আঁধারের যাত্রী
চারি দিকে ধু ধু রাতি—সৃজনের অন্ধকাররাশি,
জোনাকির মতো প্ৰাণ তার মাঝে চলিছে উদাসী!
পত্রগুচ্ছে যেটুকু নিশীথ,
যে খণ্ড আঁধারটুকু, যে তুষার শীত,
তারই বুকে ঢালি তাপ, জ্বলি আমি শিখা,
অনন্ত শর্বরী দূরে ছড়ায়েছে ব্যথা-বিভীষিকা!
স্পন্দহীন প্ৰেতপুরে–শোকের শ্মশানে,
মূক তরুচ্ছায়াতলে, নিঃশব্দ গহ্বরে
কলহীন তটিনীর তরঙ্গের ‘পরে
ছুটিয়া যেতেছে মোর সচকিত প্ৰাণ,
মৌন অভিযান!
আমার এ কম্প্রবক্ষে তৃপ্তিহীন বিচ্ছুরণ জ্বলে;
দূরে দূরে দিগন্তের তলে
ছুটে যাই দিশাহারা, আকুল, চঞ্চল,
কেঁদে ওঠে বিটপীর ভগ্নশাখা, বনানীর পল্লব-অঞ্চল!
বালুকাসৈকতে বাজে তটিনীর গান
ক্ষুব্ধ ম্রিয়মাণ!
সৃজন-পুলিনে বসি মায়াবীর বেশে
অন্তহীন ইন্দ্ৰজাল রচিতেছে কে সে!
কোথা তব গুপ্ত কক্ষ–রহস্যের দ্বার
ওগো অন্ধকার!
হে অচল রুদ্ধ আয়তন,
বিজন গোপন!
তমিস্রার ঊর্মিরাশি–দুশ্চর, দুস্তর,
চির রাত্রি—তার মাঝে আমি নিশাচর!
নিষ্প্রভ এ চোখে মোর পশে নাকো নক্ষত্রের শিখা,
দীপহীন অমাতটে নাচে একা প্ৰাণ-খাদ্যোতিকা!
প্রান্তরের পারে জ্বরে অলেক আলেয়া,
তার মাঝে মোর এই নিশীথের খেয়া
চলে একা ভেসে,
স্বপ্নাবিষ্ট মৌন অভিসারিকার বেশে!