অ্যা কিডন্যাপিং – ১৩

তেরো

“আপনাদের ব্যস্ত সময়ে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত।” কাতসুরাগি আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। তাকে ঘন নীল রঙের ডাবল ব্রেস্টেড স্যুটে বেশ ফিটফাট দেখাচ্ছিল। তার মুখের হাসির মধ্যেও একটা পরিতৃপ্ত ভাব খেলা করছিল।

“না না, সমস্যা নেই।” কোজুকা তাড়াহুড়ো করে জবাব দিলেন।

“গতদিনের মিটিংয়ের ব্যাপারে আমার বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল, কয়েকটা জিনিস জানারও ছিল। তাই আপনাদের এখানে আসতে বললাম।”

“তাহলে আপনিই মিটিংয়ের নেতৃত্ব দেবেন?”

“হুম। কোনো কিছু আমার মনোযোগ আকর্ষণ করলে সেটা নিয়ে আমি ব্যস্ত হয়ে পড়ি।” কাতসুরাগি নিজের হাতঘড়িটার দিকে আড়চোখে তাকালেন। “সময় হয়ে গেছে। চলুন তবে?”

“ইয়ে মানে, আমি ওকেও সাথে এনেছি।” কোজুকা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।

কাতসুরাগি আমার দিকে তাকালেন, তাই মাথা নুইয়ে তাকে অভিবাদন জানালাম। কিন্তু সাথে সাথে তিনি আমার ওপর থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলেন। “কী জন্য?” তিনি কোজুকাকে জিজ্ঞেস করলেন।”

“না, মানে আপনাদের পাঠানো ফ্যাক্সে ওর নামও ছিল কিনা, তাই…”

“হুম।” কাতসুরাগি মাথা বাঁকিয়ে বললেন, “কেন এরকম হলো ভেবেই পাচ্ছি না। বোধহয় পুরোনো লিস্ট ঘেঁটে কেউ তার নামটাও যোগ করে দিয়েছে। সমস্যা নেই। চলুন, কাজে যাওয়া যাক।”

কোজুকা আমার কানে ফিসফিস করে বললেন, “তুমি এখন কী করবে?”

“কী করব মানে?”

“দেখতেই তো পারছো, মিস্টার কাতসুরাগির সাথে তোমার কোনো কাজ নেই। মিটিংয়ে যোগ দিলে তোমার খারাপ লাগতে পারে। যদি চাও, ফিরে যেতে পারো।”

চিৎকার করতে মন চাচ্ছিল, কিন্তু নিজেকে সামলালাম। “যেহেতু এসেই পড়েছি, অন্তত চুপচাপ সবকিছু শুনে যাই। ফিরে গেলেই বা কী হবে। আমার হাতে তো কাজ করার মতো কোনো বড়োসড়ো প্রজেক্ট নেই।”

আমার গলার তিক্ততা টের পেয়ে কোজুকা আর কিছু বললেন না। বিরক্তমুখে মাথা নেড়ে আমার কথায় সম্মতি জানালেন।

বাথরুমে যাওয়ার ভান করে আমি কোজুকাকে ফেলে চলে এলাম। আশেপাশে কেউ নেই, এমন জায়গা বেছে নিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম। জুরিকে ফোন দিলাম।

“হ্যালো, কী হয়েছে?” জুরির গলা শুনে বুঝতে পারলাম সে বোধহয় এরকম ফোনের অপেক্ষায় ছিল। তবে গলার স্বরে খানিকটা বিভ্রান্তিও টের পেলাম।

“পরিকল্পনা পালটে ফেলেছি। এখন থেকে তিরিশ মিনিটের মাথায় আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা শুরু করব।”

“তিরিশ মিনিট? কী বলছ এসব? আচমকা এরকম কথা বললে তো হবে না।”

“তিরিশ মিনিট হোক কিংবা পাঁচ ঘণ্টা, যা তোমাকে করতে হবে তা কিন্তু পাল্টাচ্ছে না।”

“আমাকে তো মানসিকভাবে প্রস্তুত হবার সুযোগ দিতে হবে।”

“সেজন্যই তো তিরিশ মিনিট দিলাম। এর মধ্যেই প্রস্তুত হয়ে যাও।”

“থামো। পরিকল্পনার শেষের দিকের যে অংশটুকু, সেটার ব্যাপারে কী করব? যেভাবে বলেছ সেভাবেই করব? তারা যদি আমাকে বিশ্বাস না করে, তবে?”

“তারা বিশ্বাস করবেই। না করার কোনো কারণ নেই।”

আত্মবিশ্বাসের সাথে কথাগুলো বলায় জুরি কিছুটা শান্ত হলো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলার শব্দ কানে এলো। “এবার সব ঠিকঠাক মতো হবে তো?”

“চিন্তা করো না। এরকম কোনো খেলায় আমি কখনো আটকাইনি।”

“আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি বলছো যেহেতু, তাই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলাম। তিরিশ মিনিটের মধ্যে।”

“ঠিক আছে।”

“তুমি এখন কী করবে? তুমি তো এখনো অফিসে, তাই না?”

“আমি এখন তোমার পাপার কোম্পানিতে অবস্থান করছি। একটু পরেই তার সাথে আমার একটা মিটিং আছে।”

“কীইই–”

“সবকিছু তোমার ওপর ছেড়ে দিলাম। সবই কিন্তু তোমার অভিনয় ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে।”

হাহ্-এবার বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস কানে এলো। “আচ্ছা। আমি চেষ্টা করবো। কিন্তু যদি সবকিছু ভালোমতোন না এগোয়, তবে আমি কিন্তু সবকিছু সেখানেই থামিয়ে দেবো।”

“চিন্তা কোরো না। সবকিছু ভালোভাবেই সম্পন্ন হবে।”

ফোনটা কেটে দিয়ে মিটিং রুমে চলে গেলাম। এই তো, আর তিরিশ মিনিট পরেই সেখানে বসে থাকা মানুষটার সাথে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা খেলা খেলতে যাচ্ছি।

মিটিংয়ের উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেট ক্যামেরা ব্যবহার করা একটা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করা। নতুন গাড়ির মডেলটার একটার সাথে তারা ক্যামেরাটা জুড়ে দেবে, তারপর সে গাড়িটায় করে গোটা শহর ঘুরে বেড়াবে। যেসব কাস্টোমাররা গাড়িটা কিনতে ইচ্ছুক, তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করলে গাড়ির ভেতরের সবকিছু দেখতে পারবেন। শুধু উইন্ডশিল্ডের বাইরের অংশটুকু নয়, বরং গাড়ির ভেতরের ইন্টেরিয়র, ড্যাশবোর্ড, প্রত্যেকটা মিরর—সহজ ভাষায় একজন ড্রাইভার গাড়িতে বসে থাকাকাকালীন যা যা দেখতে পায়, সবই উপভোগ করতে পারবে। যদি তারা মাউসে ক্লিক করে, তবে ক্যামেরার অবস্থানটাও পাল্টাতে পারবে। ঘরে বসে থেকেই তারা টেস্ট ড্রাইভের মজাটুকু পেয়ে যাবে। আইডিয়াটা মন্দ নয়, তবে এর মধ্যে খুব একটা নতুনত্বও নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যখন নতুন গাড়ির উদ্বোধন করা হয়, তখন তারা এরকম সুবিধাই রাখে। তবে এটা মানতে বাধ্য হচ্ছি, আইডিয়াটা আমার অটোমোবাইল পার্ক প্রজেক্টের তুলনায় অনেক সস্তার মধ্যে হয়ে যাবে।

“ট্রান্সমিশন রেটের একটা সীমা আছে, তাই গাড়ির গতি পরিবর্তন করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে, অন্তত আমার তাই মনে হয়। তবে আমরা সবাই একমত, এটা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের আগে থেকে নির্দিষ্ট রাস্তা বেছে নিতে হবে। যদি গাড়িটাকে বিদেশের কোনো রাস্তায় চালানো যায়, তবে গাড়িটার প্রতি মানুষের আগ্রহ আরো বেড়ে যাবে।” সুগিমোতোর কথাবার্তায় আমার অফিসের স্টাফরা সবাই সম্মতির সুরে মাথা নাড়তে লাগলো। আমি অবশ্য তা করলাম না।

কাতসুতোশি কাতসুরাগি হাত তুললেন। সবার মধ্যে অস্থিরতা বেড়ে গেল। “আমরা কিন্তু আমাদের নতুন গাড়িটাকে মধ্যরাতের কোনো শোতে দর্শকদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি না।”

তাকে এরকম টিপ্পনি কাটতে দেখে অবাকই হলাম। কাতসুরাগির সাথে আমার চিন্তাভাবনা মিলে যাচ্ছে।

“সামান্য একটা চটকদার ভিডিয়ো দেখানো কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য নয়। সেটা অপ্রয়োজনীয়। আমাদের নতুন গাড়িটার অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের চমৎকার দিকটার সাথে আমরা দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। কোনো ধরনের স্টান্টবাজি নয়, বরং তাদেরকে গাড়িটা চালানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা দিতে চাই। তাই মানুষের পরিচিত রাস্তা ব্যবহার না করলে সেটা অর্থহীন হয়ে যাবে। যদি আপনি অস্ট্রেলিয়া কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার রাস্তায় গাড়িটা চালিয়ে দেখান, তবে এখানকার কাস্টোমারদের সেটা উপকারে আসবে না।”

ব্যাপারটা স্বীকার করে নিতে খারাপ লাগছে, কিন্তু তার প্রতিটা কথার সাথে আমি একমত। আড়চোখে কোজুকা আর সুগিমোতোর দিকে তাকালাম। তারা ঘাবড়ে গিয়ে দৃষ্টি বিনিময় করছে। তারা হয়তো মনে মনে অস্ট্রেলিয়াকে লোকেশন হিসেবে বেছে নিয়েছিল।

ঘড়ির দিকে তাকালাম। জুরিকে ফোন দেবার পর ২৭ মিনিট পার হয়েছে।

ধীরে ধীরে সেকেন্ডের কাঁটাটা তিনবার ঘুরে এলো। কাতসুরাগির মুখচোখের দিকে তাকালাম। না, এখনো কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে তিনি এই বিরক্তিকর মিটিংটায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়েছেন।

অবশেষে সেই স্থির মুখভঙ্গি পালটে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল। কাতসুরাগি পকেটে হাত দিলেন। যা ভেবেছিলাম। মানুষটা নিজের মোবাইলটা বন্ধ করতে ভুলে গেছে।

“মাফ করবেন,” বলে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

মিটিং আপাতত বন্ধ থাকলো। নিসেই-এর লোকজন বিড়বিড় করছিল, ইভিপি এভাবে শুধুমাত্র ফোন ধরার জন্য মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন! এটা তো তার চরিত্রের সাথে একদমই যায় না।

কিছুক্ষণ পর কাতসুরাগি ফিরে এলেন। একজনের কানে ফিসফিস করে কী যেন বললেন। কথাগুলো বুঝে নেওয়ার সে মাথা নাড়তেই কাতসুরাগি কাউকে কিছু না বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলন।

“উম, মিস্টার কাতসুরাগির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে। তবে তিনি আমাদের মিটিং চালিয়ে যেতে বলেছেন।”

“কিন্তু মিস্টার কাতসুরাগি ছাড়া এই মিটিং চালিয়ে গেলে আদৌ কোনো লাভ হবে?”

“আমরা তার কাজকর্মের সাথে পরিচিত আছি।”

“তাই নাকি।” সদা শান্তমুখ থাকা কোজুকার মুখ গোমড়া হয়ে গেল। তাকে দোষ দিতে পারছি না। যে মানুষটা হঠাৎ করে এই মিটিং ডেকেছে, সে এই মাত্র কাউকে কিছু না বলে উঠে চলে গেছে।

আমি কোজুকার দিকে তাকালাম। “প্রেসিডেন্ট, আমি অফিসে ফিরে যাচ্ছি। মনে হচ্ছে এখানে বসে থেকে আমার কোনো লাভ হবে না।”

কোজুকা সম্মতির সুরে মাথা নাড়লেন। এখন বোধহয় আমাকে নিয়ে ভাবার মতো সময় তার হাতে নেই।

রুম থেকে বের হতেই পার্কিং লটে যাওয়ার ইচ্ছাটা আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরলো। না, আমার আর ভুল হচ্ছে না। কাতসুতোশি কাতসুরাগির মার্সিডিজটা এক্সিকিউটিভ পার্কিং স্পেসে পার্ক করা ছিল। তিনি এখন তাড়াহুড়ো করে তার মার্সিডিজের ইঞ্জিনটা চালু করছেন। তবে আমার মতো কেউ তাকে লক্ষ করছে দেখে তিনি সন্দেহ করতে পারেন। তাই নিজের ইচ্ছাটাকে কোনোমতে দমিয়ে শান্ত হয়ে সামনের দরজা দিয়ে বের হওয়া শুরু করলাম।

নিসেই অটোমোবাইল-এর হেডকোয়ার্টারের বাইরে থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম, আওইয়ামাতে (আমার অফিসে যে এলাকায় অবস্থিত) ফিরে যাবো। কিন্তু অফিসের কাছাকাছি আসতেই ট্যাক্সি থামিয়ে নতুন আরেকটা ট্যাক্সিতে উঠে পড়লাম। ড্রাইভারকে আসাকুসাতে যাওয়ার নির্দেশ দিলাম। এবার ফুসরত পেয়ে হাতের ঘড়ির দিকে তাকালাম।

জুরির সবার আগে বাসায় ফোন করার কথা। সেখানে কাতসুরাগির স্ত্রী অবস্থান করছে। জুরির মতো পরের মেয়ের সাথে তার এমন কী কথা হতে পারে, তা মনে মনে ভাবলাম। আমি নিশ্চিত, তার পাশে কয়েকজন ডিটেকটিভ বসে আছে। তাই তার কথাবার্তার মধ্যে কিছুটা হলেও অস্থিরতা থাকার কথা। মনে মনে হয়তো তিনি হয়তো তিনশ মিলিয়ন খোয়ানোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য গাল দিচ্ছিলেন।

জুরি বোধহয় ইতোমধ্যে তাদেরকে টাকাটা গাড়িতে নিয়ে বের হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছে। কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য তাদের দেওয়া হয়নি, কেবল বলা হয়েছে—অমুক রাস্তায় যান। আমরা আগে থেকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

জুরি কাতসুতোশি কাতসুরাগিকেও ফোন দিয়েছে। আমি পাশেই ছিলাম বলে সেটা টের পেয়েছি। তাকে কেবল সংক্ষিপ্ত কয়েকটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে : একটা কার্ডবোর্ড বাক্স আর টেপ জোগাড় করে তার মার্সিডিজে বসে থাকতে। যে-কোনো মুহূর্তে তার ডাক পড়বে।

জুরিকে ফোন দিলাম।

“হ্যাঁ, আমি বলছি।” জুরি কেন জানি ক্ষীণ গলায় জবাব দিলো!

“কী অবস্থা?”

“তুমি যেভাবে বলে দিয়েছিলে, আমি ঠিক সেভাবেই সব কিছু করেছি। মা শিনজুকুতে খুব দ্রুত পৌঁছে যাবেন।”

“ভালো। পরবর্তী ধাপ শুরু করা যাক। আমিও সেখানে পৌঁছে যাচ্ছি।”

“ঠিক আছে।” সে ফোনটা কেটে দিল।

মোবাইলটা পকেটে রেখে কল্পনা করলাম, কাতসুরাগির স্ত্রীর বিএমডব্লিউ গাড়িটা সিটি হলের সামনে থেমে গেছে। জুরি এখন কাতসুরাগিকে ফোন করে তাকেও ওখানে চলে যাবার নির্দেশনা দেবে।

বিএমডব্লিউটাকে পুলিশ নিশ্চয়ই পেছন থেকে অনুসরণ করছে। আর বিএমডব্লিউ কিংবা কাতসুরাগির স্ত্রী—কারো না কারো ওপর ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে। সবার আগে আমাদের এই ট্রান্সমিটারগুলোকে সরাতে হবে। আর সেজন্য ড্রাইভার আর গাড়ি দুটোকেই অদল-বদল করতে হবে।

পরেরবার ফোন দেবার সময় জুরি তাদেরকে ব্রিফকেস থেকে কার্ডবোর্ডের বাক্সে টাকাটা স্থানান্তর করতে বলবে। তারপর কাতসুতোশি কাতসুরাগি মার্সিডিজে করে টাকাটা বহন করা শুরু করবে। আর সেভাবেই ওসব হতচ্ছাড়া ট্রান্সমিটারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

জুরিকে যখন গোটা প্ল্যানটা খুলে বলেছিলাম, সে একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিল। “গাড়ি আর তার ড্রাইভারকে নাহয় পালটে দিলাম, কিন্তু তারা যদি সাথে করে ট্রান্সমিটার বা বাগটাকেও অদলবদল করে নেয়?”

আমি সেটাকে নাকচ করে দিলাম। “তারা ওটা করবে না।”

“এটা মনে হবার কারণ?”

“কারণ, তারা জনসম্মুখে সন্দেহজনক কিছুই করার সাহস পাবে না। তোমার বাবা-মা তো আর পুলিশ নন। তারা মানুষজনের চোখ এড়িয়ে সেসব অপর গাড়িতে নিতে পারবেন না।”

“কিন্তু আমরা তো কেউই তাকে নজরে রাখবো না।”

“তারা তো সেটা জানে না, ঠিক না?”

“ওহ…ঠিক বলেছ।”

“যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মনে হবে যে, ‘কালপ্রিট কোথাও না কোথাও থেকে আমাদের ওপর নজর রাখছে’—ততক্ষণ পর্যন্ত খেলার মাঠটা আমাদের অনুকূলে থাকবে। এটাকে অনেকটা পোকার খেলার সাথে তুলনা করতে পারো।”

ট্যাক্সির দুলুনিতে নড়তে নড়তে জুরি যেন সফলভাবে সব কাজ সম্পন্ন করে, সেজন্য মনে মনে প্রার্থনা করতে লাগলাম। আমাদের প্রতিপক্ষ ধরে নিয়েছে যে, তাকে এসব কথা জোর করে বলানো হচ্ছে। সে যে আসলে নিজের ইচ্ছায় সবকিছু করছে, সেটা তো ওরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারবে না। শুধুমাত্র এটার কারণেই হাতে স্ট্রেইট ফ্ল্যাশ থাকার অনুভূতি হচ্ছে।

কোমাগাতা ব্রিজের কাছাকাছি আসতেই ট্যাক্সি থেকে নেমে গেলাম। বাকিটা পথ হেঁটে হেঁটে যাবো। হাঁটতে হাঁটতে গোটা পরিকল্পনাটা মাথায় গোছাতে শুরু করলাম। চিন্তা নেই, সবই ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হবে।

এক্সপ্রেসওয়ের সামনে একটা বিশাল বিল্ডিং মাথা উঁচু করে অবস্থান করছিল। এক নাম করা বিয়ার কোম্পানির বিল্ডিং ওটা। লিফটে করে সোজা ওপরের তলায় চলে গেলাম। ওপরের তলায় একটা অবজার্ভেশন ডেক বানানো হয়েছিল। সেটার সাথে একটা বিয়ার হলও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। গেট থেকে একটা ড্রাফট বিয়ারের জন্য মিল টিকিট কিনলাম।

কাউন্টারটাকে জানালার মুখোমুখি করে ইউ (U) আকৃতিতে বানানো হয়েছে বেশ কয়েকজন মানুষজন সেখানে বসে ছিল। আমি বাম দিকের কোণায় গিয়ে বসলাম। দূরবীনটা বের করে এক্সপ্রেসওয়েতে নজর দিলাম। এখানকার মানুষজনের কাছে এটা নতুন কোনো দৃশ্য না, তাই কেউ আমার দিকে তাকিয়েও দেখলো না। অবশ্য সবাই জানালা দিয়ে বাইরেই তাকিয়ে ছিল, আর বিয়ার হলের স্টাফরা কেবল তাদের পিঠ দেখতে পাচ্ছিল।

জুরি যদি কোনো ধরনের ঝামেলা না করে কাজ সম্পন্ন করে থাকে, তবে কাতসুতোশি কাতসুরাগি ইতোমধ্যে এদিকে চলে আসার কথা। একটু অস্থির লাগতে শুরু করল। জুরিকে তাড়াতাড়ি এখানে চলে আসতে হবে, নাহলে বিপদে পড়ে যাবো। ঘড়ির দিকে তাকাতেই কে জানি আমার পিঠে টোকা দিল। জুরি আমার পাশের সিটে বসে ছিল। আকাশি রঙের একটা ড্রেস পরে এসেছে সে।

ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, “মিস্টার কাতসুরাগি কি…?”

“তিনি মাত্র এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেছেন।” জুরি উত্তর দিলো।

আবার দূরবীনটা চোখে লাগালাম। দূরবীনের লেন্সটা ভালোই শক্তিশালী, তবে ঐ ট্রাফিকের মধ্যে মার্সিডিজ গাড়িটা খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য একটা ব্যাপার।

“তাকে আবার ফোন লাগাও। সে এখন কোথায়, সেটা জিজ্ঞেস করো।”

জুরি আমার কথামতো কাজ করলো। অপরপক্ষ সাথে সাথে ফোন ধরলো।

“হ্যালো, হ্যাঁ আমি বলছি। তুমি এখন কোথায়?” সে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করলো। “কী? তুমি মুকোজিমার কাছাকাছি চলে এসেছ?”

দূরবীনটা ফোকাস করে নিলাম। ভাগ্যে থাকলে তিনি কয়েক মিনিটের মাথায় হাকোজাকিতে চলে আসবেন।

“ওরা বলছে তুমি যেন গাড়ি চালাতে থাকো…আমাকে মাফ করো পাপা। তোমাকে যে কোথায় যেতে হবে সেটা আমিও জানি না।”

জুরি অবশ্য ফোনটা কাটলো না। বার্নার ফোন, তাই কাটার কোনো মানে নেই। তবে খেলার সমাপ্তি ঘটলে ওটাকে নষ্ট করে ফেলে দিতে হবে।

অবশেষে একটা রূপালি-ধূসর রঙের মার্সিডিজ চোখে পড়লো। ধীরগতির লেনটাতে সেটা চলছিল। নিশ্চিত হলাম, ওটাই তার গাড়ি। গাড়ির ড্রাইভারকে দেখতে পেলাম না, তবে আমার মন বলছে ওটাই কাতসুরাগি।

মাথার ভেতর গণনা করে কিছু সময় পর মুখ খুললাম। “উনাকে বলো কোমাগাতা ব্রিজ পার হলে মুকোজিমাতে নেমে যেতে। বাকিটা তোমার জানাই আছে।”

চোখের কোণা দিয়ে জুরিকে নিঃশব্দে মাথা নাড়তে দেখে আমি নিজের মোবাইলটা বের করলাম। ফোনের মেমোরিতে আগেই একটা নম্বরে ফোন দিয়ে সেটা সেভ করে রেখেছি।

“হ্যাঁ, নিসেই অটোমোবাইল-এর মুকোজিমা শাখা থেকে বলছি।” একটা তরুণীর গলা বলে উঠলো।

“আমি নিসেই অটোমোবাইল-এর বোর্ড অব ডিরেক্টর থেকে তাদোকোরো বলছি। তোমাদের ম্যানেজার কি আশেপাশে আছেন?”

স্বাভাবিকভাবেই ‘বোর্ড অব ডিরেক্টর’ শব্দটা শুনে সে খাবি খেল।

“জ-জি, জি, এখনোই তাকে দিচ্ছি। একটু অপেক্ষা করুন।”

আমার পাশে বসে জুরি তখন তার পাপাকে নির্দেশনা দিচ্ছে। “পাপা মুকোজিমাতে নেমে যাও… জানি না, নেমে যাও।”

আমার ফোনে অবশেষে শুনতে পেলাম, “হ্যালো, আমি এ শাখার ম্যানেজার নাকামুরা বলছি।”

“আমি নিসেই অটোমোবাইল-এর বোর্ড অব ডিরেক্টর থেকে তাদোকোরো বলছি। হঠাৎ করে এভাবে ফোন করার জন্য দুঃখিত। আসলে আপনাদের প্রতি আমার একটা অনুরোধ আছে।”

“বলুন বলুন।” নাকামুরার গলার স্বর কিছুটা চিমসে গেছে।

“নিসেই-এর এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আপনাদের কাছাকাছি এলাকায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। একটু আগে তার গাড়িতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

“এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টের গাড়ি…” নাকামুরার মুখে কথা আটকে গিয়েছিল। এরকম পরিস্থিতিতে যে সে পড়তে পারে, সেটা কখনো তার মাথাতেও আসেনি।

“আমরা ইতোমধ্যে জাপান অটোমোবাইল ফেডারেশনর সাথে যোগাযোগ করেছি। তাই আশা করি সেটা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে। তবে অন্য একটা সমস্যার উদয় হয়েছে।”

জুরি ওদিকে তীক্ষ্ম কিন্তু নিচুস্বরে তার পাপাকে নির্দেশনা দিয়েই যাচ্ছে। “মুকোজিমাতে নেমে গেছ? এখন বোকুতেই স্ট্রিটের দিকে যেতে থাকো… না না, সেটা দক্ষিণের দিকে।”

“আমরা চাই আপনারা তার গাড়ি থেকে লাগেজটা বের করে সেটা দ্রুত একটা জায়গায় পৌঁছে দেবেন। ম্যাপ দেখে বুঝলাম, আপনারাই কাছাকাছি আছেন। তাই আপনাদেরকেই ফোন দিলাম।”

“উম, ইয়ে মানে, পরিস্থিতি যেহেতু এরকম হয়ে গেছে, সেহেতু আমরা সাহায্য করতে পারবো। কিন্তু…মানে বলছিলাম কী, কোথায় যেতে হবে?”

“একটু পরেই আপনাকে সবকিছু জানিয়ে দেবো। আপাতত এক্সপ্রেসওয়ের কাছাকাছি অপেক্ষা করতে পারবেন? আপনার জন্য বোধহয় মুকোজিমা ইন্টারচেঞ্জ কাছাকাছি হবে।”

“জি জি।”

“ঠিক আছে, আপনার সাথে একটু পরেই যোগাযোগ করা হবে। কিন্তু কে যাবে সেটা বলতে পারবেন?”

“সেটা নিয়ে ভাববেন না। আমি নিজেই যাবো।”

“তাহলে মিস্টার নাকামুরা, আপনার মোবাইল নম্বরটা দেওয়া যাবে?”

তার নম্বরটা নেবার পর আমারটাও তাকে দিলাম। অবশ্যই আসলটা দিইনি। নকল একটা নম্বর দিয়েছি তাকে।

বিয়ারের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে ফোনটা কেটে দিলাম। এখন জুরির কথাবার্তা শুনছি।

“হ্যাঁ, এবার এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মুকোজিমা ইন্টারচেঞ্জে চলে যাও…আমার জানা নেই পাপা। ওরা আমাকে যা বলছে, আমি তাই করতে বাধ্য হচ্ছি।”

দূরবীনটা চোখে দিলাম। এখনো মার্সিডিজটা চোখে পড়ছে না।

এখনো সেটার পেছনে পুলিশ লেগে থাকার কথা। কাতসুরাগিকে মুকোজিমা ইন্টারচেঞ্জ থেকে বের হয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে আবার ঢুকতে বলা হয়েছে। এরকম অস্বাভাবিক রুট ধরে পুলিশ তাকে অনুসরণ করলে পুলিশের অস্তিত্ব কালপ্রিটের কাছে ফাঁস হয়ে যাবে। কিন্তু ট্রান্সমিটার বা বাগবিহীন অবস্থায় এভাবে অনুসরণ করা বাদে তাদের হাতে আর কোনো উপায় নেই। ধরে নিলাম, জিম্মির ভালোমন্দের কথা চিন্তা করেই তারা জোর করে হলেও কালপ্রিটকে ধরার জন্য সামনে এগোতেই থাকবে।

তাদেরকে ঝেড়ে ফেলাটাই আমার পরিকল্পনার সর্বশেষ ধাপ।

মার্সিডিজটা চোখে পড়লো। জুরির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। সে ফোনটা আমার হাতে দিল।

ফোনটা কানের কাছে ধরলাম। লম্বা করে একটা শ্বাস টেনে নিয়ে নিজেকে শান্ত করলাম। তারপর মুখ খুললাম।

“হ্যালো মিস্টার কাতসুরাগি,” ইংরেজিতে বলে উঠলাম।

হঠাৎ করে একটা পুরুষের গলা, তারওপর ইংরেজি ভাষায় বলা কথা শুনে বোধহয় তিনি একটু থমকে গেছেন। তাই কোনো জবাব পেলাম না।

আমি আমার কথা চালিয়ে গেলাম। সবই ইংরেজিতে।

“এখান থেকে আমি ইংরেজিতেই কথা বলব। আশা করি আপনার বুঝতে কোনো সমস্যা হবে না। যদি আপনার ফোনে ট্যাপ করে থাকা পুলিশ অফিসার ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে থাকে, তবে সেটাকে আমার দুর্ভাগ্য বলে ধরে নিয়ে হাল ছেড়ে দেবো। এখন সবার আগে আপনাকে সামনের পার্কিং এরিয়াতে থামতে হবে। আর তিনশ মিটার পরেই সেটা দেখতে পাবেন। একেবারে শেষের দিকে গিয়ে পার্কিং করবেন। আমার কথা বুঝতে পারলে ‘হ্যাঁ” বলুন।”

“হ্যা, কাতসুরাগিও ইংরেজিতে উত্তর দিলো।

চমৎকার।

দূরবীন দিয়ে কোমাগাতা পার্কিং এরিয়াতে তাকালাম। মার্সিডিজ তার ব্লিংকার চালু করে ভেতরে ঢুকে গেল। কোনো গাড়ি তাকে অনুসরণ করে ভেতরে ঢুকলো না। বোঝা গেল, পুলিশ অকস্মাৎ ইংরেজির তোড়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেছে, সময়মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি। যাক, পরিকল্পনামতোই সবকিছু হচ্ছে।

ইঞ্জিন বন্ধ করে গাড়ি লক না করেই বের হয়ে যান। সামনে একটা রেস্ট এরিয়া আছে, ওখানে গিয়ে বসুন।

দরজা খোলা আর বন্ধ হবার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর কাতসুরাগি জাপানিজে বলে উঠল, “এত কিছুর কোনো দরকার ছিল না। শুরু থেকেই কোনো পুলিশ ছিল না।”

“চুপ করুন। যা বলা হয়েছে তা করুন।”

“জুরিকে অক্ষত দেহে ফিরে পাবার জন্য আমি যে-কোনো পরিমাণ টাকা দিতে রাজি আছি।”

“বকবক বন্ধ করতে বলেছি না? তার থেকে একটা কাজ করুন-ইংরেজিতে এক হাজার থেকে উলটো গোনা শুরু করুন।”

“আপনাদের এত কিছু করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করব না।”

যা বলছি তাই করুন।

কাতসুরাগিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে শুনলাম। তারপর শুনতে পেলাম : এক হাজার, নয়শত নিরানব্বই, নয়শত আটানব্বই।

“চালিয়ে যান।”

এবার নাকামুরাকে ফোন দিলাম।

“হ্যালো, তাদোকোরো বলছি। আপনি এখন কোথায়?”

“ইয়ে, আমি এখন মুকোজিমা ইন্টারচেঞ্জের কাছে দাঁড়িয়ে আছি। যখন বলবেন, আমি চলে আসব।”

“আপনি কী ধরনের গাড়ি চালাচ্ছেন?”

“একটা সাদা রঙের মিনিভ্যান।”

“তাহলে দ্রুত গাড়িটা চালু করুন। ইভিপি-এর গাড়ি কোমাগাতা পার্কিং এরিয়াতে পার্ক করে রাখা হয়েছে। অবশ্য যতদূর জানি তিনি গাড়ির কাছাকাছি নেই। তবে তিনি সুবিধার জন্য তার রূপালি-ধূসর মার্সিডিজটা খোলা রেখে গেছেন। ভেতরের কার্ডবোর্ড বক্সটা বের করে নেবেন।

“প্যাকেজটা কোথায় নিয়ে যেতে হবে?”

“কিয়োসুবাশির দিকে নিউ টার্মিনাল হোটেল চেনেন? সেখানে মাতসুমোতে নামের একজন ভদ্রমহিলা অপেক্ষা করছেন। সেটা তার কাছে দিয়ে দিলেই হবে।”

“তাহলে কিয়োসুবাশির নিউ টার্মিনাল হোটেলে যাচ্ছি।”

“অনেক ধন্যবাদ কাজটা করে দেওয়ার জন্য। ইভিপি আপনাকে পরবর্তী একটা সময় আলাদা করে ডেকে ধন্যবাদ জানাতে চান বলে জানিয়েছেন।”

“ধন্যবাদ? না, না। আমি তো কেবল…”

“ধন্যবাদ দেওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনি আমাদের সাহায্য করছেন।”

ফোনটা কেটে জুরির দিকে চোখ টিপ দিলাম। জুরি তখনো কাতসুরাগির ইংরেজিতে অঙ্ক গোনা শুনছে। সে আমার ইঙ্গিত পেয়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর বিয়ার হল ত্যাগ করলো।

বাইনোকুলার দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। অবশেষে সাদা রঙের মিনিভ্যানটা চোখে পড়লো।

সেটা কোমাগাতা পার্কিং এরিয়াতে ঢুকে পড়লো। ওদিকে কাতসুরাগি ইংরেজিতে গুনেই যাচ্ছে। ব্যাটা যদি জানতে পারত ঠিক এই মুহূর্তে তার তিনশ মিলিয়ন টাকা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে!

পুলিশ যদি কিছু টের পেয়ে যেত, তবে ইতোমধ্যে পার্কিং এরিয়াতে ভিড় করে ফেলার কথা। কিন্তু না, কোনো পুলিশের গাড়ি চোখে পড়লো না।

মিনিভ্যানটা পার্কিং এরিয়া থেকে বেরিয়ে গেল, সেটা দেখার পর উঠে দাঁড়ালাম। কাতসুরাগির সাথে কথা বলার জন্য যে ফোনটা ব্যবহার করছিলাম, সেটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেললাম।

একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা আমার বাসায় ফিরে গেলাম। সময় নষ্ট না করে নিজের গাড়িটায় চড়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম।

নিউ টার্মিনাল হোটেলের কাছাকাছি গিয়ে পার্ক করলাম। আস্তে আস্তে হেঁটে বাকিটা পথ পাড়ি দিলাম।

জুরি আমাকে দেখতে পেয়েছে। অটোমেটিক দরজা খুলতেই সে বেরিয়ে এলো। সে তার হাত দুটো ভাঁজ করে রেখেছে।

“কার্গো কোথায়?”

“ডেলিভার হয়ে গেছে।” সে মুচকি হেসে জবাব দিলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *