এগারো
হোটেলের টাকা এসেছিল ভীমাপুর, বালিমুণ্ডার জমি বেচে। বালিমুণ্ডা ওড়িশায়, জলেশ্বর থেকে আরও দক্ষিণ-পশ্চিমে এগিয়ে সমুদ্রের কাছাকাছি। সেই যে কবে সমুদ্র সরে গিয়েছিল তা কেউ জানে না, কতকাল আগে! কত শত বৎসর আগে শ্রীপতির ঠাকুরদা শ্রীনিবাস মাইতি বলত। তখন শ্রীপতি কত ছোট, কিন্তু কথাগুলো মনে এমন ধরেছিল যে ভোলেনি। সমুদ্র কখনো সরে, কখনো এগিয়ে এসে ভাঙে। যদি সরে তো বানিগাছের জঙ্গলে ফেলে যাওয়া চর ঢেকে যায়। সেই চর আস্তে আস্তে উর্বরা হয়। ঝরা পাতা মাটিতে পচে পচে বালি মাটি ক্রমশ ফসল ধারণের উপযোগী হয়ে ওঠে। সময় দিতে হবে তো তাকে। তখন আগে আগে জমি দখল করতে হবে। বালিমুণ্ডার জমি ছিল পাহাড়ি জমিদারদের সম্পত্তি। তাদের বাড়ি সাগরেশ্বরে। সাগরেশ্বর এদিকেই। এদিকে বলেই শ্রীপতির ঠাকুরদা, তার বাবা পত্তনি পেয়েছিল অত সম্পত্তি। খাজনা সামান্য, জমি অঢেল। তারপর জমিদারি অধিগ্রহণের সময় ওই সম্পত্তি ভুয়ো কাগজে শ্রীপতির ঠাকুরদা নিজের নামে করে নেন। তিনি ছিলেন নায়েব। নায়েবে কী না পারত তখন! সাগর কেনাবেচাও করতে পারত শোনা যায়।
বালিমুণ্ডার জমিতে গোলমাল এদিকের মতো নয়। ওদিককার চাষা মানুষ খুব ভীরু, শান্ত। এদিকের চাষারা যেমন দাবি করে, বর্গা লেখায়, জমি দখল করে নেয়, ওদিকে সেই সমস্যা নেই-ই। মালিক আর চাষা। চাষা গলা তুলে কথা বলল তার চাষ চলে গেল। কত মানুষ চাষের জন্য বসে থাকে। অঘ্রানে ধান ওঠার পর, সব হিসেব নিকেশ করে শ্রীপতি ফিরে এলে প্রায়ই ওদিকের লোক হোটেলে এসে তাকে খোঁজে চাষের ব্যবস্থা করার জন্য। সেই রকম একটা লোক এসেছিল। যে চাষাকে দেয়া হয়েছিল বিঘে দেড়েক, সে নাকি আচমকা মরে গেছে, সামনে বর্ষা, জমি কি পড়ে থাকবে, না মাইতিবাবু চাষে দেবেন? চাষে যদি দেন তো সে করতে পারে। অনেক দিন ধরে তো ঘুরছে সে মাইতিবাবুর জমি চাষের জন্য। চাষবাড়িতে বাবু কবে যাবেন?
কী নাম? শ্রীপতি জিজ্ঞেস করে।
আঁজ্ঞা মোর নাম বিষ্ণু, বিষ্ণুপদ পাতর।
চাষবাড়ির রামচন্দ্র কী বলল?
আঁজ্ঞা আপুনার নিকট পাঠাই দিলা, আপুনি না কহিবে তো হিবে কী করে?
খুশি হলো শ্রীপতি। রামচন্দ্র মণ্ডল তার চাষবাড়ির নায়েব। সে যে ওখানে বসে উলটো কলকাঠি নাড়ছে না তাতে আশ্বস্ত হওয়া গেল। জমি এখনও বহুকাল থাকবে। রাখবে শ্রীপতি। এভাবে জমি তো এপারে রাখা যায় না। ফ্যামিলি সিলিং আইন সব জমি খাস করে দিচ্ছে। দেশ থেকে যদি জমির মালিক চলে যায়, তবে সে দেশের থাকে কী? জমি না থাকলে মানুষেরই বা থাকে কী? মানসম্মান সবই তো জমি দেয়। জমিই টাকা দেয়। হোটেল দিয়েছে শ্রীপতি মাইতিকে। জমি যত ইচ্ছে ফুর্তি দেয়। শ্রীপতি ইচ্ছে করলেই তার চাষবাড়িতে মেয়েমানুষ রাখতে পারে। রাখেনি ওসব। যদি রাখত, জেনেও কিছু বলত না মধুমিতা। অথচ ভারতী চৌধুরীকে মানবে না। মেনে নেবেই না। আশ্চর্য!
শ্রীপতি বলল, মরল কী করে চাষা?
আঁজ্ঞা জমিনে হাল নামাইছিলা, এক হাল করার পর দুফুরে ঘরে ফিরিলা, বুকে বেদনা উঠিলা তখন, ছটফট কঁইরতে কইরতে মরি গিলা যোগেন।
তার কে আছে?
বেটা আছে, বহু আছে।
বেটা কত বড়?
জুয়ান বেটা।
কী করে?
চাষ কাজ করে, মজরি খাটে।
সে কী করবে?
সে তো করিবে কইছিলা, কিন্তু রামচন্দ্র কহিলা হিবেনি, বাপ চষিত তাই বেটাও চষিবে ইমন কানুন নাই।
নাই তো। শ্রীপতি খুব খুশি হলো এই খবরে। এদিকে হলে অন্যটাই ঘটত, বাপ চষত, তাই ছেলে চষবে। এইভাবে বাপের পর ছেলে, ছেলের পর নাতি, বংশপরম্পরায় জমি চষলে সে জমিতে চাষার অধিকার জন্মে যায়। তার সেই অধিকার থেকেই বর্গাদারি হয়। একই জমি বছরের পর বছর চষতে চষতে চাষার মায়া বসে যায় সেই জমিতে। চাষা সেই জমি নিজের মনে করতে আরম্ভ করে।
শ্রীপতি জিজ্ঞেস করে, যোগেনের বেটার নাম কী?
আঁজ্ঞা মহাদেব, মহাদেব পাতর বটে।
তুমি বিষ্ণু পাতর?
আঁজ্ঞা ঠিকই কঁহিছেন।
যে মরেছে সে তোমার কে হয়?
আঁজ্ঞা বড় ভাই বটে।
বড় ভাই! তাহলে তো তুমি ও জমিন পাবে না।
আঁজ্ঞা রামচন্দর কহিলা মহাদেব পাবেনি, মুই না পাব কেনে?
তুমি তো যোগেনের ছোট ভাই।
তা তো ঠিক?
অন্য জমিন চষো।
লোকটা হতাশ হয়ে মুখ অন্ধকার করে বসে আছে বারান্দায়। বালিমুণ্ডা কেন জমিন সব জায়গায় রাখার নীতিই তো এই। লোকটার মুখ দেখে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু রীতিটা ভাঙা কি ঠিক হচ্ছে? ঠিক হবে? এই সব ছোট ছোট ব্যত্যয়ই তো বড় হয়ে চেপে বসে। যোগেন মরতে তার ভাই জমিতে নামল। পরের বছর হয়তো যোগেনের বেটা মহাদেব কৌশল করে ওই জমিতে নামবে যোগেনের ভাই বিষ্ণুর বদলি হয়ে। এমন তো হতে পারে যোগেনের ভাই নামেই নিচ্ছে জমি, আসলে চষবে মহাদেব। সেই কৌশলেই এসেছে লোকটা।
ভানু এসে দাঁড়াল, বলল, এ কে বাবু?
জবাব দিল না শ্রীপতি। ভানু বসল বারান্দার কোণে রাখা বেঞ্চিতে। এই লোকটা, বিষ্ণু পাতর বেঞ্চিতে বসার সাহস দেখায়নি। ভানুরও প্রথম প্রথম ও সাহস ছিল না। এখন তো সে খাটের কোণেও বসে।
বিষ্ণু পাতর ডাকল, বাবু!
অন্য জমিন নাও।
অন্য জমিন তো নাই, চাষ চইলছে, ওটা মোর বড় ভাই চষত, সে হাল করিছিলা, মোরে দিলা ফসল ফাঁকি মারিব না।
বড় ভাই করত বলে তুমি করবে এটা তো হতে পারে না।
শ্রীপতি বলল। আঁজ্ঞা! লোকটা কালো চোখে তাকিয়ে আছে। ভীরু দৃষ্টি।
শ্রীপতি বলল, ভাত খেয়ে যাও, খবরটা দিলে ভালো, রামচন্দ্রকে আসতে বলো।
তখন ভানু মাথা গলাল এই আলাপে, ঘোড়া দেখেছ?
ঘুড়া? লোকটা অবাক।
হ্যাঁ, অশ্ব, সাদা, ধবল অশ্ব।
আছে তো।
কোথায় আছে?
আঁজ্ঞা ওদিকি।
বেওয়ারিশ ঘোড়া?
আঁজ্ঞা না।
ভানু বলল, বাবু, ওদিকে যেতে পারে?
শ্রীপতি ঘরে ঢুকে গেছে। গায়ের জামা খুলে পাখা চালিয়ে বসেছে। ভানু তার দরজায় এসে জিজ্ঞেস করল কথাটা। শ্রীপতি মাথা দোলায়। ভানু ঠিক বুঝতে পারে না বাবু কী বলছে, হ্যাঁ কিংবা না। বাবুর মতলবটা জানা গেলে সে বালিমুণ্ডা যাত্রা করতে পারে। বালিমুণ্ডা যাওয়ার সাধ তার বহুদিনের। কলকাতায় যাওয়ার কথায় বাবু রাজি হচ্ছে না। ভানু ঠিক বুঝতে পারছে না বাবু বিশ্বাস করেছে কি না কোকিলা বধূর কুহক করার ঘটনাটি। ঠিক সেই কথাটিই তুলল শ্রীপতি, অশ্ব বালিমুণ্ডা যাবে কী করে?
আঁজ্ঞে যেতে তো পারে, পারে কি না?
সে তো কলকাতায় মদরঞ্জির সঙ্গে চলে গেছে। শ্রীপতি বাঁকা হাসল।
ভানু হাত কচলায়, ওটা তো অনুমান মাত্তর।
অনুমান কেন হবে, ওটাই তো সত্যি বলেছিলি।
আঁজ্ঞে দেখা তো চোখে হয়নি।
শ্রীপতি বলে, তাহলে গৌরমোহনের বউ কী করল?
ভানু মাথা চুলকোয়, বালিমুণ্ডা ঘুরে আসা ভালো, ওদিকে যদি পলায়, কোথায় যে গেল, আমার কিছুই ভালো লাগছে না বাবু।
শ্রীপতি জিজ্ঞেস করল, মদরঞ্জি কী হলো?
হয় নাই এখনও, বললাম তো।
তুই গিয়েছিলি?
হ্যাঁ, সাইকেল তো নিয়ে এলাম।
গিসলি, বলিসনি তো?
ভানু টের পায় বাবুর যাওয়ার সাধ হয়েছিল। তার মানে? ভানু মনে মনে হিসেব করে নেয়, তার মানে কোকিলার সন্ধানে যাবে ভেবেছিল বাবু। কী সব্বোনাশ! কুহকিনী ঠিক কুহক করেছে। আগে নিল ঘোড়া, এবার নেবে ঘোড়ার মালিক শ্রীপতি মাইতিকে। মাথায় টোকা মারে ভানু। যাক গে! এতে তার বালিমুণ্ডা যাওয়া আটকাবে কেন?
শ্রীপতি বলল, কোকিলা কী বলল?
দেখা হয় নাই। মিথ্যে বলল ভানু।
কেন?
বাপঘরে গেছে।
বাপঘর কোথায়?
আঁজ্ঞে তা তো জানা নাই।
শ্রীপতি বলল, মদরঞ্জি কবে হবে?
হবে, শিগগির হবে।
শ্রীপতি বলল, রামচন্দ্রকে লিখে দিলে হবে, ও খোঁজ করবে বালিমুণ্ডায়।
আঁজ্ঞে হবে না।
হবে না কেন?
ঘোড়া কি ওকে চেনে, রামচন্দরকে?
ও তো ঘোড়া চেনে।
ঘোড়া চেনে, কিন্তু আমার কন্থককে কি চেনে?
গালে হাত দিল শ্রীপতি, চেনে না?
কেউ কাউরে চেনে না।
তা ঠিক।
তবে আপনার রামচন্দর কী করবে?
তাহলে যা তুই। শ্রীপতির মনে হলো ভানুকে পাঠানো দরকার। কেন দরকার তা সঠিক জানে না শ্রীপতি, কিন্তু ভানু যখন যেতে চাইছে খুব করে, ভানু যাক। গিয়ে রামচন্দ্রকে কড়কে দিয়ে আসুক। রামচন্দ্র ঠিক কাজ করেনি এই বিষ্ণু পাতরকে পাঠিয়ে। রামচন্দ্র কি জানে না কোন রীতিতে জমি চাষে দেয় শ্রীপতি? রীতি ভাঙলে বিপদ। কেউ যদি তার বাবা, তার বড় ভাই চষত বলে সেই অধিকারে জমি চায় তা কি মানা হবে? শ্রীপতি বলল, চলে যা, ওই লোকটার সঙ্গে চলে যা।
ভানু উল্লসিত হয়ে ওঠে, বালিমুণ্ডা যদি পছন্দের জায়গা হয় তবে সে থেকে যাবে ওখানে। তার ভালো লাগছে না দীঘা। ঘোড়াটা হারিয়ে যেতে তার মনও ভেঙে গেছে। ঘোড়া ছাড়া কী করবে তুমি ছন্দক, কাকে নিয়ে বাঁচবে? রাজপুত্র নেই, তার ঘোড়া নেই, তবে কে আছে সঙ্গে? ভানুর মুখ দেখে শ্রীপতি যেন আন্দাজ করে ব্যাপারটা, জিজ্ঞেস করে, কবে ফেরা হবে?
আঁজ্ঞে অশ্ব খুঁজে পাই।
যদি না পাস?
খুঁজি না কেন।
তোকে যেতে হবে না।
আঁজ্ঞে। ভানু হতভম্ব, যাব না?
যাবি, আজ মঙ্গলবার, রবিবার ফিরবি।
ভানু হাত কচলায়, যদি দেরি হয়?
আমি লোক পাঠিয়ে নিয়ে আসব তোকে।
আঁজ্ঞে?
এখানকার থানা জলেশ্বর থানায় খবর দেবে, সে দেবে বালেশ্বর থানায় খবর, পুলিশ তোকে তুলে নিয়ে আসবে।
আঁজ্ঞে?
কথা তো কথা, রোববারেই ফিরতে হবে।
ভানু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ধুস! সে মীরগোদা চলে যাবে, সেখানে গিয়ে মদরঞ্জির কাজ শিখবে কোকিলা আর গৌরমোহনের কাছে। কোথায় তার ফুলরানি, কোথায় জুট মিল! সব ত্যাগ করে এই সমুদ্রের ধারে এসে পড়েছে কি শ্রীপতি মাইতির বাঁধা মুনিষ হতে? সে ছিল রাজপুত্রের সাথী, সেই রাজপুত্র হয়ে গেল মহামানব, হায় রাজপুত্র! আমার কথাটি ভাবলে না? ঘোড়াটাও ভাবল না। ফেলে চলে গেল!
শ্রীপতি বলে, অত দূর বালিমুণ্ডায় কি যেতে পারে পক্ষিরাজ?
ভানু হাসে, কোন দিকে না যেতে পারে ঘোড়া?
তুই যাবি, রোববারে নায়েব রামচন্দ্রকে নিয়ে ফিরবি।
অশ্ব?
এর মধ্যে যদি পাস তো পাবি, না পাবি তো ও কোকিলার কুহকে আছে।
ভানু মাথা দোলায়, তা কেন, আমি গিয়েছি শুনে সে আত্মগোপন করতে পারে বাবু। চোখ ছলছল করে উঠল ছন্দকের, অতি নিষ্ঠুর প্রাণী ওই ঘোড়া!
শ্রীপতি বলল, কাঁদছিস, কেঁদে লাভ নেই, শোন, কী করতে হবে, তুই যোগেন পাতরের জমিটা অন্য লোকের হাতে বন্দোবস্ত দিবি, যোগেনের চোদ্দোপুরুষের কেউ যেন ও জমিতে না নামে, জমি তো আমার সম্পত্তি, ওদের না, যোগেন মরল বলে তার ভাই, ছেলে কেউ যেন না চষে।
ভানু অবাক হয়ে শোনে। কথাটা অদ্ভুত লাগে! জমিটমি তার ধাতে আসে না। জমি বন্দোবস্ত করে আসতে বলছে শ্রীপতিবাবু। যেরকম এখানে বলে তার ঠিক উলটো করতে বলছে। ওই যে লোকটা দরজার মুখে চলে এসেছে, মাইতিবাবুর কথায় সে ঢুকে পড়ল ভিতরে, বাবু পঞ্চাশ টঙ্কা ব্যয় কঁইরে আসিছি, পরেরবার না হয় নতুন করি বন্দোবস্ত দিবেন।
শ্রীপতি মাথা নাড়ল, পঞ্চাশ টঙ্কা নিয়ে যাও, দুপুরে খাও, আজ থাকো, কাল ভোরে চলে যাও, সে ভাড়াও দিচ্ছি।
কিন্তু চাষ না হিলে খাব কী?
যোগেন বেঁচে থাকতে কী খেতে?
ভানু মনে মনে একটা ছক বাঁধতে থাকে। সে বলল, বাবু, একে থাকতে বলেন, একে নিয়েই তো যাব আমি বালিমুণ্ডা।
রহিব কেনে, জমিন যদি না পাই। লোকটা অভিমানে ফুঁসে ওঠে।
শ্রীপতি বলল, পরেরবার পাবে, আর ভানু যাচ্ছে ও যদি বদলাবদলি করে দিতে পারে, অন্য জমির চাষাকে এই জমিতে বসিয়ে তোমাকে সেই জমিতে যদি দিতে পারে, তবে তো হয়ে যাবে।
লোকটা এতে একটুও আশ্বস্ত হয় না, বিড়বিড় করে, তা কি হিবে? সব জমিনে চাষ লাগি গিলা পেরায়, ওদিকি পানি আগেই নামিছে।
দেখা যাক কী হয়! ভানু বলল।
পরদিন ভোরে ভানু চলল বালিমুণ্ডায় অশ্বের খোঁজে। যেতে যেতে বিষ্ণু পাতরকে বলল, ওই জমিনেই তোকে বসিয়ে দেব, বাবু না জানলেই হলো।
কিন্তু পরে তো জানিবে, চাষের সময় না যাক আঘুন মাসে বাবু তো যাবে, তখন জানিলে তো মোর সব্বোনাশ ইঁই যাবে।
হি হি করে হাসে ভানু, বাবু কি জানে, কোন জমি যোগেন পাতর চষত?
মাথা নাড়ে লোকটা, তা জানিত না, জানিত শুধু রামচন্দর।
ওকে বোঝাতে হবে, ও যেন বলে যোগেনের জমি অন্য চাষায় চষে।
মিথ্যা কহিবে?
হাঁরে হাঁ, কহিবে তো কহিবে, কহিবে যোগেন পাতরের জমি তু চষিস না,
তাতেই বাবু সন্তুষ্ট।
বাবু যদি সন্ধান লিয়া দিখে?
অত সময় নাই বাবুর, জ্যান্ত অশ্বটা হারাইছে, সেই অশ্ব খুঁজতে যাচ্ছি আমি বালিমুণ্ডায়—হা হা হা। ভানু খানিক হেসে নেয় বাসে ওঠার আগে। কাঁথি থেকে বালিমুণ্ডার বাস মিলবে। আপাতত তারা কাঁথি চলল, বাসে উঠে ভানুর মন খারাপ, শুধু কি বাবুর অশ্ব, আমারও তো।