1 of 2

আজিজুল হাকিম-কে

আজিজুল হাকিম-কে

১১ ওয়েলসলি স্ট্রিট

কলিকাতা

৫.১০.২৯

কল্যাণীয়েষু-

এইমাত্র তোমার চিঠি ও কবিতা পেলাম। কবিতাটি ‘সওগাতে’ দিলাম।

আমি চিঠির উত্তর দিইনে কারোর, এ বদনামটা কায়েম হয়ে গেছে। সময়ের অভাব বলেই দিতে পারিনে। পলিটিকস্‌, কাব্য, গান, আড্ডা ইত্যাদির চাপে আমার ভদ্রতার ভাদ্র-বধূ বহুদিন হল ঘোমটা টেনে ঘরের কোণ নিয়েছে।

তোমার কবিতা মাঝে মাঝে দেখছি ‘মোহাম্মদী’তে২, দু-একটা খুবই ভালো লেগেছে। ছন্দ ও ভাষা দুই ঘোড়াকেই তুমি বেশ আয়ত্ত করেছ। ভাবের নীহারিকালোক তোমার উজ্জ্বল গ্রহ হয়ে দেখা দেয়নি বলে অধৈর্য হোয়ো না ও দানা বাঁধতে একটু সময় লাগবে হয়তো।

তোমার সামনে আজো বিপুল ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে, অসীম শূন্য তোমার চারপাশে, তোমার স্বপনলোকের নীহারিকাপুঞ্জ আজও বাষ্পাতুর। ওই ভালো, আমি হয়ে-ওঠার চেয়ে সম্ভাবনাকে বেশি ভালবাসি।

আমি এসেছি ধূমকেতুর মতো, হয়তো চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এ বিস্ময় থাকবে না বেশিদিন। ধূমকেতু যেমন সহসা আসে, তেমনই সহসা চলে যায়। তোমরা আমাদের আকাশের অনাগত জ্যোতিষ্ক, গ্রহপুঞ্জ; তোমরা যেদিন রূপ ধরে উঠবে, সেদিন তোমাদের আড়াল করে থাকার কোনো প্রয়োজন হবে না এ ধূমকেতুর। আমার সমস্ত লেখায় কামনায় শুধু এই প্রার্থনাই ধ্বনিত হয়ে উঠেছে – তোমরা এসো অনাগত কবির দল, আমি ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে গেলাম, তোমরা ভোরের পাখি, তাদের গান শুনিয়ো।

জসীম৩, কাদির৪ প্রভৃতিকে আমি ভালোবাসি আমার চেয়ে। আজ হতে তুমি তাদেরই একজন হলে যাদের আমি ভালোবাসি। সব সময় খবর যদি নাই নিতে পারি, মনে রাখব। আমার আন্তরিক শুভাশিস ও স্নেহ গ্রহণ করো! ইতি–

শুভার্থী

নজরুল ইসলাম

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *