1 of 2

অলৌকিক জলযান – ২৮

।। আঠাশ।।

সারা রাস্তায় জ্যাক আর একটা কথাও বলল না।

ছোটবাবু ক্যু দ্য কমার্সে লি জেসমিনে ঢুকে গেল। ডেবিডের এখানে থাকার কথা। একটা টেবিলে মেয়েরা ছেলেরা মদ খাচ্ছে। খাবার খাচ্ছে। কাগজের ফুল মাথার ওপর, রঙবেরঙের বেলুন, ডায়াসে একটা মেয়ে মাইকের সামনে হাত পা তুলে নাচছে। গান গাইছে। পোশাক বলতে সামান্য হাল্কা পোশাক এবং হাত তুললে, পা তুললে প্রায় মেয়েটার গাউনের ভেতর থেকে সব দেখা যাচ্ছে। সে এসব দেখলে ভেতরে ভেতরে মজা পায়, এবং ওপরে ওপরে কেমন একটা পাপবোধ কাজ করতে থাকলে সে ভালভাবে তাকাতে পারে না। যেন সে এসবের কিছুই দেখছে না। কেবল ডেবিডকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

কোনো টেবিলে ডেবিড নেই। একটা টেবিলে মেয়েরা ছেলেরা গোল হয়ে বসে আছে। ওরা জাহাজি হয়তো। ওদের হাতে রঙবেরঙের তাস, আসলে ওগুলো তাস নয়, মেয়েদের ছবি। ছবির মেয়েরা এখানে এসে জড় হয়েছে। দু-একজন, মেয়েদের বগলদাবা করে বের হয়ে যাচ্ছে। সেই গর্ভিনী তিমি শিকার করে ফিরে আসার মতো নাবিকের মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠছে। ছোটবাবু বুঝতে পারল ডেবিড কাউকে বগলদাবা করে আগেই বের হয়ে গেছে তবে।

ছোটবাবু গাড়ির দরজা খুলে ঢুকে গেল ভেতরে। বলল, নেই।

জ্যাক হাঁ বা হুঁ কিছু বলছে না।

ছোটবাবু অগত্যা ড্রাইভারকে বলল, পোর্ট-এরিয়াতে চলুন।

ওরা পোর্ট-এরিয়াতে নেমে গেল। এখানে দু’পাশে ফাঁকা জমিন, পাহাড়। সি-ম্যান মিশনের পাশ দিয়ে ওরা জেটিতে নেমে গেল। সেই সব বড় বড় ক্রেনের ছায়া। দুটো একটা কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। জাহাজে কোথাও ব্যাণ্ড বাজছে। কোনো জাহাজে কাপ্তানের জন্মদিন হয়তো পালন করা হচ্ছে, অথবা দেশের কোনো উৎসবের ব্যাপার অথবা জাতীয় সঙ্গীত গাইছে কেউ।

ছোটবাবু গাড়ি থেকে গুনে গুনে সব নামাল। জ্যাক এবং সে একগাদা লট-বহর নিয়ে অস্পষ্ট অন্ধকারে ঠিক দুটো মাকড়সার মত সিঁড়ি ধরে জাহাজে উঠে যাচ্ছে। সারা রাস্তায় জ্যাক কোনো কথা বলল না। কথা না বললেই ভয়। জ্যাক আবার কি করে বসবে! সে জ্যাকের কেবিনে সব পৌঁছে দিল। এমন কি জ্যাক যে ওর জন্য দামী স্যুট কিনেছে তাও।

ছোটবাবু নিজের কেবিনে নেমে এল। জ্যাক একবার বলল না এটা তোমার, এটা নিয়ে যাও। বোধহয় এত রেগেছে জ্যাক, যে সে আর ওটা ওকে দেবেই না। দু-চার মাস গেলে জ্যাক আরও লম্বা হয়ে যাবে, তখন অনায়াসে সে নিজেই পরতে পারবে। ছোটবাবু এ-নিয়ে আর কিছু ভাবল না।

তখন আর্চি দরজা ফাঁক করে চেঁচাচ্ছে – বয়!

বয় এলে বলল, স্টুয়ার্ডকো মাংতা।

স্টুয়ার্ড এলে বলল, ওয়ান বটল্ মোর।

স্টুয়ার্ডের মুখ ভীষণ সাদা। সে এখন দেবে কোত্থেকে। সব তো সিল করা। কাস্টম দেখেশুনে সব সিল মেরে গেছে। তবু সে বুঝতে পারল, যে ভাবেই হোক ওকে দিতে হবে।

সে বলল, সাব বিয়ার মাংতা।

—আঃ ড্যাম ইয়োর বিয়ার!

এক কেস বিয়ার সে আলাদা রেখেছে। কিন্তু মুখের যা অবস্থা। মেজ-মিস্ত্রিকে যেন মদ না দিলে এক্ষুনি ওর পাছায় লাথি বসিয়ে দেবে। এবং মুখের যা গঠন! আর এইসব দাগ, এই মলমূত্রের দাগ আর ওর দাম্ভিকতা সব মিলিয়ে স্টুয়ার্ডকে ভাবনায় ফেলে দিল। সে পার্ক-সার্কাসের মানুষ। তিন পুরুষ পার্কসার্কাসে। উর্দুভাষী মানুষ। বাঙালীদের সঙ্গে ভালো বাংলা বলতে পারে না, সাহেবদের সঙ্গে ভালো ইংরেজী বলতে পারে না, পারে না বলেই সাহেব ধরে আনতে বললে বেঁধে নিয়ে আসে। বাইরে কোথাও যদি পাওয়া যায়। পোর্ট-এরিয়াতে পাওয়া মুশকিল। সে আর কি করে! সাহেবকে খুশি না করতে পারলে রাতে সে ঘুম যেতে পারবে না।

সে তার অসুস্থ শরীরে ছোটবাবুর কেবিনের পাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল। অসুস্থ এই জন্যে, বোধহয় সামান্য হাঁপানি আছে। এবং একটা টান রয়েছে গলার কাছে। কি করে ছাড়পত্র পায় জাহাজে—এটা জানা থাকলে বোধহয় এখন এমন ছোটাছুটি করতে হত না স্টুয়ার্ডকে। যেমন জাহাজ তেমনি তার সব মানুষজন। সেকেণ্ড-কুক যদি না ঘুমোয়। সে খৃষ্টান মানুষ, বাল-বাচ্চা আছে। সস্তায় মদ দু-এক বোতল সে নিজের ঘরে রেখে দেয় এবং সময়ে সে অফিসারদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে থাকে। মিড- সিতে এটা প্রায়ই হয়, এবং এটা সেকেণ্ড-কুকের ভালো একটা ব্যবসা। সে সেকেণ্ড-কুকের ঘরে এসে বলল, সেকেণ্ড-এনজিনিয়ার ঝুটুমুট ঝামেলা কিয়া হায়। তোমরা পাশ একঠো পাঁইট হোগা?

স্টুয়ার্ডকে মান্য করতে হয়। সে সেকেণ্ড-কুক জাহাজের। স্টুয়ার্ডের মর্জি হলে অন্য সফরে ওকে চিফ-কুক বানিয়ে নিতে পারে। সে বলল, হায় লিজিয়ে। এবং প্রায় কাছা খিঁচে ছুটে যাবার মতো স্টুয়ার্ড যাচ্ছে। এবং মনে মনে আর্চির ওপর ভীষণ ক্ষেপে যাচ্ছে। বন্দরে এলে কেন যে এভাবে কেবিনে পড়ে থাকা, বাহার মে যেতনা জরুরৎ পিঁও—এতনা ঝামেলা জাহাজ মে কিঁও। সে তবু বোতলটা দিয়ে একেবারে কৃতার্থ মুখে দাঁড়িয়ে থাকল—যেন সে এতবড় একটা কাজ মেজ-মিস্ত্রির জন্য করতে পেরে খুব খুশী।

আর্চি এতসব ভাবে না, এত দেরি কেন হচ্ছে! সে যখন দেখল, স্টুয়ার্ড এনেছে তখন ওর প্রায় মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে বোতলটা তুলে নিল। স্টুয়ার্ডকে একটু হাসতে পর্যন্ত সময় দিল না।

এবং আর্চি চুপচাপ বসে আবার খাচ্ছে। সে আয়নার সামনে বসে ছিল। সে একবার দুপুরে বের হয়েছিল। ডাক্তার দেখে বলেছে—সময় নেবে। কত সময়? ডাক্তার তা বলতে পারেনি। এই মুখ নিয়ে সে বন্দরে যেন আর কখনও নামতে পারছে না। সব দামী দামী মলম এবং ওষুধ এনেছে। কিন্তু কিসে কি হবে সে বুঝতে পারছে না। এমন একটা বন্দরে তাহিতি মেয়েরা—আহা কি সুস্বাদু খাবারের মতো, তারপর কেন যে মনে হয়ে যায়—নো মি বয়। তারপর কেন যে মনে হয়ে যায়—ইউ নটি গার্ল, তারপর কেন যে মনে হয়ে যায় নীল চোখ, নীলাভ চুল, এবং ফুল ফুটছে। ফুল ফুটছে মনে হলেই সে কেমন আর বসে থাকতে পারে না। জাহাজে ক্রমশঃ ফুলটা তার পাপড়ি মেলে দিচ্ছে। পাপড়িতে সূর্যের আলো এসে পড়বে, সমুদ্রের বাতাস লাগবে এবং মধ্যযামিনীতে পাপড়িতে ফোঁটা ফোঁটা শিশিরবিন্দু পড়লে আহা শিশিরবিন্দু, সে উঠে হাল্কা তামাটে রঙের পানীয় মুখের কাছে এনে প্রায় সবটাই ঢেলে দিল গলায়- ঢোক গিলে বলল, শিশিরবিন্দু। ফোঁটা ফোঁটা শিশির বিন্দু। বেশ মনোরম, কচি ভেড়ার মাংসের মতো। শরীরে সুবাস থাকলে দু-হাত-পা ছড়িয়ে তারপর অবিরাম গতিতে সন্তর্পণে মজে যাওয়া। মজে যাওয়া কথাটা বলতে গিয়ে একটা হিক্কা তুলল। মজে যাওয়া, টু দাই হার্টইন দাই …..। এলোমেলো কথাবার্তা। সে পুরো কথা বলতে পারছে না। তবু বলতে হয় বলা। ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথা। এবং জড়িয়ে আসছে কথা। সে আয়নার সামনে দু-আঙুলে নিজের চোখ ফাঁক করে দেখছে। বলছে, ফিল লোনলি। মাচ মাচ! আবার হিক্কা। ইউ নটি গার্ল বি হ্যাপি অ্যান্ড ড্রিঙ্ক। আই ড্রিঙ্ক মাচ, ভেরি মাচ্ সে এই বলে ঘুরে যেতে থাকল। এবং সে বুঝতে পারছে না, ওর পা হাঁটু মুড়ে আসছে কেন। আই লাভ, আই লাভ ইউ নটি গার্ল। অঃ ইউ লাভলি বয়। বয়। বয়। সে কিছুটা বাংকে, কিছুটা নিচের কার্পেটে, কিছুটা কদর্য মুখ ঢেকে রাখার মতো বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকল। দরজা লক করা। অনেক রাতে হুঁশ হলে টের পাবে—সে যা-তা কি সব করেছে কেবিনে।

তখন মনে হবে, সে মেজ-মিস্ত্রি আর্চি। তার পজিসান প্রায় কাপ্তানের পরে। বড়-মিস্ত্রি চলে গিয়ে তাকে এ সুবিধা করে দিয়ে গেছে। সে নিজের মাতলামি দেখে সামান্য ঘাবড়ে যাবে।

ছোটবাবু তখন মৈত্রদাকে খুঁজতে এসে দেখল সে কেবিনে নেই। অমিয়, মৈত্র জাহাজে এখনও ফেরেনি। তাকে দেখলেই পিছিলে সবাই জড় হতে থাকে। কথা বলার জন্য সবাই তাকে ঘিরে নানারকমের প্রশ্ন করে যায়। অসময়ে ছোটবাবু পিছিলে এসেছে—কি ব্যাপার। তখন ছোটবাবু, মৈত্র এবং অমিয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানল সেই যে গেছে ফেরেনি। ডেবিডের কেবিনে এসে দেখল সেও নেই। দু’বার ডেকে সাড়া পেল না। পোর্ট-হোল দিয়ে উঁকি মারল—না সেও ফেরেনি। এতরাতে না ফেরায় ছোটবাবুকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাল। ওরা শহরে এত রাতে কি করছে!

সে গ্যাঙ-ওয়ে ধরে নেমে এল। পোর্ট-এরিয়া একেবারে নিরিবিলি। শুধু জাহাজগুলো দাঁড়িয়ে আছে। সে একা একা হেঁটে গেল। অস্পষ্ট আলোতে ক্রেনের নিচে কাউকে যেতে দেখলেই কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্য জাহাজের নাবিক। বেশ মাতাল হয়ে ফিরছে। কারো গলায় লারে লারে গান। কি ভাষা, কোন দেশের মানুষ, বোঝার উপায় থাকে না। কেবল দেখলে মনে হয়, জাহাজে এসে সবাই বড় মনোটনিতে ভুগছে। মাতাল হয়ে সবাই সব ব্যর্থতা ভুলে এখন জাহাজে উঠে যাচ্ছে। সবার ব্যর্থতা সেই ডেবিডের মতো। কোনো গ্রহান্তরে স্ত্রী-পুত্র আত্মীয়-স্বজন ফেলে এসে কোনো মেয়ের সান্নিধ্যে সব ভুলে থাকতে চায়। এমন মনে হলে সবার জন্য ওর মায়া হয়। মৈত্রদাকে দুটো কড়া কথা বলবে, মনে থাকে না। এমন শরীর নিয়ে কি দরকার ছিল এ-সবের। এবং তখনই মনে হল, দুজন মাতাল মানুষ গলা জড়াজড়ি করে ফিরছে। সে বুঝতে পারল অমিয় এবং মৈত্র। সে ওদের কাছে গেল না। কাছে গেলে ধরা পড়ে যাবে এবং অস্বস্তিতে পড়ে যাবে ওরা। পরে এল ডেবিড। অনেক দূর থেকে ওর মাতাল গলায় গান সে শুনতে পেল। ভীষণ চেঁচাচ্ছে। আর এভাবেই এইসব নাবিকেরা, বন্দরে রাত যাপন করে থাকে। কাপ্তান হয়তো জেগে বসে থাকেন, লক্ষ্য রাখেন কে কে ফিরল। কেউ মাতাল অবস্থায় সিঁড়ি ধরে উঠতে না পারলে তাকে তুলে আনা হয়। চ্যাংদোলা করে সবাই তাকে তুলে এনে বাংকে ফেলে রাখে। ছোটবাবু দেখল, ডেবিড সিঁড়ির কাছে এসে ওপরে উঠতে ইতস্তত করছে। সিঁড়ি ধরে সে উঠতে পারছে না। এবং সিঁড়ি ধরে উঠতে না পারলে যা হয়, নিচে সিঁড়ির গোড়ায় চুপচাপ বসে থাকে। ডেবিডও বেশ জায়গা সাফ করে বসে পড়বে বুঝি। তখন ছোটবাবু ওর হাত কাঁধে তুলে নিয়ে বলল, এস।

–কে ও?

—এস। চিৎকার করবে না। ষাঁড়ের মতো এতক্ষণ চেঁচাচ্ছিলে কেন!

—চিৎকার করছি। ষাঁড়ের মতো! আমি! কখখনও না।

—বেশ, করছ না। এখন উঠে এস।

—কি উঁচু! আমি একটা পাখি হয়ে যেতে পারি। দেখবে!

—না দেখাতে হবে না। দেখাতে গেলে সে সত্যি পাখির মতো উড়তে চাইবে। অর্থাৎ দু-হাত মেলে ডাইভ দেবে, ডাইভ দিলে জাহাজ আর জেটির ফাঁকে পড়ে যাবে। আর জীবনে উঠতে হবে না।

এনজিন সারেঙ তখন ফোকসালে বসে তাঁর পবিত্র গ্রন্থের পাতা উল্টে যাচ্ছেন। এখন তাঁর সবই প্রায় মুখস্থ। তিনি চোখ বুজে সব বলে যেতে পারেন। উচ্চারণ এবং শব্দের ভেতর এক অলৌকিক ব্যাপার থেকে যায়। সারারাত তিনি এভাবে তার সব সুরা অথবা আয়াত এক এক করে গম্ভীর গলায় যেন বলার ইচ্ছে হে মানুষেরা বলো : আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেসব কার জন্যে; তিনি নিজের ওপরে বিধান করেছেন করুণা; নিঃসন্দেহে কেয়ামতের দিন তিনি তোমাদের একত্রিত করবেন। বলো, আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা আল্লাহ্ ভিন্ন আর কাউকে কি আমি রক্ষাকারী বন্ধুরূপে গ্রহণ করবো? আর যদি আল্লাহ্ তোমাদের দুঃখ দিয়ে স্পর্শ করেন তবে তা সরিয়ে নেবার তিনি ভিন্ন কেউ নেই; আর যদি তিনি তোমাদের স্পর্শ করেন শুভকর কিছু দিয়ে তবে নিঃসন্দেহে তিনি সব কিছুর ওপরে। এভাবে সারেং-সাব নিজের ভেতরে ডুবে যান। তাঁর কোনো তখন আর আকাঙ্ক্ষা থাকে না। সারা দিনমান এই যে অমানুষিক পরিশ্রম সব মনে হয় তাঁর সেই জ্ঞানী ঐশী শক্তিকে স্পর্শ করার জন্য।

মজুমদার, বংকু, ইয়াসিন, মনু এখন ফোকসালে বসে তাস খেলছে। বাদশা মিঞা উপুড় হয়ে দেখছে তাস খেলা। চা আসছে মাঝে মাঝে। এখানেও রয়েছে এক ঐশীশক্তিসম্পন্ন মানুষ। নিজের সে একটা জগত তৈরি করে নেয়। মাথার ওপর ছাদ, তার ওপরে নীল আকাশ এবং নক্ষত্রমালার কথা মনে থাকে না। মনে থাকে না পৃথিবী একটা গ্রহ, লক্ষ কোটি গ্রহের ভেতর সে আছে এবং এই যে আকাশের নীহারিকাপুঞ্জমালা, তার ভেতর থেকে এখন এক নিরিবিলি বন্দরে চারজন মানুষ তাস খেলছে ভাবতে ভৌতিক লাগে। সব ক্রিয়াকলাপই এখন অর্থহীন।

অথবা যদি ভাবা যায় গ্রহ-নক্ষত্রের মতো পৃথিবী আপন অক্ষরেখায় ঘুরছে—পৃথিবীর বার্ষিকগতি আহ্নিক গতি আছে, একটা কমলালেবুর মতো ওর গড়ন—সমুদ্র-পৃষ্ঠে একটা সাদা জাহাজ, একটা এজন্য যে পৃথিবীতে যারা সিউল-ব্যাংকের নাবিক তারা পৃথিবীতে একটা জাহাজের কথাই ভেবে থাকে—আর কিনা সেই ছোট্ট জাহাজ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পৃথিবীর সমুদ্র-পৃষ্ঠে ভেসে ভেসে তাহিতি নামক এক সুন্দর দ্বীপে এসে পৌঁছে গেছে। ওদের তাসখেলা দেখলে, কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা বোঝা দায়। ইয়াসিন তখন ট্রাম বলে চেঁচিয়ে উঠেছিল। কে বলবে পৃথিবী গ্রহ তখন। কে বলবে, এই সৌরজগতে ওরা প্রায় অস্তিত্বহীন। কিছু আসে যায় না এতবড় সৌরলোকে কোন ঐশীশক্তি কি ট্রামকার্ড হাতে রেখে খেলছে!

অবাক, ওদের খেলা, ওদের খেলায় নিবিষ্টতা এবং এই যে চা এল, কেউ শুকনো পান খাচ্ছে দুটো শুকনো সুপুরি দিয়ে, মনেই হবে না দেখে তারা কোনো অংশে কম সুখে আছে। সকালে জাহাজ ছাড়বে, ওদের খেলা দেখলে একেবারেই তা মনে হচ্ছে না। গ্রহ নক্ষত্র পৃথিবীর অবস্থান অথবা এই সমুদ্র তার বিশালতা ঝড় টাইফুন সবই অকিঞ্চিৎকর তাদের কাছে। তাস খেলার মতো প্রিয় আর কি আছে পৃথিবীতে তারা জানে না। এও এক ঐশীশক্তি—তাদের সব দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছে।

তখন ডেক-সারেঙ, ডেক-টিণ্ডাল ঘুমিয়ে আছে বাংকে। ওদের নাক ডাকছিল। ভাণ্ডারী জ্যাঠা তখন লুঙ্গি পাল্টে নিচ্ছেন। সবার খাওয়া না হলে তিনি নামতে পারেন না। এখন হয়তো মুখ ধুয়ে সামান্য আফিং খাবেন। এক বিন্দু এই আফিং তাঁকে সারারাত কত রকমের স্বপ্নের ভেতর যে ডুবিয়ে রাখবে। যেন সারাদিন এই যে পরিশ্রম, এই সামান্য আরামটুকুর জন্য। কেউ এসে বিরক্ত করলে চিৎকার চেঁচামেচি লাগিয়ে দেবেন। অথবা মনে হবে কুরুক্ষেত্র, এমনকি সারেঙ-সাব পর্যন্ত এসময় ওকে ঘাঁটান না। তিনি খুব নিবিষ্টতার সঙ্গে সামনে জলের গ্লাস, এক বিন্দু আফিং রেখে পা ভাঁজ করে বসলেন। তারপর জল মুখে আফিং-এর বিন্দু গলায় ছেড়ে দিয়ে চোখ বুজে ফেললেন। যতক্ষণ ঝিমুনি না আসবে এভাবে বসে থাকবেন। ঝিমুনি এলে কাত হয়ে শোবেন। তারপর কি সব নানারকমের উদ্ভট সব দৃশ্য, এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে তাঁর মনেই হয় না বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে আর কি লাগে!

এভাবে সব বাংকেই কিছু না কিছু হচ্ছে। কেউ হাসছে। কেউ ফিসফিস করে বন্দরে কিসব করে এল, পাশের জাহাজিটিকে বলছে এবং ঘুম আসছে না বলে বারবার হাই তুলছে।

ছোটবাবু একা দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাই উঠছিল। ঘুম পাচ্ছিল। এবং সবার মতো এখন এ জাহাজে একটা পাখি একমাত্র তার ঐশী-শক্তি। কারণ ওর মনে হয়েছিল পাখিটা ঠিক ফিরে আসবে। হয়তো গোপনে মাস্তুলের ডগায় পাখিটা বসে রয়েছে। তার ঘুম পাচ্ছে, তবু সে এলি-ওয়ে ধরে হেঁটে গেল। মাস্তুলের নিচে দাঁড়িয়ে দেখল, পাখিটা নেই। পাখিটা সত্যি ফিরে গেছে। সে আর আসবে না। লেডি- এ্যালবাট্রস নিজের মতো আশ্রয় খুঁজে পেয়ে গেছে। পাখিটার জন্য আর তাকে উচ্ছিষ্ট হাড়-মাংস সংগ্রহ করে রাখতে হবে না।

সে একা একা ফিরে গেল। জাহাজে উঠে অদ্ভুত স্বভাব গড়ে উঠেছে। ডাঙ্গায় তার এভাবে কোন পাখি না থাকলে এত একা একা লাগে ভাবতে পারত না। সে একা একা যখন যাচ্ছিল, যখন চারপাশে এলি-ওয়ের আলো, যখন মেন-এনজিন চলছে না বলে পায়ের শব্দে টের পাওয়া যাচ্ছে একজন অসহায় মানুষ একা একা হেঁটে যাচ্ছে, সামান্য শব্দেই মনে হচ্ছে অতিকায় ঘটনা ঘটছে জাহাজে তখন বনি ওপরে পোর্ট-হোলে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে। বনির কিছুতেই ঘুম পাচ্ছিল না। তার শরীরে সুন্দর পোশাক। নীল রঙের গাউন পায়ের পাতা পর্যন্ত। হাল্কা গাউন। এত পাতলা যে ভেতরের সব কিছু স্ফটিক জলের মতো স্বচ্ছ। সে একা দাঁড়িয়ে আছে। সে ফিস ফিস করে নিজের সঙ্গে কথা বলছে, ছোটবাবু, আমি বনি। মি-গার্ল। আমার ঘুম আসছে না ছোটবাবু।

তখন কাপ্তান স্যালি হিগিনস একটা চিঠি বারবার পড়ছেন।

দুপুরে কাপ্তান স্যালি হিগিনস চিঠিটা পেয়েছেন। হেড-অফিস থেকে ওর নামে জরুরী চিঠি। দুপুরে তিনি চিঠির ভাঁজ খুলে দেখেছিলেন মিস্টার রিচার্ড ফেল ওকে একটা ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছেন। চিঠিটা পড়ে তিনি তখন গুম হয়ে বসেছিলেন। সারাদিন চিঠিটার কথা ভেবেছেন। মিঃ ফেল প্রায় যেন অনুনয় বিনয় করে লিখেছেন এবং যা লিখেছেন এতে তাঁরও ঘাবড়ে যাবার কথা। মিঃ ফেলের পুত্রের কথা চিঠিটাতে ছিল না, কিন্তু বার বার মনে হয়েছে সেই হাসি খুশি মানুষটি আর তেমনটি নেই। জাহাজ স্ক্র্যাপ করার কথা তিনি আর ভাবছেন না। এখন শুধু একমাত্র স্যালি হিগিনসই ত্রাস থেকে তাঁকে রক্ষা করতে পারেন। মিঃ ফেল পুত্রের মৃত্যুর পর আর সিউল-ব্যাংকের লাভ লোকসান দ্বিতীয়বার খতিয়ে দেখেন নি। সিউল-ব্যাংক যদি সমুদ্রে ডুবে যেত, অথবা চড়ায় আটকে থাকত কোথাও—আচ্ছা আপনি স্যালি হিগিনস পারেন না, সিউল-ব্যাংককে কোন চড়ায় তুলে দিতে—এমন একটা অনুনয়ও যেন চিঠিটার ভেতরে পরোক্ষভাবে ছিল। মিঃ ফেল কোম্পানীর কর্তাব্যক্তি। সিউল-ব্যাংকের পরবর্তী সমুদ্রযাত্রা সম্পর্কে কিছু খোলাখুলি খবর পাঠিয়েছেন।

প্রথমে তিনি জানিয়েছেন, মিঃ হিগিনস, আশা করি কুশলে আছেন। তারপর লিখেছেন আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি বৃটিশ ফসফেট কোম্পানীর সঙ্গে আমাদের এক বৎসরের পুরো একটা চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুসারে জাহাজ এখন সমুদ্রেই থাকবে। নারুদ্বীপ, কাকাতিয়া দ্বীপ, ওসানিকআয়ল্যান্ড, সামোয়া, টোঙ্গা, নিউক্যালেন্ডোনা, নিউ হেরিডস, গোয়াম—এসব দ্বীপ থেকে জাহাজ ফসফেট নেবে, এবং অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে, নিউজিল্যান্ডের উপকূলের ছোট ছোট বন্দরে সেসব নামিয়ে দেবে। যদিও দীর্ঘ সফর হয়ে যাবে, তবু আমাদের এখন আর কি করণীয় বুঝতে পারছি না। আপনি আমাদের সুখে- দুঃখে দীর্ঘদিন আছেন, সিউল-ব্যাংক জাহাজ আপনার প্রিয় জাহাজ।

হিগিনস বুঝতে পারেন কর্তাব্যক্তিরা কখনও সহজ কথাটা সহজভাবে লেখেন না। ওঁরা যেন বলতে চান আমাদের দক্ষিণ সমুদ্রেই কাজকর্ম বেড়ে গেছে। সেখানে সিউল-ব্যাংককে না থাকলে চলবে না। এটা কিছুতেই স্বীকার করছেন না, জাহাজকে আর বৃটিশ দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি থাকতে দেবেন না। যত দূরে সম্ভব, জাহাজটাকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। জাহাজ যত উত্তরমুখী উঠতে থাকে যত ইংলিশ-চ্যানেলের কাছে চলে যায় তত হেড-অফিসে উত্তেজনা দেখা দেয়। নানাভাবে সব এজেন্ট অফিসে তখন চিঠি, কি ব্যাপার জাহাজ কেন এভাবে উঠে আসছে। এশিয়া, আফ্রিকার বন্দরগুলোতে খোঁজ নিন। সিউল- ব্যাংকের জন্য ঠিক কার্গো পেয়ে যাবেন। যদি না পান দেখুন জাভা সুমাত্রা বোর্ণিওতে। সেখানে ঠিক কার্গো পেয়ে যাবেন। যত সত্বর সম্ভব জাহাজের কার্গো দিন। জাহাজ খালি ফেলে রাখবেন না। খালি ফেলে রাখলে কোম্পানীর আর্থিক ক্ষতি।

তারপর লেখা আছে দক্ষিণ সমুদ্র ছাড়া এ-জাহাজ কার্গো পাবে না। সুতরাং দক্ষিণ সমুদ্রে যতদিন সম্ভব বৃটিশ ফসফেট কোম্পানীর হয়ে জাহাজ ভাড়া খাটুক। আশা করি এতে আপনার সায় আছে।

হিগিনস চিঠিটা ভাজ করে রাখলেন। রিচার্ড ফেল ওঁকে নিজে চিঠি লিখেছেন। এবং অফিসিয়াল চিঠি নিশ্চয়ই তিনি নিউ প্লাইমাউথে গিয়ে পেয়ে যাবেন। বোধ হয় মিঃ ফেলের ভয় ছিল কি জানি এত দীর্ঘদিনের সফর যদি হিগিনস করতে না চান এবং তিনি এভাবে জানেন তাঁর ব্যক্তিগত চিঠি অনেক বেশি কাজের হবে। .

হিগিনস ভেবেছিলেন, নিউ-প্লাইমাউথ থেকে খালি জাহাজ যাবে, পোর্ট-মেলবোর্ণে। তারপর কাছাকাছি বন্দর জিলাঙ, সেখানে গম বোঝাই হবে—এবং জাহাজ আবার ভারত মহাসাগর পার হয়ে সুয়েজের ভেতর দিয়ে ঠিক ভূমধ্যসাগর একদিন পার হয়ে যাবে। এবং বে-এফ-বিসকে পার হলে তিনি এতদিনের সমুদ্র-অভিযান, অভিযানই তাঁর কাছে, কারণ এমন একটা ভাঙ্গা জাহাজ নিয়ে সমুদ্রে ঘুরে বেড়ানো ভেলায় চড়ে পাহাড়ী নদী পার হবার মতো। তাঁর কাছে যেহেতু অভিযানের সামিল তিনি অন্তত তাঁর জীবনের অভিযান সফল ভেবে বন্দরে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো জাহজাটাকে স্যালুট জানাতে পারবেন—কিন্তু যেটা সবচেয়ে দুর্ভাবনা, এবং যা নিয়ে তিনি সারাটা দিন ভীষণ উদ্বিগ্ন ছিলেন—বনি জাহাজে এতদিন থাকলে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। তিনি নিজে টের পাচ্ছেন এ জাহাজে কেউ কেউ যেন বাতাসে গন্ধ শুঁকে বেড়াচ্ছে। জাহাজে কোথায় যেন একটা মেয়ে মেয়ে গন্ধ। তখনই তিনি ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েন। এই জাহাজ এবং বনি। বনি এবং এই জাহাজ। কার কথা এখন তিনি বেশি ভাববেন। অথচ চিঠিটা মিঃ ফেলের ব্যক্তিগত চিঠি। কিছুটা শেষদিকে অনুনয়ের মতো। আমাদের বিপদ থেকে ত্রাণ করুন—এমন একটা আর্ত সুর আছে চিঠিটাতে। শেষের দিকে যতই সতর্ক থাকুন মিঃ ফেল ধরা পড়ে গেছেন। লুকেনারের প্রেতাত্মা কোথাও কি সত্যি তবে জাহাজটাতে রয়েছে। কারণ লুকেনারের সেই প্রেতাত্মা চায় না মানুষের হাতে এই জাহাজের হাড়-পাঁজর খুলে নেওয়া হোক। তারপর তিনি নিজেই অবাক, জাহজাটার কথা ভাবতে গিয়ে জাহাজের মতো ভাবতে পারছেন না কেন! হাড় পাঁজরের কথা ভাবছেন। যেন সিউল-ব্যাংক তাঁর কাছে সত্যি মানুষের মতো অনুভূতিপ্রবণ। বোধহয় তিনি মরে গেলে তাঁর আত্মাও এ-জাহাজ থেকে নড়তে চাইবে না। আর তখন দেখতে পেলেন সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে। এলিস! এলিস তুমি! তিনি এলিসকে ধরবেন বলে পাগলের মতো সিঁড়ি ধরে নেমে যেতে থাকলেন। তিনি যত এগিয়ে যাচ্ছেন তত এলিস সরে সরে যাচ্ছে। তখন ডাঙ্গায় কোথাও ঢং ঢং করে বারোটার বেল বাজছে। হিগিনস উন্মত্তের মতো ছুটে যাচ্ছেন।

হিগিনস ডাকলেন, এলিস শোনো।

এলিস ছায়ার মতো কেমন আগে আগে হাঁটছে। এবং আলো অন্ধকারে এত কাছে এলিস যে তিনি হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারেন, তিনি কেবল চাইছেন এলিস ওঁর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলুক। তিনি বললেন, এলিস তুমি বল, তোমার কোন দোষ ছিল না?

এলিস তবু চলে যাচ্ছে। কোন কথা বলছে না। সে টুইন-ডেকে নেমে যাচ্ছে। সে এবার স্টার বোর্ডের এলি-ওয়েতে ঢুকে গেছে। এলিস তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে! তারপর এলিস ঠিক ছোটবাবুর কেবিনের পাশ দিয়ে আবার ওপরে উঠে ঠিক বনির দরজার সামনে অদৃশ্য হয়ে গেল। এখানেই তিনি এলিসকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করার আগে মাথায় আঘাত করেছিলেন। এবং তখন রাত…আর সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঝিমঝিম করতে থাকল। চিৎকার করে উঠলেন, বনি বনি।

বনি দরজা খুলে দেখল বাবা এত রাতে তার দরজায়। বাবার ভীত সন্ত্রস্ত মুখ দেখে বলল, কি হয়েছে! তুমি এত রাতে নেমে এসেছ কেন?

বনির খেয়াল ছিল না। সে সেই হাল্কা পোশাকেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হিগিনসের হুঁশ হল। তিনি যা দেখলেন, বনি বড় হয়ে গেছে, খুব বড় হয়ে গেছে,। বনি ঠিক এলিসের মতো। ঠিক এলিসের মতো বনির রাতের পোশাক। হিগিনস আর চোখ তুলে মেয়েকে দেখছেন না। তিনি সিঁড়ি ধরে ধীরে ধীরে ক্লান্ত পায়ে উপরে উঠে যাচ্ছেন।

আর তখন বনি হতবাক! ছিঃ ছিঃ সে এটা কি করে ফেলল। বাবার সামনে সে একেবারে বে- আবরু। দরজা বন্ধ করে আয়নায় আর দাঁড়াতে সে সাহস পেল না। সংকোচে সে কেমন গুটিয়ে গেল। সে তো ছোটবাবুর কাছে যাবে। বার বার প্রতিদিন সে একবার মনে মনে এ-পোশাকে ছোটবাবুর সামনে বসে থাকে। ফুল ফুটতে থাকলে যে-সব আকাঙ্ক্ষা ফুলের যেমন ফুলেরা রাত জেগে শিশিরের শব্দের মতো ঘুমোয় না তেমনি বনি ঘুমোতে পারে না। ফুলের মতো ছোটবাবু চারপাশে তার ফুটে থাকে।

বনি এই প্রথম নানা কারণে সারারাত চোখ এক করতে পারল না।

আর সকালেই ড্যাং ড্যাং পূজোর বাজনার মতো জাহাজের দড়িদড়া আবার উঠে যাচ্ছে, নোঙর তুলে ফেলা হচ্ছে। কেউ বুঝতেই পারে না জাহাজটার ভেতরে অজস্র দুঃখ, জাহাজটা এইসব দুঃখ নিয়ে ফের সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছে।

বিকেলের দিকে তখন জাহাজ বেশ দূর সমুদ্রে এবং তখনই কেউ যেন হেঁকে যাচ্ছিল, লেডি- অ্যালবাট্রস উড়ছে।

ছোটবাবু উইনচের তলা থেকে বের হয়ে এল। এবং বোট-ডেকে উঠে সত্যি সে বিস্মিত পাখিটা আবার জাহাজের পেছনে উড়ে আসছে। পাখিটা হয়তো ভেবেছে ম্যান-আলবাট্রস এ জাহাজেই কাঠের বাক্সে বন্দী আছে। তাকে সে না নিয়ে ফিরে যাবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *