আফসানী ম্যাডাম

আফসানী ম্যাডাম

একজন মানুষের চেহারা দেখে যে মানুষটা সম্পর্কে কিছুই আন্দাজ করা যায় না, সেটা এই বাসার বাচ্চাকাচ্চারা খুব ভালো করে টের পেয়েছে। আফসানী ম্যাডামকে দেখে বাচ্চাকাচ্চারা কিছুই সন্দেহ করেনি, বরং ভেবেছে দাদির (কিংবা নানির) বন্ধু, নিশ্চয়ই দাদির (কিংবা নানির) মতোই সুইট হবে। তা ছাড়া যখন এসেছেন তখন সাথে ছিল মিষ্টির বাক্স, ভেতরে গাদা গাদা মালাইকারি, তারা সেগুলো কাড়াকাড়ি করে খেয়েছে।

দাদির সাথে মাঝে মাঝেই কেউ না কেউ দেখা করতে আসে, দাদির সাথে গল্পগুজব করে চলে যায় (ঝুমু খালা মাঝে মাঝে খুবই বিরক্ত হয় কারণ তার সিরিয়াল দেখায় ডিস্টার্ব হয়!) তবে মাঝে মাঝে এক আধজন এই বাসায় দুই একদিন থেকে যায়। মানুষটা কেমন বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বুঝে ফেলে। যদি মানুষটা ভালো হয়, মজার হয় তাহলে বাচ্চারা তার সাথে সময় কাটায়। মানুষটা যদি পাজি কিংবা পিছলে হয় তাহলে বাচ্চারা তার থেকে একশ হাত দূরে থাকে। আফসানী ম্যাডামের সাথে তাদের হিসাবে গোলমাল হয়ে গেছে। তারা ভেবেছিল মানুষটা তাদের দাদির মতো সুইট একজন মানুষ হবে কিন্তু দেখা গেল মোটেও সে রকম না। হাসিখুশি চেহারার পেছনে ভয়ংকর একজন মহিলা।

বাচ্চাদের বিষয়টা আন্দাজ করতে একদিন সময় লেগেছে। তাদের বাসায় কেউ এলে তাকে কী ডাকবে সেটা নিয়ে খুবই সহজ একটা হিসাব আছে। দাদি (কিংবা নানির) বান্ধবী হলে তাকে ডাকে দাদি না হয় নানি। সেই হিসাবে আফসানী ম্যাডামকেও তারা ডেকেছে আফসানী নানি। কিন্তু সেইটা তার একেবারেই পছন্দ হয় নাই। একদিন পর ভ্রু কুঁচকে তাদেরকে বলেছেন, “খবরদার আমাকে নানি ডাকবে না।”

যারা একটু বড় তারা সাথে সাথে বুঝে গেছে কারণটা কী, নানি কিংবা দাদি ডাকলে বুড়ো বুড়ো মনে হয়। কিন্তু যারা ছোট তারা ব্যাপারটা বুঝে নাই। মুনিয়া একটু অবাক হয়ে বলল, “কেন? নানি ডাকলে কী হয়?”

আফসানী নানি বলেছেন, “আমাকে দেখে কি নানির মতো লাগে?”

মুনিয়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল তারপর বলল, “তুমি চুলে রং দিয়েছ, যদি রং না দিতে তাহলে তোমার চুলও আমাদের দাদির মতো পাকা হতো।”

আফসানী নানি এবারে রীতিমতো রেগে গেলেন, বললেন, “খবরদার বেয়াদপি করবে না। আমার সাথে তুমি করে কথা বলবে না।”

মুনিয়া প্রতিবাদ করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, টুনি তাকে থামাল। তারপর জিজ্ঞেস করল। “আপনাকে তাহলে আমরা কী ডাকব?”

“আমাকে আফসানী ম্যাডাম ডাকবে।”

একজনকে নানি ডাকলে তাকে নিজের মানুষ মনে হয়। ম্যাডাম ডাকা মাত্রই মানুষটা অপরিচিত ভয়ের একজন মহিলা হয়ে যায়। কাজেই আফসানী ম্যাডাম দাদির একজন সুইট বান্ধবী না হয়ে অপরিচিত কঠিন একজন মহিলা হয়ে গেল। বাচ্চারা তার কাছ থেকে দূরে সরে গেল কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। আফসানী ম্যাডাম একটা স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন, এখন রিটায়ার করেছেন কিন্তু তার প্রিন্সিপাল থাকার অভ্যাসটা এখনো রয়ে গেছে। তাই যখনই ছোট ছেলেমেয়েদের দেখেন তাদেরকে তার মনে হয় পাজি আর দুষ্ট ছেলে। শুধু তাই না, আফসানী ম্যাডামের মনে হতে থাকে তাদেরকে শাসন করে ঠিক করে ফেলতে হবে।

তাই পরেরদিন দাদি যখন বসে বসে টেলিভিশন দেখছেন তখন আফসানী ম্যাডাম তার কাছে বসে বললেন, “জোবেদা, তোমাকে একটা কথা বলি।”

টেলিভিশনে তখন খুবই জটিল একটা ঘটনা দেখানো হচ্ছে, দাদি সেটা দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করলেন, “কী কথা?”

“তোমার নাতি-নাতনিরা আসলে ঠিক করে মানুষ হয় নাই।”

কথাটা শুনে দাদি (কিংবা নানি) ফিক করে হেসে ফেললেন যেন একটা খুব মজার কথা শুনেছেন। দাদিকে হাসতে দেখে আফসানী ম্যাডাম কেমন জেনে রেগে উঠলেন। মুখ গম্ভীর করে বললেন, “তুমি আমার কথা শুনে হাসলে কেন?”

“আমি এদের জন্ম থেকে দেখে যেটা বুঝতে পারি নাই, তুমি একদিনে সেটা বুঝে গিয়েছ–সেই জন্য একটু হাসলাম।”

“তুমি আমার কথা বিশ্বাস কর নাই। আমি সারা জীবন মাস্টারি করেছি। স্কুলের প্রিন্সিপালই ছিলাম টানা দশ বছর। একটা ছেলে কিংবা মেয়েকে একশ হাত দূর থেকে দেখে বুঝতে পারি তার ভেতরে কী আছে।”

দাদি কিছু বললেন না। আফসানী ম্যাডাম বললেন, “তুমি যদি তোমার নাতি-নাতনিদের লাইনে না আন তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ। কাল আমি এইখানে বসে বসে তোমার নাতি-নাতনিদের কথাবার্তা শুনছিলাম, কাজকর্ম দেখছিলাম। আমি কী দেখেছি জান?”

“কী দেখেছ?”

“এদের জীবনে ফোকাস নাই। কী বলে কী করে তার কোনো ঠিক নাই। লেখাপড়ায় মনোযোগ নাই, এখনো তাদের একটা বই মুখস্থ হয় নাই–”

দাদি কিছু বললেন না, আফসানী ম্যাডাম বললেন, “আমি যদি সময় পেতাম তাহলে তোমার নাতি-নাতনিদের মানুষ করে দিতাম। তাদেরকে ঠিক লাইনে তুলে দিতাম। ছেলেপিলেদের কীভাবে মানুষ করতে হয় সেটা আমার থেকে ভালো করে কেউ জানে না।”

দাদি বললেন, “তুমি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলে কাজেই সেটা তো। হতেই পারে।”

আফসানী ম্যাডাম বললেন, “আমি কী ঠিক করেছি জান?”

“কী?”

“আমি তো তোমার সব নাতি-নাতনিকে সাইজ করতে পারব না তাই একজনকে সাইজ করে দিয়ে যাব।”

“একজনকে?”

“হ্যাঁ।”

“কোনজন ঠিক করেছ?”

“হ্যাঁ। আমি তোমার নাতি-নাতনিদের খুব ভালো করে দেখেছি, সবার মাঝে সমস্যা। তবে একজনের বাড়াবাড়ি সমস্যা মনে হয়। সবচেয়ে দুষ্ট। আসলে ঠিক দুষ্টু না-বলা যেতে পারে রীতিমতো পাজি। ওই যে বারো তেরো বছরের ছেলেটা, এক সেকেন্ড চুপ করে বসে থাকতে পারে না। পুরো এডিডি।”

দাদি চোখ কপালে তুলে বললেন, “পুরো কী?”

“এডিডি। অ্যাটেনশন ডিজঅর্ডার ডেফিসিয়েন্সি।”

দাদি বললেন, “তুমি শান্তর কথা বলছ?”

“হ্যাঁ। মনে হয় নাম শান্ত।”

“তার এডিডি?”

“হ্যাঁ। পরিষ্কার এডিডি কেস। যদি তাকে লাইনে আনতে না পার কয়দিন পর তাকে রেটিলিন দিতে হবে।”

“রেটিলিন? সেটা আবার কী?”

“সেটা কঠিন একটা ড্রাগ।”

“সেটা দিলে কী হয়?”

“অস্থিরতা কমে। শান্ত হয়। ঘুম অনেক বেড়ে যায়।”

দাদি কেমন যেন ভয় পেয়ে গেলেন, বললেন, “আমি তো ভেবেছিলাম শান্ত একটু দুষ্টু। এই বয়সে সবাই তো একটু দুষ্টু হয়। এমনিতে শান্ত খুবই ভালো ছেলে, মনটা খুব ভালো।”

আফসানী ম্যাডাম বললেন, “না-না-না। সবকিছু এত সোজাভাবে দেখো না। আমি জানি। ছোট বাচ্চারা হচ্ছে সব ছোট ছোট ইবলিশ। তাদেরকে সময়মতো কন্ট্রোল না করলে তারা বড় হয়ে হয় সত্যিকারের ইবলিশ!”

দাদি আপত্তি করলেন, বললেন, “না-না কী বলছ তুমি? ছোট বাচ্চারা ইবলিশ হবে কেন? ছোট বাচ্চা হচ্ছে ফেরেশতার মতো।”

আফসানী ম্যাডাম কাঠ কাঠ শব্দে হা হা করে হাসলেন। বললেন, “তুমি তো আমার মতো ছোট বাচ্চাদের দেখ নাই তাই তুমি জান না। আমি জানি। ছোট বাচ্চারা হচ্ছে সাক্ষাৎ ইবলিশ।”

দাদি কিছু বললেন না, কেমন যেন ভয়ে ভয়ে তার ছেলেবেলার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে রইলেন। আফসানী ম্যাডাম চোখ ছোট ছোট করে বললেন, “আমি তো বেশিদিন থাকব না তাই তোমার নাতি নাতনিদের ঠিক করে যেতে পারব না, কিন্তু একজনকে অন্তত লাইনে তুলে দিয়ে যাই!”

দাদি দুর্বলভাবে বললেন, “আমি ঠিক জানি না কাজটা ঠিক হবে কিনা।”

“সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও!” কথা শেষ করে আফসানী ম্যাডাম ভয়ংকরভাবে হাসলেন। সেই হাসি দেখে দাদির বুক শুকিয়ে গেল।

.

শান্ত জানতেও পারল না যে তার ওপর কী বিপদ নেমে এসেছে। পড়ার ঘরে সবাই বসে লেখাপড়া করছে (কিংবা লেখাপড়া করার ভান করছে), সেখানে আফসানী ম্যাডাম হাজির হলেন। সবাইকে এক নজর দেখে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললেন, “ছেলে, তোমার নাম শান্ত না?”

শান্ত মাথা নাড়ল, “জি ম্যাডাম।”

“তুমি আমার সাথে আস।”

শান্ত অবাক হয়ে বলল, “আমি? আপনার সাথে?”

আফসানী ম্যাডাম মুখ শক্ত করে বললেন, “হ্যাঁ।”

শান্ত ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, “কোথায়?”

“আমার রুমে।”

একা একা আফসানী ম্যাডামের রুমে যেতে হবে শুনে শান্তর মতো মানুষের বুক ধুকপুক করতে থাকে। সে শেষ চেষ্টা করল, “কিন্তু এখন তো আমি হোমওয়ার্ক করছিলাম।”

“তোমার বই খাতাপত্র নিয়ে আস। আমার রুমে বসে হোমওয়ার্ক করতে পারবে।”

কাঁচপোকা যেভাবে তেলাপোকাকে ধরে নিয়ে যায় আফসানী ম্যাডাম সেভাবে শান্তকে রে নিয়ে গেলেন। অন্য সব বাচ্চা চুপ করে বসে রইল। যখন আফসানী ম্যাডাম ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন তখন সবাই পা টিপে টিপে আফসানী ম্যাডামের ঘরের পাশে জানালার নিচে উঁচু হয়ে বসে ভেতরে কী কথাবার্তা হয় সেটা শোনার চেষ্টা করল।

ওরা শুনল আফসানী ম্যাডাম শান্তকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাকে কেন ডেকেছি জান?”

প্রায় শোনা যায় না এ রকম গলার স্বরে শান্ত বলল, “না ম্যাডাম।”

“তোমাকে ডেকেছি কারণ আমি তোমাকে মানুষ করার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি।”

“আ-আ-আমাকে–”

“হ্যাঁ। আমি স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলাম দশ বছর, আমি একটা ছেলে কিংবা মেয়েকে একশ হাত দূর থেকে দেখে বুঝতে পারি সে ভালো না খারাপ। তুমি কি জান তুমি কেমন ছেলে?”

আফসানী ম্যাডামের কথা শুনে বাচ্চাদের শরীর সিঁটিয়ে গেল। তারা শুনল, শান্ত কোনো উত্তর না দিয়ে আমতা আমতা করছে।

আফসানী ম্যাডাম এবারে প্রায় হুংকার দিয়ে বললেন, “আমি তোমাদের সবাইকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি। তোমাদের সবার সিরিয়াস প্রবলেম। তোমার প্রবলেম সবচেয়ে বেশি। তুমি চরম দুষ্টু। তুমি রীতিমতো খারাপ ছেলে।”

বাচ্চারা একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। এভাবে একজন কথা বলতে পারে তারা জীবনে কল্পনাও করে নাই। তারা কী করবে বুঝতে পারল না, শুনল আফসানী ম্যাডাম বললেন, “তুমি শান্ত হয়ে এক সেকেন্ড বসতে পার না। সব সময় ছটফট করছ। সব সময় কথা বলছ। অর্থহীন কথা। ফালতু কথা। দুষ্টুমির কথা। সব সময় অন্যদের জ্বালাতন করছ। তুমি শুধু দুষ্টু নও। তুমি পাজি। তুমি খারাপ–”

বাচ্চারা আফসানী ম্যাডামের কথা শুনে শিউরে উঠল। সবাই জানে শান্ত তাদের মাঝে দুষ্টু কিন্তু মোটেও পাজি নয়। সে সবচেয়ে মজার মানুষ। সে সব সময় সবাইকে হাসায়, সবার সাথে মজা করে। তাদের সাথে কখনো কেউ এভাবে কথা বলে নাই। রাগে তাদের গা জ্বলে যেতে লাগল।

আফসানী ম্যাডাম বিষাক্ত গলায় বললেন, “শান্ত, তুমি কি এ রকম পাজি একটা ছেলে হয়ে বড় হতে চাও? খারাপ ছেলে হয়ে বড় হতে চাও? বলো।”

শান্ত কোনো কথা বলল না। আফসানী ম্যাডাম বললেন, “বলো। উত্তর দাও।”

শান্ত ফিসফিস করে বলল, “না।”

“বলো আমি খারাপ ছেলে থাকতে চাই না। আমি ভালো ছেলে হতে চাই।”

বাচ্চারা আর শুনতে পারল না, তাদের এত খারাপ লাগল যে তারা জানালার নিচ থেকে উঠে নিঃশব্দে নিজেদের ঘরে ফিরে এল। পড়ার টেবিলে সবাই চুপচাপ বসে রইল, একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছিল না। শান্ত যে অপমানের ভেতর দিয়ে গিয়েছে সেটা শুধু শান্তর অপমান না। তাদের সবার অপমান।

টুনি সবার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল, “আফসানী ম্যাডামকে সাইজ করতে হবে। জন্মের মতো সাইজ করে দিতে হবে যেন আর কোনোদিন এ রকম কিছু করার সাহস না পায়।”

টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “কীভাবে সাইজ করবে টুনি আপু?”

টুনি দুই হাত দিয়ে মাথাটা ধরে চোখ বন্ধ করে চিন্তা করতে করতে বলল, “আমাকে একটু চিন্তা করতে দে।”

অন্যরা কেউ টুনিকে ডিস্টার্ব করল না, সবাই তাকে চিন্তা করতে দিল।

.

শান্ত প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে আফসানী ম্যাডামের ঘর থেকে ছাড়া পেল। সে যখন অন্য বাচ্চাদের কাছে এল তখন তাকে কেমন যেন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। সে কোনো কথা না বলে নিজের চেয়ারে বসে, তারপর হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রাখল।

কেউ কোনো কথা বলল না। সবাই চুপচাপ শান্তর দিকে তাকিয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর শান্ত মুখের ওপর থেকে হাত সরিয়ে অন্যদের দিকে তাকালো। তারপর বলল, “আমি কি আসলেই খুব খারাপ?”

মুনিয়া বলল, “না শান্ত ভাইয়া, তুমি খুব ফানি। তুমি জোকার।”

টুম্পা মাথা নাড়ল, বলল, “হ্যাঁ তুমি ফানি। আর একটু দুষ্টু।”

মুনিয়া বলল, “আমরা সবাই দুষ্টু।”

টুনি বলল, “খারাপ কে তুমি জানতে চাও?”

শান্ত জিজ্ঞেস করল, “কে?”

টুনি বলল, “আফসানী ম্যাডাম।”

শান্ত টুনির দিকে তাকিয়ে রইল। টুনি বলল, “হ্যাঁ শান্ত ভাইয়া। আফসানী ম্যাডাম তোমাকে কী কী বলেছে আমরা একটু একটু শুনেছি।”

মুনিয়া বলল, “খারাপ। খারাপ। খুব খারাপ।”

শান্ত বলল, “আমাকে কালকেও আফসানী ম্যাডামের কাছে যেতে হবে। কিন্তু আমি ঠিক করেছি যাব না। মরে গেলেও যাব না। ওই মহিলা পাগল।”

টুনি বলল, “উঁহু শান্ত ভাইয়া, তোমাকে যেতে হবে।”

শান্ত মুখ শক্ত করে জিজ্ঞেস করল, “কেন?”

“কারণ আমরা ঠিক করেছি আমরা আফসানী ম্যাডামকে শাস্তি দিব। সাইজ করে ছেড়ে দিব। সেই জন্য তোমাকে যেতে হবে।”

খুব ধীরে ধীরে শান্তর মুখে একটা হাসি ফুটে উঠল, তারপর বলল, “কীভাবে শাস্তি দিবি?”

টুনি বলল, “মানসিক শাস্তি।”

“মানসিক?”

“হ্যাঁ। বাকি জীবন পাগল হয়ে থাকবে!”

“সত্যি? পারবি?”

“চেষ্টা করে দেখি।”

শান্তর মুখে একটা বিশাল একটা হাসি ফুটে উঠল।

***

পরদিন সকালে আফসানী ম্যাডামের ঘরের সামনে শোনা গেল টুম্পা গলা ফাটিয়ে চাঁচাচ্ছে, “প্রান্ত ভাইয়া–প্রান্ত ভাইয়া–”

এই বাসায় প্রান্ত নামে কেউ নাই, তাই কোন প্রান্ত ভাইয়াকে ডাকা হচ্ছে সেটা অন্যদের আছে অবাক লাগতে পারে। কিন্তু বড়রা কেউ সেটা শুনল না।

শান্ত বলল, “কী হয়েছে? এত জোরে চেঁচাচ্ছিস কেন?”

তবে শান্তর চেহারার যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। তার চোখে চশমা এবং মাথায় চুলগুলো পানি দিয়ে ভিজিয়ে আঁচড়ে সমান করে রাখা হয়েছে। শান্ত কোনোদিন চুল আঁচড়েছে বলে মনে হয় না, তাই আজকে চুল আঁচড়ানোর ফলে তার চেহারাটা অন্য রকম লাগছে। সে এই মুহূর্তে প্রান্ত নামে একজন কাল্পনিক মানুষের ভূমিকায় অভিনয় করছে।

টুম্পা বলল, “প্রান্ত ভাইয়া, তুমি শান্ত ভাইয়াকে দেখেছ?”

“না। আমিও শান্তকে খুঁজছি।”

দুজনেই যথেষ্ট জোরে জোরে কথা বলছে যেন আফসানী ম্যাডাম তার ঘর থেকে তাদের কথা শুনতে পারে।

শান্ত বলল, “এই শান্তটার জ্বালায় আমি পারি না। আমার কলমটা নিয়ে চলে গেছে।”

টুম্পা বলল, “থাক থাক প্রান্ত ভাইয়া, আজকে শান্ত ভাইয়াকে কিছু বলল না।”

“কেন? কী হয়েছে?”

“কাল রাত থেকে তার খুব মন খারাপ।”

“কেন?”

“জানি না।”

প্রান্তর ভূমিকায় থাকা শান্ত বলল, “কিন্তু আমার কলমটা দরকার। এই ঘরে কি আছে?”

বলে প্রান্ত আফসানী ম্যাডামের ঘরের দরজা খুলে ভেতরে মাথা ঢোকাল। আফসানী ম্যাডাম খবরের কাগজ পড়ছিলেন, চোখ তুলে শান্তকে দেখে ভুরু কুঁচকালেন। প্রান্ত বলল, “শান্ত কি এই ঘরে আছে?”

আফসানী ম্যাডাম বললেন, “না।”

একটু থেমে বললেন, “তুমি শান্ত?”

“না।” শান্ত মাথা নাড়ল। “আমি প্রান্ত। শান্ত আমার ভাই। যমজ ভাই।”

“শান্তর যমজ ভাই আছে নাকি? তোমাকে তো দেখি নাই।”

প্রান্ত চশমাটা নাকের ওপর ঠিক করে বসিয়ে বলল, “না আমাকে আপনি আমার মার্কা মারা ভাই বোনের সাথে দেখবেন না। আমি তাদের মতো না। আমি নিজের মতো থাকি। লেখাপড়া করি।”

কথা শেষ করে বলল, “আমি শান্তকে খুঁজে বের করি। তার যন্ত্রণায় আমি কিছু করতে পারি না। সব রকম বদমাইশি করে শান্ত, আর আমাকে ঝামেলা সহ্য করতে হয়।”

বলে প্রান্ত ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত চলে গেল। চশমাটা খুলে টুনির হাতে দিয়ে টুনির হাতে রাখা অন্য একটা শার্ট এবং তার বইপত্র নিয়ে দ্রুত তার চুলগুলো এলোমেলো করে আবার আফসানী ম্যাডামের ঘরে উঁকি দিল। বলল, “আসব ম্যাডাম।”

“আস।”

আফসানী ম্যাডাম তীক্ষ্ণ চোখে শান্তকে দেখলেন, তারপর বললেন, “একটু আগে তোমার ভাই এসেছিল। আমি জানতাম না তোমার আরেকজন ভাই আছে।”

শান্ত মুখ শক্ত করে বলল, “এসেছিল? পাজিটা এসেছিল আপনার কাছে? আমার নামে নালিশ করে গেছে?”

“না ঠিক নালিশ করে নাই। তুমি তাকে পাজি বলছ কেন? আমার তো ভালোই মনে হলো। বেশ লেখাপড়া টাইপ।”

শান্ত কথা না বলে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। তারপর আফসানী ম্যাডামের দিকে তাকালো এবং তাকিয়েই রইল ।

আফসানী ম্যাডামের চেহারাটা খারাপ না কিন্তু তার ভেতরে একটা ভয়ংকর ভাব আছে। তার দিকে তাকিয়ে থাকতে শান্তর রীতিমতো আতঙ্ক হচ্ছিল তবু সে তাকিয়ে রইল।

আফসানী ম্যাডাম একটু অস্বস্তি নিয়ে বললেন, “তোমাকে যা যা করতে বলেছিলাম সেগুলো করেছ?”

“জি ম্যাডাম। কিন্তু—”

“কিন্তু কী?”

“আপনাকে দেখে সব ভুলে গেছি।”

“আমাকে দেখে সব ভুলে গেছ?”

শান্ত বলল, “জি ম্যাডাম আপনাকে দেখে অন্য রকম লাগছে?”

“অন্য রকম? অন্য কী রকম?”

“অন্য রকম-অন্য রকম–মানে–ভয়ের-”

আফসানা ম্যাডামকে দেখে ভয় লাগছে শুনে মনে হয় একটু খুশিই হলেন। তখন শান্ত বলল, “মনে হচ্ছে আপনি অন্য রকম হয়ে গেছেন, আপনার চেহারাটা অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে–অন্য রকম—”

আফসানী ম্যাডামের মুখটা শক্ত হয়ে গেল, শান্ত তখন ভয় পাওয়া গলায় বলল, “আ-আমার ভয় লাগছে। আমি–আমি প্রান্তকে ডেকে আনি–”

আফসানী ম্যাডামকে কিছু বলতে না দিয়ে, “প্রান্ত প্রান্ত–” বলে চিৎকার করতে করতে শান্ত ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে গেল।

কাছাকাছি টুনি প্রান্তর টিশার্ট আর চশমা নিয়ে অপেক্ষা করছিল। চোখের পলকে শান্তর শার্ট বদলে টি শার্ট পরে নিল, চোখে চশমা পরল এবং দ্রুত তার চুল আঁচড়ে দিল। প্রান্ত সেজে শান্ত আবার আফসানী ম্যাডামের ঘরে মাথা ঢোকাল। ডাকল, “শান্ত, শান্ত–শান্ত–”

আফসানী ম্যাডাম ভুরু কুঁচকে তাকালেন, বললেন, “শান্ত এক্ষুনি বের হয়ে গেছে–”

“আমাকে ডাকল শুনলাম।”

তারপর আফসানা ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে হঠাৎ করে চমকে উঠল। সে কেমন যেন স্থির হয়ে আফসানী ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে রইল। খুব ধীরে ধীরে তার মুখের ভাব পাল্টে যেতে থাকে। প্রথমে বিস্ময় তারপর ভয়, সবশেষে আতঙ্ক। শুধু আতঙ্ক নয় অবর্ণনীয় আতঙ্ক। প্রান্ত হঠাৎ প্রচণ্ড আতঙ্কে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে করতে ঘর থেকে বের হয়ে গেল।

আফসানী ম্যাডাম তার ঘরের বাইরে পায়ের দুপদাপ শব্দ শুনলেন। বাচ্চারা ছুটে আসছে। জিজ্ঞেস করেছে, “কী হয়েছে? কী হয়েছে? চিৎকার করছ কেন?”

আফসানী ম্যাডাম শুনলেন, প্রান্ত বলল, “আফসানী ম্যাডাম-”

“কী হয়েছে আফসানী ম্যাডামের?”

“নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, চোখ লাল, কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে-–”

কেউ একজন ভয় পেয়ে চিৎকার করল। আরেকজন বলল, “কী বলছ তুমি প্রান্ত ভাইয়া?”

“খোদার কসম। দাঁতগুলি বড় বড় হয়ে গেছে, চুল খাড়া খাড়া-”

বাচ্চারা আবার ভয়ে চিৎকার করল। আফসানী ম্যাডাম হতবাক হয়ে আয়নায় নিজেকে দেখলেন। বিচিত্র কিছুই দেখলেন না, তখন ঘর থেকে বের হয়ে এলেন। তাকে ঘর থেকে বের হতে দেখে সব বাচ্চা আতঙ্কে চিৎকার করতে করতে ছুটে পালাল। ছুটে পালানোর আগে শান্ত তার চশমা খুলে ফেলেছে, মাথার চুল এলোমেলো করে শার্ট পাল্টে ফেলেছে। কাজেই পৃথিবীতে তখন প্রান্তর কোনো অস্তিত্ব নেই।

বাচ্চারা এতই চিৎকার করেছে যে বড় মানুষেরাও চলে এসেছে। সবার আগে ঝুমু খালা, পেছনে দাদি কিংবা নানি। তার পেছনে ছোটাচ্চু। বাচ্চারা ততক্ষণে হাওয়া হয়ে গেছে।

দাদি এসে আফসানী ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী হয়েছে? এখানে এত চেঁচামেচি কিসের?”

দূর থেকে বাচ্চারা ভয়ের একটা শব্দ করল। আফসানী ম্যাডাম বললেন, “কিছুই বুঝতে পারলাম না। প্রান্ত আমাকে দেখে হঠাৎ এত চিৎকার শুরু করল–”

দাদি শুদ্ধ করে দিলেন, “শান্ত!”

আফসানী ম্যাডাম বললেন, “না শান্ত না। প্রান্ত।”

দাদি ভুরু কুঁচকালেন, “প্রান্তটা কে?”

“কেন শান্তর ভাই প্রান্ত।”

দাদি এবারে ঝুমু খালা আর ছোটাচ্চুর দিকে তাকালেন। সবাই চোখ বড় বড় করে আফসানী ম্যাডামের দিকে তাকালো। দাদি ভয়ে ভয়ে বললেন, “কিন্তু এখানে তো প্রান্ত বলে কেউ নাই!”

আফসানী ম্যাডাম রেগে উঠলেন, “নাই মানে? আমি নিজের চোখে দেখেছি। কথা বলেছি।”

দাদি এবারে ছোটাচ্চুর দিকে তাকালেন, ছোটাচ্চু ইশারা করে দাদিকে নেমে যেতে বললেন। দাদি তখন গলার স্বর পাল্টে বললেন, “ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন তাহলে তুমি রেস্ট নাও।”

আফসানী ম্যাডাম ধমক দিয়ে বললেন, “রেস্ট নিব মানে? সকাল দশটার সময় মানুষ রেস্ট নেয় কেমন করে?”

দাদি বললেন, “তোমার শরীরটা নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না। তোমার কি কোনো ওষুধ খেতে হয়? কোনো ওষুধ কি মিস হয়েছে?”

আফসানী ম্যাডাম চিৎকার করে বললেন, “তোমরা শুরু করেছ কী? প্রথমে বাচ্চারা এখন তোমরা নাটক শুরু করেছ?”

দাদি বললেন, “ঠিক আছে, ঠিক আছে আফসানী আমরা আর কিছু বলব না। কিন্তু তুমি একটু শুয়ে থাক।”

“কেন শুয়ে থাকব?”

ঝুমু খালা এতক্ষণ দাদির সাথে আফসানী ম্যাডামের কথা শুনছিল, নিজে একটা কথাও বলে নাই। এবারে মুখ খুলল, দাদির দিকে তাকিয়ে বলল, “খালা আপনি আমার উপরে ছেড়ে দেন।”

“তুমি কী করবে?”

“বুঝতে পারছেন না, মাথা গরম হইছে। মাথায় পানি ঢালা লাগবে।”

আফসানী ম্যাডাম হুংকার দিলেন, বললেন, “মাথা গরম হয়েছে মানে? আর পানি ঢালবে মানে? ফাজলামি পেয়েছ?”

ঝুমু খালা ছোটাচ্চুর দিকে তাকালো, বলল, “ছোট ভাই আপনি ম্যাডামরে বিছানায় চাপ দিয়া ধরতে পারবেন? আমি এক বালতি পানি আনি।”

ছোটাচ্চু কিছু বলার আগেই আফসানী ম্যাডাম চিৎকার করে বললেন, “তোমরা ইয়ার্কি পেয়েছ? আমার সাথে মশকরা কর? আমাকে চিন নাই এখনো? আমি খুন করে ফেলব সবাইকে। মার্ডার করে ফেলব।” আফসানী ম্যাডামের আর নিজের ওপর কন্ট্রোল নাই, পা দাপিয়ে হাত নেড়ে যা ইচ্ছা তাই বলতে লাগলেন। ছোটাচ্চু ভয় পেয়ে দাদিকে গলা নামিয়ে বলল, “আমি মোড় থেকে একজন ডাক্তার নিয়ে আসি। ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে।”

ছোটাচ্চু চেষ্টা করেছে আস্তে আস্তে বলতে তারপরও আফসানী ম্যাডাম শুনে ফেললেন, তারপর যা একটা কাণ্ড হলো সে আর বলার মতো না। আফসানী ম্যাডাম বলল, “আমার সাথে দুই নম্বুরি? আমার সাথে বদমাইশি? আমি তোমাদের সবাইকে জেলখানার ভাত খাওয়াব! আমাকে তোমরা এখনো চেনো না? কত বড় সাহস! আমাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়াবে? আমাকে পাগল পেয়েছ?”

দাদি আফসানা ম্যাডামকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, গায়ে হাত-পা বুলালেন, কোনো লাভ হলো না। ঝুমু খালা নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, “আমি এখনো বলি, আমার উপর ছেড়ে দেন। ছোট ভাই পা দুইটা চেপে ধরবে আর পুলাপান শরীরের ওপর চেপে ধরবে–আমি দুই বালতি পানি মাথার মাঝে ঢালব। ফিরিজ থেকে বরফ বার কইরা পানির মাঝে দিমু-মাথা দুই মিনিটে ঠান্ডা হইয়া যাব। আমাগো গেরামের চান্দুর বাপের যখন মাথা গরম হইত তখন এই ছিল চিকিৎসা। এর নাম জল চিকিৎসা।”

কেউ ঝুমু খালাকে জল চিকিৎসা করার অনুমতি দিল না। তাই আফসানী ম্যাডাম গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে লাগলেন। কোনো উপায় না দেখে দাদি (কিংবা নানি) আফসানী ম্যাডামের ছেলেকে ফোন করলেন। বাচ্চারা লুকিয়ে থেকে শুনতে পেল দাদি তার ছেলেকে বললেন, “তোমরা তো আমাকে সাবধান করে দেও নাই যে তোমার মায়ের মাথা খারাপের ধাচ। এখানে উল্টাপাল্টা মানুষ দেখছেন উল্টাপাল্টা কথা বলছেন–আমরা তো তাকে সামলাতে পারছি না। মনে হয় হাসপাতালে নিতে হবে যদি একটু আস-”

অন্য পাশে আফসানা ম্যাডামের ছেলে কী বলছে বাচ্চারা শুনতে পারল না কিন্তু দুপুরের ভেতরেই তার ছেলে এসে তার মাকে নিয়ে গেল। যাওয়ার সময় বাচ্চারা লুকিয়ে লুকিয়ে শুনল আফসানা ম্যাডাম প্রান্তকে খুঁজছেন, টেনে তার মুণ্ডু ছিঁড়ে ফেলার জন্য। তার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে সে এই পুরো ঝামেলাটা তৈরি করেছে।

কিন্তু বাসার সবাই জানে এই বাসায় প্রান্ত বলে কেউ নেই। পুরোটাই আফসানী ম্যাডামের গরম হয়ে যাওয়া মাথার কল্পনা!

***

দুইদিন পর বাচ্চারা যখন লেখাপড়া করছে কিংবা লেখাপড়া করার ভান করছে তখন ছোটাচ্চু এসে হাজির হলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে দেখল তারপর একটা খালি চেয়ারে বসল।

শান্ত জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলবে ছোটাচ্ছ?”

ছোটাচ্চু বলল, “হ্যাঁ আমি একটা জিনিস জানতে চাইছিলাম।”

ছোটাচ্চুর দিকে সবাই তাকালো। টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “কী জিনিস?”

“এই যে আফসানী ম্যাডাম হঠাৎ প্রান্ত নামের একটা কাল্পনিক ছেলেকে দেখে এত আপসেট হয়ে গেলেন–”

সবাই হঠাৎ পড়ালেখায় খুবই মনোযোগী হয়ে গেল। যার সামনে বই সে বইয়ের ওপর ঝুঁকে পড়ে। যার সামনে খাতা সে খাতায় লিখতে থাকে। যার সামনে কিছুই নাই সে তাড়াতাড়ি সামনে থেকে বই খাতা যেটাই পেল নিজের কাছে টেনে নিয়ে সেদিকে ঝুঁকে পড়ল।

ছোটাচ্চু কিছুক্ষণ এই নিবিড় মনোযাগের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “বুঝেছি। আমার আর প্রশ্ন করতে হবে না। উত্তর পেয়ে গেছি।”

দরজার কাছে গিয়ে ঘুরে তাকিয়ে বলল, “শুধু একটা জিনিস জানতে চাচ্ছিলাম। এই রকম একটা কাণ্ড করার উপযুক্ত কোনো একটা কারণ ছিল তো?”

টুনি মাথা তুলে ছোটাচ্চুর দিকে তাকালো। বলল, “ছোটাচ্চু তুমি আমাদের বিশ্বাস কর না?”

ছোটাচ্চু বলল, “করি।”

তখন সে তার সবগুলো দাঁত বের করে হাসল।

অন্যরাও!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *