অ-আ-ক-খুনের কাঁটা – ১৩

তেরো

ফেরার পথে বাসু-সাহেব বললেন, চল শেয়ালদার কাছে ‘সুইট-হোম-এ একটা ঢুঁ মেরে যাই।

—‘সুইট হোম’। কেন?

—বিকাশবাবুর অ্যালেবাইটা পাকা কিনা যাচাই করতে। অর্থাৎ ছ তারিখে সন্ধ্যায় ও ঐ হোটেলে চেক-ইন করেছিল কিনা।

কৌশিক বলে, কিছু মনে করবেন না মামু, আপনার সন্দেহের লিস্টে কি রানু মামীমাও আছেন? তাঁর অ্যালেবাইটাও যাচাই করবেন?

সুজাতা অট্টহাস্যে ফেটে পড়ে।

বাসু বলেন, এই মাত্র জেনে এলাম যে, লোকটা ঘড়িয়ালস্য ঘড়িয়াল! ‘ভাল’র জন্য যে এমন কৌশল করতে পারে, প্রয়োজনে ‘খারাপে’র জন্যও…

—কী জেনে এসেছেন?

বাসু গাড়ি চালাতে চালাতে বর্ণনা দিলেন—স্বর্গীয় চন্দ্রচূড়ের প্রেমপত্রখানির। বিকাশকে পরে জিজ্ঞাসা করে জেনেছেন-চিঠিখানির ইংরাজি বয়ান বিকাশের, অনুবাদ ডুপ্লে কলেজের এক অধ্যাপকের, যিনি ভাল ফ্রেঞ্চ জানেন। অনিতা সুযোগ মত আলমারি খুলে জেনে নিয়েছিল, চন্দ্রচূড় তাঁর ধর্মপত্নীকে প্রেমপত্রে কী জাতীয় মধুর সম্বোধন করতেন। চন্দ্রচূড়ের সইটা জাল করা হয়েছে। তারপর ঐ খামটা আর একটা বড় খামে ভরে বিকাশ তার দিল্লীবাসী এক বন্ধুকে পাঠিয়ে দেয়, দিল্লীর ডাকঘরে ‘পোস্টিত’ হতে! আদ্যন্ত পাকা ক্রিমিনালের কাজ! রমলা কিছুমাত্র সন্দেহ করেননি।

সুজাতা বলল, কিন্তু বিকাশবাবুর স্বার্থটা কি? চন্দ্রচূড় খুন হন বা না হন—তিনি তো সম্পত্তির একমাত্র ওয়ারিশ।

—তা ঠিক। তবে এ পথ দিয়েই যখন যাচ্ছি তখন সুইটার হোমে পৌঁছনোর আগে সুইট-হোমটায় একটু ঢুঁ দিতে দোষ কী?

মনোহরবাবু অমায়িক লোক। হাত জোড় করে বললেন, ছরি ছার! আমার গোটা হোটেল অখন বুকট। একটা ঘরও খালি নাই।

বাসু-সাহেব আত্মপরিচয় দিলেন। তাতে মনোহর বিগলিত হলেন ঐ ‘বার-অ্যাট-ল’ অংশটায়। মনে হল না তিনি বাসু-সাহেবের নাম জীবনে কখনো শুনেছেন। বাসু বললেন, আমরা একটা ‘ক্রিমিন্যাল ইনভেস্টিগেশন’ করছি…..

—কী করতাছেন? বাঙলায় কয়েন মোশাই। ইঞ্জিরি আমি ভাল বুঝি না

—একজন অপরাধীকে খুঁজছি আর কি। আপনার হোটেল-রেজিস্টারটা যদি কাইন্ডলি একবার দেখতে দেন?

মনোহরবাবুর মূর্তি অন্যরকম হল। বললেন, আজ্ঞে না। চোর-ছ্যাঁচড় বদমাইশ আমার হোটেলে ওঠে না। সবই ভদ্দরলোকের পোলা।

বাসু বললেন, অ। তা তিন কাপ চা হবে? বসে খেতাম?

—তিন কাপ ছাড়া ছয় কাপ খান না—কিন্তু খাতা-পত্তর দ্যাখন চলব না।

—আর কাইন্ডলি যদি একটা টেলিফোন করতে দেন—

—ক্যান দিমু না? আঠানা লাগব কিন্তু

—শ্যুয়র!— হিপ্ পকেট থেকে একটা আধুলি বার করেন বাসু-সাহেব।

মনোহর ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর মুখ চোখ লাল। বললেন, আপনে আমারে গাইল দিলেন?

—গালি? ও আই সী। না না, শুয়োর কই নাই! SURE যারে ‘শিয়োর’ কয় আর কি! আমার কিছুটা উরুশ্চারণের দোষ আছে।

মনোহর শান্ত হলেন! আধুলিটা পকেটস্থ করে ছোকরা চাকরটাকে বললেন, বাইরে তিনখাপ ছা।

কৌশিক টেলিফোনের রিসিভারটা তুলে বাসু-সাহেবের দিকে ফিরে বললে, কত নম্বর স্যার?

—45-7586; ওটা D.I.G./CID-র পার্সেনাল লাইন। সুকোমল যদি থাকে তবে আমার নাম করে বল সুইট-হোমের নামে একটা সার্চ-ওয়ারেন্ট পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে। আমরা এখানেই বসে চা খাচ্ছি।

অতি ধীরে গাত্রোত্থান করে মনোহর বলেন, ব্যাপরডা কী? D.IG/C. I.D. আবার কেডা?

—ডেপুটি আই.জি, ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট। সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া যখন খাতাপত্র দেখা যাবে না…

তিনটে ডিজিট ডায়াল করা হয়েছিল। বাকি কৌশিক করতে পারল না তার হাতটা মনোহরবাবু বজ্রমুষ্টিতে চেপে ধরায়।

একেবারে অন্যমূর্তি। সব রকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।

হ্যাঁ…বিকাশবাবুকে উনি চেনেন…চন্দননগরের বিকাশ মুখুজ্জে।…ছয়ই নভেম্বর কইলেন না? হ্যাঁ, আইছিলেন। রাত্রে থাকছিলেন। খায়েন নাই। পরদিন তাঁর ফোন আইল…চন্দনগরে সেই চন্দ্রচূড়…নাম শুনছেন না? ঐ যে ‘এবিছি’ হত্যার কেস্! অরই তো বুনাই…সেই ফোন পাইয়াই ছুটল।…তখন কয়ডা? অ্যাই নয়ডা হইব মনে লাগে।

আরও অনেক তথ্য অযাচিতই বলে গেলেন। বিকাশ এসেছিল গাড়িতে। গাড়ি খারাপ হয়। সারাতে দেয়। প্রথমে মনোহরবাবু ওঁকে সীট দিতে রাজি হননি। কারণ দোতলার তিন-নম্বর ঘরে কলে কী গণ্ডগোল হয়েছিল। অ্যাক্কেরে পানি আসছিল না। আর সব সীট ভর্তি। তা বিকাশবাবু কইলেন, রাতটুকু তো থাকুম। পানি লয়্যা কী করুম? এক বাতি পানি বাথরুমে দিয়া দ্যান, তাতেই হইব।

বাসু প্রশ্ন করেন, তা কলটা রাত্রে সারানো গেল না।

—না, রাতে পেলামবার পাইব কোই? পরদিন সারাইলাম।

কৌশিক বুঝে উঠতে পারে না এসব খেজুরে আলাপ করে কেন উনি সময় নষ্ট করছেন।

.

সুজাতা ইতিমধ্যে বর্ধমান থেকে ঘুরে এসেছে ময়ূরাক্ষীর গোপন বার্তা নিয়ে। এক বাণ্ডিল প্রেমপত্র। সর্বসমেত সতের খানি। তার ভিতর সাতখানি অমল দত্তের। ছ-খানি যিনি লিখেছেন—বালায়, তাঁর নাম-ঠিকানা-পরিচয় নেই। প্রতিটি পত্র শেষে ‘ইতি তোমার মালাকার’। এঁর প্রথম পত্রটিতেই এই নামের গঙ্গোত্রী ইতিহাস আছে। প্রথম পত্রে প্রেমিক একটি উদ্ধৃতি দিয়েছিলেন : ‘আমি তর মালঞ্চের হব মালাকার।’ বাকি চারখানি ইংরেজিতে টাইপ করা।

ইনিও সাবধানী। ভাষা মার্জিত। পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। পত্রশেষে লেখা আছে—’Yours Ever Mugdha – Bhramar’ এই ‘মুগ্ধ ভ্রমর’-টির ইংরেজিতে বেশ মুন্সিয়ানা আছে। টাইপিং-এও ভুল কম! বেশ বোঝা যায়, এ লোকটা বনানীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিল না— ওরা শুধু প্রেম করতে চেয়েছিল, অথবা ফুর্তি। ভবিষ্যৎ বিবাহিত জীবনের সম্ভাব্য বিড়ম্বনা এড়াতে আত্মগোপন করেছে।

কৌশিক বললে, আমার ধারণা–যে লোকটা বাসুমামুকে চিঠি লেখে সে প্রথম খুনটা করেছে এবং শেষ খুনটা। কারণ এ দুটির কোনও মোটিভ নেই। খুন করে কেউ লাভবান হয়নি। খুনের জন্যই খুন। আর বনানীকে যে হত্যা করেছে সে ওর কোনও প্রেমিক। লোকটা হয় স্যাডিস্ট, অথবা ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে…

সুজাতা বলে, কিন্তু ‘নাম’ আর ‘স্থান’? নিতান্তই কাকতালীয়?

—হতে পারে। অথবা বনানীর হত্যাকারী ঐ অ্যালফাবেটিক্যাল সুযোগটা নিয়েছে! যাতে পুলিস মনে করে, এটা ঐ অ্যালফাবেটিক্যাল হত্যাবিলাসীর কাণ্ড! এমনটা কি হতে পারে না? বাসুমামু কী বলেন?

বাসু বলেন, এখনো সিদ্ধান্তে আসার মতো ‘ডাটা’ পাইনি।

রানু বলেন, তুমি কি সেই বড়দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাও?

বাসু চটে ওঠেন, তা আমি কী করতে পারি? পুলিশ পর্যন্ত এখন আমার সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। সেই বুড়ো ইস্কুল-মাস্টারটা ধরা পড়লেও হয়তো কিছুটা ধারণা করতে পারি। এখন তো ঘোর অন্ধকার। পণ্ডিচেরীর ফাইলটাও যে দেখতে পেলাম না! মহারাজজী একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে!

কৌশিক বলে, আপনি কি তাঁকে সন্দেহ করেন?

—করব না? মাস-মাস সাড়ে চারশ টাকা মনি-অর্ডার করত। ব্যাঙ্ক ড্রাফ্‌ট্ বা ক্রস-চেক-এ টাকা পাঠালে অনেক কম খরচ পড়ত। কিন্তু ‘চেক’ মানেই একটা ব্লু–ব্যাঙ্ক রেফারেন্স! রহস্যটা পণ্ডিচেরীতে। কিন্তু পুলিস আমাকে সেসব কাগজ দেখতে দেবে না।

.

অবশেষে বুড়ো ইস্কুল মাস্টারটা ধরা পড়ল।

চন্দননগরে। ষোল তারিখ সকালে।

বলাই বাজার করে ফিরছিল! হঠাৎ নজরে পড়ে একজন বুড়ো ভিখারী দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে। একমুখ খোঁচা-খোঁচা দাড়ি। গায়ে ওভারকোট নয়—ছেঁড়া শার্ট। পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো—ডান পায়ের বুড়ো আঙুলটা বেরিয়ে আছে। বলাই স্বপ্নেও ভাবেনি এই সেই লোক। খবরের কাগজে ছাপা ছবির সঙ্গে এই কঙ্কালসার ভিখারীর কোন সাদৃশ্যই নেই। বলাই বললে, এগিয়ে দেখ বাপু, এখানে ভিক্ষা হবে না। বাড়িতে অসুখ।

—না বাবা, ভিক্ষা চাইছি না। …মানে এটাই কি ডক্টর চন্দ্রচূড় চাটুজ্জের বাড়ি?

—হ্যাঁ, কাকে চাই? বিকাশবাবুকে?

—না বাবা চাইছি না কাউকে। আচ্ছা ডক্টর চ্যাটার্জি যে বেঞ্চিটার সামনে খুন হয়েছিলেন তুমি সেটা আমাকে দেখিয়ে দিতে পার?

বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো একটা সম্ভাবনা বলাইয়ের মনে জাগল। একটা ‘হিন্দি পিক্‌চারে’ ডিটেকটিভ বলেছিল—খুনী প্রায়ই খুনের জায়গাটা দেখতে আসে।

বলাই ওখান থেকে চিৎকার করে ওঠে—দারোয়ানজী।

দারোয়ান তার গুমটিতে বসে আটা মাখছিল। বলাইয়ের চিৎকার শুনে সে বেরিয়ে আসে।

অনিতা আর বিকাশ বাগানে গল্প করছিল। তারাও দৌড়ে আসে।

বৃদ্ধ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন! বিকাশ দারোয়ানকে প্রশ্ন করে, পহছতেহ?

বৃদ্ধ সে কথা শুনে ডান হাতখানা বাড়িয়ে আর্তকণ্ঠে বলে ওঠেন, না, না, আমি….. ওঁকে খুন করিনি।

দারোয়ান লাঠিখানা বাগিয়ে ধরে শুধু বললে, কিতাববাবু!

বিকাশ প্রচণ্ড জোরে বৃদ্ধের চোয়ালে একটা ঘুষি মারল।

যে ভঙ্গিতে চন্দ্রচূড় উবুড় হয়ে পড়েছিলেন ঠিক সে ভঙ্গিতেই হাত-পা ছড়িয়ে ছিট্‌কে পড়লেন হেমাঙ্গিনী স্কুলের থার্ড-মাস্টার।

অনিতার কী হল—সে লাফ দিয়ে পড়ল বৃদ্ধের উপর। তাঁকে আক্রমণ করতে নয়, রক্ষা করতে। চিৎকার করে বলে, কেউ ওঁর গায়ে হাত দিও না। মরে গেলে কিন্তু তোমরাও খুনের দায়ে পড়বে!

বিকাশের তখনও রাগ পড়েনি। সে দারোয়ানের হাত থেকে লাঠিটা কেড়ে নেয়। কিন্তু আঘাত করা সম্ভব হয় না। অনিতা বৃদ্ধকে আঁকড়ে উবুড় হয়ে পড়েছে। তখনও সে বলছে, বিকাশদা! ঠাণ্ডা হও! য়ু কান্ট টেক ল ইন য়োর ঔন হ্যান্ডস্!

বিকাশ সম্বিৎ ফিরে পেল। তার ডান হাতটা ঝঝন্ করছে। সে বাড়ির দিকে ফিরল থানায় ফোন করতে। অনিতা দেখল, বৃদ্ধ জ্ঞান হারিয়েছেন। নিজের দাঁত দিয়ে জিবটা বোধহয় কেটে গেছে। মুখ দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে। বললে, দারোয়ান জল, জল নিয়ে এস বলাই দৌড়ে যা! ডাক্তারবাবুকে ডেকে আন্ শিগগির!

.

পরদিন সকালে চার-পাঁচখানি কাগজ নিয়ে নিউ আলিপুরের বাড়িতে ওঁরা ভাগাভাগি করে পড়ছিলেন। সব কাগজেই প্রথম পৃষ্ঠায় খবরটা বেরিয়েছে। অনেক ছবিও। সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে দুটি পত্রিকায়। বিশু এসে খবর দিল—একজন বাবু আর একটি মেয়েছেলে দেখা করতে চাইছেন। সুজাতা উঠে দেখতে পেল এবং ফিরে এসে বললে, ডক্টর দাশরথী দে আর তাঁর মেয়ে।

বাসু বললেন, এখানেই ডেকে নিয়ে এস।

ডাক্তার দে বললেন, তিনি পুলিসে ফোন করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে জানানো হয়েছে এ অবস্থায় বাইরে কোনও লোকের সঙ্গে আসামীকে দেখা করতে দেওয়া হবে না।

—উনি আছেন কোথায়? হাসপাতালে না হাজতে?

—হাজতে। ফার্স্ট-এড দিয়ে ওঁকে হাজতেই পাঠিয়ে দিয়েছে।

বাসু বললেন, একটা টাকা দিন তো?

—আজ্ঞে?

—একটা ভাঙতি টাকা, কয়েন বা নোট।

এবারও প্রশ্নটা বোধগম্য হল না তাঁর। বিহ্বলভাবে এদিক-ওদিক তাকালেন। মৌ তার ভ্যানিটি-ব্যাগ থেকে একটা এক টাকার নোট বাড়িয়ে ধরে।

বাসু বলেন, টাকাটা তোমার বাবাকে দাও। …ইয়েস্! দ্যাটস্ কারেক্ট। এবার আপনি আমাকে ঐ টাকাটা দিন? …হ্যাঁ আমাকেই।

সুজাতা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে ব্যাপারটা। সে ইতিমধ্যে নিয়ে এসেছে রসিদ বইটা। বাসু-সাহেবকে প্রশ্ন করে, রসিদটা কার নামে হবে?

—ডাক্তার দাশরথী দে, ফর অ্যান্ড অন বিহাফ অব্ শিবাজীপ্রতাপ বোস, লীগ্যালি ইনসেন্

ডাক্তার দে বলেন, ওটা …মানে …ঐটুকুই আপনার রিটেইনার?

—হ্যাঁ! আপনার মাস্টারমশায়ের সঙ্গে হাজতের ভিতরে দেখা করার ছাড়পত্র। এখন আইনত আমি তাঁর লীগ্যাল কাউন্সেল। আপনাদের কিছুতেই হাজতে ঢুকতে দেবে না; কিন্তু আমাকে কিছুতেই আটকাতে পারবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *