আজি হতে শতবর্ষ পরে : অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত

আজি হতে শতবর্ষ পরে : অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত 

প্রেরিত-পুরুষদের যেখানে সারা, সমাজবিজ্ঞানীদের সেখানে শুরু। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ধর্মশাসিত সমাজে ভবিষ্যদ্বাণীর একচেটিয়া অধিকার ছিল পয়গম্বরদের। আধুনিক বিশ্বে নবুয়তের নতুন দাবিদাররা কল্কে পাচ্ছেন না। আজকের দিনে তাই ভবিষ্যদ্বাণীর দায়িত্ব বর্তেছে সমাজবিজ্ঞানীদের উপর। 

পয়গম্বরদের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীর কাজটি সহজ ছিল। তাঁদের যুক্তি-তর্কের বালাই ছিল না। তাঁদের কাছে, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।” সমাজবিজ্ঞানীদের অবশ্য এ সুবিধে নেই। এদের সকল বক্তব্যই যুক্তি প্রমাণের উপর দাঁড় করাতে হয়। পয়গম্বরদের আরও একটি সুবিধে ছিল; বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্মমতসমূহের মধ্যে মুক্তির পথ নিয়ে পার্থক্য থাকলেও, মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্ময়কর সাদৃশ্য রয়েছে। এঁরা সবাই বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের ইতিহাসে ক্রমাবনতি ঘটছে। মধ্যপ্রাচ্যে যে তিনটি মহান বিশ্বধর্মের জন্ম এদের প্রত্যেকটি বিশ্বাস করে যে, হজরত আদমের স্বর্গ থেকে নির্বাসন হতে শুরু হয়ে মানুষের ইতিহাসে ক্রমেই অবনতি ঘটছে। কখনও কখনও ইতিহাসে স্বর্ণযুগ দেখা দিলেও তা হবে অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। অবক্ষয় ও অবনতির মধ্য দিয়েই মানুষের ইতিহাস শেষ হবে কেয়ামতে। হিন্দু ধর্মও বিশ্বাস করে কলিযুগের শেষে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত ধর্মসমূহের সাথে হিন্দু ধর্মের একটি তফাৎ রয়েছে। হিন্দুরা মনে করে না যে, পৃথিবী ধ্বংসের পরেই ইতিহাস শেষ হয়ে যাবে। হিন্দু ধর্ম মতে ধ্বংসের পর পৃথিবী আবার সৃষ্টি হবে এবং অধঃপতনের পথ ধরে আবার ধ্বংস হবে। বার বার একই প্রক্রিয়া চলবে। হিন্দুদের মত গ্রীক দার্শনিকগণও বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের উন্নতিও হচ্ছে না; অবনতিও হচ্ছে না, মানুষের ইতিহাস চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে। 

প্রেরিত-পুরুষদের ভবিষ্যদ্বাণী কখন ফলবে তা কেউ জানে না। তাই এ সব ভবিষ্যদ্বাণী যাচাই বা পরীক্ষা সম্ভব নয়। এদের সত্যতা প্রমাণ করার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সকল ভবিষ্যদ্বাণীরই সুবিধা হল, ভবিষ্যদ্বাণীর সময়সীমা পার না হওয়া পর্যন্ত তার সত্যতা নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এ জন্য অর্থনীতিবিদদের সম্পর্কেও বলা হয়ে থাকে, “An economist is an expert who will know tomorrow why the things he predicted yesterday did not happen today.” (অর্থনীতিবিদ্ হচ্ছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ যিনি আগামীকাল জানবেন তিনি গতকাল যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আজ তা কেন ঘটেনি।)[১] তবে অর্থনীতিবিদদের সময়ের দিগন্ত পয়গম্বরদের চেয়ে অনেক সংকীর্ণ। তাই প্রেরিত-পুরুষদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে প্রমাণ করা সম্ভব না হলেও, গত দু’শ বছরে অনেক অর্থনীতিবিদের ভবিষ্যদ্বাণীই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কাজেই শতবর্ষ পরে বিশ্ব অর্থনীতিতে কি ঘটবে তা নিয়ে জল্পনা—কল্পনা করার আগে ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা গত কয়েক শ’বছর ধরে যে সব চিন্তা ভাবনা করেছেন তার মূল্যায়ন প্রয়োজন। 

মহাপ্রলয়ের অশনি সংকেতের অথবা জন্মান্তরের একঘেয়ে পুনরাবৃত্তির অন্ধকারে ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রাচীন ও মধ্যযুগে কোন আশার আলো দেখা যায়নি। তাই প্রগতির ধারণার জন্ম মানুষের চিন্তার ইতিহাসে এক নতুন মাত্রার সংযোজন করে। প্রগতির ধারণা থেকেই আগামী দিন নিয়ে স্বপ্নের শুরু। এ ধারণার সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন একজন অর্থনীতিবিদ[২] : 

The idea of progress is, basically the conception of the present as superior to the past and the belief that the future will be, or can be better still. (মূলত প্রগতির ধারণা মনে করে যে বর্তমান অতীতের চেয়ে শ্রেয় এবং বিশ্বাস করে যে ভবিষ্যত আরও ভালো হতে পারে এবং হবে।) 

এ ধারণার ব্যাপক প্রসার ঘটে সতের শতকে। ঐ সময়ে ফ্রান্সে শুরু হয় প্রাচীন ও আধুনিকের লড়াই। চার্ল পেরো (Charles Perrault) বিশ্বাস করতেন যে, প্রাচীন যুগ আধুনিক যুগের চেয়ে শ্রেয়, অর্থাৎ যত সময় যাচ্ছে মানুষের অবস্থার তত অবনতি ঘটছে। প্রগতির পক্ষে বক্তব্য রাখেন বিখ্যাত ফরাসী লেখক বার্নাড দ্য ফঁতনেল (Bernard de Fontenelle)। তাঁর মতে আধুনিক যুগে মানুষের পার্থিব ও মানসিক অগ্রগতি ঘটছে। বিলাতে এ বিতর্ক “কেতাবের লড়াই” (Battle of the Books) নামে পরিচিত ছিল। 

প্রগতির ধারণা কারা জন্ম দিয়েছে এ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। রবার্ট নিসবেট মনে করেন যে, সমাজবিজ্ঞানীরা প্রগতির ধারণার জনক। পক্ষান্তরে ঐতিহাসিক কার্ল বেকার বিশ্বাস করেন যে, প্রগতির ধারণার উদ্ভাবক হল ইউরোপে বুদ্ধিবিভাসা (Enlightenment) আন্দোলনের প্রচারকুশলী লেখকগণ। তাঁরা সবাই পেশাগত দার্শনিক ছিলেন না; কিন্তু তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, আধুনিক কালে মানুষের ইতিহাসে নবযুগের সূচনা হয়েছে এবং মানুষের সভ্যতা উত্তরোত্তর প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। প্রথমদিকে অনেক সমাজবিজ্ঞানী এ মতবাদের বিরোধিতা করেছেন, তবে পরবর্তীকালে সমাজবিজ্ঞানীরাই প্রগতির সবচেয়ে সোচ্চার প্রবক্তা হয়ে দাঁড়ান। সমাজবিজ্ঞান ও প্রগতির ধারণার সম্পর্ক প্রসঙ্গে স্কট গর্ডন যথার্থই বলেছেন, এরা একে অপরকে প্রভাবিত করেছে; প্রগতির ধারণা কখনও সমাজবিজ্ঞানের কারণ, কখনও বা তার প্রভাব।[৪] 

সতের শতকে প্রগতির ধারণাকে উজ্জীবিত করেছে আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। বিজ্ঞানের সাথে শিল্প সাহিত্যে বা দর্শনের একটি বড় তফাৎ রয়েছে। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে জ্ঞান আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে; শিল্প, সাহিত্য ও দর্শনের সর্বোচ্চ বিকাশ যে কোন সময়ে হতে পারে। তাই প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক অথবা এলিজাবেথীয় যুগের নাট্যকার অথবা রেনেসাঁর যুগের চিত্রকর আজকের দার্শনিক, সাহিত্যিক বা শিল্পীদের চেয়ে শ্রেয়। কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। এ কথা সত্য যে, বিজ্ঞানের সূত্রসমূহ প্রথমে আবিষ্কার করেন অত্যন্ত শক্তিধর প্রতিভারা। কিন্তু কালক্রমে এ জ্ঞান অতি সাধারণ লোকরাও আত্মস্থ করতে পারে। তাই আজকের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গড় ছাত্রের বুদ্ধি নিউটনের চেয়ে অনেক কম হলেও, সে নিউটনের চেয়ে অনেক বেশি বিজ্ঞান জানে। বিজ্ঞান সম্পর্কে যথার্থই বলা হয়েছে[৫] : 

The test of the true science is not whether men of genius has revealed some of nature’s mysteries but whether men of lesser talent can learn to use their methods and reveal more. (প্রকৃত বিজ্ঞানের মাপকাঠি এই নয় যে অলোকসাধারণ বিজ্ঞানীরা প্রকৃতির রহস্য প্রকাশ করেছেন কিনা, প্রকৃত মাপকাঠি হল অপেক্ষাকৃত কম চৌকস ব্যক্তিরা প্রতিভাশালীদের পদ্ধতি আয়ত্ত করে আরও নতুন আবিষ্কার করতে পারেন কি না।)

বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সাথে সাথে শিল্পবিপ্লব-উত্তর ইউরোপে অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রগতির ধারণাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে। অর্থনীতিবিদরা কিন্তু অতি সহজে প্রগতির ধারণা বরণ করে নেননি। অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ অর্থনৈতিক অগ্রগতির সম্ভাবনা উপলব্ধি করেছেন। এডাম স্মিথ বিশ্বাস করতেন যে, জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি সম্ভব এবং বাঞ্ছনীয়। তাঁর মতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন শ্রমিক সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কিন্তু রিকার্ডো ও মালথুসের মত ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদ্রা মনে করতেন যে, এ ধরনের উন্নয়ন আদৌ টেকসই হবে না। রিকার্ডোর মতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকা শক্তি হল মুনাফা। মুনাফা বাড়লেই শিল্পপতিরা আরও বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগ বাড়লে শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে, ফলে শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাবে। শ্রমিকদের মজুরি বাড়লে জনসংখ্যা বাড়বে। জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়বে না। খাদ্যের দাম বেড়ে গেলে পুঁজিপতিদের পক্ষে মজুরি কমানো সম্ভব হবে না। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে মুনাফা কমে যাবে, সাথে সাথে অর্থনৈতিক জীবনে স্থবিরতা নেমে আসবে। 

দীর্ঘ মেয়াদে প্রগতির তত্ত্বের অসারতা সবচেয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরেন টমাস রবার্ট ম্যালথুস (১৭৬৬-১৮৩৫)। সচ্ছল পরিবারের সন্তান তিনি; পরবর্তী জীবনে খৃষ্টধর্মের যাজক হয়েছিলেন। পেশা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন অধ্যাপনা। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে তাঁর অধ্যাপনা শুরু আর ভারতীয় প্রশাসকদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান হাইলিবারি কলেজে রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক রূপে তাঁর অধ্যাপনা জীবনের পরিসমাপ্তি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কাজে যোগ দেওয়ার আগেই তিনি তাঁর জনসংখ্যা সংক্রান্ত তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন। ম্যালথুস তাঁর তত্ত্ব রচনা করেছিলেন তাঁর পিতার সাথে তর্ক করার জন্য। ম্যালথুসের বাবা ডেনিয়েল ম্যালথুস ছিলেন একজন প্রগতিবাদী। ইংল্যান্ডে তখন উইলিয়াম গডউইন (Godwin) ও ফ্রান্সে মার্কুই দ্য কঁদরসে (Marquis de Condorcet) প্রচার করছিলেন যে, মানুষের অবস্থা ক্রমে ক্রমে উন্নত হচ্ছে। পিতা ম্যালথুস এসব দার্শনিকদের সমর্থক ছিলেন। কিন্তু পুত্র ম্যালথুস মনে করতেন যে, এসব ধারণা ভুল। খাওয়ার টেবিলে পিতা পুত্রের মধ্যে মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায়ই তুমুল বিতর্ক হত। পিতাকে তাঁর মতবাদে দীক্ষিত করার জন্য ১৭৯৮ সালে ৩২ বছর বয়সে রবার্ট ম্যালথুস “An Essay on the Principle of Population as it Affects the Future Improvement of Society with remarks on the speculations of Mr. Godwin, M. Condorcet and other” নামক গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। যতটুকু জানা যায়, পুত্র ম্যালথুস তাঁর পিতার মত পরিবর্তন করাতে পারেননি। কিন্তু গত দু শ বছরে তাঁর বই লাখ লাখ লোকের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করেছে। 

ম্যালথুস ছিলেন গণিতের ছাত্র। দুটি গাণিতিক অনুপাত নিয়ে তিনি তাঁর বিশ্লেষণ শুরু করেন। ম্যালথুসের দুটি সূত্র হল : (১) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রিত না হলে জ্যামিতিক হারে বাড়ে; (২) খাদ্য উৎপাদন শুধু গাণিতিক হারে বাড়ে। জ্যামিতিক হার গাণিতিক হারের চেয়ে অনেক দ্রুত বাড়ে। তাই খাদ্য উৎপাদন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বেড়ে চলেছে, জনসংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কাজেই জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করলে দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী। 

ম্যালথুস গাণিতিক হার ব্যবহার করলেও, শুধু গণিতের ভিত্তিতে ম্যালথুসের ভবিষ্যদ্বাণী প্রতিষ্ঠা করার কোন জো নেই। জনসংখ্যা খাদ্যশস্যের চেয়ে দ্রুততর হারে বাড়বে এরূপ কোন অমোঘ প্রাকৃতিক বিধি নেই। ম্যালথুসের ব্যবহৃত দুটি গাণিতিক অনুপাতের পক্ষে কোন বাস্তব প্রমাণ নেই। পক্ষান্তরে এদের উল্টোটাই ঘটা স্বাভাবিক। দু’জন নরনারীর পক্ষে একবারে সাধারণত একটি সন্তান উৎপাদন সম্ভব। কিন্তু উদ্ভিদ জগতে উৎপাদন অনেক বেশি। একটি গমের দানা হতে বছরে পঞ্চাশ গুণ উৎপাদন হয়। আমরা যদি দশটি গমের গাছ আর পাঁচটি দম্পতি নিয়ে শুরু করি, আর যদি সর্বোচ্চ হারে গম ও জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তবে গমের উৎপাদন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যাবে। 

ম্যালথুসের প্রস্তাবিত অনুপাত প্রমাণ করতে হলে শুধু অঙ্ক দিয়ে চলবে না, সাথে সাথে একটি পূর্বানুমান (assumption) গ্রহণ করতে হবে। অবশ্যই ঠিকমত পূর্বানুমান গ্রহণ করতে পারলে অনেক মুশকিল আসান সম্ভব। মনে করুন সেই শিক্ষকের কথা যাঁকে ছাত্র প্রশ্ন করলো, “কপোল বাহিয়া পড়ে নয়নের জল” বাক্যাংশের অর্থ কি। শিক্ষক জবাব দিলেন শব্দটি কপোল নয় কপাল, বইয়ে ভুল ছাপা হয়েছে। ছাত্র জানতে চাইল, চোখের পানি কিভাবে কপাল বেয়ে পড়ে। বিপদে পড়ে শিক্ষক জবাব দিলেন যে, এখানে একটি লাইন বাদ পড়ে গেছে; প্রকৃত বাক্যটি হবে, “কপাল বাহিয়া পড়ে নয়নের জল, দুই ঠ্যাং দিল তুলে কদম্বের ডালে।” অর্থনীতিবিদ্ হলে এ শিক্ষক বলতেন কদম্বের ডালে দু ঠ্যাং তুলে দেওয়াটা হচ্ছে তাঁর পূর্বানুমান। ম্যালথুসও সময় মত কদম্বের ডালে দুই ঠ্যাং তুলে দিয়েছিলেন। তাঁর পূর্বানুমান হল জমির পরিমাণ সীমিত। তাই তাঁর সিদ্ধান্ত হল যে, সীমিত জমি হতে অসীম ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। 

অর্থনীতিতে ম্যালথুসের সবচেয়ে বড় অবদান তাই জ্যামিতিক ও গাণিতিক অনুপাতের ব্যবহার নয়, তাঁর অমর কীর্তি হল Law of Diminishing Returns অথবা ক্রমহ্রাসমান-বাড়তি-উৎপাদন বিধি। এ বিধির বক্তব্য হল, কোন পণ্য উৎপাদনের জন্য যদি একাধিক উপাদানের প্রয়োজন হয় এবং একটি উপাদানের পরিমাণও স্থির থাকে তবে অন্যসব উপাদান অনেক বাড়ানো হলেও আনুপাতিক হারে উৎপাদন বাড়বে না, বরং উপকরণ বৃদ্ধির তুলনায় উৎপাদন কমতে থাকে। ধরা যাক, খাদ্য উৎপাদনের জন্য শ্রম ও জমির প্রয়োজন। যদি জমির পরিমাণ স্থির থাকে তবে শুধু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ালে উৎপাদন আনুপাতিক হারে বাড়বে না। ক্রমহ্রাসমান-বাড়তি-উৎপাদন বিধি একটি অনুমান মাত্র, এর পক্ষে কোন বাস্তব প্রমাণ নেই। তবু আমরা কৃষির অভিজ্ঞতা হতে দেখতে পাই যে, শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াতে থাকলে এক পর্যায়ে না এক পর্যায়ে বাড়তি উৎপাদন কমতে থাকে। এ অনুমানের কারণ হল, যদি এ বিধি সত্য না হয় তা হলে উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। জমির পরিমাণ না বাড়িয়ে শুধু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়িয়ে যদি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় তবে শ্রমিকের সংখ্যা বাড়িয়ে একটি ফুলের টব হতেই পৃথিবীর জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এ যুক্তি গ্রহণ করলে আজব পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি তর্কশাস্ত্রে reductio ad absurdum (যুক্তির উদ্ভট পরিণতি) নামে পরিচিত। তর্কের খাতিরে ক্রমহ্রাসমান-বাড়তি-উৎপাদন বিধি মেনে নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। 

ক্রমহ্রাসমান-বাড়তি-উৎপাদন বিধি ম্যালথুসের তত্ত্বের সবচেয়ে বড় সবলতা, আবার এটাই হল তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। সবলতা এ জন্য যে, এ বিধি মিথ্যা প্রমাণ সম্ভব নয়। কিন্তু দুর্বলতা এ জন্য যে, এ বিধি শুধু মাত্র স্বল্প মেয়াদে প্রযোজ্য, দীর্ঘ মেয়াদে অথবা অতিদীর্ঘ মেয়াদে প্রযোজ্য নয়। তবে স্বল্প মেয়াদ আর দীর্ঘ মেয়াদের তফাৎ বুঝতে হবে। অনেকে মনে করেন যে, স্বল্প মেয়াদ হল অল্প সময়, দীর্ঘ মেয়াদ অর্থ দীর্ঘ সময়। অথচ অর্থনীতির এই মেয়াদের সাথে পঞ্জিকার দিন-ক্ষণের সম্পর্ক নেই। এ মেয়াদ হল একটি তাত্ত্বিক ধারণা। স্বল্প মেয়াদে ধারণা করা হয় যে, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনের সকল উপকরণ বাড়ানো সম্ভব হয় না; অন্তত একটি উপকরণের পরিমাণ স্থির থাকে। যদি এমন কোন পণ্য থাকে যার উৎপাদনের সকল উপকরণ তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ানো যায় তবে সে পণ্যের উৎপাদনে কোন স্বল্প মেয়াদই নেই। আবার যদি এমন কোন পণ্য থাকে যার অন্তত একটি উপকরণ কোন মতেই বাড়ানো সম্ভব নয় তবে সে পণ্যের ক্ষেত্রে কোন দীর্ঘ মেয়াদ নেই। দীর্ঘ মেয়াদে প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয় না। অতিদীর্ঘ মেয়াদে প্রযুক্তি পরিবর্তিত হয়। ম্যালথুসের সবচেয়ে বড় ত্রুটি হল, তিনি টেলিস্কোপের বদলে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাকাশের তারা দেখতে চেয়েছেন, তিনি স্বল্প মেয়াদের বিধির ভিত্তিতে অতি দূর ভবিষ্যত সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে চেয়েছেন। দুটো কারণে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অচল। দীর্ঘ মেয়াদে তাঁর পূর্ব-অঙ্গীকার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। ম্যালথুসের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ভূমির পরিমাণ সীমিত থাকেনি। দীর্ঘ মেয়াদে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার শূন্য প্রান্তরে ফসলের আবাদ হয়েছে, এমনকি এশিয়া ও ইউরোপে জঙ্গল পরিষ্কার করে ও অনাবাদী জমি কর্ষণ করে চাষের জমির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ম্যালথুসের অনুমান ছিল, অতিদীর্ঘ মেয়াদে কৃষির প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না। বাস্তবে পুঁজি-ঘন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ও কৃষি সংক্রান্ত গবেষণা প্রয়োগ করে খাদ্য উৎপাদন নাটকীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। 

ইতিহাস তাই ম্যালথুসের ভবিষ্যদ্বাণী সমর্থন করে না, বরং সত্য প্রমাণিত হয়েছে তাঁর পিতার প্রগতিবাদী অনুমান। ঐতিহাসিক কারলো চিপোলার অভিক্ষেপণ অনুসারে ১৭৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৬৫ কোটি হতে ৮৫ কোটি; ১৮৫০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১১০ কোটি হতে ১৩০ কোটি। এ হিসাব অনুসারে ১৭৯৮ সালে যখন ম্যালথুসের জনসংখ্যা সংক্রান্ত বই প্রকাশিত হয় তখন বিশ্বের জনসংখ্যা খুব বেশি হলে ১০৭ কোটি ছিল। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে ১৮০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ছিল ৯৮ কোটি আজকের বিশ্বের জনসংখ্যা ৬০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, অর্থাৎ ম্যালথুসের সময়ের তুলনায় বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ছয় গুণ বেড়েছে। ম্যালথুসের অনুমান সঠিক হলে এ জনসংখ্যা এক শ কোটির কাছাকাছি থাকত, কখনও এত বাড়তে পারত না। 

শুধু জনসংখ্যা বেড়েছে তাই নয়। ম্যালথুসের মুখে ছাই দিয়ে খাদ্যের উৎপাদন জনসংখ্যার চেয়ে দ্রুততর হারে বেড়েছে। এর কারণ হল দুটো। প্রথমত, পৃথিবীর সর্বত্র কৃষি জমির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, কারিগরী পরিবর্তনের ফলে সমপরিমাণ জমিতে আজকে অতীতের চেয়ে উৎপাদন অনেক বেড়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ১৯৬১ সাল হতে ১৯৯৫ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কিন্তু খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এর প্রমাণ হল বিশ্বে মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি। ১৯৬১ সাল হতে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন শতকরা বিশ ভাগ বেড়েছে। এ বৃদ্ধি শুধু শিল্পোন্নত দেশসমূহেই সীমাবদ্ধ নয়। তৃতীয় বিশ্বে ১৯৬৩ সনের তুলনায় ১৯৯০ সনে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ২৭ শতাংশ বেড়ে গেছে। যদিও গত দু শ বছরে কোন কোন স্থানে দুর্ভিক্ষ হয়েছে তবু সামগ্রিকভাবে গত দু’শ বছরের ইতিহাস ম্যালথুসের নৈরাশ্যজনক ভবিষ্যদ্বাণী সমর্থন করেনি। 

ইতিহাসের অভিজ্ঞতা ম্যালথুসের নৈরাশ্যের প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও, সমাজবিজ্ঞানীদের চিন্তার জগত হতে ম্যালথুসের হতাশার কালো ছায়া আজও অপসৃত হয়নি। বিভিন্ন আকারে এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী বার বার ফিরে আসছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে স্ট্যানলি জেভনস্ আশংকা করেছিলেন যে, বিলাতের কয়লা কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা আজও শেষ হয়নি। বিংশ শতাব্দীতে মার্কিন অর্থনীতিবিদ্ হ্যানসন ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, অর্থনীতিতে স্থবিরতা দেখা দেবে, তাঁর ভবিষ্যদ্বাণীও সঠিক হয়নি। তবু ম্যালথুসের তত্ত্ব সত্তরের দশকে “ক্লাব অব রোম” নামে একটি রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পুনরুজ্জীবিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থের নাম Limits to Growth।’ এর পর আরও কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মূল বক্তব্য হল, পৃথিবীর সসীম সম্পদ নিয়ে অসীম জনসংখ্যা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাস না করতে পারলে এবং খাদ্য ও খনিজ সম্পদের চাহিদা না কমালে অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেমে যাবে। এদের ভবিষ্যদ্বাণী যত চমকপ্রদই হোক না কেন, এদের বক্তব্যে কোন নতুনত্ব নেই। ক্লাব অব রোমের জন্মের আগেও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বিশ্বের খনিজ সম্পদ শেষ হয়ে যাবে। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ বিভাগ ঘোষণা করে যে, ১৯২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খনিজ তেল শেষ হয়ে যাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর ১৯৩৯ ও ১৯৫১ সালে ঘোষণা করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈল সম্পদ যথাক্রমে ১৯৫২ ও ১৯৬৪ সালে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এসব ভবিষ্যদ্বাণীর কোনটিই সত্য প্রমাণিত হয়নি। ১৯৭২ সালে ক্লাব অব রোম দাবি করে যে, পৃথিবীতে মাত্র ৫৫০ বিলিয়ন ব্যারেল খনিজ তৈল রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এ হিসাবের ভিত্তিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ৮০-এর দশকের শেষে পৃথিবীতে খনিজ তৈল শেষ হয়ে যাবে। প্রকৃত পরিস্থিতি হল ১৯৭০ হতে ১৯৯০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত সময় কালে ৬০০ বিলিয়ন ব্যারেল তৈল ব্যবহৃত হয়েছে; এর পরেও ১৯৯০ সালে কমপক্ষে ৯০০ বিলিয়ন ব্যারেল তৈলের পরীক্ষিত মজুত রয়েছে। এ মজুতের পরিমাণ বেড়েই চলছে। 

ম্যালথুসের ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে আজও অনেকে বিশ্বাস করেন যে পৃথিবীতে খনিজ সম্পদের সরবরাহ চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। তাই এদের অনেকেই এই মর্মে বাজি ধরেন যে, পৃথিবীতে খনিজ সম্পদের মূল্য বেড়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে ডক্টর এরলিক (Dr. Ehrlich) ও অধ্যাপক জুলিয়ান সাইমন (Julian Simon)—এর বাজির কথা স্মরণ করা যেতে পারে। এরলিক বলতেন যে, ভবিষ্যতে সরবরাহ কমে যাওয়ার ফলে খনিজ সম্পদের দাম বেড়ে যাবে। জুলিয়ান সাইমন মনে করতেন যে, কারিগরী পরিবর্তনের ফলে খনিজ সম্পদের চাহিদা কমে যাবে। এঁরা ১৯৮০ সালের পাঁচটি খনিজ সম্পদ – টাংস্টেন, নিকেল, তামা, ক্রোম ও টিনের দামের উপর বাজি ধরেন। এরলিক দাবি করেন যে ১৯৮০র তুলনায় ১৯৯০ সালে এ সব খনিজ দ্রব্যের দাম বাড়বে। সাইমনের মতে ১৯৯০ সালে এসব দ্রব্যের মূল্য ১৯৮০ সালের স্থিরীকৃত মূল্যের ভিত্তিতে কমবে। ১৯৯০ সালে দেখা গেল সাইমনই সঠিক। শুধু ১৯৮০ সালে স্থিরীকৃত মূল্যে নয়, ১৯৮০ সালের তুলনায় এ সব পণ্যের দাম এমনিতেই কম। আশির দশকে দেখা গেল যে, ৩৫টি খনিজ দ্রব্যের মধ্যে ৩৩টির দাম কমে গেছে। শুধু ম্যাঙ্গানিজ ও জিঙ্কের দাম বেড়েছে। খনিজ দ্রব্যের দাম কমে যাওয়ার বড় কারণ হল কারিগরী পরিবর্তন। একই ধাতু পুনঃপুনঃ ব্যবহার (recycle) করা হচ্ছে। উপরন্তু বিভিন্ন ধাতুর মিশ্রণে অনেক বেশি কার্যকর ধাতু তৈরি করা হচ্ছে। এর ফলে ধাতুর ব্যবহার কমানো হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কাঁচামাল বিজ্ঞানে (material science) বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। 

অর্থনীতিবিদ্ সাইমনের মতনই প্রবৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কিত তত্ত্বের একজন বড় সমালোচক হলেন মার্কিন ভবিষ্যৎ-বিশেষজ্ঞ ম্যাক্স সিংগার। তাঁর মতে পৃথিবীতে বর্তমানে যে সম্পদ রয়েছে তাঁর অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। উপরন্তু কারিগরী পরিবর্তনের ফলে বর্তমান সম্পদ নিয়েই বিশ্ব অর্থনীতিতে উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে তাঁর অভিক্ষেপণসমূহ বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়। তাঁর নিম্নলিখিত অভিক্ষেপণসমূহ বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য : 

১) পৃথিবীতে ৮৫০ কোটি একর চাষযোগ্য জমি রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩৫০ কোটি একর জমিতে চাষ হচ্ছে। অর্থাৎ এখনও চাষের জমির পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো সম্ভব। এর মধ্যে ৪০০ কোটি একর জমি হবে দো-ফসলা।

২) জমির পরিমাণ না বাড়িয়েও শুধু উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব। আবার শুধু সেচ ও সারের ব্যবহার বাড়িয়ে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই খাদ্য উৎপাদন তিনগুণ করা সম্ভব। অর্থাৎ বর্তমান প্রযুক্তি প্ৰয়োগ করে জমির পরিমাণ না বাড়িয়ে বা কর্ষিত জমির পরিমাণ অপরিবর্তিত রেখেই উৎপাদন ৫ গুণ বাড়ানো সম্ভব। 

৩) তেলের দাম বাড়লে উৎপাদন বাড়বে। তেলের বিকল্প প্রযুক্তি দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে। অপ্রচলিত জ্বালানি সম্পদ যথা সৌর শক্তি, বায়ু চালিত শক্তি ও আণবিক শক্তির দ্রুত প্রসার হবে। 

৪) তেল ছাড়া অন্যান্য খনিজ সম্পদের ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। খাদ্য এবং তেল ছাড়া ১৯৮০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা বছরে মাত্র ১৭০ ডলারের খনিজ দ্রব্য ব্যবহার করে। এদের কোনটাই অত্যাবশ্যক নয়। প্রবৃদ্ধির পথে খনিজ সম্পদের দুষ্প্রাপ্যতা কোন অন্তরায় হবে না। 

৫) বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া নয়। এ বৃদ্ধি সমস্থিতি (equilibrium) হতে একটি সাময়িক বিচ্যুতি মাত্র। জন্মের হার বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের জনসংখ্যা বাড়েনি; বেড়েছে মৃত্যুর হার হ্রাস হওয়ার ফলে। কিন্তু সমস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি আরও কমে যাবে। আগামী এক শ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার আগেই পৃথিবীর জনসংখ্যা স্থিতিশীল হয়ে যাবে। 

সিংগারের মত আশাবাদীরা বিশ্বাস করেন যে, প্রবৃদ্ধির কোন সীমা নেই। প্ৰাকৃতিক সম্পদের অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না। খনিজ সম্পদের অপ্রতুলতার ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে যাবে না। ইতিহাস আশাবাদীদের পক্ষে। বিংশ শতাব্দীর অভিজ্ঞতা আশাবাদীদের অনুমান সমর্থন করছে। তবু অনেক অর্থনীতিবিদ এখনও একবিংশ শতাব্দী নিয়ে আশাবাদী নন। তার অবশ্য একটি বড় কারণ হল, অর্থনীতি তার জন্মলগ্ন হতেই কার্লাইলের ভাষায় একটি হতাশাবাদী বিজ্ঞান (dismal science)। আজকের অনেক অর্থনীতিবিদের লেখা পড়লে পুরানো দিনের একটি গল্প মনে পড়ে। এক দেশে ছিলেন এক রাজা। দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে তিনি মন্ত্রীকে দেশের অর্থনীতিবিদদের সাথে পরামর্শ করতে নির্দেশ দেন। পরামর্শ শেষ হলে রাজা মন্ত্রীর কাছে অর্থনীতিবিদদের সুপারিশ জানতে চান। মন্ত্রী বললেন, “হুজুর অর্থনীতিবিদ্রা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এদের এক দল আশাবাদী, আরেক দল নৈরাশ্যবাদী।” রাজা বললেন, “নৈরাশ্যবাদীদের বাদ দিন। আশাবাদীরা কি বলেছেন বলুন।” মন্ত্রী বললেন, “আশাবাদীরা বলছেন যে আগামী বছর দেশের সবাইকে ঘাস খেয়ে থাকতে হবে।” অবাক হয়ে রাজা বললেন “তবে নৈরাশ্যবাদীরা কি বলছে?” মন্ত্রী বললেন, “নৈরাশ্যবাদীরা বলছে যে, আগামী বছরে সবার জন্য যথেষ্ট ঘাসও পাওয়া যাবে না।” আমার মনে হয়, আজকের অনেক আশাবাদী অর্থনীতিবিদ্‌ই একবিংশ শতাব্দীর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উপলদ্ধি করতে পারছেন না। 

বিংশ শতাব্দী হতে একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উত্তরণ ঘটেছে।[১১] বিংশ শতাব্দীতে অর্থ-ব্যবস্থায় পুঁজি ছিল ক্ষমতার প্রধান উৎস, একবিংশ শতাব্দীতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে অর্থ বা বিত্ত নয়, জ্ঞানই হল অর্থনৈতিক ক্ষমতার মৌলিক উপাদান। তথ্য-প্রযুক্তির রাজপথ ধরে নতুন প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই জ্ঞানভিত্তিক সমাজে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হবে কারিগরী পরিবর্তন। অতীতে কারিগরী পরিবর্তন একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া ছিল না। কারিগরী পরিবর্তন আকস্মিকভাবে মাঝে মাঝে ঘটতো, তারপর মাঝে মাঝে ছেদ পড়তো। পুঞ্জীভূত বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও কারিগরী পরিবর্তনের ফলে আজকের বিশ্বে এ ধরনের পরিবর্তন অনেক সহজ হয়ে গেছে। বিরামহীন কারিগরী পরিবর্তন তাই দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারিগরী পরিবর্তনের এত দ্রুত ও ব্যাপক প্রসার হচ্ছে যে, এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করাও শক্ত হবে। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ্ পল রোমার (Paul Romer) যথার্থই বলেছেন: 

But in fact, the realm of possible things is incomprehensibly larger than the realm of actual things. We will never run out of things to discover —a reassuring fact since the process of discovery is the mainspring of economic growth. If we ever reached a point at which there were no discoveries the resource scarcity would bring economic process to a halt. But if we keep discovering new and more valuable ways to make use of the fixed set of raw materials, we can keep creating value. (সম্ভাব্য বস্তুর জগত প্রকৃত বস্তুর জগত হতে অচিন্তনীয়ভাবে বড়। আমাদের আবিষ্কারের বস্তু কখনও শেষ হবে না বরং যেহেতু আবিষ্কারের প্রক্রিয়া হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল উৎস,–এ উপলব্ধি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। যদি এমন পর্যায়ে আমরা উপনীত হই যখন কারিগরী পরিবর্তন থেমে যাবে তখন সম্পদের অভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নও থেমে যাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সীমিত কাঁচামালের নতুন ও আরও মূল্যবান ব্যবহার করব ততক্ষণ আমরা নতুন নতুন মূল্য সৃষ্টি করতে থাকব।)

কারিগরী পরিবর্তনের ফলে কম কাঁচামাল ও শ্রম দিয়ে অধিক মূল্যবান দ্রব্য সৃষ্টি সম্ভব হবে। স্বতশ্চলনের (automation) ব্যাপক প্রয়োগের ফলে মানুষের অনেক স্বপ্ন পূর্ণ হবে। হয়ত এমন একদিন আসবে যেদিন গ্রীক দার্শনিকদের স্বপ্নরাজ্যের (utopia) কল্পনাও বাস্তবায়িত হবে। একজন গ্রীক দার্শনিক স্বপ্নরাজ্যের বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন: 

“The fishes 
Came perfectly willing 
And did their own grilling 
and served themselves on the dishes.” 

স্বপ্নরাজ্য এমন এক স্থান যেখানে মাছেরা নিজে নিজে চলে আসে, নিজেরা নিজেদের সেঁকিয়ে তারা খাদ্য হিসাবে নিজেদের পরিবেশন করে। এ ধরনের আজগুবি কল্পনাকে এক সময়ে বিদ্রূপ করা হত। আজকের প্রজনন প্রকৌশল (genetic engineering) এবং স্বতশ্চলনের যুগে কেউ কি হলফ করে বলতে পারবে যে গ্রীক দার্শনিকদের কল্পিত মাছের উৎপাদন সম্ভব হবে না? অবশ্যই কারিগরী পরিবর্তনের ফলে এমন সব ঘটনা ঘটবে যা এই মুহূর্তে কল্পনা করা সম্ভব নয়। 

অতীতে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান প্রতিবন্ধক ছিল সম্পদের অপ্রতুলতা। দ্রুত কারিগরী পরিবর্তনের ফলে একবিংশ শতাব্দীতে সম্পদের অভাব প্রগতির পথে অলঙ্ঘনীয় অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে না। তবে একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের সামনে দুটো চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে : একটি অতি পুরাতন, অন্যটি নতুন। 

অতি পুরাতন চ্যালেঞ্জটি হল তীব্রতর আর্থিক অসাম্যের পরিবেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। আর্থিক অসাম্যের সমস্যা মোটেও নতুন নয়। তবু বিংশ শতাব্দীর শেষ দুই দশকের অভিজ্ঞতা হতে দেখা যাচ্ছে যে, শিল্পোন্নত দেশসমূহে মানুষে মানুষে আর্থিক অসাম্য বাড়ছে। ১৯৭০ হতে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পরিবারের আয় দ্বিগুণ হয়েছে, অথচ সর্বনিম্ন আয়ের শ্রেণীভুক্ত ২০ শতাংশ পরিবারের আয় প্রায় দশ শতাংশ কমে গেছে।[১৩] ১৯৬৯ সালে শিল্পোন্নত দেশসমূহে সর্বোচ্চ শ্রেণীর গড় মজুরি সর্বনিম্ন মজুরির ৭.৫ গুণ ছিল, ১৯৯২ সালে এ অনুপাত এগারো গুণে দাঁড়িয়েছে।[১৪] সাথে সাথে উন্নয়নশীল আর উন্নত দেশসমূহের ব্যবধান বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ স্মরণ করা যেতে পারে যে, ১৯৮১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাথা পিছু আয় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের ৯১.৭ গুণ ছিল, ১৯৯৭ সালে এ বৈষম্য ১০৬.৪৪ গুণে উন্নীত হয়েছে। আবার উন্নয়নশীল দেশসমূহের ভেতরে ধনী ও গরীবের বৈষম্য অত্যন্ত নগ্ন হয়ে উঠেছে। ১৯৯৮ সালের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় যে, ১৫টি দেশে সর্বোচ্চ আয়ের দশ শতাংশ পরিবার মোট জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি ভোগ করে। এই পনেরটি দেশের সবকটিই হল উন্নয়নশীল দেশ। পৃথিবীতে সবচেয়ে ধন বৈষম্য বিরাজ করছে ব্রাজিলে – কোন উন্নত দেশে নয়। অসাম্যের সূচকের (Gini coefficient) পরিমাণ সর্বাধিক ১ হতে পারে। এই সূচক ব্রাজিলে ০.৬০, অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই সূচক ০.৪০ এবং বাংলাদেশে ০.২৮। 

অর্থনৈতিক অসাম্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। অথচ এর কোন সহজ সমাধান এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। অর্থনৈতিক অসাম্য প্রবাদ বাক্যে বর্ণিত দিল্লীর লাড্ডুর মতো। কথায় বলে, দিল্লীর লাড্ডু যে খেয়েছে সে ঠকেছে এবং যে খায়নি সেও ঠকেছে। আর্থিক অসাম্য থাকলেও বিপদ কেননা তাতে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অসন্তোষ দেখা দেয়। আবার আর্থিক অসাম্য দূর করতে গেলেও বিপদ কেননা সেখানে প্রণোদনা শুকিয়ে যায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্রোতধারা মরু পথে হারিয়ে যায়। অর্থনৈতিক অসাম্য দূর করা সম্ভব না হলে, এই বৈষম্য যাতে দ্রুত বেড়ে না যায় তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এখন পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে শিল্পোন্নত দেশসমূহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের চেয়ে অধিক সফল হয়েছে। 

দ্বিতীয় সমস্যাটি মানুষের ইতিহাসে নতুন। দীর্ঘদিন ধরে পৃথিবীর অধিকাংশ সমাজে পরিবার সামাজিক কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে বিরাজ করেছে। বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে শিল্পোন্নত দেশসমূহে পরিবার একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে হারিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩১ শতাংশ শিশু অবিবাহিত মায়ের সন্তান। বাকি ৬৯ শতাংশ শিশু বিবাহিত মায়ের সন্তান হলেও এদের মাঝে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ জন্মের অল্প দিনের মধ্যেই বাপ মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ দেখতে পায়। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ শতাংশ শিশু বাপ মা উভয়ের যত্ন ও পরিচর্যার সুযোগ লাভ করে না। একজন সমাজতাত্ত্বিক তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে “পিতৃহীন সমাজ” বলে চিহ্নিত করেছেন। এ ধরনের সমাজে শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা দেখা দেয়। দীর্ঘ মেয়াদে ভগ্ন পরিবারে সন্তানদের মানব সম্পদ হিসাবে গড়ে তোলা যাবে কি না সে সম্পর্কে সন্দেহ রয়েছে। এ সমস্যা ইউরোপে আরও প্রকট। সুইডেনে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশু অবিবাহিত মায়েদের গর্ভে জন্ম নেয়। 

পরিবার অবলুপ্তির এ সমস্যাকে বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফুকুইয়ামা “Great Disruption” বা মহাভাঙ্গন হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে এ সমস্যার সমাধান করতে হলে সামাজিক পুঁজি (social capital) গড়ে তুলতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষে মানুষে সহযোগী ও সৃষ্টিশীল সম্পর্ক গড়ে তোলার উপরই নির্ভর করছে সামাজিক পুঁজির সরবরাহ। 

একবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে তাই মানুষের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা অর্থনৈতিক নয়, সবচেয়ে বড় সমস্যা হল রাজনৈতিক ও সামাজিক। প্রায় সাত দশক আগে লর্ড কেইনস যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা একবিংশ শতাব্দী সম্পর্কেও প্রযোজ্য১৬: 

The problem of want and poverty and the economic struggle between classes and nations is nothing but a frightful muddle, a transitory and unnecessary muddle. For the Western World already has the resource and the technique, if we could create the organization to use them, capable of reducing the Economic problem which now absorbs our moral and material energy to a position of secondary importance Thus the … day is not far off when the Economic problem will take the back seat where it belongs, and … the arena of the heart and head will be occupied … by our real problems—the problems of life and human relations, of creation and behaviour and religion. (অভাব আর দারিদ্র্যের সমস্যা এবং শ্রেণী ও জাতিসমূহের মধ্যে সংঘাত একটি ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি মাত্র, একটি সাময়িক ও অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি মাত্র। আমরা যদি যথাযথ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারি তবে পাশ্চাত্য জগতে যে সম্পদ ও কারিগরী জ্ঞান রয়েছে তা আজকের অর্থনেতিক সমস্যাকে, যা আমাদের নৈতিক ও পার্থিব শক্তিকে নিবিষ্ট করে রেখেছে, গৌণ সমস্যাতে পরিণত করতে সক্ষম, তাই … সে দিন দূরে নয় যে দিন অর্থনৈতিক সমস্যা যথাস্থানে পড়ে থাকবে অর্থাৎ পেছনে পড়ে থাকবে এবং … মানুষের হৃদয় ও বুদ্ধিশক্তি … আমাদের সমস্যা যে সব প্রকৃত সমস্যা তাদের সমাধানে নিয়োজিত হবে। সেসব সমস্যা হল বাঁচার সমস্যা, মানবিক সম্পর্কের সমস্যা, সৃষ্টির সমস্যা এবং আচরণ ও ধর্মের সমস্যা।) 

.

তথ্যসূত্র 

১. Peter, Laurence J., Peter’s Quotations (New York: Quill, 1977), p. 447 

২. Gordon, Scott, The History and Philosophy of Social Science (London : Routledge, 1993), p. 30 

৩. Becker, Carl. L., The Heavenly City of the Eighteenth Century Philosophers (New Haven: Yale University Press, 1932 ) 

8. Gordon, Scott, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৫৩ 

৫. Gordon, Scott, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৩ 

৬. Cipolla, Carlo M., The Economic History of World Population (Hammondsworth : Penguin Books, 1969), pp. 101 

৭. Meadows, Donella H., et al., The Limits to Growth (New York: University Books, 1972) 

৮. Meadows, Donella H., et al., Beyond the Limits of Growth (Post Mill: Chelsea Green Publishing Co., 1992) 

৯. Economist, December 20th 1997, pp. 21-23 

১০. Singer, Max, Passage to a Human World (Indiana: Hudson Institute, 1987) 

১১. Drucker, Peter, Post-capitalist Society (New York: Harper Business, 1993) 

১২. Gordon, Scott, প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ১৬২ 

১৩. Krugman, Paul, The Age of Diminished Expectations (Cambridge: MIT Press, 1994), pp. 24 

১৪. Thurow, Lester C., The Future of Capitalism (London : Nicholas Brealy Publishing Ltd., 1996), p. 35 

১৫. Fukuyama, Francis, The Great Disruption (New York: Fres Press, 1999) 

১৬. Keynes, J. M., Forward to Essays in Persuasion (New York: Harcourt and Brace Company, 1932) 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *