আগামীকাল

আগামীকাল

মেয়েটি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ইতস্তত করছিল। ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবে না। দু-একবার তাকাচ্ছিল ওপরের দিকে, যদি কোনো ঘরের জানলায় কারুকে দেখা যায়। অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন দুজন প্রৌঢ় লোক। একজন একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, কাকে চাই?

মেয়েটি মুখ তুলে বলল, তপন আছে?

প্রৌঢ়টি একটু ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন, তপন? তপন কী?

তপন রায়চৌধুরী।

যাদবপুরে পড়ে?

হ্যাঁ।

ওদের ফ্ল্যাট তিনতলায়। ওই সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে যান।

তাকে একটু নীচে ডেকে পাঠানো যায় না?

কে ডাকবে? আমি অন্য ফ্ল্যাটে থাকি।

মেয়েটি একটুক্ষণ চিন্তা করে বলল, আচ্ছা, ঠিক আছে।

মেয়েটি গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে ধীর পায়ে সিঁড়ির দিকে এগোল।

সে চোখের আড়াল হবার পর প্রৌঢ়টি একটু হেসে অপর প্রৌঢ়কে বললেন, দিনকাল কী রকম বদলেছে দেখেছ? আমাদের সময়ে কোনো ছেলেই কোনো মেয়ের বাড়িতে ডাকতে যেতে সাহস করত না। এখন মেয়েরাই ছেলেদের বাড়িতে ডাকতে আসে।

অপর প্রৌঢ় বললেন, মেয়েটি তিনতলার তপনের সঙ্গে এক ক্লাসে পড়ে বুঝি?

তাই তো মনে হয়।

আমাদের সময়ে কোনো ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে মেয়েরা লোকজনের সামনে দাদা-টাদা বলে ডাকত। তপনদা কিংবা অজয়দা। এখন এরা স্রেফ নাম ধরেই ডাকে।

আপনি-টাপনি বলারও ধার ধারে না। প্রথম থেকেই তুমি।

তুই তুকারিও করে শুনেছি।

প্রথম প্রৌঢ় একটা নকল দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে বললেন, আমরা বড্ড অসময়ে বুড়ো হয়ে গেলুম হে। আমরা এসব কিছুই পেলাম না।

মেয়েটি সিঁড়ি দিয়ে তিনতলায় উঠে গিয়ে থামল। সিঁড়ির দু-পাশে দুটি ফ্ল্যাট। কোন ফ্ল্যাটটা তপনদের সে কী করে বুঝবে? এরা দরজায় নাম লিখে রাখে না কেন?

মেয়েটি প্রথমে ডানদিকের দরজায় কলিং বেল টিপল। দরজা খুলল একটি বলিষ্ঠ চেহারার যুবক।

তপন আছে?

যুবকটি একটু রূঢ়ভাবে বলল, এখানে তপন নামে কেউ থাকে না। এ কথা বলেও যুবকটি দরজা বন্ধ করল না। মেয়েটির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল।

মেয়েটি বুঝতে পারল, পাশাপাশি দুটো ফ্ল্যাটের মধ্যে নিশ্চয় ভাব নেই।

ছেলেটির অন্তত বলা উচিত ছিল, উলটো দিকের ফ্ল্যাটে দেখুন।

মেয়েটি বলল, ও, আমার ভুল হয়ে গেছে।

উলটো দিকে ফিরে সে চলে এল অন্যদিকের ফ্ল্যাটে। সেখানে বেল টিপতে দরজা খুলল একজন চাকর শ্রেণির লোক।

তপনবাবু আছেন?

আছেন। দাদাবাবুর জ্বর।

আমি একটু দেখা করব।

চটি ফটফট করে তপন নিজেই এগিয়ে এল দরজার কাছে। উলটো দিকের ফ্ল্যাটের যুবকটি তখনও দাঁড়িয়ে আছে এদিকে চেয়ে। তাকে দেখে তপনের ভুরু কুঁচকে গেল। মেয়েটিকে বলল, তুমি? এসো ভেতরে এসো।

এই সময় উলটো দিকের দরজাটা দড়াম শব্দে বন্ধ হল।

তপন মেয়েটিকে নিয়ে এল বসবার ঘরে। বেশ ছিমছাম সাজানো। হালকা রঙের সোফাসেট, এক কোণে নীচু টেবিলে পেতলের বুদ্ধ মূর্তি, তার পাশে ফুলদানি, ফুল নেই।

দূর থেকে তপনের মা জিজ্ঞেস করলেন, কে এসেছে রে?

তপন বলল, আমার এক বন্ধু। তুমি এসো একটু—

মা উত্তর দিলেন, যাচ্ছি। একটু পরে যাচ্ছি।

মেয়েটি ধপাস করে একটা সোফায় বসে পড়ে বললে, পাখাটা খুলে দাও।

তপন পাখাটা চালিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। তারপর বলল, হঠাৎ আমার বাড়ি চলে এলে যে?

এমনিই এলাম। তোমাদের উলটো দিকের ফ্ল্যাটের ছেলেটার সঙ্গে বুঝি তোমার ঝগড়া।

ও, সত্যেন, ও তো একটা লোফার।

লোফার মানে? কী করে?

পাড়ায় মস্তানি করে। আসল ব্যাপারটা কী, এ বাড়ির একতলার ফ্ল্যাটে সুস্মিতা বলে একটা মেয়ে থাকত, তাকে সত্যেনের খুব পছন্দ ছিল। কিন্তু সুস্মিতা আবার আমার প্রেমে পড়ে গেল। আমার কাছ থেকে বই-টই নিতে আসত। সেই থেকেই আমার ওপর সত্যেনের রাগ।

নিজের বাড়িতেও বুঝি প্রেম করা হয়েছে তোমার?

নিশ্চয়ই। ফ্ল্যাট বাড়িতে কিংবা পাড়ার মধ্যেই তো প্রথম প্রেমের হাতেখড়ি হয়। তারপর তো কলেজ ইউনিভার্সিটিতে।

সুস্মিতা এখন আর আসে না বই নিতে?

ওর বিয়ে হয়ে গেছে।

তোমার সব প্রেমিকাদেরই এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায় কেন?

তার মানে?

তোমার প্রেমিকাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়ে যায় কিন্তু তোমাকে কেউ তারা বিয়ে করতে চায় না।

তপন হো হো করে হাসল। সিগারেটে টান দিল আবার।

তপনের মা এসে ঢুকলেন। বেশ জমকালো একটা শাড়ি পরা। এক্ষুনি বাইরে বেরুবেন মনে হয়।

তপন সিগারেটের ছাই ঝেড়ে বলল, মা, তোমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিই। এর নাম খুকু—এই তোমার ভালো নাম কী যেন?

মেয়েটি প্রথমে হাত জোড় করে নমস্কার করে বলল, আমার নাম সুবর্ণা চ্যাটার্জি।

তারপর সে উঠে গিয়ে তপনের মায়ের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল।

তিনি বললেন, আরে থাক থাক, পায়ে হাত দিতে হবে না।

তপন বলল, সুবর্ণা আমাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ওর সাবজেক্ট ফিলজফি।

মা বললেন, হ্যাঁ, তোমার কথা শুনেছি। তুমি আগে আমাদের বাড়িতে আসোনি তো!

সুবর্ণা বলল, না আসা হয়নি। তপন কখনও আসতেই বলেনি।

এবার থেকে আসবে। তুমি কী খাবে চা না কফি?

আমি কিছু খাব না মাসিমা।

কিচ্ছু খাবে না? একটু শরবত করে দিই?

আচ্ছা দিন।

মা তপনকে বললেন, আমি রঘুর হাত দিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তারপর আমি একটু বেরুব। সাড়ে বারোটা বাজলে তুই রঘুকে মনে করে পাঠিয়ে দিস বাপ্পাকে যেন স্কুল থেকে নিয়ে আসে।

তপন জিজ্ঞেস করলে, তুমি কোথায় যাবে?

দু-একটা জিনিস কেনাকাটা আছে, তারপর তোর ঝুনুমাসির বাড়ি থেকেও একটু ঘুরে আসতে হবে।

তিনি সুবর্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন, আচ্ছা তোমরা গল্প করো—

মা চলে যাবার পর তপন জিজ্ঞেস করলে, মাকে তো বললে আমি তোমাকে কখনও বাড়িতে আসতে বলিনি। তাহলে এলে কেন?

এমনিই ইচ্ছে হল।

হঠাৎ এরকম ইচ্ছে?

তোমাদের টেলিফোনের লাইনটা খারাপ?

দু-তিন দিন ধরে খারাপ হয়ে আছে।

তুমি চারদিন ক্লাসে যাওনি—

আমার জ্বর।

বাজে কথা।

বাজে কথা মানে? আমি কি বাড়ির চাকরকেও মিথ্যে শিখিয়ে রেখেছি নাকি?

সুবর্ণা তপনের গলার কাছটা ছুঁয়ে বললে, কই গা গরম নেই তো!

কাল রাত পর্যন্ত ছিল।

আগে তো অনেকবার এর থেকে বেশি জ্বর কিংবা শরীর খারাপ নিয়েও ইউনিভার্সিটিতে যেতে।

তা যেতাম। তুমি চারদিন আমাকে না দেখেই উতলা হয়ে পড়েছিল নাকি? সেইজন্যই আজ দেখতে এলে?

না। সেজন্যে নয়। তোমাকে একটা খবর দিতে এলাম।

কী।

চাকর রঘু একটা ট্রে হাতে নিয়ে ঘরে এল। এক গেলাসে অরেঞ্জ স্কোয়াসের শরবত আর একটি প্লেটে চারখানা শোনপাপড়ি।

তপন জিজ্ঞেস করলে, রঘু, মা বেরিয়ে গেছেন?

হ্যাঁ, এই মাত্র গেলেন।

দরজাটা বন্ধ করে রাখিস।

চাকর ট্রে-টা রেখে চলে যাবার পর তপন নিজেই আগে প্লেট থেকে একটা শোনপাপড়ি তুলে মুখে পুরল। তারপর বলল, শোনপাপড়িগুলো লাভলি, মা নিজে বানিয়েছে, খেয়ে দেখো।

সুবর্ণাও একটা তুলে মুখে দিয়ে বলল, সত্যি খুব ভালো হয়েছে তো!

এবার তোমার খবরটা বলো।

আগামী সোমবার আমি রণজয়কে বিয়ে করছি।

এ আর নতুন খবর কী?

তুমি জানতে?

আগামী সোমবারই যে বিয়ে করবে, তা জানতাম না। রণজয়ই আমাকে বলছিল তুমি বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছ।

তোমার কাছ থেকে একটা পরামর্শ চাইতে এলাম।

বলো।

আমার কি এক্ষুনি বিয়ে করা উচিত?

সব মেয়েরই তাড়াতাড়ি বিয়ে করা উচিত। আমার মতে—

ইয়ার্কি নয়। একটু সিরিয়াসলি চিন্তা করে বলো—

এ নিয়ে এত চিন্তা-ভাবনা করার কী আছে?

বাড়িতে কারুকে এখন জানাচ্ছি না।

ও। কিন্তু তুমি হঠাৎ বিয়ের জন্য এত ব্যস্ত হয়ে উঠলেই বা কেন?

কারণ নিশ্চয়ই একটা আছে। তুমি সবটা জানো না তপন। রণজয় একলা একটা ঘর নিয়ে থাকে রয়েড স্ট্রিটে। সেখানে আমাকে প্রায়ই যেতে হয়। মানে আমি না গেলে ও ছেলেমানুষের মতন জেদ করে, রাগারাগি করে। দু-তিন দিন আমি না গেলে ও এমনকি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়, পড়াশুনোও একেবারে করে না।

রোজ একবার করে গেলেই পারো।

তাই তো যাই। তার ফলে কী হয় বুঝতেই পারো।

পারছি। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান পাড়া, ডিসটার্ব করার কেউ নেই।

আমার ভীষণ দুশ্চিন্তা হয়।

দুশ্চিন্তা! তোমার ভালো লাগে না! এত চমৎকার সুযোগ। দ্যাখো, আঠারো থেকে চবিবশ বছর সময়টা হচ্ছে সবচেয়ে চমৎকার বয়েস। এই সময়ে সেক্স জিনিসটা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়েই এই সময়টা নষ্ট করে। সুযোগ পায় না। পড়াশুনো শেষ না করে চাকরি-বাকরি না পেলে কেউ বিয়ে করতে পারে না। কিন্তু পড়াশুনো কিংবা চাকরির সঙ্গে সেক্সের কী সম্পর্ক? বাবা মায়ের শাসনে থেকে অনেককেই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। তুমি এরকম সুন্দরভাবে সেটা পেয়ে গেছ, অথচ বলতে চাও, সেটা তোমার ভালো না!

ভালো লাগা না লাগার কথা নয়। আমার ভয় হয়, কিছু যদি হয়ে-টয়ে যায়!

প্রি-কশান নিলেই পারো। হাতের কাছে যখন সব কিছুই পাওয়া যায়—

ভুলে যেও না, এদেশটা এখনও ইউরোপ আমেরিকা হয়ে যায়নি।

ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে মেয়েদের কি চারটে করে হাত-পা আছে নাকি? ওদের সঙ্গে তুলনা দেবার তো দরকার নেই। আমি বলছি, সেটা খুব সহজ এবং স্বাভাবিক ব্যাপার।

মেয়েদের সব ব্যাপার তোমরা এখনও বুঝতে পারো না।

ও, এদিকে অন্য সময় ছেলেদের সঙ্গে সমান সমান হবার ইচ্ছে আর অসুবিধাতে পড়লেই মেয়েদের জন্য আলাদা ব্যাপার।

অসুবিধের কিছু নেই এর মধ্যে? আমি ভাবছিলাম, ভবিষ্যতে তো রণজয়কে আমি বিয়ে করবই—তাহলে রেজিস্ট্রেশনটা সেরে রাখলেই বা দোষ কী?

ব্যাপারটা আইনসংগত করে রাখা?

হ্যাঁ।

আইনসংগত করলে স্বাদটা কমে যায়। গোপন ব্যাপার থাকলেই সেক্সটা ভালো জমে। আইন-টাইনের ব্যাপারটা যতদিন দূরে সরিয়ে রাখা যায়।

তুমি বড্ড বাজে কথা বল। তুমি কি সবজান্তা নাকি?

তুমিই তো আমার কাছে পরামর্শ চাইলে।

আমি তোমার কাছ থেকে জানতে চাইছি, এখন বিয়েটা করে রাখলে কী রণজয়ের পড়াশুনোর ক্ষতি হবে?

রণজয় ফার্স্ট ক্লাস পাবেই।

তুমি জানো না, আজকাল ওর পড়াশুনোয় মন নেই।

তার মানে তুমি ওকে অতৃপ্ত করে রেখেছ। ছটফটানি থাকলে পড়াশুনোয় মন বসবে কী করে? বিয়েটাই করে ফেল তাহলে। নিশ্চিন্ত হয়ে পড়াশুনোয় মন দেবে।

তাহলে তুমি বলছ?

হ্যাঁ, বলছিই তো। রণজয় পাত্র হিসেবেও ভালো। ভারতবর্ষে যতই চাকরির সমস্যা থাকুক, ফার্স্ট ক্লাস পাওয়া ইঞ্জিনিয়ারদের এখনও চাকুরির অভাব হবার কথা নয়। তা ছাড়া, ওদের ফ্যামিলির অনেক রকম কানেকশান আছে।

এই কথার পর সুবর্ণা কেন যে হঠাৎ রেগে উঠল তার কোনো যুক্তি নেই। সে শরবতের গেলাসটা ঠক করে নামিয়ে রেখে ঝাঁজালো কণ্ঠে বলল, এসব কথা বলছ কেন? আমি রণজয়কে বিয়ে করছি, তার কারণ ও আমাকে ভালোবাসে। আমিও ওকে ভালোবাসি।

তপন হাসতে হাসতে লঘু গলায় বলল, সে তো আমিও তোমাকে ভালোবাসি। তুমিও আমাকে ভালোবাসো।

থাক, আর বাজে কথা বলতে হবে না। তোমার কত অসংখ্য মেয়ে বন্ধু।

তাদের সবাইকে আমি ভালোবাসি। তোমাকে একটু বেশি ভালোবাসি।

এর নাম ভালোবাসা?

তা ছাড়া কী? যাক, আমার কথা থাক। তুমি আমাকে ভালোবাসো না?

মোটেই না।

তাহলে আজ আমার কাছে ছুটে এসেছ কেন?

তোমার কাছে এসেছি বন্ধু হিসেবে একটা পরামর্শ নিতে।

বন্ধুকে বুঝি ভালোবাসা যায় না? ভালো না বাসলে আবার বন্ধু কী? তুমি যে অন্য কোনো বন্ধুর কাছে না গিয়ে আমার কাছেই এসেছ, তাতেই প্রমাণ হয়, তুমি আমাকে একটু বেশি ভালোবাসো।

এসব বাজে কথা থাক। আমি এবার উঠব। অনেক বেলা হয়েছে।

কটা বাজল?

বারোটা কুড়ি।

ওরে বাবা, খেয়ালই করিনি। বসো, আর একটু বসো, আমি এক্ষুনি আসছি।

তপন উঠে গিয়ে রঘুকে ডাকল। তাকে বলল, তক্ষুনি বেরিয়ে গিয়ে ছোটো ভাইকে স্কুল থেকে আনতে।

রঘু চলে যাবার পর তপন দরজা বন্ধ করে দিল। গোটা ফ্ল্যাটটাতে এখন সে আর সুবর্ণা ছাড়া আর কেউ নেই। এ রকম সময় আবহাওয়াটা হঠাৎ কীরকম বদলে যায়।

তপন ঘরে ফিরে এসে এবার বসল সুবর্ণার পাশে। তার কাঁধে হাত রেখে বলল, তুমি কি এখান থেকে ইউনিভার্সিটিতে যাবে?

সুবর্ণা বলল, না। আজ আর যাব না।

তাহলে কোথায় যাবে? রণজয়ের ফ্ল্যাটে?

ও নেই এখন। বাড়িতেই যাব।

আমার দিকে একটু তাকাও তো—

সুবর্ণা ওর দিকে মুখ ফেরাতেই তপন আলতোভাবে তার ঠোঁটে একটা চুমু খেল।

তারপর বলল, তোমাকে খুব অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে।

সুবর্ণা বলল, আমাদের একলা রেখে তোমার মা বেরিয়ে গেলেন।

তাতে কী হয়েছে?

উনি কিছু ভাবলেন না?

কী আবার ভাববেন? ছেলের চরিত্র খারাপ হয়ে যাবে? এতে মেয়ের মায়েরা ভয় পেতে পারেন, কিন্তু এতে ছেলের মা ভয় পাবেন কেন?

ছেলে হলেই বুঝি তাদের সব রকম স্বাধীনতা দেওয়া যায়?

আমি পাই। এমন কি, ছেলেবেলা থেকেই আমি একটু মেয়ে-টেয়েদের সঙ্গে মিশতে ভালোবাসি। আমার মা কখনও বাধা দেবার চেষ্টা করেননি।

তুমি ভাগ্যবান, এরকম মা পেয়েছ।

আমার মা-ও ভাগ্যবান, আমার মতন ছেলে পেয়েছেন। এত মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশা করেও তো আমি বয়ে যাইনি। হায়ার সেকেন্ডারিতে সেভেনথ স্ট্যান্ড করেছিলাম। এবারেও ফাইনাল পরীক্ষাতে ফার্স্ট ক্লাস তো পাবই, ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্টও হতে পারি।

তোমার বড্ড অহংকার!

সত্যি কথাই বলছি। লোকজনদের মাঝখানে তো আর চেঁচিয়ে বলতে যাচ্ছি না যে অহংকার হবে।

আচ্ছা, এবার সত্যি বলো তো, এই চারদিন কেন ইউনিভার্সিটিতে যাওনি?

বলছি। তার আগে আমাকে একটা চুমু খাও।

সুবর্ণা ঠোঁটটা এগিয়ে আনল। তপন বলল, উঁহু, ও রকমভাবে নয়। এক হাতে আমার চুল মুঠো করে ধরো, এক হাত রাখ আমার কাঁধে—

সুবর্ণা সরে গেল। একটু রাগের ভাব দেখিয়ে বলল ইস, আবদার, না? দুদিন বাদে আমি পরের বউ হয়ে যাচ্ছি না?

বাঃ, তাতে কী হয়েছে?

কী হয়েছে মানে? আর একজনকে বিয়ে করেও বুঝি আমি তোমার সঙ্গে এই সব করব?

রণজয় তোমাকে বিয়ে করছে বলে কি পুরোপুরি কিনে নিচ্ছে নাকি? তোমার আর কোনো স্বাধীনতা থাকবে না?

স্বাধীনতা মানে বুঝি এই সব? সব কিছুরই একটা যুক্তি থাকা চাই।

চমৎকার যুক্তি রয়েছে তো। এই ঘরে শুধু তুমি আর আমি আছি, ফ্ল্যাটে আর কেউ নেই। এই সময়টা একটু ভালোভাবে কাটানো উচিত নয়? আর চুমু খাওয়ার মতন এমন ভালো জিনিস আর কী আছে বলো? রণজয়ের ফ্ল্যাটে গিয়েও কি তুমি এই সব করো না?

সেইজন্যই তো তাকে আমি বিয়ে করছি।

আঃ, মেয়েরা বড্ড বিয়ে পাগলা হয়। বিয়ের সঙ্গে এর সম্পর্ক কী? মানুষের শরীর কখনও ক্ষয়ে যায় না, শরীর কখনও অপবিত্র হয় না। এসো, এসো, দেরি করে লাভ কী।

আমি যদি রাজি না হই, তুমি কি জোর করবে?

মোটেই না। ওই সব ব্যাপারে আমি জোর-জার একেবারেই পছন্দ করি না।

আমি রাজি নই।

তপন সঙ্গে সঙ্গে সোফা থেকে উঠে পড়ল। বলল, ঠিক আছে।

সুবর্ণা মাথা নীচু করে চুপ করে বসে রইল। তপন জানলার কাছে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে।

সুবর্ণা একটু পরে মুখ তুলে বলল, তুমি রাগ করলে?

না, এতে রাগের কী আছে? আমি তোমাকে ভালোবাসি সুবর্ণা, তোমার সব রকম ব্যবহারই আমার ভালো লাগে।

তুমি ভালোবাসার কথা মুখে উচ্চারণ করো না। তুমি জানোই না কাকে ভালোবাসা বলে।

কোন বইয়ে ভালোবাসার ডেফিনেশান লেখা আছে? নামটা বলে দাও? পড়ে মুখস্থ করে নেব। তারপর সেই অনুযায়ী ভালোবাসার চেষ্টা করব।

এই ঘরে এখন অন্য কোনো মেয়ে থাকলে, তাকেও তুমি চুমু খেতে চাইতে?

যদি তাকে আমার পছন্দ হত, তাহলে চাইতাম।

যে-কোনো মেয়ে?

বললাম তো, যদি পছন্দ হত, যদি সেও রাজি হত।

বুঝলাম। আচ্ছা, আমি এবার চলি—

ঠিক আছে। বিয়ের নেমন্তন্ন খাওয়াচ্ছ তো?

সুবর্ণা উঠে দাঁড়াল। গাঢ় চোখে তাকাল তপনের দিকে। তপন মিটিমিটি হাসছে। সুবর্ণা তপনের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলল, একবার কিন্তু!

তপন মাথাটা ঝুঁকিয়ে বলল, চুলের মুঠি ধরো।

সুবর্ণা মুঠো করে ধরল তপনের চুল, আর একটা হাত রাখল ওর কাঁধে, তারপর ঠোঁটে ঠোঁট রাখল।

তপন সুবর্ণাকে কাছে টেনে নিয়ে প্রচণ্ডভাবে আলিঙ্গন করল। সুবর্ণার শরীরটাকে তার শরীরের সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চাইল যেন…

প্রায় দম বন্ধ হবার শেষ মুহূর্তে ওরা ছাড়াছাড়ি করল। সুবর্ণা একটু একটু হাঁপাচ্ছে। তার গালে লেগেছে লালচে রং।

নিজেকে একটু সামলে নেবার পর সুবর্ণা লজ্জিতভাবে বলল, আচ্ছা, সত্যি করে বলো তো এটা কি পাপ নয়?

পাপ পুণ্যের কথা পরে হবে। আগে বলো, তোমার ভালো লাগেনি?

যাঃ!

চিরকালই মেয়েরা এই সময় লজ্জা পাবে। কিছুতেই সত্যি কথা বলবে না। যাই হোক, লজ্জাটাও এই সময় সুন্দর দেখায়।

সুবর্ণা তপনের বুকে দুটো কিল মেরে বলল, তুমি কি কিছুতেই একটু সিরিয়াস হতে পারো না?

তপন আবার জড়িয়ে ধরল সুবর্ণাকে। আবার একটি দীর্ঘস্থায়ী চুম্বন।

সুবর্ণার দিক থেকে বাধা দেবার কোনো চিহ্ন নেই।

তপন বলল, এবার তোমার পাপ-পুণ্যের প্রশ্নটার উত্তর দিচ্ছি। দুজন মানুষ যদি কোনো একটা কাজ করে আনন্দ পায় এবং তাতে অন্য কারুর কোনো ক্ষতি না হয় তাহলে সেটা পাপ হতেই পারে না।

রণজয় যদি জানতে পারে, তাহলে ক্ষতি হবে না?

তুমি অত্যন্ত নির্বোধ না হলে নিশ্চয়ই রণজয়কে এইসব কথা বলতে যাবে না।

আর তা ছাড়া আমার মনে হয়, রণজয় জানতে পারলেও এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। তোমার কী ধারণা, রণজয় তোমাকে ছাড়া আর কোনো মেয়েকে জীবনে ছুঁয়ে দেখেনি?

না, তা মোটেই ভাবি না।

তাহলে? এইসব সামান্য ব্যাপার নিয়ে বেশি মাথা ঘামানোর দরকার কী!

আচ্ছা, তুমি যদি জানতে পারো একটি মেয়ে অন্য একজনের সঙ্গে শুয়েছে, তারপরেও তুমি সেই মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারবে?

বাঃ, তাহলে একবার ডিভোর্স করার পরেও মেয়েদের আবার বিয়ে হয় কী করে?

তুমি আমাকে শুচিবায়ুগ্রস্ত ভেবেছ নাকি? তোমাকে তো বলেইছি, মানুষের শরীর কখনও অপবিত্র হয় না। যত কিছু ঝঞ্ঝাট মানুষের মন নিয়ে। বলে তপন একটা সিগারেট ধরাতে গেল।

সুবর্ণা হাত বাড়িয়ে বলল, দাও, আমি ধরিয়ে দিচ্ছি।

সুবর্ণার মুখে সিগারেট, তপন দেশলাই জ্বালিয়ে দিল। সুবর্ণা দুবার জোরে টান দিয়ে সিগারেটটা এগিয়ে দিল তপনের দিকে।

সুবর্ণা বলল, এবার বলো, কেন তুমি চারদিন ইউনিভার্সিটিতে যাওনি?

পরীক্ষা এসে গেছে, এখন আর ক্লাসে না গেলেও হয়। তা ছাড়া—

তা ছাড়া?

আমার মনে হচ্ছিল, রণজয় যেন আমাকে একটু হিংসে করছে। আমি শুনেছিলাম তোমাদের শিগগিরই বিয়ে হবে। কিন্তু ক্যাম্পাসের মধ্যে তুমি আমার সঙ্গে বার বার দেখা করো, বেশি কথা বলো আমার সঙ্গে, এটা যেন রণজয়ের ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ও আগে এরকম ছিল না, এখন যেন ওর ভেতর একটা হিংসে এসে ঢুকেছে। তাই আমি ভাবলাম আমার কিছুদিন দূরে থাকাই ভালো। বিয়ের আগে অশান্তি করার কোনো মানে হয় না। অর্থাৎ তোমার কথা ভেবেই।

আমার কথা ভেবে?

হ্যাঁ, তোমার ভালোর জন্যই—

সুবর্ণা ঠাস করে চড় মারল তপনের গালে। বেশ জোরে।

তপন গালে হাত বুলিয়ে নিল একবার। তারপর হেসে জিজ্ঞেস করল, এটা কীসের জন্য?

তুমি আজ সারাক্ষণ শুধু আমাকে অপমান করছ।

অপমান? তার মানে?

নিশ্চয়ই অপমান করেছ। রণজয়ের হিংসে হয়, আর তোমার বুঝি হিংসে হতে পারে না?

আমার হিংসে হবে কেন?

তুমি একবারও আমাকে বলতে পারতে না, তুমি রণজয়কে বিয়ে করো না!

তোমাদের বিয়ে তো আগেই ঠিক হয়ে গেছে।

ঠিক হয়ে গেলেই-বা, তুমি যদি একবার বলতে—

বলব কেন সে কথা, রণজয়ের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই তোমার চেনা—ও তোমাকে পাগলের মতন চায়—তুমিও ওকে ভালোবাস, তোমাদের দুজনের বিয়ে হবে, এটাই তো সবচেয়ে স্বাভাবিক ব্যাপার।

তাহলে তুমি কেন বলেছিলে, তুমি আমাকে ভালোবাস?

সে কথাও বলতে পারব না? তাতে দোষটা কী হয়েছে।

এরকম মিথ্যে কথা আর কজনকে বলেছ?

না, মিথ্যে নয়। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। কিন্তু ভালোবাসলেই কি একেবারে নিজের দখলে রাখতে হবে? তুমি অন্য কারুর স্ত্রী হয়ে গেলেও কি তোমাকে আমি ভালোবাসতে পারি না! কারুর বাড়ির সুন্দর বাগান দেখে যদি আমার খুব ভালো লাগে তাহলেই কি আমি বাগানটা দখল করে নেবার চেষ্টা করব? …কথা বলতে বলতে থেমে গেল তপন। সুবর্ণার চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়ছে।

তপন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, এ কী?

সুবর্ণা কোনো উত্তর দিল না।

তপন সুবর্ণার কোমর ধরে তাকে আবার সোফায় বসিয়ে দিল জোর করে। একটা আঙুল দিয়ে আলতোভাবে সুবর্ণার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, বিয়ের আগে সব মেয়েরাই কাঁদে, তাই না? ভয় হচ্ছে বুঝি?

তুমি আমার এরকম ক্ষতি করলে কেন?

কী ক্ষতি করলাম?

আমার মনের মধ্যে কী হচ্ছে, তুমি একবার ভেবেও দেখো না। আমি রণজয়কে বিয়ে করতাম, ওকে বিয়ে করে সুখী হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি মাঝখান থেকে এসে সব গণ্ডগোল বাধিয়ে দিলে! তুমি কেন আজ আমায় নিয়ে এরকম করলে!

কী করেছি?

সবটাই তোমার ছেলেখেলা?

তপন হঠাৎ রেগে উঠল। ঘড়ির দিকে আঙুল দেখিয়ে কড়া গলায় বলল, আর মাত্র পনেরো মিনিট সময় আছে, তারপরই রঘু আমার ছোটো ভাইকে নিয়ে এসে পড়বে, এই পনেরো মিনিট আমরা আনন্দ করতে পারি। তুমি আমার সঙ্গে যদি বিছানায়—ছি ছি, তুমি আমাকে এই ভাব!

আমি ঠিকই ভাবি, মেয়ে মানেই কি এক একটা সংস্কারের ডিপো? তুমি আজ বড্ড ন্যাকামি করছ।

তপন, তোমাকে আমি সাবধান করে দিচ্ছি।

সুবর্ণা তুমি নিজে থেকেই এখানে এসেছ, আমি তোমাকে ডাকিনি।

আমি এক্ষুনি চলে যাচ্ছি।

গেট আউট!

সুবর্ণা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এদিক ওদিক তাকাল। তপনকে আঘাত করার জন্য সে একটা কিছু খুঁজছে। সে রকম কিছুই নেই, নীচু টেবিল থেকে বুদ্ধ মূর্তিটাই তুলে নিল। অহিংসার প্রতিমূর্তিটি দিয়ে সে ঠকাস করে মারল তপনের মাথায়। তখন সুবর্ণার দুটো হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল, একদম খুন করে ফেলব কিন্তু। তুমি আমার রাগ চেনো না!

আমাকে ছেড়ে দাও, অসভ্য কোথাকার!

না ছাড়ব না। আমি জানি তোমার ব্যাপার, তুমি রণজয়কে বিয়ে করতে চাও, আবার আমাকেও ছাড়তে চাও না, দুজনকেই একসঙ্গে বিয়ে করে দ্রৌপদী হতে চাও?

আমাকে ছেড়ে দাও, আমি আর কোনোদিন তোমায় মুখ দেখাব না।

না, কিছুতেই ছাড়ব না, তুমি আমাকে মেরেছ।

তপন, তুমি বলেছিলে তুমি আমার ওপরে জোর করবে না।

তুমিই চাইছ, আমি জোর করি।

না, প্লিজ না।

তপন ছেড়ে দিল সুবর্ণার হাত। তার ফরসা হাত দুটি তপনের দৃঢ় মুষ্টিতে লাল হয়ে গেছে। ধরা গলায় সুবর্ণা বলল, আমি চলে যাচ্ছি, আর কোনোদিন তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে না।

তপন বলল, নিশ্চয়ই দেখা হবে। তোমার বিয়ের দিনে।

না।

হ্যাঁ হবেই। তুমি নেমন্তন্ন না করলেও রণজয় করবে।

আমি ওকে বারণ করে দেব।

ও শুনবে না। ও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রীর সঙ্গে কী চমৎকার ব্যবহার!

স্বামীর ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে তোমারই বা কী চমৎকার ব্যবহার। আমার বুদ্ধ মূর্তিটা তুমি ভেঙে ফেলেছ।

আর একটা কিনে পাঠিয়ে দেব।

তাই দিও।

আমি যাচ্ছি এখন।

যাও।

সারা জীবন মনে থাকবে, তুমি আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছ।

আর একটা কথাও মনে রেখো। আমি তোমাকে ভালোবাসি। এখনও ভালোবাসি। পরেও ভালোবাসব।

আবার ওই কথা! খবরদার বলবে না।

বেশ করব বলব। একশোবার বলব। কেউ আমাকে বাধা দিতে পারবে না।

সুবর্ণা দু হাতে মুখ ঢেকে করুণ গলায় বললে, কেন বার বার ওই মিথ্যে কথাটা বলে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ? আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার কী লাভ?

তপন ওকে নিজের বুকের ওপর টেনে নিয়ে বলল, একটুও মিথ্যে নয়। মুখটা তোল। সুবর্ণা মুখটা তুলতেই তপন তাকে খুব নরমভাবে চুম্বন করল। আদর করে বলল, তুই কি একটা পাগলি।

সুবর্ণা বলল, আর তুই কি? একটা ডাকাত!

চোখের জলের দাগটাগ লেগে রয়েছে! এই অবস্থায় রাস্তা দিয়ে যেতিস কী করে? মুখটা ধুয়ে ফেল ভালো করে।

সুবর্ণা তপনের বুকে মাথা রেখে বলল, আমি কিন্তু রণজয়কে খুবই ভালোবাসি।

কে বারণ করছে ভালোবাসতে? আয় না, আমরা সবাই সবাইকে ভালোবাসি।

না আমি তোকে ভালোবাসতে পারব না, তাহলে যদি বার বার তোর কাছে চলে আসতে ইচ্ছে হয়।

ইচ্ছে হলে আসবি।

তা হয় না। এরকমভাবে বিবাহিত জীবন কাটানো যায় না?

পরীক্ষা করে দেখ না কিছুদিন। যদি খুব অসুবিধা হয় আমি নিজেই তোকে বারণ করব।

সুবর্ণা আর দেরি করল না। বেরিয়ে এল ঘর থেকে। তপন তাকে সিঁড়ির তলা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে এল। সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় তপন সুবর্ণার কাঁধে হাত রেখেছিল। ঠিক দুই বন্ধুর মতন।

সুবর্ণা আজ আর ইউনিভার্সিটিতে যাবে না। বাড়ি ফিরবে ভেবেছিল। কিন্তু মনটা খুব চঞ্চল হয়ে আছে। মনের মধ্যে একটু একটু অপরাধবোধ। তপন তাকে দু-একবার চুমু খেয়েছে কিংবা জড়িয়ে ধরেছে, সে জন্য নয়। তার নিজেরই তো খুব ইচ্ছে করছিল তপনের আদর পেতে—এই জন্য।

বাড়ির দিকে না গিয়ে সুবর্ণা চলে এল রণজয়ের ফ্ল্যাটের দিকে।

এই পাড়াটা পাঁচমিশেলি। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, চিনে, গরিব মুসলমান এবং সাহেবি ঢং-এর হিন্দুরা বেশ সহাবস্থান করে আছে। কোন বাড়িতে কে এল, কিংবা কোন মেয়ে গেল কোন পুরুষের ঘরে, এ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সুবর্ণার একবার মনে হল, তার মুখটা কলঙ্কিনীর মতন দেখাচ্ছে না তো? আঁচল দিয়ে মুখটা মুছে নিল ভালো করে।

ওপর থেকে একটি মেয়ে নেমে আসছে তরতর করে। পাতলা ছিপছিপে চেহারা, কাঁধে ঝোলানো একটা ব্যাগ। মেয়েটি সুবর্ণার পাশ দিয়ে যাবার সময় একবার সোজাসুজি তাকাল ওর দিকে। একটু যেন রাগ আর অভিমান মেশানো দৃষ্টি। সুবর্ণার একটু চেনাচেনা মনে হল মেয়েটিকে, কিন্তু ঠিক মনে করতে পারল না। তবে মেয়েটি যে রণজয়ের কাছেই এসেছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বাড়িতে আর একটিও পরিবার থাকে না।

দরজায় ধাক্কা দিতেই ভেতর থেকে রণজয়ের গলা শোনা গেল, কে? দরজা খোলাই আছে।

একটাই লম্বা টানা ঘর রণজয়ের। এত লম্বা ঘর সচরাচর হয় না। হয়তো এককালে বারান্দা ছিল, এখন ঢাকাঢুকি দিয়ে ঘর বানানো হয়েছে।

দরজার কাছেই রণজয়ের খাট ও কয়েকটি চেয়ার পাতা। আর একটু দূরে তার পড়ার টেবিল ও বইয়ের আলমারি। তার ওপাশে রান্নার জায়গা। রণজয় অবশ্য বাইরেই খায়, তবু রান্নার ব্যবস্থা আছে।

অত্যন্ত অগোছালো রণজয়ের ঘর। সব জায়গায়, এমনকি, রান্নার জায়গাতেও বই ও পত্রপত্রিকা ছড়ানো। নিজের বিষয় ছাড়াও রণজয় বহু রকমের জিনিস পড়ে। তার জামা, কাপড়, রুমাল, তোয়ালেও এদিক ওদিক পড়ে থাকে।

সুবর্ণার প্রথম কাজই হচ্ছে, এখানে এসে সব কিছু গোছগাছ করে দেওয়া।

রণজয় সুবর্ণাকে দেখে একটুও অবাক হল না। খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে বই পড়ছিল, তাড়াতাড়ি উঠে বলল, তুমি এসেছ? বাঃ! খুব খিদে পেয়েছে। একটা কিছু রান্না করে দাও না আমার জন্য।

সুবর্ণা হাতের ব্যাগটা বিছানার ওপর ছুড়ে ফেলে বলল, তোমার কাছে একটা মেয়ে এসেছিল?

হ্যাঁ।

কে বল তো মেয়েটি? চেনা চেনা লাগছিল!

ওর নাম তো ভাস্বতী বসু। পার্টির কাজ করে। খুব ভালো ওয়ার্কার।

তোমার কাছে এসেছিল কেন?

পার্টির চাঁদা চাইতে। আমিও একসময় কাজ করতাম।

ইউনিভার্সিটিতে ওকে দেখেছি মনে হচ্ছে। তোমাদের সঙ্গে অনেকদিনের চেনা?

অনেকদিনের। ওকে আমি খুব ছেলেবেলা থেকে চিনি। তুমি কি অমলেশকে দেখেছ? আমাদের থেকে সিনিয়ার। সেই অমলেশ হচ্ছে ওর পুরুষ। একসঙ্গেই থাকে বিয়ে-টিয়ে এখনও করেনি, করে নেবে এক সময়।

সুবর্ণা হঠাৎ রেগে গেল। বলল, চাঁদা চাইতে তোমার বাড়িতে আসবার দরকার কী? ক্যাম্পাসেই তো চাইতে পারে।

রণজয় একটু অবাক হয়ে বলল, বাড়িতে আসবে না কেন? আমিই তো ওকে একদিন আসতে বলেছিলাম।

কেন!

আরে তুমি রেগে যাচ্ছ নাকি , এসেছে তো কী হয়েছে।

আমার হিংসে হচ্ছে।

রণজয় উঠে এসে সুবর্ণাকে আলিঙ্গন করে বলল, ধ্যাৎ পাগলি। এ আবার কী ছেলেমানুসি। ভাস্বতী খুব ভালো মেয়ে। কারণ সিরিয়াস। ওদের পার্টির কাছে ও একটা জুয়েল। পলিটিক্যাল সায়েন্সটাও অনেকের থেকে ভালো বোঝে। ছেলেবেলায় কানপুরে আমরা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম।

তখন তুমি বুঝি ওকে ভালোবাসতে?

শুধু তখন কেন এখনো তো ভালোবাসি।

সুবর্ণা নিজেকে রণজয়ের আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করল। আরক্ত মুখে জিজ্ঞেস করল, তুমি এ রকম আর কজনকে ভালোবাস?

গুনে দেখিনি। অনেককে।

ছাড়! আমাকে ছাড়! আমি ভালোবাসার ভাগাভাগিতে বিশ্বাস করি না। তুমি যদি অনেককেই ভালোবাসতে চাও—

মানুষ কি শুধু একজনকে ভালোবেসে বেঁচে থাকতে পারে নাকি? মাকে-বাবাকে কিংবা ছেলেমেয়েকে ভাইবোনকে ভালোবাসে না?

সেটা অন্য ব্যাপার।

এটাও অন্য ব্যাপার। আমি আরও অনেক মেয়েকে ভালোবাসি, কিন্তু তোমাকে বিশেষ রকম ভালোবাসি বলেই তোমাকে নিজের করে চাই। অন্য কোনো মেয়েকে তো এইরকমভাবে চাইনি!

ঠিক আছে বুঝেছি। ছাড়ো রান্না করে দিচ্ছি, কী খাবে বলো—

তুমি খিচুড়ি রাঁধতে পারো?

কে না পারে? সবাই পারে।

তাহলে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা—

সসপ্যানে চাল ধুতে ধুতে সুবর্ণা জিজ্ঞেস করল, ওই মেয়েটি কতক্ষণ ছিল?

রণজয় ওর ঘাড়ে একটা চুমু খেয়ে বলল, অনেকক্ষণ। আধঘন্টা তো হবেই।

চাঁদার কথা বলতে কি এতক্ষণ সময় লাগে?

আমি কি সহজে চাঁদা দিই নাকি? ওকে আটকে রাখার জন্যই তো নানা কথা বলছিলাম।

সেই সময় যদি আমি এসে পড়তাম?

তাহলে আরও জমত। আফ্রিকার দেশগুলোর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কথা উঠেছিল।

ভাস্বতীর বেশ পরিষ্কার চিন্তা আছে এ বিষয়ে।

শুধু এইসব কথা হল।

মাথা খারাপ? তুমি কি ভাস্বতীকে নীরস মেয়ে ভেবেছ নাকি! যারা দিনরাত রাজনীতি ছাড়া অন্য কোনো কথা চিন্তা করে না, তাদের গাল-টাল তুবড়ে কী রকম বিচ্ছিরি চেহারা হয়ে যায়। ভাস্বতী মোটেই সে রকম মেয়ে নয়। আমরা কিছুক্ষণ ছেলেবেলার গল্প করলাম। ভাস্বতী এক সময় আমাকে একটা প্রেমপত্র লিখেছিল, তখন ওর বয়স এগারো বারো হবে। সেই কথা বলে হাসলুম খুব।

এখনও তোমার সম্পর্কে ওর কোনো দুর্বলতা নেই।

দুর্বলতা! না, জিনিসটা নেই ভাস্বতীর চরিত্রে। ও যা করে, সোজাসুজি জোর দিয়ে করে। অন্য কিছু গ্রাহ্য করে না। যেমন ধরো অমলেশের সঙ্গে যে ও একসঙ্গেই প্রায় থাকে—সে ব্যাপারে ও ওর বাবা মা কিংবা অন্য কারো আপত্তি গ্রাহ্যই করে না।

একসঙ্গে থাকে যখন বিয়ে করে না কেন?

এখনও বিয়ের জন্য তৈরি হয়নি। কিংবা ওদের নিজস্ব কোনো প্ল্যান থাকতে পারে। এ ব্যাপারেও ওর সঙ্গে কথা উঠেছিল। ওর ভাবনা-চিন্তা বেশ পরিষ্কার। ওর একটা শরীরের দাবি আছে, অমলেশেরও আছে। সেই দাবিটা অগ্রাহ্য করলে অন্য কাজ মন দিয়ে করা যায় না। খাওয়া-দাওয়ার মতনই তো সেক্সটা একটা শারীরিক প্রয়োজন। সেটাকে বাদ দিয়ে যারা কাজ করতে চায়, তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কীরকম অস্বাভাবিক মানুষ হয়ে ওঠে। ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাই একসঙ্গে থাকে। খোলাখুলি ব্যাপার।

যদি বাচ্চা-টাচ্চা হয়ে যায়।

সে কথাও আমি ভাস্বতীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওর সেজন্য চিন্তা নেই।

সুবর্ণা ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, সত্যি কথা বলো তো, তুমি ওই মেয়েটির সঙ্গে এতক্ষণ শুধু গল্পই করেছ? আর কিছু—

দুষ্টু দুষ্টু হেসে রণজয় বলল, সত্যি কথা বলব, রাগ করবে না?

আগে বলো।

আমার হাতে হাত রেখে বল রাগ করবে না।

এই তো হাত রেখেছি।

আমি ওকে একটা চুমু খেয়েছি।

সুবর্ণা হাতটা সরিয়ে মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। রণজয় তার থুতনিটা ধরে উঁচু করে বলল, রাগ করবে না প্রতিজ্ঞা করলে যে?

সুবর্ণা, সত্যিই রাগ করেনি, মনটা শুধু উতলা লাগছে। মনটাকে সামলাবার চেষ্টা করছে সে। তারপর মুখ তুলে হাসিমুখে বলল, শুধু একটা?

তাহলে আরও সত্য কথা বলি? একটা নয় তিনটে। ওকে একটাই বলেছিলাম। তারপর একটু বেশি লোভ হল। কিন্তু এর চেয়ে আর বেশি কিছু না, এটা কিন্তু ঠিক।

হঠাৎ উঠে গিয়ে?

না, না, না। আমি নানারকম কথা বলছিলাম। এক সময় কী যেন মনে হল ডান পাশ থেকে ওর মুখখানা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল, তাই আমি বললাম, ভাস্বতী অনেক তো কথা হল, এবার একটা চুমু খেলে কী হয়!

ও বলল, কেন? আমি বললাম, এমনিই।

তারপর ভাস্বতী বলল, ছেলেবেলার কথা ভেবে আমি একবারের জন্য রাজি হতে পারি, কিন্তু তুমি দুরন্ত ছেলে! তুমি আরও বাড়াবাড়ি করবে।

আমি বললাম, না না, মোটেই না।

রণজয় সুবর্ণার কাঁধে হাত রেখে ঠোঁটটা এনে বলল, আমি তখন এইরকমভাবে আলতো করে একটু চুমু খেলাম। কিন্তু তাতে আশা মিটল না বলেই, আর একটু জোরে পরপর আর দুবার—তারপর ভাস্বতী আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।

দরজা বন্ধ করেছিলে?

এইরকম ভেজানোই ছিল।

তখন যদি আমি, ধরো ঠিক সেই মুহূর্তেই দরজা ঠেলে ঢুকে পড়তাম।

এরকম তো গল্পে হয়। কিন্তু ধরো তুমি সত্যিই সেই সময় এসে পড়লে, তারপর কী হত? তুমিই বলো না। তুমি কি রণঙ্গিনী মূর্তিতে ওর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়তে? না আমাকে খুন করতে চাইতে?

তুমি বলো আমার কী করা উচিত সেই সময়?

তুমি একটু লজ্জা পেতে হয়তো। আমরাও লজ্জা পেতাম। কিংবা তিনজনেই হেসে ফেলতাম। এর থেকে আর বেশি কী হবে? এমন তো কিছু নয়।

সুবর্ণা রণজয়ের চোখে একবারে স্থির দৃষ্টি রেখে বলল, এবার আবার আর একটা উত্তর দাও। মনে করো, তুমি একদিন হঠাৎ এই ঘরে ঢুকলে—আমাকে অন্য কেউ হয়তো তোমার কোনো বন্ধু চুমু খাচ্ছে। তখন তুমি কী করতে?

একটু চিন্তা না করে রণজয় বলল, আমি একটু রেগে যেতাম।

রেগে যেতে? বাঃ! তুমি যা খুশি করতে পারো, আর আমি কিছু করলেই তুমি রেগে যাবে কেন?

একটু তো বলেছি। বেশি তো না। ছেলেদের একটু অহংকার বেশি কিনা।

আমি মোটেই তা বিশ্বাস করি না। তোমার অহংকার থাকতে পারে, আর আমার থাকতে পারে না?

পারেই তো। কিন্তু তোমাকে যদি কেউ চুমু-টুমু খায় আমি দেখে ফেললে, হেসেই ফেলব। একটু রাগের ভাব ভেতরে থাকবে অহংকারটাকে সুড়সুড়ি দেবার জন্য।

কীসের অহঙ্কার?

এই যে আমি পুরুষ, আমি বহু নারীকে জয় করতে পারি, কিন্তু কোনো নারীই আমাকে ছাড়া অন্য কারুকে চাইবে না। এইটাই তো বহুকালের ট্র্যাডিশন—সেটা কাটাতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।

ওসব চলবে না। একজন ছেলে যদি অনেক মেয়েকে চায়, তাহলে একটি মেয়েও অনেককে চাইতে পারে।

পারেই তো! না হলে ভাস্বতী রাজী হল কেন? ও যদি প্রথমেই না বলত, আমি কি জোর করতুম?

সুবর্ণা রণজয়ের দুহাত ধরল নিজের দুহাতে। তারপর বলল, তুমি জানো, তোমার হাত ছুঁয়ে আমি কখনও মিথ্যে কথা বলি না। আমি তোমাকে একটা কথা বলছি। তোমার এখানে আসবার আগে আমি তপনের বাড়ি গিয়েছিলাম একটা কথা জিজ্ঞেস করবার জন্য।

রণজয় সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে বললে, নিশ্চয়ই ওই রাস্কেলটা তোমাকে চুমু খেয়েছে?

সুবর্ণা চুপ করে রইল!

রণজয় আবার জিজ্ঞেস করল, কটা।

তিন-চারটে!

আমি জানতাম। ও কিছুতেই ছাড়বে না। তপনটা ভাবে কী জানো, আমি ওকে হিংসে করি! ইডিয়েট একটা! ওকে আমি হিংসে করব কেন? আমি তো জানিই তুমি ওকে ভালোবাস!

তুমি জানো? তুমি কিচ্ছু জানো না। আমি তোমার মতন আর কারুকেই ভালোবাসি না।

তাও জানি। কিন্তু তার জন্য তপন বা আর কারুকে একটু ভালোবাসতে দোষ কী? এস আমরা সবাই মিলে সবাইকে ভালোবাসি।

তপনও ঠিক এইরকম একটা কথা বলছিল।

বলবেই। আমরা অনেক কালের বন্ধু।

তপন যে আমাকে… তাই শুনে তোমার একটুও রাগ হয়নি?

ভাস্বতীর কথা শুনে তোমার যতখানি রাগ হয়েছিল, ঠিক ততখানিই।

তারপরই রণজয় সুবর্ণাকে টানতে টানতে বিছানার কাছে নিয়ে এসে বলল, কিন্তু তপন যদি তোমাকে তিনটে চুমু খেয়ে থাকে, তাহলে তুমি আমাকে এক্ষুনি তিনশোটা চুমু খেতে দেবে। না হলে কিন্তু আমি ভীষণ রেগে যাব! হঠাৎ কথা থামিয়ে পরস্পরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল ওরা। সেই দৃষ্টি চিরকালের।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *