আকাশবাণী নরক

আকাশবাণী নরক

মণিকার কথা শুনে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

একটা নামগোত্রহীন আতঙ্ক পায়ের পাতায় বরফঠান্ডা স্রোতের মতো প্রবেশ করে সূক্ষ্মতন্তুজাল বেয়ে আঁকাবাঁকা পথে উঠে আসতে লাগল মস্তিষ্কের দিকে। ঘরের মেঝেটা মনে হল নরম একতাল জেলি হয়ে গেছে। ভারসাম্য রেখে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ কষ্ট হচ্ছে আমার।

মণিকা অনেকক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ওর মুখ পূর্ণিমার চাঁদের মতো সাদা হয়ে গেছে। ওর সৌন্দর্য উবে গিয়ে ভীষণ কুৎসিত দেখাচ্ছে। ওর আয়ত চোখে আতঙ্কের ঢেউ ঝাপটা মারছে। ও বলল, এখন কী করব?

টের পেলাম মণিকার গলা বিশ্রীভাবে কেঁপে গেছে। কে বলবে একদিন ওর অলৌকিক সুরেলা গান আমাকে পাগল করে দিয়েছিল–আজও দেয়! অন্তত এই মুহূর্তটুকুর আগে আমার এটাই বিশ্বাস ছিল।

সত্যিই তো! কী করব এখন? মণিকা জানতে চাইছে।

স্বপন–স্বপন বক্সী এভাবে কখনও যে ঝড় তুলবে এ তো কোনওদিন ভাবিনি।

কিছুক্ষণ পর মণিকাকে বললাম, তুমি যাও। চিকুর কাছে শোও গিয়ে। আমি দেখছি, কী করা যায়।

মণিকা চলে গেল। চোখে-মুখে অবিশ্বাস। আমার ওপরে এই মুহূর্তে ওর কোনও আস্থা নেই। তার জন্যে ওকে দোষ দেওয়া যায় না। আস্থা আমার নিজেরও কি আছে! মনের মধ্যে দুশ্চিন্তার ওলটপালট শুরু হল। মণিকার জন্যে। চিকুর জন্যে। আমাদের দু-বছরের ছেলে চিকু।

তিন বছর আগে ঠিক এরকমই একটা ঝড় তুলেছিল স্বপন।

.

স্বপন বক্সী। আমার বন্ধু। একদিন হঠাৎই ও ঝোড়ো বাতাসের মতো এসে হাজির হয়েছিল আমার ঘরে। তখন আমি এ-ফ্ল্যাটে আসিনি। উত্তর কলকাতায় একটা ঘর ভাড়া করে থাকি–যাকে সোজা কথায় বলা যায় ব্যাচেলার্স ডেন। এবং এক ওষুধ কোম্পানিতে সেলসম্যানের চাকরি করি।

অফিসে বেরোব বলে তৈরি হচ্ছিলাম। দেওয়ালে ঝোলানো ছোট আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চেহারার পালিশ শেষবারের মতো শানিয়ে নিচ্ছি, এমন সময় প্রচণ্ড দড়াম শব্দে দরজা খুলে গেল। কাঠের জীর্ণ পাল্লা দেওয়ালে বাড়ি খেয়ে কঁপতে লাগল।

চৌকাঠে দাঁড়িয়ে স্বপন।

কাল বিকেলে মণিকার সঙ্গে তুই ঘুরতে গিয়েছিলি?

ওর এই আচমকা অভিযোগমূলক প্রশ্নে আমি বিব্রত-বিচলিত। লক্ষ করলাম, স্বপনের চুল উশকোখুশকো, চোখ লালচে, মুখে না কামানো দাড়ি, পরনে অতি সাধারণ জামা, অতি সাধারণ প্যান্ট। যেমনটি বরাবর থাকে।

ডাক্তার-বাড়ি আর হাসপাতালের দোরে দোরে ওষুধ বেচে বেড়াস সেটাই জানতাম, আজকাল কি প্রেমও ফিরি করছিস? স্বপনের তীব্র শ্লেষ আমার শরীরে যেন কেটে বসল।

মনের রাগ অতি কষ্টে চেপে রেখে আমি বললাম, এখন অফিসে বেরুচ্ছি। তোর কী বলার আছে তাড়াতাড়ি বল।

স্বপন খুঁটিয়ে আমার চেহারা ও বেশবাস দেখল। যেন এই প্রথম দেখছে। আমি টাইয়ের না ঠিক করে নিয়ে বিছানায় বসলাম। অদ্ভুত চাউনি আমার শরীরের ওপরে স্থির রেখে স্বপন ঘরের একমাত্র চেয়ারটায় বসল। পাশেই টেবিল। টেবিলে একটা কাচের গ্লাসে জল ঢাকা ছিল। ও কোনও কথা না বলে গ্লাস থেকে কয়েক ঢোক জল খেয়ে নিল।

তারপর মুখ মুছে নিয়ে বলল, বিজন, সত্যি কথা বল। কাল তুই মণিকার সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলি?

স্বপনের গলার স্বর অনেক শান্ত।

একটু বিরক্ত হয়েই জবাব দিলাম, সেটা মণিকাকেই জিগ্যেস কর না।

না! আমি তোর মুখ থেকে শুনতে চাই!

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলাম। সত্যি কথা বলাটা কি ঠিক হবে? এইরকম উত্তেজনার মুহূর্তে আমার জবাবটা শুনে স্বপন একটা কাণ্ডই না করে বসে! মণিকার সঙ্গে স্বপনই আমার আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। প্রায় মাসখানেক আগে ওর দোকানে একটা রেডিয়ো সারাতে এসেছিল মণিকা।

.

স্বপন আমার বহুদিনের বন্ধু। স্কুল পেরিয়ে আমি কলেজের পথে পা বাড়ালেও ওর পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। কারণ, হায়ার সেকেন্ডারিতে বার দুয়েক ঠেকবার পর ও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিজনেস করবে। জমানো পুঁজি যে খুব একটা ছিল তা নয়। বাবা-মা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে ধার করে ও একটার পর একটা ব্যবসাতে ভাগ্যপরীক্ষা করতে লাগল। এবং ব্যর্থ হতে লাগল ক্রমাগত। তখন ও ঠাট্টা করে বলত, বিজন, জানিস, বাপ-মা অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমার নাম রেখেছিল স্বপন। কিন্তু পদবিটার কথা কেউ খেয়াল করেনি।

তার মানে? অবাক হয়ে জানতে চেয়েছি আমি।

বক্সী! স্বপন বক্সী! তার মানে আমার সমস্ত স্বপ্ন বাক্সে বন্দি হয়ে থাকবে। বক্সী শব্দটা নির্ঘাত বাক্স থেকেই এসেছে।

ওর ওই ঠাট্টায় আমি প্রাণ খুলে হেসেছি। কিন্তু এটা ছিল ওর কাছে এক নিষ্ঠুর তেতো ঠাট্টা।

যখন আমি কলেজ পেরিয়ে চাকরিতে ঢুকলাম তখনও উপার্জনের সমস্যা সমাধান করতে স্বপনের লাগাতার ভাগ্যপরীক্ষা চলছে। এক পাড়াতেই থাকি। ফলে দেখাও হয় প্রায় রোজই। দেখা হলেই ও হেসে বলে, বাক্সের তালা খোলেনি। আমি অস্বস্তিতে পড়ি ওর কথা শুনে।

হঠাৎ একদিন শুনলাম স্বপন রেডিয়ো মেরামতের দোকান খুলেছে। সুতরাং সেদিন সন্ধেবেলাতেই গেলাম ওর দোকানে। দোকানের নাম আকাশবাণী। মাপে ছোট্ট হলেও সুন্দর করে সাজিয়েছে। বেশ কিছু নতুন ও পুরোনো রেডিয়ো শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন তাকে। ওকে অভিনন্দন জানিয়ে বললাম, বক্সীর বাক্সের তালা তা হলে খুলেছে!

ও হেসে জবাব দিয়েছে, মর্তে ঠাই হল না, তাই আকাশে যেতে হয়েছে।

 তারপর দুজনে প্রাণভরে গল্প করেছি।

সেদিন থেকে সন্ধে সাতটার পর ওর দোকানে গিয়ে রোজ আড্ডা দেওয়াটা একরকম নিয়মের মধ্যেই দাঁড়িয়ে গেল।

লক্ষ করতাম, রেডিয়ো জিনিসটা স্বপনকে যেন পাগল করে তুলছে। দিনরাত পড়ে থাকে ওই রেডিয়োর পিছনে। নানান রকম অদৃশ্য বেতার তরঙ্গকে রেডিয়োর মাধ্যমে পাকড়াও করে শব্দময় প্রাণবন্ত করে তোলাটাই যেন ওর একমাত্র ব্রত। ছুটির দিনে গেলেও দেখেছি যন্ত্রপাতির গাদার মধ্যে কানে হেডফোন লাগিয়ে কীসব খুটুর খুটুর করছে। ছোট-বড় নব ঘোরাচ্ছে। সেইসঙ্গে কয়েকটা স্পিকারে তীক্ষ্ণ, মিহি, কর্কশ নানান স্বরধ্বনিতে একই কথা বেরিয়ে আসছে। যখনই ওর সঙ্গে গল্প করতে বসতাম, তখনই ওর মুখে থাকত বেতার-তরঙ্গ বিষয়ক মুগ্ধ আলোচনা। ও বলত, বিজন, আমাদের চারপাশে আকাশে-বাতাসে কত শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে জানিস? শুধু একবার তাদের ধরতে পারলেই হল। দেখবি, কত কথা তাদের বলার ছিল। এই তো, কাল রাত দুটো নাগাদ উরুগুয়ের একটা মিউজিক প্রোগ্রাম ধরলাম।

ওর কথা যেন শেষ হতে চায় না। দেখলাম, রেডিয়োর এই কারিগরি খুঁটিনাটি হল একমাত্র বিদ্যে যেটা স্বপন দারুণভাবে আয়ত্ত করেছে। অন্য বিষয়ে পড়াশোনার তেমন কোনও আগ্রহ কিংবা আকর্ষণ না থাকলেও এই একটি বিষয় নিয়ে ও যথেষ্ট চর্চা করে। যন্ত্রপাতি এবং বই একইসঙ্গে ঘাঁটাঘাঁটি করে।

একদিন সন্ধেবেলা ওর দোকানে গিয়ে দেখি দোকান খোলা, কিন্তু দোকানের মালিক তথা কর্মচারী অনুপস্থিত। অথচ ঘরের অসংখ্য রেডিয়োর কোনও একটাতে বেশ উচ্চগ্রামে খবর পড়া হচ্ছে। হঠাত্ খবরের মাঝখানে একটা কণ্ঠস্বর শোনা গেল। অনেকটা খবর পড়ুয়া ঢঙেই কেউ বলছে, নমস্কার, আকাশবাণী থেকে বলছি। বিজন, তুই একটু বোস, আমি এখুনি আসছি।

আমি চমকে উঠলাম। এ তো স্বপনের গলা! চারপাশে তাকালাম ওর খোঁজে। ও নেই। বিমূঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে ভাবছি কী করা উচিত, এমন সময় দোকানের পিছনের অংশ থেকে পরদা সরিয়ে বেরিয়ে এল স্বপন। হেসে বলল, কী রে শালা, কেমন চমকে দিয়েছি।

আমি অবাক হয়ে স্বপনকে দেখছি। ও কি জাদু জানে! রেডিয়োতে ওর গলা আমি শুনলাম কেমন করে!

স্বপন আমার অবস্থাটা অনুমান করতে পারল। কাছে এগিয়ে এসে হাসল ও পরদার ফাঁক দিয়ে তোকে দেখে কথাগুলো বললাম।

কিন্তু রেডিয়োর মধ্যে দিয়ে শুনলাম কেমন করে?

এসব তো আমার কাছে ছেলেখেলা রে! বেতার-তরঙ্গ নিয়ে আমি যখন খুশি যা খুশি করতে পারি।

লক্ষ করলাম, স্বপনের চোখ দুটো অস্বাভাবিক চকচক করছে। এতদিন যে নিজেকে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ বলে জানত, আজ যেন সে উপলব্ধি করতে পেরেছে এই একটি বিষয়ে সে অপ্রতিদ্বন্দ্বী, অপরাজেয়।

এর পর থেকে যে-কোনও রেডিয়ো প্রোগ্রামের মাঝে কথা বলাটা স্বপন বক্সীকে নেশার মতো পেয়ে বসল। এবং সবসময়েই ও রেডিয়োতে কথা শুরু করতে ওর দোকানের নাম আকাশবাণী উল্লেখ করে।

দিনে দিনে অচল রেডিয়ো সচল করার ব্যাপারে আকাশবাণীর সুনাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। বহু দূর দূর থেকে লোক আসে ওর কাছে রেডিয়ো সারাতে। এইভাবেই একদিন এসে হাজির হল মণিকা সরকার।

দিনটা ছিল শনিবার। তখন প্রায় সন্ধে সাতটা হবে। স্বপন একটা ভাঙা রেডিয়ো মেরামতের কাজে নিবিষ্টমনে ব্যস্ত। আমি দোকানের কাউন্টারের একপাশে বসে চা খাচ্ছি। এমন সময় মেয়েটি এল।

পরনে উজ্জ্বল রানি রং শাড়ি। একই রঙের ব্লাউজ। বড় বড় মর্মস্পর্শী চোখ। তীক্ষ্ণ নাকের পাশে একটা বড় তিল। কপালে টিপ। হাতে বাদামি কাগজে মোড়া একটা প্যাকেট।

মেয়েটির উপস্থিতি আমাকে আচ্ছন্ন করল। সুদর্শন এবং সুপুরুষ হওয়ার খাতিরে বহু মেয়ের সংস্পর্শেই আমি এসেছি। ভালোবাসাবাসিও নেহাত কম করিনি। তাদের কেউ কেউ বেশ রূপসিও ছিল। কিন্তু এই মেয়েটির মতো এমন করে কেউ আমাকে নাড়া দেয়নি।

মেয়েটি মাথা তুলে দোকানের সাইনবোর্ডটা একবার পড়ে নিল। তারপর এগিয়ে এসে আমাকে জিগ্যেস করল, আপনিই স্বপনবাবু? ওর কণ্ঠস্বরও মুগ্ধ করার মতো।

স্বপন কাউন্টারের আড়ালে মেঝেতে বসে কাজ করছিল। সম্ভবত মেয়েটির প্রশ্ন শুনতে পেয়েই ও তড়াক করে সোজা হয়ে দাঁড়াল : আমি স্বপন বক্সী। বলুন, কী দরকার?

তখন হাতের প্যাকেটটি খুলে একটা ট্রানজিস্টার রেডিয়ো এগিয়ে দিলে মেয়েটি এই রেডিয়োটা অনেকদিন ধরেই ভীষণ গোলমাল করছে। বহু দোকানে সারানোর চেষ্টা করেছি, লাভ হয়নি। আপনার দোকানের খুব নাম শুনেছি, তাই।

আমাকে ডিঙিয়ে আগ্রহের সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দিল স্বপন ও দিন তো, দেখি–।

তখন আমি ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বলেছি, পরদিন সন্ধ্যায় আসব। কেন জানি না, মনে মনে সামান্য আহত বোধ করেছিলাম। হয়তো মেয়েটির মনোযাগ স্বপনের প্রতি নিবিড় হয়েছিল বলেই। অথচ জানি, সেটাই স্বাভাবিক। কারণ সে রেডিয়ো সারাতে এসেছে। আমার সঙ্গে আলাপ করতে নয়।

স্বপনের আকাশবাণীতে এরপরে যেদিন গেলাম তখন প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। একটা হতাশা, ক্ষোভ, আর ব্যর্থতা কোন এক অজ্ঞাত কারণে আমার মনটাকে চেপে ধরেছে। মেয়েটির মুখ কিছুতেই আমি ভুলতে পারছি না। সুতরাং সাতদিন পর যেদিন স্বপনের দোকানে গেলাম, তখন তাকে দেখতে পাব এ-জাতীয় একটা ক্ষীণ প্রত্যাশা মনে যে ছিল না তা নয়। এবং সে-প্রত্যাশা পূর্ণ হল পুরোমাত্রায়।

স্বপন দোকানের ভিতরে বসে মেয়েটির সঙ্গে গল্প করছিল। আমাকে আসতে দেখে বলল, আয় বিজন, মণিকার সঙ্গে তোর আলাপ করিয়ে দিই।

সেইদিনই মণিকার সঙ্গে প্রথম আলাপ। মণিকা সরকার। পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে বি.এ. পড়ছে। ফাইনাল ইয়ার।

তিনজনে মিলে আড্ডায় বসলেও আচ্ছা তেমন জমল না। বারবারই নিজেকে ভীষণ বাড়তি মনে হল। কারণ ওরা দুজনে নিজেদের গল্পে মশগুল।

একটা সন্দেহ আমার মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। মণিকা চলে যেতেই আমিও উঠলাম। কিন্তু স্বপন আমাকে ছাড়ল না। জোর করে আটকে রাখল। চা খাওয়াল। এবং গত সাতদিনে কী করে সে ও মণিকা পরস্পরের প্রেমে পড়েছে তার বিশদ কাহিনি শোনাল। আমার সন্দেহ প্রমাণিত হল। জিভে চায়ের স্বাদ সাপের বিষের মতো ঠেকল।

সে-রাতে ঘরে ফেরার পথে একটা পরাজয়ের গ্লানি অনুভব করলাম। যুক্তি দিয়ে মনকে বোঝালাম, এর কোনও মানে হয় না। কিন্তু আমার অবুঝ মন জেদ ধরে ফুসতে লাগল। কী আছে স্বপন বক্সীর? অতি সাধারণ রোগা চেহারা। গায়ের রং মিশকালো। বিদ্যে স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি। ভালো করে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতেও জানে না। পোশাক-আশাকে রুচির ছিটেফোঁটাও নেই। ওঃ অসহ্য!

অনেক চিন্তা করে দেখলাম, স্বপনের একটিমাত্র দক্ষতা মণিকাকে আকর্ষণ করেছে। সেটা হল বেতারবিদ্যা। স্বপনের কাছেই শুনেছি রেডিয়ো তৈরি করাটা মণিকার অত্যন্ত প্রিয় শখ। স্বপন যে শুধু ওকে সেই ট্রানজিস্টার রেডিয়োটা সারিয়ে দিয়েছে তা নয়, নতুন দুটো রেডিয়ো উপহারও দিয়েছে। যে-রেডিয়োতে মণিকার প্রিয় বিদেশি গান শোনা যায়। মণিকা নাকি খুব সুন্দর গান করে। সেই গান একই সঙ্গে তিন-চারটে রেডিয়োতে শুনিয়ে ওকে একেবারে তাক লাগিয়ে দিয়েছে স্বপন। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার গায়ের জ্বালা ক্রমশ বাড়ছিল।

কিছুদিন নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে আমি অন্য পন্থা নিলাম। একরকম জোর করেই স্বপন ও মণিকার সঙ্গে মিশতে লাগলাম। সময় ও সুযোগ পেলেই মণিকাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করি। ওর মোহভঙ্গের জন্যে তুণের সবকটি শাণিত তির একে একে নির্ভুল লক্ষ্যে নিক্ষেপ করি। একদিন, দুদিন, প্রতিদিন। স্বপন দু-একবার যে সন্দেহ করেনি তা নয়। তবে মুখে কিছু বলেনি।

অনন্ত প্রচেষ্টার পুরস্কার একদিন পেলাম।

মণিকা আমার সঙ্গে বেরোতে রাজি হল। এবং সেইদিনই আমি ওর কাছে আমার উৎকর্ষ অতি সুকৌশলে প্রতিষ্ঠিত করলাম। ওকে বোঝালাম, একজন মেকানিকের ভবিষ্যৎ মেকানিকের বেশি কিছু নয়। তা ছাড়া, রেডিয়োর প্রতি মণিকার এই আকর্ষণটা নেহাতই সাময়িক। সেটা উবে গেলে স্বপনের অস্তিত্বটুকুই কি ওর কাছে মিথ্যে হয়ে পড়বে না?

সে-রাতে বাড়ি ফেরার সময় মনে হল আমার জিত হয়েছে। আমি মণিকাকে সরল বাস্তব বোঝাতে পেরেছি। একটা আত্মপ্রসাদের ঢেউ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে চলল। তখন ভাবিনি, এক আকস্মিক ঝড় আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। পরদিন স্বপন আসবে আমার সঙ্গে বোঝাঁপড়া করতে।

.

চুপ করে থাকিস না! জবাব দে, বিজন! স্বপনের ভারী কণ্ঠস্বর আমাকে চমকে দিল। কাচের গ্লাসটা এখনও ওর হাতে ধরা।

পুরোনো পরাজয়ের লজ্জা ও অপমানের কথা নতুন করে আমার মনে পড়ল। সুতরাং স্বপনকে কঠিন আঘাত দেওয়ার একটা নিষ্ঠুর ইচ্ছে আমাকে হঠাৎই পেয়ে বসল। সরাসরি ওর চোখে তাকিয়ে স্পষ্ট গলায় বললাম, স্বপন, কাল আমি মণিকাকে নিয়ে গঙ্গার ধারে ঘুরতে গেছি। ওকে চুমুও খেয়েছি। ও তোকে আর–।

স্বপনের হাতের মুঠোয় কাচের গ্লাসটা মটাস শব্দে ভেঙে গেল। কাচের টুকরো মিহি ঠুনঠুন শব্দে ঠিকরে পড়ল মেঝেতে। জল ও রক্তের মিশ্র ধারা স্বপনের হাতে, প্যান্টে, মেঝেতে। ওর মুখের সেই জেহাদি ভাবটা চুপসে গেছে।

আমি ওকে ধরতে উঠে দাঁড়ালাম, কিন্তু ও হাতের ইশারায় আমাকে থামিয়ে দিল। হাতের যন্ত্রণায় বিন্দুমাত্রও ভুক্ষেপ না করে অনেকক্ষণ চেয়ে রইল আমার দিকে। তারপর ওর চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল। গড়াতে লাগল গাল বেয়ে। ওর দেহটা কেঁপে উঠল কান্নার দমকে। ভাঙা অস্পষ্ট গলায় ও বলল, বিজন, তোকে আমি দোষ দিই না। আমার কী-ই বা আছে মণিকাকে দেওয়ার মতো। তবে জানিস, এই একটিমাত্র স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল আমার জীবনে–একটা মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছিল। আমি নিজেও সেটা বিশ্বাস করতে পারিনি। সত্যি সত্যি কি একটা স্বপ্ন আমার বন্ধ বাক্স থেকে বেরিয়ে পড়ে সত্যি হয়ে উঠল? কিন্তু না, বরাবরের মতোই আমি হেরে গেছি।…না, তোর কাছে নয়, নিজের কাছে। বলতে পারিস, এর পরে আমি কী নিয়ে বাঁচব? এ-ঘটনা তো আমার জীবনে দ্বিতীয়বার আর ঘটবে না!

কথাটা শেষ করেই রক্তাক্ত হাতটা মুঠো পাকিয়ে টেবিলে এক প্রচণ্ড ঘুসি বসিয়ে দিল স্বপন। তারপর যেমন এসেছিল তেমনই ঝড়ের মতো বেরিয়ে গেল।

সেদিন রাতেই খবর পেলাম ও আত্মহত্যা করেছে।

আকাশবাণীর ঘরে অত্যন্ত বীভৎসভাবে আত্মহত্যা করল স্বপন। মৃতদেহ দেখে ওকে চেনার কোনও উপায় ছিল না। মণিকাকে সঙ্গে নিয়ে যখন ওর দোকানে গেলাম, তখন সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। জনতার গুঞ্জন। পুলিশ কর্ডন করেছে। স্বপনের বাড়ির লোকেরা বুকফাটা কান্নায় হাহাকার তুলছে। দোকানের কাউন্টারটা একপাশে সরানো থাকায় ভিতরের দৃশ্য বেশ স্পষ্টই নজরে পড়ছে। অসংখ্য যন্ত্রপাতির মধ্যে ত্রিভঙ্গ অবস্থায় পড়ে রয়েছে স্বপনের দেহটা। পুড়ে কালো হয়ে গেছে। হাতে-পায়ে জড়ানো পোড়া কালো তারের অংশ অতি কষ্টে নজরে পড়ে।

শুনলাম, ও নাকি প্রথমে হাতে-পায়ে তার জড়িয়ে নেয়, তারপর ধারালো ছুরি দিয়ে নিজের রক্তবাহী শিরাগুলো কেটে ফেলে। আর সবশেষে চারশো চল্লিশ ভোল্টের বিজলি লাইন অন্ করে দেয়। কী বীভৎস মৃত্যু!

আরও শুনলাম, দোকানের সবকটা রেডিয়ো নাকি ফুল ভলিয়ুমে চলছিল। পুলিশ অফিসাররা স্বপনের এই উদ্ভট খেয়ালের কোনও কারণ বুঝতে পারেননি। তবে ও মরার আগে নিজের হাতে স্পষ্ট চিঠি লিখে রেখে গেছে। আমার মৃত্যুর জন্যে আমি নিজেই দায়ী।

মনে আছে, স্বপনের মৃতদেহ দেখে মণিকা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল।

.

এ সবই তিন বছর আগের ঘটনা। কিন্তু আজ, একটু আগেই, আমার ও মণিকার জীবনে নতুন এক ঝড় তুলেছে স্বপন।

গত তিন বছরে ওর স্মৃতি বেশ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। শুধু মাঝে মাঝে আমার মনে পড়ে যেত ওর বীভৎস পোড়া চেহারাটার কথা। ও মারা যাওয়ার পর আকাশবাণী দোকানটাও উঠে গিয়েছিল। আমি এবং মণিকা ওকে নিয়ে আর বিশেষ মাথা ঘামাইনি। পুলিশি তদন্ত শেষ হওয়ার পর আমরা যথারীতি বিয়ে করেছি। নতুন ফ্ল্যাট নিয়ে পুরোনো পাড়া ছেড়ে চলে এসেছি আমি। আর তার এক বছর পরেই এসেছে চিকু। স্বভাবতই পরিপূর্ণ সংসারী হয়ে চিকুকে কেন্দ্র করে আমি ও মণিকা দৃঢ়তর এক বন্ধনে নতুন করে পরস্পরের কাছে বাঁধা পড়েছি।

আজ রবিবার। খাওয়াদাওয়ার পর অফিসের কয়েকটা কাগজপত্র নিয়ে বসেছিলাম। মণিকা রান্নাঘর গোছগাছ করতে করতে ট্রানজিস্টার রেডিয়োতে নাটক শুনছিল। চিকু অঘোরে ঘুমোচ্ছে। হঠাৎই রান্নাঘর থেকে মণিকার একটা অস্ফুট চিৎকার শুনতে পেলাম।

সঙ্গে সঙ্গে হাতের কাজ ফেলে আমি উঠে পড়লাম। এবং উদ্ভ্রান্ত মণিকা এসে ঘরে ঢুকল। আটপৌরে শাড়ি ওর সুঠাম শরীরে জড়িয়ে রয়েছে। আঁচল কোমরে গোঁজা। ও হাঁপাচ্ছে। নাকের পাটা ফুলে ফুলে উঠছে। তিলটা সূক্ষ্মভাবে কাঁপছে। আমাকে দেখেই ও সোজা এসে বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল, বিজন, বিজন! এইমাত্র রেডিয়োতে স্বপনের গলা শুনলাম!

আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। আমার হাতের বাঁধনে মণিকার শরীর থরথর করে কাঁপছে। ওকে সান্ত্বনা দিয়ে অতিকষ্টে সামলে নিলাম। মনে পড়ল, স্বপন আমাকে যে-খেলা দেখাত, সে খেলা মণিকাকেও বহুবার দেখিয়েছে, হয়তো আচমকা সেই স্মৃতিই ওর মনে এসে ঝাপটা মেরেছে।

সেকথা মণিকাকে বলতেই ও বলল, না, বিজন, তা নয়। আমি স্পষ্ট শুনলাম, নাটক থেমে গিয়ে স্বপনের কথা শোনা গেল। ও বলল, মণিকা, মণিকা, আমি আবার তোমার কাছে এসেছি!

চকিতে দু-কাঁধ ধরে মণিকাকে কিছুটা দূরত্বে দাঁড় করিয়ে দিলাম। ভালো করে সব কথা শুনতে চাইলাম।

ও বলল, ওই একটা কথাই নাকি পরপর তিনবার শোনা গেছে রেডিয়োতে। কেমন যেন এক প্রতিধ্বনিময় কণ্ঠস্বর। প্রথম উচ্চারণের পর ধাপে ধাপে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে ও মণিকা, আমি আবার তোমার কাছে এসেছি!

মণিকাকে চিকুর কাছে যেতে বলে আমি ভাবতে বসলাম। কিন্তু রহস্যের কোনও উত্তর পেলাম না। স্বপন বক্সী মারা গেছে আজ তিন বছর। সেইসঙ্গে চিরস্তব্ধ হয়েছে তার কণ্ঠস্বর। তা হলে এই অলৌকিক আকাশবাণী প্রচারিত হয়েছে কোন প্রেতলোক থেকে? কেউ নিষ্ঠুর ঠাট্টা করছে না তো আমাদের সঙ্গে? কিন্তু কী করেই বা করবে?

সারাটা দিন দুশ্চিন্তায় কাটল। আমাদের হাসিখুশি ছুটির দিনটা ওই একটা ভয়ংকর ঘটনায় যেন হয়ে গেল কালরাত্রি। এমনকী চিকুর আধো-আধো কথাও আর হাসির হুল্লোড় তৈরি করতে পারছে না আমাদের অন্তঃস্থল থেকে।

দুপুরের পর থেকে রেডিয়োর ধারেকাছে ঘেঁষল না মণিকা। শেষ পর্যন্ত রাতে খাওয়ার সময় আমিই সাহস করে রেডিয়ো চালালাম। হিন্দি গান হচ্ছে। চিকু ঘুমিয়ে পড়েছে। মণিকা ওর কথাগুলো ভাঁজ করে বিছানায় মাথার কাছে রাখছে। এমন সময় স্বপন দ্বিতীয়বার কথা বলে উঠল।

বিজন, তুই মণিকাকে কেড়ে নিলি! কেড়ে নিলি!

এই একটা প্রশ্ন আমাকে একেবারে কুঁকড়ে দিল। প্রশ্নটা একটানা ক্রমাগত বেজে চলেছে। তার ছমছমে প্রতিধ্বনি ঘুরে বেড়াচ্ছে চার দেওয়ালের মধ্যে। যেন বিশাল কোনও খাদের অতল গহ্বর থেকে এই প্রশ্ন আমাকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দিচ্ছে স্বপন।

আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। মণিকা বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।

সংবিৎ ফিরে পেয়েই রেডিয়োটা বন্ধ করে দিলাম। বুঝতে পারছি, স্বপনের মৃত্যুর ভয়াল স্মৃতি কালো ছায়া ফেলেছে আমাদের জীবনে।

দিনের পর দিন এই একই নাটক চলতে লাগল।

এই অলৌকিক ঘটনার কথা কাউকে বলতে পারি না। বলা যায় না। শুধু দুজনে মুখ বুজে সহ্য করি। তা ছাড়া আমার শিক্ষিত যুক্তিবাদী মন এইসব ঘটনা মেনে নিতেও চায় না। আবার আমি স্বপনের কাছে হেরে যাব!

যতই দিন যায় লক্ষ করি মণিকা ক্রমেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলছে। বুঝতে পারি, যে-সময়টা আমি বাড়িতে থাকি না, ও প্রাণভরে রেডিয়ো শোনে। শোনে সেই অলৌকিক কণ্ঠস্বর। সম্ভবত মণিকা বুঝতে পারে, তিন বছর আগে স্বপনকে ও ঠকিয়েছিল। সেই কারণেই নিজেকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে দিনরাত ও স্বপনের অভিযোগ-অনুযোগ শুনতে চায়। নিজের অপরাধবোধে ক্রমে ক্রমে ও ডুবতে চলেছে।

একদিন বাড়িতে ফিরে শুনলাম রেডিয়োতে প্রতিধ্বনিময় কণ্ঠস্বর বাজছে? …আমি এতদিন অপেক্ষা করেছি, মণিকা। চেয়েছি, সংসারের চরম সুখ বলতে কী সেটা তুমি আগে বোঝো। এখন তুমি সেই চরম সুখের খোঁজ পেয়েছ। ছেলের আধো-আধো কথা, স্বামীর আদর, নিজের তৃপ্তি। মণিকা, এখন তুমি বুঝতে পারবে, আমার কাছ থেকে তুমি কী জিনিস কেড়ে নিয়েছ! আর বিজন, বিজন আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু।

আমি ঘরে ঢুকতেই মণিকা রেডিয়ো বন্ধ করে দিল। তারপর আমার বুকে মুখ রেখে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগল। আমি ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিলাম। একটা যন্ত্রণা আমার কণ্ঠনালীতে জমাট বেঁধে ওঠানামা করছে। মণিকার এই কষ্ট আমি আর সইতে পারছি না।

আর একদিন স্বপন যখন আমাকে লক্ষ্য করে নানান অভিযোগ করছিল, আমি হঠাৎ চিৎকার করে উঠেছি, স্বপন, তুই কী চাস?

রেডিয়োতে শোনা ওর কণ্ঠস্বরকে উদ্দেশ্য করে আমি এই প্রথম কথা বললাম। এবং ওর জবাব পেলাম সঙ্গে-সঙ্গেই। যেন ও আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে। প্রচণ্ড রাগের সঙ্গে তীব্র গলায় ও বলে উঠল, জানিস না, শালা? মণিকাকে, মণিকাকে আমার চাই।

তাকিয়ে দেখি মণিকার মুখ রক্তহীন, দুধের সরের মতো সাদা।

সেই মুহূর্তে আমি বুঝেছিলাম, স্বপনের কাছে হয়তো আমাকে হারতেই হবে।

পরদিন সারা সকাল মণিকা খুশিতে একেবারে মেতে উঠল। চিকুকে নিয়ে দুরন্তপনার চূড়ান্ত করল। আমি অবাক হলেও ভীষণ খুশি হলাম। ওর মন থেকে পাষাণের ভারী টুকরোটা বোধহয় গলে বেরিয়ে আসছে বাইরে। অফিসে বেরোনোর মুহূর্তে হঠাৎই আমাকে জাপটে ধরে দুবার চুমু খেল। হাসল। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে কেমন ডুকরে কেঁদে উঠল। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, না, কিছু না। শুধু তুমি খুব ভালো হয়ে থেকো।

দুপুর দুটো নাগাদ অফিসে ফোন পেলাম।

সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে এলাম বাড়িতে। মানুষজনের ভিড় ঠেলে শোওৰার ঘরে এলাম। সিলিং পাখার সঙ্গে শাড়ি বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়েছে মণিকা। চিকুকে প্রতিবেশীদের কেউ কোথাও সরিয়ে নিয়ে গেছে। এখনও থানায় খবর দেওয়া হয়নি। ঘরে রেডিয়ো চলছে। তাতে একটা বাংলা নাটক শোনা যাচ্ছে।

হঠাৎই এক প্রতিধ্বনিময় কণ্ঠস্বর ভেসে এল রেডিয়ো থেকে : কী রে শালা, এসেছিস! তোর বাক্স থেকে একটা স্বপ্ন চুরি করে নিয়ে গেলাম রে!

উপস্থিত কেউই সেকথার তাৎপর্য বুঝল না। ভাবল রেডিয়ো-নাটকেরই কোনও অংশ। কিন্তু, হে ঈশ্বর, আমি তো জানি!

দু-হাতে মুখ ঢেকে আমি বসে পড়েছি মেঝের ওপর। জীবনে এই প্রথম কান্নার ঢেউ আমাকে বিপর্যস্ত, অসহায় করে দিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *