহিষও ওই দুই মহাস্ত্রে বঞ্চিত নয়। উপরন্তু তার মাথার উপর থাকে পুরু হাড়ের দুর্ভেদ্য আবরণ। শিরস্ত্রাণের মতো মাথার উপর দৃশ্যমান ওই সুকঠিন অস্থি-আবরণ ভেদ করে শ্বাপদের নখদন্ত অথবা রাইফেলের গুলি মহিষের মস্তিষ্কে আঘাত হানতে পারে না। ওই অস্থি-আবরণের ইংরেজি নাম বস অব দি হর্নস সংক্ষেপে বস! বস-এর দুইদিকে অবস্থিত শিং এর দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩৬ ইঞ্চি থেকে ৪৫ ইঞ্চি। তবে ৫৬ ইঞ্চি লম্বা শিংও দেখা গেছে।

কেপ বাফেলো সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। দলের আধিপত্য নিয়ে পুরুষ মহিষদের মধ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে। সদ্যযৌবনপ্রাপ্ত তরুণ মহিষদের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে প্রাচীন মহিষরা অনেক সময় দল ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দল ছাড়া মহিষ যত্র তত্র ঘুরে বেড়ায় এবং পৃথিবীর যাবতীয় দ্বিপদ ও চতুষ্পদ জীব সম্পর্কে প্রচণ্ড বিদ্বেষ পোষণ করে। নিঃসঙ্গ পুরুষ মহিষ সম্পূর্ণ বিনা কারণে মানুষ বা পশুকে আক্রমণ করতে পারে। সুদানের অরণ্যে এক অনভিজ্ঞ শ্বেতাঙ্গ যুবক ওইরকম একটি নিঃসঙ্গ মহিষ সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন, সেই মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার ভয়াবহ বিবরণ পাঠকদের সামনে উপস্থিত করছি।

কাহিনিটি ভুক্তভোগীর নিজস্ব জবানীতেই পরিবেশিত হল:

আমার বয়স যখন কুড়ির কিছু বেশি, সেই সময় শিকার-কাহিনি, অভিযান-কাহিনি ও জীবজন্তু বিষয়ক প্রচুর পুস্তক পাঠ করে আমার ধারণা হল ওইসব বিষয়ে আমি যথেষ্ট জ্ঞানলাভ করেছি এইবার একটা অভিযানে বেরিয়ে পড়লেই হয়। অতএব সকলের মতামত অগ্রাহ্য করে আমি উপস্থিত হলাম আফ্রিকায় অবস্থিত সুদানের খাতুম নামক স্থানে।

কিছুদিনের মধ্যেই মহম্মদ আলি নামে একজন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠল। আমার শুভার্থীরা সকলেই একবাক্যে ওই লোকটির সঙ্গে মেলামেশা করতে নিষেধ করেছিলেন। তাদের মতে লোকটি হচ্ছে পয়লা নম্বরের মিথ্যাবাদী আর ধাপ্পাবাজ; অতএব তার সংশ্রব থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকাই নাকি মঙ্গলজনক। শুধু তারা নন, সমগ্ৰ খাতুমের সমস্ত অধিবাসী মহম্মদ আলিকে অতিশয় দুষ্ট চরিত্রের লোক বলেই মনে করত। কিন্তু আমার তখন অল্প বয়সের গরম রক্ত, তার উপর বিস্তর পড়াশুনা করে নিজেকে প্রায় সবজান্তা বলে মন করছি অতএব, কারো কথায় আমি কান দিলাম না। মহম্মদ আলির মুখে যে-সব ভয়াবহ ঘটনার চাক্ষুষ বর্ণনা শুনেছিলাম, সেইসব ঘটনা যে প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণী না হয়ে ধাপ্পাবাজ মিথ্যাবাদীর মস্তিষ্কপ্রসূত কল্পনাশক্তির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে, এমন কথা আমার মনে আসেনি মহম্মদ আলি সম্বন্ধে জনসাধারণের অভিমত আমি ঈর্ষাকাতর মানুষের নিন্দা বলেই ধরে নিয়েছিলাম। সুতরাং শিকার অভিযানের পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত সঙ্গী হিসাবে যে-লোকটিকে আমি বেছে নিয়েছিলাম, তার নাম মহম্মদ আলি।

খবর পেয়েছিলাম ফাংপ্রভিন্স নামে সুদানের একটি অরণ্যসংকুল অঞ্চলে বন্যমহিষের একটি বিরাট দল উপস্থিত হয়েছে। ওই মহিষথকে স্বচক্ষে দর্শন করার জন্য উগ্রীব হয়ে উঠলাম। মহম্মদ আলিকে প্রচুর পারিশ্রমিকের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারই তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত ছয়জন স্থানীয় অধিবাসীর সঙ্গে রওনা হলাম মহিষযুথের সন্ধানে। যে ছয়জন লোক মোট বহন করার জন্য আমার সঙ্গে চলল, তারা আমার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আদৌ অবহিত ছিল না। নির্দিষ্ট স্থানের কাছে এসে তাদের জানালাম মহিষব্যুথের সাক্ষালাভ করতেই আমি ওই অঞ্চলে পদার্পণ করেছি। আমার বক্তব্য শেষ হতে-না-হতেই ছয়জন মোটবাহকের মধ্যে শুরু হল তীব্র কণ্ঠস্বরের প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা। আমি তখনও খুব ভালোভাবে স্থানীয় মানুষের ভাষা আয়ত্ত করতে পারিনি সেই বিজাতীয় ভাষায় তুমুল কোলাহল ভেদ করে তাদের বক্তব্য বিষয় আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। মহম্মদ আলিকে ডেকে তাদের এমন অসঙ্গত আচরণের কারণ জানতে চাইলাম। সে বলল, আমার প্রস্তাব শুনে অত্যন্ত উৎসাহিত হয়ে তারা উল্লাস প্রকাশ করছে। সুতরাং ওই বিষয়ে আমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই।

কিন্তু তিনদিন পরে এক মেঘাচ্ছন্ন প্রভাতে নিদ্রাভঙ্গ হতেই আমি যখন আবিষ্কার করলাম একমাত্র মহম্মদ আলি ছাড়া দলের প্রত্যেকটি লোকই তাবু ছেড়ে অদৃশ্য হয়েছে, তখন দস্তুরমতো মাথা ঘামাতে বাধ্য হলাম। মহম্মদ আলিকে ডাকলাম আমি। দলের সবাই পালিয়ে গেছে শুনে সে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠল। তৎক্ষণাৎ ঘোড়া সাজিয়ে সে জানাল, সবচেয়ে বড়ো মহিষের মাথাটা আমায় সংগ্রহ করে দেবে বলে যে প্রতিজ্ঞা সে করেছিল, সেই প্রতিজ্ঞা পালন করতে সে বদ্ধপরিকর হতচ্ছাড়া পলাতকদের সে বুঝিয়ে দেবে কারো সাহায্যের ভরসা মহম্মদ আলি করে না, সে একাই কার্যসিদ্ধি করতে পারে।

তার বাক্যস্রোতে আমি তখন হতভম্ব। আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে সে তড়াক করে ঘোড়ার পিঠে উঠে তীরবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল।

হঠাৎ আমার মনে হল, মহম্মদ আলি বোধ হয় আমাকে ফাঁকি দিয়ে অন্যান্য সহচরদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চায়। আমার সন্দেহ সত্য, না কি, অন্যায়ভাবে মহম্মদ আলির সদিচ্ছায় সন্দিহান হয়ে তার সম্পর্কে আমি অবিচার করেছিলাম, সেকথা কোনোদিনই জানা সম্ভব হবে না। কারণ, মুহূর্তের মধ্যে সমগ্র ঘটনা এগিয়ে গেল এক ভয়ংকর পরিণতির দিকে।

মহম্মদ আলি তখনও ঘোড়ার পিঠে দৃশ্যমান, আমি হতভম্ব ভাবটা কাটিয়ে উঠে প্রাণপণে চিৎকার করে তাকে ফিরে আসতে বলছি- এমন সময়ে হঠাৎ ঝোপ-জঙ্গল ভেদ করে আমার থেকে প্রায় তিনশো ফুট দূরে আত্মপ্রকাশ করল প্রকাণ্ড বন্যমহিষ।

যে-দলটিকে আমি অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম, এই জন্তুটা সেই দলভুক্ত নয়। একটা দলছাড়া মহিষের একক উপস্থিতি ঘটনাস্রোতকে বদলে দিল মুহূর্তের মধ্যে।

মহিষ তার কর্তব্য স্থির করতে একটুও দেরি করল না, ঝড়ের বেগে ধেয়ে এল মহম্মদ আলির বাহন আরবী ঘোড়াটার দিকে।

চিৎকার করে মহম্মদ আলিকে সাবধান করে দিয়ে আমি তাবুতে ঢুকে রাইফেল নিয়ে এলাম। কিন্তু বড়ো দেরি হয়ে গিয়েছিল, গুলি চালানোর আগেই মহিষ একেবারে ঘোড়াটার গায়ের উপর এসে পড়ল। শৃঙ্গধারী জীব শিং দিয়ে আঘাত করার আগে মাথা নীচু করে চোখ মুদে ফেলে, কিন্তু এই জন্তুটা দেখলাম মাথা উঁচু করেই ছুটে এল শত্রুর দিকে আঘাত হানার পূর্ব-মুহূর্তেই সে কেবল মাথাটাকে নীচু করেছিল।

পরে জেনেছিলাম কেপ বাফেলো শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মাথা উঁচু করে শত্রুর গতিবিধি লক্ষ্য করে এবং আঘাত হানার আগেও চোখ খুলে রাখে– কারণ, ভালোভাবে দেখে শত্রুর দুর্বল স্থানে আঘাত হানতে চায় কেপ বাফেলো।

গুলি চালানোর সুযোগ পেলাম না। প্রচণ্ড সংঘর্ষে মিলিত হল মহিষ ও ঘোটক। ঘোড়াটার বুকের ভিতর শিং ঢুকিয়ে মহিষ তাকে শূন্যে তুলে ফেলল।

মহম্মদ আলি ছিটকে পড়েছিল কয়েক গজ দূরে। ছুটে পালানোর জন্য সে ভূমিশয্যা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াতে সচেষ্ট হল, কিন্তু সে মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়ানোর আগেই মহিষ তাকে লক্ষ্য করে ছুটে এল।

ঘোড়াটা তখনো মহিষের মাথার উপর শৃঙ্গাঘাতে বিদ্ধ অবস্থায় ছটফট করছিল। অবাক হয়ে দেখলাম ঘোটকের দেহভার মহিষের গতিরোধ করতে পারল না- শিং-এ আটকানো ঘোড়াটাকে নিয়েই সেই ভয়ানক জানোয়ার এসে পড়ল মহম্মদ আলির উপর।

গুলি ছুঁড়লাম। রাইফেলের বুলেট কেপ বাফেলোর হৃৎপিণ্ড বিদীর্ণ করে তাকে মৃত্যুশয্যায় শুইয়ে দিল। ঘোড়াটা তখনও শিং-এ আটকে যাতনায় ছটফট করছিল। রাইফেলের দ্বিতীয় গুলি তাকে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিয়ে মৃত্যুকে সহজ করে দিল। মহিষের দেহে প্রাণ ছিল না, গুলি লাগার সঙ্গেসঙ্গেই সে মারা পড়েছিল।

মহম্মদ আলিকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিলাম। চেষ্টা সফল হল না। মহিষ আর ঘোড়া জড়াজড়ি করে তার উপর পড়েছিল। দুটি বিশাল দেহের তলায় পিষ্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করল মহম্মদ আলি…

উপরে উল্লিখিত ঘটনার বিবরণ যিনি দিয়েছেন, সেই অখ্যাত যুবকের নাম ছিল আত্তিলিও গত্তি। সেদিনের সেই অখ্যাত যুবক পরবর্তীকালে প্রথম মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষে যোগ দিয়ে কম্যাণ্ডার আত্তিলিও গত্তি নামে খ্যাতিলাভ করেন। বিশ্বযুদ্ধের সর্বগ্রাসী অগ্নি নির্বাপিত হওয়ার পর কম্যাণ্ডার আত্তিলিও গত্তি আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পর্যটন করেছিলেন এবং সেই ভ্রমণ-কাহিনির বিবরণ দিয়ে একটি পুস্তক প্রকাশ করে বহু পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছিলেন। উক্ত পুস্তকে বর্ণিত ঘটনাগুলি অতিশয় রোমাঞ্চকর ও শিক্ষাপ্রদ বটে, কিন্তু সেইসব বিবরণী আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়– তাই এই প্রসঙ্গ এখানেই শেষ করলাম। এইবার মার্কিন মুলুকের এক আধুনিক শিকারির অভিজ্ঞতার কাহিনি পাঠকদের পরিবেশন করছি।

শিকারির নাম জন পি. বার্গার। আমেরিকানদের মধ্যে অনেকেরই শিকারের শখ আছে। এই সাংঘাতিক শখ চরিতার্থ করার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বনভুমিতে জীবন বিপন্ন করতেও তারা ইতস্তত করেন না।

আফ্রিকার অরণ্য বিভিন্ন জানোয়ারের প্রিয় বাসভূমি। তাই উক্ত অরণ্যকে শিকারির স্বর্গ বললে আদৌ অত্যক্তি হয় না। আরও অনেকের মতোই বর্তমান কাহিনির অন্যতম নায়ক বার্গার সাহেব শিকারির স্বর্গ উপভোগ করতে অর্থাৎ আফ্রিকার জঙ্গলে শিকার করতে এসেছিলেন। তার শিকার অভিযানের মেয়াদ যেদিন ফুরিয়ে গেল, তিনি যেদিন শিকারের পিছনে ছুটোছুটি থামিয়ে কিছুদিন বিশ্রাম নেবেন বলে মনস্থ করলেন সেইদিনই তিনি লাভ করলেন শিকারি জীবনের চরম অভিজ্ঞতা, কয়েক মুহূর্তের জন্য নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ালেন মি. বার্গার…।

বার্গার সাহেবের আদেশে তাঁবু গুটিয়ে রাখা হল। উত্তরদিকে প্রায় পঞ্চাশ মাইল দূরে অবস্থিত পরবর্তী আস্তানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে, সুতরাং পথিমধ্যে মোটবাহকদের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা দরকার। একটা ছোটোখাটো অ্যান্টিলোপ (হরিণ জাতীয় পশু) মারতে পারলেই জন্তুটার মাংসে মোটবাহকদের ক্ষুগ্নিবৃত্তি করা যায়– অতএব, শেষবারের মতো শিকারের উদ্যোগ করলেন মি. বার্গার।

খুব সকালে নয়জন নিগ্রো সঙ্গী নিয়ে মি. বার্গার চললেন অ্যান্টিলোপের সন্ধানে। খাদ্য ও পানীয় বলতে সঙ্গে নিলেন আধ গ্যালন জল, এক বোতল কফি আর দুটি আম। দুপুরের আগেই তিনি তাঁবুতে ফিরে আসবেন বলে স্থির করেছিলেন, তাই খুব বেশি খাদ্যদ্রব্য বহন করার প্রয়োজন বোধ করেননি মি. বার্গার।

নিকটবর্তী একটা জলাশয়ে জন্তুরা জলপান করতে আসত, সেইখানেই বাঞ্ছিত জীবটির দেখা পাওয়ার আশা করেছিলেন শিকারি। কিন্তু যথাস্থানে পৌঁছে দেখা গেল জলাশয়ের কাছে সুদীর্ঘ ঘাসজঙ্গলের উপর জ্বলছে লেলিহান অগ্নি– দাবানল। বনের কোথাও আগুন লাগলে কোনো জানোয়ার সেই অগ্নিকাণ্ডের কাছাকাছি থাকে না। অতএব সেখানে একটিও জানোয়ারের দেখা পাওয়া গেল না। মি. বার্গার জানতেন কয়েক মাইল দুরে আরও একটি জলাভূমির বুকে তৃষ্ণা নিবারণ করতে আসে বিভিন্ন জাতের জানোয়ার। সেই জলাশয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন বার্গার সাহেব তার দলবল নিয়ে।

যথাস্থানে পৌঁছে তারা অনেকগুলো জন্তুর দেখা পেলেন। সেখানে বিচরণ করছিল বিভিন্ন জাতের তৃণভোজী পশু। তাদের মধ্যে একটা কংগোনি জাতীয় পুরুষ অ্যান্টিলোপকে শিকার হিসাবে বেছে নিলেন মি. বার্গার। গুলি ছুঁড়তেই জন্তুটা মাটিতে পড়ে গেল। মহা উৎসাহে নিগ্রোরা ছুটে গেল জন্তুটার দিকে। কিন্তু তারা শিকারের কাছাকাছি যেতেই ধরাশায়ী পশু হঠাৎ লাফিয়ে উঠে ছুটে পালাতে লাগল।

সচমকে রাইফেল তুলে নিয়েই আবার উদ্যত অস্ত্র নামিয়ে নিলেন মি. বার্গার গুলি চালানোর উপায় নেই। কারণ নিগ্রোরা এমনভাবে আহত কংগোনিকে অনুসরণ করেছে যে, রাইফেল ছুঁড়লে তাদের গায়েও গুলি লাগতে পারে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আহত কংগোনি এবং তার অনুসরণকারী নিগ্রোরা সাহেবের দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।

মি. বার্গার বুঝলেন আহত কংগোনিকে পাকড়াও করতে সময় লাগবে। তিনি জানতেন আফ্রিকার অ্যান্টিলোপ জাতীয় জানোয়ারগুলোর জীবনীশক্তি অসাধারণ, মারাত্মকভাবে আহত হয়েও ওইসব পশু অনেকক্ষণ অক্লান্তভাবে ছুটতে পারে। তবে জন্তুটাকে যে শেষ পর্যন্ত পাওয়া যাবে এ বিষয়ে তার কিছুমাত্র সন্দেহ ছিল না। কারণ, অনুসরণকারী নিগ্রোদের মধ্যে ছিল দু-জন দক্ষ ট্র্যাকার (যারা জানোয়ারের পায়ের ছাপ দেখে ক্ষ্যে অনুসরণ করতে পারে)।

প্রায় একঘণ্টা পরে হতাশভাবে ফিরে এল অনুসরণকারীর দল। ট্র্যাকার দু-জন জানাল ঘন জঙ্গলের মধ্যে আহত পশুর সন্ধান করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। অতঃপর তাঁবুতে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার ছিল না, তাই নিরুপায় বার্গার সাহেব পিছু ফিরলেন নিতান্ত বিমর্ষ চিত্তে। পিছন থেকে নিগ্রোদের অসন্তোষের গুঞ্জন তার কানে আসতে লাগল। কিন্তু যতই খারাপ লাগুক, এখন আর শিকারের সন্ধানে অনির্দিষ্টভাবে ঘোরাঘুরি করা সম্ভব নয়। বেলা মাত্র দশটা, এর মধ্যেই সূর্যের তাপ অসহ্য হয়ে উঠেছে।

হঠাৎ কয়েকটা পায়ের ছাপ বার্গার সাহেবের দৃষ্টিকে আকর্ষণ করল- মহিষের পদচিহ্ন। একটু নজর করেই তিনি বুঝলেন এক দল মহিষ জলাভূমিতে রাত্রে জলপান করতে এসেছিল, ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গেসঙ্গে তারা স্থানত্যাগ করে প্রস্থান করেছে। খুব সম্ভব মধ্যাহ্নের প্রখর সূর্যরশ্মির তাপ থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য তারা ঘন জঙ্গলের ছায়ার তলায় চলে গেছে। নিগ্রোরা মহিষযুথের পদচিহ্ন আবিষ্কার করে ভারি খুশি, তারা তৎক্ষণাৎ দলটার সন্ধানে যাত্রা করতে প্রস্তুত। মহিষের মাংস তাদের প্রিয় খাদ্য।

বার্গার সাহেব মহিষ শিকারের কথা চিন্তাই করেননি, কিন্তু সকলের অনুরোধে মহিষযুথের অনুসরণ করতে সম্মত হলেন। বাস্তবিক, একটা মহিষ মারতে পারলে দলের লোকের ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা তো হবেই কাছাকাছি গ্রামের অধিবাসীদেরও ভোজ দিয়ে খুশি করা যাবে। অতএব, দল বেঁধে পদচিহ্ন অনুসরণ করে সকলে চলল মহিষযুথের সন্ধানে…

সন্ধান পাওয়া গেল। গভীর অরণ্য যেখানে একটি বিস্তীর্ণ তৃণপ্রান্তরকে স্পর্শ করেছে, সেই অরণ্য ও মুক্তপ্রান্তরের সীমানায় অবস্থিত ছায়াচ্ছন্ন বনভূমির বুকে মহিষযুথের সাক্ষাৎ পেলেন শিকারি ও তাঁর অনুচরবর্গ।

দলটা খুব বড়ো নয়। অধিকাংশই স্ত্রীজাতীয় পশু, দুটি অল্প বয়সের পুরুষ আর দুটি প্রকাণ্ড পূর্ণবয়স্ক পুরুষ মহিষ নিয়ে গঠিত হয়েছে পূর্বোক্ত দল। বার্গার সাহেব সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলেন পূর্ণবয়স্ক মহিষ দু-টির গায়ের রং নীলাভ ধূসর। আফ্রিকার মহিষদের মধ্যে এমন অদ্ভুত গায়ের রং আগে কখনো বার্গার সাহেবের চোখে পড়েনি।

রং দিয়ে বেশিক্ষণ মাথা না ঘামিয়ে একটি বয়স্ক মহিষকে লক্ষ্য করে মি. বার্গার রাইফেলের ট্রিগার টিপলেন। সঙ্গেসঙ্গে জঙ্গল ভেঙে প্রান্তরের উপর দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটল মহিষের দল। নীল রং এর মহিষ দুটিও দলের সঙ্গে ছুটছিল। তাদের মধ্যে কোনো জন্তুটা যে আহত হয়েছে বোঝা মুশকিল, দুটি জন্তুই দেখতে একরকম। তবে গুলি যে লক্ষ্যভেদ করেছে সে-বিষয়ে সন্দেহ নেই, কারণ মহিষের গায়ে গুলি লাগার আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন মি, বার্গার।

ধাবমান পুরুষ মহিষ দুটির মধ্যে একটি জানোয়ার পিছিয়ে পড়ল। বার্গার সাহেবের মনে হল যে-জন্তুটা পিছিয়ে পড়েছে, সেটাই আহত হয়েছে। মি. বার্গার আবার গুলি ছুঁড়লেন পশ্চাদবর্তী মহিষকে লক্ষ্য করে। আহত পশু তৎক্ষণাৎ লম্বমান হল ভূমিপষ্ঠে।

সঙ্গেসঙ্গে এক আশ্চর্য ব্যাপার। নীলবর্ণবিশিষ্ট অপর মহিষটিও হঠাৎ ধূলি উড়িয়ে ধরাশায়ী হল সশব্দে। মি. বার্গার বুঝলেন ওই জন্তুটাই আসলে প্রথমবার তার গুলিতে আহত হয়েছিল। আঘাত অগ্রাহ্য করেই সে এতক্ষণ ছুটছিল, এখন জীবনীশক্তি ফুরিয়ে আসায় সে মাটি নিয়েছে;–জন্তুটা একেবারেই নিশ্চল, তার দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই কিছুমাত্র। কিন্তু একটু আগেই যে মহিষটা ধরাশয্যায় লুটিয়ে পড়েছিল, সে তখন দস্তুরমতো জীবিত এবং মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে প্রাণপণে।

মি. বার্গার আর জীবিত মহিষটির মধ্যবর্তী দূরত্ব তখন খুব বেশি নয়। একজন বন্দুকবাহকের হাত থেকে একটি হালকা রাইফেল টেনে নিয়ে মহিষের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে তার ভবলীলা সাঙ্গ করে দিলেন।

গুলির আওয়াজের সঙ্গেসঙ্গে একটু আগের মরা মহিষটা ভীষণ রকম জীবন্ত হয়ে উঠল। তড়াক করে এক লাফ মেরে উঠে দাঁড়িয়ে সে কঁকা মাঠের উপর দিয়ে ছুটতে শুরু করল দ্রুতবেগে। তাড়াতাড়ি রাইফেল বদল করে বার্গার সাহেব আবার গুলি ছুঁড়লেন। ততক্ষণে ধাবমান মহিষ শত্রুর কাছ থেকে বেশ কয়েক শো গজ দূরে গিয়ে পড়েছে, অতএব শিকারির নিশানা হল ব্যর্থ।

আজকের ঘটনার স্রোত একেবারেই অভাবনীয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুটো শিকার একটা অ্যান্টিলোপ আর একটা কেপ বাফেলো– মি. বার্গারের গুলিতে মারা পড়ল, আবার তৎক্ষণাৎ জ্যান্ত হয়ে ছুটে পালাল। অ্যান্টিলোপ এখন শিকারির নাগালের বাইরে পলাতক, কিন্তু আহত মহিষটাকে পালাতে দিতে রাজি হলেন না মি. বার্গার। মহিষের দেহ-নিঃসৃত রক্ত পরীক্ষা করে বোঝা যাচ্ছে সে মারাত্মকভাবে জখম হয়েছে; জন্তুটা যে বেশিক্ষণ জীবিত থাকবে না এ বিষয়ে বার্গার সাহেবের সন্দেহ ছিল না একটুও।

কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অনুসরণ-পর্ব চলার পরও আহত মহিষের সাক্ষাৎ পাওয়া গেল না। শিকারির তখন ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে ঘন ঘাসঝোপ আর কাটা গাছের জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়েছেন.. আরও কিছুক্ষণ রক্তের চিহ্ন ধরে খোঁজাখুঁজি চলল… তারপর হঠাৎ বিদ্রোহ ঘোষণা করল নিগ্রো সঙ্গীদল। তারা ভয় পেয়েছে। ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আহত মহিষ অনেক সময় ঘন জঙ্গলের মধ্যে বৃত্তাকারে ঘুরে এসে পিছন থেকে শিকারিকে আক্রমণ করে। শিকারি তখন মহিষের পদচিহ্ন অনুসরণ করছে, প্রতিমুহূর্তে সে মহিষের সাক্ষালাভের আশা করছে। সম্মুখে অকস্মাৎ পিছন থেকে অতর্কিতে আক্রান্ত হয়ে সে বিহ্বল হয়ে পড়ে। হাতের অস্ত্র ব্যবহার করার আগেই তার দেহকে বিদীর্ণ করে দেয় বাঁকা তলোয়ারের মতো এক জোড়া শিং।

এমন ভয়াবহ সম্ভাবনা মনে আসলে যে-কোনো মানুষই ভীত হয়। মি. বার্গারের মাথায় তখন শিকারির খুন চেপেছে। তিনি কিছুতেই ফিরে আসতে রাজি হলেন না। বন্দুকবাহকের হাত থেকে ভারি রাইফেল টেনে নিয়ে তিনি এগিয়ে চললেন রক্তের চিহ্ন ধরে। বেশ কিছুটা দুরত্ব রেখে নিগ্রোরা তাকে অনুসরণ করতে লাগল..

ঘন ঝোপঝাড় শেষ হয়ে কিছুটা জায়গা বেশ পরিষ্কার; সেই পরিষ্কার জায়গাটায় এসে মি. বার্গার চারদিক বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারলেন। অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গাটা পার হলেই আবার একটা ঘন কাঁটাঝোপ;– ওই কাঁটাঝোপের ভিতর আহত মহিষকে দেখতে পাবেন বলে আশা করছিলেন মি, বার্গার।

কিন্তু তিনি কাঁটাঝোপটার ভিতর প্রবেশ করার উপক্রম করতেই পিছন থেকে নিগ্রোরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করল। প্রধান ট্র্যাকার এনদেজ জানাল ওইভাবে আহত মহিষকে অনুসরণ করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, কাঁটাঝোপের জঙ্গলে প্রবেশ করা উচিত নয়। মি. বার্গার কারো প্রতিবাদে কর্ণপাত করলেন না। তাঁর অভিমত হচ্ছে, যে পরিমাণ রক্তপাত হয়েছে তাতে মহিষের এতক্ষণ বেঁচে থাকার কথা নয়, যদি সে বেঁচে থাকে তাহলেও রক্তস্রাবে অবসন্ন পশুটির লড়াই করার মতো প্রাণশক্তি অবশিষ্ট নেই।

ঘনসন্নিবিষ্ট ঝোপের মধ্যে বড়ো গাছ একটিও ছিল না। হঠাৎ আক্রান্ত হলে গাছে উঠে আত্মরক্ষার উপায় নেই দেখে নিগ্রোরা আর অগ্রসর হতে রাজি হল না। মি. বার্গার রাইফেল বাগিয়ে একাই অগ্রসর হলেন এবং প্রবেশ করলেন ঝোপের ভিতর। প্রায় পঞ্চাশ গজ অগ্রসর হওয়ার পর একটা কাটা গাছের তলায় মহিষটাকে দেখতে পেলেন মি. বার্গার।

সগর্জনে অগ্নিবর্ষণ করল রাইফেল। শিকারির নিশানা ভুল হয়নি, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে রাইফেলেরর ট্রিগারে চাপ দেওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই হঠাৎ মাথা তুলল মহিষ। ফলে ঘাড়ের মধ্যে বিদ্ধ হওয়ার পরিবর্তে বুলেট ঘাড়ের চামড়া ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ ধেয়ে এল রুদ্রমূর্তি মহিষাসুর। প্রতিহিংসায় উন্মত্ত পশু এত দ্রুতবেগে ছুটে আসছিল যে, মি. বার্গারের রাইফেল আবার অগ্নিবৃষ্টি করার আগেই শিকার ও শিকারির মধ্যবর্তী দূরত্ব কমে গেল সাংঘাতিকভাবে। মি. বার্গার যখন মহিষকে লক্ষ্য করে রাইফেল তুলেছিলেন সেই সময়ে তার থেকে জন্তুটার দূরত্ব ছিল কম-বেশি প্রায় পঁচাত্তর গজ দ্বিতীয়বার গুলি চালানোর পূর্ব মুহূর্তে দুই শত্রুর ব্যবধান দাঁড়িয়েছিল পঞ্চাশ গজেরও কম। আহত মহিষের এমন ভয়ংকর গতিবেগ আশা করেননি মি, বার্গার, কিন্তু পরবর্তী ঘটনা তাকে আরও চমকিত ও ভীত করে তুলল। দ্বিতীয়বার নিক্ষিপ্ত বুলেট সশব্দে মহিষের দেহে বিদ্ধ হল, গুলি লাগার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেলেন শিকারি– তবু ক্ষিপ্ত মহিষের গতি রুদ্ধ হল না।

আর গুলি চালানোর সময় নেই, মহিষ, একেবারে সামনে এসে পড়েছে। অল্প বয়সে বক্সিং বা মুষ্টিযুদ্ধকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন মি. বার্গার পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা চোখের পলকে আত্মরক্ষা ও আক্রমণের উপায় স্থির করতে পারে- সেই বিদ্যা এখন কাজে লাগল।

মুহূর্তের মধ্যে তিনি বুঝে নিলেন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে মহিষের শৃঙ্গাঘাতে মৃত্যু অনিবার্য কথাটা মনে হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন ঘাসজমির উপর ঠিক ড্রাইভ দেওয়ার ভঙ্গিমায়। ডান পায়ের উপর একটা প্রচণ্ড আঘাত অনুভব করলেন তিনি, পরক্ষণেই তার শরীরটা নিক্ষিপ্ত হল শূন্যপথে।

সৌভাগ্যক্রমে মবিষের শিং তার দেহকে স্পর্শ করতে পারেনি, ডান পায়ের উপর একটা ক্ষুরের আঘাত লেগে শূন্যপথে উড়ে গিয়ে তিনি ছিটকে পড়লেন মাটিতে। মাটির উপর পড়েই উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লেন মি. বার্গার। আহত গণ্ডার বা হাতি অনেক সময় ভূপতিত শত্রুকে অতিক্রম করে যাওয়ার পর আর ফিরে এসে আক্রমণ চালায় না, কিন্তু মহিষ সর্বদাই ফিরে এসে ধরাশায়ী শত্রুর উপর শিং-এর ধার পরখ করতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত শত্রুর দেহে প্রাণের চিহ্ন প্রকাশ পায় ততক্ষণ নিরস্ত হয় না ক্রুদ্ধ মহিষ। উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে মানুষের দেহে শিং-এর গুতো মারতে মহিষের অসুবিধা হয়, সেইজন্যেই ওইভাবে শুয়ে পড়েছিলেন মি, বার্গার।

কিন্তু মি. বার্গারের আততায়ী ফিরে এসে তাঁকে আক্রমণের চেষ্টা করল না। মহিষের জীবনীশক্তি শেষ হয়ে এসেছিল, নিজের গতিবেগে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সে সশব্দে লুটিয়ে পড়ল মাটির উপর, আর উঠল না।

মৃত্যুর পর মহিষের দেহ পরীক্ষা করা হল। পরীক্ষার ফলে দুটি মহিষের অদ্ভুত গায়ের রং-এর কারণটাও জানা গেল। মহিষরা অনেক সময় কাদার মধ্যে গড়াগড়ি দেয়। এই মহিষ দুটি নিশ্চয়ই একসময় কাদায় গড়াগড়ি দিয়েছিল। কাদা শুকিয়ে গেলে তার রং হয় নীলাভ-ধূসর– সেই শুকনো কাদার প্রলেপ দূর থেকে জন্তু দুটিকে চিহ্নিত করেছিল নীলাভ-ধূসর বর্ণে।

আক্রমণকারী মহিষের বক্ষস্থলে বিদ্ধ হয়েছিল দু-দুটো বুলেট। ভারী রাইফেলের গুলি দু-দুবার বুক ফুটো করে দেওয়ার পরেও জন্তুটা মারমুখো হয়ে তেড়ে এসেছিল শিকারিকে হত্যা করতে। নিতান্ত বরাতজোরেই নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন মি. জন পি. বার্গার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *