আঁতাত

আঁতাত

মেয়েটা আগে কথা বলত কম, এখন তো মুখ খোলেই না। যতক্ষণ বাড়িতে থাকে ততক্ষণ হয় ল্যাপটপের সামনে, নয় বিছানায়। ওর ঘরে গিয়ে কোনো জিনিসপত্রে কেউ হাত না দেয়, বলে দিয়েছিল যেদিন, সেদিন থেকে মনীষা আর ওই ঘরে ঢোকেন না। ঘরে না ঢুকলেও মেয়েটার কথা ভাবলেই শ্বাস ভারী হয়। সকাল আটটায় মেয়ে বেরিয়ে যায় অফিসে। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে ওর অফিস। বাসেই যায়। চার্টার্ড বাস পেয়ে গেছে। ফেরে অফিসের গাড়িতে, কখনও সন্ধ্যায়, কখনও একটু রাতে। পঞ্চাশ হাজার টাকার মাইনের অর্ধেকটা দিতে এসেছিল মেয়ে। মনীষা খুশি হলেন, যখন দেখলেন মেয়ের বাবা সেটা নিতে রাজি না হয়ে বললেন, ‘আমার তো কোনো অসুবিধে হচ্ছে না, ওই টাকাটা ব্যাঙ্কে রাখো।’

মেয়ের বাবার নাম নিখিলেশ। সামনের বছর কলেজের চাকরি শেষ হবে। আজ অবধি মনীষাকে গলা তুলে কথা বলেননি। দু’বছর আগে যেদিন মেয়ের বিয়েটা আদালত ভেঙে দিতে অনুমতি দিল, সেদিন মনীষা নিখিলেশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। নিখিলেশ নিচু গলায় বলেছিলেন, ‘এখন কেঁদে কী হবে!’

‘আমার জন্যে, শুধু আমার জন্যে মেয়েটার ডিভোর্স হয়ে গেল।’ মনীষা কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন।

শোনার পরেও কথা বলেননি নিখিলেশ। কিন্তু মেয়েকে ডেকে বলেছিলেন, ‘যা হওয়ার ছিল তা হয়ে গিয়েছে। এখন থেকে কীসে তোমার ভালো হবে, সেটা নিজে ভেবে ঠিক করবে। তোমার জীবনটা একান্ত তোমারই। এটা মনে রেখো।’

মনীষার মাসতুতো দাদা সম্বন্ধটা এনেছিলেন। ছেলে হাওড়ার বেশ বনেদি পরিবারের। নিজেও ভালো চাকরি করে, সুপুরুষও। দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলেন মনীষা। জামাই হিসেবে ছেলেটিকে পেলে মেয়ে সুখী হবে ভেবেছিলেন। দু’পক্ষের দেখাশুনা এবং কথা বলাবলির পরে ছেলে মেয়েকে নিয়ে একদিন দামি রেস্টুরেন্টে গিয়ে লাঞ্চ খেয়ে এসেছিল। বিয়ে হল।

মনীষা প্রায়ই মেয়ে—জামাইকে বাড়িতে আসতে বলতেন, ‘শনিবার এসে রবিবারের বিকেলে হাওড়ায় যেয়ো।’ প্রথম কয়েক সপ্তাহ জামাই মেয়েকে নিয়ে এসেছিল। তারপর মেয়ে একাই আসতে লাগল। ব্যাপারটা নিখিলেশ পছন্দ করলেন না। কিন্তু মনীষা বলতেন, ‘আমাদের একটাই সন্তান, ও এলে তোমার আপত্তি হচ্ছে কেন? এটা ওর নিজের বাড়ি, আসবেই তো।’

তারপর এক শনিবারে বাপের বাড়িতে এসে রবিবারের বিকেলে মেয়ে আর শ্বশুরবাড়িতে ফিরে গেল না। বলল, ‘আমি এখানেই থাকব।’

‘থাক না। কিন্তু ওই বাড়িতে কি কিছু হয়েছে?’ মনীষা জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

‘না।’ মেয়ে গম্ভীর মুখে বলেছিল।

‘তাহলে?’

‘এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার মা।’ মেয়ে বলেছিল।

রাত্রে স্বামীর কাছে প্রসঙ্গটা তুলেছিলেন মনীষা। নিখিলেশ বললেন, ‘কিছু হয়ে থাকলে ও যদি মনে করে বলা উচিত, নিজেই বলবে। চাপ দিয়ো না।’

বছর আড়াই পরে এক শুক্রবারে মাঝদুপুরে বাড়ি ফিরে এল মেয়ে। সেদিন কলেজ ছুটি থাকায় বাড়িতেই ছিলেন নিখিলেশ। মেয়ে ঘরে এসে বলল, ‘আজ আদালত থেকে নিষ্কৃতি পেলাম। বিয়েটা আর বোঝা হয়ে থাকল না।’

নিখিলেশ মেয়ের দিকে তাকালেন, ‘এসব কাজ তুমি একাই করলে?’

‘না। আমার সঙ্গে পড়ত সর্বাণী, ও এখন ওকালতি করে। ও—ই করে দিল।’

ঘরে ঢুকছিলেন মনীষা, আঁতকে উঠলেন—’সেকি! তুই ডিভোর্স করলি, আর আমাকে একবারও জানাবার প্রয়োজনবোধ করলি না।’

‘তুমি একটু ভুল বললে মা, আমি একা ডিভোর্স করিনি। দু’জনে একমত হয়েই করেছি। আর জানালে টেনশন করতে, তাই হয়ে যাওয়ার পরে জানালাম।’ মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।

তারপর থেকে মনীষার একটাই চিন্তা, কত কুমারী মেয়ের ভালো বর পাওয়া যাচ্ছে না, ডিভোর্সি মেয়েকে কে বিয়ে করবে। মনীষা স্বামীকে বারংবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘আচ্ছা, ধরো, ওর আবার বিয়ের সম্বন্ধ এল। তারা তো জানতে চাইবে কেন ডিভোর্স হয়েছিল? তার জবাবে কী বলব?’

‘কিছুই বলবে না।’ নিখিলেশ বলেছিলেন।

‘তার মানে?’

‘ওর বিয়ের ব্যাপারে মাথা না ঘামালে প্রশ্নটার উত্তর তোমাকে দিতে হবে না।’

কিন্তু হাল ছাড়েননি মনীষা। বোনের ছেলে শৈবাল তাঁর খুব প্রিয়। তাকে দিয়ে শাদি ডট কম, বিয়ে ডট কমে বিজ্ঞাপন দিলেন। একটু অসত্যির আশ্রয় নিলেন। লিখলেন, বিবাহমাত্র বিচ্ছিন্না। কিন্তু যেসব পাত্রের সন্ধান পাওয়া গেল, তাদের কাউকে পছন্দ হল না তাঁর। কেউ সন্তানকে নিয়ে ডিভোর্সি, কেউ অবিবাহিত কিন্তু বয়স পঞ্চাশের আশপাশে।

এক রবিবারের সকালে চা খাওয়ার সময় মেয়ে বলল, ‘তোমরা সামনের শনিবারের বিকেলে কি কোথাও যাচ্ছ?’

মাথা নেড়ে ‘না’ বললেন নিখিলেশ। মনীষা জানতে চাইলেন, ‘কেন রে?’

‘তোমাদের সঙ্গে আলাপ করতে একজন আসতে চায়। সঙ্গে অবশ্য ওর বাবা—মা থাকবে।’ মেয়ে বলল।

‘সেকি!’ মনীষা উল্লসিত—’কখনও তো বলিসনি। কোথায় থাকে ওরা?’

‘সল্টলেকে থাকেন বাবা—মা। ছেলে থাকে সিডনিতে।’ মেয়ে বলল।

‘তোর সঙ্গে কী করে আলাপ হল?’

‘ফেসবুকে।’

‘সিডনিতেই চাকরি করে?’

‘হ্যাঁ।’

‘তোর সঙ্গে কথা হয়?’

‘বা রে! কেন হবে না? রোজই কথা হয়।’

মনীষার উৎসাহ বেড়ে গেল। স্বামীকে বললেন, ‘তুমি অমন গোমড়া মুখ করে বসে থেকো না। আমার ঠিকুজিতে বিদেশ ভ্রমণ ছিল। ভাবতাম, কথার কথা। ভগবান এতদিনে সেটাকে সত্যি করে দিচ্ছেন।’ নিখিলেশ তাকালেন, কিছু বললেন না।

মনীষা মেয়েকে বললেন ছেলেটি কী কী খেতে ভালোবাসে তা জেনে নিতে। একদিন পরে মেয়ে জানাল, ‘ও সব খায়। তুমি যা দেবে তাতে না বলবে না।’

বিকেলে চায়ের আসর কিন্তু মনীষা পদ করলেন জবর। ছেলে এল, সঙ্গে মা—বাবা। চেহারা দেখেই বোঝা যায় অত্যন্ত অভিজাত পরিবারের মানুষ ওরা। ছেলেটি তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে মনীষার বুক জুড়িয়ে গেল। গল্পে গল্পে সময় কেটে গেল ভালো। যাওয়ার সময় ছেলের মা বললেন, ‘একবার ঝড় গিয়েছে, আর যেন সেটা না হয়।’

‘মানে?’ মনীষা জিজ্ঞাসা করলেন।

‘ওর আগের বিয়েটা ঠিকঠাক হয়নি। অবশ্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে তিন বছর আগে।’ ছেলের মা বললেন, ‘আপনার মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে আর ভুল হবে না।’

ওঁরা চলে যাওয়ার পরে মনীষা মেয়ের দিকে তাকালেন—’ও যে ডিভোর্সি তুই জানতিস?’

‘হ্যাঁ, কেন জানব না!’ মেয়ে বলল।

‘ডিভোর্সটা হয়েছিল কেন?’

‘জানি না।’

‘আশ্চর্য! যাকে পছন্দ করছিস তার কেন ডিভোর্স হল জানতে চাইবি না?’ মনীষা অবাক হয়ে গেলেন—’হয়তো খুব মদ খায়। মারধর করে। বাইরে ধর্মাশোক, ভেতরে চণ্ডাশোক তো অনেক পুরুষ হয়ে থাকে।’

‘হতে পারে!’

‘ওর বউ কি অস্ট্রেলিয়ার মেয়ে?’

‘ওর এক্স বউ বল। মা, এখানকারই। ইনকাম ট্যাক্স অফিসার।’

মেয়ের পেট থেকে আর কোনো খবর বের করতে পারলেন না মনীষা।

নিখিলেশকে বললেন, কোনো লাভ হবে না। কিন্তু মেয়ের জীবনে আর একটা ধাক্কা যেন না আসে, সেজন্যে ওদের ডিভোর্সের কারণটা জানতেই হবে বলে ঠিক করলেন মনীষা। ছেলেটির এক্স স্ত্রী ইনকাম ট্যাক্সের অফিসার। শুধু এই তথ্য নিয়ে কীভাবে তাকে খুঁজে বার করা যায়! সেই মেয়েই বলতে পারবে ছেলেটি কতখানি বদ। তাই বোনের ছেলে শৈবালের শরণাপন্ন হলেন মনীষা। শৈবাল বলল, ‘আমার এক বন্ধু ইনকাম ট্যাক্সে চাকরি করে। দাঁড়াও, খবর নিতে বলছি।’

‘কী করে বুঝবে কোন মেয়ে?’

‘নিশ্চয়ই দেখতে খারাপ নয়। বয়সও বেশি হতে পারে না। এরকম একজন ইনকাম ট্যাক্স অফিসার মহিলা, যাঁর ডিভোর্স হয়েছে এই খবর নিশ্চয়ই চাপা থাকবে না।’ শৈবাল তার মাসিকে আশ্বস্ত করল।

সাতদিনের মাথায় ফেলুদার মতো তৎপর শৈবাল মহিলার খবর শুধু নিয়ে এল না, তাঁর মোবাইলের নাম্বারও এনে দিল। সরকারি অফিসে যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা বিয়ে করলে বা ডিভোর্স হলে অফিসকে জানাতে বাধ্য থাকেন। শৈবালের বন্ধু তার সূত্র ব্যবহার করে মহিলার প্রাক্তন স্বামীর যে নাম পেয়েছে, তা জেনে খুশি হলেন মনীষা। সন্দেহ থাকল না, এই ছেলেটি তাঁদের বাড়িতে এসেছিল।

মনীষার তর সইছিল না, তবু রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। অফিসের দিনে নিশ্চয়ই মেয়েটি ব্যস্ত থাকবে, এই সময় বিরক্ত করা উচিত নয়। রবিবারে ফোন করলেন তিনি। মেয়েটির গলা পেলেন—’হ্যালো!’

‘আমি কি রচনার সঙ্গে কথা বলছি?’ মনীষা জিজ্ঞাসা করলেন।

‘হ্যাঁ। আপনি কে বলছেন?’

‘আমাকে আপনি চিনবেন না।’

‘কিন্তু কে ফোন করছেন সেটা তো বলবেন!’

‘নিশ্চয়ই। আমি তোমাকে তুমি বলছি ভাই।

তোমার মায়ের বয়সি আমি।’

‘আপনি কিন্তু এখনও পরিচয় দিচ্ছেন না!’

‘বলছি। আমার মেয়ে একটি ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, তাকে বিয়ে করতে চাইছে। আমরা জানতে পারলাম, ছেলেটি ডিভোর্সি। হ্যালো—।’

‘বলুন!’

‘হ্যাঁ, তারপর জানলাম, সেই ছেলের সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়েছিল। নিশ্চয়ই এমন কোনো মারাত্মক ঘটনা ঘটেছিল যে, তুমি ডিভোর্স করতে বাধ্য হয়েছিলে। বাঙালি মেয়েরা তো চট করে সংসার ভাঙতে চায় না। এখন ওই ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ে সংসার করতে চাইছে, ওর জীবনেও যদি ওরকম ঘটনা ঘটে, বুঝতেই পারছ, মা হিসেবে আমার ভয় হবেই। তাই তোমাকে ফোন করছি, তোমাদের ডিভোর্স কেন হয়েছিল যদি বল তাহলে খুব উপকার হয়।’

‘আশ্চর্য!’ মেয়েটি বলল, ‘আপনার মেয়ে যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন, আমাকে কেন বিরক্ত করছেন!’

‘ওই তো মুশকিল, ওকে এসব প্রশ্ন করলে মেয়ে অসন্তুষ্ট হচ্ছে। আমি তোমার মায়ের মতো, আমাকে বলো। তাছাড়া, ছেলেটা তো মিথ্যে বলতেও পারে।’

‘দেখুন, এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ নিয়ে আমি কথা বলতে রাজি নই।’ ফোন বন্ধ করে দিল মেয়েটি।

হতাশ হলেন মনীষা। ডিভোর্স হওয়ার পর এত চাপাচাপি কেন? তাহলে কি এই মেয়েটিরই দোষ ছিল? কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্রী তিনি নন। আবার কয়েকদিন পরে ফোন করলেন মনীষা। মেয়েটি একটু রুষ্ট হয়ে এড়িয়ে গেল। তাতেও দমে গেলেন না মনীষা। দিন পনেরো পরে আবার ফোন করলেন, ‘মা, আমি ঘুমোতে পারছি না, তুমি আমাকে এড়িয়ে যেয়ো না, প্লিজ!’

মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।

মনীষা বললেন, ‘বলো মা, আমাকে সাহায্য করো।’

মেয়েটি বলল, ‘ঠিক আছে, শুনুন। সে অক্ষম, পুরুষত্বহীন।’ বলেই লাইনটা কেটে শুধু দিল না, মনীষা দেখলেন মেয়েটি ফোনের সুইচ অফ করে দিল। হতভম্ব হয়ে বসে থাকলেন তিনি। তারপর কেঁদে উঠলেন সশব্দে। কান্না শুনে নিখিলেশ ঘরে এলেন—’কী হল?’

কাঁদতে কাঁদতে মনীষা বললেন, ‘আবার খুকির ডিভোর্স হবে গো।’

‘বিয়ের আগেই ডিভোর্স হয়ে যাবে?’ নিখিলেশ অবাক।

এবার গড়গড় করে মনীষা যা শুনেছেন তা—ই বলে গেলেন।

নিখিলেশ বললেন, ‘তোমার যদি মনে হয় খুকিকে সতর্ক করা দরকার। কর।’

‘নিশ্চয়ই দরকার, একশোবার দরকার। আসুক সে।’

রাত্রে বাড়ি ফিরতেই মেয়েকে তাঁদের ঘরে আসতে বললেন মনীষা। মেয়ে অবাক হল—’কী ব্যাপার? খুব জরুরি মনে হচ্ছে?’

‘হ্যাঁ শোন, এই ছেলেকে তুই ভুলে যা।’ মনীষা কঠোর গলায় বললেন।

‘ওমা, কেন?’

‘ও তোর উপযুক্ত নয়।’

‘কী করে বুঝলে?’

‘আহা, যা বলছি, তাই শোন।’

‘তোমার কথার পেছনে যে—যুক্তি আছে সেটা বলো।’

মনীষা স্বামীর দিকে তাকালেন—’তুমি বলো।’

নিখিলেশ শান্ত গলায় বললেন, ‘তোমার মা খবর নিয়ে জেনেছেন, এই ছেলেটি অত্যন্ত শীতল, যৌনশক্তিহীন। তাই—’

হঠাৎ খিলখিল করে হেসে মেয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমরা কী করে জানলে?’

‘তার মানে? যে করেই হোক জেনেছি। তুই হাসছিস কেন?’ মনীষা বললেন।

‘কারণ, আমি অনেকদিন আগেই জেনেছি।’ মেয়ে বলল।

‘অ্যাঁঃ সেকি!’ মনীষার চোখ কপালে উঠল—’জেনেও বিয়ে করতে চাইছিস?’

‘আমি তো এরকম একজনকে খুঁজছিলাম।’

‘শুনছ!’ আঁতকে উঠলেন মনীষা।

‘এমন একজন যাকে ভালোবাসতে পারব, এ সেই ছেলে। বিয়ের পর ভিসা পেলেই আমি সিডনিতে গিয়ে থাকব।’

‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’ মনীষা দু’হাতে মুখ ঢাকলেন।

‘তোমরা জানতে চেয়েছিলে কেন আমি ডিভোর্স চেয়েছিলাম, বলিনি। নিজেই সব ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন বলছি। ওই বিয়ের পর বুঝতে পারলাম, আমি সেক্স সহ্য করতে পারছি না। তোমাদের সেই জামাই আমাকে ফ্রিজিড ওম্যান বলেছিল। সে নিস্তার চেয়েছিল বলে ডিভোর্স পাওয়া সহজ হয়েছিল। ভেবেছিলাম, বাকি জীবন একাই থাকব। কিন্তু হঠাৎ ফেসবুকে এই ছেলেটির সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর বুঝলাম, ও আমারই মতো। ওর সঙ্গে সারাজীবন থাকা যায়। তোমরা এ নিয়ে ভেব না, আশীর্বাদ করো, এবার যেন ভালো থাকি।’ মেয়ে চলে গেল নিজের ঘরে।

নিখিলেশ হাসলেন, ‘ভালো, এরকম আঁতাত কদাচিৎ হয়।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *