1 of 2

অলৌকিক জলযান – ৬

।। ছয়।।

এ-বন্দরটা বেশ নিরিবিলি নির্জন। শহর খুব কাছে না হয়তো। বাতিঘর থেকে আলো এসে মাঝে মাঝে তাদের জাহাজে পড়ছে। ছোটবাবু একবার আলোর মুখোমুখি পড়ে চোখে অনেকক্ষণ ঝাপসা দেখেছে। সে ভেবেছিল চুপচাপ ফল্কাতে বসে থাকবে। কিছু পাখী জাহাজে আসতে আসতেই মরে গেছে। লোনা জলের ঝাপ্‌টা কিছু পাখির সহ্য হয়নি। ওরা সে-সব সমুদ্রেই ফেলে দিয়েছে। কোথাকার পাখি, রাজস্থানের কোন অঞ্চল থেকে পাখিগুলো ডারবান যাবে, কি কোথায় যাবে কেউ জানে না। চিড়িয়াখানা-টানায় হবে হয়তো। এটা ওরা আন্দাজে অনুমান করেছিল। পাখিগুলো জলে ভাসিয়ে দিলে ছোটবাবুর এমন মনে হত। কারণ, মরা পাখিরা জলে কিছুটা ভেসেছিল, জাহাজ একটু দূরে গেলেই বড় বড় হাঙর ছুটে আসবে। কত সুন্দর নরম মাংস, ভারতবর্ষের কোথায় এদের বাস ওরা জানে না, তবু সে টের পায় জলের নিচে সেইসব অতিকায় হাঙরের ঘোরাফেরা আর জাহাজ যায়, সেই একভাবে, নীল রঙের সাম্রাজ্যে জাহাজ, সাদা জাহাজ যায় আর যায়। পাখিগুলোর মরা শরীর অনেক দূর থেকেও ভাসতে দেখা গেছিল।

কিছু পাখী মরে যাওয়ায় ফল্কার এদিকটা ফাঁকা। জাহাজ বেশ দ্রুত যাচ্ছে। কারণ জাহাজটাকে সমুদ্র-স্রোত কিছুটা দ্রুত যেতে হয়তো সাহায্য করছে। এখানে সে জানে একটা মৌসুমী স্রোত আছে, মৌসুমী স্রোতের জন্য হতে পারে, বা জাহাজ খুব নিরিবিলি সমুদ্র পেয়েছে বলে প্রায় একদিন আগে লরেঞ্জোমরকুইসে ঢুকে গেছে। আর হাওয়াটা জাহাজের সামনে। পেছনে সে জন্য ধোঁয়া যাচ্ছে। ফানেলের ধোঁয়ায় সারাটা আফটারপিক, ফলকা একেবারে কালো হয়ে গেছে। ছোটবাবু ফলকায় একটু বসবে ভেবেছিল, সকালে ডেক-টিণ্ডাল খুব ভালোভাবে জল মেরেছে, অথচ এখন হাত দিলে ফের কালো ছাপ। সে এখানে বসতে পারল না।

বেশ অন্ধকার এদিকটাতে। যে-কোন কারণেই হোক, মাস্তুলের আলোটা জ্বলছে না। ঠিক বোট- ডেকে এখন মেজ-মালোম আছে। কিন্তু সে গিয়ে দেখল মেজ-মালোম নেই। কেবল বড়-মিস্ত্রি সেজেগুজে কোথাও নেমে যাবে বলে গ্যাঙওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে।

প্রায় একমাস হতে চলল, ওর মনেই ছিল না, এ-জাহাজে বড়-মিস্ত্রি বলে একজন আছে। অথচ সে প্রথম দিন দেখেছে, মানুষটি ক্রাচে ভর করে ডেকে উঠে আসছে। কিনারায় ওর মেয়ে ঠিক করা থাকে। বন্দরে বন্দরে ঘুরে এটা হয়েছে। হয় জেনি, নয় লরা, নয় এলমা এমন কেউ না কেউ আছে। কলকাতা বন্দরে কে থাকে, তার নাম কি? মানুষটা এতদিন কোথায় ছিল! কেবিনে, নিজের ঘরে! সারাক্ষণ মানুষটা সে শুনেছে দাবা নিয়ে বসে থাকে। আর টিপয়ে মদ এবং সে একা দুজনের হয়ে সকাল সন্ধ্যা কখনও গভীর রাত পর্যন্ত দাবা খেলে যায়। মনে হয় সে ঘুমোতে জানে না। সারাক্ষণ জেগে জেগে জাহাজ পাহারা দেবার স্বভাব বুঝি। যখন ভালো লাগে না পোর্ট-হোলে দাঁড়ায়। সমুদ্র যেন পেছনে চলে যাচ্ছে এমন তার মনে হয়। সে সমুদ্রে একটু সময় তাকিয়ে থাকলেই সমস্ত গ্লানি খুব সহজে শরীর থেকে মুছে ফেলতে পারে।

ছোটবাবুর মনে হল এ-মানুষটাই জাহাজে সবচেয়ে বেশী সুখী। বেশি লম্বা নয়, বেঁটেও নয়, গোলগাল মানুষ, গোলগাল বলে যতটা লম্বা দেখানো দরকার তা দেখায় না। মাথায় একটাও চুল নেই। টাকটা এত বেশি মসৃণ আর চকচকে যে কখনও কখনও একটা বরফের বলটল মনে হয়। বোধহয় জাহাজটা এখানে রাত কাটাবে! নয়তো বড়-মিস্ত্রি বের হত না। ওর তো কোন কাজ নেই, কেবল একটা কেবিন, দাবার ছক। ছকটা আবার সাধারণ ছকের মতো নয়, খাঁজকাটা। এতে দাবার বড়েরা পিচিং-এর সময় ছিটকে পড়ে যায় না।

ওর একদিন বড়-মিস্ত্রির ঘরে পাইপ মেরামতের কাজ ছিল। সেদিন বড়-মিস্ত্রি সারাক্ষণ মুখ গুম করে বসেছিল। কি বিরক্ত! ছোটবাবু আর পাঁচ নম্বর মিস্ত্রি কোনরকমে, যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা সেরে বের হলে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়বার মতো। সেই থেকে সে আর মানুষটাকে দেখেনি। তার কোন ওয়াচ নেই। দিনের বেলা সবসময় বয়লার স্যুট পরে থাকে। পেছনের পকেটে একটা লম্বা টর্চ। এটা সে কখনও পকেট থেকে খুলে রাখে না। বড়-মিস্ত্রিকে একটা টর্চ বাদে কিছুতেই ভাবা যায় না।

গ্যাঙওয়েতে সিঁড়ি পড়ে গেলেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে মানুষটা নেমে যাবে। সামনে কি আছে, রাস্তার নাম কি, ট্যাকসি কোথায় পাবে, সব সে জানে। হয়তো এ বন্দরে এই নিয়ে বিশবার এসেছে। তার কাছে বন্দরের ছবি এত স্পষ্ট যে, জাহাজিরা মেয়ে ধরতে গেলে পর্যন্ত ওর কাছে শোনা যায় টিপস্ নিতে। কোন জায়গায় ভালো জিনিস আছে বড়-মিস্ত্রির মতো কেউ বলতে পারে না।

সব শোনা ছোটবাবুর। মানুষটাকে দেখে আবার মনে পড়ে গেল। সে কোনরকমে অন্ধকারে গ্যঙওয়ে পার হবার সময় টের পেল না, আরও একজন দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরে। সে অমিয়। অমিয়, জাহাজ বন্দর ধরছে, আর নেমে যাবার তাল করছে। ছোটবাবুরও ইচ্ছে করছে একবার নিচে নেমে যেতে। যেন কতকাল মাটির স্পর্শ সে পায়নি। পায়ের নিচে মাটি পেলে, আফ্রিকা, আমেরিকা, ইণ্ডিয়া, মনে থাকে না। মাটি, মাটি। মাটি, জননী, এমন শুধু মনে হয়। মানুষের কাছে এর চেয়ে প্রিয় কিছু নেই।

ছোটবাবু অস্পষ্ট অন্ধকারে দেখল, বড়-মিস্ত্রির পিছু পিছু আর একজন নেমে গেল। ক্রেনগুলোর পাশ দিয়ে ডকের বড় বড় লম্বা গুদাম, রেল-লাইন, লাইন পার হয়ে গেটের দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। জাহাজ যখন বাঁধাছাঁদা হয়ে গেছে তখন যে যার মতো বন্দরে নেমে যাবেই। ফোকসালে এসে দেখল, মৈত্র উবু হয়ে চিঠি লিখছে। পাতার পর পাতা লিখছে, এবং একটা বাণ্ডিল বোধহয় করে ফেলবে। কেউ কেউ তাঁকে খুঁজে গেছে। চিঠি লেখাতে দল বেঁধে এসেছিল। সে ভয়ে আর জেগে থাকতে পারল না। যা সব চিঠি, মাঝে মাঝে সে না হেসে পারে না। হাসলে আবার ওরা রাগ করে। সে চিঠি লেখার ভয়ে তাড়াতাড়ি কম্বল গায়ে শুয়ে পড়লে মনে হল, ওপরে কেউ ওকে খুঁজছে। এবং সিঁড়িতে পায়ের শব্দ। কেউ দ্রুত নেমে আসছে। মৈত্র দেখল, মেজ-মালোম উঁকি দিচ্ছে। তাড়াতাড়ি, মৈত্র লাফিয়ে দরজার কাছে গেলে ছোটবাবুর দিকে আঙ্গুল তুলে মেজ যেন কি বলছে।

মৈত্র বলল, স্যার ও ঘুমোচ্ছে।

ছোটবাবু ঘুমোয়নি। সে সব শুনছে। যদি মজার কোন ব্যাপার হয়, তবে বলবে, না স্যার ঘুমোইনি, আর না হলে এখন ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতেই হবে। সে চুপচাপ কথাবার্তা শুনছে কেবল।

সেকেণ্ড বলছে, এত তাড়াতাড়ি ছোট ঘুমিয়ে পড়েছে।

—ওর মনটা ভাল নেই স্যার।

—কেন কেন!

—দেশ থেকে চিঠি আসেনি।

—স্যাড!

—খুব স্যাড। সবার চিঠি এসেছে, চিঠি না এলে কেমন লাগে বলুন!

—খুব খারাপ! খুব খারাপ! তবে তার জন্য মন খারাপ করার কি আছে।

—খুব মন খারাপ করে সন্ধ্যার দিকে চুপচাপ শুয়েছিল। কারো সঙ্গে কোন কথাবার্তা না। যখন খুঁজে বের করলাম তখন দেখি মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে কাঁদছে।

ছোটবাবু এবার আর সাড়া না দিয়ে পারল না। মৈত্রদা ওকে সেকেণ্ডের কাছে একেবারে বালকের সামিল করে ফেলেছে। ওর খুব এতে অহঙ্কারে লাগে। সে উঠে বসল, কম্বল গা থেকে ফেলে বলল, না স্যার, আমি কাঁদিনি। ও বেশি বেশি আপনাকে বলছে।

—তা ঠিক আছে, তুমি যখন কাঁদোনি, ভালো করেছ। জাহাজিরা চোখের জল ফেলে না। ওরা এত বেশি লোনা জল ঘাটে, চোখের জলে সেটা পোষায় না। তোমাকে যা বলছিলাম, তুমি যাবে ওপরে?

—কোথায় স্যার?

—এই জেটিতে একটু ঘুরে আসব।

প্রস্তাবটা মন্দ না। সে বলল, চলুন।

আসলে ছোটর গরম জামাকাপড় কিছু নেই। মৈত্র বলল, আমার সোয়েটারটা গায়ে দে। না হলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। মৈত্র ওর লকার খুলে বেশ ভাল সোয়েটার ঘি ঘি রঙের বের করে দিল। ভীষণ ঢোলা। এবং মৈত্রের প্যান্ট, আরও ঢোলা, তবু শীত মানবে ভেবে ছোটবাবু এসব পরে সেকেণ্ডের সঙ্গে জেটিতে নেমে গেল এবং সত্যি আরাম, আশ্চর্য আরাম। ওরা রেল-ইয়ার্ড পার হয়ে সামনের ইকাগে। রেস্তোরাঁতে বসে গেল—তুমি কি খাবে?

—কিছু না স্যার।

—আরে খাও। নতুন এয়েছ, দ্যাখো না খেয়ে! যাবে একদিন?

—কোথায় স্যার?

—কার্ণিভেলে।

—সেটা কোথায়?

—বুয়েনস এয়ার্সে। ও কি সব ব্যাপার। তোমার মনে হবে, সে একটা ব্যাপার। যাকগে, ড্রিঙ্কসের অর্ডার দিচ্ছি।

ছোটবাবুর আশ্চর্য মনে হল মেজকে। সে এতটা কখনও প্রত্যাশা করে না। ওরা সাহেবসুবো মানুষ। সে সবচেয়ে নিম্নতম মজুরিতে কাজ করে—ওর সঙ্গে মেজ-মালোমের সহৃদয় ব্যবহার কেবল কষ্টদায়ক ঘটনা। মেজ-মালোমকে মনে হয় দার্শনিক, কখনও মনে হয় হিসেবী, আবার কখনও লুচ্চা। এখন কি মনে হচ্ছে সে ভেবে পাচ্ছে না। সে বয়সে ছোট বলে, মসৃণ গাল মসৃণ দাড়ির ভেতর আশ্চর্য একটা লোভ এই সব জাহাজিদের থেকে যেতে পারে। এবং সেটা কতদূর পর্যন্ত গড়াবে সে বুঝতে পারে না, সে অনেক ভেবে বলল, না স্যার। আমি ড্রিঙ্ক করি না।

—তবে কফি খাও। খাবার কি খাবে?

—কিছু না স্যার। এক কাপ কফিই যথেষ্ট!

মেজ পর পর পেগ-পাঁচেক খেয়ে ফেলার সময় দূরে রেল-ইয়ার্ডের পাশে বড়-মিস্ত্রির গলা পাওয়া গেল। খুব বচসা করছে কারো সঙ্গে।

—তুমি শালা ইণ্ডিয়ান, দালাল, কিচ্ছু জান না, এখানে আমাকে বাজারের মাগি চেনাতে এসেছ!

কেউ তখন হেঁকে বলছে, আপনি স্যার ভুল করছেন, আমি দালাল নই। বাজারের সেরা মাগি খুঁজে বের করা আমার পেশা না।

রেল ইয়ার্ডে আলো কম। বেশ দূরে দূরে বাতির থাম। গাড়ি সান্টিঙের শব্দ আসছে। কখনও জেটির পাশ দিয়ে টংলিং টংলিং শব্দ করতে করতে একটা মালগাড়ি যেন সমুদ্রে নেমে যাচ্ছে। অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় না। কেবল বোঝা যায়, আর একটু এগিয়ে গেলেই সমুদ্র। বড়-মিস্ত্রি খুব আজ বেকায়দায় পড়ে গেছে।

আসলে ব্যাপারটা ছিল অন্য রকমের। অমিয় চুপি চুপি বের হয়ে যাচ্ছিল! ওর ইচ্ছা ছিল বড় মিস্ত্রি নেমে গেলেই সে নেমে যাবে। সে গ্যাঙওয়ে থেকে যখন দেখল বড়-মিস্ত্রি, রেল-ইয়ার্ডের ভিতর ঢুকে গেছে, তখন সে নিজেও নেমে গেল। সে এখানে একটু হেঁটে বেড়িয়ে দেখবে, এমন তার আশা। বড়-মিস্ত্রি খুঁড়িয়ে হাঁটে বলে সময় লাগে। অমিয় যেতে যেতে তখন দেখছে, কেউ অন্ধকারে তার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। যদিও এটাকে ঠিক অন্ধকার বলা যায় না, কম আলো, অস্পষ্ট আলোতে সে বুঝতে পারছে না, কে দাঁড়িয়ে আছে। সে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে ভাবছিল, কিন্তু কেউ তাকে ডাকছে। হাত তুলে ডাকছে।

বড়-মিস্ত্রির মনে হয়েছিল, জাহাজ থেকে নামার পরই কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। সে এসব দেশের দালালদের চেনে। ভীষণ টাকার খাঁকতি বেটাদের। জাহাজ এসে নোঙর ফেলেছে, এখন মৌকা, ওঁত পেতে আছে। কে নামছে, কেউ নামলেই সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। আরে বাপু আমাকে শহরের পথঘাট চেনাবে, বাজারের কে কেমন আছে জানাবে। আমি তো সব জানি! মিলড্রেড কি চিঠি পায়নি তাহলে! চিঠি পেলে সে তো না এসে থাকার মেয়ে নয়! সে তো অন্য সময়ে ঠিক জাহাজ বাঁধার আগেই জাহাজঘাটায় এসে দাঁড়িয়ে থাকে। যেন কত সে নিজের মানুষ! যেন বহুদিন সফর শেষে তার মানুষ ঘরে ফিরছে। বড়-মিস্ত্রি এ সব ভেবে সুখ পায়। মিলড্রেড যতই টাকা নিক, তাতে ওর কোন দুঃখ থাকে না।

সে ভেবেছিল, ইণ্ডিয়ান মার্কেটের দিকে যাবে, না পর্তুগীজদের যে বড় গীর্জা আছে, সেখানে, এবং প্রতি রোববারে যে মেলার মতো বসে জায়গাটা, সেখানে যাবে। সেখানে গেলে সে অনেক দিন আগের এসিকে পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু সেই গীর্জায় যাবার পথটা এতদিন পর ভুলে গেছে। ওর হাঁটতে হাঁটতে মনে হয়েছিল, মিলড্রেড জাহাজঘাটায় না এসে অপমান করেছে। সে মিলড্রেডের সঙ্গে আর সম্পর্কে রাখবে না। সে আবার পুরোনো ঘরেই যাবে। পূরোনো জিনিস দামে সস্তা আর শরীরের পক্ষে উপকারী। প্রায় পুরোনো টনিকের মতো, অথবা পুরোনো মদের মতো।

সে অনুসরণকারী লোকটার জন্য অপেক্ষা করল। দালাল মানুষেরা সব খবর রাখে। সে ওদের কাছে ঠিক খবরাখবর পেয়ে যাবে। সে ডাকল। কিন্তু লোকটা আসছে না দেখে, সে হাত তুলে ডাকতে ডাকতে ছুটে গেল।

অমিয় কাছে এলে বুঝতে পেরেছিল বড়-মিস্ত্রি। সে খুব থতমত খেয়ে গেছে। সে বলল, আমি স্যার!

বড়-মিস্ত্রি বলল, ঠিক, ঠিক আছে। তুমি যে দালাল নও বুঝি। দালাল হলেও তেমন লজ্জার কি আছে, তোমার সেজন্য ভয় নেই। বলছিলাম, একটু চার্চের দিকে যাব। তুমি আমার সঙ্গে আসতে

পার।

অমিয় বুঝতে পারল না এমন কেন বলছে! চার্চ কোথায়, কি ব্যাপার সে কিচ্ছু জানে না। সে বলল স্যার চার্চ!

—হ্যাঁ বুঝেছি নেকা সাজতে চাও। তোমরা যারা ইণ্ডিয়ান এখানে থাক কেন যে পর্তুগীজ সরকার রেখেছে বুঝি না। ঠেঙ্গিয়ে সমুদ্রের ওপারে দিয়ে আসতে পারে না। এত মিথ্যা কথা তোমরা বলতে পার!

অমিয় বুঝতে পারল, সে যে একই জাহাজের জাহাজি বড়-মিস্ত্রি স্বপ্নেও ভাবেনি। বড়-মিস্ত্রি কেবিন থেকে বের হয় না। তার সঙ্গে জাহাজের ক্রুদের কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক মেজ-মিস্ত্রির সঙ্গে সারেঙের। সারেঙের আদেশ মতো সব কাজগুলো হয়। সুতরাং অমিয়র মাথায় দুষ্টবুদ্ধি খেলে গেল। সে বলল, স্যার আপনি মহামান্য।

—তুমি মহামান্য আর প্রিন্স অফ ওয়েলস যাই বলে আমাকে সম্বোধন কর না কেন, তাতে একটা পয়সা বেশি পাবে না।

অমিয় বলল, চলুন স্যার গীর্জার দিকে।

—সেই ভাল।

—স্যার আমি কিন্তু মেয়েদের পাড়ায় আপনাকে নিয়ে যেতে পারব না।

—গুলি মার। এসির ঘর আমার জানা আছে। সেখানে আমি যাব। তুমি আমার সঙ্গে থাকবে।

বড়-মিস্ত্রি মনে মনে খুব হাসল। বিদেশে কি করে চলতে হয় সে জানে। এদের কাছে কখনও অজ্ঞতা প্রকাশ করতে নেই। তাহলে এমন সব জায়গায় নিয়ে যাবে, যে আর জাহাজে সময় মতো ফেরা যাবে না। জলের মতো টাকা খরচ করিয়ে দেবে! সুতরাং যেন সেই নিয়ে যাচ্ছে দালাল মানুষটাকে কেবল যেন সঙ্গে একজন লোক থাকলে ভাল, লোক থাকলে সে ভয় পাবে না, মুখ দেখলে সে চিনতে পারে মাল কেমন, অমিয়কে বড়-মিস্ত্রি সেভাবে সঙ্গে নিয়েছে।

বড়-মিস্ত্রি যেতে যেতে বলল, মিলড্রেড কেন যে এল না!

কাল সকালে জাহাজ ছেড়ে দেবে। জাহাজ ছেড়ে দিলে, এ-জীবনে আর মিলড্রেডের সঙ্গে দেখা নাও হতে পারে। তাছাড়া ওকে দেখে বড়-মিস্ত্রি মনে রেখে দেবে না, হয়তো আট-দশ মাস সফরে কি বছরের ওপর হয়ে গেলেও একদিনও না দেখা হতে পারে—আবার দেখা হলেও, অন্ধকারে কাকে দেখেছিল মনে রাখতে পারবে না। সে খুব বিজ্ঞের মতো বলল, না স্যার মিলড্রেডের দোষ নেই। ওরা এখানকার বাস তুলে দিয়েছে।

—তুলে দিয়েছে!

—হ্যাঁ স্যার। আর টাকা-পয়সা হচ্ছিল না। ওরা আরও পশ্চিমে চলে গেছে।

—আমাকে একবার খবর দিতে পারল না! ছিঃ ছিঃ, কি যে করে, তারপর সে দাঁড়াল। টুপিটা মাথা থেকে খুলে আবার ঠিক করে পরল। যেন সে মিলড্রেডকে আর দেখতে পাবে না ভেবে কাতর হয়ে পড়েছে।

—না এটা মিলড্রেডের ভীষণ অন্যায়। ভীষণ। সে আমাকে চিঠিতে অন্তত টাকার কথা লিখতে পারত।

—আমি স্যার দেখা হলে বলে দেব।

—তোমার সঙ্গে দেখা হবে?

—তা হবে না!

—এখানে কত ইণ্ডিয়ান আছে?

—তা বেশ, প্রায় চারভাগের একভাগ আমরা।

—ওকে দেখা হলে বলবে তো, আমি ভীষণ দুঃখিত, কেন ও আমাকে চিঠি না দিয়ে পশ্চিমে চলে গেল। ওকে বলবে, কেন—কেন চলে গেল!

অমিয় আড়ালে মুচকি হেসে বলল, বলব স্যার।

ওরা হাঁটতে হাঁটতে বেশ শহরের ভিতরে ঢুকে গেছে। এদিকটায় কিছু ঘিঞ্জি বস্তির মতো। নিগ্রো বালক-বালিকার মুখ, যুবতীরা হেঁটে বেড়াচ্ছে, কোথাও সিংহের ছবি, কোথাও আদিবাসী রমণীর পোশাকে স্বল্পতা। আর বন্য লতায়-পাতায় ওরা শরীর ঢেকে কেউ কেউ হেঁটে চলে গেল। যেন একটা আদিমতা এ-অঞ্চলে এখনও আছে। বলতে কি নিগ্রো যুবতীদের দেখে অমিয়র ভীষণ ভয় করছিল। সে প্রায় বড়-মিস্ত্রির গা ঘেঁষে হাঁটছে। সে কিছুই চেনে না, আসলে বড়-মিস্ত্রি যেখানে যেখানে যাবে, সেও তার সঙ্গে সেখানে সেখানে যাবে বড়-মিস্ত্রি এমনই চাইছে। এবং বড় মিস্ত্রি হাঁটতে হাঁটতে কেমন একসময় বলল, এস একটু বসি কোথাও।

—আপনি যে এসির ঘরে যাবেন বলেছিলেন?

—ধুস্ এসি! মিলড্রেডের জন্য মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।

অমিয় দেখল, বড় মিস্ত্রি হেলায়-ফেলায় টাকা খরচ করতে পারে। জাহাজ বেঁধে ফেলার আগেই কোথা থেকে সে যে এত পয়সা পেল বুঝতে পারছে না। বেশ খেয়ে কেমন ঝিম মেরে থাকল কিছুক্ষণ, তারপর অমিয়র দিকে তাকিয়ে বলল, এই যে ইণ্ডিয়ান, তুমি ভালো, খুব ভালো। তুমি আমার জন্য যা করলে কোনদিন ভুলতে পারব না।

অমিয় বলল, তবে চলুন স্যার জাহাজঘাটায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

—একটা ট্যাকসি দ্যাখো পাও কিনা!

অমিয় ট্যাকসি ডেকে বড়কে বসিয়ে দিল। এবং রেল-ইয়ার্ডে ঢুকেই বলল এবারে আপনি যান স্যার। কাল আছেন তো। কাল আবার দেখা হবে।

এখানেই গণ্ডগোলটা বেঁধে গেল। দুজনেই মাতাল। তবে অমিয় খায়নি বেশি। সে এ-ব্যাপারটা দেশে বেশ রপ্ত করেছিল, এবং এজন্য ওর দাদাদের সঙ্গে বনিবনা হত না। লেখাপড়া হল না। ওকে ওর বাবা মিশনারি স্কুলে পড়িয়েছিল, এখন একেবারে বেহেড মাতালের ভূমিকায় অভিনয় করা ঠিক না। সে তার মায়ের কাছে সব সময় নির্দোষ থাকতে চেয়েছে, কারণ তার মা তাকে শেষ পর্যন্ত ঘৃণা করত না। এমন কি আসার সময় শুকনো খাবার মুড়িমোয়া সব করে দিয়েছিল, সে এভাবে জানে কি করে মানুষের অন্তরে ঢুকে যেতে হয়। কেবল লীলাবৌদি, রমাবৌদির ভেতর সে ঢুকে যেতে পারেনি। ওদের তাড়নাতে সে শেষপর্যন্ত বাড়ি ছেড়েছে। বাড়িতে সে একদণ্ড থাকতে পারত না। সে এখন দাঁত-মুখ কেমন শক্ত করে ফেলল এবং বাজারে-মাগি মিলড্রেডকে মনে হয় না, নিজের বৌদিদের সম্পর্কে সে এই কটূক্তি করতে ভালবাসে! বাজারে-মাগিদের মুখ যেন এর চেয়ে বেশি ভাল হয়।

বড়-মিস্ত্রি বলল, আমাকে তুমি কোথায় নিয়ে এসেছ?

—এই তো স্যার, রেল-ইয়ার্ড, ডানদিকে কয়লার সুট। দেখুন না, কয়লা কেমন জাহাজের বাংকারে ঢুকে যাচ্ছে। সামনেই তো আপনার জাহাজ—এস-এস সিউল ব্যাঙ্ক লেখা।

—এটা চেসটনের রাস্তা, না?

—না স্যার। এটা বন্দরের রাস্তা। আপনার জাহাজে উঠে যাবার রাস্তা।

বড় মিস্ত্রি ট্যাকসি থেকে নামছে না।—কিন্তু আমার যে মিলড্রেডের কাছে যাবার কথা।

–সে তো নেই স্যার।

–নেই? কেন নেই? এবার সাঁ করে দরজা খুলে বের হয়ে এল। আলবৎ সে থাকবে। তুমি অন্য মেয়েদের কাছে নিয়ে যাবার জান্য দালালি করছ।

—তা না স্যার। সত্যি বলছি।

—দালালেরা আবার সত্যি কথা বলে! বলে তিনি সামান্য হাসলেন। তারপর ক্রাচের ওপর ভর করে মাথাটা কেমন নুইয়ে দিলেন।—কি সুন্দর রাত! মিলড্রেড পশ্চিমে গেছে। আমি শালা কাল জাহাজ ছেড়ে পশ্চিমে চলে যাব।—তুমি শয়তান, আস্ত শয়তান। তোমার জন্য আমার মিলড্রেডের সঙ্গে দেখা হল না। বলে বড়-মিস্ত্রি ক্রাচে শরীরটা এলিয়ে দিয়ে দুঃখী মানুষের মতো মুখ করে রাখল।

অমিয় দেখল, খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এখন পালানো দরকার। অন্য কেউ নেমে এলেই ওকে চিনে ফেলবে। জাহাজ সামনে। ফার্লঙের মতো পথ। সে এখন অন্য পথে জাহাজে উঠে যাবে। আগে ওঠাই নিরাপদ। সে রেল-ইয়ার্ড ধরে হাঁটতে থাকল। এবং শোনা যাচ্ছে বড়-মিস্ত্রি এবার জোরে জোরে চিৎকার করছে—তুমি বাস্টার্ড ইণ্ডিয়ান, দালাল, কিচ্ছু জন না, এখানে আমাকে বাজারের মাগি চেনাতে এয়েছ!

অমিয় তখন দূর থেকে হেঁকে বলছে, আপনি স্যার ভুল করছেন, আমি দালাল নই। বাজারে মাগি খুঁজে বের করা আমার পেশা না।

—তুমি সৎ, তুমি ভালো, শুয়ারকা বাচ্চা। বেজন্মা, ইতর।

মেজ-মালোম এবং ছোটবাবু তখন ফিরছিল জাহাজঘাটার দিকে। দেখল একা একটা ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বড়-মিস্ত্রি। আর টলছে। মুখ টুপিতে ঢাকা। মেজ-মালোম জানে বন্দর এলে বড়-মিস্ত্রি জাহাজে থাকে না। তার বাঁধা ঘর আছে। ওরা এসে ওকে নিয়ে যায়। সেই যৌবনের প্রথম থেকে কাজ করতে করতে এটা হয়েছে। অথচ বড় আজ এখানে একা। সে বলল, স্যার আপনি?

—তুমি কে হে?

—আমি সেকেণ্ড অফিসার ডেবিড় ম্যাকমবার

—ডেবিড্‌!

—হ্যাঁ স্যার।

—তুমি জাহাজে ফিরছ?

—হ্যাঁ স্যার।

—সঙ্গে কে আছে?

—আমাদের ছোটবাবু।

—ছোটবাবু! সে ভ্রু কোঁচকালো।

—জাহাজেই কাজ করে।

বড়-মিস্ত্রি ভেবেছিল, মেজকে সব ভেঙে বলবে। এক শয়তান ইণ্ডিয়ানের পাল্লায় পড়ে সে আজ যথাসর্বস্ব খুইয়েছে। তার যা ছিল সঙ্গে ট্যাকসিতে টিপসে গেছে। বড়-মিস্ত্রি যে এক সময় খুশি হয়ে অমিয়কে জেব খালি করে দিয়েছিল সে-সব আর মনে নেই। তার কিছু নেই। একেবারে খালি। চোট্টা ইণ্ডিয়ানটারই কাজ। অথচ আর একজন ইণ্ডিয়ান সেকেণ্ডের পাশে রয়েছে। তাছাড়া রুচি টুচির বালাই বলতে সেকেণ্ডের কিছু নেই। বড়-মিস্ত্রি নানাদিক ভেবে সব চেপে গেল। তারপর ওদের সঙ্গে টলতে টলতে হাঁটতে থাকল। যেন সে জেটিতে নেমে এসেছিল একটু হাওয়া খেতে। ওকে দেখলে এখন তার চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না।

বড়-মিস্ত্রি এবার গ্যাঙওয়ের নিচে এসে দাঁড়াল। সেকেণ্ডের মনে হল বড় উঠতে পারবে না। নিজেও তেমন শক্ত নয়। ছোট এখন সাহায্য করতে পারে। কিন্তু ছোট ওকে ধরতে গেলে অপমান বোধ করতে পারে। সেজন্যে সে নিজে উঠে গেল একা। কোয়ার্টার মাস্টারকে ইশারা করল হাতে এবং কাছে এলে বড়-মিস্ত্রিকে ধরে তুলে আনতে বলে কেবিনের দিকে হেঁটে গেল!

বড়-মিস্ত্রি নিজের কেবিনের কাছে এসে দেখল দরজা বন্ধ। সে ভেবে পেল না ওর কেবিনে কে এখন থাকতে পারে। দরজায় সে টোকা মারল। কেউ দরজা খুলছে না। বেশ জোরে ধাক্কা মারতেই সে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। আর ভেতরে একেবারে তাজা এক মেয়ে।

সে প্রথমটায় ভূত দেখার মতো উঠে দাঁড়াল। ওর সামনে মিলড্রেড।

—তুমি!

—তোমার তো কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই রিচার্ড?

রিচার্ড একটু ঘাবড়ে গেল। সে খোঁড়াচ্ছিল। সে তার স্বভাবে সেটা স্বীকার করবে না। মিলড্রেড ধরতে গেলে হাত সরিয়ে ঠিকঠাক হয়ে বসে বলল, বুঝতে পারছি না।

—বুঝতে পারছো না মানে।

—মানে, তুমি, কি করে তুমি!

—আমি ঠিকই আমি। জাহাজ একদিন আগে আসবে কে জানত।

—কি করে খবর পেলে।

—সকালে কাগজে দেখলাম। তোমার জাহাজ ভিড়ছে। সাত তাড়াতাড়ি আসা যায় না। সিটি কোম্পানির থার্ড অফিসার এসেছে। ওর সঙ্গে এপয়েন্টমেন্ট। ওটা শেষ করে আসতে দেরি হল।

—দাঁড়াও দাঁড়াও। হড়বড় করবে না। ভেবে দেখছি। সে ভাবতে থাকলে মিলড্রেড বলল, রাখো তোমার ভাবনা। এখন কি বের হবে?

—শরীর ঠিক নেই মিলড্রেড। দরজা বন্ধ করে দাও। এবং এভাবে রিচার্ড কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকল। মিলড্রেড তাড়াতাড়ি তেমন সেজে আসতে পারেনি অথবা শরীরে ধকলের চিহ্ন, মিলড্রেডের পায়ে সাদা মোজা লতাপাতা আঁকা সিল্কের গাউন। সে বাঙ্কে শুয়ে পড়ল। যেন সেও আর পারছে না। পোর্টহোল দিয়ে নীল একটা আলো এসে পড়ছিল, পোর্টহোলের কাচ বন্ধ করে পর্দা টেনে দিল রিচার্ড। তারপর সংক্রামক ব্যাধির মতো একটার পর একটা ঘটনা। সেই ইন্ডিয়ানটাকে গালাগাল। সে আর কিছু বলছিল না মুখে। ওর জাহাজি খিস্তি যা জমা আছে একটার পর একটা এবং এভাবে একটা সে মজা পেয়ে যায়। ঘরের নীল আলো নিভে গেলে ওর মনে হয় একা হাঁটছে এবং এক বাগার ইন্ডিয়ান ওর পেছনে ছুটছে তাকে ধরার জন্য।

সে মিলড্রেডকে বলল, আবার হাতের কাছে পেলে হয়। তারপর শুনতে পায় বাংকারে হড়হড় করে কয়লা নামছে। কি সাংঘাতিক শব্দ। জাহাজ কাল ছাড়ছে। রাতে রাতে বাংকার ভরে যাবে। সকালে জাহাজ ছেড়ে দিলে আবার কবে এই তাজা মেয়ের সঙ্গে শুতে পারবে জানে না। সে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাল প্রথমে ঈশ্বরকে, তারপর সেকেন্ডকে। সেকেন্ড ওকে না ডাকলে সে হয়ত আর একবার চেষ্টা করত এসির ঘরে যাওয়া যায় কিনা। তারপর ওর ধন্যবাদের পালা, সেই ইন্ডিয়ানটিকে। সে তার জেব সাফ না করে দিলে, ঠিক চলে যেত। যে-ভাবেই হোক এসির কাছে চলে যেত। এখন আর ইন্ডিয়ান দালালকে খচ্চর মনে হচ্ছে না, সে ভীষণ তার পক্ষে উপকারী। আবার দেখা হলে ধন্যবাদ না জানিয়ে তাকে পারবে না। খুব আপশোস এখন তার হাতের কাছে সে নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *