আজ আমার সংবর্ধনা – অতীন বন্দোপাধ্যায়
আজ আমার সংবর্ধনা।
সারকিট হাউজের তিন তলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়েছিলাম, সামনে নদীর বালির চরা। কিছু ঘরবাড়ি উঠেছে। ঘরবাড়ি পার হয়ে নদীর জল। ওপারের গ্রাম-মাঠ দেখা যাচ্ছে। সব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আগে এখানটায় ছিল গভীর বাবলার বন। গ্রীষ্মের নদী তখন মরা গাং, বনের ভেতর দিয়ে সহজেই হেঁটে নদী পারাপার করা যেত। এখন নদীর জল গভীর, বর্ষা-বসন্তে সমান। নদী থেকে হাওয়া উঠে আসছে। আমি অতীত খুঁজতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, সব হারিয়েছি। আমার ভাল লাগছিল না। এখনই লোকজন আসতে শুরু করবে। তার আগেই বের হয়ে পড়া ভাল। আমি সঙ্গীটিকে বললাম, বাড়ি যাচ্ছি।
জেলার গুণিজন সংবর্ধনা উপলক্ষে আমাদের আসা। কাল রাতে আমি আর আমার সঙ্গী দুজনেই এসেছি। কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। বইমেলা উপলক্ষে দুজন মন্ত্রীরও আসার কথা। সারাদিনটাই ব্যস্ততার মধ্যে কাটবে। সরকারি ব্যাপার হলে যা হয়। বাড়ি যাব ভেবে বের হচ্ছি, এমন সময় একজন এসে বলল, স্যার, আপনাদের ব্রেকফাস্ট রেডি।
সঙ্গীটি জানে, আমার বাড়ি শহর থেকে মাইল তিন দূরে। রেলগুমটি পার হয়ে যেতে হয়। আমার বাবা গত হয়েছেন। মা আছেন। ভাইরা আছে। যে যার মতো আলাদা। বাবা তাঁর ঘরবাড়ি বানিয়ে থিতু হয়েছিলেন, আমার তখন কৈশোর কাল। এই শহরের আগাপাশতলা আমার রক্তে, একসময়, তখন আশা কুহকিনী—সঙ্গীটি বলল, ব্রেকফাস্ট সেরে যা। কখন ফিরবি?
—দেখি।
—দেখি না। এখানে এসেই খাবি।
আমি কিছু বললাম না। ব্রেকফাস্ট সেরে রিকশায় চড়ে বাড়ি। বাড়ির এই পথটা আমার কাছে নেশার মতো। রিকশায় যেতে যেতে তা এখনও বুঝতে পারছি। পঁচিশ ত্রিশ বছর আগে এই রাস্তায় পড়লেই মনে হত আমি এক অলৌকিক ভ্রমণে বের হয়েছি। দু-পাশে আমবাগান, কোথাও নিরন্তর মাঠ, শস্যক্ষেত্র এবং সব মিলে আমি এক তাজা ঘোড়সওয়ার। অভাবী পিতার সন্তান, মনেই থাকত না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে, এই পথে কোনও কিশোরী মেয়ের ছবি চোখে ভেসে উঠলে বুঝতে পারতাম সে আমাকে এক ফুলের উপত্যকায় নিয়ে যেতে চায়। একটা বয়সে মানুষের জন্য কোনও ফুলের উপত্যকা অপেক্ষা করে থাকে, আর একটা বয়সে মানুষ তা হারায়। অবশ্য এ-গল্পটা আমাকে নিয়ে নয়, গল্পটা আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা তারাপদ রায়কে নিয়ে।
আজ আমার সংবর্ধনা।
আসলে সারাটা রাস্তা আমি মুগ্ধ বালকের মতো বসেছিলাম। বাড়ি যাচ্ছি, ভাইরা গরিব, মা আলাদা, তার মাটির দেয়াল দিয়ে ঘর। এবং এ-সবের মধ্যে, অনেক গাছপালা—বাবা হেন গাছ নেই, বাড়িটায় লাগিয়ে যাননি। ছোট অর্থাৎ তারাপদ এখনও ঠিক থিতু হতে পারেনি। ওকে নিয়ে আমার একটা দুশ্চিন্তা আছে। রাস্তার মোড়ে তারাপদর মুদির দোকান, মাঝে মাঝে দোকান বসে গেলে আমাকেই থোক টাকা দিতে হয়। এক একবার ভাবি, না আর না, তুই এত বড় অমানুষ, থিতু হতে পারলি না, বিয়ে করে বসে থাকলি। বিয়ে করলি, বছর না ঘুরতে মুখের পর মুখ। অবিবেচক! রিকশা থেকেই উঁকি দিয়ে ওর দোকানটা দেখার চেষ্টা করলাম, দেখি বন্ধ। গেল বছর আতপ চাল রাখার অপরাধে থানা-পুলিশ, দুটো মামলা, একটি একশো সাত ধারায় চলছে। মাসে মাসে সে বাবদ টাকা, এবং চিঠিতে হুমকি, দাদা, শেষ পর্যন্ত আমি একটা কিছু করে না বসি! রিকশায় বসে থাকা মুগ্ধ বালকটি এ-সব মনে হলেই আর স্থির থাকতে পারে না, সে জানে, বাড়ি গেলেই ছোট বারান্দায় এসে বসবে, গালে বাসি দাড়ি। পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি, গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি, ওর ছেলেমেয়েরা প্রায় সবাই উলঙ্গ—জ্যাঠু এসছে, জ্যাঠু এসছে বলে দৌড়ে আসবে, ঘিরে ধরবে—ও জ্যাঠু তুমি দাঁত মাজছ! ওটা কী জ্যাঠু, বোরোলিন, জান জ্যাঠু আমাদের না গোরুটা বাচ্চা দিয়েছে। জান জ্যাঠু, বাবা না কাল রাতে কিছু খায়নি।
আসলে সংসারের সাত ঝামেলায় আমার আর আজকাল বাড়ি আসা হয় না। চিঠিতে সব জানতে পারি, মার একটাই চিঠি, তাতে টাকা মাইনে পাবার সঙ্গে সঙ্গে যেন পাঠিয়ে দি। ইদানীং ছোটকে যে টাকা দিই মাসে মাসে, তার কথাও মার চিঠিতে উল্লেখ থাকে। ওর দোকানটা চলছে না, দোকান বন্ধ, গোরুটা দুধ দেয় না—যেমন এই কয়েক মাস আগে—আমার এক পুত্রের তখন খুবই কঠিন অসুখ— আমার মাথা খারাপ অবস্থা, ছোটর টাকা পাঠাতে একটু দেরি হয়েছে—মার চিঠি, লিখেছেন, ছোটর গোরুটার অসুখ হয়েছে। দুধ দেয় না। জল পোড়া এনে দিয়েছি। দুশ্চিন্তায় ছোটর রাতে ঘুম নেই। সত্বর ও টাকা পাঠিয়ে দেবে।
আমার আজ সংবর্ধনা।
জেলার গুণিজনের মধ্যে আমি পড়ে গেছি।
রিকশা থেকে নেমে কিছুটা হেঁটে গেলাম। কেন যে রিকশাটা বড় রাস্তায় ছেড়ে দিলাম জানি না। মাঝে মাঝে এটা আমার হয়—যেন, যার পরিবারে ভাইবোনেরা ভাল থাকে না, তার পক্ষে এই রিকশায় চড়ে নবাবিও সাজে না।
ছোটর চাকরির জন্য অনেককে একসময় বলতাম। যে কোনও কাজ। এক সময় একটি কারখানার ম্যানেজার ছিলাম, ছোট সেখানে লেদ মেশিনে কাজ করত। ডাই, নাট, বোল্ট সব বানাতে পারত। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে, ছোট বাড়ি চলে এল। কিছু প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হাতে। ব্যবসা করবে, আমারও আশা ছিল, ব্যবসা করে বাঙালির ছেলে আলামোহন দাস হয়, ছোটও হয়তো তাই হবে। অনেক আশা আমার, ওকে বলতাম, ঠিক তুই দাঁড়িয়ে যাবি। বাবাও লিখলেন, ছোট একটা মুদিখানা দোকান দিয়েছে। ভালই চলছে। একটা বিয়ে দিয়ে দেওয়া দরকার। বছর না ঘুরতেই বাবার ফের চিঠি, ছোটর বিয়ে দিচ্ছি। কবে আছি কবে নেই, তার আগেই কাজটা সেরে ফেলতে চাই। আমার স্ত্রী শুনে বলল, ছোটকে বাবা বিয়ে দিচ্ছেন, সংসার টানতে পারবে তো! বিয়ের ব্যাপারে তোমার একবার মত নিল না! সারাজীবন কি শেষ পর্যন্ত তুমি সবাইকে টানবে!
কী আর বলি! বললাম, ওর দোকান শুনছি ভালই চলছে। বউ এলে যদি ভিন্ন হয়ে যায় ঠিক চালিয়ে নিতে পারবে। আর ভিন্ন হয়ে গেলে আমারও রেহাই।
আমার স্ত্রী কিছু বললেন না।
ফলে এখন অনেক কিছুই স্ত্রীকে গোপন করে, ছোটর সংসার নিয়ে আমাকে ভাবতে হয়। কোথাও একটা যদি চাকরি হয়। পাশেই কাপড়ের মিল, আমার বন্ধুবান্ধবরা ইউনিয়নের পাণ্ডা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা। ওদেরও বাড়ি গেলে বলতাম, একটু তোমরা দ্যাখো না, মিলে যদি তারাপদকে ঢুকিয়ে দিতে পার। অনেকেই তো ঢুকছে। তোমাদের ইউনিয়ন, বামুনের ছেলে, শেষে মুনিষের কাজ করবে, আমি তো আর চিরদিন থাকব না।
ওরা শুধু আশ্বাস দিত। যেমন আর দশজন নেতা আশ্বাস দেয়—ওরা বোঝে না, আমার সঙ্গে ছোটর বয়েসের তফাত অনেক।
আজ আমার সংবর্ধনা।
আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই ভাইপো ভাইঝিরা ছুটে এসে ঘিরে ফেলল। একটা আমগাছের নীচে আমি দাঁড়িয়ে। সামনে ছোটর ঘর। মাটির দেয়াল, উপরে টালির চাল। ঘরটায় ছোট তার বউ নিয়ে, সন্তান সন্ততি নিয়ে থাকে। ভাঙা লঝঝরে সাইকেল দেয়ালে ঠেস দেওয়া। ও পাশে একটা বাহারি ঘর। সেখানে তার গোরু আমাকে দেখে দিব্যি চনাতে শুরু করেছে।
ছোটর মেজ ছেলেটা বলল, জ্যাঠু আবাগি চনাচ্ছে।
তারাপদর গোরুর নাম আবাগি। অবশ্য এ-সব আমার বাবার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। বাড়ির কুকুর বেড়াল ছাগল গোরু বাছুর সবার, পরিবারের আর দশজনের মতো একটা না একটা নাম রাখতেন বাবা। বাবা বেঁচে থাকতে ছাগলের শেষ যে বংশধরটি ছিল, তার নাম রেখেছিলেন বাবা—অঞ্জলি। বাবা গত হবার পর সব খালি, মা, বাবা যে ঘরটায় থাকতেন সেখানেই থাকেন। এক ভাইঝি সঙ্গে থাকে। মার নামে আলাদা টাকা, তারাপদর নামে আলাদা টাকা, বাড়ি যাব বলে মনি অর্ডার করা হয়নি, সঙ্গেই নিয়ে গেছি, মা প্রত্যাশায় আছেন, ভাই প্রত্যাশায় আছে। বারান্দার জলচকিতে বসলে ছোট এসে পায়ের কাছে বসল। টাকাটা হাতে দিয়ে বললাম, তোর মামলার কী হল?
—কিছুই না। অহেতুক বছর ধরে কেবল দিন ফেলছে।
একজন অতি গরিব মানুষের উপর এটা কত বড় অত্যাচার টের পেলাম, ওর চোখ মুখ দেখে। আমি আর একটাও কথা বলতে পারলাম না। বাড়িতেই খেলাম। পুকুর থেকে স্নান করে মাটিতে বসে মার হাতের রান্না খেলাম। সারকিট হাউসে আমাদের লাঞ্চের ব্যবস্থা আছে—আমার কেন জানি, যেতে ইচ্ছে হল না। আমি এসেছি শুনে ভটভটিয়া চালিয়ে নিতাইপদ মণ্ডল এল, পঞ্চায়েতের সদস্য—ওকে বললাম, তোরা আছিস, সবাই তো দেখছি ভালই আছিস, ছোটর জন্য কিছু একটা করে দিতে পারছিস না।
স্টেট ইলেকট্রিসিটি বোর্ডে আমাদের পাড়ার অনেকেই কাজ করে। কেউ কেউ চাকরির জন্য এম এল এ কিংবা পঞ্চায়েত প্রধানকে ধরে সিডিউল কাস্টে অ্যাফিডেবিট করে নাম তুলে নিয়েছে।
আজ আমার সংবর্ধনা।
বিকালবেলায় শহর থেকে লোক এসে আমাকে নিয়ে গেল। আমার মেজ ভাই থিতু হতে পেরেছে। সরকারি অফিসে বেয়ারার কাজ করে। বাড়িতে দুধালো গাই আছে দুটো। অনেক দুধ হয়। সে এক গেলাস গরম দুধ রেখে গেল আমার জন্য। দুধটুকু খেয়ে রওনা হবার মুখে মা বললেন, বাড়ি আসবি তো। রাতটা বাড়িতেই থাক। কতদিন পর এলি! মাকে বললাম, ফিরে আসব।
সংবর্ধনা সভায়, লোকজনের ভিড়। বইমেলার উদ্বোধনে দুজন মন্ত্রী হাজির। আমাদের সংবর্ধনা জানাতে পেরে ধন্য—এই এমন ধরনের কিছু বক্তৃতা। আমি মাথা নিচু করে বসেছিলাম। আমরা চারজন—তার মধ্যে একজন আসতে পারেননি। ডি এম স্যার স্যার করছে। আমি মাথা তুলে ভিড়ের মানুষজন দেখতে সাহস পাচ্ছি না। কারণ তাকালেই যেন দেখতে পাব সামনে তারাপদ দাঁড়িয়ে আছে। সংবর্ধনায় কিছু বলতেই হয়।
বললাম, এই শহর আমার দ্বিতীয় জন্মভূমি। পৃথিবীর বহু দেশ ঘুরেছি, দেখেছি, কিন্তু এখানে এলে আমি আমার নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারি। আমার বাবা ছিন্নমূল হয়ে এ দেশে এসেছিলেন। পরিত্যক্ত বনভূমিতে বাড়িঘর বানালেন, সংসার নির্বাহের জন্য, ভাইবোনদের দুটো পেট ভরে খাওয়াবার জন্য কতরকমের কাজ করেছি। নিজের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে, কিন্তু সবার জন্য এই সচ্ছলতা তৈরি করতে পারিনি। নিজেকে মাঝে মাঝে এ-জন্য একজন ব্যর্থ মানুষ মনে হয়। এই শহরের রাস্তায় কৈশোরে কতদিন অনাহারে পথ হেঁটেছি। অনাহার থেকে আত্মরক্ষার জন্য হাতের কাছে যে সুযোগ এসেছিল, তাই কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছি। এই সুযোগই আমাকে শেষ পর্যন্ত এই জেলার একজন গুণী মানুষ গড়ে তুলেছে। আহার, আশ্রয়, উত্তাপই মানুষকে কোথাও নিয়ে যেতে চায়—কোনও ফুলের উপত্যকায়। সেখানে আমি হয়তো হাজির, কিন্তু অনেকেই সেই উপত্যকার খোঁজই পায়নি। আমি এ জন্য পৃথিবীর সব চেয়ে বিষন্ন মানুষ। তারাপদ সেখানে যাবার রাস্তাটা খুঁজে পেলে ভাল হত।
আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হল রেশম বস্ত্র, সোলার কাজ করা ময়ূরপঙ্খী, একশো একটি গোলাপের গুচ্ছ। চারপাশে করতালি, ভিড়, অটোগ্রাফ, স্টল থেকে স্টলে নিয়ে যাওয়া—কখন দেখি তারাপদ হাজির। তার হাতে গোলাপের তোড়া, রেশমবস্ত্র, ময়ূরপঙ্খী নাও। সে বলল, দাদা এগুলি নিয়ে যাচ্ছি।
মেলার উদ্যোক্তারা বললেন, সারকিট হাউজে একজন মন্ত্রী অপেক্ষা করছেন। তিনি আপনাদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করেছেন। চলুন। সেখানে চা খাবার পর জানালাম, আমি বাড়ি ফিরে যাব। একটা রিকশা ডেকে দিলেই চলবে। মন্ত্রী জেলার লোক, তিনি বললেন, আমি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেব। ভাববেন না।
তাঁর গাড়িতেই বাড়ি ফিরলাম। আমাদের গাঁয়ে লাইট এসেছে। কেবল আমাদের বাড়ি ছাড়া। রাস্তার মোড় গাড়ি দাঁড় করাতে বললাম। মন্ত্রীমশায়কে বললাম, ওই যে দেখছেন, গভীর অন্ধকার, সেখানে আমার বাড়ি। আপনি আর অন্ধকারে এগোবেন না। গাড়ির শব্দে তারাপদ ছুটে এসেছে। উলঙ্গ ভাইপো-ভাইঝিরা। সঙ্গে কিছু জোনাকি পোকা।
নেমে বাড়ি গেলে ছোট বলল, কার গাড়ি রে দাদা?
বললাম, মন্ত্রীর গাড়ি।
—তোকে দিয়ে গেল!
বললাম, হ্যাঁ!
ছোট আর কোনও কথা বলল না। বারান্দায় বসে আছি, একটা হ্যারিকেন জ্বলছে। এক বালতি জল রেখেছে বারান্দায়, ভাইঝি গামছাখানা এগিয়ে দিয়ে বলল, হাত মুখ ধুয়ে নিন।
আজ আমার সংবর্ধনা।
ছোট এরই মধ্যে্ দু-বার তিনবার আমার কাছে এসেছে। পায়ের কাছে বসেছে। কিন্তু কিছু না বলেই আবার উঠে গেছে। আমি জানি ছোট কিছু বলতে চায়। তবে সাহস পাচ্ছে না। আবার একটা বড় অঙ্কের টাকা দিলে দোকানটা চালু করতে পারে—এই ভরসায় সে বোধহয় ঘোরাঘুরি করছে, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে সাহস পাচ্ছে না।
বললাম, কিছু বলবি!
ছোট কেমন জবুথবু হয়ে বসেছিল। বলতে সাহস পাচ্ছে না।
মা দরজায় ঠেস দিয়ে বসে আছেন। তারাপদর দিকে তাকিয়ে বললেন, বল, হরিকে বল, না বললে জানবে কী করে।
—কী রে কিছু বলবি?
—দাদা মন্ত্রীকে বলে একটা কাজ করে দিবি?
—কী কাজ?
—তুই বললে হবে। গগন বুঝলি, গগনকে চিনিস, ও বলেছে, কিছু টাকা দিলে আমার একটা চাকরি হবে।
—কীসে?
—লাইনে।
—লাইনে মানে।
—ইলেকট্রিক লাইনে। শ্যালোতেও লোক নেবে। সিডিউল কাস্ট হলে কাজটা হয়ে যায়। সিডিউল কাস্ট ছাড়া নেবে না।
—কী করতে হবে বলবি তো?
—অ্যাফিডেবিট করাতে চাই। দরখাস্তে এম এল এ সই করে দেবে। মন্ত্রী বললে হয়ে যাবে। সই করে দিলেই করে দেবে। কিছু টাকা নেবে।
—তার মানে?
—টাকা দিলে সব হয় দাদা। তুই শুধু মন্ত্রীকে ধরে, এম এল একে ধরে কাজটা আমায় করে দে। আমি সিডিউল কাস্ট হয়ে যাই। আর সহ্য হয় না।
আজ আমার সংবর্ধনা।
১৬ জুন ১৯৮৫