আছি

          বৈশাখেতে তপ্ত বাতাস মাতে
কুয়োর ধারে কলাগাছের দীর্ণ পাতে পাতে;
         গ্রামের পথে ক্ষণে ক্ষণে ধুলা উড়ায়,
          ডাক দিয়ে যায় পথের ধারে কৃষ্ণচূড়ায়;
         আশুক্লান্ত বেলগুলি শীর্ণ হয়ে আসে,
ম্লান গন্ধ কুড়িয়ে তারি ছড়িয়ে বেড়ায় সুদীর্ঘ নিশ্বাসে।
             শুকনো টগর উড়িয়ে ফেলে,
চিকন কচি অশথ পাতায় যা খুশি তাই খেলে;
            বাঁশের গাছে কী নিয়ে তার কাড়াকাড়ি,
            খেজুর গাছের শাখায় শাখায় নাড়ানাড়ি;
বটের শাখে ঘনসবুজ ছায়ানিবিড় পাখির পাড়ায়
          হূহু করে ধেয়ে এসে ঘুঘু দুটির নিদ্রা ছাড়ায়;
রুক্ষ কঠিন রক্তমাটি ঢেউ খেলিয়ে মিলিয়ে গেছে দূরে,
           তার মাঝে ওর থেকে থেকে নাচন ঘুরে ঘুরে;
খেপে উঠে হঠাৎ ছোটে তালের বনে উত্তরে দিক্‌সীমায়
                  অস্ফুট ওই বাষ্পনীলিমায়;
          টেলিগ্রাফের তারে তারে
সুর সেধে নেয় পরিহাসের ঝংকারে ঝংকারে;
          এমনি করে বেলা বহে যায়,
এই হাওয়াতে চুপ করে রই একলা জানালায়।
          ওই যে ছাতিম গাছের মতোই আছি
সহজ প্রাণের আবেগ নিয়ে মাটির কাছাকাছি,
           ওর যেমন এই পাতার কাঁপন, যেমন শ্যামলতা,
তেমনি জাগে ছন্দে আমার আজকে দিনের সামান্য এই কথা।
          না থাক্‌ খ্যাতি, না থাক্‌ কীর্তিভার,
          পুঞ্জীভূত অনেক বোঝা অনেক দুরাশার–
আজ আমি যে বেঁচেছিলেম সবার মাঝে মিলে সবার প্রাণে
           সেই বারতা রইল আমার গানে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *