অ্যাবসার্ড সৃজন
দর্শন ও কল্পনার সৃজন
অ্যাবসার্ডের অনুভূত বায়ুকে সেইসব জীবনকে রক্ষণাবেক্ষণ করে, তাদের ভেতর এর শক্তিকে পরিপূর্ণ করে তুলতে কিছু সুগভীর ও অবিরাম ভাবনা ছাড়া রক্ষা করতে পারে না। এখানে ঠিক, হতে পারে কেবল আনুগত্যের অদ্ভুত অনুভব। বিরোধিতার মাঝে তাদের নিজেদের বিবেচনা ছাড়া অত্যন্ত নির্বোধ লড়াইয়ের ভেতর সচেতন মানুষেরা তাদের কাজকে পরিপূর্ণ হতে দেখে। কারণ প্রধানত একে কোনোকিছুই এড়িয়ে চলতে হয় না। এভাবে জগতের অ্যাবসার্ডতা দৃঢ়তায় রয়েছে এক পরাতাত্ত্বিক সম্মান। বিজয় অথবা নাট্য-অভিনয়, বহুমুখী ভালোবাসা, অ্যাবসার্ড বিদ্রোহ সবই উপহার যা মানুষকে প্রচারে তার সম্মানকে দিতে হয় যার ভেতরে আগেই পরাজিত করা হয় তাকে।
এ কেবল যুদ্ধের নিয়মরীতিকে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠার ব্যাপার। মনকে আটকাতে সেই ভাবনা যথাযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। এ সমর্থন করেছে ও সমর্থন করে সমগ্র সভ্যতাকে। যুদ্ধ বাতিল হতে পারে না। এর ভেতরে একজন অবশ্যই বাঁচবে অথবা মরবে। সুতরাং এ রয়েছে অ্যাবসার্ডের সঙ্গে, এর সঙ্গে রয়েছে শ্বাসপ্রশ্বাস, এর শিক্ষাকে বোঝা এবং তাদের মাংসের পূরণ করার প্রশ্ন। এ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হলো অ্যাবসার্ড আনন্দের বিশেষ উৎকর্ষ। ‘শিল্প এবং শিল্প ছাড়া কিছুই নয়’ নিৎসে বলেন, ‘সত্যের মৃত্যুর উদ্দেশ্যের জন্য আমাদের শিল্প নয়।’
অভিজ্ঞতায় বিভিন্ন ধারার ওপর বর্ণনা করতে ও চাপ দিতে প্রয়াস করছি, এ নিশ্চিত যখন নতুন যন্ত্রণা জেগে ওঠে অন্যটি মরে যায়। স্মৃতি বিভ্রমতার পেছনে শিশুসুলভ ছুটে যাওয়া, সন্তুষ্টির আবেদন এখন প্রতিধ্বনিহীন। কিন্তু অনবরত উত্তেজনা মানুষকে জগতের সঙ্গে মুখোমুখি করে রাখে, নির্দেশিত বিকার যা সবকিছুকে ধরতে সমর্থ হয়ে উঠতে তাকে আগ্রহী করে তোলে, তাকে অন্য জ্বরে ছেড়ে দেয়। এই বিশ্বে তখন শিল্পকর্ম তার সচেতনতা রাখার পূর্ণ সুযোগ ও এর দুঃসাহসিকতার স্থির করা। সৃজন রয়েছে দ্বিগুণরূপে। খুঁজে চলা, এক প্রস্তের দুর্ভাবনাযুক্ত অনুসন্ধান, পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ফুল সংগ্রহ অতিসতর্কতায়, ওয়াল পেপার, দুর্ভাবনাগুলো, কোনোকিছুরই চিহ্নিত করে না। একই সময়ে, ধারাবাহিক এবং অভূতপূর্ব সৃষ্টির চেয়ে আর বেশি কোনো গুরুত্ব থাকে যাতে অভিনেতা, বিজয়ী এবং সব অ্যাবসার্ড মানুষ তাদের প্রতিদিনকার জীবনযাপনে আস্কারা দেয়। মূকাভিনয়, পুনরাবৃত্তিতে ও বাস্তবের পুনঃসৃজন সবাই তাদের নিজেদের হাতেই চেষ্টা করে, সেসব তাদেরই। আমাদের সত্যের উপস্থিতিতে থেকেই আমরা সব সময় শেষ করি। একজন মানুষের জন্য সব অস্তিত্ব চিরন্তনতা থেকে ফিরে যায়, এ কিন্তু অ্যাবসার্ডের মুখোশের নিচে এক বিশাল মূকাভিনয়। মূকাভিনয় মহান সৃজন।
শুরুতেই এ ধরনের মানুষেরা জানে এবং তারপর তাদের সমগ্র প্রয়াস পরখ করতে হয়, বড় করে তুলতে হয়, উন্নত করতে হয় স্বল্পকালীন দ্বীপটিকে যার ভেতর তারা মাত্র নেমেছে। কিন্তু প্রথম অবশ্য তারা জানবে। যেসব ভবিষ্যৎ কামনাকে প্রস্তুত করা হয় ও বিচার করা হয় কারণ সামান্য বিরতি দিয়ে অ্যাবসার্ড আবিষ্কার একই জায়গায় মিশে যায়। এমনকি মানুষদের হিতোপদেশ ছাড়াই তাদের রয়েছে মাউন্ট অব অলিভস। আর একজন, অবশ্য তাদের উভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে না। অ্যাবসার্ড মানুষের জন্য এ ব্যাখ্যা ও সমাধানের ব্যাপার নয়, তবে এ অভিজ্ঞতা ও বর্ণনার। সবকিছুই শুরু হয় স্বচ্ছ উদাসীনতায়।
বর্ণনা—যা হলো অ্যাবসার্ড ভাবনার শেষ আকাঙ্ক্ষা। অনুরূপ বিজ্ঞান, কূটাভাসের শেষে পৌঁছে। উপস্থাপন থেকে বিরত থাকে, থামিয়ে দেয় অবলোকন ও সত্তার শাশ্বত-কুমারী ল্যান্ডস্ক্যাপ অঙ্কন। এভাবে হৃদয় জানে যখন আমরা গভীরতা থেকে নয় কিন্তু জগতের দৃষ্টিকে আমাদের দিকে আসতে দেখি সে সময় আবেগ আমাদের প্রফুল্ল রাখে। সংখ্যাতে বিশ্বের অক্ষয় তার অবিরাম আকর্ষণে সংবেদজ হয়ে থাকে এর সঙ্গে যার ব্যাখ্যা প্রয়োজন নেই। শিল্পকর্মের স্থান এই ক্ষেত্রে বোঝা যেতে পারে।
মৃত্যুর অভিজ্ঞতা ও এর বহুমুখিতা উভয়ক্ষত্রে এ চিহ্নিত করে। এ এক ধরনের ক্লান্তি এবং থিমের আবেগময় পুনরাবৃত্তি যা ইতিমধ্যেই জগতের দ্বারা সুরসংযোজিত : শরীর ও মন্দিরের বেদির ওপর অক্ষয় মূর্তি, শৈলী বা রং, সংখ্যা অথবা শোক। সুতরাং গতানুগতিক নয়, সিদ্ধান্তের মতো বিস্ময়কর ও স্রষ্টার শিশুসুলভ জগতে আবার একবার এই প্রবন্ধের প্রধান থিমের সঙ্গে সংঘর্ষ। এর ভেতরে একে প্রতীক হিসেবে দেখলে ভুল করা হবে এবং ভাবটা যে অবশেষে শিল্পকর্ম বিবেচিত হতে পারে অ্যাবসার্ডের জন্য যার বিপদ এড়ানোর আশ্রয় হিসেবে। এ নিজের জন্য নিজের ভেতরে এক অ্যাবসার্ড সত্তা এবং বর্ণনার সঙ্গে কেবল আমরা জড়িত। বৌদ্ধিক যন্ত্রণার জন্য কোনোরূপ পালানোর প্রস্তাব করে না। বরং সেই যন্ত্রণার লক্ষণগুলোর একটি মানুষের সমগ্র ভাবনার ভেতর দিয়ে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু প্রথমবার এ মনকে নিজেই বাইরে আনে এবং অন্যান্য দিক দিয়ে বিরুদ্ধেই স্থাপন করে, তা হারানোর জন্য নয় তবে পরিষ্কারভাবে কানাগলিকে দেখাবার জন্য যে জায়গায় সবাই প্রবেশ করেছে। অ্যাবসার্ড মুক্তির সময় সৃজন অনুসরণ করে উদাসীনতা ও আবিষ্কারকে। যেখানে অ্যাবসার্ড আবেগগুলো লাফিয়ে ওঠে ও যেখানে মুক্তি থেমে যায় সেই ক্ষেত্রে এ চিহ্নিত করে। এই প্রবন্ধে এর স্থান এভাবে বিচার করা হয়।
যথাযোগ্যরূপেই এ স্রষ্টা ও চিন্তাবিদের কাছে থিম এনে আলোকিত করবে, শিল্পকর্মের ভেতর দেখবার উদ্দেশ্যে ভাবনার সব দ্বন্দ্ব সংযুক্ত হয় অ্যাবসার্ডে। বস্তুত, এ ততটা পরিচিত সিদ্ধান্ত নয় যে, এ দ্বন্দ্ব হিসেবে সম্পর্কিত হয়ে ওঠাটা মনকে প্রমাণিত করে যা তাদের কাছে সাধারণ। সুতরাং এ ভাবনাও সৃষ্টির সঙ্গে থাকে। আমার বলার প্রয়োজন নেই যে, একই ক্ষোভ ঐ দুটি দৃষ্টিভঙ্গিকে উদ্দীপ্ত করে। এ সেই জায়গা সেখানে তারা শুরুতেই মিলিত হয়। সব ভাবনার মধ্যেই তা অ্যাবসার্ড থেকে শুরু করে, খুব অল্পই থাকে এর ভেতর আমি দেখেছি এবং তাদের বিভাজন অথবা বিশ্বাসঘাতকতার ভেতর দিয়ে আমি পরিমাপ করতে সমর্থ হয়েছি কোথায় অ্যাবসার্ড রয়েছে। একইভাবে, আমি অবশ্য বিস্মিত : অ্যাবসার্ড শিল্পকর্ম কি সম্ভব?
শিল্প ও দর্শনের মাঝে পূর্বেকার বিরোধিতার স্বেচ্ছাচারী প্রকৃতির ওপর তত বেশি গ্রহণ করার জন্য তা যে জোর করা হয়ে উঠবে এটা অসম্ভব। সীমিত অর্থেও যদি এর ওপর জোর করা হয়, এ নিশ্চয় মিথ্যে। যদি তুমি কেবল বোঝাও যে, এই দুই ধারার প্রত্যেকের রয়েছে তাদের অদ্ভুত পরিবেশ, তা সম্ভবত সত্য কিন্তু হয়ে থাকবে অস্পষ্ট। বিরোধিতায় থাকে কেবল গ্রহণীয় যুক্তি সেই ধারায় দার্শনিক তার ধারার ভেতরে আবদ্ধ থাকে ও শিল্পী স্থাপন করে তার শিল্পের সম্মুখে–এর মাঝেই সব লালিত হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট শিল্পের শৈলী ও দর্শনের জন্য এ হলো প্রাসঙ্গিক যা এখানে গৌণ হিসেবে আমরা বিবেচনা করি। শিল্পের ধারণা এর শিল্পীর থেকে আলাদা করে যা কেবল সেকেলেই নয়; তা মিথ্যেও। শিল্পীর বিপক্ষে, নির্দেশ করে দেয় যে কোনো শিল্পীই কখনো বিভিন্ন ধারায় সৃজন করে না। কিন্তু সেটা যতটা সত্য, বস্তুত যেমন বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে একটি জিনিসের চেয়ে কোনো শিল্পী বেশি প্রকাশ করে না। শিল্পের ক্ষণস্থায়ী সম্পূর্ণতা, নবীকরণের প্রয়োজনীয়তা—পূর্বনির্ধারিত ধারণার ভেতর দিয়ে কেবল এ এক সত্য। কারণ অনুরূপ শিল্পকর্মটি এক নির্মাণ এবং সবাই জানে কী রকম ক্লান্তিকর হতে পারে মহান স্রষ্টারা। একই ধরনের কারণে যেমন চিন্তাবিদ, শিল্পী নিজেই সংকল্প করে এবং নিজেই শিল্প হয়ে ওঠে। সেই ক্ষরণ জাগিয়ে দেয় গুরুত্বপূর্ণ নান্দনিক দিকের সমস্যাগুলো। আরো যে কোনো ব্যক্তির কাছে মনের উদ্দেশ্যের এককত্বকে প্রভাবিত করে, পদ্ধতি ও উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে এইসব স্বাতন্ত্র্যের চেয়ে আর কোনো কিছুই বেশি ব্যর্থ নয়। বোঝাপড়া ও ভালোবাসার জন্য মানুষ স্থাপন করে নিজেকে যেসব ধারায় তাদের মাঝে কোনো সীমান্ত নেই। তারা পরস্পর গ্রথিত এবং তাদের মধ্যে একই দুশ্চিন্তায় মিশে যায়।[১৮]
শুরুতেই এ জানানো প্রয়োজন। কারণ শিল্পের অ্যাবসার্ড কর্মটি সম্ভব হয়ে ওঠে এর অধিকাংশ স্বচ্ছ শৈলীতে, ভাবনা অবশ্যই এর মাঝে সংযুক্ত হবে। কিন্তু একই সময়ে ভাবনা অবশ্য আপৎকালীন হয়ে উঠবে না যেমন নিয়ন্ত্রিত বৌদ্ধিক ব্যতীত। অ্যাবসার্ড অনুযায়ী এই কূটাভাস ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। শিল্পকর্মটি বৌদ্ধিক অস্বীকারে জন্ম দেয়, শক্তপোক্ত যুক্তির দিকে। চিহ্নিত করে ইন্দ্রিয় জয়। এ স্বচ্ছ ভাবনা যা একে প্ররোচিত করে কিন্তু সেই বিশেষ কর্মটি সেই ভাবনা নিজেই অস্বীকার করে। এতে বর্ণনা করে এক গভীরতর অর্থ যে, বেআইনি হয়ে ওঠে যা জানে তাতে যোগ করার প্রলোভনেতে এ মেনে নেবে না। শিল্পকর্মটি এক বৌদ্ধিক নাটকে যুক্ত হয় কিন্তু পরোক্ষভাবে কেবল প্রমাণ করে। ঐসব সীমাবদ্ধতার শিল্পীর সচেতনতা অ্যাবসার্ড কর্মের প্রয়োজন এবং শিল্পের ভেতর যাতে এর নিজের চেয়ে বেশি দৃঢ় কিছু তাৎপর্য হয়ে না ওঠে। এর শেষ হতে পারে না, অর্থ ও জীবনের সান্ত্বনা। সৃষ্টি হোক বা না হোক কোনো কিছুই পরিবর্তন হয় না। অ্যাবসার্ড স্রষ্টা তার কাজকে পুরস্কৃত করে না। তা সে অস্বীকার করতে পারে। মাঝে মাঝে সে অস্বীকার করে। রিমবাডের ক্ষেত্রে যেমন, সে রকম এর যোগ্য হয়ে ওঠে একজন আবিসিনিয়া।
একই সময়ে এর ভেতরে এক নান্দনিক নিয়ম দেখতে পাওয়া যেতে পারে। শিল্পের সত্য কাজ সব সময়ই মানবিক মাপকাঠিতে থাকে। এ প্রধানত একটিকে যাকে বলা হয় ‘কম’। শিল্পীর বিশ্ব অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়, সেই অভিজ্ঞতা উইলহেম মেইস্টার ( Wilhem Meister) এবং গ্যয়টের পরিপূর্ণতার মাঝে। সেই সম্পর্ক খারাপ যখন সেই কর্ম লক্ষ্য হয়ে ওঠে ব্যাখ্যাকারী সাহিত্যের লেস- পেপার-এ সমগ্র অভিজ্ঞতাটি দেওয়া। সেই সম্পর্ক ভালো যখন কর্মটি বরং অভিজ্ঞতার এক টুকরো কাটা হয়, হীরের একটি মুখ যার ভেতর অভ্যন্তরীণ শুদ্ধির সীমিত হয়ে ওঠা ব্যতীত সংক্ষেপিত করা হয়। প্রথম ক্ষেত্রে চিরন্তনতায় অতিভারাক্রান্ত করেছে এবং ভান করে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এর ফলপ্রসূ কর্ম কারণ এক সামগ্রিক সমার্থক অভিজ্ঞতা, সম্পদ যাকে সন্দেহ করা হয়। অ্যাবসার্ড শিল্পীর জন্য সমস্যা শিষ্টাচার (Savoir-vivre) যা অতিক্রম করে বিবেচনা প্রসূতকে (Savior -faire) এবং শেষে, এই রকম পরিবেশে মহান শিল্পী সর্বোপরি এক মহান জীবন্ত সত্তা, উহ্যই থাকে যে, বেঁচে থাকাটা এই ক্ষেত্রে শুধু যেমন প্রতিফলিত তেমনই অভিজ্ঞতাপ্রসূত। তারপর কর্মটি সংলগ্ন করে বৌদ্ধিক নাটক। বুদ্ধির চেয়ে আর অধিক সত্তা নয়, তার ভেতর এর সম্মান ও এর পদত্যাগের ভাবনার অস্বীকারের চিত্রটি আঁকে অ্যাবসার্ড যা কাজ করে উপস্থিতি সহযোগে ও আবৃত করে মূর্তি দিয়ে যার কোনো যুক্তি নেই। যদি জগৎটি পরিষ্কার থাকে, শিল্পটির অস্তিত্ব থাকে না।
এখানে শিল্পের শৈলী ও রঙের কথা বলছি না যাতে কেবল বর্ণনা জয় করে তার চমৎকার নম্রতায়।[১৯] অভিব্যক্তি শুরু হয় যেখানে ভাবনা শেষ হয়। শূন্য চক্ষু- গহ্বরগুলো সমেত ঐসব বয়ঃসন্ধি লোকেরা মন্দির, মিউজিয়াম—তাদের দর্শন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে প্রকাশ করে। একজন অ্যাবসার্ড মানুষের জন্য সব লাইব্রেরি অপেক্ষা অনেক বেশি শিক্ষণীয়। অন্য দৃষ্টিকোণে সঙ্গীতের জন্য একই সত্য। যদি কোনো শিল্পী শিক্ষাহীন হয় তবে এ নিশ্চয়ই সঙ্গীত। এ এত বেশি গণিতের কাছাকাছি তাদের কোনো মূল্য না দিয়ে ঋণ করতে হয় না। সেই খেলা সেটা অনুযায়ী মন নিজেই খেলা করে এবং মাপা নিয়ম অনুসারে শব্দবিস্তারী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় তা আমরাই অধিকারী ও আমাদের আয়ত্তে তৎসত্ত্বেও কম্পন মিলিত হয় এক অমানুষিক বিশ্বে। এতে কোনো শুদ্ধতর উত্তেজনা নেই। এইসব উদাহরণ খুবই সহজ। অ্যাবসার্ড মানুষ চেনে তার নিজের এইসব ঐক্য ও এইসব শৈলী হিসেবে।
কিন্তু এখানে আমার কাজের কথা বলাটা পছন্দ হওয়া উচিত যাতে ব্যাখ্যা করার লোভকে সবচেয়ে বড় করে রাখে, যাতে ভ্রম নিজেই স্বাভাবিকভাবে দিতে চায়, যাতে সিদ্ধান্ত প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরিহার্য। কাল্পনিক সৃষ্টির কথা বলতে চাই। খোঁজ করতে প্রস্তাবই দিই সে ক্ষেত্রে অ্যাবসার্ড নিজেই ধরতে পারুক বা না
পারুক।
ভেবে সবার আগে এক জগৎকে সৃষ্টি করতে হয় (বা একজনের নিজের জগৎকে সীমিত করে, যে জগৎ একই জিনিসে আনে)। প্রাথমিক চুক্তি থেকে এ যাত্রা করে যা তাকে মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে আলাদা করে, একজনের নস্টালজিয়া অনুসারে সাধারণ ভূমি দেখার উদ্দেশ্যে, বিশ্ব যুক্তি দিয়ে প্রতিবন্ধক করে অথবা উপমার সঙ্গে আলোকিত করে কিন্তু যে কোনো ক্ষেত্রে সেটা সুযোগ দেয় অসহনীয় বিচ্ছেদকে বাতিল করতে। এমনকি তিনি যদি কান্টও হন, একজন দার্শনিক একজন স্রষ্টা। তার রয়েছে তার চরিত্র, তার প্রতীক ও গোপন কর্ম। তার রয়েছে প্লট সমাপ্তি। অপরদিকে, কবিতা ও প্রবন্ধকে অতিক্রম করে উপন্যাসের এগিয়ে যাওয়াকে গ্রহণ করে, তাকে প্রতিনিধিত্ব করে, জঘন্য উপস্থিতি, শিল্পের এক মহত্তর বৌদ্ধিকতায় রূপান্তর। এসো আমরা যেন এ বিষয়ে ভুল না করি, আমি মহত্তমের কথা বলছি। সাহিত্যশৈলীর সাফল্য ও গুরুত্ব প্রায়ই তুচ্ছতা দিয়ে পরিমিত হয় যা এর মধ্যে রয়েছে। খারাপ উপন্যাসের সংখ্যাধিক্য ও শ্রেষ্ঠতম উপন্যাসের মূল্যকে ভুলিয়ে অবশ্য দেয় না। বস্তুত, এগুলো তাদের জগৎকে বহন করে। উপন্যাসের রয়েছে তার যুক্তি, রয়েছে কার্যকারণ, স্বজ্ঞা ও তার চাহিদা।[২০]
উপরে যে ধরনের ধ্রুপদী বিরোধিতার কথা বলেছি এই বিশেষ ক্ষেত্রে অল্পবিস্তর কম যুক্তিযুক্ত। সময়কাল এ ধরে রেখেছিল যখন এর লেখকদের থেকে দর্শনকে আলাদা করা অনেক সহজ ছিল। আজ যখন ভাবনা চিরন্তনতার কাছে দাবি রাখতে আটক করেছে। যখন এর শ্রেষ্ঠ ইতিহাস এর অনুতাপ হয়ে উঠবে, যখন এ হয়ে থাকে সময়োপযোগী, আমরা জানি যে, রীতিটি এর লেখকের থেকে আলাদা করতে পারা যায় না। নীতি নিজেই, এর দৃষ্টিভঙ্গির একটি, তা কিন্তু দীর্ঘ ও ব্যক্তিগত স্বীকারোক্তির যুক্তি। অবশেষে বিমূর্ত ভাবনা ফিরে যায় এর মাংসের প্রতিপালনে এবং অনুরূপ, শরীরের কাল্পনিক কার্যকলাপ ও কামনা নিয়ন্ত্রিত হয় একটু বেশি জগতের দৃষ্টির প্রয়োজন অনুসারে। লেখক ‘গল্প’ বলা ছেড়ে দিয়েছে এবং সৃষ্টি করে তার বিশ্ব। মহান ঔপন্যাসিকরা হলেন মহান দার্শনিক, বিপরীত রূপে তা হলো তত্ত্ব- লেখক। উদাহরণস্বরূপ বালজাক, সাদে, মেলভিল, স্তেদাল, দস্তয়েভস্কি, প্রুস্ত, মালরো, কাফকা, আরো সামান্য কয়েকজনকে বলা যায়।
কিন্তু, বাস্তবিক যুক্তিসঙ্গত কার্যকারণ অপেক্ষা বরং লেখায় কল্পনা (মূর্তি) ) দেখানোটা পছন্দ করছে, তার ভেতরে নির্দিষ্ট এক ভাবনা উদ্ঘাটিত করা হয় যা তাদের সবার কাছে সাধারণরূপে পরিচিত, কোনো ব্যাখ্যার নীতির অনর্থকতাকে ও বিশ্বাসযোগ্য উপস্থিতির শিক্ষামূলক বাণীর নিশ্চয়তাকে প্রভাবিত করে। শিল্পকর্মের শেষ ও শুরু উভয় হিসেবে তারা বিবেচনা করে। এ এক প্রায়ই অব্যক্ত দর্শনের, এর চিত্ররূপতা এবং সম্পূর্ণ উপভোগ্যতার ফলস্বরূপ। কিন্তু এ কেবল সেই দর্শনের প্রয়োগের ভেতর দিয়ে সম্পূর্ণতা। অবশেষে এ যুক্তিসঙ্গত করে তোলে এক পুরনো থিমের বিভিন্নতাকে যা জীবনের থেকে সামান্য ভাবনা আলাদা করে যেখানে অনেক ভাবনা জীবনের ভেতর মিলিত হবে। প্রকৃত পরিশোধিত করতে অসমর্থ, ভাবনা একে অনুকরণ করে অল্প সময়ের জন্য থাকায়। প্রশ্নের ভেতর উপন্যাসটি পাশাপাশি আপেক্ষিক ও অক্ষয় জ্ঞানের উপাদান, তা ভালোবাসার মতো। ভালোবাসার, কাল্পনিক কাহিনীর সৃষ্টির রয়েছে প্রাথমিক বিস্ময়তা ও সফল চিন্তাশীল।
.
কমপক্ষে এসব আকর্ষণ আমি সূত্রপাত হিসেবে দেখি। কিন্তু আমি তাদের একই রকম দেখেছিলাম পীড়িত ভাবনার সেই সব রাজকুমারকে যাদের আত্মহত্যার পরবর্তীকালে সাক্ষী হতে পেরেছিলাম। কার্যত কিসে আমাকে কৌতূহলী করে, শক্তির জানাচ্ছে ও বর্ণনা করছে যা তাদের মায়ার সাধারণ পথের দিকে চালনা করে। এখানে আমাকে একই পদ্ধতি ফলস্বরূপ সাহায্য করে। ব্যাপারটা এই যা ইতিমধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে, আমার যুক্তিকে সংক্ষেপিত করতে অনুমতি দেয় এবং দেরি না করে বিশেষ উদাহরণের ভেতর সারার্থ করতে দেয়। আমি যেখানে জানতে চাই আবেদন ছাড়াই এক জীবন গ্রহণ করা, আবেদন ছাড়াই কাজ করতে বা সৃষ্টি করতে একজন রাজি হতেও পারে এবং ঐসব স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাবার কোনটি পথ এর ফ্যান্টম থেকে আমার বিশ্বকে স্বাধীন করতে চাই এবং লোক যারা সম্পূর্ণরূপে রক্তমাংসের সত্যগুলোর সঙ্গে রয়েছে তাদের উপস্থিতি যা আমি অস্বীকার করতে পারি না। আমি অ্যাবসার্ড কর্মকে ঘটাতে পারি, অন্যদের চেয়ে বরং সৃষ্টিশীল অভিপ্রায়কে পছন্দ করতে পারি। কিন্তু যদি একে এরূপ থাকতে হয়, অ্যাবসার্ড অভিপ্রায় অবশ্য এর ভিত্তিহীনতা সম্পর্কে সজাগ থাকে। সুতরাং এ শিল্পের সঙ্গেই থাকে। আর যদি অ্যাবসার্ডের নির্দেশগুলো শ্রদ্ধেয় না হয়, যদি বিচ্ছেদ ও বিদ্রোহের চিত্র না আঁকে কর্মটি, যদি মায়াতে আত্মত্যাগ করে ও আশা জাগায়, তবে অকারণ বা অনর্থক হওয়াটা বন্ধ করে। এর থেকে শিগগিরই নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারি। এর ভেতরে আমার জীবন এক অর্থ দেখতে পেতে পারে কিন্তু তা যৎকিঞ্চিৎ। বিচ্ছিন্নতা ও আবেগে সেই অভ্যেস হয়ে ওঠা বন্ধ হয়ে যায়, যা মানুষের জীবনের সমারোহ ও ব্যর্থতায় শিরোপা দেয়।
সৃজনের ভেতর যে প্রলোভনকে ব্যাখ্যা করা হয় তা সবচেয়ে শক্তিশালী, সেই প্রলোভন কেউ জয় করতে পারে? কাল্পনিক জগতে যার ভেতর প্রকৃত জগৎ সম্পর্কে ওয়াকিবহালতা সবচেয়ে দুর্বল, বিচার করতে চাওয়ার উৎসর্গ ছাড়া আমি কি অ্যাবসার্ড বিশ্বস্ত থাকতে পারব? শেষ চেষ্টায় বহু প্রশ্নকে বিবেচনা করেই নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে এ অবশ্য পরিষ্কার হয়ে ওঠে যা তারা তাৎপর্য করে তোলে। তারা হলো শেষ ওয়াকিবহালতার বিবেক যে চূড়ান্ত ভ্রমের পক্ষে এর প্রাথমিক ও কঠিন শিক্ষার জন্য ভয় পায়। সৃজনের জন্য কি ধরে রাখে, মানুষ অ্যাবসার্ড সচেতনতার জন্য সম্ভাব্য অভিপ্রায়গুলোর একটির ওপর তাকিয়ে থাকে, তার ওপর সব জীবনের রীতিকে খুলে দিয়ে তাকে ধরে রাখে। বিজয়ী ও অভিনেতা, স্রষ্টা বা ডন জুয়ান ভুলে যেতে পারে যে, তাদের জীবন-যাপনের অভ্যেস, তাদের পাগল চরিত্রের সচেতনতা ছাড়া কিছুই করতে পারে না। একজন দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সুখী হবার জন্য একজন মানুষ অর্থ রোজগার করতে চায় এবং তার সমগ্র প্রয়াস ও তার জীবনের শ্রেষ্ঠ অংশকে উৎসর্গ করে সেই অর্থ রোজগারের জন্য। সুখ ভুলে যায়; শেষ করার জন্য এই উপায়ই গ্রহণ করা হয়। অনুরূপ এই বিজয়ের সমগ্র প্রয়াস আকাঙ্ক্ষার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হবে, তার পথটি হলো এক মহত্তর জীবনের দিকে। তার সময়ে ডন জুয়ান অনুরূপ মেনে নেবে তার ভাগ্যকে, সেই অস্তিত্বের সঙ্গে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের মহত্ত্ব কেবল বিদ্রোহের ভেতর মূল্যায়ন হয়। একজনের জন্য এ হলো সচেতনতা, আরেকজনের জন্য বিদ্রোহ; উভয় ক্ষেত্রেই অ্যাবসার্ড অদৃশ্য হয়ে গেছে। মানব হৃদয়ে রয়েছে এত বেশি নাছোড়বান্দা আশা। অধ্যাস বা মায়াকে গ্রহণ করে অধিকাংশ নিঃসঙ্গ মানুষ প্রায়ই শেষ করে দেয়। সেই স্বীকৃতি শান্তির প্রয়োজনে দ্রুত সাহায্য করে, অভ্যন্তরীণভাবে সমান্তরাল রূপে অস্তিত্বকে সমর্থন করে। এভাবে আলোর ঈশ্বরেরা ও মাটির মূর্তিরা থাকে। কিন্তু মানুষের মুখের দিকে মাঝের পথটি সেদিকে এগিয়ে যাওয়া দেখাটা প্রয়োজনীয়।
যতদূর, এ যেমন তাতে অ্যাবসার্ড অবস্থা আমাদের যথাসাধ্য জানানো হয়েছে, একইভাবে আমাদের যদি জানানো হয় থাকে এ যথাযোগ্যরূপে দেখতে যে কাল্পনিক সৃষ্টি নির্দিষ্ট দর্শন হিসেবে উপস্থিত করতে পারে যা হলো একই দ্ব্যর্থক। ধরা যাক উদাহরণ হিসেবে সবকিছু গঠিত করতে একটা কাজকে আমি বাছতে পারি যা বোঝার অ্যাবসার্ডের সচেতনতা, তাতে থাকবে পরিষ্কার যাত্রাবিন্দু ও এক স্বচ্ছ জলবায়ু। এর ফলাফল আমাদের আলোকিত করে। এর ভেতর যদি অ্যাবসার্ডকে শ্রদ্ধা না করা হয়, কোনো দূরীভূত অধ্যাস ভেতরে প্রবেশ করে তা দিয়েই আমরা জানব। এই বিশেষ উদাহরণ, একটি থিম, এক স্রষ্টার আনুগত্য তাদের যথাযোগ্য করে তুলবে। একই বিশ্লেষণ যুক্ত হয় যা ইতিমধ্যে বৃহত্তর দৈর্ঘতায় তৈরি করা হয়েছে।
আমি দস্তয়েভস্কির এক প্রিয় থিমকে পরীক্ষা করব। আমি কেবল আরো ভালোভাবে অন্যান্য কাজগুলো পড়তে পারি। কিন্তু সমস্যাটি সরাসরি এই কাজে ব্যবহৃত হয়, মহত্ত্বের জ্ঞানে ও আবেগে, অস্তিত্ববাদী দর্শনের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছে। এই সমান্তরালবাদ আমার উদ্দেশ্যকে সাধিত করে।
কিরিলভ
দস্তয়েভস্কির নায়কই নিজেদের প্রশ্ন করে জীবনের অর্থ কী। এই ক্ষেত্রে তারা আধুনিক : তারা ব্যঙ্গবিদ্রূপ-ঠাট্টাকে ভয় পায় না। ধ্রুপদী সংবেদনা থেকে আধুনিক সংবেদনার পার্থক্য কী, তা হলো নৈতিক সমস্যাগুলোর ওপর পরবর্তীকালীন উন্নতি বা বেগময়তা। দস্তয়েভস্কির উপন্যাসগুলোর প্রশ্ন এমন প্রবণতায় স্থাপিত যে, চূড়ান্ত সমাধানকে কেবল আমন্ত্রণ করে। অস্তিত্ব হলো ভ্রম বা চিরন্তন। যদি এই অনুসন্ধানে দস্তয়েভস্কি সন্তুষ্ট হন, তবে তিনি হয়ে উঠবেন একজন দার্শনিক কিন্তু এই ফলকেই আঁকেন তো মানুষের জীবন থাকতে পারে বৌদ্ধিক বিনোদন এবং এসব ক্ষেত্রে তিনি একজন শিল্পী। এসব ফলের ভেতরে, বিশেষভাবে শেষ একটিতে তার মনোযোগ ধরা পড়বে, সেইটিতে নিজে যে তাঁর ‘ডায়েরি অব এ রাইটার’-এ বলেন যৌক্তিক আত্মহত্যা। বস্তুত ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরের কিস্তির জন্য কল্পনা করেন ‘যৌক্তিক আত্মহত্যা’র যুক্তি। অমরতায় আস্থা ছাড়া মানব অস্তিত্ব যে কোনো মানুষের জন্য এক উচ্চারিত অ্যাবসার্ডতা; দুঃসাহসী মানুষ নিচের সিদ্ধান্তে আসেন :
‘সুখ সম্পর্কে আমার প্রশ্নের উত্তর থেকে, আমায় বলা হয়েছে, যে আমার চেতনার মধ্যবর্তী অবস্থার ভেতর দিয়ে, মহান সবার ঐক্যের ভেতর ব্যতীত আমি সুখী হতে পারব না, আমি তা ধারণ করতে পারব না এবং কখনো ধারণ করার মতো অবস্থা হবে না, এই তো প্ৰমাণ…’
‘এই পাকাপাকি যোগসূত্র থেকে, মনে করি বাদী ও বিবাদী উভয় ভূমিকায়, বিচারক ও আসামির উভয় ভূমিকায়, প্রকৃতিকে একত্রিত করে নির্বুদ্ধি দিয়ে এই রুচি বিগর্হিত এই কমেডিকে বিবেচনা করি, এমনকি আমার পীড়ন হিসেবে গণ্য করে খুশি হয়ে খেলা করি…
‘বাদী ও বিবাদী, বিচারক ও আসামির আমি আমার তর্কাতীত ক্ষমতায় ঐ প্রকৃতিকে অস্বীকার করি, এই রকম উদ্ধত স্নায়ুর সঙ্গে ঐ প্রকৃতি আমার কাছে নিয়ে আসে সত্তাকে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্যে—অস্বীকার করি আমাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে।’
সেই অবস্থায় সামান্য হিউমার থাকে। এই আত্মহত্যা নিজেকেই হত্যা করে কারণ আধিবিদ্যক সমতলের ওপর জ্বালাতন করে তাকে। আর সে তার প্রতিশোধ নিয়ে চলেছে এক নির্দিষ্ট সংবেদনায়। তার প্রমাণের পথে এ তার জন্য থাকবে না’। যাই হোক এ জানা যে একই থিম এর ভেতর সংসক্ত থাকে। তবে সঙ্গে থাকে অত্যন্ত আশ্চর্যজনক সাধারণত্ব, ‘The Possessed’ এর কিরিলভে, একইভাবে ওকালতি করে আত্মহত্যার হয়ে। ইঞ্জিনিয়ার কিরিলভ ঘোষণা করে, যেহেতু এ ‘তার ধারণা’ তাই সে কোথাও তার নিজের জীবনকে গ্রহণ করতে চায়। অবশ্য সঠিক অর্থে শব্দটি গ্রহণ করা হয়। এক ধারণা, এক ভাবনার জন্য সে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। এ হলো উৎকৃষ্ট আত্মহত্যা। প্রগতিশীলরূপে, দৃশ্যের এক সিরিজে যাতে কিরিলভের মন ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকে, সর্বনাশা ভাবনার দিকে তাড়িত করে, উন্মোচিত হয় আমাদের কাছে। বাস্তবিকই, ফিরে যায় ইঞ্জিনিয়ার ডায়েরির যুক্তিতে। অনুভব করে ঈশ্বরের প্রয়োজন, তাকে অবশ্যই থাকতে হবে। কিন্তু সে জানে সে থাকে না, থাকতে পারে না। সে বিস্ময় প্রকাশ করে, ‘তুমি কেন বুঝতে পার না নিজেকে হত্যা করার এটাই যথেষ্ট কারণ?’ কিছু অ্যাবসার্ড ফল তার জন্য একই রকমে অভিপ্রায়ের সঙ্গে যুক্ত হয়। উদাসীনতার মধ্য দিয়ে আত্মহত্যা করতে দেওয়াটাকে সে মেনে নেয়, সে একে ঘৃণা করে তবুও সেটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ‘গত রাতে স্থির করেছিলাম যা আমি গ্রাহ্য করি না।’ আর চূড়ান্তরূপে বিদ্রোহ ও স্বাধীনতা অনুভবের মিশ্রণে চুক্তি প্রস্তুত করে ‘ক্রমান্বয়ে নিজেকে হত্যা করব, বলব আমার অবাধ্যতার কথা, আমার নতুন ও ভয়ঙ্কর স্বাধীনতা।’ এ আর প্রতিশোধের প্রশ্ন নয় তবে বিদ্রোহের। ফলত কিরিলভ এক অ্যাবসার্ড চরিত্র—তথাপি এ হলো প্রয়োজনীয় সংরক্ষণ : সে নিজেকেই হত্যা করে। কিন্তু সে নিজেই ব্যাখ্যা করে এই দ্বন্দ্বকে, এই পথে একই সময়ে এর সব শুদ্ধতায় অ্যাবসার্ড গোপনীয়তাকে সে প্রকাশ করে। সত্যতায় সে যুক্ত করে তার সর্বনাশা যুক্তির এক অসাধারণ আকাঙ্ক্ষা, যা সমগ্র দৃষ্টিভঙ্গিটি প্রতিফলিত করে চরিত্রকে : ঈশ্বর হবার জন্য সে নিজেকে হত্যা করতে চায়।
স্পষ্টতার ভেতর যুক্তির ধ্রুপদী রূপ। যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে, তবে কিরিলভই ঈশ্বর। যদি ঈশ্বর না থাকে কিরিলভ অবশ্য নিজেকে হত্যা করবে। যুক্তি অ্যাবসার্ড, তবে এ তাই যা প্রয়োজন হয়ে ওঠে। যাই হোক মজা জিনিসটিকে অর্থ দিতে হয় সেই দিব্যতাকে যা পৃথিবীতে নিয়ে আসে। মুখবন্ধটি স্পষ্টরূপে তুলে ধরে পরিমাপ : যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে তবে আমি ঈশ্বর,’ বরং সেটা এখনো জটিল রয়েছে। শুরুতেই উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, মানুষটি জাহির করে সেই পাগল দাবি যা কার্যত সে এই জগতেরই। কে প্রতিদিন অনুশীলন করে সকালে জিমন্যাসিয়ামে তার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য। স্ত্রীকে পুনরায় সারিয়ে তুলে চেস্টভের আনন্দ দিয়ে তাকে নাড়াতে থাকে। তার মৃত্যুর পর কাগজের শিটে দেখা যাবে একটা মুখমণ্ডল যা তার গলায় লেগে রয়েছে তাদের দিকে যাকে সে আঁকতে চায়। সে শিশুর মতো, খিটখিটে, কামনায় ভরপুর, পদ্ধতিকামী এবং সংবেদজ। অতিমানবের কিছুই তার নেই কিন্তু যুক্তি ও বিষণ্ণতা রয়েছে যেখানে তার রয়েছে মানুষের সম্পূর্ণ তালিকা। তথাপি সে শান্তভাবে তার বিদ্যতাকে বলে। এ পাগল নয় আবার দস্তয়েভস্কি যেমন সে রকমও নয়। ফলস্বরূপ ভ্রমের বাতিক নেই যা তাকে উত্তেজিত করে। এই ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ জ্ঞানে শব্দকে গ্রহণ করে হয়ে উঠবে বিদ্রূপাত্মক।
কিরিলভ নিজেই আমাদের বুঝতে সাহায্য করে। স্ট্যাব্রোজিনের এক প্রশ্নের উত্তরে, সে এক স্পষ্ট করে যে সে গড-ম্যান সম্পর্কে কথা বলছে না। ভাবা হতে পারে ক্রাইস্ট থেকে নিজেকে স্পষ্ট করার সেই ক্ষেত্র থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাস্তবে এ হলো খিস্ট্রিয় লাগোয়া ব্যাপার। বাস্তবিক কিরিলভ মুহূর্তের জন্য কল্পনা করে, তার মৃত্যুতে খ্রিস্ট নিজেকে স্বর্গে দেখতে পায় না। তারপর আবিষ্কার করে তার অত্যাচার অর্থহীন। ইঞ্জিনিয়ার বলে, ‘প্রকৃতির নিয়মগুলো মিথ্যের মাঝে ক্রাইস্টকে বাস করার এবং মৃত্যু ঘটায় মিথ্যের মাঝে।’ সম্পূর্ণরূপে এই অর্থে খ্রিস্ট সমগ্র মানব নাটককে ব্যক্তিত্বে মূর্ত করে। সে একজন সম্পূর্ণ মানুষ, একজন মানুষ হয়ে সে অধিকাংশ অ্যাবসার্ড বুঝতে পারে। সে গড-ম্যান নয় কিন্তু ম্যান-গড এবং তার মতো আমাদের প্রত্যেকে ক্রুশবিদ্ধ হাতে পারে ও শিকার হতে পারে এবং এক নির্দিষ্ট স্তরে।
দিব্যতার প্রশ্নে সবই একত্রে পার্থিব। কিরিলভ বলে, ‘আমার দিব্যতার অবদান অনুসন্ধান করেছিলাম ও এ আমি দেখেছি। আমার দিব্যতার অবদান স্বাধীন।’ এখন কিরিলভের মুখবন্ধের অর্থ দেখতে পাওয়া যায় : ‘যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে, আমি ঈশ্বর!’ ঈশ্বর হয়ে এই পৃথিবীতে কেবল স্বাধীন হতে হবে, অমরতাকে সেবা করার জন্য নয়। সর্বোপরি নিশ্চয় সেই স্বাধীনতা থেকে সব সিদ্ধান্ত টানছে। যদি ঈশ্বর থাকে সবকিছু তার ওপর নির্ভর করে এবং তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারে না। যদি তার অস্তিত্ব না থাকে তবে সবকিছু আমাদের ওপর নির্ভর করে। কিরিলভের জন্য, নিৎসে সম্পর্কে, ঈশ্বরকে হত্যা করে হয়ে উঠতে হবে একজনকে ঈশ্বর : পৃথিবীর ওপর এ বুঝতে হবে শাশ্বত জীবনকে যার কথা গোসপেল (Gospel) বলে।[২১]
কিন্তু যদি এই আধিবিদ্যক অপরাধ মানুষের পরিপূর্ণতার জন্য যথেষ্ট, তবে আর কেন যোগ করা আত্মহত্যা? কেন নিজেকে হত্যা করে, স্বাধীনতা জয় করার পর জগৎকে ছেড়ে যাওয়া? সেটাই স্ববিরোধিতা। কিরিলভ এ ব্যাপারে ভালোই সচেতন, কারণ সে যোগ করে : ‘সেটা তুমি অনুভব কর, তুমি একজন জার, তোমাকে হত্যা করা থেকে দূরে থাকবে, আনন্দে ঢেকে রাখবে নিজেকে।’ কিন্তু সাধারণভাবে মানুষেরা জানে না। ‘সেটা’ তারা অনুভব করে না। যেমন প্রমিথিউসের সময়ে, অন্ধ আশা।[২২] তারা উপভোগ করে। পথ দেখানোটা তাদের প্রয়োজন এবং প্রচার ছাড়া তা তারা করতে পারে না। ফলত মানবতার কারণে ভালোবাসার থেকে কিরিলভ অবশ্যই নিজেকে হত্যা করবে। সে অবশ্যই তাদের ভাইদের দেখাবে এক রাজকীয় ও কঠিন পথ যাতে সেই হবে প্রথম। এ এক পণ্ডিতিসুলভ আত্মহত্যা। তারপর কিরিলভ নিজেকে উৎসর্গ করে। কিন্তু সে যদি ক্রুশবিদ্ধ হয়, তাহলে সে শিকার হবে না। সে ম্যান-গড থাকবে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে না জেনে মৃত্যুর জন্য প্রভাবিত হবে, ঈশ্বরীয় বিষণ্নতায় আর্দ্র, ‘আমি’ সে বলে, ‘আমি অসুখী কারণ আমি কৃতজ্ঞ আমার স্বাধীনতা সম্পর্কে কথা বলে।’ কিন্তু একবার সে মৃত, নিদেনপক্ষে মানুষেরা আলোকিত, জারেদের নিয়ে জগৎ ভরে থাকবে মানুষ এবং মানব গৌরবের আলোয় ভরে থাকে। কিরিলভের পিস্তল-শট হবে সেই বিপ্লবের ইঙ্গিত। এভাবে এ হতাশার নয় যা মৃত্যুর জন্য প্ররোচিত করে কিন্তু তার প্রতিবেশীর ভালোবাসা কারণ তার নিজের জন্য। রক্তে শেষ হওয়ার এক অবর্ণনীয় দুঃসাহসিক অভিযানের পূর্বে মানব যন্ত্রণায় এক পুরনো মন্তব্য করে কিরিলভ : ‘সবই ভালো।’
দস্তয়েভস্কিতে আত্মহত্যার এই থিম, বস্তুত এক অ্যাবসার্ড থিম। এসো আমরা শুধু নোট করি অন্যান্য চরিত্রের ভেতর কিরিলভের চালনা শুরু করে। বাস্তব জীবনে অ্যাবসার্ড সত্যিগুলোকে বের করার চেষ্টা করে স্ট্যাব্রোজিন ও ইভান কারামাজোভ। কিরিলভের মৃত্যু দিয়ে স্বাধীন করে একজনকে। তারা তাদের দক্ষতা দিয়ে জার হবার জন্য চেষ্টা করে। ‘পরিহাস’ জীবনের দিকে স্ট্যাব্রোজিন এগিয়ে যায়, কোন উদ্দেশ্যে ভালোই জানা আছে। তার চারপাশে ঘৃণা জাগায়। তবুও চরিত্রটির চাবিটি দেখা যায় তার বিদায় পত্রটিতে : ‘কোনোকিছুকে অত্যন্ত ঘৃণা করতে সমর্থ হয়ে উঠিনি।’ বিচ্ছিন্নরূপে সে একজন জার। অনুরূপ ইভান মনের রাজকীয় শক্তিগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে। তারা যারা তার ভাইয়ের মতো জীবন দিয়ে প্রমাণ করে যে বিশ্বাস করার উদ্দেশ্যে একজনের নিজেকে লাঞ্ছিত করাটা প্রয়োজন, সে উত্তর দিতে পারে যে, অবস্থাটা লজ্জাকর। তার মূল শব্দটি হলো ‘সবকিছু অনুমতি প্রদত্ত’ বিষণ্নতার সঠিক আচ্ছাদনের সঙ্গে। অবশ্য নিৎসের মতো, সবচেয়ে বিখ্যাত ঈশ্বরের আততায়ী শেষ করে সে উন্মত্ততায়। কিন্তু এ এক নৈতিক ছোটার ঝুঁকি এবং ট্র্যাজিকের মুখোমুখির সমাপ্তি, জিজ্ঞেস করতে হয় অ্যাবসার্ডের মনের প্রয়োজনীয় প্রেরণাকে : ‘তাতে কি প্ৰমাণ হয়?’
.
ডায়েরির মতো, এভাবে উপন্যাস অ্যাবসার্ড প্রশ্ন বিবেচনার জন্য উত্থাপন করে। তারা মৃত্যু, প্রশংসা, ‘ভয়ঙ্কর’ স্বাধীনতার প্রতি যুক্তিকে প্রতিষ্ঠা করে, জারেদের গৌরব হয়ে ওঠে মানুষ। সব কিছু ভালো, সবকিছু অনুমতি প্রদত্ত ও কোনো কিছুই ঘৃণিত নয়—এ হলো অ্যাবসার্ড বিচার। কী বিস্ময়কর সৃজন যার ভেতর আগুন ও বরফের ঐসব প্রাণী আমাদের মনে হয় কত পরিচিত। বিচ্ছিন্ন আবেগময় জগৎ যা বুকের ভেতর গুড়গুড় করে আদৌ মনে হয় না আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য ও দৈবসদৃশ। আমাদের প্রতিদিনকার দুশ্চিন্তা এর ভেতর চিনতে পারি এবং সম্ভবত দস্তয়েভস্কির মতো আর কেউ এরূপ পরিচিত ও যন্ত্রণাদায়ক আকর্ষণীয় অ্যাবসার্ড জগৎ দিতে সমর্থ হয়নি।
তথাপি তার সিদ্ধান্তটি কি? দুটি উদ্ধৃতি দেখাবে সম্পূর্ণ আধিবিদ্যক বিপরীততত্ত্ব যা লেখককে অন্য উন্মোচনের দিকে নিয়ে যায়। যৌক্তিক আত্মহত্যা করে যে তার যুক্তি সমালোচকদের প্রতিবাদ করতে প্ররোচিত করে, ডায়েরির পরবর্তী কিস্তিগুলোতে দস্তয়েভস্কি তাঁর অবস্থাকে সম্প্রসারণ করে ও এভাবে শেষ করে : ‘যদি অমরত্বে আস্থা মানবসত্তার প্রতি এত প্রয়োজন (তো এ ব্যতীত নিজেকে হত্যার ব্যাপারে সে আসে) তবে এ অবশ্যই হবে মানবতার স্বাভাবিক অবস্থা। এই ঘটনা থেকেই, কোনো সন্দেহ ব্যতীত মানব আত্মার অমরতা অস্তিত্ব থাকে।’ তারপর আবার শেষ উপন্যাসের শেষ পাতায়, ঈশ্বরের সঙ্গে সেই বিশাল লড়াইয়ের সমাপ্তিতে কিছু শিশু জিজ্ঞেস করে আলিওচাকে : কারামাজোভ, একি সত্য ধর্ম যা বলে, আমরা ধর্ম থেকে জেগে উঠব, আমরা পরস্পরকে আবার দেখব?’ এবং আলিওচা উত্তর দেয় : ‘নিশ্চয়ই আবার আমরা পরস্পরকে দেখব, আনন্দে বলব, একজন অন্যজনকে বলব যা সব কিছু ঘটেছে।’
এভাবে কিরিলভ, স্ট্যাব্রোজিন এবং ইভান পরাজিত হয়। ‘দ্য ব্রাদার কারামাজোভ উত্তর দেয় ‘দ্য পোজেজড’কে। আর এ এক উপসংহার আর কী আলিওচার ঘটনা দ্ব্যর্থক নয় যেন তৃতীয় প্রিন্স মুইক্রিশ্চিন, পরবর্তীকালে চিরস্থায়ী বর্তমানে বাস করে, ঈষৎ রঙ চড়িয়ে হাসে এবং উদাসীন থাকে, সেই আশীর্বাদপূর্ণ অবস্থা হতে পারে চিরন্তন জীবন যার সম্পর্কে থেকে প্রিন্স কথা বলে। অপরদিকে আলিওচা পরিষ্কার করে বলে : ‘আবার আমরা মিলিত হব।’ শিগগির আর কোনো আত্মহত্যা এবং উন্মত্ততার প্রশ্ন নেই। তাদের আর কী প্রয়োজন যারা অমরতা ও এর আনন্দ সম্পর্কে নিশ্চিত? সুখের জন্য মানুষ তার দেবত্ব বিনিময় করে। ‘আমরা একজন আরেকজনকে যা কিছু ঘটেছে সবকিছু আনন্দে বলব।’ এই রূপে আবার রাশিয়ার যে কোনো জায়গায় কিরিলভের পিস্তলের শব্দ হবে, কিন্তু জগৎ এর অন্ধ আশাকে যত্নসহকারে লালন করে যাবে। ‘তাকে’ মানুষ বুঝবে না।
ফলত, শুধু অ্যাবসার্ড ঔপন্যাসিকরাই আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেন না বরং অস্তিত্ববাদী ঔপন্যাসিকরাও বলেন। এখানেও ঝাঁপটি স্পর্শ করছে এবং শিল্পে যা মহত্ত্ব দেয় তা একে উৎসাহিত করে। এ এক নীরব বশ্যতার দিকে চালিত করে, হেঁয়ালি করে সন্দেহের বশে, অনিশ্চিত এবং তীব্ররূপে। ‘দ্য ব্রাদার কারামাজোভ’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে দস্তয়েভস্কি লেখেন : ‘এই বইয়ের ভেতর দিয়ে অনুসন্ধান করা হয় যা তা হলো প্রধান প্রশ্ন যার থেকে আমি সচেতন ও অচেতনভাবে সারা জীবন ধরে কষ্ট পেয়েছি : ঈশ্বরের অস্তিত্ব।’ বিশ্বাস করা শক্ত যে, জীবনভর কষ্টটিতে একটি উপন্যাস আনন্দময় নিশ্চয়তার রূপান্তর হওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে। একজন ভাষ্যকার (Boric de Schloezer ) সঠিকরূপে দেখিয়ে দেয় যে, দস্তয়েভস্কি ইভানের পার্শ্বে এবং অস্ত্যর্থক অধ্যায়গুলোয় সময় লাগে তিন মাসের প্রয়াস যেখানে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয়’ তা লেখা হয়েছে উত্তেজিত অবস্থায় তিন সপ্তাহের মধ্যে। তার চরিত্রগুলোর মধ্যে একটিতে নয়, সেই চরিত্রে মাংসে কাঁটা রয়েছে এমন নয় যে একে উত্ত্যক্ত বা বাড়াবাড়ি করে না বা খোঁজে না এর জন্য সমাধান সংবেদনা বা অমরতায়।[২৩] যে কোনো ক্ষেত্রে, এই সন্দেহ নিয়ে আসুন আমরা উপস্থিত থাকি। এখানে একটি কাজ যা দিনের আলোর চেয়ে অনেক বেশি স্পষ্ট আলো-আঁধারিত যা আমাদের তার আশার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রামকে ধরে রাখতে অনুমতি দেয়। শেষে পৌঁছে স্রষ্টা তার চরিত্রগুলোর বিরুদ্ধে তৈরি করে পছন্দ। এভাবে অনুমতি দেয় স্পষ্টরূপে বিরোধিতা তৈরি করতে। এ অ্যাবসার্ড কর্ম নয় যা এখানে সংসক্ত তবে একটি উপস্থাপন করে বিবেচনার জন্য অ্যাবসার্ড সমস্যাকে।
দস্তয়েভস্কির উত্তর পীড়ন, স্ট্যাব্রোজিন অনুযায়ী ‘লজ্জা’। অপরদিকে অ্যাবসার্ড কর্ম কোনো উত্তর সরবরাহ করে না; সেটাই সামগ্রিক পার্থক্য। আসুন আমরা সতর্কতার সঙ্গে উপসংহারে নোট করি : সেই কাজে কিসের বিরোধিতা কর অ্যাবসার্ডকে যে কাজ এর খ্রিস্টান চরিত্র নয় বরং ঘোষণা করে এক ভবিষ্যৎ জীবন। খ্রিস্টানও অ্যাবসার্ড হওয়া সম্ভব। খ্রিস্টানদের উদাহরণ রয়েছে যারা ভবিষ্যৎ জীবন বিশ্বাস করে না। শিল্পকর্ম বিষয়ে, যেহেতু অ্যাবসার্ড বিশ্লেষণের নির্দেশগুলোর একটি নির্ণয় করা সম্ভব হওয়া উচিত যা পূর্ববর্তী পাতাগুলোর পূর্বেই অনুমান করতে পারা যায়। ‘Gospel-এর অ্যাবসার্ডতা বিবেচনার জন্য নিয়ে যায় উপস্থাপনার দিকে। ছুঁড়ে দেয় এই ধারণার ওপর আলো; প্রতিক্রিয়াতে ফলদায়ক, বাঁধা দেয় না অবিশ্বাসকে সেই দৃঢ় প্রত্যয়। অপরদিকে দেখা সহজ যে ‘The Possessed’-এর লেখক এই পথগুলোর সঙ্গে পরিচিত। উপসংহারে সম্পূর্ণ এক পথ গ্রহণ করে। তার চরিত্রগুলোর ওপর স্রষ্টার বিস্ময়কর উত্তর, কিরিলভের প্রতি দস্তয়েভস্কি, বস্তুত এ রকমই সারার্থ করতে পারা যায় : অস্তিত্ব মায়া এবং চিরন্তন।
ক্ষণস্থায়ী সৃজন
এই ক্ষেত্রে, যেহেতু আমি মনে মনে উপলব্ধি করি আশা চিরকালের জন্য কৌশলে এড়িয়ে যেতে পারে না এবং তাদের আক্রমণ করতে পারে যারা এর থেকে মুক্ত হতে চায়। কর্মগুলোর মধ্যে দেখতে পাই এটাই কৌতূহলের, এই ব্যাপারটা এ ক্ষেত্রে আলোচনা করে। নিদেনপক্ষে সৃজনের এলাকায়, সত্যিই আমি কিছু অ্যাবসার্ড কর্মের[২৪] তালিকা দিতে পারি। সব কিছুরই একটা শুরু আছে। এই যাত্রার অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য এক নিশ্চিত আনুগত্য। কিন্তু Gnostic (আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী খ্রিস্টান) ধৃষ্টতার রেকর্ড ও ম্যানিচিয়েন স্রোতের তীব্রতা সব প্রার্থনা অপেক্ষা অনেক বেশি কট্টর মতবাদ গঠনে অবদান রয়েছে। স্বীকৃতির সঙ্গে, একই জিনিস অ্যাবসার্ডের সত্য। পথগুলোর আবিষ্কারের সাহায্যে একজন একজনের ধারাকে চিনতে পারে যা এর থেকে বিপথগামী। অ্যাবসার্ড যুক্তিতর্কের বিশেষ উপসংহারে, যুক্তি দিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর একটিকে নির্দেশ দেয়, এ আলাদা করে দেখার ব্যাপার নয় যে, অত্যন্ত স্পর্শীয় বেশে একটির অধীনে আশা ফিরে আসে। অ্যাবসার্ড আত্ম অনুশাসন অনুশীলন সে কঠিন সেটা দেখায়। সর্বোপরি অব্যর্থ পরিবর্তন আর প্রয়োজনীয়তাকে প্রদর্শন করে এবং এভাবে এই প্রবন্ধের সাধারণ পরিকল্পনা সুদৃঢ় করে।
কিন্তু যদি অ্যাবসার্ড কর্মগুলোর তালিকা করা এখনো তাড়াতাড়ি হয়, নিদেনপক্ষে সৃজন মতো এক উপসংহারে পৌঁছতে পারে, তাদের মধ্যে একটি যা অ্যাবসার্ড অস্তিত্বকে সম্পূর্ণ করতে পারে। যেমন নঞর্থক ভাবনা দিয়ে কাজ হয় সে রকম শিল্প এত ভালো কখনো কাজ দিতে পারে না। এর অন্ধকার ও অবমাননার অগ্রগতি মহান কর্মকে বোঝাটা যেমন প্রয়োজন সেই রকম কালো হয়ে ওঠে সাদা। ‘শুধু শুধু’ কাজ করাও সৃষ্টি করা, মাটির ভাস্কর্য তৈরি করা, জানে যে একজনের সৃজনের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, দেখে একজনের সৃজন একদিনেই ধ্বংস করে দেয়, যখন সে ব্যাপারে সচেতন হয়ে ওঠে, মৌলিকরূপে শতাব্দীর পর শতাব্দীর জন্য তৈরি করার চেয়ে বেশি গুরুত্ব নেই—এটাই কঠিন প্রজ্ঞা যা অ্যাবসার্ড ভাবনা অনুমোদন করে। একই সঙ্গে এই দুটো কাজ করা, এত হাতে বাতিল করে অপরদিকে বড় করে তোলে, সেই পথটি অ্যাবসার্ড স্রষ্টার কাছে খোলা থাকে। সে অবশ্য এর রংগুলোকে ছেড়ে দেয়।
শিল্পকর্মের বিশেষ ধারণার দিকে চালিত করে। প্রায়ই খুঁজে বের করা হয় এক অন্তরণ প্রমাণপত্রাদির ধারা হিসেবে স্রষ্টার কাজও। এভাবে বিমূঢ় হয়ে পড়ে শিল্পী ও লেখক। এক সুগভীর ভাবনা হয়ে ওঠার এক অবিরাম অবস্থা; গ্রহণ করে জীবনের অভিজ্ঞতাকে এবং ধারণা করে এক আকার। অনুরূপ এর পরম্পরা ও বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গিতে একজন মানুষের সম্পূর্ণ সৃষ্টিকে শক্তিশালী করে তোলে : তার কাজগুলো। একের পর অন্যের; তারা একজন আরেকজনকে পরিপূর্ণতা দেয়, ঠিক করে দেয় বা অতিক্রম করে একজন অন্যজনকে, একজন আরেকজনকে বিরোধিতাও করে। যদি সৃজনের শেষে কিছু আনে, অন্ধ শিল্পীর বিজয় ও মায়াময় কান্না নয় : ‘আমি সবকিছু বলেছি,’ কিন্তু স্রষ্টার মৃত্যু যা তার অভিজ্ঞতা ও তার প্রতিভার বই বন্ধ করে দেয়।
সেই প্রয়াস, সেই অতিমানব সচেতনতা প্রয়োজনীয়ভাবে পাঠকদের কাছে দৃষ্টিগোচর নয়। মানব সৃজনে কোনো রহস্য নেই। ইচ্ছে কাজ করে এই জাদু। কিন্তু নিদেনপক্ষে গোপনীয়তা ছাড়া কোনো প্রকৃত সৃষ্টি হয় না। নিশ্চিত হয়ে হতে পারে কাজের পরম্পরায় তবে একইরকম ভাবনার এক আসন্নমান সিরিজ। কিন্তু পাশাপাশি স্থাপন করে স্রষ্টায় ভিন্ন রকমের ধারণা সম্ভব। তাদের কাজগুলো মনে হতে পারে আন্তঃসম্পর্কের বর্জন। নির্দিষ্ট স্তরেতে তারা স্ববিরোধী। কিন্তু একত্রে দেখলে, তারা পুনরায় শুরু করে স্বাভাবিক দলবাজি। উদাহরণস্বরূপ মৃত্যুর দিকে বিশ্লেষণ করে তাদের নির্দিষ্ট গুরুত্ব। তাদের লেখকের বিশেষ জীবন থেকে তাদের সুস্পষ্ট আলো তারা পায়। মৃত্যুর সময় তাদের কাজের পরম্পরা পক্ষান্তরে ব্যর্থতার এক সংগ্রহ। তবে ঐসব ব্যর্থতা যদি সবার একই অনুরণন, স্রষ্টা নিজের অবস্থায় প্রতিমূর্তিকে পুনরায় দেখানোর ব্যবস্থা করেছে, যা সে আত্মগত করে সেই নিষ্ফল রহস্য প্রতিধ্বনি করে বাতাসে।
এখানে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস বিবেচনাযোগ্য। তবে মানববুদ্ধি আরো অনেক বেশি ওপরে। সৃষ্টির সেবামূলক দৃষ্টিকোণকে এ কেবল স্পষ্টভাবে নির্দেশ করবে। অন্যত্র আমি ঘটনাকে ব্যক্ত করেছি যে, সচেতনতা রক্ষার চেয়ে মানব ইচ্ছার আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। কিন্তু শৃঙ্খলা ছাড়া সেটা করতে পারে না। ধৈর্য ও স্বচ্ছতার সব স্কুলের সৃজন অত্যন্ত ফলপ্রসূ। মানুষের পূর্ণ মর্যাদার বিচলিত করার মতো প্রমাণও : তার অবস্থার বিরুদ্ধে উদ্ধত বিদ্রোহ, এক প্রয়াসের অধ্যবসায়ে বিবেচিত হয় নিষ্ফলরূপে। একে বলা হয় নিত্যদিনের প্রয়াস, স্বীয় দক্ষতা, সত্যের সীমার এক সংক্ষিপ্ত ধারণা, পরিমাপ ও শক্তি। এ গঠিত হয়েছে এক আত্ম অনুশাসনের অনুশীলন থেকে। ‘শুধু শুধু’ সেইসব, পুনরায় করার উদ্দেশ্যে ও সময়কে চিহ্নিত করতে। কিন্তু সম্ভবত মহান শিল্পকর্ম নিজেই গুরুত্বপূর্ণ, কঠোর পরীক্ষাতে একজন মানুষ ও সুযোগের দাবি করে এ যার থেকে তার ফ্যান্টমকে জয় করতে তাকে সাহায্য দিয়ে থাকে এবং ঘনিষ্ঠ হয় তার নগ্ন বাস্তবতার দিকে।
.
নন্দনতত্ত্বে কোনো ভুল থাকতে দেওয়া হবে না। এ রোগীর অনুসন্ধান নয়, উন্মুক্ত, থিসিসের ব্যর্থ চিত্র যা এখানে আমি বলেছি। অপরদিকে সম্পূর্ণ, আমি স্পষ্টভাবে নিজেই বুঝিয়েছি। তত্ত্ব-উপন্যাসটি যা লেখা হয়েছে তা প্রমাণ করে সবার কাছে খুব ঘৃণিত, সেই উপন্যাসটি অত্যন্ত প্রায়ই এক অস্পষ্ট দৃষ্টিকটুভাবে তৃপ্ত ভাবনায় অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু পরিচয় করায় সেসব ধারণা এবং ধারণাগুলো হলো বিরোধী ভাবনা। ঐসব স্রষ্টারা দার্শনিক, নিজেদের নিয়েই তারা লজ্জিত; তাদের নিয়ে আমি যা বলি যা যাদের আমি কল্পনা করি অপরদিকে তারা হলো স্বচ্ছ চিন্তাবিদ। নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যেখানে ভাবনা নিজে তার ভেতর ফিরে যায়, সীমিত, মরণশীল এবং বিদ্রোহী ভাবনার সুস্পষ্ট প্রতীকগুলোর মতো তাদের মূর্তিগুলোকে তোলে।
সম্ভবত তারা কিছু প্রমাণ করে। কিন্তু সেইসব প্রমাণের একটি যা ঔপন্যাসিকরা সরবরাহ করে, অবশ্য জগতের সাধারণ ক্ষেত্রে অপেক্ষা বরং নিজেদের জন্য। প্রয়োজনীয় হলো দৃঢ়তার সঙ্গে ঔপন্যাসিকদের জয় করা উচিত এবং এটাই গঠিত করে তাদের মহত্ত্বকে। এই সামগ্রিকভাবে ইন্দ্রিয় জয় এক ভাবনা দিয়ে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয় যাতে বিমূর্ত শক্তি অবনমন করা হয়। যখন তারা এতই সম্পূৰ্ণ, একই সময়ে মাংস সৃজন দীপ্তিকে তৈরি করে এর সব অ্যাবসার্ড চাকচিক্যে। সর্বোপরি, পরিহাস দর্শন উৎপাদন করে কামনাপূর্ণ কর্মকে।
ঐক্যকে বাতিল করে যে ভাবনা তা গৌরবান্বিত করে বৈচিত্র্য। আর বৈচিত্র্য শিল্পের বাড়ি। মনকে কেবল ভাবনা স্বাধীন করে যার ভেতর থেকে একাকী ছেড়ে দেয়, এর নির্দিষ্ট সীমাও এর আসন্ন সমাপ্তি। কোনো তত্ত্ব একে প্রলুব্ধ করে না। কর্মও জীবনে পরিপক্বতার জন্য অপেক্ষা করে। এর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, কাজটি আরো একবার কেবল আত্মাকে দেবে চাপা কণ্ঠস্বর যা আশা থেকে চিরকালের জন্য মুক্ত। অথবা কণ্ঠস্বরকে কিছুই দেবে না যদি স্রষ্টা তার কার্যকলাপে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যেতে চায়। সেটা সমানই।
।এভাবে আমি অ্যাবসার্ড সৃজনের কথা জিজ্ঞেস করি যা আমি চিন্তা থেকে চেয়েছি—বিদ্রোহ, স্বাধীনতা এবং বৈচিত্র্য। পরে এর সর্বৈব ব্যর্থতার খসড়া করবে। সেই প্রতিদিনকার প্রয়াস যার ভেতর বুদ্ধি ও কামনা মিশ্রিত এবং পরস্পর খুশি রয়েছে, অ্যাবসার্ড মানুষ আবিষ্কার করে এক শৃঙ্খলা যা তার শক্তিগুলোর মহত্তমকে পূরণ করবে। প্রয়োজনীয় অধ্যবসায়, জেদ ও স্বচ্ছতা এভাবে বিজয়ীর দৃষ্টিকোণকে সমান করে তোলে। সৃজন একইভাবে রূপ দেয় একজনের ভাগ্যকে। সবার জন্য এসব চরিত্র, নিদেনপক্ষে যতটা সম্ভব নির্ধারণ করা যায় তারা ততটাই তাদের কাজকে নির্ণয় করে দেয়। এটাই শিক্ষা দেয় আমাদের অভিনেতা : সত্তা ও উপস্থিতির মাঝে কোনো সীমানা নেই।
আমরা পুনরায় উল্লেখ করতে দাও। এসবের কোনো প্রকৃত অর্থ নেই। সেই স্বাধীনতার দিকে যে পথ, গঠিত হতে এখনো রয়েছে এক গতিপথ। এসব মন, স্ৰষ্টা অথবা বিজয়ী সম্পর্কিত চূড়ান্ত প্রয়াস হলো তাদের দায়িত্ব থেকে তাদের নিজেদেরও মুক্ত রাখার ব্যবস্থাটা করতে হয় : সেই বিশেষ কাজটিকে মঞ্জুর করার সাফল্য, তা যাই হোক বিজয়, ভালোবাসা বা সৃষ্টি ভালো নাও হতে পারে; যে কোনো ব্যক্তিগত জীবনের সর্বৈব ব্যর্থতা এভাবে সম্পূর্ণতা দেয়। বস্তুত সেই কাজের উপলব্ধিতে তাদের আরো বেশি স্বাধীনতা দেয়, জীবনের অ্যাবসার্ডতায় সচেতন হওয়াতে শুধু বিশেষ করে উদ্বৃত্তের সঙ্গে এরই ভেতর ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষমতা দেয়।
যা সব থেকে সবই নিয়তি, এই নিয়তির ফল নিঃসঙ্গ নিয়তিসূচক। সেই মৃত্যুর একটি নিয়তি সূচকের বাইরে, আনন্দ অথবা সুখত্ব সবকিছুই স্বাধীনতা। জগতের যা কিছু থাকে মানুষই সম্পূর্ণ নিয়ন্তা। তাকে যা বাধ্য করা হয়েছিল তা ছিল অন্য জগতের ভ্রম। তার ভাবনার ফল, আত্মোৎসর্গের ইতি, ফুলে সাজানো মূর্তি। মিথে নিশ্চিত হয়ে আনন্দে হাসিখুশিতে থাকে—কিন্তু মানব কষ্টের চেয়ে মিথের সঙ্গে আর কোনো গভীরতা নেই, এবং এর মতো অক্ষয়। স্বৰ্গীয় সদুপদেশ নয় যা মনোরঞ্জন করে ও অন্ধ করে, কিন্তু পার্থিব মুখ, অভিব্যক্তি এবং নাটক যার ভেতর এক কঠিন জ্ঞান ও এক ক্ষণস্থায়ী আবেগকে সারার্থ করা হয়।
***
১৮. নোট করতে কৌতূহলী যে পেইন্টিং অত্যন্ত বৌদ্ধিক রূপ, একজন চেষ্টা করে বাস্তবে রূপান্তর করতে, চূড়ান্তরূপে এ এক চাক্ষুষ আনন্দ। এতে রয়েছে জগৎ, সবকিছুতে রয়েছে এরই রং —লেজারে বিশেষভাবে এ দৃষ্টিগোচর।
১৯. যদি এ সম্পর্কে তুমি ভাবা থামাও, ব্যাখ্যা করে এ সবচেয়ে খারাপ উপন্যাসগুলো। অধিকাংশ প্রত্যেকে নিজেদের চিন্তা করতে সমর্থ বলে বিবেচনা করে, একটা নির্দিষ্ট স্তরে তা ভুল বা ঠিক হোক তা প্রকৃতই চিন্তা করে। বিপরীতক্রমে কথায় খুব অল্প নিজেরাই কবি বা শিল্পী হিসেবে কল্পনা করতে পারে। কিন্তু সেই মুহূর্ত থেকে যখন ভাবনাকে একটা বিশেষ রীতিতে জয় করে, উপন্যাসকে জনতা আক্রমণ করে।
সেটা তত বড় বিপদ নয় যা বলা হয়েছে। তাদের বৃহত্তর দাবিগুলোকে তৈরি করতে শ্রেষ্ঠটিকে চালিত করে। ঐসবের জন্য তারা বশীভূত, তারা বাঁচার জন্য উপযুক্ত হয়নি। স্পষ্টতার উপাদানগুলো এর রয়েছে।
২০. উদাহরণস্বরূপ, মালরোর লেখা। কিন্তু একই সময়ে সামাজিক প্রশ্নের সঙ্গে আচরণ করা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে, বস্তুত, সামাজিক প্রশ্ন অ্যাবসার্ড ভাবনার দ্বারা এড়াতে পারা যায় না (এমনকি যদিও সেই ভাবনা বিভিন্ন সমাধানকে সামনে রাখতে পারে, একটা থেকে আরেকটার অনেক তফাৎ)। যাই হোক একজন অবশ্য নিজেকে সীমিত করবে।
২১. স্ট্যাব্রোজিন : ‘অন্য জগতে তুমি কি শাশ্বত জীবনে বিশ্বাস কর?’
কিরিলভ : ‘না, তবে এই জগতে শাশ্বত জীবনে।’
২২. মানুষ সহজভাবে ঈশ্বরকে আবিষ্কার করে নিজেকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নয়। এই মুহূর্তে সেটাই হলো বিশ্ব ইতিহাসের মর্মকথা।
২৩. (জিদের কৌতূহল ও মর্মভেদী মন্তব্য : প্রায় সব দস্তয়েভস্কির নায়কেরা বহুগামী।)
২৪. (উদাহরণস্বরূপ : মেলভিকের মবিডিক।)