পনেরো
ভানু ভোরবেলায় কাছারিবাড়ির উঠোনে যখন দাঁড়াল, অন্ধকার সবে ফিকে হচ্ছে। ঠিক মাথার ওপর নৌকোর মতো এক ফালি চাঁদ ভেসে আছে। অমাবস্যা সামনে। ভানু দেখল আকাশ পরিষ্কার। দক্ষিণ-পশ্চিমে শুধু লম্বা লম্বা মেঘের আঁচড়। এখন হাঁটতে হাঁটতে যাবে মহাপাত্রপুরের দিকে। দেখে আসবে কী হয়েছে। তখন কাছারিবাড়ির কোল থেকে ডাকল মেয়েমানুষটা, শুনিবা, ও ভানুবাবু?
ভানু ঘুরে দেখল মেয়েমানুষটা বেরিয়ে এসেছে। নেমেছে সবে উঠোনে। আলো ফুটছে। ভানু কাল অন্ধকার রাতে সুভদ্রাকে দেখেইনি। আর মাথায় তো ছিল মস্ত ঘোমটা। এখন তা নেই। আঁধার কেটে যাচ্ছে। হাসছে সুভদ্রা। ভানু দেখল চুল এলো করা, কপালে মস্ত একখানি সিঁদুরের টিপ। বড় বড় টানা চোখে তাকিয়ে আছে সুভদ্রা। ভানু ডাকল তাকে হাতছানি দিয়ে। এলোচুলে স্মিত হাস্যে এগিয়ে আসতে লাগল সুভদ্রা। ভিজে বালিমাটিতে তার পায়ের চিহ্ন পড়ছে, নরম সুশোভন। সুভদ্রা তার সামনে এসে বলল, কুনথে যাও।
দেখে আসি।
কী দিখে আসিবা?
মহাপাত্রপুর, দে-পাল, কুসমাড়! ওদিকে চাঁদবালি তো?
হাঁ।
চাঁদবালি, চাঁদিপুর আসা ইঁইছিল অনেক আগে।
তবে তো ইসব জায়গা তুমার চিনা অছি!
নাম শুনাছিল, বালিমুণ্ডা, ভীমাপুর, মহাপাত্রপুর—সব।
কী দিখতে যাবা?
দেখি কী হয়েছে।
সুভদ্রা মাথা নাড়তে থাকে, লাভ নাই।
কেন?
সব তারকাঁটা দিয়া, বন্দুক লিয়ে মিলিটারি দাঁড়াই রহিছে।
তবে! ভানুর বুকটা কেন যেন ধকধক করে ওঠে।
তবে কী?
সাগর দেখতে এলাম তো।
চাঁদিপুর চলি যাও বালিঘুঁড়া থিকে টেকার মিলিবে।
চাঁদিপুর আমার যাওয়া। ভানু বলতে বলতে থেমে যায়, কী যেন বলবে? পেটে এসে মুখে আসছে না। কাঁথি থেকে বাসে করে মোহনপুর ঘুরে বালিমুণ্ডা এসেছে। বালিমুণ্ডা নাকি চন্দনেশ্বর দিয়েও আসা যায়, অনেক দূর! সমুদ্রের ধারে ধারে, গাঁয়ের পর গাঁ পেরিয়ে। একই তো সমুদ্র। যে সমুদ্র সাগরদ্বীপে, সেই সমুদ্র দীঘায়, সেই সমুদ্র তালসারি, চোদ্দবেড়িয়ায়—। হ্যাঁ চোদ্দবেড়িয়া। চোদ্দবেড়িয়া কি এদিক থেকে কাছে হবে? সুবর্ণরেখা নদীর সেই মোহনা। যেখানে ঘোড়াটা পালায়। ভানু জিজ্ঞেস করল চোদ্দবেড়িয়ার কথা, জানে কি সুভদ্ৰা?
সুভদ্রা মাথা নাড়ে, না তো, কুনদিকে হিবে, ও কি মিলিটারির ভিতরে পড়ি গিঁইছে?
কী করে জানব?
সুভদ্রা বলে, সমুদ্দুরের ধার সবু মিলিটারি লিয়া লিবে, কীর’ম আগুন ছুটায় রাতি, কাল তুমি দিখেছ?
তুমি দেখেছ? ভানু জিজ্ঞেস করে।
হাঁ, কত দিখিছি, একদিন দিনের বেলায়, মেঘলা ছিলা সিদিন, আশমান যেন পুড়ি গিলা ভানুবাবু।
কবে?
কবে যেন, হাঁ পুন্নিমের দিন, বোশাখো মাসের পুন্নিমে, রাতে যদি আগুন ছুটত অমন তবে নীল আশমান, নীল চাঁদ, নীল জুছনা সব পুড়ে যেত, এক- একদিন যে কী ডর লাগে! সুভদ্রা মাথা নামায়, বিড়বিড় করে, ওদিকি গিয়া লাভ নি, মিলিটারি বন্দুক রাখিবে বুকের উপর।
ভানু বলল, তবু দেখে আসি।
তুমি পুরুষমানুষ, জানে না মারিলে কী আর হিবে! সুভদ্রা সরে যেতে থাকে। ভানু তখন ডাকল তাকে, শুনি যাও, সত্যি সেদিন অমন হয়েছিল?
অন্ধকার মুছে চরাচর আলোয় ভরে যাচ্ছে। সুভদ্রা দাঁড়াল সেই আলোর ভিতরে, কী?
ভানু জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছিল বলো দেখি।
নায়েব শুনাবে।
তুমার স্বামী কোথায়?
নায়েব শুনাবে। নায়েব সব জানে। সুভদ্রা আগের কথাটিই বলে। আকাশের কথা, জ্যোৎস্নার কথা এড়িয়ে যায়।
জানে, আরু বেশি জানে মোর থিকে। বলতে বলতে সুভদ্রা মাথায় কাপড় টানল, চাপা গলায় বলল, নায়েব ভগমান!
ভানু বলল, দে-পাল, কুসমাড়, মহাপাত্রপুরের মানুষ কোথায় গেল?
কঘর চাষা ছিলা, সবু ভাগচাষা, ঘর ছিলা বাবুগণের জমিনে, কে কুনথে গিলা কী জানি! দে-পালের জমিন ছিলা খাস, তাই কহে, উ জমিন নাকি উয়াদেরই ছিলা।
তোমাদের?
মোদের ঘর, গাছগাছালি, খেতি ছিলা, টঙ্কা দিল।
যাদের আপন জমি ছিল, কোথায় গেল?
গিঁইছে কোনথে তার কী জানি? সুভদ্রা বলল, পুলুশ, মিলিটারি যদি জিগায় কী কহিবে? কহিবে ভুল কঁইরে চলি আসিছি।
ভানু ফিরে এসে বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে। সুভদ্রা কাছারিবাড়ির পিছন দিকে চলে গেল। নায়েব বেরিয়ে এলো বাইরে। ভানুকে জামাকাপড় পরা দেখে বলল, কী হিলা, চলি যাবা নাকি?
মহাপাত্রপুর যেতাম।
হাঁই তুলতে তুলতে মাথা নাড়ে নায়েব, কেনে যাবা?
সমুদ্দুরটা দেখে আসতে।
সমুদ্দুর, গাং, কি দিখোনি?
ভানু কী করে বোঝায় বালিমুণ্ডায় আসা তো এদিকের সমুদ্র দেখতে। সমুদ্র তার নেশা। এক এক জায়গায় সমুদ্রের এক এক রকম চেহারা। এক এক জায়গায় বেলাভূমি এক এক রকমের। ভানু যদি না দেখে যায় তো আসা কেন এতদূরে? তার আবার মনে পড়ে গেল চোদ্দবেড়িয়ার কথা। চোদ্দবেড়িয়া কি চেনো রামচন্দ্র?
রামচন্দ্র বলল, নাম শুনা।
নাম শুনা মানে?
ওই নামে একটা জায়গা অছি, তা জানা।
কী করে জানলে?
বালিমঁড়ায় শুনা।
কী শুনছ?
চোদ্দবেড়িয়ায় স্বর্ণরিখা নদী সমুদ্দুরে নামিছে।
হ্যাঁ, কতদূর সেই জায়গা এখেন থেকে?
তা তো জানিনে।
ভানু জিজ্ঞেস করল, এখেন থেকে সেখেনে যাওয়া যায়?
যাওয়া যাবেনি কেনে, নিকটেই তো মনে হয়।
নিকটে! ভানু উত্তেজিত হয়ে ওঠে, কতদূর?
তা তো জানা নাই, তবে চোদ্দবেড়িয়া ফিরত লকের সহিত দিখা হঁইছিলা।
কোথায়?
বালিমুঁড়ায়, সি লক তার ঘুড়ী লিয়া ফিরছিলা।
তাই! ভানু উত্তেজিত হয়ে বারান্দা থেকে নেমে পড়ে। ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে, নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। তাহলে কি চোদ্দবেড়িয়াতেই গেছে তার কন্থক? খবর তো পেয়েই ছিল ভানু, ওদিকে কোনো ঘোড়া যায়নি। চোদ্দবেড়িয়ার দিকের লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তার চন্দনেশ্বরে। কিন্তু রামচন্দ্র যা বলছে তার মানে চোদ্দবেড়িয়া থেকে ঘুড়ীকে নিয়ে ফিরছিল ঘুড়ীর মালিক। ঘুড়ী চোদ্দবেড়িয়া গিয়েছিল কেন? না, ঘোড়ার টানেই। সেই ঘোড়া কে? না, শ্রীপতিবাবুর পক্ষিরাজ। ভানুচরণের কন্থক। এই সময়ে গিয়েছিল কীভাবে? এই সময়ে তো ওই দিকে কোনো ঘোড়া যায় না। ঘোড়া যাদ না যায়, ঘুড়ী যাবে কেন? তাহলে কি গোপন সন্ধি হয়েছিল বালিমুণ্ডার ঘুড়ী আর কন্থকে? তারা দুজনে কি আগের আশ্বিনে ঠিক করে রেখেছিল বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে মিলবে চোদ্দবেড়িয়ায়? তারপর দিন গুনতে আরম্ভ করেছিল কবে আকাশে দেখা দেবে ভগবান বুদ্ধের মুখের মতো পূর্ণশশী! পবিত্র হলুদ চাঁদ। পবিত্র নীল চাঁদ। পবিত্র রুপোলি চন্দ্রমা।
ভানু বলল, তাহলে তো যেতে হয়।
ঘুরে তাকায় রামচন্দ্ৰ, কুনথে?
কেন চোদ্দবেড়ে!
রামচন্দ্র হেসে বলে, মু তো আজগার কথা কহি নাই, সোউ আশ্বিনার কথা, গেল সনের কথা।
ভানু কিন্তু হতাশ হয় না। একবার গিয়েই না হয় দেখা যাক চোদ্দবেড়িয়ায় আছে কি না। কিন্তু রামচন্দ্র বলে, তার চেয়ে মাহাপাতর সাইকিল দোকানির সহিত কথা কহো বালিমঁড়ায়।
চোদ্দবেড়িয়ায় নাই?
না, নাই।
তুমি কী করে জানলে?
খি খি করে হাসে রামচন্দ্র, জানি, আশ্বিনে ইদিকের মাদিগুলা উদিকে যায় মদ্দার খুঁছে, ইখন সি টায়েম লয়।
রামচন্দ্র নিমদাঁতন নিয়ে হাঁটল মাঠপানে। ভানু একা দাঁড়িয়ে থাকল উঠোনে। যাচ্ছিল মহাপাত্রপুর, দে-পাল, কুসমাড় দেখতে, যাওয়া হলো না। চোদ্দবেড়িয়ার খবর যদি বা পেল, কিন্তু তার আসল হদিস দিতে পারছে না রামচন্দ্র। এখন বালিমুণ্ডায় গিয়ে খোঁজ নিতে হবে সাইকেল দোকানি যে ঘোড়া কিনেছে সেই ঘোড়া তার হারানো ঘোড়া কি না।
সুভদ্রা চায়ের কাপ নিয়ে এলো, ভানুবাবু, যদি কাছারিবাড়ি উঠি যায়, নায়েব কুনথে রহিবে?
সে তো নায়েব জানে।
না, বাবুর তো ঢের কারবার।
ঢের আর কই, হোটেল আর এই চাষবাড়ি।
শুভদ্রা বলল, আরু চাষবাড়ি নাই?
ওদিকের অবস্থা তো এমন নয়।
কিমন?
নায়েব তো নাই ওদিকে, জমি সব বর্গা বন্দোবস্ত দেয়া আছে, আর এত জমিনও রাখার হক নাই ওদিকপানে।
সুভদ্রা কথাটা ঠিক বোঝে না। হাঁ করে শোনে। ভানু বলল, বাবু মোরে বলেছিল রামচন্দরকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে।
কেনে?
তা বাবুই জানে।
উ যাবে কহিছে?
কথাটা ওকে বলাই হয়নি।
উয়ার যাবা হিবেনি। সুভদ্রা ধীরে ধীরে স্পষ্ট করে বলল।
ভানু বলল, আসলে ভীমাপুরের কোনো কথাই তো মোর জানা নাই, বাবু তো কিছুই বলে না, হয়তো বাবুই নোটিশ লিয়ে নায়েবের সাথে কথা কহিবে।
বাবু কি জানে লুটিশ আসিছে?
মাথা নাড়ে ভানু, কী করে বলি?
নায়েব কী করে যাবু, নায়েব যদি যায় মু কুনথে যাবু?
কেনে? কাছারিতে রহি যাও।
মাথা নাড়ে সুভদ্রা, ডর লাগিবে, আর যদি টের পায় উয়ারা মু একা রহিছি, মোকে টেনে লিয়ে যাবে, নায়েব খুব শক্তি ধরে, নায়েবকে ডরে উয়ারা, নায়েবের নিকটি রহিছি তাই বাঁচি অছি, উ ভানুবাবু, ই জায়গা কিমন তা দিখছনি, কেহ কুনথে আছে?
ভানু দেখল কথাটা তো সত্যি। প্রায় মাঠের ভিতরে বাবুর চাষবাড়ির কাছারিঘর। এখানে একা একটা পুরুষমানুষের থাকাই গা ছমছমে, তায় একটি মেয়েমানুষ, যে কয়েকবার ঠিকেদার, পুলিশের হাতে পড়েছে! কিন্তু মহাপাত্রপুর দে-পাল, কুসমাড় তো অনেকদূর। অত দূরের লোক খবর পাবে কী করে কাছারিবাড়িতে নায়েব নেই?
ভানুর মনের কথাটি ধরে নিল সুভদ্রা, বলল, মাঠে মাঠে আসিবে শেল, খট্টাসের দল, মু কুনথে যাবু তখুন?
ভানু মাঠের দিকে তাকায়। শূন্য জমির কোথাও কোথাও ধান রোয়া হয়েছে, কোথাও রোয়া করতে চাষিরা নেমে পড়েছে। সব বাবু শ্রীপতির জমি। জমি ছাড়া আর কিছুই নেই এদিকে। ভীমাপুরের বসতবাটিগুলো অনেক দূরে। কিন্তু খবর না পেলে মাঠ পার হয়ে কী করে আসবে তারা?
সুভদ্রা বলল, বালিঘুঁড়া থিকে সবু মানুষ খপর জানি যাবু নায়েব উদিক যাচ্ছে, কত লক কত জিনিস আনিবার দিবে, আর ইদিকে সবসময় ঘুরঘুর করে চৌকিদার, শয়তানের চর, মুর কী হিবে ভানুবাবু?
ভানু বলল, দ্যাখো নায়েব কী বলে।
নায়েব তো বাবুর কথা মান্য করিবে, তুমি কহিলে না কহিবেনি নায়েব।
এ তো খুব বিপদ, বাবু বলল রবিবার ফিরতে, না হলে বালেশ্বর থানায় জানাবে, পুলিশ চলে আসবে এখেনে।
কী কহ তুমি! ভয়ে আঁতকে উঠল সুভদ্রা, পুলুশ কেনে হিথা আসিবে, কী সব্বনাশ!
ভানু বলল, অত ডরাও কেন? পুলিশ কি তুমারে খোঁজে?
কী জানি!
পুলিশ কি জানে না তুমি এখানে আছ?
জানেনি হয়তো, আবার জানিবারও পারে, নায়েবের নিকট রহিছি তাই কুছু কহিছেনি, নায়েব তো বাবুর লক, বাবুর কত জমিন, নায়েবের নিকট মানে বাবুর নিকটেই রহিছি, পুলুশ তাই চুপ করি রহিছে।
ভানুর অবাক লাগে কথাগুলো শুনে। পুলিশ কেন একটা মেয়েমানুষের পিছনে ঘুরবে? গাঁ ঘরের সব উঠে গেছে। কুসমাড়, দে-পাল, মহাপাত্রপুরের সব তছনছ হয়ে গেছে, এখন কি মেয়েমানুষের অভাব হবে? সুভদ্রাই কি এই এলাকার একমাত্র ভোগের মতো মেয়েমানুষ? আর কোনো অনাথিনী নেই এদিকে যাকে পুলিশ, ঠিকেদার হিঁচড়ে টেনে নিয়ে যেতে পারে! ভানু জিজ্ঞেস করে, পুলিশ তোমারেই খোঁজে কেন?
তুমি চা শেতল করি দিলা। সুভদ্রা এড়িয়ে যায় ভানুর জিজ্ঞাসা। ভানু চায়ের কাপ হাতে তুলে বোঝে একেবারে জল। তা দেখে সুভদ্রা বলে, মোরে দাও, গরম করি আনি।
না থাক, আমি ঠাণ্ডা চা-ই খাই। বলে ঢকঢক করে প্রায় শীতল পানীয় গলায় ঢেলে হাতের ধার দিয়ে ঠোঁটের কোণ মুছে ভানু বলল, কী হয়েছিল বলো দেখি?
নায়েব জানে। সুভদ্রা বলে।
নায়েব রামচন্দ্র আসছিল স্নান সেরে। পাহাড়ের মতো মস্ত দেহ। গায়ের রংটি নিপিশ কালো, ঠিক ওর দেহের পক্ষে যা মানানসই, তাই। সুভদ্রা মাথার কাপড় আরও একটু টেনে বলল, নায়েব চলি গেলি মুও যাবু উয়ার সহিত।
কোথায়?
নায়েব যেখানে যাবে। সুভদ্রা সরে যায় রান্নাশালের দিকে।
রামচন্দ্র বলল, চলো তুমারে লিয়া বালিমঁড়া যাব।
ভানু বসে আছে বারান্দায়। তার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছে। কী হয়েছিল এমন যার জন্য পুলিশ সুভদ্রার পিছনে পড়ে আছে! সে নায়েবকে বলল শ্ৰীপতি মাইতি যা বলেছিল তা। রোববারে যাওয়ার কথা শুনে প্রথমে নায়েব রামচন্দ্র বলল, হ্যাঁ যাই, বাবুকে সব তো জানানো দরকার।
সুভদ্রা থাকবে এখানে?
নায়েব খেয়াল করেনি, চমকে ওঠে, কী কইরে রহিবে?
কেনে?
ফাঁক পেলিই চৌকিদার খপর দিবে, মেয়্যামানুষটার বড় বেপদ হবে।
ভানু বলল, কী হইছে কহিবে?
হাঁ, কহিব। বিড়বিড় করে রামচন্দ্র, দে-পাল যখন দখল লিতে এলো পুলুশ আর গরমেন, আর ঠিকেদারের লোক, উফ। উ মেয়্যামানুষটার কী সাহস! ইতো সাহস ছিলা, সবু কুনথে গিলা, ইখন সবু সময় ডরে।
সুভদ্রা উঠোনের মধ্যিখানে এসে ডাকছে রামচন্দ্রকে, শুনিবা নায়েব।
নায়েব গেল। ভানু দেখল নায়েব দাঁড়াতে সুভদ্রা হাত নেড়ে নেড়ে কীসব বলছে চাপা গলায়।