আজ দোল

আজ দোল

গেট খুলে মেয়ে তিনজন বাগানে ঢুকল। তারা লাল সুরকির পথ দিয়ে বাংলোর দিকে আসছে। তিনজনের মুখেই রুপোলি রং। এদের আলাদা করে চেনবার কোনও উপায় নেই। মনে হচ্ছে, তিনজনই এক মেয়ে।

চারদিকে আকাশমণি আর শালগাছের হালকা জঙ্গল। জঙ্গলের এক কোণে এই বাংলো। বাংলো ঘিরে লম্বা পাঁচিল। সেই পাঁচিলের ওপরে বোগেনভিলিয়া। বোগেনভিলিয়ায় হলুদ রংটাই বেশি। লাল পাঁচিলে হলুদ বোগেনভিলিয়ায় একটা আগুন আগুন ভাব এসেছে।

বিমল চেয়ারে হেলান দিল। তার মাথা-ভরতি সবুজ আবির। সেই আবির কিছুটা ঝরে পড়ল মেঝেতে। এটা তার ভাইঝির কাণ্ড। খানিক আগে সে তার কাকার মাথায় আবিরের পুরো ঠোঙাটা উলটে দিয়ে পালিয়েছে।

বিমল বলল, ‘বল তো কোনটা কে?’

অর্ক মুখ তুলে মেয়েদের দিকে তাকাল। এদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আজ খুব ভোরে তারা ভাড়া করা লাক্সারি বাসে কলকাতা থেকে বেরিয়েছিল। মেদিনীপুরের কাছে এই জঙ্গল কাম বাগানে আসতে বেশি সময় লাগেনি। এই সময়ের মধ্যে মানুষের সঙ্গে কতটুকু আলাপ হবে? বিমলের সবটাতেই বাড়াবাড়ি। তার ওপর মেয়েগুলো আবার রং মেখে চেহারা বদলে ফেলেছে।

অর্ক বিরক্ত গলায় বলল, ‘আমি কী করে বলব? আমি কি তোর আত্মীয়দের চিনি? তা ছাড়া সকলে তো রং মেখে ভূত হয়ে গেছে।’

বিমল সামনের নিচু বেতের টেবিলে দুটো পা-ই তুলে দিল। তারপর নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘জেন্ডারে ভুল করলি অর্ক। ভূত নয়, পেতনি হয়ে গেছে। আরও একটা ভুল হয়েছে। এরা সবাই আমার আত্মীয় নয়। প্রথমে অবশ্য ঠিক হয়েছিল, শুধু আত্মীয়দের নিয়েই এই পিকনিকটা হবে। দোলের দিন ফ্যামিলি কালার পিকনিক। মামা, জ্যাঠা, মাসিরা সব থাকবে। নতুন কিছু নয়, প্রতি বছরই হয়। কোনওবার কারও ছাদে, কোনওবার কারও উঠোনে। এবার যা একটু দূরে আসা হয়েছে। কিন্তু এসে দেখছি, কী করে যেন এদিক-সেদিক থেকে ফ্যামিলির বাইরের লোকও ঢুকে পড়ল। যেমন তুই। মনে হচ্ছে, লোক নেওয়ার ব্যাপারে খুব ধরাধরি হয়েছে। আজকাল শালা সবকিছুতে ধরাধরি। যাক, এই যে তিনজনকে দেখছিস, এদের মধ্যে মাঝের জন হল মধুমিতা। মধুমিতা আমার মামাতো বোন। বাকি দুজন ওর কলেজের বন্ধু। বাঁদিকেরটা শম্পা না পম্পা। গান জানে বলে মধুমিতা জোর করে ঢুকিয়েছে। আমার মত ছিল না। গান জানালেই সঙ্গে নিতে হবে? পিকনিক তো জলসা নয় যে আর্টিস্ট লাগবে। যতসব ছেঁদো ব্যাপার। আর একস্ট্রিম রাইটে যাকে দেখছিস, সেটা চন্দনা। মেয়েটাকে ভাল করে চিনে রাখ অর্ক। ছোট কাকিমার লতায়পাতায় কেমন যেন বোন হয়। পড়াশুনোয় দুরন্ত। খবর পেয়েছি, এ-বছর ডাক্তারিতে চান্স পাচ্ছেই। তুই ইচ্ছে করলে এখনই ওকে একবার হার্টটা দেখিয়ে নিতে পারিস। এসব মেয়ের ক্ষেত্রে দেরি করা রিস্কি। দেখাবি?’

অর্কর অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, না এলেই হত। সে বিরক্ত গলায় বলল, ‘না দেখাব না। ইচ্ছে হলে তুই দেখা।’

বিমল হেসে বলল, ‘দেখাব, চান্স পেলেই দেখাব। তাড়াহুড়োর কিছু নেই। মনে হচ্ছে, আজই চান্স হবে। চিন্তা করিস না অর্ক, শুধু আমার নয়, তোর কাজটাও আজ হয়ে যাবে। এমনি এমনি তোকে এতদূর টেনে আনিনি। বাসে টাই পরা যে-লোকটার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম, ওটাই হল শঙ্কর পাল। মেজমাসির প্রতিবেশী, নেক্সট ডোর নেবার। ঘরের লোকও বলতে পারিস। পিকনিকের অনেকটাই খরচ ওর ঘাড়ে চাপানো আছে। লোকটা মালদার। ছোটখাটো একটা শিল্পপতি। দুটো হার্বাল মেডিসিনের ফ্যাক্টরি। এখন আবার কসবায় প্রোমোটারি শুরু করছে। ও শালা, একটা কেন, চাইলে তোকে পাঁচটা চাকরি দিতে পারে। এ-ধরনের লোক সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে ঘোরে। জাস্ট তোর নামটা বসিয়ে দেবে। মনে হচ্ছে, শিগগিরই তুই খুব ঝামেলায় পড়বি। পাঁচটার মধ্যে কোন চাকরি নিবি এই নিয়ে ঝামেলা।’

বিমলের কথায় কোনও ভরসা হল না। বরং অস্বস্তি বাড়ল অর্কর। সে বলল, ‘প্লিজ বিমল, তুই আমার চাকরির চিন্তা এখন মাথা থেকে ফেলে দে। কলকাতায় ফিরে যা হয় হবে। এখানে এসব করতে হবে না। এরকম একটা পিকনিকের মাঝখানে চাকরিবাকরির কথা বলা ঠিক হবে না।’

‘চুপ কর তো, বকবক করিস না! বন্ধুর চাকরির কথা সব জায়গায় গিয়ে বলব। দরকার হলে শ্মশান পর্যন্ত যাব। আসল কী জানিস, এই হল তোদের মুশকিল, বেকারদের সবসময় বিগ বিগ টক। এখন চুপ কর, চন্দনা আসছে, কথা বলতে দে।’ পা নামিয়ে বিমল সোজা হয়ে বসল।

জিন্‌স পরা মেয়েটি বারান্দায় উঠে এসেছে। বিমল গদগদ মুখে বলল, ‘এই যে চন্দনা, এসো এসো। রংটং মেখে তোমাকে তো ফ্যান্টাস্টিক দেখাচ্ছে! তোমাদের এই অবস্থায় দেখে, একটা দারুণ প্ল্যান মাথায় এসেছে। সিক্রেট প্ল্যান। এখনই কাউকে বলছি না, শুধু তোমাকে বলছি। বুঝলে চন্দনা, ঠিক করলাম, একটা বিউটি পার্লার খুলব। সেখানে শুধু দোলের দিনের মেকআপ হবে। পার্লার থেকে তুমি যে-দিনই বেরোও না কেন, দেখলে মনে হবে, আজ দোল। এইমাত্র তুমি দোল খেলে এলে। গালে একটু লাল রং, কপালে হালকা বেগুনি, চুলে একমুঠো সবুজ আবির। চার্জটা অবশ্য একটু বেশির দিকে রাখতে হবে। এমনি সময় দোলের দিনের পোশাক পাচ্ছ, রং পাচ্ছ, খরচ তো একটু বেশি করতেই হবে। বিউটি পার্লারটাও নামও মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছি, দ্য হোলি বিউটি পার্লার। ভাবছি প্ল্যানটা নিয়ে তোমার সঙ্গে একদিন বসব। তুমি কী বলো, চন্দনা?’

মেয়েটি বিমলের কথায় পাত্তা না দিয়ে গভীর গলায় বলল, ‘জলের কোনও ব্যবস্থা হল?’

বিমল থতমত খেয়ে বলল, ‘জল! ও হ্যাঁ, জল। আমি যতদূর জানি, কোনও ব্যবস্থা হল না।’

মেয়েটি রাগী গলায় ধমক দিয়ে বলল, ‘হল না মানে? দোলের দিন পিকনিকের ব্যবস্থা করতে পারেন, রং খেলার ব্যবস্থা করতে পারেন, আর জলের ব্যবস্থা করতে পারেন না? আমরা কলকাতায় ফেরা পর্যন্ত এরকম রং মেখে থাকব নাকি?’

বিমল ঘাবড়ে গিয়ে উঠে দাঁড়াল। বলল, ‘আমি দেখছি চন্দনা। তুমি কোনও চিন্তা কোরো না। আমি এখনই দেখছি। একটা কিছু ব্যবস্থা হয়ে যাবে নিশ্চয়।’

‘হ্যাঁ, তাই দেখুন। পায়ের ওপর পা তুলে বসে থাকবেন না। আর শুনুন, চন্দনা চন্দনা করবেন না তো। আমি চন্দনা নই, আমি শম্পা।’

দোলের সময় মুখে কালো রং মাখা থাকলে একটা মুশকিল হয়। মানুষ সত্যি হাসল কি না বোঝা যায় না। একটু হাঁ করলেই কালোর মধ্যে সাদা দাঁত ঝকঝক করে ওঠে। না হাসলেও মনে হয় হাসছে। সুধীরমামা অবশ্য সত্যি সত্যি মুখটা হাসিহাসি করে রেখেছেন। তাঁর ধারণা, তাঁর এই হাসির ফলে পরিস্থিতি খানিকটা সহজ হবে। হচ্ছে না। সবাই তাঁর দিকে কটমট করে তাকাচ্ছে। সুধীরমামা এতে আরও নার্ভাস হয়ে যাচ্ছেন। বিড়বিড় করে বলছেন, ‘জায়গাটা সুন্দর। খুবই সুন্দর।’

জায়গাটা শুধু সুন্দর নয়, বাড়াবাড়ি ধরনের সুন্দর। কলকাতা থেকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন চমৎকার একটা জঙ্গল, জঙ্গলের মধ্যে বাগান আর বাগানের মধ্যে বাংলো পাওয়া যাবে কে জানত? জানতেন শুধু বিমলের এই সুধীরমামা। বেঁটেখাটো গোলগাল এই ভদ্রলোক ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে লতা-গুল্ম বিভাগের বড়বাবু। ইনি ফাইলে সই করলে বাগানে বাগানে লতানে গাছের চারা যায়। একটা-দুটো চারা নয়, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ চারা। ইট বালি সুরকির সাপ্লায়াররা অনেকেই এখন পুরনো লাইন ছেড়ে দিয়েছে। ছেড়ে দিয়ে মাধবীলতা ঝুমকো নীলমণির চারা সাপ্লাইতে মন দিয়েছে। এ ব্যবসায় বড় সুবিধে আছে। দার্শনিক সুবিধে। মানুষের জন্ম মৃত্যুই যেখানে কিছু বলা যায় না সেখানে গাছের চারা তো অতি সামান্য ব্যাপার। ক’টা বাঁচবে, ক’টা মরবে কে বলতে পারে? কেউ পারে না। অতএব ফলের দিকে না তাকিয়ে, শুধু সাপ্লাই আর সাপ্লাই।

তাই এ-বছর দোলের দিন বাইরে পিকনিক হবে শুনে মামা ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং নিজের উদ্যোগে এই বাগান ঠিক করেন। তাঁর কাছে এই জায়গার খবর ছিল। জঙ্গলের গায়ে বাংলো তৈরি হয়ে গেছে, তবে বাংলো ঘিরে বাগান তৈরির কাজ এখনও চলছে। সুতরাং গাছ সাপ্লাইয়ের ব্যাপার রয়ে গেছে। এই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করেননি। গত রবিবারের পারিবারিক বৈঠকে বললেন, ‘এবার অ্যারেঞ্জমেন্ট কাকে বলে দেখিয়ে দেব। একেবারে তাক লাগিয়ে দেব তোমাদের। বাংলোটা এখনও পাবলিকের জন্য ওপেন হয়নি। একবারে ব্র্যান্ড নিউ বলতে যা বোঝায়। ঘরে ঘরে অ্যাটাচড বাথরুম। সাদা মার্বেল। একেবারে থ্রি স্টার ফেসিলিটি। আমার ভাবনা হচ্ছে, তোমরা একবার গেলে ওই রাজকীয় ব্যবস্থা ছেড়ে চট করে ফিরে আসতে পারবে কিনা।’

কিছুক্ষণ হল তিনি জানতে পারলেন, থ্রি স্টার বাংলোতে রাজকীয় সব আয়োজনই আছে শুধু কোনও জলের ব্যবস্থা নেই। বাংলোতে এখনও পাম্প বসেনি। আন্ডারগ্রাউড ট্যাঙ্কের কাজ চলছে। পাইপ লাগছে। চৌকিদার সকালে কোনও একটা অজানা জায়গা থেকে কয়েক বালতি জল তুলে দিয়ে চলে গেছে। কোথায় গেছে জানা যাচ্ছে না। জেনেও লাভ নেই। এমন দিনে নিশ্চয় সে অন্যের জন্য জল তুলতে ফিরে আসবে না। এদিকে তুলে যাওয়া ক’বালতি জলে হাতমুখ ধোয়া, রান্নাবান্না করা এবং প্রচুর রং খেলা হয়েছে। বড় সমস্যা হল, আশেপাশে জলের কোনও সোর্সও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনিতেই লোকজন কম। দু’-তিনজন যাদের পাওয়া গেছে তারা মনে হয় প্রত্যেকেই সিদ্ধি ধরনের কিছু খেয়ে আছে। নইলে জলের কথা শুনে অমন মিটিমিটি হাসবে কেন?

এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে উত্তেজনা ঢাকতে মুখ হাসিহাসি করে মামা জলের খোঁজে বেরিয়েছেন। এই জায়গা বেছেছেন তিনি। সুতরাং তাঁর দায় বেশি। মামার পিছু পিছু চিমসে প্যাটার্নের যে-লোকটা ঘুরছে সে হল দস্তিদার। দস্তিদার মাধবীলতার চারা সাপ্লাইতে এখন এক নম্বরে যাচ্ছে। একটাই মরা চারা তিনবার বিক্রি করে ইতিমধ্যেই সে লেকটাউনে ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছে। তবে যার জন্য টাকা করেছে তার কথা সে ভালেনি। ফ্ল্যাটের নাম রেখেছে মাধবীলতা। দস্তিদার এই বাগানেও চারা সাপ্লাই করতে চায় এবং চারা পিছু সুধীরমামাকে এক টাকা করে ঘুষ দিতে চায়। মামা চান, দেড় টাকা। দরদাম পাকা করতে কলকাতা থেকে তিনি দস্তিদারকে নিয়ে এসেছেন। স্পটে বসে পাকা কথা বলার অন্য ব্যাপার আছে। দস্তিদার এনেছে বড় একটা ভদকার বোতল। সেই বোতল অর্ধেকও খালি হয়নি, তার আগেই এই বিপজ্জনক খবর— জল নেই। মামার হাসি দেখে দস্তিদারও হাসিমুখ করে আছে। যদিও হাসির কারণ সে জানে না।

‘তুমি হাসছ কেন দস্তিদার?’

‘ঠিক বলতে পারব না স্যার, মনে হচ্ছে, ভদকার এফেক্টে শুরু হয়েছে।’

‘তোমার মাথা হয়েছে। জল কোথায় পাওয়া যায় বলো তো।’

‘জল কেন স্যার, ভদকা তো লাইম দিয়েই ভাল।’

‘চুপ। একদম চুপ।’

তমালিকা দাঁড়িয়ে আছে একটা লম্বা আকাশমণি গাছের নীচে। গাছের তলায় রোদে পাতায় এমন নকশা হয়েছে যে মনে হচ্ছে, জঙ্গলে কেউ আলপনা এঁকেছে। সুন্দর দেখাচ্ছে। দেখলে মন ভাল হয়ে যায়। যদিও তমালিকার মুখ দেখে মনে হচ্ছে সে যে-কোনও মুহূর্তে কেঁদে ফেলবে।

সুশীল আমতা আমতা করে বলল, ‘তুমি এত উতলা হয়ো না তমালিকা।’

‘আপনি এরকম করলেন কেন? ও যদি দেখে ফেলে? ছিঃ ছিঃ। কী হবে এখন?’

‘কিছুই হবে না। তোমার স্বামী কিছুই দেখবে না। দেখার আগেই ধুয়ে ফেলবে। আর দেখলে বলবে, কারা রং লাগিয়ে দিয়েছে।’

‘ইস! কেউ বিশ্বাস করবে বুঝি ? বাচ্চারা আমার মুখের নাগাল পাবে কেন? আর শুধু কি মুখ, অন্য জায়গাগুলো কী হবে? ইস কী লজ্জার ব্যাপার।’

লজ্জার কথা শুনে সুশীল ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘যাও, চট করে সাবান মেখে স্নান করে নাও।’

সাবানের কথা শুনে তমালিকার কেঁদে ফেলার মতো অবস্থা হল। সে প্রায় আর্তনাদ করে উঠল ‘সাবান! সাবান আমি এখন পাব কোথা থেকে? আমি কি জানতাম এখানে দোল খেলা হবে যে সাবান আনব? আর এখন আমি সাবান খুঁজতে গেলে যদি ও সন্দেহ করে?’

‘ঠিক আছে, তুমি এত ও ও কোরো না তো৷ দাঁড়াও আমি একটা সাবান জোগাড় করে আনছি।’

তমালিকা শাড়ির আঁচল দিয়ে আবির মোছার চেষ্টা করছে। মুছছে না। উলটে মুখের গোলাপি রং তার গলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে। সে এবার সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলল। বলল, ‘কেন যে মরতে এলাম।’

সত্যি তো তমালিকার এই পিকনিকে আসার কোনও কারণই নেই। এই কীর্তি সুশীলের। সুশীল বিমলের ছোটমাসির দেওর। ছেলে খুবই ভাল। অল্প বয়েসেই হাড়ের ডাক্তার হিসেবে নাম করতে চলেছে। কোন এক ফাঁকে সে তার রোগিণী তমালিকাকে সপরিবার পিকনিকের তালিকায় ঢুকিয়ে নিয়েছে। আসলে গত কয়েক মাস হল, এই সুন্দরী মহিলার গোড়ালিতে এক রহস্যময় ব্যথা চলছে। তিনমাসের চিকিংসায় ব্যথা সারলেও মাঝেমধ্যেই নাকি চিড়িক মারে এবং সে সুশীলের কাছে ছুটে আসে। সেই ঘন ঘন আসা-যাওয়া থেকেই এতদূর।

খানিক আগে তমালিকাকে পায়ের হাড় কয় প্রকার ও কী কী বোঝাতে বোঝাতে সুশীল অন্যমনস্কভাবে বাংলো থেকে বেরিয়ে জঙ্গলে ঢুকেছিল। তারপর এই আকাশমণি তলায় এসে, রোদ-ছায়ার আলপনা দেখে নিজেকে আর সামলাতে পারেনি। পাঞ্জাবির পকেটে লুকিয়ে আনা গোলাপি আবিরের ঠোঙা বের করে এবং মাখিয়ে দেয়। এখন মনে হয়, ঘোরটা কেটেছে। বুঝতে পারছে, কাজটা ঠিক হয়নি। শুধু তমালিকার স্বামী নয়, তার স্ত্রী মালিনীও সঙ্গে এসেছে। ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে বড় ধরনের একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। সামলাতে হবে। যে করেই হোক সামলাতে হবে।

সাবানের সন্ধানে এসে ডাক্তার সুশীল পাকড়াশি দেখল বাংলোর গেটের মুখেই মালিনী দাঁড়িয়ে। তার মুখ গম্ভীর। ভুরু কুঁচকোনো। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। মালিনী কিছু দেখে ফেলল নাকি?

রেগে গেলে মালিনীর গাল লাল হয়ে যায়। তখন গাল দেখে তার রাগ চেনা যায়। এখন মালিনীর গাল ডবল লাল। কেউ একজন লাল রং লাগিয়েছে— সেটার লাল এবং রেগে যাওয়ার লাল। ধমকের সুরে স্বামীকে মালিনী বলল, ‘কোথায় ছিলে এতক্ষণ?’

সুশীল আমতা আমতা করে বলল, ‘একটু জঙ্গলের দিকটায় গিয়েছিলাম। ওয়ান্ডারফুল মালিনী। যাকে বলে অপূর্ব। চলো না একটু দেখে আসবে।’

‘আদিখ্যেতা হচ্ছে? এই দুপুরে জঙ্গল দেখতে যাব? এদিকে বাংলোতে যে এক ফোটা জল নেই সে খবরটা জানো?’

জল নেই! সুশীলের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তমালিকার রং তোলা হবে না তা হলে? ভয়ংকর ঘটনা। চিন্তিত সুশীল জলের সন্ধানে বের হল।

বাংলোর এই ঘরের চাদরটায় খুব সুন্দর একটা ছবি আঁকা। বাঘ ঝরনায় জল খাচ্ছে। দুটো হরিণ গাছের তলায় দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চোখে সেই জল খাওয়া দেখছে। চাদরের ওপর ছবির বাঘের লেজের কাছে কয়েকটা শুকনো মাটির ঢেলা যত্ন করে সাজানো। ঢেলার দু’পাশে মধ্যবয়সের দুই মহিলা চুপ করে বসে আছেন। এদের মধ্যে যাঁর কপাল, গাল ও নাক বেয়ে বেগুনি রঙের কাদা জল নেমে আসছে তিনি মিসেস বোস। উলটোদিকের জন বিমলের রাঙামাসি। কাদা জল মাখা মিসেস বোস কোনও সাধারণ মহিলা নন। গড়িয়াহাটের আটতলার ফ্ল্যাটে তিনি ‘মাটির কাছে’ নামে একটি বুটিক তৈরি করেছেন। সেখানে শুধু বিভিন্ন আকৃতির মাটির ঢেলা বিক্রি হয়। ন্যাচারাল রোদে শুকোনো ন্যাচারাল মাটির ঢেলা। পাঁচশো হাজার টাকার সেইসব ঢেলা কলকাতায় হইহই ফেলে দিয়েছে। ইতিমধ্যে মিসেস বোস টিভিতে একবার ইন্টারভিউ পর্যন্ত দিয়ে ফেলেছেন। অনুষ্ঠানের নাম ছিল, মাটি যখন সুন্দর।

মিসেস বোসের একেবারে ইচ্ছে ছিল না, রাঙামাসি অনেক ধর করে তাঁকে পিকনিকে নিয়ে এসেছেন। এরকম একটা নামকরা মানুষ থাকলে অনুষ্ঠানের গ্ল্যামার বাড়ে। তবে এখানে আসার পর থেকে মিসেস বোস সারাক্ষণই স্টারদের মতো নিজেকে আলাদা করে রেখেছিলেন। যে-কোনও কথায় সামান্য হোসেছেন। গায়ে রোদ লাগার ভয়ে ঘর থেকে বের হননি। ব্রেকফাস্টে ডিম-পাউরুটির বদলে তিনি খেয়েছেন টক দই এবং শশা। আর মাঝেমধ্যেই মেকআপ বক্স খুলে গালে ঠোঁটে চোখের পাতায় টাচ দিয়েছেন। মেকআপ সবাই করে। কিন্তু টাচটাই আসল কথা। রূপের আসল রহস্য সেখানেই। যে সামান্য কয়েকজন এ কথা জানে, মিসেস বোস তাদের মধ্যে একজন।

খানিক আগে মারাত্মক ঘটনাটা ঘটল।

রাঙামাসির কলেজ-পড়া ননদ কাকলিকে তাড়া করে একদল ছেলেমেয়ে এই ঘরে ঢুকে পড়েছিল। তাদের হাতে ছিল কাদা আর নীল রং গোলা বালতি। কাকলি হাসতে হাসতে খাটে লাফ দিয়ে অচেনা মিসেস বোসকে একবারে জাপটে ধরে এবং বলতে থাকে, ‘বাঁচাও! বাঁচাও!’ দোল হল এমন একটা দিন যে-দিন হাসতে হাসতে অচেনা মানুষকে জড়িয়ে ধরলে কোনও দোষ হয় না। সেই অর্থে কাকলি কোনও দোষ করেনি। যা করার করল বাকি ছেলেমেয়েরা। সেই অবস্থাতেই আরও বেশি হাসতে হাসতে কাকলির মাথায় কাদার বালতি উপুড় করে দিল। কাকলি বেঁচে গেল, তবে কাদার সবটাই পড়ল মিসেস বাসের মাথায়।

তারপর থেকে টানা পনেরো মিনিট কাদা মেখে মিসেস বোস চুপ করে বসে আছেন। তাঁর মেহেন্দি-করা চুল এবং ব্লাশার-লাগানো গাল বেয়ে নেমে আসা কাদা এখন শুকিয়ে মাটির চেহারা নিয়েছে। তিনি সামান্য হেসে সামনে বসে থাকা কাঁদোকাঁদো রাঙামাসিকে বললেন, ‘এখান থেকে হেঁটে কলকাতা পৌঁছোতে কতক্ষণ লাগবে একটু জেনে আসবেন, প্লিজ?’

‘সেকী! আপনি হেঁটে যাবেন ? না না এসব আপনি কী বলনে? এতটা ভেঙে পড়বেন না মিসেস বোস। আমি খুবই লজ্জিত, খুবই দুঃখিত। আমি এখনই সব ব্যবস্থা করছি। যেখান থেকে হোক জল জোগাড় করব। আপনি শান্ত হন।’

‘আমি শান্তই আছি। খুবই শান্ত আছি। তবু আমি এখনই, এই অবস্থাতেই, কলকাতায় রওনা হতে চাই।’

বিয়ারের তিন নম্বর ক্যান শেষ করে ক্যানটাকে একটা হাসনুহানার ঝোপের দিকে ছুড়ে ফেললেন শঙ্কর পাল। তাঁর মনে হচ্ছে একটা বন্দুক হলে ভাল হত। যারা পিকনিকে এনে রং মাখায় এবং তারপর জানায় জল নেই, তাদের মৃত্যু গুলিতে হওয়াই ভাল। এই জঘন্য বেগুনি রংটা ঠিক কে তাঁর মুখে লাগাল? একটু আগে পর্যন্ত মনে ছিল। এখন আর মনে পড়ছে না। বিয়ারটা বেশি হয়ে গেছে।

শঙ্কর পালকে বিমল প্রথমটায় চিনতে পারেনি। মনে হচ্ছে, গাছের গুঁড়িতে একদলা বেগুনি রং দুটো পা ছড়িয়ে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে। সে কাছে এসে নিচু গলায় ডাকল, ‘স্যার।’ শঙ্কর পাল চোখ খুললেন। লোকটার চোখেও কি রং লাগানো হয়েছে? এত লাল কেন?

বিমল অল্প হাসল। বলল, ‘স্যার, চিনতে পারছেন? স্যার, এ হল অর্ক। আমার বন্ধু। খুব ভাল ছেলে স্যার। ভেরি গুড বয়। বসব স্যার? ঘাসের ওপর বসতে খুব ভাল লাগে। কলকাতায় তো ঘাসে বলার সুযোগ হয় না। বসব?’

‘না, বলবে না।’

বিমল থতমত খেয়ে বলল, ‘স্যার, এই ছেলেটার একটা চাকরির দরকার। মেজমাসিও আপনার কথা বলছিল।’

‘কী বলছিল?’

‘বলছিল, আপনি স্যার ঠিক একটা কিছু ব্যবস্থা করে দেবেন। অর্ক বলছিল, আজ থাক। আমি বললাম, না থাকবে কেন? দরকারি কথা বাইরে হয়ে যাওয়াই বেশি ভাল। কলকাতা ছাড়লে মনমেজাজ ভাল হয়ে যায়।’

শঙ্কর পাল বেগুনি মুখে লাল চোখে অর্কর দিকে তাকালেন। বললেন, ‘ঠিকই বলেছ। আমার মনমেজাজ ভাল হয়ে গেছে। তা ছাড়া আমার এখনই একজনকে লাগবে। জাস্ট নাউ।’

বিমল উৎসাহের সঙ্গে অর্কর দিকে তাকাল। হেসে বলল, ‘দেখলি, দেখলি তো, বিশ্বাস হল? তোকে বলেছিলাম না চাকরি তোর হয়ে গেছে? তুই খামোকা ঘাবড়াচ্ছিলি।’

শঙ্কর পাল এবার অর্কর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ছোকরা, তুমি বন্দুক চালাতে পারো?’

অর্ক থতমত খেয়ে বলল, ‘বন্দুক!’

‘হ্যাঁ, বন্দুক। বন্দুক দিয়ে এখনই তোমায় কয়েকজনকে গুলি করতে হবে। বিমলের মেজমাসিকে দিয়ে স্টার্ট করো। উনিই আমাকে আজ এখানে নিয়ে এসেছেন কিনা, তাই ওঁকে দিয়ে শুরু করাটাই বেটার। পরের নামগুলো পরে বলছি।’

বিমল অর্কর হাত চেপে ধরে দাঁত কিড়মিড় করে ফিসফিসিয়ে উঠল, ‘শালা, মাতাল। চলে আয়।’

রাজা বাংলোর ছাদে শুয়ে আকাশ দেখছে। তার মাথাটা তমালের কোলে। ছাদের এ-দিকটা নিরিবিলি আর ঠান্ডা। গাছের ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। তমাল ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। চুলের আবিরে তার হাত ক্রমশ রঙিন হয়ে উঠছে। রাজার যখন মায়ের জন্য মন কেমন করে তখন সে বাবাকে ছাড়তে চায় না। আজও চাইছে না। খানিক আগে ছেলের সঙ্গে তমাল খানিকটা রং খেলেছে। এতে রাজার মনটা একটু ভাল হয়েছে। কিন্তু তার নিজের মনটা খারাপ হয়ে গেছে। রং খেলার পর ছন্দার কথা বেশি করে মনে পড়ছে। ছন্দা বেঁচে থাকতে দোল খেলা হত। খুব বাড়াবাড়ি করত মেয়েটা। ভোরবেলা কাগজ পড়বার সময় পেছন থেকে মুখে খানিকটা বাঁদুরে রং লাগিয়ে দিয়ে পালাত।

ছেলের কাছে নিজের মনখারাপ গোপন করে তমাল বলল, ‘জানিস রাজা, একটা খুব মজার ব্যাপার হয়েছে। একটু আগেই খবর পেলাম, বাংলোয় এক ফোঁটাও জল নেই। এদিকে সবাই তো রং মেখে ভূতপেতনি হয়ে আছে। কেউ আর রং তুলতে পারছে না।’ বাবার কথা শুনে রাজার সব মনখারাপ যেন নিমেষে উধাও হয়ে গেল! সে লাফ দিয়ে উঠল। হাততালি দিয়ে বলল, ‘তাই নাকি? বাঃ দারুণ! তা হলে আমাদের সবাইকে তো রং মেখেই থাকতে হবে। বাবা, আমি কি কাল স্কুলেও রং মেখে যাব?’ তমাল গম্ভীরমুখে বলল, ‘তুমি কী করবে আমি জানি না, তবে আমি কী করব আমি জানি। আমি এই রং লাগা জামাটা পরেই সোমবার অফিসে যাব।’

রং তোলার মতো জল না থাকায় খুশি দেবমাল্যও। সত্যি কথা বলতে কী সে জলের বদলে আরও রং খুঁজছে। কালো রং হলে ভাল হয়। অন্য কোনও ঘন রং হলেও চলবে। মোট কথা, কিছুতেই যেন তাকে দেখে চেনা না যায়। তাকে অনেকে খুঁজছে। ছোটমাসি, মেজকাকা, মন্টাদা, বকুলদি তো পাগল হয়ে গেছে— কোথায় দেবমাল্য? কোথায় সে? এই অবস্থায় বাঁচার একটাই পথ। মুখে আর গায়ে বেশ খানিকটা রং লাগিয়ে নেওয়া।

যারা দেবমাল্যকে খুঁজছে তাদের অবশ্য কোন দোষ নেই। আজ পিকনিকের ছবি তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। সকাল থেকে প্রচুর ছবি তোলাও হয়েছে। শুধু কিছুক্ষণ আগে দেবমাল্য জানতে পারল, ক্যামেরায় ফিল্‌ম ভরা নেই। কলকাতা থেকে ফিল্‌ম আনাও হয়নি। ছবি তোলার উত্তেজনায় সে বুঝতে পারেনি ফিল্‌ম ছাড়াই এতক্ষণ শাটার টিপে গেছে! তার মানে একটাও ছবি হল না। শুধু তাই নয়, এখনও অজস্র অনুরোধ বাকি পড়ে আছে। সেই জন্যই এত খোঁজাখুজি। এরপরে রং মেখে লুকিয়ে পড়া ছাড়া তার সামনে আর অন্য কোনও পথ খোলা আছে? কোনও পথই নেই।

রং মাখা অবস্থাতেই দুপুরের খাওয়া হয়েছে। এতে বড় কোনও সমস্যা হয়নি। মিসেস বোস আর শঙ্কর পাল প্রথমে খাওয়া বয়কট করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরে সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। সিদ্ধান্ত বাতিল না করে উপায় ছিল না। আবির মাখলে খিদে বাড়ে। বিমল ফিসফিস করে বলল, ‘বুঝলি অর্ক, এই কারণেই কর্মসূচি কখনও দোলের সময় নেওয়া হয় না।’

খাওয়ার পর অবশ্য একটি বড় সমস্যা হল। তপতী বউদি একটা বিরাট ভুল করলেন। তিনি বিমলের মেজকাকাকে নিজের স্বামী ভেবে পেছনের দিকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে দরজা আটকে ফেললেন। বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনা চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। কিন্তু নিয়ম হল, চাপা দেওয়া কেলেঙ্কারি খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। দলের অন্য মহিলারা বলছে, রং মেখেছে বলে নিজের স্বামীকে চিনতে ভুল! এ কখনও হয়? আমাদের বরেরা কি রং মাখে না। কই আমাদের তো ভুল হয় না? ছিঃ ছিঃ।

জলের আশা ছেড়ে দিয়ে সন্ধের মুখে সবাই ফেরার জন্য তৈরি হল। এমন সময় কোথা থেকে যেন অর্ক ছুটতে ছুটতে হাজির। আনন্দে তার শরীর কাঁপছে। সে তো চাকরি পায়নি, তা হলে কীসের এত আনন্দ? আসলে একটু আগে জঙ্গলের ওপাশে একটা ছোটখাটো নদীর খোঁজ পেয়েছে ছেলেটা। নদী আবিষ্কারের আনন্দেই সে লাফাচ্ছে।

অর্ক চিৎকার করে বলল, ‘একটুখানি হাঁটলেই হবে। নদীতে ছোট ছোট পাথর আছে। সেই পাথরে বসে ইচ্ছে করলে হাত-মুখ ধোয়া যাবে, এমনকী চাইলে স্নান করাও যেতে পারে।’

জঙ্গল পেরিয়ে একদল রঙিন মানুষ নদীর দিকে চলেছে। এদের কেউ স্নান করে রং ধোবে, কেউ কিছুই করবে না। শুধু নদী দেখে, রং নিয়েই ফিরে আসবে।

আকাশ জুড়ে দোলের চাঁদ উঠেছে। পাতার ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এই রঙিন মানুষদের গায়ে আরও রং ঢেলে দিচ্ছে। বড় সুন্দর দেখাচ্ছে।

হাঁটতে হাঁটতে শম্পা নামের মেয়েটা গান ধরেছে— তখন তরুণ ছিল অরুণ আলো, পথটি ছিল কুসুমকীর্ণ…

অর্ক ফিসফিস করে বলল, ‘দারুণ গাইছে কিন্তু মেয়েটা।’

বিমল বলল, ‘আঃ চুপ কর তো। শুনতে দে।’

শম্পা গেয়ে চলেছে, ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *