অ্যাডাম স্মিথ (১৭২৩–১৭৯০) – রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিজ্ঞানের জনক
যাঁকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক অর্থশাস্ত্র বিজ্ঞানের আলোচনা কোনো মতেই সম্ভব নয়, সেই মনীষী অর্থশাস্ত্রবিদের নাম অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)।
অর্থনীতির ওপর তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘অ্যান ইনক্যুয়েরি ইনটু দি নেচার অ্যান্ড কজেস অব দি ওয়েল্থ্ অব নেশন’ (An Inquiry into the Nature and Causes of the Wealth of Nation)। ১৭৭৬ সালে প্রকাশিত এই গ্রন্থেই তিনি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ওপর ব্যাপক আলোচনা করেন।
অ্যাডাম স্মিথ কেবল একজন অর্থনীতিবিদ ছিলেন না, ছিলেন একজন সমাজবিজ্ঞানীও। সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে তিনি সামাজিক অর্থনীতির ওপর গবেষণা করে যে সূত্র উদ্ভাবন করেছেন, তার ওপর ভিত্তি করেই অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড, তথা সমগ্র ইউরোপে সামাজিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সাধিত হয়েছিল।
১৭৫৯ সালে সমাজবিজ্ঞানের ওপর তাঁর লিখিত ‘দি থিওরি অব মর্যাল সেন্টিমেন্টস’ (The Theory of Moral Sentiments) গ্রন্থেও তিনি সামাজিক আইনের সাধারণ নীতিমালা এবং সরকার পদ্ধতির ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
অ্যাডাম স্মিথের জীবন সম্পর্কে খুব একটা জানা যায় না। এমনকি তাঁর জন্ম-তারিখ সম্পর্কেও ভালো করে জানা যায়নি। তবে জানা যায় তিনি ১৭২৩ সালের ৫ জুন তারিখে কার্কক্যান্ডি শহরে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। কার্কক্যান্ডি হলো ইংল্যান্ডের এডিনবার্গের কাছাকাছি একটি মফস্বল শহর।
তাঁর বাবা অ্যাডাম স্মিথ (পিতা-পুত্রের একই নাম) ছিলেন কাকক্যান্ডি শহরের কাস্টম অফিসের একজন কর্মচারী এবং মা মার্গারেট ডগলাস ছিলেন একজন কৃষি-খামার মালিকের মেয়ে।
তাঁর বাল্যকাল সম্পর্কেও বেশি কিছু জানা যায়নি। বলা হয় নিজের শহর কার্কক্যান্ডিরই একটি স্কুলে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন।
তারপর তাঁর যখন চার বছর বয়স, তখন তাঁকে জিপসিরা চুরি করে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ভবঘুরে জিপসিদের সাথে তিনিও ঘুরে বেড়াতে লাগলেন এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে। এভাবেই কেটে গেল বেশ কয়েকটি বছর।
তারপর তাঁর যখন ১২ বছর বয়স, তখন একদিন জিপসিরা তাঁকে বাড়ির কাছাকাছি এনে ছেড়ে দিয়ে যায়। তিনি দীর্ঘ আট বছর পর আবার ফিরে আসেন তাঁর পারিবারিক জীবনে।
দুবছর বাড়িতেই কেটে যায়। গৃহশিক্ষকের কাছে চলে লেখাপড়া। দুবছর পর ১৭৩৭ সালে তাঁকে এনে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয় গ্ল্যাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল শাখায়। এখানে পড়াশোনা করার সময়ই তিনি ফ্রান্সিস হালচেসন নামের জনৈক শিক্ষকের সান্নিধ্য লাভ করেন। অ্যাডাম স্মিথ পরবর্তীকালে সমাজ, দর্শন ও অর্থনীতিতে যে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, তার প্রাথমিক ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল হালচেসনের কাছ থেকে। স্কুল শিক্ষক হালচেসনই ছিলেন স্মিথের সারা জীবনের আদর্শ ও অনুপ্রেরণা।
গ্লাসগোতে তিনি ১৭৪০ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর এসে ভর্তি হন অক্সফোর্ডের ব্যালিয়ল কলেজে।
কিন্তু অক্সফোর্ডের এই কলেজটি তেমন ভালো ছিল না। পরবর্তীকালে ব্যালিয়ল কলেজকে তিনি শিক্ষার মরুভূমি বলে উল্লেখ করেছিলেন।
তবু এই শিক্ষার মরুভূমিতেই তিনি দীর্ঘ ছয় বছর পড়াশোনা করেন। নিজের চেষ্টা, আন্তরিকতা ও মেধার জোরেই তিনি স্বশিক্ষিত হয়ে ওঠেন। পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসেন নিজের বাড়িতে।
শিক্ষাজীবন শেষ করার পরপরই তাঁর চমৎকার একটি চাকরি জুটে যায়। লর্ড হেনরি ক্যামেস ছিলেন অ্যাডাম স্মিথের মায়ের দূর সম্পর্কের আত্মীয়। তাই মায়ের সুপারিশেই তিনি ক্যামেস সাহেবের অধীনে এই চাকরিটি পেয়ে যান।
ক্যামেস সাহেবের সাথে কাজ করতে এসেই তিনি এডিনবার্গের নানা স্থানে ভ্রমণ করেন এবং বহু স্থানে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পান। ক্যামেস নিজে একজন সমাজসেবক ছিলেন। এই কাজেই তিনি স্মিথকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন নানা জায়গায়।
ফলে অ্যাডাম স্মিথকেও সমাজতত্ত্ব এবং অর্থনীতির ওপর বক্তৃতা তৈরি করতে হতো। এসব বিষয়ের ওপর আরও চিন্তাভাবনা করার পাশাপাশি পড়াশোনাও করতে হতো। পরে তাঁর বক্তৃতাদানের ক্ষেত্র ও বিষয়বস্তু আরও বিস্তৃত হতে থাকে। ফলে কিছুদিনের মধ্যে সারা দেশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে-তিনি একজন সমাজবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এ-ভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকে তাঁর ভবিষ্যতের উজ্জ্বল জীবনের ভিত্তি।
১৭৫১ সালে তিনি গ্ল্যাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্তিবিদ্যাশাস্ত্র বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। অল্পদিনের ব্যবধানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সেরা পণ্ডিত ও শিক্ষক বলে সম্মান ও খ্যাতি লাভ করেন। অ্যাডাম স্মিথের জীবনে এই সময়টাই ছিল সবচেয়ে গৌরবের। পরবর্তীকালে তিনি তাঁর জীবনের এই সময়টুকুকে ‘সব থেকে সুখী ও সম্মানজনক কাল’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের পাঠদানের এবং দিনের অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি চমৎকার একটি সময়সূচি বেঁধে নিয়েছিলেন। যেমন দিনের প্রথম ভাগে বক্তৃতা দিতেন সকালে ৭-৩০ থেকে ৮-৩০ পর্যন্ত, এরপর এগারোটা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত। তাঁর প্রতিটি বক্তৃতা শোনার জন্য তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রচুর ভিড় হতো। তাঁর ক্লাসে প্রায় একশোজন করে ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকত।
বিকেলটা তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কাজ, বিশেষ করে প্রশাসনিক কাজে ব্যয় করতেন। তিনি ১৭৫৮ সালে তাঁর বিভাগের ডিন নির্বাচিত হন। সন্ধ্যায় তিনি প্রতিদিন নিয়মিত শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনায় মিলিত হতেন।
তাঁর এই আলোচনা বা আড্ডায় শুধু যে সমাজের জ্ঞানী আর পণ্ডিত ব্যক্তিরাই উপস্থিত থাকতেন তা-ই নয়, সরকারি দফতরের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও উপস্থিত থাকতেন।
অ্যাডাম স্মিথের সান্ধ্যকালীন আড্ডায় যেসব জ্ঞানী-গুণী এবং বিজ্ঞানী উপস্থিত থাকতেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন সেকালের রসায়নশাস্ত্রের শ্রেষ্ঠ গবেষক ও বিজ্ঞানী জোসেফ ব্ল্যাক, স্টীম ইঞ্জিনের আবিষ্কারক জেমস ওয়াট, লন্ডনের প্রখ্যাত প্রকাশক ও ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি অব ডিজাইনের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ফোলিস, বিখ্যাত দার্শনিক ও স্মিথের আজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডেভিড হিউম এবং প্রখ্যাত ব্যবসায়ী এবং গ্লাসগোর পলিটিক্যাল ইকোনমি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড্রু কক্রেন্স-এর মতো ব্যক্তিরা।
উল্লেখ্য এই অ্যান্ড্রু কক্রেন্স-এর কাছ থেকেই তিনি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার তথ্য সংগ্রহ করতেন। পরে তার উপর ভিত্তি করে সাজাতেন নিজস্ব সূত্র, জাতীয় সম্পদ কাকে বলে?
১৭৫৯ সালে প্রকাশিত হয় স্মিথের অর্থনৈতিক দর্শনের প্রথম গ্রন্থ “দি থিওরি অব মর্যাল সেন্টিমেন্টস’ (The Theory of Moral Sentiments)। পরবর্তীকালে অ্যাডাম স্মিথ তাঁর যে বিখ্যাত অর্থনৈতিক সূত্র ‘জাতীয় সম্পদ’-এর প্রবক্তা হয়েছিলেন, তার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল এই ‘মর্যাল সেন্টিমেন্টস’ গ্রন্থেই।
তাঁর প্রথম গ্রন্থে স্মিথ মানব-প্রকৃতির একটি স্বরূপ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেন, যে মানব-প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে একটি সমাজ, সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতির গতিপ্রকৃতি। এই গ্রন্থটি রচনার সময়েও স্মিথের মূল আদর্শ ছিল তাঁর স্কুলজীবনের শিক্ষক হালচেসন, যাঁর আদর্শকে তিনি আজীবন লালন করেছিলেন মনের গভীরে।
তিনি বলেছেন, মানুষ এমন এক জাতের প্রাণী, যারা পরিচালিত হয় তাদের অন্তরের ভাবাবেগ দ্বারা, সেইসাথে সে কর্ম সম্পাদন করে তার ব্যক্তিগত শক্তিসামর্থ্য ও আর্থিক সঙ্গতির ওপর নির্ভর করে। আর এই ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য মিলেই গড়ে ওঠে তার সমাজ সামাজিক অর্থনীতি ও রাজনীতি। তাঁর এই নৈতিক অনুভূতি (Moral Sentiments) পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত সূত্র জাতীয় সম্পদ সূত্রে উন্নীত হয়।
তাঁর এসব অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূত্রই তাঁকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে। তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে এডিনবার্গ থেকে ইংল্যান্ড ও ইউরোপে।
এই অবসস্থায় তাঁকে ডেকে পাঠান ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের সদস্য চার্লস টাউনসহেন্ড। তিনি স্মিথের কাছে তাঁর ছেলেকে পড়ানোর প্রস্তাব দেন। টাউনসহেন্ড নিজেও ছিলেন একজন শৌখিন অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
ডেভিড হিউমের সুপারিশে তিনি এই গৃহশিক্ষকতার পদ লাভ করেন, যার বার্ষিক বেতন ছিল ৩০০ পাউন্ড এছাড়া ছিল ভ্রমণসহ ও প্রতি এক বছর পরপর ৩০০ পাউন্ড পেনশন-ভাতা। উল্লেখ্য তিনি গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করে যা পেতেন, এটা ছিল তার কয়েক গুণ বেশি। এই চাকরি নেওয়ার পর তিনি ১৭৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি ছেড়ে দেন।
এখানে তাঁর কাজ ছিল চার্লস টাউনসহেন্ডের পালিতপুত্র ও ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ ডিউককে পড়ানো। এই চাকরি নিয়ে তিনি ১৭৭৩ সালে ফ্রান্সে চলে যান। তিনি থাকতেন ফ্রান্সের তুলুস নামক স্থানে। এখানে অবস্থানকালেই স্মিথ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দি ওয়েলথ অব নেশনস’ রচনায় হাত দেন।
আঠারো মাস কাজ করার পর তিনি দুমাসের জন্য জেনেভায় ভিজিটিং প্রফেসারের একটি কাজ পান। জেনেভায় এসেই তাঁর সাথে দেখা হয় বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক ও লেখক ভলতেয়ারের। এরপর তিনি প্যারিস যান। সেখানে ব্রিটিশ দূতাবাসের সেক্রেটারি ছিলেন তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু ডেভিড হিউম।
সেখানে গিয়ে বন্ধু হিউমের মাধ্যমে তিনি পরিচিত হন প্যারিসের বিখ্যাত সাহিত্য সংগঠন ‘ফ্রেঞ্চ এনলাইটেনমেন্ট’-এর সাথে। এর মাধ্যমে তিনি ফ্রান্সের বহু জ্ঞানী-গুণী এবং সমাজসংস্কারকের সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত, অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিক কুয়েসনে। স্মিথ তাঁর প্রকাশিতব্য গ্রন্থ ‘দি ন্যাশনাল ওয়েলথ’-এর পাণ্ডুলিপি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কিন্তু গ্রন্থটির প্রকাশনা কুয়েসনে দেখে যেতে পারেননি, তার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়।
কিন্তু প্যারিসে বেশিদিন থাকা সম্ভব হলো না স্মিথের পক্ষে। ডিউক অব বাকলেচের ছোট ভাই ইংল্যান্ড থেকে তুলুসে বড় ভাইয়ের কাছে বেড়াতে এসে সহসা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি প্যারিস ছেড়ে ফিরে আসেন তাঁর কর্মস্থল তুলুসে। পরে সেখান থেকে ডিউকের ভাইকে নিয়ে ফিরতে হয় লন্ডনে।
তিনি লন্ডনে এসে লর্ড টাউনসহেন্ডের সঙ্গে কাজ করতে লাগলেন। এই সময়েই তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিতি হন। ফলে তাঁর পরিচিত আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তিনি এডমন্ড বার্ক, স্যামুয়েল জনসন, এডওয়ার্ড গিবন এবং বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের মতো বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ লাভ করেন।
পরের বছর তিনি তাঁর নিজের জন্ম-শহর কার্কক্যান্ডিতে ফিরে আসেন। এখানে তিনি ছয় বছর কাটান। এই ছয় বছরে তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দি ন্যাশনাল ওয়েলথ’ গ্রন্থের রচনা শেষ করেন। পরে বইটি লন্ডন থেকে ছাপা হয়ে বের হয় ১৭৭৬ সলে।
‘ন্যাশনাল ওয়েলথ’ যদিও তাঁর রাজনৈতিক অর্থনীতিবিষয়ক প্রথম বই, তবু এই চিন্তাচেতনার প্রথম গোড়াপত্তন হয়েছিল তাঁর প্রথম গ্রন্থ “দি থিওরি অব মর্যাল সেন্টিমেন্টস’-এ ভেতরে দিয়ে।
স্মিথ তাঁর গ্রন্থে মানবসমাজের অর্থনৈতিক স্তরকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো, প্রাথমিক স্তর—স্থায়ী ভূসম্পত্তিবিহীন সমাজ, যে সমজের মানুষ শিকারের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করত। দ্বিতীয় স্তর হলো, যাযাবর মানবগোষ্ঠীর অস্থায়ী কৃষিউৎপাদন। তৃতীয় স্তর-সামন্ত প্রভুদের দ্বারা পরিচালিত কৃষিসমাজ এবং চূড়ান্ত বা চতুর্থ স্তর—বাণিজ্যিক স্বাধীনতার স্তর। যদি কোনো দেশে যুদ্ধ সংঘটিত না হয় কিংবা দেশে মন্দ রাজার শাসন বিরাজমান না থাকে, তবে এই চারটি ধারা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেছেন, নাগরিক বা গণতান্ত্রিক সরকার বলতে বোঝাবে সেই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবে এবং গরিব শ্রেণীকে ধনীসমাজের আক্রমণ থেকে রক্ষা করবে।
তিনি ছিলেন চিরকুমার। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তাঁর আত্মীয়স্বজনেরা তাঁর ব্যক্তিগত যাবতীয় নথিপত্র নষ্ট করে ফেলেন। ওসব কিছুতে তাঁর ব্যক্তিজীবনের কোনো গোপন খবর ছিল কি না তাও জানা যায়নি। এ সম্পর্কে অ্যাডাম স্মিথ নিজেও বলেছিলেন, আমি আমার রচিত গ্রন্থ ছাড়া আর কিছুই রেখে যাইনি।
জীবনের শুরুতেই তিনি পেয়েছিলেন বিস্ময়কর সম্মান ও খ্যাতি। তাঁর এই খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা অটুট ছিল তাঁর মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত।
এই মহান পুরুষের মৃত্যু হয় ১৭৯০ সালের ১৭ জুলাই।
very good to read.