৪
মানুষের দুঃখের কি কোন মাত্রা আছে? কেউ বেশি দুঃখী, কেউ কম দুঃখী একথা কী ক’রে বোঝা যায়?
আমার বন্ধু, পরমেশকে বেশ ফিটফাট সুখী লোক বলা যায়। এ পর্যন্ত কেউ তাকে পালিশহীন জুতো পরতে দেখেনি, ভোরবেলা সূর্য ওঠবার আগেই প্রত্যেকদিন সে দাড়ি কামিয়ে ফেলে—এমনই তার সদা চকচকে মুখ। দীর্ঘ উন্নত চেহারা, সরল স্বাস্থ্য, গায়ের রং ফর্শা, সে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় তরুণী মেয়েরা পরমেশকে ফিল্ম স্টার মনে করে ফিরে দেখে। বস্তুত একটা ফিল্ম নায়কের পার্ট করার জন্য পরমেশের কাছে প্রস্তাবও এসেছিল, কিন্তু বেশি লোকজনের সামনে পরমেশ বিষম লাজুক হয়ে পড়ে, গলার আওয়াজটাও একটু ভাঙা-ভাঙা —তাই পরমেশ রাজি হয়নি। ফিল্মস্টার হবার বিশেষ ইচ্ছেও ওর কখনো ছিলনা–সেজন্য পরমেশ ও ব্যাপারে দুঃখ পায়নি।
পরমেশ তার প্রভাবশালী ছোট মামার সুপারিশে ভালোই চাকরি পেয়েছে, আশির্বাদপূতঃ ভাগ্যবান কয়েকজন, অর্থাৎ ‘চোজেন ফিউ’-এর অন্যতম পরমেশ রোজ সুট-টাই পরে স্কুটারে চেপে অফিস যায়। পাক্কা সাহেবদের মতন দুপুরে লাঞ্চ খায়, পার্কস্ট্রিটের দোকানে। এক বিখ্যাত ডাক্তারের মেয়ে চম্পা সান্যালের সঙ্গে পরমেশের প্রেমও গভীর হতে চলেছে। সন্ধ্যার দিকে পম্পাকে নিয়ে বেড়াতে যায় ফুরফুরে হাওয়ায়। ওদের বিয়ে হলে দু’বাড়িতেই কোনরকম আপত্তি করার কথা নয়। সচ্ছল-সুখী-তৃপ্ত জীবন মনে হয় পরমেশের।
কিন্তু আমি জানি, পরমেশ বড়ই দুঃখী। ওর দুঃখের কারণ, আজও স্কুটার ছেড়ে পরমেশ গাড়ি কিনতে পারলনা। ওর অফিসের সমান চাকরেদের আর সবারই গাড়ি আছে, পরমেশের শুধু নেই—এতে ও মনে-মনে গভীর অপমান বোধ করে। চম্পাকে নিয়ে বেড়াতে যায় যখন, তখন স্কুটারটা বাড়িতে রেখে যেতে হয়। কেননা, চম্পা যদিও স্কুটারে চাপতে খুবই ভলোবাসে, কিন্তু সবার চোখের সামনে দিয়ে স্কুটারে চেপে সে প্রেম করতে যাবে—এতখানি উদার তার অভিভাবকরা নয়। এখনো তাকে বান্ধবীর বাড়ি কিংবা মিস্টুনি বউদির বাড়ি যাচ্ছি বলে পরমেশের সঙ্গে দেখা করতে হয়। পরমেশের ঐ দুঃখ নিজের স্কুটার থাকতেও তাকে ট্যাক্সি চেপে প্রেম করতে হচ্ছে। যদি গাড়ি থাকত! কবে গাড়ির জন্য নাম লিখিয়ে রেখেছে, এখনো কোন সাড়াশব্দ নেই।
আমার কেমন যেন সন্দেহ হয়, নতুন গাড়ির জন্য পরমেশের নাম লেখানোর ব্যাপারটা বোধহয় সত্যি নয়। নতুন গাড়ির বদলে একটা ভালো সেকেণ্ডহ্যাণ্ড গাড়ি ও তো অনায়াসেই কিনতে পারত। পরমেশ অবশ্য পুরোনো জিনিশ পছন্দ করেনা, তার নিজের প্রতিটি জিনিশ ঝকঝকে পরিচ্ছন্ন, অপরের ব্যবহার করা তোয়ালে দিয়ে জন্মেও হাত মুছবেনা, সেইজন্যই কী অপরের ব্যবহার করা গাড়িতে তার অরুচি? কিংবা, পরমেশ যা-ই বলুক, গাড়ি কেনার সামর্থ পরমেশের বোধহয় এখনো হয়নি।
পরমেশের দুঃখ আসলে দুরকম। ও স্কুটার চালাতে সত্যিই ভালোবাসে। দক্ষ হাত, কালো চশমা পরে রূপবান পরমেশ যখন উইণ্ড শিল্ড ছাড়াই চল্লিশ-পঞ্চাশ মাইল গতিতে স্কুটার চালায়, তখন ওকে অপূর্ব দেখায়। যেন আগেকার অশ্বারোহী বীরপুরুষদেরই নতুন রূপ। সেই তুলনায় মোটরগাড়ির স্টিয়ারিং-এর সামনে তার রূপ অনেকটা ম্লান। কিন্তু তার সামাজিক প্রতিষ্ঠার পূর্ণতার জন্য তার মোটরগাড়ি চাই। মোটরগাড়ি ছাড়া তার প্রেমও বাধা পাচ্ছে। মোটরগাড়ি কিনলে প্রিয় স্কুটারটা তাকে ছাড়তে হবে—এই ভেবে তার দুঃখ, আবার মোটরগাড়ি এখনও কেনা হচ্ছেনা—এইজন্যও তার দুঃখ। দুই দুঃখের দোটানায় পরমেশ গভীরভাবে দুঃখী।
থিয়েটার রোডের মোড়ে পরমেশের সঙ্গে দেখা। ট্রাফিকের লাল আলোর সামনে পরমেশ স্কুটার থামিয়েছে। আমি ডেকে জিজ্ঞাসা করলুম, কী রে পরমেশ, কেমন আছিস?
পরমেশ চোখ থেকে রোদ-চশমা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আরে তুই! আজকাল ডুমুরের ফুল হয়ে উঠেছিস যে। দেখাই পাওয়া যায়না।
আমি বললুম, আয় এপাশে চলে আয় না, কোন চায়ের দোকানে একটু বসা যাক।
-আরে আজ নয়, আজ আমার একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে ছ’টার সময়! আর-একদিন….
ছটার সময় অ্যাপয়েন্টমেন্ট তো এখন কী? কার সঙ্গে? চম্পা? চম্পা এখনো তোকে পাত্তা দিচ্ছে?
—আমাকে পাত্তা দেবেনা কী তোকে দেবে?
—এখনতো পাঁচটা বাজে, ছ’টার সময় অ্যাপয়েন্টমেন্ট—অনেক দেরি, আয় একটু আড্ডা দিই।
–নারে, বাড়িতে স্কুটারটা রেখে আসতে হবে আগে—
–তুই এখনো গাড়ি পেলিনা? আমি তো ভেবেছিলাম এতদিন তুই গাড়ি কেনা আর বিয়ে দুটোই সেরে ফেলেছিস্
—হঠাৎ পরমেশের হাসিখুশি মুখখানা বদলে গেল। গভীর বিরক্তির সঙ্গে বলল, ধুৎ কোন জিনিশ কী আজকাল ইচ্ছেমতন হয়। একটা গাড়ির জন্য কত লোককে ধরাধরি করলুম, ধ্যাত্তেরি স্কুটার নিয়ে দিনরাত ট্যাং ট্যাং করতে-করতে জীবনটার ওপর ঘেন্না ধরে গেল!
—কী রে, তুই তো স্কুটার চালাতে খুব ভালোবাসতিস আগে! বিনা কাজেও ঘুরতিস স্কুটারে চেপে
মা যে-চোখে তার মৃত সন্তানের ছবি দেখেন, সেইরকমভাবে পরমেশ তার স্কুটারের দিকে এক পলক তাকিয়ে গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আর ভালোবাসা
সবুজ বাতি জ্বলতেই পরমেশ মাটি থেকে প্যাডেলে পা তুলে বলল, চলি রে আজ, আসিস একদিন বাড়িতে…। স্পীড নিয়ে পরমেশ রাস্তা পেরিয়ে রেড রোডের দিকে ছুটে গেল, আর-একবার ফিরে তাকালো আমার দিকে। কী-রকম দুঃখী আর একা মানুষের মুখ!
পরমেশের এই দুঃখকে মনে হতে পারে বিলাসিতা। কত লোক ট্রাম-বাসেই হাতল ধরার সুযোগ পায়না, ওর তো স্কুটার আছে কিংবা কত লোক খেতে পাচ্ছেনা—সেই তুলনায় ওর আবার দুঃখ কী! এইখানেই আমার সন্দেহ, কারুর দুঃখই বোধহয় সামান্য কিংবা বেশি নয়। ফুটপাতে শুয়ে থাকা ভিখারি বুড়ি গভীর রাত্রে জেগে উঠল, প্রবল বৃষ্টি নেমেছে, গাড়িবারান্দার নিচে গিয়ে বসল, সেখানেও বৃষ্টির ছাঁট; রাস্তায় জল জমে ক্রমশ ফুটপাত গ্রাস করবার জন্য এগিয়ে আসছে। বুড়ির তখন আর কোথাও যাবার উপায় থাকবেনা। পোঁটলাপুঁটলি বুকের কাছে জড়িয়ে বুড়ি জুলজুলে চোখে অসহায়ভাবে তাকিয়ে দেখছে জলের এগিয়ে আসা। সেই গভীর রাত্রে বৃষ্টির মধ্যে বুড়ির দুঃখ ও একাকিত্বও আমি দেখেছি। কিন্তু তার সঙ্গে পরমেশের কোন তুলনা আমার মনে আসেনি। একথা কখনো মনে হয়নি, পরমেশের চেয়ে ঐ বুড়ির দুঃখ বেশি। পরমেশের দুঃখের জন্য আমার কোন সমবেদনা হয়না অবশ্য বরং একটু হাসিই পায়। কিন্তু বুড়ির দুঃখের জন্যই কি আমার সমবেদনা আছে? সমবেদনা কথাটার মানে কী? ঐ বুড়ির দুঃখ দূর করার জন্য আমি কোনদিন কিছুই করবনা। ওকে বৃষ্টির মধ্যরাত থেকে তুলে এনে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিতে পারবনা, যেমন পরমেশের গাড়ি জোগাড় করে দেবার জন্য আমি নিজে নিশ্চয়ই কখনো ছোটাছুটি করবনা। তাহলে আর ওদের দুজনের মধ্যে তফাৎ কী! পরমেশ যদি ওর স্কুটারবাহন অবস্থাটা মেনে নেয়, তাহলে আর ওর কোন দুঃখ থাকেনা, তেমনি ঐ বুড়িও তো ওর মধ্যরাত্রে বৃষ্টিভেজা অবস্থাটা মেনে নিতে পারে!
কে যেন আমার মনের মধ্য থেকে বলছে, মূর্খ, স্কুটারের বদলে মোটরগাড়ি না-পেলে কিংবা চম্পার বদলে মল্লিকার সঙ্গে প্রেম করলে পরমেশ মরবেনা, কিন্তু খেতে না-পেলে সামান্য আশ্রয় না-পেলে মানুষ মরে যায়। ঠিক! খেতে না-পেলে বেশ কষ্ট হয়—আমি নিজেও মাঝে-সাঝে তা টের পেয়েছি—এমনকী শেষ পর্যন্ত মরেও যায় অনেকে—সে অভিজ্ঞতা অবশ্য আমার এখনো হয়নি—কিন্তু খেতে না-পাওয়াটা কী দুঃখের?
আমাদের বাড়িতে তিনটে বাচ্চা ভিখিরি মেয়ে প্রায় রোজই আসে। সাত থেকে এগারোর মধ্যে বয়েস, শুধু ইজের-পরা খালি গা, মাথার চুল ধুলোময়লায় জটলা পাকানো। এসেই ওরা আমাদের বাড়ির সিঁড়িতে বসে পড়ে চেঁচিয়ে বলে মা দুটি ভিক্ষা দেবে—শেষকথা সুর করে দে-বে-এ-এ-এ বলে টেনে চলে। রিনরিনে মিষ্টি গলা ওদের, তিনজন যখন একসঙ্গে চেঁচায়—মনে হয় যেন একসঙ্গে রিহার্সাল দিয়ে ওরা একটা গান গাইছে। বেশিরভাগ দিনই বাড়ির লোক ওদের দিকে নজর দেয়না, ওরা সিঁড়িতে বসেই থাকে, হাতে খুচরো পয়সা নিয়ে লোফালুফি করে, নিজেদের মধ্যে খুনসুটিতে মেতে থাকে, ভিক্ষে নেবার খুব একটা গরজ নেই যেন। একদিন দেখি, ওরা সিঁড়ির নিচের চাতালে নয়াপয়সা দিয়ে এক্কা—দোক্কা খেলছে। আমি তাড়া দিয়ে বললুম এই পাগলি। কী হচ্ছে এখানে! যা, পালা! ওরা খিলখিল করে হাসতে-হাসতে ছুটে পালিয়ে যাবার সময় একজন আমার উদ্দেশ্যে বলে গেল, আমি পাগলি না, তুমি পাগলা? যে বলল কী সুন্দর, সেই মেয়েটার মুখের গড়ন অবিকল নার্গিসের মতন। আমিও হেসে ফেললাম। ঐ বাচ্চাগুলো খুব তো দুঃখে আছে বলে মনে হলনা। বেশ খেলায় মেতে আছে, ভিক্ষে করাটা যেন একটা খেলা, খিদের কষ্টও যেন খেলার অঙ্গ, যদি খেতে না—পেয়ে একদিন মরতে হয়—তবে ঐরকম এক্কা-দোক্কা খেলার মতোই মৃত্যু-মৃত্যু খেলা খেলতে-খেলতে মরে যাবে মনে হয়, কিন্তু ওরা মরবেনা। ক্ষুধার্ত মানুষেরা একদম মরতে চায়না, তারা বিষম বেশি বাঁচতে চায়। ওরা বেশি বাঁচতে চায় বলেই পৃথিবীতে ক্ষুধার্তের সংখ্যা এত বেশি! বাচতে চায় বলেই, খেতে না-পেলেও দুঃখ কম। অথচ, পরমেশ সামান্য মোটরগাড়ি কিনতে পারছে না বলেই বলেছিল, দূর দূর, জীবনটার ওপর ঘেন্না ধরে গেল! বাসের জানালার ধারে বসে আমি যাচ্ছিলাম একদিন, একজন বুড়ো ভিখিরি এসে হাত বাড়াল। শরীরের প্রত্যেকটা হাড় গোনা যায়, চোখদুটো কোটরে ঢুকে গেছে, হাতখানা যেন কঙ্কালের হাত আমি তাকে দশটা নয়াপয়সা দিয়ে খুব মিষ্টিভাবে বললুম, আর বেঁচে থেকে কী হবে তোমার? এবার মরলেই তো হয়! সঙ্গে-সঙ্গে তার চোখ জ্বলে উঠল, চেঁচিয়ে বলল, আমি মরব কেন, তুই মর না, মর, মর, আজই তোর কলেরা হোক….! এমনভাবে যে বাঁচতে চায় একে আমি কিছুতেই দুঃখী বলতে পারিনা।
অথচ আমার এক বন্ধুর মাসিমা, আমিও তাঁকে টুকুন-মাসিমা বলতুম, তিনি আত্মহত্যা করলেন। তার তো কোন অভাব ছিলনা। নিউ আলিপুরে বাড়ি, দুটি অপ্সরা-গন্ধর্বের মতন ছেলেমেয়ে, দু’খানা গাড়ি, একবার বিলেত ঘুরে এসেছেন। ডাকসাইটে সুন্দরী তিনি, রেডিওতে অতুল প্রসাদের গান শোনান, পার্টিতে মজলিশে প্রথম আকর্ষণীয়া, আমাদের থিয়েটার রিহার্সালে কীরকম হৈ-হুল্লোড়—মজা করতেন, মিউজিক কণ্ডাক্ট করেছিলেন টুকুনমাসি। সেই টুকুনমাসি, আচম্বিতে একদিন আত্মহত্যা করলেন। কোনকিছুরই অভাব ছিল না তাঁর, শুধু নাকি ভালোবাসার, তাঁর স্বামী প্রৌঢ় বয়সে হঠাৎ অফিসের স্টেনোর সঙ্গে…। কিন্তু তাতে কী ক্ষতি হয়েছিল সবরকমের সাচ্ছন্দ্য সুখভোগ, আরাম তো তার ছিলই, শুধু ভালোবাসা না-পাওয়াটা আর কী এমন? এখানে যদি সেই কথাটা আবার ওঠে কত লোক খেতে পাচ্ছে না, পরতে পাচ্ছে না—সেই তুলনায় ভালোবাসাটা, যা না-হওয়াটা আবার দুঃখ নাকি? ওটা স্রেফ ন্যাকামি! স্বামীর ভালোবাসা পাননি তো কী হয়েছে, আরো কত লোকের ভালোবাসা তো পড়ে আছে, অমন দুঃখ ক’জন পায় শুধুশুধু…। কিন্তু এ তুলনাটা আমি মানতে পারিনা। খেতে না-পাওয়ার চেয়েও ভালোবাসা না-পাওয়ার দুঃখ নিশ্চয়ই টুকুনমাসির কাছে কম তীব্র নয়, নইলে নিজের সারা শরীরে পেট্রোল ঢেলে অগ্নি জ্বালিয়ে অমন বীভৎসভাবে কেউ মরে?
সুখী মানুষদের বোধহয় দুঃখবোধ বেশি। সুখ এবং স্বাচ্ছন্দ্যের একটা অতিরিক্ত লাভ এই যে তখন বেশ দুঃখ নিয়ে নেশা করা যায়। বৃষ্টির মধ্যরাতে ফুটপাতে বসে-থাকা সেই বুড়ির আদৌ কোন দুঃখবোধ আছে কিনা আমার সন্দেহ হয়, কেননা সে বেঁচে থাকার কাজে ব্যস্ত। আর বেঁচে থাকা যাদের কাছে খুব সহজ, তাদেরই নানারকম দুঃখবোধ, এমনকী আশ্চর্য, তাদের মধ্যে কেউ-কেউ এই দুঃখ নিয়ে যেতেও চায়!