আকাশ পিদ্দিম

আকাশ পিদ্দিম

আকাশ পিদ্দিমটা জ্বেলে কাচের ডোমে পুরে বাঁশের ডগায় তুলতে বেশ খানিকটা সময় লেগে গেল। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে গেছে। এ-পাড়ায় থেকে থেকেই বিজলি বন্ধ, কাজেই ছাদটা দিব্যি ঘুটঘুটে। চিলেকোঠার দোর অবধিও পৌঁছয়নি, পেছন থেকে খোলা গলায় কে ডাকল, “এ্যাঁই।” ফিরে দেখি পাশের বাড়ির ছাদে থুত্থুড়ে এক বুড়ি। মাথা থেকে পা অবধি সাদা কাপড়ে ঢাকা।

গুপে বলল, “আমাদের বলছেন?”

বুড়ি চটে গেল, “তোদের বলব না তো কাঁকে বলব রে ছোঁড়া? তোঁরা ছাঁড়া এঁখানে আঁছেটা কেঁ? তাঁ ছাঁড়া তোঁরাই তো আঁলো দিঁলি৷”

বঙ্কু বলল, “ইয়ে মানে ঠাকুমা বললেন সারা আশ্বিন মাস আলো দেখাতে হয়, তা হলে দেবতাদের নেমে আসতে সুবিধা হয়।”

“ওঁ তাই বুঝি? তা আঁমিই বাঁ দেঁবতাদের চেঁয়ে কঁম কীঁসে শুঁনি? ওঁরা বঁর দেঁবে এঁই তাঁলে আঁছিস তোঁ? আঁমিও তো আঁলো দেখেই নেমেছি। আঁবিশ্যি দেঁখছি ভুঁল ছাঁদে নেঁমেছি, তাঁতে কী হঁয়েছে রে? তোঁরা তো তিঁনটে অঁঙ্ক দিলে দুঁটো ভুঁল কঁরিস। এঁখন বাঁজে কঁথা রেঁখে, কীঁ বঁর চাঁস বঁল। নে, নে তাঁড়াতাঁড়ি কঁর, আঁমার ঢেঁর কাঁজ।

গুপে, বঙ্কু, তোতা তাই শুনে হাঁ। তার পর গুপে বলল, “আমি দুটো স্টিলের পেনসিল-কাটা চাই।”

বঙ্কু বলল, “আমি একটা ভালো ডটপেন আর ছটা রিফিল চাই।”

সঙ্গে সঙ্গে বুড়ি কোঁচড় থেকে দুটো স্টিলের পেনসিল-কাটা আর একটা ডটপেন, আর ছটা রিফিল বের করে দিয়ে বলল, “নে, আঁলগোছে ধঁর, তোঁদের ছুঁলে আঁমাকে নাইতে হঁবে। বঁলিহারি, তোঁদের পঁছন্দ এঁইজন্য শুঁন্যি থেকে আমায় নাবানো! এঁ তো মঁটুর দোঁকান থেকে যেঁ কোনো সঁময় তুঁলে আঁনতে পাঁরতিস। আঁমিও তাঁই এঁনেছি এঁকটা ভাঁলো বঁরও চাইতে জানিস না, স্টুপিড!”

তার পর তোতার দিকে ফিরে বলল, “বঁলি, ছোঁট খোঁকা, তুঁমিই বা কেঁন চুঁপ? ওঁদের মতো এঁকটা কিঁছু চাও।”

তোতা বলল, “বেশ, আমি আলাদীনের প্রদীপ চাই।”

বুড়ি ভয়ঙ্কর চটে গেল। “তোঁ-তোঁ-তোঁ— চাঁলাকি নাকি— আঁর কিঁছু চা!”

তোতা বলল, “থাক তা হলে, কিছু দিতে হবে না! বুড়ি চোখ পাকিয়ে বলল, “দিঁতে হবে না আঁবার কী? দেঁবতারা দিঁতে পাঁরে আঁর আঁমি পাঁরি না? ঐ দ্যাঁখ, পিঁদ্দিমের নীঁচে!”

ওরা তাকিয়ে দেখে সঙ্গে সঙ্গে পিদ্দিমের বাঁশ বেয়ে সড়সড় করে নীচে নেমে এল একটা টিনের টেমি বাতি। দেশের বাড়ির রান্নাঘরে যেমনি জ্বালায়, ঠিক তেমনি। ঠুং করে মাটিতে পড়তেই তোতা তুলে নিয়ে, ফিরে দেখে বুড়ি তখন অন্তর্ধান করেছে।

চিলেকোঠার আলোয় দেখা গেল পুরোনো লম্প, ঝুলকালি মাখা, কার রান্নাঘরে ব্যবহার হত কে জানে। তোতা সেটার গায়ে আঙুল ঘষতেই হুপ করে খানিকটা আলো জ্বলে উঠল আর একটা বেঁটে বামুন দেখা দিয়ে বলল, “কী চাই মাস্টার?”

তোতা অমনি বলল, “গুপেদার চেয়ে আরো বড় চারটে স্টিলের পেনসিল-কাটা, দুটো আরো ভালো ডটপেন, আরো বারোটা রিফিল।”

বেঁটে বামুন পকেট থেকে চারটে বড় স্টিলের পেনসিল-কাটা, দুটো ভালো ডটপেন আর বারোটা রিফিল বের করে তোতার সামনে মাটিতে ফেলে দিল। তোতা যেই-না নিচু হয়ে সেগুলো তুলতে যাবে, অমনি বেঁটে বামুন বলল, “একটা ভালো বরও চাইতে পারিস না, তুই এটার যোগ্য নোস!” এই বলে টেমিটাকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্তর্ধান করল।

ওরা সখের জিনিসগুলি পকেটে পুরে গুটি গুটি নেমে এল, কাউকে কিছু বলল না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *