অ্যা কিডন্যাপিং – ৬

ছয়

কয়েক ঘণ্টা সোফায় বসে কাটানোর পর (ঘুমিয়েছি কিনা সন্দেহ আছে) উঠে দাঁড়ালাম। অভ্যাসমতো আমার দৈনন্দিন ব্যায়াম, বুকডন দেওয়া শুরু করলাম। মাটিতে যখন সটান করে শুয়ে পড়ে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম, তখন জুরিকে আমার মুখের ওপর দেখতে পেলাম। “শুভ সকাল।”

“বেশ সকাল সকাল উঠে পড়েছো দেখছি। নাকি ঘুমই আসেনি?”

“খিদে পেয়েছে।”

“একটু অপেক্ষা করো। এক্ষুনি কিছু একটা বানিয়ে আনছি।” উঠে দাঁড়িয়ে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলাম।

সকালের মেন্যুর জন্য পাউরুটি টোস্ট, সিদ্ধ ডিম আর ভেজিটেবল জুস ঠিক করলাম। কফি বানাতে অনেক হ্যাপা লাগে।

টোস্টে কামড় দিয়ে কম্পিউটারটা চালু করলাম। ইমেইল চেক করা শুরু করলাম। কেবল দুটো ইমেইল ছিল ইনবক্সে। অটোমোবাইল পার্কের পরিকল্পনা বাদ দেওয়ার পর থেকে আমাকে আর গুরুত্বই দেওয়া হচ্ছে না। এটা তো হতে দেওয়া যায় না। আমাকে পূর্বের ফর্মে ফিরে আসতেই হবে।

হঠাৎ মনে হলো, কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, জুরি কম্পিউটারের পর্দার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কী হয়েছে, জিজ্ঞেস করলাম।

“বাবা কি এখনো মেইলটা দেখেনি?” সে ধীরে ধীরে বলল।

“দেখেছে কিনা চেক করতে চাও?”

“হুম।”

আমি ব্রাউজারে ক্লিক করে ‘সিপিটির মালিকদের ক্লাব’ ওয়েবসাইটটাতে ঢুকলাম। বুলেটিন বোর্ড ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম, গত রাতের পর নতুন করে কেবল দুটো এন্ট্রি দেখা যাচ্ছে। তাদের একটাও কাতসুতোশি কাতসুরাগির বলে মনে হলো না।

“এখনো উত্তর আসেনি।” বলে ব্রাউজারের উইন্ডো কেটে দিলাম।

“হয়তো তিনি এখনো ওটা দেখেননি।”

“আমার তা মনে হয় না। যেহেতু তিনি তার স্টাডিরুমে একটা ফ্যাক্স মেশিন রেখেছেন, সেহেতু আমাদের ধরে নিতে হবে যে যে-কোনো বিপদে কেউ তাকে ফ্যাক্স পাঠাতে পারে। তাই ঘুম থেকে উঠে তার সোজা স্টাডিরুমে চলে যাওয়ার কথা। এখন বোধহয় চিঠিটা হাতে নিয়ে তিনি হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। আমি নিশ্চিত যে, এইমুহূর্তে কী কী করা উচিত তা নিয়ে তিনি চিন্তাভাবনা করা শুরু করে দিয়েছেন।” ঘড়ির দিকে তাকালাম। আটটা বেজে গেছে।

কম্পিউটার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাকি টোস্টটা ডিমসিদ্ধ আর ভেজিটেবল জুস দিয়ে গলাধঃকরণ করে নিলাম।

“তোমার বাবা এখন থেকে কী কী করবেন, তা আমি অনুমান করে বলে দিচ্ছি। প্রথমেই তিনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করবেন। তিনি বেশ সম্ভ্রান্ত একটা পরিবারের মানুষ, তাই পুলিশের উচ্চপদস্থ কারোর সাথে তার খাতির থাকা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। ধরে নিতে পারো, একঘণ্টার মধ্যেই টোকিও মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে একজন অভিজ্ঞ কিডন্যাপিং ইনভেস্টিগেটর তার বাসায় পৌঁছে যাবে। তার মধ্যেই তোমার বাবা অফিসে ফোন করে জানিয়ে দেবেন যে, আজকে ব্যক্তিগত কারণে তিনি অফিসে আসতে পারবেন না। একই সাথে খুবই জরুরি কিছু না হলে তার সাথে যোগাযোগ করতে মানা করে দেবেন। গৃহপরিচারিকাকে ফোন করে তাকে আজকে আসতে মানা করে দেবেন। ও হ্যাঁ, স্ত্রী আর অপর কন্যাকেও বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করবেন। মোটামুটি এই-ই হতে পারে।”

“ব্যাংকের সাথে কোনো যোগাযোগ করবেন না?”

“কি, মুক্তিপণের টাকার কথা বলছো? না, এখনোই করবেন না। সেটা পুলিশের সাথে কথাবার্তা শেষ হবার পরই হয়তো করবেন। আর মানুষটা কিন্তু কাতসুতোশি কাতসুরাগি, সেটা ভুললে চলবে না আমাদের। তার মতো মানুষ খুব সহজেই তিনশ মিলিয়ন ইয়েনের মতো টাকা জোগাড় করে ফেলতে পারেন। ব্যাংক থেকে ওরকম পরিমাণের টাকা তোলাটাও তার কাছে ব্যাপার না।”

বাথরুমে গিয়ে ঝটপট গোসল সেরে নিলাম। শেভ করতে করতে এখন আমার কী করা উচিত, তা চিন্তা করতে লাগলাম। এখন তিনি ওয়েবসাইটে ঢুকবেন না, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আর তিনি যে সোজাসুজি টাকা দিয়ে কাজটা সেরে ফেলতে চাইবেন না, সেটাও জানা আছে আমার। তিনি নানান ধরনের শর্ত জুড়ে দেওয়া শুরু করবেন। আমি আগে নিশ্চিত হতে চাই যে, আমার কন্যা নিরাপদ আছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। ওরকম প্রশ্নের উত্তর কীভাবে দেবো আমি?

দাঁত ব্রাশ করে যখন রুমে ফিরে এলাম, তখন জুরি সোফায় বসে টিভিতে খবর দেখছে।

“আপনি কি এখন কাজে চলে যাবেন?” সে জিজ্ঞেস করলো।

“তোমার হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হতে পারে, কিন্তু আমার একটা চাকরি আসলেই রয়েছে।”

“আমি কী করব তাহলে?”

“তোমার যা মন চায় করো— বলতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু সেটা বলা ঠিক হবে না। কারণ, তুমি যা খুশি করলে আমি বিপদেও পড়ে যেতে পারি। তাই তোমার প্রথম কাজ হলো, এ ঘর থেকে তুমি বের হবে না। আর হ্যাঁ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ, কেউ যদি ইন্টারকমে ফোনও করে, ধরবে না। ফোন এলেও ধরবে না, কোথাও ফোনও করবে না। এই ওয়াদাগুলো ভঙ্গ না করলে এখানে তোমার যা খুশি তুমি করতে পারবে।”

“আমার তো একসময় না একসময় খিদে পাবেই।”

“ফ্রিজারে পিলাফ (পোলাও) আছে। আর কাবার্ডে অনেকগুলো শুকনো খাবারের কৌটা পাবে। আপাতত সেটা দিয়েই আজকে চালাও। হ্যাঁ, ওয়াইন আর বিয়ার খেতে পাবে, তবে সেটা পরিমিতভাবে। যদি মাতাল হয়ে উদ্ভট কিছু করে বসো, তবে আমাদের পরিকল্পনার ক্ষতি হতে পারে।”

“দোকানেও যেতে পারবো না?”

“আমরা আসলে কী করার চেষ্টা করছি, তা একটু ভেবে দেখো। আমরা তো বাচ্চাদের মতো লুকোচুরি খেলার চেষ্টা করছি না।” তর্জনী তুলে বললাম, “ভুল বললাম। ‘চেষ্টা করছি’ না বলে ‘করছি’ বললে কথাটা ঠিক হবে। খেলা আমরা একটু আগেই শুরু করে দিয়েছি। আমরা সীমারেখাটা পার করে ফেলেছি। আর ফিরে যাওয়ার অবকাশ নেই।”

জুরি আমার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকালো। সে বোঝাতে চাইলো, আমি তো ব্যাপারটা জানিই! যাক, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এরকম মুখভঙ্গি করতে পারছে, ততক্ষণ আমি চিন্তামুক্ত।

প্রতিদিনকার মতো আজও বাসা থেকে বের হয়ে সাবওয়েতে ঢুকে পড়লাম। আড়চোখে নিজের প্রতিফলনটা দেখে নিলাম। না, ঠিকই আছে সব। আমাকে দেখে স্বাভাবিক একজন চাকুরীজীবীই মনে হচ্ছে। দেখে কোনোভাবেই মনে হবে না যে, আমি একটা কিডন্যাপিং আর ব্ল্যাকমেইলিংয়ের পরিকল্পনা কষেছি। মনে হবেই বা কেন? কোন দুনিয়ায় একজন একজন কিডন্যাপার আরমানি স্যুট পরে চাকরিতে যায়?

অবশ্য আমার কাছে এই ‘অপরাধ’ জিনিসটা খুব একটা বড়ো কিছু বলে মনে হয় না। মার্সেনারিরা কিন্তু এরকম কাজ করেই রোজগার করে। আইনের ফাঁক-ফোকর খুঁজে সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা না করে তারা আইনের চোখে যাতে ধরাই না পড়ে—সেদিকে খেয়াল রাখে। ব্ল্যাকমেইলিংও ওরকম। বরং ক্লায়েন্টদের মন জোগানোর জন্য যে পরিমাণ খাটতে হয়, সেটার সাথে তুলনা করলে ব্ল্যাকমেইলিং অনেক বেশি আনন্দদায়ক আর আরামের একটা কাজ।

আমি জুরিকে বলে এসেছি, আমরা সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছি, পিছে ফেরার আর সুযোগ নেই। কিন্তু আমার মন কিন্তু তা বলছে না। যদি কোনোধরনের ঝুঁকি দেখা দেয়, আমি সাথে সাথে কেটে পড়ার চেষ্টা করবো। জুরিও আমার কথার বাইরে যাবে না। কারণ, সে নিজেও একটা নকল কিডন্যাপিংয়ের সাথে জড়িত থাকতে চাইবে না। অবশ্য ধরা পড়ে যাবো, এই ভয়টা আমার মনে কাজ করছিল না। আমি কেবল উত্তর দেবো এই বলে যে, ও মজা করতে চেয়েছিল তাই আমি ওর মজার সঙ্গ দিয়েছি। ব্যস। সে হয়তো সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করবে, সবটুকু পরিকল্পনা আমারই, কিন্তু তার কাছে তো সেটার কোনো প্রমাণ নেই। আর সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার হলো : ভিক্টিম মহাশয়, মানে কাতসুতোশি কাতসুরাগি নিশ্চয়ই সবার কাছে এসব জানাজানি হতে দেবেন না।

অবশ্য এই মুহূর্তে আমি ওসব নিয়ে একদমই ভাবছি না। একটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে পিছিয়ে যাবার মানুষ আমি নই। এই খেলাতেও আমি জিতেই ছাড়ব।

অফিসে আমার জন্য কেবল বিরক্তিকর সব কাজ অপেক্ষা করছে। জনপ্রিয় একজন গায়িকা একটা সিনেমায় অভিনয় করেছে, আর সেই সাথে সেটার ভিডিয়ো গেমের প্রমোশনমূলক কাজ পড়ে থাকার কথা। আমার মতো একজন দক্ষ কর্মীর হাতে এসব দেওয়া কি ঠিক? মিটিং চলাকালীন সময়ে আমার মাথায় কেবল একটা চিন্তাই ঘুরছিল, কীভাবে মুক্তিপণের টাকাটা সংগ্রহ করা যায়। এটা নিয়ে ভাবতেই বরং ভালো লাগছে।

আমার সিটে ফিরে গিয়ে কম্পিউটারটা চালু করে নেটে ঢুকলাম। না, ওয়েবসাইটে কাতসুরাগি সাহেব এখনো কোনো উত্তর দেননি।

তারমানে তিনি কি এখনো পুলিশের সাথে আলোচনা করছেন? ইশ, একটা ডেডলাইন দেওয়া উচিত ছিল। বোঝাই যাচ্ছে, তারা যতক্ষণ পারবে পিছিয়ে নেবার চেষ্টা করবে।

“কী দেখছেন?” আমার পেছন থেকে একটা গলা বলে উঠল।

দ্রুত ওয়েবসাইটের উইন্ডো কেটে দিয়ে পেছনে তাকালাম। সুগিমোতো মাথা নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। এতক্ষণ ধরে আমি যা যা করছিলাম, সবই কি ও দেখে ফেলেছে নাকি?

সে আরেকটু চাপ দিলো। “কোনো মজাদার ওয়েবসাইট নাকি?”

“না, এমনি নেটে গুঁতোগুঁতি করে সময় কাটাচ্ছিলাম।” আমি কোন ওয়েবসাইটে ঘোরাফেরা করছিলাম, তা যদি এই মানুষটা টের পেয়ে যায় তবে বিপদ হতে পারে। “ভাবলাম, ঐ গায়িকার সিনেমার ব্যাপারে কিছু খোঁজাখুঁজি করি এই আরকী।”

“আচ্ছা। ইউমি কুরিহারার ঐ সিনেমাটা, যেখানে সে একটা গেমের চরিত্র হয়ে যায়?”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওটাই।”

“ভালোই বিপদে পড়েছেন।”

সুগিমোতোর মুখে একটা সমবেদনা কাজ করছিল। সে হয়তো এখন মনে মনে ভাবছে যে, আমাদের পজিশন, কাজকর্ম সব একে অপরের সাথে অদলবদল হয়ে গেছে।

যাই হোক, কোন ওয়েবসাইটে ঘোরাফেরা করছিলাম তা তাকে কোনোভাবেই বুঝতে দেওয়া যাবে না।

“আজকে না আপনার নিসেই-এর সাথে একটা মিটিং থাকার কথা?” জিজ্ঞেস করলাম।

“হুম, ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে খবর এলো, মিটিংটা নাকি আর হবে না।”

“নিসেই থেকে ক্যান্সেল করেছে নাকি?”

“হ্যাঁ। শুনলাম, মিস্টার কাতসুরাগি নাকি মিটিংটাতে উপস্থিত থাকতে পারবেন না। সেজন্যই ক্যান্সেল করেছে।”

“মিস্টার কাতসুরাগি?”

“মাথায় একটা ব্যাপার কোনোমতেই ঢুকে না— এরকম মিটিংয়ে কেন উনার মতো মানুষদের থাকতে হবে? আবার উনাকে ছাড়া কোনো মিটিং করার কথা তোলাও যাবে না।” এটুকু বলেই সুগিমোতো হয়তো ভাবলো, আমার সাথে অনেক বেশি বকবক হয়ে গেছে। তাই গেলাম বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল।

ডেস্কে নখ দিয়ে টোকা দেওয়া শুরু করলাম। তারমানে কিডন্যাপারদের কাছ থেকে পাঠানো একটা মুক্তিপণ দাবী করা চিঠি কাতসুরাগির মতো মানুষকেও টলিয়ে দিতে পারে। এখন বোধহয় সে ফ্যাকাশে চেহারায় তার নিজের প্রাসাদে বসে আছে।

দুপুরে খাবার সময় হতেই আমি অফিস থেকে বের হয়ে নিকটবর্তী একটা ক্যাফেতে খেয়ে নিলাম। কফিতে চুমুক দিতে দিতে মুক্তিপণটা কীভাবে আদায় করে নেওয়া যায়, সেটা নিয়ে আবার ভাবতে শুরু করলাম।

তিনশ মিলিয়ন ইয়েন কিন্তু নেহাৎ ছোটোখাটো পরিমাণের টাকা নয়। একটা ব্যাগে বোধহয় সে টাকা আটবে না, কয়েকটা ব্যাগ লাগবে। তবে একটা ব্যাগে কোনোমতে আঁটালেও সেটা বহন করাও অনেক মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।

কিডন্যাপাররা অনেকসময় এই টাকা কীভাবে বহন করবে, সেটা ভেবে দেখে না বলেই পুলিশের কাছে ধরা পড়ে যায়। আবার ঠিক ঐ সময়টাই কিন্তু পুলিশের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়ে অসতর্ক থাকা কিডন্যাপারদের তারা কপ করে ধরে ফেলে। যেভাবেই হোক, পুলিশের কাছ থেকে আমাকে বাঁচতেই হবে। তাদের এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য বেশ কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আছে। সেগুলোকে এড়াতে হবে।

কফি শেষ করে যখন অফিসে ঢুকলাম, টের পেলাম অফিসের আবহাওয়া সম্পূর্ণ পালটে গেছে। বেশ কয়েকজনকে ছোটাছুটি করতে দেখলাম। পাশ দিয়ে যাওয়া সময় এক জুনিয়রকে পাকড়াও করে কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলাম।

“পরিস্থিতি ভালো না। শুনেছি নিসেই অটোমোবাইল-এর ইভিপি এখানে আসছেন।”

“কে? মিস্টার কাতসুরাগি? এখানে? কেন?”

জুনিয়র মাথা ঝাঁকালো। “কে জানে। আচমকা ফোন দিয়ে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। সে কারণে তার প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে গেছে।”

“আচ্ছা…”

আমি একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। কী হচ্ছে এসব? কোন ধরনের মানুষ নিজের মেয়ে কিডন্যাপ হবার পরও কাজে যায়? সে মেয়ে তার মিস্ট্রেসের হোক আর যারই হোক, ব্যাপারটা মানতে কষ্ট হচ্ছে।

তাহলে একটা সম্ভাবনাই মাথায় আসছে। কাতসুরাগি বোধহয় এখনো চিঠিটা দেখেননি। তিনি হয়তো ধরে নিয়েছেন তার বেয়াড়া, অভদ্র মেয়েটা অন্য কারো বাসায় গিয়ে সময় কাটাচ্ছে।

তাহলে চিঠিটা তিনি পাননি? নাকি পেয়েছেন, কিন্তু পড়ার সুযোগ পাননি? যদি শেষেরটা সত্যি হয়, তবে সমস্যা নেই। কিন্তু প্রথমটা হলে সেটা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমাকে তখন খুঁজে বের করতে হবে, কেন ওটা পৌঁছায়নি।

ডেস্কের ফোন থেকে বাসায় ফোন দিলাম। যদি সত্যিই ফ্যাক্স মেশিনে কোনো ধরনের সমস্যা থাকে, তবে সেটা জুরির সাথে আলোচনা করে বের করতে হবে। কিন্তু তিনবার রিং হবার পর মনে হলো, আমি ওকে ফোন না ধরার জন্য বলে এসেছিলাম।

অসহায়ভাবে কম্পিউটারের সামনে ধপ করে বসে পড়লাম। চালু করে নেটে ঢুকে আবার ‘সিপিটি মালিকদের ক্লাব’ ওয়েবসাইটটার বুলেটিন বোর্ডে গেলাম।

আরেকটু হলেই চিৎকার করে বসেছিলাম। কারণ সেখানে একটা নতুন পোস্ট দেখা যাচ্ছে এখন—

কিনতে আগ্রহী (ইউজারনেম : জুলি)

সবাইকে অভিবাদন জানাই। আমার নাম জুলি। আমাকে একটা সিপিটি কিনতে উপদেশ দেওয়া হয়েছিল। তাই একটা চালিয়ে দেখেছি। কিন্তু বেশ দামী হওয়ায় টাকা জোগাড় করতে বেশ সময় লেগে যাবে। তাই ভাবলাম, চুক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।

জুলি নামের এই ইউজারনেম কাকতালীয় কোনো ব্যাপার নয়। আর এই লেখাটাও বিশেষ কোনো চুক্তির ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। সোজা কথায়, এটা কাতসুতোশি কাতসুরাগিরই লেখা।

বোকা হয়ে বসে ছিলাম। এমন সময় কেউ একজন আমার ঘাড়ে হাত রাখলো। দেখি, কোজুকা দাঁড়িয়ে আছে।

“প্রেসিডেন্ট…”

“দুঃখিত, আমি জানি তুমি ব্যস্ত। কিন্তু…” তিনি গলা নামিয়ে বললেন, “তুমি কি আমার সাথে একটু আসতে পারবে? বোধহয় শুনেছ যে, কাতসুরাগি সাহেব এখানে আসছেন। আমি চাই তুমি যেন তার সামনে উপস্থিত থাকো।

আমি মুখ গোমড়া করে উত্তর দিলাম, “এতকিছুর পরেও আমাকে কেন? আমি তো ভেবেছিলাম, আমার কাজের কোনো মূল্য নেই। একটা অদক্ষ কর্মচারী আমি।”

কোজুকা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে কথাটা এড়িয়ে গেল। “এখন ওসব নিয়ে ভাবার সময় নেই। আসলে মিস্টার কাতসুরাগি একটা উদ্ভট কথা বলেছেন।”

“উদ্ভট? আবার কী উদ্ভট বললেন তিনি?”

“তা বিস্তারিত জানি না। তবে তিনি নাকি কিছু গেমস দেখতে চান। “ “গেমস?”

“আমরা যেসব গেমসের তদারকি করি, সেগুলো। তিনি দশটা প্রোডাক্ট বাছাই করে দিয়ে বলে দিয়েছেন প্রত্যেকটা কী নিয়ে আর সেগুলো কেন বানানো হয়েছিল তা তিনি জানতে চান। এরকম উদ্ভট অনুরোধের পেছনের রহস্যটা এখনো আমার কাছে বোধগম্য হয়নি। তার লক্ষ্য কী, সেটাও বুঝিনি। তবে তিনি বোধহয় এটাকে তার প্রজেক্টে সংযুক্ত করতে চান।”

“খুবই উদ্ভট চিন্তাভাবনা।”

“সেটা আমিও স্বীকার করছি। কিন্তু তিনি দেখতে চেয়েছেন, তাকে তো আর মানা করা যায় না।”

“আচ্ছা, সে নাহয় বুঝলাম। কিন্তু এখানে আমার কাজটা আবার কোথায়?”

“ঐ গেমগুলোর একটা কিন্তু তোমার কাজ ছিল। যখন সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো, তখন তুমি সেটা নিয়ে বিস্তারিত বলবে।”

“ভালো। বেশ ভালো।”

হাতের কাজটায় ইস্তফা দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালাম।

যাই হোক না কেন, আমি কিন্তু এখনো কাতসুরাগির মনের অভিপ্রায় বুঝতে পারছি না। বুলেটিন বোর্ডের মেসেজটা দেখে এটুকু অন্তত বুঝতে পেরেছি যে, তিনি মুক্তিপণের চিঠিটা পড়েছেন। কিন্তু কোনধরনের বাবা তার মেয়ে কিডন্যাপ হবার পরেও কর্মক্ষেত্রে যায়? নাকি চিঠিটা তিনি আসল বলে বিশ্বাসও করেননি? তিনি কি কেবল মজা করার জন্য ঐ মেসেজটা বুলেটিন বোর্ডে পোস্ট করেছেন? তিনি কি তার প্রতিপক্ষকে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, এরকম ঘটনা তার কাছে খুবই তুচ্ছ একটা ব্যাপার?

না, সেটাও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। জুরি বেশ কদিন ধরে নিখোঁজ, এটা সত্য। আর যেহেতু সে তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি, সেহেতু কিডন্যাপ হবার ব্যাপারটা তাদের বিশ্বাস হওয়াটা স্বাভাবিক।

বোধহয় পুলিশই পেছন থেকে সুতো টানছে। পুলিশদের একজন প্রতিনিধি হয়তো কাতসুরাগিকে বুঝিয়েছে, দেখুন মিস্টার কাসুরাগি, গোটা ব্যাপারটাতে খুব শান্তভাবে আমাদের এগোতে হবে। কিডন্যাপাররা খুব সহজে জুরির গায়ে হাত তুলবে না। কারণ, জুরি তাদের কাছে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। আপনি যদি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, আর সেসব কোনোভাবে প্রেসের কাছে ফাঁস হয়ে যায় তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। তাই আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজ করতে থাকুন। অন্যসময় যেভাবে অফিসের কাজ করতেন, সেভাবেই কাজ করতে থাকুন। যদি কোনো তথ্য পাই, তবে আপনাকে সাথে সাথে জানানো হবে। আপনার স্ত্রী বাসায় থাকলেই চলবে। বাকিটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। এই কিডন্যাপাররা অবশ্য ফোন করবে না…– এই ধাঁচের কথাবার্তা বলে হয়তো তাকে ঠান্ডা করা হয়েছে।

কিন্তু তিনি এখন সাইবারপ্ল্যানে আসছেন গেমের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য—ব্যাপারটাতে চিন্তা হচ্ছে। কেন? নাকি তিনি ধরে ফেলেছেন যে, কালপ্রিট সাইবারপ্ল্যানে চাকরি করে? না, সেটা হবার কোনো সম্ভাবনা নেই।

অভ্যর্থনা কক্ষে বসে যখন এসব নিয়ে ভাবছিলাম, তখন দরজায় একটা নক শুনতে পেলাম। দরজাটা খুলল মহিলা রিসিপশনিস্ট। তার পেছনে কাতসুতোশি কাতসুরাগি দাঁড়িয়ে ছিল।

.

কাতসুরাগি একট আর্মচেয়ারে বসে পা ভাঁজ করে সাইবারপ্ল্যানের প্রেজেন্টেশন শুনছিলেন। তার সামনে একটা এলসিডি পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যাতে প্রত্যেকটা গেম আর সেটার বিস্তারিত তাকে সহজে জানানো যায়। সেগুলো অবশ্য তাড়াহুড়ো করে আজকেই বানানো হয়নি। বরং প্রজেক্ট প্রোপোজালের সময় এসব বানানো হয়েছিল। সেটার পাশে থাকা কম্পিউটারের সাথে একটা গেম কনসোলও লাগানো ছিল। সেটা ব্যবহার করে বানানো গেমগুলো চালিয়ে দেখানো যাবে। কাতসুরাগির সামনে কন্ট্রোলারটা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেটা ছুঁয়েও দেখলেন না।

আমার ডাক পড়ার আগ পর্যন্ত আমি তার মুখভঙ্গি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলাম। তিনি প্রত্যেকটা গেমের দিকে আড়চোখে এক-দুবার নিরুৎসাহিত চোখে তাকাচ্ছিলেন। তবে প্রত্যেকটা ব্যাপারে তিনি প্রশ্নগুলো কিন্তু ঠিকঠাক মতোই করছিলেন। এই গেম বানানোর উদ্দেশ্য কী ছিল, এটা লাভজনক কেন মনে হয়েছিল, কাজটা নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট কিনা— ইত্যাদি প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে মারছিলেন। কয়েকজন স্টাফ তার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে ঘামতে শুরু করেছিল। এরকম দৃশ্য দেখলে কেউ কি বিশ্বাস করবে যে, তার মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে?

অবশেষে আমার সুযোগ এলো। আমাকে যে গেমটার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সেটার নাম— দ্য মাস্ক অব ইয়ুথ

গেমটার বিষবস্তু জীবন নিয়ে। যিনি গেমটা খেলতে শুরু করবেন তাকে গেমের মূল চরিত্রের জন্ম থেকেই তার সাথে জড়িত থাকতে হবে। কম্পিউটার বেছে দেবে তোমার পিতামাতাকে। প্রথমে বাবা-মায়ের কাছ থেকে কোন কোন জিন নেবে সেটা বাছার পর তুমি ছেলে নাকি মেয়ে হিসেবে জন্ম নিতে চাও সেটা বেছে নেবার সুযোগ পাবে। জন্মের পর একে একে কেজি স্কুল, এলিমেন্টারি স্কুল, মিডল স্কুল এভাবে চলতে থাকবে। এ সময়টুকুতে তুমি কতখানি সময় পড়াশোনায় দেবে, আর কতখানি সময় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবে—সেটার সুযোগ তোমার হাতেই থাকবে। এমনকি কোন টাইপের বন্ধুদের সাথে থাকবে, সেটাও তোমার হাতে। যদি তুমি ভাবো পুরো সময়টা পড়াশোনার পেছনেই দেবে, তবে তোমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই গেমের সবচেয়ে বড়ো বিশেষত্ব হচ্ছে, জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তোমার, মানে তোমার খেলা চরিত্রের চেহার পাল্টাতে থাকবে।

“ফিজিওনমি বলে একটা শব্দ আছে,” কাতসুতোশি কাতসুরাগিকে ব্যাখ্যা করলাম। “এর মানে হলো মানুষের অভিজ্ঞতা আর অতীতের ছাপ তার চেহারায় টের পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো পেশার একদল মানুষের মুখের ছবি স্ক্যান করে কম্পিউটারে অ্যানালাইসিস করেন, দেখা যাবে এমন একটা চেহারা পাবেন যার বৈশিষ্ট্য ঐ পেশাধারী সবার মধ্যে রয়েছে। একজন রাজনীতিবিদের চেহারা, একজন চাকুরীজীবীর চেহারা, একজন পতিতার চেহারা ইত্যাদির একটা মৌলিক কাঠামোর আসলেই অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আপনার চেহারার ওপর আপনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে না। বরং আপনার কাজের ওপর আপনার চেহারা নির্ভর করে। এই গেমটায় নানান ধরনের অভিজ্ঞতা সংগ্রহের পর চেহারাটা আসলে কীরকম হতে পারে, সেটার মধ্যে এই গেমের একটা উপভোগ্য দিক লুকিয়ে রয়েছে।”

কাতসুতোশি কাতসুরাগি মুখ খুললেন। “মোদ্দা কথা, চেহারাই সবকিছু নয়, তাই না? আপনার কথা অনুযায়ী চেহারা হচ্ছে একজনের সারাজীবনের অভিজ্ঞতার ফসল। আমার মনে হয় না মানুষ এমনি এমনি কোনো সুনির্দিষ্ট চেহারা পাওয়ার জন্য কাজ করে।”

“আপনি ঠিকই ধরেছেন। সেজন্যই বলেছি, গেমটার উপভোগ্য ‘একটা’ দিক এটি। মানুষ একটা সুন্দর চেহারা পাওয়ার জন্য খাটাখাটুনি করে না। কিন্তু বাস্তব জীবনে চেহারা ব্যাপারটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেবার সময় একজনের চেহারাই অনেক সময় তার ভাগ্য বদলে দিতে পারে। আপাতত নাহয় চাকরির ইন্টারভিউ আর ঘটকালির কথাই উদাহরণ হিসেবে ধরে নিন। আবার যেসব মেয়েরা সেলিব্রিটি হতে চায়, তাদের অনেকেই ২০ বছর পার হবার আগেই প্লাস্টিক সার্জারি বেছে নেয়। এই গেমটাতে যে চেহারা আপনার হবে, সেটা নিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত, অনেক বাধা-বিপত্তির মোকাবেলা করতে হবে। যারা সারাজীবন কেবল পড়ার বইয়ের মধ্যে নাক গুঁজে রেখেছে, তাদের মুখে মানসিক বৈকল্যের ছাপ পড়বে। সেটার কারণে তারা পরবর্তীতে ইন্টারভিউ, ডেটিং সবজায়গায় পিছিয়ে যাবে। আপনিই আপনার নিজের চেহারার জন্য দায়ী, পুরোনো প্রবাদটা আপনার নিশ্চয়ই জানা রয়েছে।”

“তার মানে যে গেমটা খেলছে, সে কোথাও ভুল করে বসলে তার পছন্দমতো চেহারাটা আর পাবে না?”

“বাস্তব জীবনে তাই ঘটে। কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা একটা গেম। এরকম পরিস্থিতির শিকার হলে তার ব্যবহার করার জন্য একটা গোপন অস্ত্র রয়েছে। সেটাই হচ্ছে গেমের ‘মুখোশ’ নামটার রহস্য। ওটা গেমারদের চেহারার অবিকল একটা মুখোশ, তবে সেটাকে একটু-আধটু পরিবর্তন করা যায়। যদি আপনি অসামাজিক চেহারাধারী হন, তবে সেটাকে একটু গ্রহণযোগ্য বানাতে পারবেন। কিন্তু একটা কথা আছে। এই মুখোশটা আপনি বারবার ব্যবহার করতে পারবেন না। নির্দিষ্ট সংখ্যকবার এটা ব্যবহারের সুযোগ আছে। গেমটার লক্ষ্যই হলো যেভাবে হোক গেমের চরিত্রটাকে পাল্টানো। আর সেজন্য কখন কোন ধরনের মুখোশ দরকার, তা তাকে বারবার খুঁজে বেড়াতে হবে।”

টানা কথা বলে যাচ্ছিলাম বলে কাতসুরাগির ভাবভঙ্গি লক্ষ করিনি। ব্যাপারটা মাথায় আসতেই মনে মনে একটু থমকে গেলাম। হয়তো তার এসব সিরিয়াস ব্যাপার- স্যাপার শোনার মন নেই আজকে।

“গেমটা মার্কেটে জনপ্রিয়তা পাবে কিনা তা বলতে পারছি না,” কাতসুতোশি কাতসুরাগি মন্তব্য করলেন। “তবে ইন্টারেস্টিং একটা আইডিয়া এটা। তোমার অভিজ্ঞতাই তোমার মুখের কারিগর, যেটা কিনা তোমার ভবিষ্যতের কারিগর। কথাটা কিন্তু ভুল বলেননি।”

“ধন্যবাদ আপনাকে।”

“কিন্তু বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মুখোশ পরা নিয়ে আমার খানিকটা আপত্তি আছে। হ্যাঁ, জিনিসটা আমাদের দেশের অসামাজিক, অপ্রস্তুত যুবকদের অনেক কাজে লাগতে পারে। কিন্তু জীবনে ধাক্কা না খেলে অনেকের শিক্ষা হয় না। অনেক সময় এই ‘দুর্ভাগ্য’ জিনিসটাই শাপেবর হয়ে দাঁড়ায়।”

“কিন্তু এটা একটা গেম। বাস্তব জীবন নয়।”

“গেম হলেও সেটাতে বাস্তবতার একটা শিক্ষা দেওয়াও জরুরি বলে আমি মনে করি।” চেয়ারে হেলান দিয়ে কাতসুরাগি জিজ্ঞেস করলেন, “আমার একটা প্রশ্ন রয়েছে।”

“বলুন।”

“আপনি কি আপনার নিজের চেহারার কারিগর হতে পেরেছেন?”

কিছুক্ষণের জন্য বোবা হয়ে গেলাম। কারণ তার প্রশ্নটা ঠিক ধরতে পারিনি। “চেষ্টা অন্তত করেছি।” উত্তর দিলাম।

“তার মানে আপনার বর্তমানের চেহারা দিয়েই আপনি আপনার সুখ জয় করে নেবেন?”

“হয়তো। এ বিষয়ে বলাটা শক্ত।” মেকি একটা হাসি দিয়ে তার কথার জবাব দিলাম।

আমার চেহারা খানিকক্ষণ বিচার করে অবশেষে কোজুকার দিকে মুখ ফেরালেন। “ধন্যবাদ। এবার পরবর্তী জনকে ডাকুন।”

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *