আন্তর্জাতিক ইহুদি ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব

আন্তর্জাতিক ইহুদি ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব

ধারণা করা হয়, ধর্মীয় কুসংস্কার, অর্থনৈতিক প্রতিহিংসা ও সামাজিক বিদ্বেষ—এই তিনটি কারণে ইহুদিরা ইতিহাসজুড়ে বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তবে তারা স্বীকার করুক আর না-ই করুক, নিছক ধর্মীয় কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে জ্যান্টাইলরা কখনো তাদের বিরুদ্ধে মারমুখী হয়ে ওঠেনি। যদিও অর্থনৈতিক প্রতিহিংসাকে একটি কারণ বলা যেতে পারে। কারণ, অর্থ-সম্পদ না চাইলেও অনেক সময় শত্রুর জন্ম দিয়ে ফেলে। তা ছাড়া এত ছোট্ট একটি জাতি এত ধন-সম্পদের মালিক কীভাবে হয়ে উঠল, তাও অনেকের চিন্তার কারণ হয়েছিল। তারা যদিও এ ব্যাপারে নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলে— সৃষ্টিকর্তা আপন হাতে তাদের অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরিয়ে দিয়েছে, মূলত এসব তাদের বানানো গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইহুদিরা অর্থ-সম্পদকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে সমাজকে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে রেখেছে, তা হলো—উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত।

এই বিভাজন তারা এত সূক্ষ্ম উপায়ে করেছে, তাতে সবাই ধরেই নিয়েছে—যাদের প্রচুর সম্পদ আছে, কেবল তারাই সমাজের উচ্চশ্রেণি। তারা যা-ই বলে, তা-ই সমাজের আইনকানুনে পরিণত হয়। বিষয়টা কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে এখন আর কোনো তর্ক- বিতর্ক হয় না। এই অর্থ-সম্পদের উৎস কী, তা নিয়েও যেন কারও কোনো চিন্তা নেই।

বাইবেল অনুযায়ী—মোজেস যখন সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে কথা বলতে সিনাই পাহাড়ে গিয়েছিলেন, তখন তাঁর অবর্তমানে ইজরাইলবাসী স্বর্ণের বাছুর তৈরি করে পূজা শুরু করে, যা Golden Calf নামে পরিচিত। তারা বোঝাতে চেয়েছে—অর্থই ঈশ্বর। সকল উপাসনা কেবল তার নিমিত্তে। যারা এই অর্থ-সম্পদকে গুরুত্ব দেবে, কেবল তারাই হবে সমাজের উচ্চশ্রেণির জনগোষ্ঠী।

এ কারণে দেখা যায়—ইহুদিরা যখন কোনো নতুন দেশে প্রবেশ করত, তখন কেউ পাত্তাই দিত না। কারণ, তাদের অবস্থা ছিল ভিখারির মতো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই যখন তারা অর্থ-সম্পদে এতটা ফুলে উঠত, রাজা-বাদশাহরাও তাদের নিকট ধরনা দিত।

ইহুদিরা নিজেদের সুবিধার্থে নতুন সব আইনকানুন তৈরি করে সর্বসাধারণের ওপর চাপিয়ে দিত। তারা চাইলে অর্থবাজারে ধস নামে। আবার তাদের মর্জিতেই বাজার চাঙা হয়ে ওঠে এবং লাখো মানুষের জীবিকা চলে। ওয়ালস্ট্রিটসহ পৃথিবীর সব বড়ো বড়ো শেয়ারবাজারের চাবি তো এখন তাদের হাতেই জিম্মি!

সামাজিক বিদ্বেষ নিয়ে বলতে গেলে—সব যুগেই জ্যান্টাইলদের সঙ্গে ইহুদিদের আপত্তিকর কিছু ঘটনা ঘটতে দেখা যেত, তবে তা আহামরি কিছু ছিল না। এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে একজন খ্রিষ্টান ও নাস্তিক পাশাপাশি বড়ো হয়েছে; সম্পর্কে তারা প্রতিবেশী। ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রায়ই তাদের মাঝে তর্কাতর্কি হতো, কিন্তু তা কখনো রক্তারক্তিতে রূপ নেয়নি।

এ তিনটি বিষয় ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে, যা তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। আগের অধ্যায়গুলোতে এ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা হয়েছে। যেমন : পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতি, দেশপ্রেমহীনতা, সামাজিক অনুশাসন ভঙ্গ করা, তথ্য পাচার করা ইত্যাদি। এবার ষড়যন্ত্রময় বিশ্ব রাজনীতিতে ইহুদিরা কীভাবে দাবার গুটি চালছে, তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

ঊনবিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ইহুদি হলেন Theodor Herzl। তাকে বর্তমান ইজরাইলের অন্যতম রূপকারও বলা হয়। তার একটি বিখ্যাত উক্তি—’We are a people— One people।’ তিনি পরিষ্কার করে বলেন, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পৃথক জাতীয়তাবাদ নীতির কোনো বিকল্প নেই। ১৮৯৭ সালের প্রথম জায়োনিস্ট সম্মেলনে তিনি বলেন—’যখন আমরা কোনো বিপদে পতিত হই, তখন অদম্য এক শক্তিকে সঙ্গে করে বিপ্লবী প্রলেতারিয়েটরূপে জেগে উঠি। তখন আর আমাদের পরাজিত করা সম্ভব নয়। আমরা হয়ে উঠি অতুলনীয়-অদম্য শক্তির আধার।’

The Jewish State গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি উল্লেখ করেন—

‘আমিও বিশ্বাস করি, অ্যান্টি-সেমিটিজম সত্যি একটি বড়ো আন্দোলন। এই কুরুচিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক প্রতিহিংসা ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। এটি এমন এক জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে, যার সমাধান করতে সভ্য দেশের সব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গকে একত্রিত করা প্রয়োজন।’

১৯০২ সালে British Royal Commission-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মেজর Evans Gordon-এর প্রশ্নের জবাবে Dr. Herzl বলেন-

‘আমি আপনাদের এমন এক রাষ্ট্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো, যার বর্তমানে কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে দ্রুতই তা বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক কারণে এই রাষ্ট্রের বংশধরদের অসংখ্য শত্রুর মোকাবিলা করতে হয়েছে। আপনারা চাইলে রাষ্ট্রটির পূর্বে বিশেষণ হিসেবে ‘ইহুদি’ যোগ করতে পারেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন, এই রাষ্ট্রটির পূর্ণরূপ কী হতে পারে!’

Lord Eustace Percy একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক ও রাজনীতিবিদ। সে সময় তিনি এই বিশেষ জাতিগোষ্ঠীটিকে নিয়ে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেন, যা পরবর্তী সময় Canadian Jewish Chronicle দ্বারা সমর্থিত হয়। লেখাটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো-

‘উদারপন্থি ও জাতীয়তাবাদ (Libaralism and Nationalism) এ দুটি নীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরোপিয়ান অধিবাসীগণ নিজ নিজ দেশে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের অধিকারও এ যাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হয়, যা প্রশাসনিক পদগুলোতে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে। বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসরত ইহুদিরা প্রচণ্ড প্রতাপের সাথে বেরিয়ে আসে। কীভাবে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক পদগুলো নিজেদের করে নেওয়া যায়, তা নিয়ে উঠেপড়ে লাগে। এভাবে ক্ষমতা যখন হাতে চলে আসে, তখন তারাই আবার নীতি দুটির বিরোধিতা করে। একসময় নীতি দুটির পক্ষে-বিপক্ষে দুটি দলের জন্ম হয়, যা একত্রিত হতে যাওয়া ইউরোপকে পুনরায় দ্বিখণ্ডিত করে ফেলে।

যেকোনো স্বাধীন রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ চালাতে ইহুদিদের সচরাচর দুটি কাজ করতে দেখা যেত। উক্ত রাষ্ট্রের পুরো সাংবিধানিক কাঠামো ধ্বংস করে দেওয়া এবং সেখানে নিজেদের মনোনীত সমাজব্যবস্থা কায়েম করা।

আজ ইউরোপের আকাশ জায়োনিজম ও বলশেভিজমের মেঘে আচ্ছন্ন। জায়োনিজম হলো ইহুদিদের রাজনৈতিক ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, যা বিশ্বজুড়ে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিংশ শতাব্দীতে প্রজাতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদ দুটি ব্যবহার করে ইহুদিরা যেভাবে কনস্ট্যান্টিনোপল দখল করে এবং তুর্কি বিপ্লবের জন্ম দেয়, ঠিক সেভাবে ইউরোপ দখল করতে আজ তারা বলশেভিক বিপ্লবের জন্ম দিয়েছে।’

নিজেদের দাপট কায়েম করতে ইহুদিরা বারবার জ্যান্টাইল রাষ্ট্রগুলোকে আক্রমণ করেছে এবং শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। যেমন : তারা রাজতন্ত্র সরিয়ে প্রজাতন্ত্র, প্রজাতন্ত্রকে সরিয়ে সমাজতন্ত্র এবং অনেক জায়গায় প্রজাতন্ত্র সরিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। পুরো পৃথিবীর শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে একদিন নিজেদের ক্ষমতা কায়েম করবে এবং সবাইকে গোলাম বানিয়ে ছাড়বে-এটাই ইহুদিদের বিশ্বাস। এর প্রথম ধাপ হিসেবে তারা গণতন্ত্রকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

অনৈতিক ও সন্ত্রাসী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দরুন একসময় তাদের একঘরে করে রাখা হতো। তাই তারা নিজেদের জন্য ঘেটোভিত্তিক[২৫] সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলে। ইহুদিদের সংস্পর্শে এসে সমাজ যেন কলুষিত না হয়, সেজন্য তাদের কার্যক্রম নির্দিষ্ট করা ছিল। অর্থাৎ তারা চাইলেই প্রশাসনিক বা ব্যবসায়িক কাজে অংশ নিতে পারত না। ইহুদিরা এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, যা সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠা করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী শান্তি আলোচনা এমনই একটি উদাহরণ।

তারা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি যুদ্ধ নতুন সব শান্তি আলোচনার দ্বার খুলে দেয়, যার উঁচু পদগুলো সব সময়ই ইহুদিদের জন্য বরাদ্দ থাকে। আর সেখান থেকেই হাতের ছড়ি ঘুরিয়ে তৈরি করে নতুন আইন-কানুন। এ সম্পর্কে জানতে Sixth Zionist Conference-১৯০৩ নিয়ে যে কেউই গবেষণা করতে পারেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অটোমানদের হটিয়ে ব্রিটিশ সরকার ইহুদিদের হাতে প্যালেস্টাইনের চাবি তুলে দেয়। তারপরও বহু প্রতিক্ষিত ইজরাইল প্রতিষ্ঠা করতে তাদের আরও অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। এখনও ইহুদিদের অনেক সদস্যই প্যালেস্টাইনে ফিরে আসেনি। নিরাপত্তা ও আবাসন সংকটের দরুন তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।

২৫ জুন ১৯২০, American Hebrew ম্যাগাজিনের মুখপাত্র Herman Bernstein তার একটি আর্টিকেলে প্রকাশ করেন—

‘কিছুদিন আগে আমেরিকান বিচার বিভাগের এক প্রতিনিধি ‘The Jewish Peril’ শিরোনামে লেখা একটি পাণ্ডুলিপি নিয়ে আমার কাছে আসেন। পাণ্ডুলিপিটি ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হওয়া রাশিয়ান কোনো একটি বইয়ের অনূদিত অংশ-বিশেষ, যা অনেক আগেই বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিশ্বের পুরো জ্যান্টাইল জনগোষ্ঠীকে কীভাবে ইহুদিরা নিজেদের কবজায় নিয়ে আসবে, সে সম্পর্কে বহু নির্দেশনা পাণ্ডুলিপিটিতে দেওয়া হয়েছে।’

১৮৯৬ সালে Dr. Herzl এই সব নির্দেশনার একটি প্রথমিক খসড়া তৈরি করেন, যা ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের শহর বাসেলে অনুষ্ঠিত হওয়া জায়োনিস্ট সম্মেলনে প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হয়। পরে ১৯০৩ থেকে ১৯০৫ সাল পর্যন্ত অসংখ্য ছোটো ছোটো খণ্ডে এই সম্পূর্ণ খসড়াটি বাজারে আসতে থাকে, যা একসময় পূর্ণ গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়। রাশিয়ার বাজারে এ নিয়ে প্রচণ্ড হইচই শুরু হওয়ায় গ্রন্থটিকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু ততদিনে এর অসংখ্য কপি সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। এর দরুন এটিকে একেবারে গায়েব করে দেওয়া সম্ভব হয়নি। এই সম্পূর্ণ খসড়াটির একটা কপি এখনও ব্রিটিশ জাদুঘরে জমা আছে, যার ওপর লেখা আছে—’১০ আগস্ট, ১৯০৬’।

যে পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে এত হইচই, তার নাম হলো— Protocols of the Learned Elder Zion। এর ওপর ভিত্তি করে ১৯২০ সালে লন্ডনের Kzre and Spottiswoode ম্যাগাজিন একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, যা নিয়ে লন্ডনে থাকা ইহুদিরাও হইচই শুরু করে। নিজেদের কলঙ্ক ঢাকতে বিকল্প হিসেবে তারা London Times ম্যাগাজিনকে ব্যবহার করে। তারা Kzre and Spottiswoode-এর প্রকাশিত আর্টিকেলটিকে ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত এবং এ জাতীয় কাজকে পাগলামির অংশ বলেও অভিহিত করে।

কিন্তু এটাই ছিল সেই নীলনকশা, যার ভিত্তিতে ইহুদিরা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্ম দিয়েছে। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরি করেছে। অপসংস্কৃতিতে চারদিক ভরিয়ে তুলেছে। শিক্ষাব্যবস্থায় নাস্তিকতার জন্ম দিয়েছে। অর্থব্যবস্থাকে কুক্ষিগত এবং বিশ্বযুদ্ধপরবর্তী শান্তি আলোচনাগুলোতে কেবল নিজেদের স্বার্থই হাসিল করেছে। ইহুদিদের সংগঠনগুলো আজ পর্যন্ত এই দলিলটির সঙ্গে কোনো রকম সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেনি; বরং এটিকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে কিছু চক্রান্তকারী গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যমূলক প্রোপাগান্ডার অংশ বলে দাবি করে আসছে।

ইহুদিদের পক্ষ থেকে কোনো স্বীকারোক্তি আসুক বা না আসুক, এই সম্পূর্ণ দলিলটি আজ পর্যন্ত তাদের অন্তিম উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সঙ্গে যেভাবে মিলে যাচ্ছে, তা নিছক কোনো কাকতালীয় ব্যাপার হতে পারে না। পরবর্তী বেশ কয়েকটি অধ্যায়জুড়ে এ নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

১৯ জুন, ১৯২০ ‘ Trotsky Leads Jew – Radicals to World Rule. Bolshevism Only a Tool for His Scheme’ শিরোনামে Chicago Tribune একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে। বলশেভিক বিপ্লব যে ইহুদি গুপ্তচরদের সুদীর্ঘ পরিকল্পনার একটি অংশ, তা এই লেখায় সবিস্তারে তুলে ধরা হয়। তা ছাড়া খুব দ্রুতই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তজুড়ে আরও অনেক ধ্বংসাত্মক আন্দোলন দানা বাঁধতে যাচ্ছে—এমন কড়া হুঁশিয়ারিও সেই লেখনীতে উপস্থাপন করা হয়। ইতঃপূর্বে বহু পত্রিকা প্রতিষ্ঠান ঠিক এ জাতীয় সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। এমনও হয়েছে, সংবাদ প্রকাশের কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা সেই কলামটি সরিয়ে নিয়েছে এবং ভুল তথ্য প্রকাশের বিবৃতি দিয়ে মাফও চেয়েছে।

১৯ তারিখে প্রকাশিত আর্টিকেলটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী তুলে ধরা হলো—

‘গত দুই বছরে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার অনেক মূল্যবান তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে—বলশেভিকের মতো আরও অনেক বিপ্লব খুব দ্রুতই পৃথিবীর বুকে আঘাত হানতে যাচ্ছে। যারা নিরন্তর এর পেছনে কাজ করে যাচ্ছে, তাদের পরিচয় দেরিতে হলেও আমাদের নিকট পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই তাদের এই ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরেছে।’

‘কমিউনিজম তাদের নীলনকশা বাস্তবায়নের অন্যতম বড়ো হাতিয়ার। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রাচ্যের দেশগুলোতে তারা যে আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে, তার উদ্দেশ্য সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা নয়। ধীরে ধীরে তাদের এই আক্রমণ প্রতিচ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও ধেয়ে আসবে। তাদের সমকক্ষ এমন একটি রাষ্ট্রকেও তারা বাঁচতে দেবে না। প্রয়োজনে ইংল্যান্ডের ওপর ইসলামি বিপ্লব, ভারতের ওপর জাপানি বিপ্লব এবং আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দিতেও তারা পিছপা হবে না। তাদের উসকে দেওয়া সকল আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—পৃথিবীর বিদ্যমান সমস্ত শাসনব্যবস্থা উপড়ে ফেলা এবং তার স্থানে নিজেদের শাসনব্যবস্থা কায়েম; শান্তি প্রতিষ্ঠা করা নয়।’

২১ জুন, ১৯২০ World Mischief শিরোনামে Chicago Tribune আরও একটি আর্টিকেল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের কুকর্মের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রথম দিকে তারা এই তথ্যগুলোকে মিথ্যা, গুজব ও বানোয়াট গল্প বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু মানুষ যখন প্রমাণ উপস্থাপন করতে শুরু করে, তখন তারাই আবার কণ্ঠ পরিবর্তন করে বলে—

‘ছোট্ট যে জাতিটি বহুকাল পৃথিবীর অসংখ্য নির্যাতন সহ্য করেছে, তারা যদি শত্রুদের ক্ষমতাচ্যুত করে বিশ্ব শাসন করার স্বপ্ন দেখে, তাতে এমন আশ্চর্য হওয়ার কী আছে?’

Jewish Encyclopedia হতে জানা যায়, খ্রিষ্টযুগ শুরুর আগ পর্যন্ত তাদের কোনো রাজা ছিল না। খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে ব্যাবিলন সেনাপতি নেবুচাদ নেজার জেরুজালেম আক্রমণ করে সেখানকার অসংখ্য অধিবাসীকে হত্যা করে এবং ৬০-৭০ হাজার ইজরাইলিকে বন্দি করে নিয়ে যায়; অবশ্য পরে তাদের অনেককে ছেড়ে দেওয়া হয়।

৭০ খ্রিষ্টাব্দে সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বে রোমানরা আবারও এই পবিত্র ভূমি আক্ৰমণ করে এবং সবাইকে নির্বাসিত করে। ঠিক তখন থেকে বেলফোর ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা আর কখনো সামষ্টিকভাবে জেরুজালেমে ফিরে যেতে পারেনি। তারা ছিল যাযাবর জাতি। এই কথাগুলো পুনরায় বলার বিশেষ কিছু তাৎপর্য আছে।

ব্যাবিলনদের আক্রমণে প্রথমবারের মতো নির্বাসিত হওয়ার পর তারা এক অদৃশ্য শাসনব্যবস্থার জন্ম দেয়, যাতে নির্বাসিত অবস্থাতেও একতাবদ্ধ থাকা যায়। তবে এই ব্যবস্থাটি তখন পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। কারণ, কিছুদিন পর তারা আবারও জেরুজালেমে ফিরে আসে। কিন্তু দ্বিতীয়বার যখন রোমানদের দ্বারা নির্বাসিত হয়, তখন ইহুদিরা শাসনব্যবস্থায় রাজার সংযোজন করে। ইহুদিরা পৃথিবীর যতদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ুক না কেন, রাজার নির্দেশ মেনে চলা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। তিনি ছিলেন তাদের অভিভাবক। এ পর্যন্ত তারা যতজন রাজা নির্বাচিত করেছে, তাদের সবাইকে বলা হয় ‘Exilarch’। এই অদৃশ্য রাষ্ট্রের নামও ছিল ইজরাইল।

ইহুদিরা যতদিন না নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারছে, ততদিন এই শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে তারা ছিল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের পৃথক আদালত ও আইনব্যবস্থাও ছিল। পৃথিবীর যে রাষ্ট্রেই বসবাস করুক না কেন; হোক তা খ্রিষ্টান বা মুসলিমদের দেশ—তারা মনে- প্রাণে এই রাষ্ট্রের সব নিয়মকানুন মেনে চলত। কিন্তু এই রাষ্ট্রটি আজ কোথায়? এটি কি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে? না, হারিয়ে যায়নি; বরং তা নতুন খোলস ধারণ করেছে।

প্রাচীন সেই রাষ্ট্রটির একটি পার্লামেন্টও ছিল, যার নাম ‘সেনহাড্রিন’। এ সম্পর্কে পূর্বের একটি অধ্যায়ে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে।

৭১ জন সদস্য নিয়ে গঠিত এই পার্লামেন্ট ব্যবস্থার প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। তবে কোত্থেকে এবং কী উপায়ে এই সদস্যগণ নির্বাচিত হতো, তা কখনো প্রকাশ করা হতো না। তবে তা গণতান্ত্রিক উপায়ে হতো না। একজন রাজা যোগ্যতার ভিত্তিতে সংসদ সদস্যদের নির্বাচন করতেন। এখানে রাজা বলতে তাদের প্রধান ধর্মীয় গুরুকে বোঝানো হয়েছে, যার পরিচয় খুব গোপন রাখা হতো।

জনসাধারণের জান-মাল ও সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া এই সংসদীয় ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল না; বরং সাম্রাজ্যবাদ আরও শক্তিশালী করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। Jewish Encyclopedia হতে জানা যায়—এই সদস্যরা নির্বাচিত হতো সম্পদ, প্রতিপত্তি ও ধর্মীয় জ্ঞানের মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে। তাদের সাম্রাজ্যবাদ শুধু প্যালেস্টাইনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং এর বিস্তৃত ঘটেছিল পুরো বিশ্বজুড়ে। কারণ, যদি ইজরাইল প্রতিষ্ঠা করতে হয়, তবে প্রতিটি দেশকে ধ্বংস করেই তা করতে হবে।

১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন ফ্রান্সে অবস্থানরত ইহুদিদের বিভিন্ন কাজের দরুন ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি একটি সংসদীয় সভার আহ্বান এবং সেখানে এই জাতিগোষ্ঠীর কিছু সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করে কয়েকটি প্রশ্ন করেন। সেইসঙ্গে এই ঘোষণা দেন—যতদিন না তারা এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবে, ততদিন তাদের একঘরে করে রাখা হবে।

৯ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৮০৭ জ্ঞাতি ভাইদের সমর্থনে সেনহাড্রিনের সদস্যরা প্যারিসে একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। তারা ঠিক প্রাচীন কায়দায় নিজেদের কার্যক্রম শুরু করে। সেখান থেকে ঘোষণা করে—ইজরাইলের মঙ্গল ও উন্নয়নের স্বার্থে যেকোনো কিছু করার অধিকার তাদের আছে। তাই নেপোলিয়ন কী জানতে চাইল আর না চাইল, তা নিয়ে তাদের কিছুই আসে যায় না।

ইহুদিরা নিজেদের ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে সংসদীয় কাঠামোকে আজ অবধি একই রকম রেখেছে। তবে এটা ঠিক, সময়ের সাথে সাথে এই ব্যবস্থায়ও সামান্য পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে সেনহাড্রিনের আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ১০টি। সময়ের সাথে সাথে তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবছর একটি পূর্বনির্ধারিত সময়ে এই সম্মেলনের আহ্বান করা হতো। যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, পৃথিবীর প্রতিটি দেশ থেকে তাদের সদস্যগণ এই সম্মেলনে বাধ্যতামূলক অংশ গ্রহণ করত। আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, উৎসাহ প্রদানকারী বক্তা, ধনী ব্যবসায়ী ও ধর্মীয় গুরু—সবাই এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হতো, তবে সদস্যদের অধিকাংশই হতো ‘রাবাই”।

রাবাই হওয়ার পাশাপাশি অনেকে ব্যাবসা, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করত। আর এই সদস্যরাই মূলত সেনহাড্রিনের নিয়মিত সভায় আমন্ত্রণ পেত। ব্যাপারটি এমন নয়, শুধু গুপ্ত সদস্যরাই এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেত। আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু মাপকাঠি অনুসরণ করা হতো। যারা এই মাপকাঠিতে অধিক নম্বর পেত, পরের বছর তাদের এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হতো। এই মাপকাঠিতে কী কী বিষয় থাকত, তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও কিছুটা অনুমান করা যায়।

হতে পারে অন্যান্য দেশের প্রশাসনিক গভীরতায় কে কতটুকু প্রবেশ করতে পরেছে, জ্যান্টাইলদের ফাঁদে ফেলতে অর্থনীতির নতুন সূত্রটি কে আবিষ্কার করেছে, সমাজ বিভাজনকারী নতুন মতবাদটি কে আবিষ্কার করেছে, ইজরাইলের খুঁটি মজবুত করতে নতুন পরিকল্পনাটি কে তৈরি করেছে ইত্যাদি।

তবে তারা যে সুশৃঙ্খল ও সুগঠিত একটি জাতি, এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। এমন একটি শৃঙ্খল জাতি কিন্তু একদিনে প্রতিষ্ঠা পায়নি। তাদের আছে চৌকশ অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিমান গুপ্তচর। তারা পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে গোপন আলোচনাসভার আয়োজন করে এবং কাজ শেষে গোপনেই সরে পড়ে।

প্রশ্ন হতে পারে, তাদের পররাষ্ট্রনীতি কেমন? উত্তর অনেকটা এ রকম—তারা জ্যান্টাইলদের সর্ববস্থায় শত্রু গণ্য করে। তাদের বিশ্বাস, পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে জ্যান্টাইল সম্প্রদায়ের মোকাবিলা করেই টিকতে হবে। ফলে তাদের পররাষ্ট্রনীতি যে মোটেও বন্ধুসুলভ নয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তারা বর্তমানে দাঁড়িয়ে দূর-ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এবং সম্মিলিতভাবে এই পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণ করে।

সাধারণ সদস্যদের অনেকেই জানে না, কে তাদের রাজা। সত্যি বলতে, সেনহাড্রিনের সদস্যগণ ব্যতীত অন্য কারও কাছে রাজার পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। খুব সূক্ষ্ম গবেষণার মাধ্যমে সেনহাড্রিনের কিছু সদস্যের পরিচয় অনুমান করা সম্ভব হলেও প্রকৃত রাজার পরিচয় অনুমান করা একেবারেই অসম্ভব।

তাদের এই অদৃশ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার নিয়মকানুন এবং বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে Protocols of the Learned Elders of Zion নামে প্রকাশিত বইটির ২৪ তম প্রটোকলে উল্লেখ আছে-

‘এখন বলব কীভাবে পৃথিবীর সব শক্তিশালী রাজ্যের পর্দা ভেদ করে আমরা রাজা ডেভিডের (নবি দাউদ) সিংহাসন পুনরুদ্ধার করব। পৃথিবীর বুকে এই রাজবংশের ধারা আজও বিদ্যমান। বিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও শিক্ষিত প্রতিটি ব্যক্তিই এই রাজবংশের উত্তরাধিকারী, যাদের ওপর পুরো বিশ্বের শাসনভার অর্পণ করা হয়েছে।’

বিষয়টি একটি ইঙ্গিত দিচ্ছে—আমরা তাদের বিরুদ্ধে যত ধরনের প্রতিরোধই গড়ে তুলি না কেন, তারা নিজেদের সিংহাসন পুনরূদ্ধার করবেই। বিশ্বব্যাপী তাদের সাম্রাজ্যবাদ অবশ্যই প্রতিষ্ঠা পাবে—এমন প্রতিজ্ঞা হতে তারা কখনো সরে আসবে না। শুধু যে রাজনীতির মাঠে তারা এই প্রভাব বিস্তার করেছে তা নয়; বরং শিল্প-সাহিত্য, শিক্ষা- দিক্ষা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, সমরাস্ত্র ও কূটনীতির মতো প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনেও নিজেদের উপস্থিতি জোরদার করেছে।

ইহুদিদের সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার প্রটোকলসমূহ

যার হাত ধরে Protocols of the Learned Elders of Zion পূর্ণ বই আকারে বাজারে প্রকাশিত হয়েছে, তার পরিচয় কখনো উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। প্রথমে এটিকে রাশিয়ান ভাষায় ছাপানো এবং পরে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ফরাসি বিপ্লব চলাকালে Duc d’Orleans-এর যে ধ্বংসাত্মক রূপ পুরো পৃথিবী দেখতে পায়, বইটিতে ইহুদি সাম্রাজ্যবাদীদের এমনই একটি রূপ উন্মোচিত হয়েছে।

বইটিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে—কে তাদের প্রকৃত শত্রু এবং তারা কাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করছে। এমন নয় যে, নির্দিষ্ট কোনো রাজা বা অভিজাত সম্প্রদায় তাদের এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তু; বরং পৃথিবীর পুরো জ্যান্টাইল সম্প্রদায়-ই ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যবস্তু। জ্যান্টাইল শব্দটি এ বইটিতে অসংখ্যবার এসেছে। এবার এর কিছু প্রটোকল নিয়ে আলোচনা করা যাক।

প্রথম প্রটোকলে উল্লেখ আছে—

কোনো সন্দেহ নেই, সততা ও সরলতা মানব চরিত্রের মহৎ দুটি গুণ, কিন্তু রাজনীতির মাঠে এর কোনো স্থান নেই। একজন শক্তিশালী শত্রুকে মোকাবিলা করার চেয়ে এই দুটি মানবীয় গুণ রক্ষা করা অধিক কঠিন ব্যাপার। কারণ, আমাদের শাসনব্যবস্থায় সততা ও সরলতার কোনো স্থান নেই। এগুলো শুধু জ্যান্টাইলদের শাসনব্যবস্থায় পাওয়া যাবে।

বংশ পরম্পরায় আমরা জ্যান্টাইলদের শাসনব্যবস্থায় বারবার আঘাত হেনেছি এবং নিজেদের অনুশাসন চাপিয়ে দিয়েছি। আমাদের শাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই হলো অর্থ-সম্পদ, যার মালিক কেবল আমরাই। আর বিজ্ঞান? সেও তো আমাদেরই আবিষ্কার।

আমরা শ্রমিকদের বিভিন্ন মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে জড়িয়ে দেবো। একই সঙ্গে বাজারে পণ্যমূল্যও বাড়িয়ে দেবো। আমরা বলব—কৃষি উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এই বর্ধিত মজুরি তাদের কোনো উপকারেই আসবে না। আমরা সুকৌশলে কৃষকদের মাঝে অরাজকতা ছড়িয়ে দেবো এবং আত্মতৃপ্তির উপায় হিসেবে মদ্যপানে আসক্ত করে তুলব, যা ধীরে ধীরে তাদের জ্ঞানশূন্য জাতিতে পরিণত করবে।

জ্যান্টাইলরা কখনোই আমাদের ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়তে পারবে না। আমাদের একাংশ ছদ্মবেশে শ্রমিকদের সঙ্গে মিশে থাকবে এবং বিভিন্ন অধিকার আদায়ের আন্দোলন উসকে দেবে, যেন বাজার অস্থিতিশীল রাখা যায়। পরে এই অস্থিতিশীল বাজারে নতুন এক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা পাবে, যার মূল প্রণেতা হব আমরাই।’

প্রটোকলগুলো ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখবেন, তারা পুরো মানবজাতিকে দুটি অংশে বিভক্ত করেছে; আমরা ও জ্যান্টাইল। বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে, যদি আঠারোতম প্রটোকলে উল্লিখিত অনুচ্ছেদগুলো লক্ষ করেন। যেমন—

‘জ্যান্টাইলদের সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে—আমরা হলাম সৃষ্টিকর্তার মনোনীত সম্প্রদায় এবং মানবশ্রেণির মধ্যে উচ্চ। আর জ্যান্টাইলরা হচ্ছে দুই পায়ে চলমান মানব পশু! তাদের না আছে দূরদৃষ্টি, আর না আছে নতুন কিছু আবিষ্কার করার ক্ষমতা। অন্তর্যামী নিজ হাতে এই বিশ্বের শাসনভার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।

যতদিন না ইহুদি ভাইদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান ও দায়িত্বশীল সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে, ততদিন যেন তারা নিজেদের চারিত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখে। আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রটোকলগুলো বাস্তবায়নে তারা কতটা সফল, তা চারদিকে তাকালেই উপলব্ধি করা সম্ভব। খুব ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে—সেখানে একজন শিক্ষক ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তিনি ছাত্রদের পড়াচ্ছেন, কীভাবে জ্যান্টাইলদের বিরুদ্ধে পরিকল্পন তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হয়। তা ছাড়া ইহুদিদের পরিকল্পনা কতদূর বাস্তবায়িত হয়েছে এবং এখনও কতটুকু বাকি, তাও এই অনুচ্ছেদগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো প্রকার তথ্য বা মতামত চাওয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ তাদের যাবতীয় পরিকল্পনার সবকিছু শুধু একজন গুরুর মাথা থেকে আসছে। আর বাকি সবাই এই অনুশাসন মেনে চলতে বাধ্য।

প্রটোকলটির পাণ্ডুলিপি বাজারে প্রকাশিত হওয়ার পর ইহুদিরা বলতে শুরু করে—

‘সত্যি যদি এমন একটি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে আমাদের কোনো গোপন পরিকল্পনা থাকত, তবে কখনোই তা জ্যান্টাইলদের সামনে উন্মোচিত হতো না।’

আসলে এটি যে তাদের বা সেনহাড্রিনের কোনো সদস্য প্রকাশ করেছে, তা নয়। আগের একটি অধ্যায়ে বলা হয়েছে—জায়োনিস্টরা খুব গোপনে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে মাঝেমধ্যেই আলোচনা সভার আয়োজন করে। হয়তো বিশেষ কোনো আগ্রহী ব্যক্তি বহুদিন এই দলটিকে অনুসরণ করত এবং নিজের গোপনীয়তা রক্ষা করে প্রটোকলগুলো জানতে পেরেছিল, যা তিনি পরবর্তীকালে লেকচার নোট আকারে প্রকাশ করেন।

আপনি যদি মন দিয়ে পুরো পাণ্ডুলিপিটা অধ্যয়ন করেন—তবে বুঝতে পারবেন, এই প্রটোকলগুলো আজকে বা একশত বছর আগে তৈরি করা হয়নি। এগুলো তাদের সুদীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম ও সমাজব্যবস্থার প্রমাণস্বরূপ। তবে সময়ের প্রেক্ষাপটে এবং কৌশলগত অবস্থার কারণে প্রটোকলগুলোতে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। প্রথম প্রটোকলের একটি অনুচ্ছেদে পাবেন—

‘স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি মতবাদকে আমরা অতি প্রাচীনকাল থেকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু পৃথিবীর বোকা-গর্দভ বুদ্ধিজীবীরা এই মতবাদগুলো নিজেদের অধিকার আদায়ের মাধ্যম বলে মনে করছে এবং এর জন্য জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করছে। তারা নিজেরাই আমাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে এবং নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস করেছে। সম্ভবত অতি-বুদ্ধিমান ও সুকৌশলী ব্যক্তিরাও এসব মতবাদের মর্মার্থ অনুধাবন করতে সক্ষম হয়নি। তারা কখনো বুঝতে পারেনি—একতা, সাম্য বা স্বাধীনতা বলতে আদৌ কিছুই নেই।’

এই প্রটোকলগুলো পরিবর্তন আনার অধিকার কারা রাখে, সে সম্পর্কে তেরোতম প্রটোকলে আলোচনা করা হয়েছে—

‘এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ক্ষমতা কেবল তাদের-ই রয়েছে, যারা বহু শতাব্দী ধরে এই প্রটোকলগুলোকে অক্ষুণ্ণ রেখেছে।’

আরও একটি বিষয় লক্ষণীয়, এখানে বক্তার ব্যক্তিগত কোনো সম্মান বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়নি। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য—ইজরাইলের ভবিষ্যৎ সুদৃঢ় ও মজবুত করা। তারা ইতোমধ্যেই বিভ্রান্তিকর নানা মতবাদ দিয়ে জ্যান্টাইল সমাজব্যবস্থায় ফাটল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

এতকিছুর পরও যুগে যুগে জ্যান্টাইলদের মাঝে এমন কিছু ব্যক্তির আগমন ঘটেছে, যারা দীপ্ত কণ্ঠে বলেছে—আজ যা কিছুকে বিজ্ঞান বলে মনে করা হচ্ছে, তার অনেক কিছুই প্রকৃত বিজ্ঞান নয়। যেগুলো আমরা অর্থনৈতিক ও সমাজব্যবস্থার বিধান বলে মনে করছি, তা আসলে কোনো বিধান নয়। এগুলো মানব সৃষ্ট কিছু ভ্রান্ত নিয়মকানুন, যা আমাদের মধ্যে ফাটল তৈরিতে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে পরিচিত শত্রুদের বিরুদ্ধেও আমরা এক হতে পারছি না। আমরা যেন ইহুদিদের প্রটোকলগুলো নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে না পারি এবং তা নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন বোধ পর্যন্ত না করি, সেজন্য তারা আমাদের ওপর এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে। যার দরুন তাদের প্রণীত অনুশাসনগুলো ভেড়ার মতো আত্মস্থ করে বড়ো হচ্ছি।

জ্যান্টাইলদের প্রতি ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি

নিজেদের যতই বুদ্ধিমান বা উঁচু শ্রেণির মানুষ মনে করি না কেন, ইহুদিদের কাছে আমরা বোকা, গর্দভ ও সাদামাটা মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাণী ব্যতীত কিছুই নই। আমাদের সম্পর্কে তাদের ধারণাগুলো যে তাচ্ছিল্যকর হলেও সত্য, তা প্রটোকলের বইটি ভালোভাবে অধ্যয়ন করলেই বোঝা সম্ভব। এবার বাছাই করা কিছু প্রটোকল নিয়ে জ্যান্টাইলদের প্রতি ইহুদিদের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা যাক।

প্রথম প্রটোকল দিয়েই শুরু করি-

‘মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের বাগে আনার একমাত্র কৌশল ভয়ভীতি প্রদর্শন। প্রাতিষ্ঠানিক ও কিতাবি শিক্ষা দিয়ে তাদের কখনো বশ করা যাবে না। ক্ষমতার লোভ সবারই থাকে এবং প্রত্যেকেই নিজেকে শাসকরূপে দেখতে চায়। আর অন্যের ভালোর জন্য নিজের ভালো উৎসর্গ করবে—এমনটা খুব কমই দেখা যায়।

জ্যান্টাইলদের হুজুগে প্রকৃতির বললেও ভুল হবে না। তারা সামান্য আবেগ, বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও ব্যক্তিগত অহংকারের দরুনও নিজেদের মধ্যে বিভাজন করতে রাজি। হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে গণ-আন্দোলনের ডাক দেয়। আবার দুই-একটি মিথ্যা প্রচারণায় কান দিয়ে মহানায়ককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। বুদ্ধিমান প্রাণী হলে এমনটা কখনোই করত না। তাই তারা অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা থেকে কখনো বেরিয়ে আসতে পারে না। গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নতুন কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বে জনসাধারণের অনুমতি আবশ্যক। কিন্তু তারা এটা বোঝে না, বেশিরভাগ মানুষই নিরেট মূর্খ ও বুদ্ধিহীন। তারা একবার ডান পক্ষের পিছে ছোটে, আরেকবার বাম পক্ষের। তাদের কাছ থেকে কখনো গঠনমূলক পরামর্শ পাওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথ ইতোমধ্যেই অনেকটা সহজ হয়ে উঠেছে। জ্যান্টাইল মনস্তত্ত্বের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ শাখায় আমরা ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়েছি। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর লোভ-লালসা দেখিয়ে আমরা তাদের বশীভূত করতে সক্ষম হয়েছি। চারিত্রিক দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের মধ্যে বিভেদ ও পার্থক্যের দেয়াল গড়ে তুলেছি।’

এবার পঞ্চম প্রটোকলের একটি অনুচ্ছেদের দিকে লক্ষ করুন—

‘জ্যান্টাইলরা কাজের চেয়ে প্রতিশ্রুতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়, কিন্তু আদৌ তা পূরণ করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই তাদের বশ করতে পারব; ক্ষমতায় যাওয়ার পর তা নিয়ে মাথাব্যথা না করলেও চলবে।’

এগারোতম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘আসলে জ্যান্টাইলরা হলো ভেড়ার পাল। আমরা যে বিষয়েই প্রতিশ্রুতি দিই না কেন, তা তারা অন্ধের মতো গ্রহণ করবে। আমরা স্বাধীনতা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দেবো, কিন্তু তার আগে আমরাই তাদের মাঝে অশান্তি, অরাজকতা ও যুদ্ধ ছড়িয়ে দেবো। এই স্বাধীনতার জন্য তাদের কতদিন অপেক্ষা করতে হবে, তা কি বলতে হবে? আমরা চাইলে এই যুদ্ধ ও শান্তি আলোচনার মেয়াদ ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে নিতে পারব। প্রথমে তাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেবো এবং পরে সেই ভয় থেকে উদ্ধার করার প্রতিশ্রুতি দেবো।’

এবার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় জ্যান্টাইলদের অংশগ্রহণের ব্যপারে যা বলা হয়েছে—

‘সাধারণত দুঃসাহসী, রোমাঞ্চপ্রিয় এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিরা সামাজের প্রশংসা কুড়াতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় (Spy Agency) যোগদান করে। আমরা খুব সহজেই তাদের খুঁজে বের করব এবং পরিকল্পনা মাফিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করব।

কৌতূহলী জ্যান্টাইলরা পুরো বিশ্বকে সামনে রেখে এ পর্যন্ত অসংখ্য গোয়েন্দা সংস্থার জন্ম দিয়েছে। তারা বিশ্বাস করে, এই গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমেই সমাজের সকল অপরাধ কর্মের রহস্য উদ্ঘাটিত হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা তাদের সফলতা এনে দেবো, যা তাদের মাঝে বড়াই ও আহমিকতার জন্ম দেবে। এতে তারা কোনো রকম বাছ-বিচার ছাড়াই আমাদের পরবর্তী পরামর্শগুলো নির্দিধায় গ্রহণ করবে। তোমরা ভাবতেও পারবে না, এই বড়াই ও অহমিকা তাদের কতটা নির্বোধ করে তুলবে! এমতাবস্থায় সামান্য একটি ব্যর্থতাই তাদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে জ্যান্টাইলরা ব্যক্তিমোহ, জনপ্রিয়তা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। কিন্তু ব্যক্তিমোহ আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়; বরং জাতীয় উদ্দেশ্যই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।’

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, জ্যান্টাইলরা মানসিক প্রণোদনা এবং নতুন মতবাদগুলো খাবারের মতো গ্রহণ করে। কিন্তু নতুন মতবাদগুলোর ভবিষ্যৎ ফলাফল কী হতে পারে, তা নিয়ে গবেষণা করতে রাজি নয়। চোখের দেখায় যা ভালো লাগে, তা-ই তারা গ্রহণ করে।

জায়োনিস্টরা আজ পর্যন্ত অসংখ্য মতবাদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। যখনই একটি মতবাদ ব্যর্থ হয়েছে, তখনই আরেকটি বাজারে এনেছে। প্রতি ধাপে জ্যান্টাইলরা হয়েছে দুর্বল ও নেতৃত্বশূন্য। দেশের জনগণ যদি এক হয়, তবে সরকার আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য। তবে দেশের জনগণ যে বিষয়টির ভিত্তিতে এক হচ্ছে, সে সম্পর্কেই তো সাধারণ মানুষের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। তারা তা-ই করেছে, যা নেতারা করতে বলছে। বলশেভিক বিপ্লবে প্রলেতারিয়েটদের সূত্রপাত ঠিক এভাবেই হয়। অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতাকে পুঁজি করে সমাজে সব সময় তৃতীয় একটি গোষ্ঠী লুটপাটের চেষ্টা করে। এটা জানার পরও দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অহংকারের দাপটে এক হতে চায় না। ফলে লুণ্ঠনকারী তৃতীয় দলটি ইচ্ছেমতো নিজের স্বার্থ লুফে নেয়। আর এই তৃতীয় পক্ষটি হলো ইহুদি জাতিগোষ্ঠী।

মূলত প্রকৃত উন্নয়ন বলতে কী বোঝায় তা আমরা অনেকেই জানি না। আমাদের পূর্বপুরুষরা চাকা আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবসভ্যতায় নতুন যুগের সূচনা করে। সে চাকা দিয়ে তৈরি হয় টারবাইন। প্রবাহমান বাতাস ও পানির স্রোতকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত হয় টারবাইন ঘোরানোর কৌশল, যা দিয়ে আবিষ্কৃত হয় বিদ্যুৎশক্তি। আজ পেট্রোল- ডিজেল দিয়ে ছোটোখাটো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। এখন প্রশ্ন হলো—আসলেই কি চাকারূপী টারবাইন সেকেলে প্রযুক্তি? বায়ু ও পানিশক্তি ব্যবহার করে আমাদের পূর্বপুরুষরা যে নতুন শক্তির জন্ম দিয়েছে, তা কি সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না? এই প্রযুক্তিগুলো কি বর্তমান সমাজের চাহিদা মেটাতে অক্ষম?

আসলে যে বিষয়গুলোকে আমরা ‘অগ্রগতির উপায়’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছি, তা প্রকৃত অর্থে আমাদের দেশ, সমাজ ও জাতিকে ধ্বংস করেছে। অস্থিরতা-বিশৃঙ্খলা সমাজে এমনই বিবর্তনের জন্ম দেয়, যা বিপন্ন জনগোষ্ঠীকে পেট রক্ষার তাগিদে চোখে যা ভালো দেখায়— তাই আদর্শ বলে গ্রহণ করতে বাধ্য করে, কিন্তু এই আদর্শের পেছনে থাকে শয়তান। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, কমিউনিজম, রক্ষণশীলতা, পুঁজিবাদ, মৌলবাদ ইত্যাদি সবই এর উদাহরণ, যা তাদের হাত ধরে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। নিজেদের মতবাদগুলো যেভাবে তারা আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে, তার কিছু নমুনা নিচে উপস্থাপন করা হলো-

প্রথম প্রটোকলের একটি অনুচ্ছেদ থেকে—

‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা নিছকই একটি ধ্বংসাত্মক ধারণা। অনেক রাষ্ট্র আছে যেখানে ক্ষমতায় থাকা দল ব্যতীত অন্য কোনো রাজনৈতিক শক্তির অস্তিত্ব নেই। মানুষও চায় না সেখানে কোনো দল গড়ে উঠুক। এমতাবস্থায় ক্ষমতাসীন দলটির পতন ঘটাতে চাইলে সে সমাজের মগজে রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি ঢুকিয়ে দিতে হবে। বোঝাতে হবে, সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে। জনগণ চাইলে তাদের মধ্য হতে যে কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় বসাতে পারে। ধীরে ধীরে সে সমাজে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি সহজতর হতে শুরু করবে, যাকে কাজে লাগিয়ে আমরা একাধিক দলের জন্ম দেবো। প্রত্যেক দলের জন্য অসংখ্য সমর্থক গড়ে তুলব। এটাই জ্যান্টাইলদের ঐক্যে ফাটল তৈরি করবে, যার শেষ পরিণতি হবে ক্ষমতাশীন দলের পতন এবং নতুন শক্তির ক্ষমতায়ন।

পঞ্চম প্রটোকলে লক্ষ করুন—

‘জনমত নিয়ন্ত্রণে শুরুতেই আমরা বিভিন্ন মতবাদ জ্যান্টাইলদের মগজে ঢুকিয়ে দেবো, যা তাদের মধ্যে হাজারো গোলকধাঁধার জন্ম দেবে। একসময় বিরক্ত হয়ে বলবে—রাজনৈতিক বিতর্কে নিজেদের না জড়ানোই ভালো। এ কৌশলটি রাজনীতির মাঠ থেকে অন্য দলের সমর্থকদের সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে।

দ্বিতীয়ত, আমরা মানুষের অভ্যাসগত চাহিদাগুলো সহজে মিটিয়ে দেবো। অভাব মানুষের হৃদয়ে মানবিকতার জন্ম দেয়, পক্ষান্তরে ভোগ-বিলাস মানুষকে মনুষত্বহীন করে তোলে। যখন মানুষ তাদের ব্যক্তিগত চাহিদাগুলো সহজে মেটাতে পারবে, তখন তারা আর অন্যের চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসবে না। তাদের নিকট ব্যক্তিগত আনন্দ প্রাধান্য পেতে শুরু করবে। ফলে রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের মুহূর্তগুলোতে তারা কখনো এক হতে পারবে না। কারণ, ততদিনে তাদের চিন্তাশক্তি একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে।

তেরোতম প্রটোকলে উল্লেখ আছে—

তোমরা লক্ষ রাখবে, আমরা শুধু প্রতিশ্রুতির গ্রহণযোগ্যতা চাই। আদৌ তা বাস্তবায়িত হবে কি না, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমরা বলি, মানুষের কল্যাণ করাই আমাদের উদ্দেশ্য। আর এটা এ কারণেই বলি, সাধারণ মানুষ যেন আমাদের কথাগুলোকে সত্য বলে মেনে নেয় এবং সমাজে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

অশান্ত জনগণের মাথা থেকে রাজনৈতিক চিন্তা সরিয়ে দিতে আমরা অসংখ্য নতুন সমস্যার জন্ম দেবো। এটা তাদের দৈনন্দিন জীবিকা অর্জনের পথে অনেক বাধা সৃষ্টি করবে। যেমন : মজুরি সমস্যা, চাকরির নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি। এমতাবস্থায় কেউ রাজনৈতিক বিতর্কে মাথা ঘামাতে চাইবে না।

আমরা তাদের বিনোদন, খেলাধুলা ও আয়েশি জীবনে ডুবিয়ে রাখব। তারা শুধু নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং অন্য বিষয়ে চিন্তা করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এভাবে একটা সময় তাদের স্বাধীন চিন্তাশক্তি লোপ পাবে।

উদারপন্থি, গণতান্ত্রিক ও মুক্তমনা নীতিগুলো ব্যবহার করে জ্যান্টাইলদের বিভিন্ন ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে দোল খাওয়াতে শুরু করব। তারা উদারপন্থি নীতিকে প্রগতির অংশ বলে মনে করবে, কিন্তু নির্বোধ এই জাতি প্রগতির সংজ্ঞাই তো জানে না!’

শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়; লেখক, কবি, শিক্ষক, সমাজবাদী ও রাবাইদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইহুদিরা পুরো মানবজাতিকে অসংখ্যবার নানা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে, যার সূচনা হয়েছে হাজার বছর আগেই। শুধু আজকে নয়, অতীতেও তারা এমনটা করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

নবম প্রটোকলের দিকে লক্ষ করুন—

‘রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, কমিউনিজম (সাম্যবাদ) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমরা প্রতিটি জাতিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করব। সেইসঙ্গে তাদের আমাদের সেবায় নিয়োজিত করব। এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিদ্যমান প্রতিটি শাসনব্যবস্থাকে আমরা একসময় উপড়ে ফেলতে সক্ষম হব। ততদিন পর্যন্ত পৃথিবীর কোনো জাতিকে শান্তিতে থাকতে দেবো না, যতদিন না তারা আমাদের সব অনুশাসন মেনে নিচ্ছে।’

এরপর দশম প্রটোকলে বলা হয়েছে-

‘যখনই আমরা উদারপন্থি ও গণতান্ত্রিক নীতিগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে ঢুকিয়ে দিলাম, তখনই তা রাজনৈতিক দলগুলোর রূপরেখা রাতারাতি পালটে দিলো।’

জ্যান্টাইলদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, সে সম্পর্কে নবম প্রটোকলে উল্লেখ আছে—

‘জ্যান্টাইল যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তি, নৈতিকতাবোধ ও স্বাধীন চিন্তাশক্তি ধ্বংস করতে এক মিথ্যা ও বানোয়াট শিক্ষাব্যবস্থা ইতোমধ্যে তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে; আমরা যদিও নিজেরা এই শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করব না।’

শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবহার করে কীভাবে পারিবারিক বন্ধনে ফাটল ধরানো সম্ভব, তা দশম প্রটোকলে উল্লেখ করা হয়েছে—

‘আমাদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থাকে তাদের যোগ্যতা যাচাইয়ের মাপকাঠিতে পরিণত করব। কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বে এই শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের যোগ্যতা মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়ব। একসময় এই শিক্ষাব্যবস্থা তাদের মাঝে অহমিকা ও অহংকারের জন্ম দেবে, যা পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করতে উসকে দেবে।

যতদিন না কাঙ্ক্ষিত সময়টি হাতের মুঠোয় আসছে, ততদিন পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন আমোদ-প্রমোদে ডুবিয়ে রাখব। যেসব মতবাদের কথা পূর্বে উল্লেখ করেছি, তা তাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার নিরন্তন চেষ্টা চালিয়ে যাব।

ডারউইনবাদ, মার্কসবাদ, নাৎসিবাদ ইত্যাদিকে প্রগতিশীলতার উপায় হিসেবে তাদের সামনে উপস্থাপন করেছি। এসব তত্ত্বের ওপর ভর করে আমরা তাদের নৈতিকতাবোধ ধ্বংস করেছি এবং সামনের দিনগুলোতেও এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না।’

উল্লেখ্য, প্রটোকলগুলোর কোথাও বলা হয়নি—তারা জ্যান্টাইলদের চিরতরে ধ্বংস করে ফেলতে চায়; বরং তারা চায়—জ্যান্টাইলরা যেন তাদের প্রভুত্ব মেনে নেয় এবং চিরকাল দাস হয়ে থাকে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আজ পুরো পৃথিবী এক অদৃশ্য স্বৈরশাসনের অধীনে চলছে।

‘আমরা জানি, জ্যান্টাইলদের একতার ভিত্তি খুবই দুর্বল। সামান্য কিছু সময়ের জন্য এক হলেও আমরা আবারও তাদের দুর্বল করে ফেলতে পারব। গত দুই হাজার বছরে এ কাজ আমরা অসংখ্যবার করেছি।’

ইহুদি রাষ্ট্রের প্রটোকল ব্যবস্থার আংশিক বাস্তবায়ন

নিছক কৌতূহল নিয়েও যদি ‘Protocols of the Learned Elders of Zion’ পাঠ করেন, তবে কারও কারও নিকট এ বই নিছক সাহিত্যকর্ম বলে মনে হবে। লেখক সাহেব যেভাবে তার ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনার কথা প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে গেছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো। তিনি বলছেন—

‘আমরা পরিকল্পনা মাফিক অনেক দূর এগিয়ে গেছি। এখন আমাদের পক্ষে আর পেছনে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।’

নবম প্রটোকলে বলা হয়েছে-

‘এখন আমাদের সামনে আর কোনো বাধা নেই। বিশ্ব কর্মসূচি (নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার) পরিকল্পনায় আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। আদালত, প্ৰশাসন, আইনশাস্ত্র—সবকিছু আজ আমাদের দখলে। একসময় আমরা যাদের প্রজা ছিলাম, আজ তাদেরকেই প্রজারূপে কিনে নিয়েছি। নিঃসন্দেহে আমরা তাদের চেয়েও কঠোর শাসক।’

এবার অষ্টম প্রটোকলের দিকে লক্ষ করুন—

‘এই পরিকল্পনায় আমরা বিশ্বজুড়ে বহু অর্থনীতিবিদের জন্ম দেবো। কারণ, অর্থশাস্ত্রের চেয়ে বড়ো কোনো হাতিয়ার পৃথিবীতে নেই। আমরা চারদিকে ব্যাংকার, শিল্পপতি ও ধনকুবেরের মতো অসংখ্য ব্যক্তিত্বের জন্ম দেবো, যারা নিজেদের আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বরূপে গড়ে তুলবে। অবুঝ জ্যান্টাইলরা তাদের নিজেদের জীবনাদর্শ বলে মনে করবে, কিন্তু তাদের প্রত্যেকেই হবে আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার।’

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের যা পড়ানো হচ্ছে, তা তো তাদেরই চাপিয়ে দেওয়া সিলেবাস! বলশেভিক বিপ্লবকালীন পৃথিবী এমন এক যুগ পার করেছে, যখন অর্থনীতির ওপর লেখা প্রতি দশটি বইয়ে মধ্যে ৭/৮টি বই-ই ইহুদিরা লিখেছে।

আসলে তাদের লেখা বইগুলো পাঠ করতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু জ্যান্টাইল সমাজকে পঙ্গু করতে তারা যখন ইচ্ছাপূর্বক ভুলে ভরা শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়, তখন তার বিরুদ্ধে কথা বলতেই হয়। তারাই প্রথম ধর্মভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা করেছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাইবেল পাঠ বন্ধ করে দিয়েছে।

নবম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘খ্রিষ্টান পাদরিদের সঙ্গে আমরা সব সময় ভালো সম্পর্ক বজায় রেখেছি। একসময় আমরা তাদের অনেক তোষামোদ করেছি, যেন তাদের গভীরে প্রবেশ করে সব ধরনের নৈতিকতাবোধ ধ্বংস করে দিতে পারি। এখন আর তোষামোদের প্রয়োজন নেই। কারণ, তাদের মাঝে ধর্ম পালনের গুরুত্ব এমনিতেই কমে গেছে। ফলে পোপ ও পাদরিদের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করেছে।’

প্রথম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘অরাজকতা ও অস্থিতিশীলতা দিনে দিনে আমাদের আরও অপরাজেয় করে তুলবে। পরিচয় গোপন করে অদৃশ্য ছায়ার ন্যায় আমরা প্রতিটি রাষ্ট্রে অস্থিতিশীলতার ইন্ধন জোগাব। ফলে জ্যান্টাইলরা হাজার চেষ্টা করেও আমাদের সাথে পেরে উঠবে না।

দ্বিতীয় প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘প্রতিটি যুদ্ধে উভয়পক্ষই যেন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং আর্থিক দুর্যোগ যেন উভয়ের কপালেই নেমে আসে, তা আমরা নিশ্চিত করব। প্রেক্ষাপট এমনভাবে তৈরি করব, যেন যুদ্ধপরবর্তী সকল ক্ষমতা আমাদের হাতে চলে আসে।’

অন্যদের হেয় ও অপমান করতে তারা কতটা অভ্যস্ত, তা নিচের অনুচ্ছেদগুলোতে প্রকাশ পেয়েছে—

‘জ্যান্টাইল সরকারদের ব্যর্থতার ওপর আমাদের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করবে। এসব সংবাদ পাঠ করে সাধারণ জনগণ একসময় সরকারের ওপর বিরক্ত হয়ে উঠবে। আসলে একটি রাষ্ট্র চালাতে গিয়ে ছোটোখাটো ভুল সবাই করে। আমরা সরকারের ভুলগুলো এমনভাবে প্রচার করব, যেন তাদের ভালো কাজগুলো কারও নজরে না আসে।’

এবার পঞ্চম প্রটোকল হতে—

‘ইতোমধ্যেই আমরা জ্যান্টাইলদের রাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের রায় তা-ই হবে, যা আমরা বলব।’

চৌদ্দতম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘মিথ্যে, বানোয়াট ও অশ্লীল গল্প সাহিত্যের বীজ আমরা প্রতিটি দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছি এগুলোই আধুনিকতার অংশ। অতীত ইতিহাস পালটে তার স্থলে নতুন গল্প ঢুকিয়েছি এবং সাধারণ মানুষকে তা বিশ্বাস করিয়েছি।’

বারোতম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘প্রচারমাধ্যমের সহায়তায় পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে খবর সংগ্রহের বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীভূত করেছি। একটি শৃঙ্খলের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি দেশের গণমাধ্যমের ওপর আমরা অদৃশ্য আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’

সপ্তম প্রটোকলেও ঠিক একই কথা বলা হয়েছে—

‘প্রচারমাধ্যমের সহায়তায় আমরা জ্যান্টাইল সরকারদের হাত-পা বেঁধে ফেলব। তারা চাইলেও আমাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না। কারণ, আমরা চাইলে যেকোনো মুহূর্তে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জোয়ার বইয়ে দিতে পারব, যা তাদের ক্ষমতা থেকে উপড়ে ফেলবে।’

এবার বারোতম প্রটোকলের দিকে লক্ষ করুন-

‘আমাদের সব কূট-পরিকল্পনা দেখেও যখন তারা চুপচাপ বসে আছে এবং ক্ষমতার জন্য উলটো আমাদের কাছেই পরামর্শ প্রার্থনা করছে, তখন তাদের নির্বোধ ও গাধা বলব না কেন?’

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও বিজয় অর্জন প্রসঙ্গে নবম প্রটোকলে বেশ কিছু কৌশলের কথা বলা হয়েছে—

‘প্রথমদিকে জ্যান্টাইলদের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ করা বেশ কঠিন ছিল। তাদের মজবুত প্রাচীর আমাদের নিকট দুর্ভেদ্য ছিল। তবে গণতন্ত্রের বিষয়টি তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার পর সবকিছু যেন মুহূর্তেই পালটে গেল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শিক্ষা-সংস্কৃতির স্বাধীনতা, সম-ভোটাধিকার, সম-আইন—সবই হলো গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার মূলনীতি। এ বিষয়গুলো সমাজে স্থান পেলে আমাদের জন্য সবকিছু সহজ হয়ে ওঠে।’

আমেরিকাতে ইহুদি সন্তানদের জন্য বিশেষ সুরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। তারা যেন একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা পর্যন্ত জ্যান্টাইলদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে থাকে, সেজন্য তৈরি করা হয়েছে পৃথক শিক্ষাব্যবস্থা। যে স্কুলগুলোতে ইহুদিদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়, সেগুলোর ঠিকানা এতটাই গোপন রাখা হয়, শহরের বড়ো বড়ো রুই-কাতলারা পর্যন্ত তা জানতে পারে না। এমনকী গুরুতর চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও তাদের জ্যান্টাইল ডাক্তারদের কাছে যেতে দেওয়া হয় না; তাদের রয়েছে পৃথক চিকিৎসাব্যবস্থা।

জ্যান্টাইল যুবসমাজের নৈতিকতাবোধ ধ্বংস করতে ইতোমধ্যেই ইহুদিরা অশ্লীলতার অসংখ্য বীজ ছড়িয়ে দিয়েছে। যেমন : জ্যাজ সংগীতের আবিষ্কারক কারা? কারা থিয়েটার ও চলচ্চিত্রশিল্পে নগ্নতার সংযোজন করেছে? কারা পর্নোগ্রাফিকে বাণিজ্যিক শিল্পে রূপ দিয়েছে? কারা আমাদের যুবসমাজকে সামরিক বাহিনীতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে? কারা তাদের রোমাঞ্চকর জীবনের লোভ দেখিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়ে নিজেদের মুনাফার পকেট ভারী করছে? কারা আমাদের তরুণ-তরুণীদের পোশাক-আশাকে পরিবর্তন এনেছে এবং নগ্নতাকে সভ্য সংস্কৃতির অংশ বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে?

এ প্রসঙ্গে ইহুদিদের প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘জ্যান্টাইল যুবসমাজের বুদ্ধিবৃত্তি, নৈতিকতাবোধ ও স্বাধীন চিন্তাশক্তি ধ্বংস করতে আমরা ইতোমধ্যে তাদের ওপর এক অবাস্তব ও অযৌক্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে।’

যখন-তখন মুভি দেখা আজ মধ্যবিত্ত পরিবারের যেকোনো যুবকের নিকট আদর্শ বিনোদন হিসেবে বিবেচিত। একইভাবে ধনী পরিবারের যুবকদের নিকট অবাধ যৌনাচার আদর্শ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও স্বীকৃত।

এই নোংরা সংস্কৃতি কীভাবে আমাদের সমাজে স্থান পেল, সে সম্পর্কে থিয়েটার, চলচ্চিত্র ও সংগীতশিল্প সম্পর্কিত অধ্যায়গুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তবে এই অংশে খুব অল্প করে বলতে চাই—উদারপন্থি ও মুক্তচিন্তা নীতিকে কাজে লাগিয়ে ইহুদিরা বহু অশ্লীল সংস্কৃতি আমাদের সমাজে আমদানি করেছে। এর পেছনে বিনিয়োগ করেছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ব্যয়বহুল চিত্তবিনোদন, নেশাজাত দ্রব্য গ্রহণ, জুয়ার আসর, জ্যাজ সংগীত, লোক দেখানো ফ্যাশন, গহনা-অলংকার ইত্যাদি প্রতিটি বিষয়-ই আজ জ্যান্টাইলদের অভ্যস্ত করে তুলেছে। তাদের বাজিকরদের দৌরাত্ম্যের দরুন ধ্বংস হতে বসেছে বহু জনপ্রিয় ক্রীড়াশিল্প। প্রকৃতপক্ষে মানবজীবনের এমন কোনো শাখা- প্রশাখা নেই, যার ভেতর ইহুদিরা বিষ ঢুকিয়ে দেয়নি।

জ্যান্টাইলরা সাধারণত ষড়যন্ত্রসুলভ মানসিকতা নিয়ে জন্মায় না। সাধারণ মানুষ পরিকল্পনা করে কীভাবে একটি উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়, কিন্তু ইহুদিরা পরিকল্পনা করে কীভাবে চার-পাঁচটি উদ্দেশ্য একত্রে হাসিল করা যায়! কেবল একটি রজ্জু ধরে আমরা কখনো তাদের ষড়যন্ত্রের গুহায় প্রবেশ করতে পারব না। এতে ফিরে আসার পথটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলব। এজন্য প্রয়োজন পারিপার্শিক বিষয়গুলোর ওপর সুচতুর পর্যবেক্ষণ এবং ইতিহাসের প্রখর জ্ঞানার্জন। তবে এর জন্য প্রথমে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে ‘মানসিক অলসতা’ নামক বিষয়টি দূর করে ফেলতে হবে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে ইহুদিদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব

বহু পরিকল্পিত বিশ্ব কর্মসূচি (নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার) সফল করতে তারা যে বিষয়গুলো হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তা হলো—

ক. প্রতিটি দেশকে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা।

খ. পুঁজিবাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে শিল্পায়নের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।

গ. জ্যান্টাইলদের ওপর এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া, যা তাদের চিন্তা-চেতনা ও বুদ্ধিমত্তাকে ধ্বংস করে ফেলবে।

ঘ. বিভিন্ন সৌখিন ও বিনোদনধর্মী বিষয়ের প্রতি সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলা (যেমন : Jazz সংগীত, নেশা দ্রব্য), যা তাদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

ঙ. বিভাজনের বীজ ছড়িয়ে দিয়ে সমাজে অসংখ্য রাজনৈতিক বিপ্লবের জন্ম দেওয়া।

কীভাবে রাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিগণ (রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী) নির্বাচিত হবে, কীভাবে রাজতন্ত্র ভেঙে গণতন্ত্রের উত্থান হবে, কীভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হবে এবং কীভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে, তার একটিও প্রটোকলগুলোতে উপেক্ষিত হয়নি। তাদের প্রটোকলগুলো নিয়মিত পরিবর্তনে বিশ্বাসী। যেমন : কিছুদিন পরপর সাধারণ নির্বাচন, নতুন নতুন প্রতিনিধির ক্ষমতায়ন, নিয়মিত আইন ও সংবিধান পরিবর্তন করা ইত্যাদি। তারা অগোচরে জনসাধারণকে উসকে দেয়, যেন পরের মেয়াদে নতুন কোনো জনপ্রতিনিধিকে ক্ষমতায় আনা হয়।

প্রথম প্রটোকলটির দিকে লক্ষ করুন –

‘একটা সাধারণ ধারণা আমরা স্বাধীন দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। তা হলো—জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে তাদের মধ্য হতে একজন জনপ্রতিনিধি (সরকার) নির্বাচন করা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা চাইলে যখন-তখন এসব প্রতিনিধিদের পালটাতে পারি, ঠিক যেমন হাতমোজা পুরোনো হলে পরিবর্তন করে ফেলি। আমরাই এসব জনপ্রতিনিধিদের জন্ম দিই এবং আমরাই আবার তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিই।’

চাইলে একজন জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি দ্বারা অনেক কাজ করিয়ে নেওয়া সম্ভব। কারণ, তার প্রতি সাধারণ মানুষের পূর্ণ বিশ্বাস থাকে। আজ যে শাসনব্যবস্থা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে অনুসৃত হচ্ছে তা হলো গণতন্ত্র। একই সঙ্গে আরেকটি ব্যবস্থা মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তা হলো—সমাজতন্ত্র। এর আগে যে ব্যবস্থাটি বিশ্বজুড়ে ছিল, তা হলো রাজতন্ত্ৰ।

গণতন্ত্র বলে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার পুরো দেশের শাসনভার গ্রহণ করবে। তাই বলা হয়, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। তবে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিটি দেশকে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়, যার মধ্যে থাকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ধর্মঘট, অগ্নিকাণ্ড, সামরিক বিপ্লবসহ আরও অনেক কিছু। কীভাবে একটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্ম হবে, তা নিয়ে চতুর্থ প্রটোকলে আলোচনা করা হয়েছে—

‘বহু ধাপ পেরিয়ে একটি দেশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রূপ পায়। প্ৰথম ধাপে পুরো দেশে বর্বর যুগের ন্যায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছড়িয়ে পড়ে। আর মানুষ নির্বোধের মতো ডানপক্ষ কিংবা বামপক্ষ সমর্থন করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে। দ্বিতীয় ধাপে, অবৈধ স্বৈরশাসকের জন্ম হয়। যদিও স্বৈরশাসক বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না, কিন্তু তার প্রভাব চিরস্থায়ীভাবে থেকে যায়। এ সময় জনপ্রিয় কিছু নেতা-কর্মীর জন্ম হবে। পরে তাদের মধ্য থেকে এমন কাউকে ক্ষমতায় আনা হবে, যারা শুধু আমাদের পক্ষেই কাজ করবে। প্রয়োজনে আমরা তাকে সরিয়েও দিতে পারব। জ্যান্টাইলদের কেউ এই গোপন খেলাটি বুঝতে পারবে না। তারা শুধু জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা নিয়েই ব্যস্ত থাকবে।’

সরকারব্যবস্থায় ‘নিয়মিত পরিবর্তন’ বিষয়টি ইউরোপ-আমেরিকার জন্য নতুন কোনো বিষয় নয়। এমন কোনো সিনেটর নেই, যে এর সঙ্গে পরিচিত নয়। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে কেবল তখনই পরিবর্তন আসে, যখন তারা ইহুদি বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ওপর দ্রুত অর্থনৈতিক অবরোধ আসা শুরু করে। সকল বড়ো বড়ো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নেওয়া শুরু করে, যা দেশকে সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। দেশের মানুষ তার বিরুদ্ধে কেন আন্দোলন করছে, তার কিছুই তিনি বুঝতে পারেন না। তিনি তো দেশপ্রেম থেকেই সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন! অথচ গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই অন্য একটি দলের পক্ষে চলে গেছে। তারা চাইলে ইচ্ছেমতো সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো জনমত তৈরি করতে পারে। ফলে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা কখনো বন্ধ হয় না। চৌদ্দতম প্রটোকলে বলা আছে—

‘প্রশাসনে এত বেশি পরিবর্তন দেখে জ্যান্টাইলরা একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়বে, কিন্তু সরকারবিরোধী ধ্বংসাত্মক আন্দোলনে আমরা পুনরায় তাদের উৎসাহিত করব। সব শেষে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে তারা আমাদের যেকোনো শর্ত মেনে নিতে রাজি হবে।’

বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠায় তারা কতটা সফল, তা নবম প্রটোকলের একটি অনুচ্ছেদ থেকে বোঝা সম্ভব—

‘আজকের দিনে যদি কোনো রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, তবে তা কেবল ক্ষমতার স্বার্থেই। অথচ তাদের এই ক্ষমতা আমাদের হাতে বন্দি। তারা যা নিয়ে আন্দোলন করবে, তাও আমাদের ইশারায় পরিচালিত হয়। তারা আমাদের বিরুদ্ধে কাদের নিয়ে প্রতিরোধ গড়বে? তার আশেপাশে যে পার্লামেন্ট সদস্যরা আছে, তারা সবাই তো লোভি প্রকৃতির। তাদের কিনে নেওয়া আমাদের জন্য কোনো ঘটনাই না!’

তারপর আরও বলা হয়েছে—

‘বস্তুত, পৃথিবীর বহু রাষ্ট্রপ্রধানকে আমরা ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তবে এখনও আরও অনেককে সরিয়ে দেওয়ার বাকি আছে।’

এসব আন্দোলনের পেছনে অর্থনৈতিক সহায়তা কোথা থেকে আসবে, সে প্রসঙ্গে নবম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক শত্রুতার দরুন রাষ্ট্রের পুরো ক্ষমতা আমাদের হাতে চলে আসে। ফলে আমরাই তাদের বিবাদের সমাধান করি। এই শত্রুতার মধ্যে আমরা সারাক্ষণ ঘি ঢেলে যাব। এর জন্য যে অর্থ দরকার, তা আমরাই সরবরাহ করব।’

নির্বাচনী প্রচারণার সময় এত অর্থ কোথা হতে আসে—তা নিয়ে অনেক তদন্ত হয়েছে, তবে এর উৎস কখনো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ প্রশাসন আজ ইহুদি প্রশাসনে রূপ নিয়েছে।

দ্বিতীয় প্রটোকলে বলা হয়েছে—

‘জনগণের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিকে আমরা শাসক হিসেবে নির্বাচিত করব, তাকে কখনোই সাধারণ জনগণের প্রতি সেবাসীন হতে দেবো না। আমাদের একদল প্রতিনিধি তার উপদেষ্টা হিসেবে মন্ত্রণালয়ে কাজ করবে, যারা ছোটোকাল থেকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বড়ো হয়েছে। এই প্রতিনিধিরা খুব ভালো করেই জানে, কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হয় এবং কী করে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করতে হয়।’

দশম প্রটোকলে বলা হয়েছে—

কীভাবে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের অভ্যুত্থান হবে এবং স্বৈরশাসন থেকে নির্বাচনভিত্তিক শাসনব্যবস্থার জন্ম হবে।’

১৯১৮ সালে বলশেভিক বিপ্লবে সোভিয়েত বাহিনী সফল হওয়ার পর রাশিয়ার ইহুদি ছাত্র ও সৈনিকরা রাস্তায় নেমে গাইতে শুরু করে—

‘We have given you a God;
Now we will give you a king.’

গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচন প্রসঙ্গে ১০ম প্রটোকলের একটি অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে—

‘গণতন্ত্রের যুগ শুরু হলে জনগণ তাদের মধ্য হতে রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচনের ধারায় চলে যাবে। ক্ষমতায় যে-ই আসুক না কেন, আমরা ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পেছনে সমান অর্থ খরচ করব। ঠিক যেভাবে মাটির নিচে মাইন পোঁতা হয়, গণতান্ত্রিক উপায়ে রাষ্ট্রনায়ক নির্বাচন করে জ্যান্টাইলরা সমাজে অনুরূপ মাইন পুঁতে রাখবে।’

ক্ষমতায় যে-ই আসুক না কেন, তার বিপরীতে কিছু রাজনৈতিক দল অবশ্যই থাকবে। তারা বিক্ষোভ, মিছিল ও আন্দোলন নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকবে। শাসকপক্ষ যদি তাদের কঠোর হস্তে দমন করতে না পারে, তবে নিশ্চিত সরকারের পতন ঘটবে। আবার তা কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বর্বর হতে হবে। সুতরাং দিন যত যাবে, বিস্ফোরক মাইনটি আরও শক্তিশালী হবে।

‘আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়াকে নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নেব। প্রার্থী হিসেবে তাদেরই অগ্রাধিকার দেবো, যাদের অতীত ইতিহাস কালো অধ্যায়ে পরিপূর্ণ; অনেকটা পানামা কলঙ্কের মতো। কেউ তাদের অতীত ইতিহাস ফাঁস করে দিতে পারে—ক্ষমতায় আসার পর এমন একটি ভয়ে তারা সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকবে। যার দরুন তারা না চাইলেও আমাদের বিশ্বস্ত কর্মীতে পরিণত হবে। এবার তাদের কাজে লাগিয়ে প্রশাসনিক বিভিন্ন সুবিধা হাতিয়ে নেওয়া কি আমাদের জন্য কঠিন কোনো কাজ হবে?’

এখানে ‘পানামা’ শব্দটি উল্লেখের কারণ হচ্ছে—পানামা খাল খনন করা নিয়ে ফ্রান্সের রাজনৈতিক গণ্ডিতে প্রচুর দুর্নীতিবাজের জন্ম হয়। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসেবে আজ পর্যন্ত যারা নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সকলের ইতিহাসেই কলঙ্কের দাগ রয়েছে। এমন নয় যে, ক্ষমতার গদিতে যারা বসে আছে তাদের কলঙ্কের কথা কেউ জানে না। নির্বাচনের পূর্বে গণমাধ্যমের সহায়তায় কাঙ্ক্ষিত প্রার্থীর কলঙ্কময় ইতিহাস ঢেকে রাখা হয়। তবে হ্যাঁ, যে পক্ষটিকে তারা ক্ষমতায় দেখতে চায় না, ইহুদিরা চাইলেই তার কলঙ্ক ফাঁস করে দিতে পারে। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ ইহুদিদের সেই গোপন সংগঠনটির কাছে চিরকালের মতো আটকা পড়ে। যদি জনপ্রতিনিধিরা কখনো অবাধ্য হয়, তবে তাদের অতীত ফাঁস করে জনমনে আগুন ছড়িয়ে দেওয়া কঠিন কোনো ব্যাপার নয়।

আজকাল রাজনৈতিক পাড়ায় ‘ভয়’ বিষয়টি যেন সবাইকে পেয়ে বসেছে। শুধু আমেরিকা নয়; জার্মানি, আর্মেনিয়া, রাশিয়া বা হিন্দুস্তান এমন কোনো রাষ্ট্র নেই যারা ইহুদি বা ইজরাইলের বিরুদ্ধে সামান্যতম কথা বলার সাহস করতে পারে। হয়তো লিগ অব নেশনস-এর প্রস্তাবিত কোনো ইস্যুতে তারা ইজরাইলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, কিন্তু তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করার সাহস কেউ করতে পারে না; তার ওপর অ্যান্টি-সেমিটিজমের ভূত তো আছেই! ইহুদিদের মধ্যে যারা গরিব, তারা আমাদের ধনীদের চেয়েও অধিক সম্পদশালী। সংখ্যালঘু হওয়ার পরও তারা আজ অধিক ক্ষমতাধর।

বিশ্ব শাসনে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হলে এই ভয়টি জিইয়ে রাখা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারা যেভাবে এই ভয়ের জন্ম দিয়েছে এবং আজ পর্যন্ত জিইয়ে রেখেছে, তার জন্য সাধুবাদ দেওয়া উচিত। কারণ, এটাও একধরনের শিল্প। তাদের সমস্ত পরিকল্পনার মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকে। আর যখনই এই ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়ে, তখনই তাদের নগ্ন রূপ বেরিয়ে আসে।

সত্য বলতে, ইহুদিরা কোনো অতিমানবীয় প্রাণী নয়। তারাও আমাদের মতো রক্ত- মাংসে গড়া জীব। হতে পারে তারা বুদ্ধিমান ও চৌকস, কিন্তু তাতে এমন কিছু ঘটে যায়নি যে, তাদের কুর্নিশ করতে হবে। পৃথিবীতে আমাদের সবার সমানভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। ইহুদিরা যতই চালাক হোক না কেন, এমন কোনো পর্দা নেই যা তাদের কুৎসিত ইতিহাস ঢেকে রাখতে পারে। আর এখানেই তাদের দুর্বলতা। বিশ্ববাসী যদি ইহুদিদের এই দুর্বলতার সন্ধান জানত, তবে ভয় নামক যে পর্দা দিয়ে তারা আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হতো।

ভূ-সম্পদ আক্রমণে ইহুদিদের পরিকল্পনা

আবাসন শিল্পে ইহুদি জমিদারদের ফটকা বাণিজ্যের দরুন বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের অনেক শহরের চেহারা রাতারাতি বদলে যায়। প্রতিবার জমি বিক্রির সময় পূর্ব মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য নির্ধারণ করা আজ যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৯১৮-১৯ সালে কমনওয়েলথ কমিটি ভূমি সংকট নিরসনে কিছু আইন প্রণয়ন করে; যদিও তা বহু আগেই করা উচিত ছিল। কমিটির সভাপতি ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে বিশেষ কিছু পরিবারের পরিচয় খুঁজে পায়, যাদের একমাত্র পেশা ছিল ভূমি ব্যাবসা। তারা একই জমি পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মাঝে বারবার ক্রয়-বিক্রয় করত, যেন বাজারে এর চাহিদা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। সবশেষে ভূমির বিক্রয়মূল্য কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছালে ইহুদিরা তা জ্যান্টাইলদের নিকট বিক্রি করত।

একসময় ইউরোপ-আমেরিকার এমন অনেক জায়গা ছিল, যার নাম-গন্ধ পর্যন্ত সাধারণ মানুষ শোনেনি। তারা সেসব জমি খুব পরিকল্পিতভাবে প্রকৃত মালিকদের থেকে কিনে নিত। তারা যে মূল্যে জমিগুলো ক্রয়ের প্রস্তাব দিত, তা শুনে জমির মালিকরা ভাবত—এমন জমি তো আর এখানে এসে কেউ ক্রয় করবে না! এ অবস্থায় যে এতটা মূল্য পাচ্ছি, তা-ই বা কম কীসে! এই ভেবে অনেকে তাদের জমিগুলো বিক্রি করত। এরপর তারা সেসব জমি উন্নয়নে কিছু কাজ করত। যেমন : স্কুল, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট নির্মাণ ইত্যাদি।

এরপর বড়ো বড়ো শহরগুলোতে শুরু হতো প্রচার ও বিজ্ঞাপনের কাজ। সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তাদের কিছু সদস্য ছদ্মবেশে এই জমিগুলো ক্রয়ে আগ্রহ দেখাত। এ নিয়ে তাদের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত কলাম প্রকাশ করত, যেন পুরো শহরকে এই জমিগুলোর আলোচনায় সরগম রাখা যায়। চায়ের দোকান, মদের দোকান এবং বাজারের আলোচনা মঞ্চ প্রতিটি স্থানেই দক্ষ অভিনেতার ন্যায় তারা এই আলোচনা চালিয়ে যেত। তারা নিজ থেকে এই আলোচনায় জ্যান্টাইলদের ডাকত না, কিন্তু উচ্চস্বরে যেভাবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করত, তা সাধারণ মানুষের কৌতূহল অনেকগুণ বাড়িয়ে দিত। না চাইলেও তাদের অবচেতন মনে এই গুঞ্জন ঢুকে যেত। মানুষ ভাবত, শহরের বাইরে এখনও এত ভালো জমি পাওয়া যায়! তাহলে সব জমি শেষ হওয়ার আগে নিজেদের জন্য কিছু কিনে রাখছি না কেন?

একসময় তাদের এই কূটকৌশলে বিভ্রান্ত হয়ে দেশি-বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী এই জমিগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখাত এবং ক্রয় করত; তবে তা অতি উচ্চমূল্যে, যেমনটা ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক এবং ফ্লোরিডার জমিগুলোর বেলায় হয়। মাঝ থেকে ইহুদিরা হাতিয়ে নিত বিশাল অঙ্কের মুনাফা, যার একটি কমিশন চলে যেত তাদের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কেননা, তারা বিভিন্ন সময়ে অর্থ দিয়ে সাহায্য করত।

মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সাধ্যের মধ্যে একটি সুন্দর বাসা খুঁজে পেতে যে কতটা হিমশিম খায়, তা কারও অজানা নয়। আফসোসের ব্যাপার হচ্ছে—জমি বাণিজ্যের এই শয়তানি সংস্কৃতি আজ জ্যান্টাইলদের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। যদি কমিটির সভাপতি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই অনুসন্ধান না চালাতেন, তাহলে এই তথ্য কখনোই জনসম্মুখে উন্মোচিত হতো না। কারণ, বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোকে ইহুদি জাতিগোষ্ঠী একাই নিয়ন্ত্ৰণ করছে। গোয়েন্দা বাহিনীর ভেতরে তারা গড়ে তুলেছে ছোটো ছোটো আরও অনেক দল, যারা বিখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থার হাত-পা-মাথা হয়ে কাজ করছে। ফলে পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তথ্যই প্রকাশ করুক না কেন, তা গোয়েন্দাদের সম্মতি ছাড়া সম্ভব নয়।

উচ্চমূল্যে ভূমি বিক্রি করা ছাড়াও ইহুদিদের এসব জমি ক্রয়ের আরও কিছু উদ্দেশ্য ছিল। যেমন : জ্যান্টাইল কৃষকদের নিজেদের জমি ব্যবহার করতে দেওয়া। বিষয়টি অনেকটা বর্গা চাষের মতো। এর ফলে উৎপাদিত ফসলের একটি বড়ো অংশ তাদের ভান্ডারে চলে যেত। তা ছাড়া অধিকাংশ জমি যদি তাদের দখলে থাকে, তবে জ্যান্টাইলদের পক্ষে কখনো প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা কৃষক হয়ে মাঠে কাজ করবে। তা ছাড়া যেসব জমিতে সোনা, রুপা, তামা, নিকেল ইত্যাদি মজুত আছে, সেসব জমির প্রতি ইহুদিদের রয়েছে ভিন্ন মাত্রার মোহ। যেমন : আলাস্কা, ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের জমিগুলো।

যখন ইহুদিরা কোনো দেশ দখলের পরিকল্পনা করে, তখন প্রথমে সে দেশের উৎপাদনশীল জমিগুলো দখলের চেষ্টা চালায়। এর মাধ্যমে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য এবং শিল্পকাজে ব্যবহৃত কাচামালের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। ফলে ধীরে ধীরে শিল্পবাজার তাদের দখলে আসে। একই পথে পুঁজিবাজারও হাঁটতে শুরু করে। এরপর তাদের স্বেচ্ছাচারিতায় শুরু হয় পুঁজিবাজার ও শ্রমবাজারের মধ্যে দ্বন্দ্ব, যার অবসান কখনোই হয় না।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে আমেরিকা প্রচুর পশমি পণ্য জার্মানি থেকে আমদানি করত। যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগে তারা সকল অর্ডার তুলে নেয়। এতে জার্মান ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়ে। রাতারাতি সেখানে পশমি পণ্যের দাম কমা শুরু করে। ওঁত পেতে থাকা জার্মান ইহুদিরা অতি স্বল্পমূল্যে সেগুলো কিনে নেয়। যুদ্ধ শেষ হলে তারা আবার সেই পণ্য আমেরিকান বাজারে উচ্চমূল্যে রপ্তানি করে।

আমেরিকান বাজারে যদি কোনো বিপর্যয় নেমে আসে, তবে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে ইহুদিদের প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো সামনে চলে আসে। বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে ইতালিয়ান, পোলিশ, ব্রিটিশ বা জার্মান নাগরিকদের অভিযুক্ত করে, কিন্তু কখনোই নিজেদের নাম উল্লেখ করে না। ইদানীং তারা ভূমি ব্যাবসার এজেন্ট হিসেবে জ্যান্টাইলদের ব্যবহার করছে। ব্যাংকিং জগতেও একই দশা। ফলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের শনাক্ত করা জ্যান্টাইলদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

পূর্বের একটি প্রটোকলে বলা হয়েছে—বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে ইহুদিরা কৃত্রিম চাহিদার জন্ম দেয়। প্রথমত, বর্গা চাষের ফলে উৎপাদিত পণ্যের বিশাল মালিকানা তাদের দখলে আসে। দ্বিতীয়ত, অবশিষ্ট পণ্য কৃষকদের থেকে কৌশলে কিনে নেয়। এরপর ইহুদিরা হয়ে যায় সকল পণ্যের মধ্যস্বত্বভোগী। তারা যে মূল্য নির্ধারণ করে, তা- ই হয়ে যায় বাজারের বিক্রয় মূল্য; যা পরিশোধে ভোক্তাসমাজ বাধ্য হয়। মূলত ব্যাপারটা এমন—ভোক্তাসমাজ পণ্য ক্রয় করে না; বরং সেগুলোকে জিম্মি থেকে মুক্ত করে মাত্র।

ফটকাবাজির আরও একটি উদাহরণ—আমেরিকার তুলার বাজারকে ইহুদিদের নিজের আয়ত্তে নেওয়া। ব্যাংক ঋণ ছিল তাদের এই কাজের মোক্ষম হাতিয়ার। প্রথমে যতটা সম্ভব তুলা জমির উপযোগিতা কমানো হতো। কৃষকরা ঋণের জন্য ব্যাংকে এলে তাদের চাষের জমি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হতো। নির্ধারিত একরের বেশি জমিতে চাষ করলে ব্যাংক তাদের ঋণ দিত না। ফলে চাহিদা থাকার পরও তুলার উৎপাদন কমে যেত।

এতে না শিল্প-মালিকরা প্রয়োজনীয় পরিমাণ তুলা পেত, আর না কৃষকরা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারত। অবশেষে ব্যাংক এসে জমিগুলো দখল করে কৃষকদের ভিখারি বানিয়ে দিত। ফলে জমি ও বাজার দুটোই তাদের হতো। তুলা শিল্পে শয়তানি শক্তির আগ্রাসন নিয়ে একটি গুঞ্জন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে আমেরিকার আকাশে-বাতাসে উড়ছিল। কিন্তু জ্যান্টাইলরা এর প্রকৃত রূপ তখনই বুঝতে পারে, যখন আর করার কিছু ছিল না।

ভূমি নিয়ে তাদের প্রটোকলগুলোতে তেমন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। যা আলোচনা হয়েছে, তা কেবল ষষ্ঠ প্রটোকলে। যেমন—

‘বাজারের সব সম্পদ নিজেদের দখলে নিয়ে আমরা একচেটিয়া আধিপত্যের জন্ম দেবো। জ্যান্টাইল রাষ্ট্রগুলো যতই সম্পদশালী হোক না কেন, একসময় তাদেরকে আমাদের সম্পদের ওপরই নির্ভর করতেই হবে। এই নির্ভশীলতা তাদের ঋণের বেড়াজালে আটকে ফেলবে, যা তাদের ওপর জাতীয় দায়রূপে চেপে বসবে। তাদের এই দুর্বলতাকে ব্যবহার করে আমরা আন্তর্জাতিক স্বৈরশাসনের জন্ম দেবো। তখন কেবল আমরাই এই বিশ্ব মানবতাকে মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারব। আমরা কেবল তাদেরই অনুগ্রহ দেখাব, যারা আমাদের সকল অনুশাসন মাথা পেতে নেবে।

দাম্ভিকতা জ্যান্টাইল রাজনীতিবিদদের চরিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও যেহেতু তারা বিশাল ভূ-সম্পদের মালিক এবং স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করতে পারছে, সেহেতু কোনো একদিন তারা আমাদের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই যেকোনো মূল্যেই হোক তাদের সব জমি দখল করতে হবে।

এ কাজে সবচেয়ে কার্যকর উপায়—কৃষকদের বন্ধকি ঋণে আটকে ফেলা। আমরা তাদের ঋণ গ্রহণে উৎসাহিত করব। ধীরে ধীরে ঋণের সুদ কৃষকদের ওপর চেপে বসবে। একসময় জমির মালিক হওয়ার পরও তারা আমাদের অধীনস্থ হবে। এই আনুগত্য তাদের সকল অহংকার ও দাম্ভিকতাকে ধ্বংস করে দেবে।

শিল্প-অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে জ্যান্টাইলদের উৎসাহিত করব, যেন তারা আমাদের নিজেদের অংশ বলে মনে করে। কিন্তু এই উৎসাহ যেন তাদের কোনো উপকারে না আসে, সে ব্যবস্থাও করে রাখব। যদি কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই আমরা জ্যান্টাইলদের ঋণ দেওয়া শুরু করি, তবে তাদের সম্পদের প্রাচুর্যতা অনেক বেড়ে যাবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় তারা ঋণের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসবে এবং সব জমি মুক্ত করবে। এমনটা আমরা কখনো হতে দেবো না। ফটকা পরিকল্পনার মাধ্যমে জ্যান্টাইলদের মূলধনশূন্য করব। একসময় তারা সর্বহারা মানুষের মতো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এবং বাঁচার জন্য আমাদের পায়ে এসে মাথা ঠুকবে।

আমরা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে জড়িয়ে দেবো এবং একই সময় বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেবো। আমরা বলব—কৃষি উৎপাদন কম হওয়ার দরুন এ বছর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সু-কৌশলে তাদের মাঝে অরাজকতা ছড়িয়ে দেবো এবং আত্মতৃপ্তির উপায় হিসেবে মদ্যপানে আসক্ত করে তুলব। এভাবে ধীরে ধীরে তারা জ্ঞানশূন্য জাতিতে পরিণত হবে।

মানুষ আমাদের সূক্ষ্ম পরিকল্পনাগুলো কখনোই বুঝতে পারবে না। আমরা লোক দেখানো সমাজসেবার মুখোশ পরে বলব—জনসাধারণের মঙ্গল করাই আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য। কিন্তু এই উদ্দেশ্য দিয়ে আমরা কেবল নিজেদেরই উপকার করব, তাদের নয়।’

এবার আরও দুটি প্রটোকল থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করছি, যা এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ—

‘যতদি জ্যান্টাইলরা আমাদের অর্থ ও ক্ষমতার মাঝে নিজেদের আশ্রয় খুঁজে না নেবে, ততদিন পর্যন্ত ক্ষুধা, দরিদ্রতা, দুর্ভিক্ষ, মতবিরোধ, পারস্পরিক শত্রুতা ইত্যাদিতে আবদ্ধ করে রাখব। (দশম প্রটোকল)

একসময় তারা বাধ্য হয়ে আন্তর্জাতিক সকল ক্ষমতা আমাদের হাতে তুলে দেবে, আর তখনই আমরা নিজেদের বিশ্ব অধিপতিরূপে প্রতিষ্ঠিত করব। আমরা তাদের ওপর এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেবো, যা তাদের নৈতিক চেতনাকে পঙ্গু করে দেবে। সেইসঙ্গে তাদের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ধ্বংস করে দেবে।’ (পঞ্চম প্রটোকল)

প্রটোকলগুলো যারা তৈরি করেছে, তারা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক ও সম্পদশালী ইহুদি। তারা কী করতে যাচ্ছে এবং কীভাবে করবে, সে বিষয়ে খুব ভালো করে জানে। তারা জানে—যতদিন আকাশে সূর্য উঠবে এবং মৌসুমি বায়ু ও পানির ব্যবস্থা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত কৃষকসমাজ অপরাজেয় শক্তি হয়ে থাকবে। কারণ, খাদ্যের অভাবই পৃথিবীর প্রকৃত অভাব। যার খাদ্য উৎপাদনের ক্ষমতা আছে, সে অন্য কোনো দিকে না তাকিয়ে অতি আয়েশে নিজের পুরোটা জীবন পার করে দিতে পারে। তাই এমন কিছু করা উচিত, যা দ্বারা এই শান্তিপ্রিয় মানুষদের অশান্ত করে তোলা যায়।

তারা নিজেদের পরিকল্পনায় কতটা সফল, তা চারদিকে চোখ বোলালেই উপলব্ধি করা সম্ভব। আগেই বলা হয়েছে—কৃষি কাজে ইহুদিরা একদমই পারদর্শী ছিল না, কিন্তু ভিন্নধর্মী পণ্য তৈরিতে তারা ছিল ওস্তাদ। রঙিন-কারুকাজ সংবলিত ফুলের টব, পানির পাত্র, টেবিল-চেয়ার ইত্যাদি প্রথম তারাই বাজারে নিয়ে আসে, যা উচ্চমূল্যে বিক্রি করত।

একটা সময় ছিল, যখন এসব পণ্য ক্রয়ে মানুষ কোনো আগ্রহ দেখাত না। তারা বিশ্বাস করত, অর্থ অপচয় দরিদ্রতা ডেকে আনে। ফলে ইহুদিরা বহু বছর এসব পণ্য নিয়ে অপেক্ষা করে। একজন-দুইজন করতে করতে বাজারে একসময় ক্রেতা সংখ্যা বাড়তে থাকে। নতুন নতুন নকশাসংবলিত পণ্য-সামগ্রীকে তারা ‘স্টাইল’ ও ‘ফ্যাশন’ নামে পরিচিত করে তোলে। মানুষের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়—স্টাইল ও ফ্যাশন হলো আভিজাত্যের অংশ।

একসময় জ্যান্টাইল কৃষকরা দেখল, সৌখিন পণ্যের এই বাণিজ্য আসলেই অনেক লাভজনক। ফসল উৎপাদন করতে অনেক সময় লাগে। সাথে পরিশ্রমও বেশি। তা ছাড়া ফসল একবার নষ্ট হলে সব পরিশ্রম পণ্ড হয়ে যায়। ফলে তারাও এ জাতীয় পণ্য তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়ল। আর এভাবেই আমরা জাতি হিসেবে উৎপাদনবিমুখ হয়ে পড়লাম। ধীরে ধীরে আমাদের মধ্য থেকে অনেকেই সৌখিন শিল্পে দক্ষ হয়ে ওঠে এবং সমাজের বাহবা পেতে থাকে। কিন্তু আমরা বুঝতেই পারলাম না, যা করছি তা এককথায়—সময় ও পরিশ্রমের অপচয়।

এ প্রসঙ্গে ষষ্ঠ প্রটোকলে উল্লেখ আছে-

‘জ্যান্টাইলদের শিল্পগুলো ধ্বংস করতে তাদের সৌখিন পণ্যের প্রতি আগ্রহী করে তুলব, যা তাদের চাহিদা ও রুচিবোধের ধারণা একেবারে পালটে দেবে। এসব চকচকে পণ্য-সামগ্রী ক্রয়ে আমরা তাদের উৎসাহিত করব।’

অনেক পিতা-মাতা, সুশীল সমাজ ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম, তরুণ সমাজকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। অনেক জ্ঞানী মানুষ তাদের পরামর্শ দিয়েছে—’বিলাসিতা পরিত্যাগ করে সম্পদকে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করো।’ অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছে—’অপ্রয়োজনীয় শিল্পের পিছে না ছুটে এমন সব শিল্পের পেছনে ছোটো, যা দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করবে।’ অনেক প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান পরামর্শ দিয়েছে—’সৌখিন পণ্য তৈরি না করে মাঠে গিয়ে ফসল উৎপাদন করো, যেন ক্ষুধার্ত থাকতে না হয়।’ এসব সতর্কবাণীর উদ্দেশ্য হলো—আমাদের যুবসমাজ যেন সময় ও শ্রম ভুল পথে নষ্ট না করে।

আমরা সাধারণ মানুষরাই-বা কম কীসে! অপ্রয়োজনীয় সৌখিন পণ্যের চাহিদা তো আমরাই বাড়িয়ে দিয়েছি। একই ধরনের পণ্য ক্রয় করতে করতে ক্রেতারা যখন ক্লান্ত হয়ে ওঠে, তখন তারা ভিন্নধর্মী পণ্যের অনুসন্ধান করে। কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এসব সৌখিন পণ্য ব্যবহারের দরুন ইহুদিরা কি আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

লক্ষ করে দেখবেন, তারা খুব দামি চকচকে কাপড় পরে আপনার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এই জামাগুলো সত্যই খুব দামি এবং কাপড়গুলোও উন্নতমানের। দেখবেন, ইহুদি রমণীরা বড়ো বড়ো হিরার গহনা পরে হেঁটে যাচ্ছে, যার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই। মূলত তারা কখনো নিজেদের অসাধু আবিষ্কারের শিকার হবে না। কারণ, তাদের হারানোর ভয় নেই। তারা এসেছে শুধু আমাদের ধ্বংস করতে। তাই ক্ষতি হলে শুধু আমাদেরই হবে, তাদের নয়।

আজ আমাদের মনোবৃত্তি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, পালা বদলের সাথে সাথে নিজেদের মাঝে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতেই হবে, রুচিবোধে পরিবর্তন আনতে হবে এবং বিভিন্ন স্টাইল ও ফ্যাশনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। একসময় আমরা দরিদ্রতার ভয়ে সামান্য অর্থ অপচয় করতেও ভয় পেতাম। আর এখন উপার্জনের একটি অংশ আলাদা করে রাখি, যেন পরবর্তী বছর নতুন কিছু সৌখিন পণ্য ক্রয় করতে পারি। একটি গোষ্ঠী আছে, যারা বহু আগ থেকেই নির্ধারণ করে রাখে আগামী বছর এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে বাজারে নতুন কী কী পণ্য নিয়ে আসা হবে। আমাদের বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও দূরদর্শী মনোভাবকে ধ্বংস করে দিয়ে ইহুদিরা গড়ে তুলেছে মুনাফার পাহাড়। মূলত আমরা নিজেরাই তাদের জালে ধরা দিয়েছি।

এবার, প্রথম প্রটোকলের দিকে লক্ষ করুন-

‘আমরা জ্যান্টাইলদের কখনো সৌখিন পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করব না, কিন্তু তারা এতটাই বোকা যে, নিজ থেকেই এই জালে জড়িয়ে পড়বে।’

আমাদের মানসিক বিকলাঙ্গতার দরুন ‘কৃষক’ পেশাটি আজ অনেকের নিকট ঘৃণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবস্থা এমন রূপ নিয়েছে, কৃষকরাই আজ নিজেদের ঘৃণা করা শুরু করেছে। তারা চায় না তাদের সন্তানরা এই পেশায় আসুক। সন্তানরা যেন অন্য কিছুর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে—এটাই তাদের একমাত্র কামনা। অথচ কৃষি কাজ পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশাগুলোর মধ্যে একটি, যা আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান জুগিয়েছে।

এমন একটি পেশাকে ঘৃণার চোখে দেখা এবং কৃষকদের সঙ্গে অদ্ভূতের ন্যায় আচরণ করার দরুন সমাজে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, তা সামান্য হলেও উপলব্ধি করতে পারছি। খাদ্য ঘাটতি ও বেকারত্ব যে পৃথিবীর প্রকটতম দুটি সমস্যা, তা আর দলিলসহকারে উপস্থাপনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই দুটি সমস্যার উপযুক্ত সমাধান যা হতে পারত, তা আমরা ঘৃণার চোখে এড়িয়ে চলছি। মানুষ আজ সে পথেই হাঁটছে, যে পথে দ্রুত সম্পদ উপার্জন করা যায়; তা মদ-সিগারেট বা সৌখিন পণ্য সামগ্রীর মাধ্যমে হলেও। আসলে মহাদুর্ভিক্ষে পতিত হওয়ার আগ পর্যন্ত মানবসমাজ উপলব্ধি করতে পারবে না—তারা জ্ঞান ও মানসিকতাকে কতটা ভুল পথে পরিচালিত করেছে।

*

২৫. আমাদের শহরগুলোতে প্রায়ই বড়ো বড়ো বস্তি দেখা যায়, যেখান প্রচুর মানুষ একত্রে গাদাগাদি করে বসবাস করে। ফরাসি বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ইহুদিরা এ রকম একটি সমাজব্যবস্থায় বসবাস করত। তবে ঘেটো শব্দের আক্ষরিক অর্থ বস্তি নয়। ইহুদিরা নিজেদের প্রয়োজনে এরূপ সমাজব্যবস্থার উদ্ভব করেছিল, যেন নিজেদের মাঝে সম্পর্কের দৃঢ়তা অটুট রাখতে পারে। ধনি-গরিব সকল শ্রেণির ইহুদিরা একত্রে এখানে বসবাস করত।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *