1 of 2

অশ্বচরিত – ৪৬

ছেচল্লিশ

যখন আকাশে সূর্য থাকে, সেই সময় পৃথিবীর চেহারা বারবার বদলায়। আলো কমলে এক রকম, বাড়লে এক রকম। বাতাস উঠলে এক রকম, মেঘে পৃথিবীর অন্য এক চেহারা। সমস্ত দিন এই রূপ বদলের ফাঁকে ফাঁকে মানুষ অবাক হতে থাকে। মোহমুগ্ধ হয়ে পড়ে পৃথিবীর রূপের মায়ায়। ভাবে, সব আছে, সব আছে! কত বিভ্রমেই না পড়ে! বিষাদে, আনন্দে আকাশের সঙ্গে মানুষের মুখের চেহারাও বদলায়।

রাত অন্ধকারে ভুল হবার নয়। আকাশে তখন রং নেই। সমুদ্র কালো। শূন্যতায় কালোছায়া। অথবা কালোই শূন্যতা। তখন আর মায়ায় পড়বে না। মায়ায় পড়লে, সে বড় ভীষণ হয়। কোকিলা বধূ যেন বন্দি করার জন্য নিশিথে ডাকে। রাত আঁধারে তোমাকে যে নিশি ডেকেছে।

ভারতীর মাথার ভিতরে শিমুল ফুল, ফেটে ফেটে তুলো বেরিয়ে পড়ছিল। খুব কোমল সাদা শিমুল তুলো। লাল লাল ফুল—বিদীর্ণ হয়ে গিয়ে তুলো উড়ে যাচ্ছে আকাশময়। আবার এসো, আবার। ভারতী কাকে যেন হাত নাড়ছে। ফুলপাহাড়ির বাঁধ বেয়ে সে উধাও হয়ে যাচ্ছে।

ভারতী ঘুমঘোরে উঠে বসে। চোখ খোলে। চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায় রক্ত। সে শ্রীপতিকে দেখে না। শ্রীপতি সামনে বসে আছে। ভারতী যেন দেখে কেউ নেই। উঠে দাঁড়ায়। এগিয়ে জানালার কাছে যায়। জানালা দিয়ে অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে নিঝুম হয়ে। ভারতী নিঃঝুমতায় শ্রীপতিও আক্রান্ত হয় ধীরে ধীরে।

ভারতী অন্ধকারে হাত নাড়ে। তারপর গুটিগুটি ফিরে দাঁড়ায়। দরজার দিকে এগোয়। আহ। সমস্ত দেহটা হালকা হয়ে গেছে। লাল ফুল, তুলো মেঘ, সোনা রোদ! কত মানুষ! আর সেই প্রাচীর ঘেরা বাড়িটা। ওখানে ইটের পাঁজার ভিতরে কেউটের বাসা। তার পিছনে মেয়েরা ছুটছে। মস্তু উঁচু দেয়াল। দেয়ালের ভিতরে কতটুকু আর আকাশ। কতটুকু বাতাস! কেউটে ফণা তুলেছে। মেয়েরা লাঠি বাগিয়ে হিংস্র হয়ে উঠেছে। সাপ আর মানুষ পারস্পরিক হিংস্রতায় পরস্পরকে চোখে চোখে রাখছে। তার ভিতর থেকে একটি মেয়ে প্রাচীরের ফাঁক খুঁজত, মস্ত লোহার গেটে গিয়ে ধাক্কা মারত নরম হাতে।

কোথায় যাচ্ছ? শ্রীপতি এগিয়ে এসেছে।

ভারতী কথা বলে না। মুখে আঙুল দেয়, চুপ।

পায়ে পায়ে যেন অভিসারে যাচ্ছে মেয়েটা। সন্ত্রস্ত ভঙ্গি। ওই তো দাঁড়িয়ে আছে! কে? ভারতী শ্রীপতিকে দেখে আঁতকে ওঠে। জেলখানার মতো প্রাচীর ডিঙিয়ে পৃথিবী, মানুষ, সমুদ্ৰ!

কোথায় যাচ্ছ? শ্রীপতি আবার জিজ্ঞেস করে।

লোকটা খুব খারাপ! ঢ্যাঙা লম্বা, কালো। কোথায় দেখেছে? কোথায়? সব যে জেনে যাবে। এখন কোনো রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে পাঁচিলের বাইরে চলে যেতে পারলে হয়। তারপর কে দেখবে, কে খুঁজে পাবে? পৃথিবীতে কত জায়গা, তার প্রত্যেকটার এক একটা নাম। ভূগোল বইয়ের ভিতর সব আছে। ম্যাপের ভিতরে বোঝানো! এঁকে এঁকে দেখানো। প্রতিটি জায়গার আলাদা আলাদা রং। আবার বনের এক রং, নদীর এক রং, পাহাড়ের এক রং। কত দেশ! মহাদেশ! সব আলাদা আলাদা। কী সুন্দর রংগুলো। লাল, হলুদ, নীল, সবুজ…।

সেই সব জায়গায় চলে যেতে পারলে আর জেলখানায় ফিরতে হবে না, ফিরতে হবে না।

কিন্তু এ কে? ভারতী লাফ মেরে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে পিছনে শ্রীপতি, যাচ্ছ কোথায়?

ভারতী শুনতে পায় না। এতদিন কোথায় ছিল? আকাশটা এত বড়! এত তারা! এমন ঝলমলে আকাশটা ছিল তার অচেনা। এত বাতাস, এমন মোহময় রাত্রি! এমন সুগন্ধময় পৃথিবী! ভারতী পৃথিবীর পথে হাঁটে। শ্রীপতি তখন আবার ডাকে,

যাচ্ছ কোথায়?

পালাও পালাও। ভারতী নিজেকে বলতে থাকে। মস্ত বড় কালো পুলিশ ভ্যান। মারতে মারতে তুলবে দীপককে। তারপর তাকে। তখন তাদের গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে! মাথায় সিঁদুর। ভারতী ছেলেটার বুকে মাথা দিয়ে আছে। বাড়িটা নিঝুম। শেষ রাতে দরজায় ধাক্কা পড়ে। একবার, দুবার, তিনবার! আর আর! ভারতী ছিটকে সরে যায়। ভয়ে কাঁপছে। পুলিশের ইউনিফর্মে একটা লোক দাঁড়িয়ে, আকর্ণ বিস্তৃত হেসে জিজ্ঞেস করল, যাচ্ছ কোথায়? ফুর্তি হচ্ছিল, যাচ্ছ কোথায়?

শ্রীপতি ওকে আটকাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছ?

ভারতী দেখছে সেই পুলিশটি। মারতে মারতে দীপককে গাড়িতে তুলছে, মুখ দিয়ে অশ্রাব্য ভাষা থুতুর সঙ্গে ছিটিয়ে দিচ্ছে।

ভারতী কাঠ কাঠ হয়ে দাঁড়ায়। তার মাথার ভিতরে ঝড় ওঠে। মাথার ভিতরের অন্ধকারে ঘা পড়ে। খুব হালকা ছায়া সরতে থাকে। চিনতে পারছি, না না, ভুল হচ্ছে।

দাঁড়াও। শ্রীপতি বুঝতে পেরেছে গোলমাল হয়ে গেছে। তার ভয় করছে ভারতীর চাহনিকে।

হাসছে পুলিশ অফিসার। সামনে ড্রাইভারের পাশে ভারতী, তার পাশে অফিসার। পিছনে এতক্ষণ গোঙাতে গোঙাতে নিশ্চুপ হয়ে গেছে দীপক। পুলিশ অফিসার কেমন হাত রেখেছে তার পিঠে।

পালাতে পারবে না কোথাও, সব দিকে লোক পাঠিয়েছিলাম।

কিশোরী সরে বসে। থরথর করে কাঁপছে। আধাবয়সী লোকটার চোখ খারাপ। হাত রাখল তার ঊরুতে। আলতো চাপ দিল, তার গা ঘেঁষে বসেছে। জিজ্ঞেস করল, আলাপ হলো কী করে?

ভারতী জবাব দিল না।

মিস দত্ত ফোন করতেই এভরি কর্নারে লোক পাঠিয়েছি! লোকটা হাসছে! জিপটা তখন ঢুকছে থানায়।

থানাবাড়িতে কী গুমোট গন্ধ! সেই অনাথ আশ্রমের চেয়েও গুমোট, আঁধারময়। পুলিশ অফিসার বলল, আলাপ হলো কী করে বলো, আড়কাঠি কি না জানতে হবে তো, জানো না ফুঁসলে নিয়ে বেচে দেবে!

মুখ নামিয়ে বসে ছিল মেয়েটা। দীপককে ওরা কোথায় নিয়ে গেল জানে না সে। পুলিশ অফিসার নানা কথা বলছিল, উপদেশ দিচ্ছিল। সে অপেক্ষা করছিল সুলতা দিদিমণির জন্য। এসে কঠিন মুঠিতে তার হাত ধরবে।

ঘরে চলো। শ্রীপতি ওকে ধরেছে!

না, না, আর নয়। একটা মস্ত প্রাচীর। চারদিকে মস্ত উঁচু দেয়াল। তার ভিতরে ইটের পাঁজায় কেউটের বাসা। আর কতগুলো মুখশুকনো মেয়ে। বয়স হয়ে হয়ে ঝুঁকে পড়ছে। তারা কোনো দিন বড় আকাশ দেখেনি, বড় মাঠ দেখেনি, মাঠ, মাঠ, মাঠ, প্রান্তর বলে যাকে, দিগন্তে যার সীমা মিশে গেছে পৃথিবীর মাটিতে, তা দেখেনি, দেখেছে শুধু আড়াল। আড়ালের পর আড়াল। মস্ত প্রাচীর। প্রাচীরের ওপার থেকে কোকিল ডেকে ওঠে, শোনা যায়, ঘুড়ী ওড়ে, ঘুড়ীর লেজ দেখা যায় আচমকা বকের সারি উড়ে যায় কতদূর কে জানে!

ফিরে চলো, শ্রীপতি ডাকে।

ভারতী তীব্র আর্তনাদে শ্রীপতির হাত ছাড়িয়ে দৌড়তে থাকে। আর ওখানে যাবে না। থাকবে না, থাকবে না। আলো বাতাস হাওয়া, পৃথিবীর মানচিত্রে কত জায়গা। কত রং! লাল, হলুদ, সবুজ, নীল, গোলাপি…ম্যাপের প্রত্যেকটি দেশের নিজস্ব রং, সেই সব রঙের ভিতরে চলে যাবে সে।

পুলিশটা প্রতিটি কর্নারে লোক পাঠাচ্ছে। তাদের ধরবে। ধরতে ওত পেতে বসে আছে সক্কলে। উত্তরে বাড়িঘরের মাথা দেখা যায় অন্ধকারে। পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমে লোকালয়, পুলিশের ভ্যান। দীপক পুবেও যাবে না। প্রতিটি কোণে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের চেহারা। হুকুম হয়েছে। বাস্টার্ডকে ধরে চার দেয়ালের ভিতর ঢুকিয়ে দিতে। ইটের পাঁজার ওপর বসিয়ে দেবে।

ভারতী অন্ধকারে দৌড়চ্ছে! দীপক তুমি দৌড়াও। না হলে সবার সামনে ধরে অপমান করবে, চড় মারবে। গোপনে আমাকে ভেবে নেবে কেপ্ট। বেজন্মা, রক্ষিতা। তার আবার সম্মান! না, না, বলতে বলতে ভারতী অন্ধকারের সমুদ্রে উড়তে থাকে। কোথায় যাবে? উত্তরে? সেখানে মানুষ। পুবে মানুষ। পশ্চিমে? সেখানেও মানুষ।

আহ্! ঐ তো দক্ষিণ দেখা যায়। ঘন অন্ধকারে ঢাকা পৃথিবীর প্রাচীনতম স্মৃতি। চলে যাবে সুদূর দক্ষিণে। হাওয়ায়, হাওয়ায়, অন্ধকারে, অন্ধকারে। মনে পড়ে যায় কত বড় মাঠ। সেই মাঠে পা দিয়েই মনে হলো জেলখানা থেকে মুক্তি। আলোর দেশে প্রবেশ। এখন অন্ধকারের সমুদ্র যেন সেই আলোরই দেশ। হাওয়ার দেশ। হলুদ রঙের দেশ, সবুজ রঙের দেশ নীল রঙের দেশ…ম্যাপে কেন দেশগুলোর নানা রং? ম্যাপ দেখে শুধু এই কথাই মনে হতো যে তার।

শ্রীপতি ভাবছিল ভারতীর কী হলো! কোথায় যাচ্ছে! সে এগোয়। অন্ধকারে দেখা যায় না কিছু। অন্ধকারে কি বর্ণহীন হয়ে গেল অনাথ আশ্রমের মেয়েটি?

আর সেই মেয়ে? দৌড়তে দৌড়তে এক সময় যেখানে পৌঁছয় সেটা পৃথিবীর শেষ। সামনে অনন্ত অন্ধকার। ভারতী তার সামনে দাঁড়িয়ে হু হু কান্নায় ভেঙে পড়ে। ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ওর পায়ের কাছে। সমুদ্র যেন বিপুল ক্রন্দনে মাথা কুটতে থাকে বেলাভূমিতে। সমুদ্র যেন তার কান্নায় মেয়ের কান্না মিশিয়ে দেয়। শ্রীপতি অন্ধকারে টের পেতে চাইছিল কোথায় ভারতী।

শ্রীপতির সেই মুহূর্তে মনে হল ভুল হয়ে গেছে। ঠিক হয়নি। কিন্তু এই বিপুলতার সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচারও তো করা যায় না। মনে হচ্ছিল ভারতীর সঙ্গে সম্পর্কটি না ভাঙলেই হতো যেন। বউ যখন হাত তুলল, সে আটকাতে পারত। সে ডাকতে চাইছিল ভারতীকে। বেলাভূমি ধরে কোন দিকে গেল ঠিক নেই। শ্ৰীপতি নেমে যাবে সমুদ্রতলে, তখন পঞ্চম ঠাকুর এসে আটকায় তাকে, বাবু কুথায় যাচ্ছেন? মু কখন থিকে আপনারে খুঁজছি, রামচন্দর এয়েচে বালিগুঁড়া থিকে।

রামচন্দ্র! কেন?

আঁজ্ঞা তা উ জানে কেনে আসিছে, তবে সঙ্গে একটি মেয়াছেল্যা রহিছে। শ্রীপতি বলল, ভারতী কোন দিকে গেল?

যেদিকে যাক ঘুরি আসবেন উনি, আপনি হুটেলে চলেন, কীরকম যেন লাগল, কাছারিবাড়ি ফেলে চলি এলা।

শ্রীপতি যেন বাঁচল। এই একটি সূত্র এখন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। না হলে অন্ধকারে ভারতীকে খুঁজতে হবে। সে এক বিড়ম্বনা হবে। কিছু ঘটে গেলে সে বিপদে পড়তে পারে। চলল শ্রীপতি হোটেলের দিকে। শ্রীপতি চলল ভারতী চৌধুরীকে ফেলে রেখে। এই সময়ের মতো, এ জীবনের মতো চলল বোধহয় শ্রীপতি মাইতি।

এ জীবনের মতো চলল শ্রীপতি। সত্যিই কি তাই? এ জীবনের সমস্ত কথা কি জানে কেউ? জেনে বসে আছে আগাম? কেউ কি পূর্বাভাষ পেয়ে যায় ভবিষ্যতের, যেমন পায় সাপ, ব্যাঙ, পিঁপড়ে ভূমিকম্পের আগে? কোনো কোনো মনুষ্যেতর প্রাণী যেমন আগাম জেনে যায় প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের কথা, তেমন করে মানুষ কি জানতে পারে তার জীবনে কী অপেক্ষা করে আছে আগামী দিনগুলোতে? পক্ষিরাজও কি জেনে গিয়েছিল যে তাকে নিরুদ্দেশে যেতে হবে কোনো এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে? সে কি বহুদিন ধরে অপেক্ষা করেছে ওই রাতটির জন্য? তার মনে কি বহুদিন আগে থেকে রাতটি আঁকা হয়েছিল? পক্ষিরাজ কি জেনে গিয়েছিল যেদিন ভগবান বুদ্ধ মাটির পৃথিবীর স্পর্শ নিয়েছিল দূর কপিলাবস্তু নগরে, সেদিনই তাকে হারিয়ে যেতে হবে প্রায় চিরকালের মতো? প্রায় এ জীবনের মতো, কেননা শ্রীপতি তো জানে না পক্ষিরাজ এ জীবনের মতো হারিয়েছে, নাকি তার ফিরে আসার কোনো স্পষ্ট দিনক্ষণ আছে আগামীতে। শ্রীপতি তাই কী করে বলে সে চিরকালের মতো চলে যাচ্ছে ভারতীকে ছেড়ে? ভবিষ্যতের গর্ভে কী নিহিত আছে কে বা জানে? মানুষ কি জানত যেদিন কপিলাবস্তুর রাজমহিষীর গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছিল এক আলোর শিশু, যেদিন সেই শিশু তার প্রেমময় দুই চক্ষু মেলে দেখেছিল এই পৃথিবীর আকাশ, মাটি, সেই দিনই ধরিত্রী-গর্ভ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে জন্ম নেবে এক হিংস্র দানব। বারবার জন্মাবে সে। বারবার তার রক্তচক্ষু দেখে মানুষের দুঃস্বপ্ন দীর্ঘস্থায়ী হবে। দানবীয় অন্ধকার আবৃত করবে মানুষের মন।

শ্রীপতি হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করল, মেয়েটি কে?

মেয়ে তো লয়, বউ।

বউ! চমকে ওঠে শ্ৰীপতি, বিয়ে করল নাকি রামচন্দ্র? জানে না ঠাকুর।

কৌতূহলে শ্রীপতির গতিবেগ বাড়তে থাকে।

ঠাকুর জিজ্ঞেস করে, অশ্ব কি আবার চুঁড়া হবে?

কেন?

না, বলছি কি আর একটা অশ্ব খরিদ করে নিন বাবু, উটা গেছে না গেছে, কত টাকা গেছে কহেন দেখি।

শ্রীপতি হাসে, জবাব দেয় না। ঠাকুর যা বলছে তা কি সে জানে না? কত টাকা গেছে তা কি তার জানা নেই? অশ্ব খোঁজার নাম করে ভানু দাস বেড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাও কি জানে না সে? ইচ্ছে করলেই তো সাতটি ঘোড়া সে কিনতে পারে সাতটি রঙের। সে ক্ষমতা তার আছে। পক্ষিরাজ তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছিল। তার ক্ষমতা কমে যাচ্ছিল। কিন্তু সে তো পক্ষিরাজ, তার পোষা পক্ষিরাজ। তাকে না জানিয়ে উধাও হবে তাই বা কী করে হয়? ভানু খুঁজছে। খুঁজতে যাচ্ছে। তার যাওয়া মানেই যে পক্ষিরাজটিকে পাওয়া যাবে তা নয়, কিন্তু দশ দিকের লোক তো জানতে পারবে বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে পালিয়েছিল যে ঘোড়াটি, তা শ্রীপতি মাইতির। শ্রীপতির একটি ঘোড়া ছিল। সেই ঘোড়াটি পালিয়েছিল। সেদিন ছিল বুদ্ধ পূর্ণিমা। পূর্ণিমার আলোয় ঘোড়াটি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল, এই কথাটি ক্রমশ গল্পের মতো হয়ে উঠুক মানুষজনের কাছে। পূর্ণিমার রাতে আগে কখনো পালিয়েছে কারও পোষা ঘোড়া?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *