আত্মহনন কোরো না হে প্রাণ
জগৎসংসারে এমন কোনো মানুষ নেই যার দুঃখ নেই। ফ্রাস্টেশন চাড়া কোনো মানুষ হয় না। যন্ত্রণাহীন জীবন মানুষের নয়, সেটা জড় পদার্থের–এই সামান্য সত্যটুকু যদি সবাই উপলব্ধি করত, তাহলে তার অর্ধেক হতাশা কমে যেত। আমরা যার হাসি দেখে। ভাবি সে সুখী, আসলে সে নিরন্তর সুখী নয়। যার অর্থ দেখে ভাবি, সে জগতের শ্রেষ্ঠ, আসলে সে কারও কারও কাছে তুচ্ছ! যার ক্ষমতা ও খ্যাতি আপনাকে বিমুগ্ধ করছে, সে হয়তো দহনে পুড়ছে। মানবজীবন এমনই! এই সত্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি। চিরসুখী করে মানুষকে তৈরি করা হয় না। এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ (Naturally Forbidden)
সম্প্রতি দেশে তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সম্ভাবনাময়ী তরুণ-তরুণীরা আত্মহত্যা করছে। এই খবরগুলো খুবই বেদনাদায়ক। খুবই কষ্টের। আত্মহত্যা হলো হতাশা-নিরাশার চূড়ান্ত পর্যায়। সে পথায়ে নিজেকে যেতে দেওয়া যায় না। নিজেকে ধ্বংস করার এই ইচ্ছা জাগার সঙ্গে সঙ্গেই সেটাকে বিনাশ করতে হয়।
হতাশা হলো বিনাশী। এটা আমাদের আঁকড়ে ধরবেই। কিন্তু নহ আমাদের ভাবতে হবে, এই আমিই জগতে অসুখী নই। সানার চেয়ে বহু দুঃখী মানুষ বেঁচে আছে। হতাশা বাসা বাঁধলেই মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় দিতে হবে। গান শুনতে হবে। বই পড়তে হবে। সিনেমা দেখতে হবে। প্রার্থনা করাতে হবে। বেড়াতে যেতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। জগতের একেকজন মানুষ একেকভাবে হতাশাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আজ কেউ যত হতাশ, কাল সকালে তত নয়
এই জগতে দুঃখ ছিল না কার? সম্রাট, সম্রাজ্ঞী, বাদশাহ ফকির কেউই দুঃখহীন নয়। ভারতবর্ষের এক শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন শাহজাহান। তার চার পুত্র তাঁর জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিলেন। এক পুত্র অন্য পুত্রের প্রাণ নিয়েছেন। সম্রাটপুত্র আওরঙ্গজেব সম্রাটকে কারাবন্দী করেন। আট বছর ধরে বন্দী ছিলেন সম্রাট। আওরঙ্গজেব তার বড় ভাই দারাশিকোর মস্তক ছিন্ন করে বাবার কাছে পাঠিয়েছিলেন। ক্ষমতাধর সে সম্রাটের মৃত্যু হয়েছিল পুত্ররচিত কারাগারে! দুঃখ নেই কার, বলুন?
যে আমেরিকায় আসার জন্য দরিদ্র দেশের মানুষের কত চেষ্টা, সে আমেরিকায় বহু মানুষ ঘরহীন। তাদের খাবারের টাকা নেই। তারা রাস্তায় ঘুমায়। আমি যখন রেলস্টেশনে যাই, এ দেশের কিছু গরিব মানুষ আমার কাছে টাকা চাইতে আসে। বড় অসহায় লাগে তাদের জন্য। ভাবি, ধনী রাজার রাজ্যে তোমার বুঝি নেই একটু ঠাই!
জগৎসংসারে প্রফেট বলুন, সম্রাট বলুন, বাদশাহ-ফকির, বণিক যা-ই বলুন; দুঃখ তার লেখে নাম সবার ললাটে। রক্তের ধমনির মতোই দুঃখ-কষ্ট-হতাশারা লেপটে থাকে। হতাশা বাসা বাধলেই প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। যন্ত্রণাটুকু শেয়ার করতে হবে। কষ্টকে চেপে না রেখে, সেটাকে দূর করতে হবে।
আজ যা হয়নি, কাল তা হবে। আজ যা নেই, কাল তা ধরা দেবে। আজ যা পারেননি, কাল তা পারবেন। আজ যে উপেক্ষা করছে, কাল সে দেবে সালাম। জীবনকে বাঁচিয়ে রাখুন। বেঁচে থাকা আর বাঁচার জন্য সংগ্রাম করাই সুন্দরতম।