অলিভার টুইস্ট – ৬

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

অনেক দিন পরে অলিভার যেন স্বপ্ন থেকে জেগে উঠলো। অত্যন্ত দুর্বল, রোগা আর রক্তহীন হয়ে গেছে সে। কোনোরকমে বালিশ থেকে মাথা তুলে কনুইয়ে ভর দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে চারদিকে তাকিয়ে চিঁহি গলায় প্রশ্ন করলো : “আমি কোথায়? এ ঘরে তো ঘুমোইনি আমি।” 

এক বৃদ্ধা একখানা চেয়ারে তার পাশে বসে ছিলেন। অলিভারকে কথা বলতে দেখে তিনি বললেন : “চুপ করো। কথা কইলে আবার তুমি বেহুঁশ হয়ে পড়বে। শুয়ে পড়ো এবার।” 

এই বলে বৃদ্ধা অলিভারের বালিশ ঠিক করে তাকে শুইয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলোতে লাগলেন। অলিভার নিজের শীর্ণ দুর্বল হাত বাড়িয়ে বৃদ্ধার হাতখানা কাছে টেনে নিয়ে এলো কৃতজ্ঞতা জানাবার জন্যে। বৃদ্ধা জলভরা চোখে বলে উঠলেন : “বাছা আমার!” 

অলিভার বিছানায় শুয়ে নিজের মায়ের কথা ভাবতে লাগলো। নিজের মাকে সে কখনো দেখেনি, তবুও নিজের মার ছবি একটা কল্পনা করে নেয় সে। ভাবে, তার মা যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে নিশ্চয়ই এই বৃদ্ধার মতো মাথার শিয়রে বসে দিনরাত সেবা করতেন। 

বৃদ্ধাকে সে খুলে বলে তার মনের কথা। সে বলে : তার মনে হচ্ছে, তার মা যেন করুণাভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে পাশে বসে আছেন। 

এ কথার জবাবে বৃদ্ধা আর কি বলবেন? চোখের জল মুছে তিনি অলিভারকে একটু ঠাণ্ডা শরবত খাইয়ে দিলেন। অলিভার আবার ঘুমিয়ে পড়লো। 

তিন দিন পরে অলিভার একটু উঠে বসতে সমর্থ হলো। 

অলিভারকে ইজিচেয়ারে করে বৃদ্ধা এবার নিজের ঘরে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করলেন। ধীরে ধীরে অলিভারকে সুস্থ হতে দেখে বৃদ্ধা আনন্দে চোখের জল ফেলতে লাগলেন। অলিভার বললো : “আপনি কাঁদছেন কেন?” 

“ও কিছু নয় বাবা, আনন্দে কাঁদছি, আর কাঁদবো না।” বলে তিনি চোখ মুছে ফেললেন। 

অলিভার বললো : “আমার প্রতি অশেষ দয়া আপনার।”

বৃদ্ধা বললেন : “ওকথা বলো না। এখন সুরুয়া খেতে হবে তোমাকে। শরীরটা তাজা করে নাও। ডাক্তারবাবুর কাছে শুনলুম, মিস্টার ব্রাউন্‌লো আজ সকালে তোমাকে দেখতে আসতে পারেন।” 

সস্প্যানে করে সুরুয়া গরম করতে করতে বৃদ্ধা নজর করলেন যে, অলিভার দেয়ালে টাঙানো একখানা তৈলচিত্রের দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আছে। কৌতূহলী হয়ে বৃদ্ধা জিজ্ঞাসা করলেন : “তুমি কি ছবি দেখতে ভালোবাসো?” 

অলিভার বললো : “তা ঠিক নয়। জীবনে ছবি তো বড় একটা দেখিনি! কিন্তু কী চমৎকার ওই ছবিতে মহিলার মুখখানা! এখানা কার ছবি?” 

বৃদ্ধা বললেন : “বলতে কি, আমিও ঠিক জানি না।” 

অলিভার বললো : “চোখ দুটো গভীর বিষাদে মাখা। এখান থেকে দেখে মনে হচ্ছে মহিলা যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন! ছবিখানা যেন জীবন্ত— আমার সঙ্গে কথা কইতে চাইছে, অথচ পারছে না!” 

অলিভারের কথার ধরনে বৃদ্ধা ভয় পেয়ে গেলেন, বুঝি বা অসুখের ঘোরে অলিভারের মাথার কোনো গোলমাল হয়ে থাকবে! তাই তিনি অলিভারকে তাড়াতাড়ি খানিকটা গরম সুরুয়া আর টোস্ট খেতে দিলেন। খাওয়া শেষ হতে না হতেই ঘরে ঢুকলেন মিস্টার ব্রাউন্‌লো। 

অলিভারকে এত রোগা হয়ে যেতে দেখে খুব মুষড়ে পড়লেন মিঃ ব্ৰাউন্‌লো। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন : “কেমন আছো টম্ হোয়াইট?” 

অলিভার বললো : “আমার নাম টম্ হোয়াইট নয় স্যার। আমার নাম অলিভার টুইস্ট।” 

মিঃ ব্রাউন্‌লো জিজ্ঞাসা করলেন : “তবে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে টম্ হোয়াইট বলেছিলে কেন?” 

অলিভার বললো : “এ-কথা তো আমি বলিনি স্যার!” 

মিঃ ব্রাউন্‌লো একনজরে তাকিয়ে রইলেন অলিভারের মুখের দিকে। না, ও- মুখে মিথ্যার একটাও রেখা নেই। অলিভারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে- থাকতে একখানা অতি পরিচিত মুখ মিস্টার ব্রাউনলোর মনে ভেসে উঠলো। তিনি একবার দেয়ালের সেই ছবির দিকে আর একবার অলিভারের মুখের দিকে আঙুল দেখিয়ে বৃদ্ধাকে বললেন : “এদিকে চেয়ে দেখ, বেডুইন্‌–এ কি অদ্ভুত মিল! অলিভার যেন দেয়ালের ওই তৈলচিত্রের জীবন্ত মূর্তি!” 

মিঃ ব্রাউনলোর সেই উত্তেজিত গলা আর তাঁর বিস্ময়ভরা হাবভাব দেখেশুনেই অলিভার কাঁপা গলায় কি যেন বলতে-বলতে বেহুঁশ হয়ে পড়লো। 

***

সেদিনের ওই ঘটনার পর থেকে অলিভারের সামনে মিঃ ব্রাউনলো ও মিসেস্ বেডুইন্‌ ওই তৈলচিত্রের কথা আর তুলতেন না। 

বৃদ্ধার সেবাযত্নে অলিভার খুব তাড়াতাড়ি একেবারে সুস্থ হয়ে উঠলো। সে এখন বেশ চলাফেরা করতে লাগলো। 

দিন সাতেক পরে মিসেস্ বেডুইনের সঙ্গে বসে অলিভার গল্প করছে, এমন সময় মিঃ ব্রাউন্‌লো তাকে লাইব্রেরি ঘরে ডেকে পাঠালেন। 

মিঃ ব্রাউন্‌লোর লাইব্রেরি ঘরের দরজায় গিয়ে টোকা মারলো অলিভার। তারপর তাঁর ডাকে ঘরের ভেতর ঢুকে সে দেখলো, চারিদিকে কাঁড়িকাঁড়ি বই, আর মিং ব্রাউন্‌লো জানালার ধারে বসে একখানা বই পড়ছেন। 

অলিভারকে দেখে হাতের বইখানা বন্ধ করে মিঃ ব্রাউন্‌লো বললেন : “নাও, এখন তোমার আগাগোড়া ইতিহাস বলো। কে তোমাকে মানুষ করেছে? কি করে চোর-বদমাশের দলে তুমি ভিড়লে?” 

পুরোনো জীবনের কথা মনে পড়ায় অলিভারের দু’চোখ জলে ভরে উঠলো। চোখের জল মুছতে মুছতে সবে সে তার কাহিনী শুরু করেছে, এমন সময় দরজায় সজোরে কড়া নাড়ার শব্দ শোনা গেল। ভৃত্য ছুটতে ছুটতে ওপরে এসে বললো : “হুজুর। মিস্টার গ্রীমউইগ্ এসেছেন।” 

—”তাহলে তো ভালোই হলো। যা, চা করে নিয়ে আয়। সে তো আর চা না খেয়ে এখান থেকে নড়বে না।” বললেন মিঃ ব্রাউন্‌লো। 

অলিভার ঘর থেকে যেতে চাইলো, কিন্তু মিঃ ব্রাউন্‌লো তাকে সেখানে থাকতে অনুরোধ করে বললেন : “অলিভার, যে আসছে সে আমার বহুদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার বাইরের আচরণ রুক্ষ হলেও অন্তর খুব মহৎ!” 

এমন সময় লাঠিতে ভর দিয়ে একজন বুড়ো ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন। তাঁর হাতে একটা কমলালেবুর খোসা। 

ঘরে ঢুকেই তিনি গর্জন করে উঠলেন : “এই দেখ! একবার কমলালেবুর খোসার জন্যে একখানা পা খোঁড়া হয়ে গেছে আমার। শেষ পর্যন্ত দেখছি, এই কমলালেবুর খোসার জন্যেই আমার প্রাণটাও যাবে। এ যদি না হয় তো আমি নিজেই নিজের মাথা খাবো।” 

মিস্টার ব্রাউন্‌লো হেসে উত্তর দিলেন : “তোমার মাথাটা এমন বড়ো যে কারও পক্ষেই সেটা খেয়ে ওঠা সম্ভব নয়—তার ওপর তোমার মাথায় পাউডারের যা পুরু প্রলেপ!” 

—“না, আমার মাথা আমি খাবোই,” বলে মিস্টার গ্রীম্‌উইগ্ আরও কি একটা বলতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় অলিভারের দিকে নজর পড়লো তাঁর। কথাটা ঘুরিয়ে নিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন, “ওহে, এ ছোকরাটা আবার কে?” 

মিঃ ব্রাউন্‌লো বললেন : “এই হচ্ছে অলিভার টুইস্ট, যার কথা তোমায় এর আগে বলেছি।” 

অলিভার মিস্টার গ্রীমউইকে নমস্কার করলো। 

মিঃ গ্রীমউইগ্ বললেন : “এরই বুঝি জ্বর হয়েছিলো? দাঁড়াও এই ছোকরাটাই তাহলে কমলালেবু খেয়ে তার খোসাটা ফেলেছিলো। এ যদি না ফেলে তাকে তো আমি আমার মাথা খাবো—ওর মাথাটাও খাবো।” 

মিঃ ব্রাউন্‌লো হাসতে হাসতে বললেন : “না-না, ও ফেলেনি। নাও তুমি এখন বসো।” 

বেশ খানিকক্ষণ গজগজ করে মিস্টার গ্রীম্‌উইগ্ কিছুটা শান্ত হলেন। তারপর অলিভারকে জিজ্ঞাসা করলেন : “কেমন আছো অলিভার?” 

–“অনেকটা ভালো!” অলিভার জবাব দিলো। 

মিঃ গ্রীমউইগ্ আবার কিছু একটা বেয়াড়া টিপ্পনী করতে যাচ্ছেন দেখে মিঃ ব্রাউন্‌ंলো অলিভারকে পাঠিয়ে দিলেন মিসেস্ বেডুইনের কাছে চা হয়েছে কিনা খবর নিতে। 

অলিভার চলে যেতেই মিঃ ব্রাউন্‌লো জিজ্ঞাসা করলেন : “ছেলেটা চমৎকার দেখতে—তাই না?” 

মুখ বেঁকিয়ে মিঃ গ্রীমউইগ্ বললেন : “অতশত জানি নে, বাপু!” 

মিঃ গ্রীমউইগের চোখে অলিভারের চেহারা যে ভালো লাগেনি, তা নয়,— আসলে তাঁর স্বভাবই হলো, বন্ধু মিঃ ব্রাউন্‌লোর প্রত্যেক কথার বিরুদ্ধে কথা কওয়া। খানিকক্ষণ পরে চা নিয়ে এলেন মিস্সে বেডুইন। সঙ্গে এলো অলিভার। 

চা খেতে-খেতে মিঃ ব্রাউন্‌লোকে জিজ্ঞাসা করলেন মিঃ গ্রীমউইগ্ : “তা, এ ছোকরার আদ্যি কাহিনীটা কি?” 

—“তা এখনো জানতে পারিনি। সেটা শোনার জন্যেই তো ওকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছি।” এই বলে মিঃ ব্রাউন্‌লো অলিভারের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি কাল সকাল দশটার সময় আমার কাছে আবার এসো, অলিভার।” 

—“যে আজ্ঞে, স্যার।” এই বলে অলিভার চলে গেল তার নিজের ঘরে।

মিঃ গ্রীমউইগ্ ফিস্‌ফিস্ করে মিঃ ব্রাউন্‌লোকে বললেন : “আমি হলফ করে বলছি, ও আর তোমার কাছে কখনোই নিজের কেচ্ছাকাহিনী বলতে আসবে না। ও ছোকরটা তোমাকে শুধু ধোঁকা দিচ্ছে।” 

মিঃ ব্রাউন্‌লো বললেন : “আমিও হলফ করে বলতে পারি, ও ছেলেটা আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে না।” 

—“যদি ধোঁকা না দেয় তো আমি…” কথাটা শেষ করতে পারলেন না মিঃ গ্রীমউইগ্। উত্তেজনার তাঁর হাতের লাঠিটা মাটির ওপর ঠক্ করে পড়ে গেল।

–“আমি ওর সত্যবাদিতার তরফে আমার যথাসর্বস্ব, মায় জীবন পর্যন্ত বাজি রাখতে রাজী,” বললেন মিঃ ব্রাউন্‌লো। 

—“আর আমি ওর মিথ্যাবাদিতার তরফে বাজি রাখছি আমার মাথা,” এই বলে মিঃ গ্রীমউইগ্ টেবিলের ওপর ঘুষি মারলেন। 

মিঃ ব্রাউন্‌লো অতিকষ্টে রাগ দমন করে বললেন : “আচ্ছা, কার সকালেই দেখা যাবে।” 

মিঃ গ্রীমউইগ্ বিদ্রূপের হাসি হেসে বললেন : “বেশ, দেখো তুমি।” 

ঠিক এই সময়ে এক বান্ডিল বই হাতে নিয়ে মিসেস্ বেডুইন্‌ ঘরে ঢুকলেন। বইগুলো মিঃ ব্রাউন্‌লো সেই দোকানদারকে তাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দেবার জন্যে বলে এসেছিলেন। মিসেস্ বেডুইন্‌ ঘর ছেড়ে চলে যাবার সময় মিঃ বাউন্‌লো তাঁকে ডেকে বললেন : “যে ছোকরা বই এনেছে, তাকে দাঁড়াতে বলো, বেডুইন্।” 

—“সে তো চলে গেছে স্যার।” 

–“ডেকে আনো তাকে। বইগুলোর দাম দেওয়া হয়নি যে এখনো। তাছাড়া কতকগুলো বই বেশি পাঠিয়েছে—সেগুলো ফেরত যাবে।” 

মিসেস্ বেডুইন্‌ তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলেন ছোকরাকে খুঁজতে, কিন্তু ছোকরাকে দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে এলেন। 

মিঃ ব্রাউন্‌লো বললেন : “ভারি খারাপ হলো—বইগুলো আজই ফেরত দেওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া দোকানদার আমার কাছে সাড়ে-চার পাউন্ড পাবে। সেটা তাকে দেওয়া এখনি দরকার।” 

বিদ্রূপের সুরে মিঃ গ্রীমউইগ্ বললেন : “তাহলে অলিভারকে দিয়ে পাঠিয়ে দাও—সে যে ঠিক পৌঁছে দেবে, তা তো জানোই।” 

বন্ধুর বিদ্রূপ সইতে পারলেন না মিঃ ব্রাউন্‌লো। অলিভারকে ডেকে পাঠানো হল আবার। সে আসতেই মিঃ ব্রাউন্‌লো বললেন : “তুমি তো সেই বইয়ের দোকানদারকে চেনো। তাকে কি এই বইগুলো ফেরত দিয়ে আসতে পারবে অলিভার?” 

অলিভার বললো : “হ্যাঁ, ওগুলো আমাকে দিন, আমি এখনি ছুটে দিয়ে আসবো।” 

মিঃ গ্রীমউইগ্ ব্যঙ্গভরে কেশে উঠলেন। মিঃ ব্রাউন্‌লো আর সইতে না পেরে বললেন, “হ্যাঁ, অলিভার, তুমিই বইগুলো ফেরত দিয়ে এসো। দোকানদার আমার কাছে সাড়ে-চার পাউন্ড পাবে—এই পাঁচ পাউন্ডের নোটখানা নিয়ে যাও, দশ শিলিং ফেরত এনো।” 

বই আর টাকা নিয়ে অলিভার বেরিয়ে গেল। পথ বাতলাতে বাতলাতে মিসেস্ বেডুইন্ তার সঙ্গে সদর দরজা পর্যন্ত গেলেন। অলিভারের চলমান মূর্তির দিকে তাকিয়ে তিনি নিজের মনেই বললেন : “ওকে চোখের আড়াল 

করতে আমার মন চায় না।” 

এদিকে মিঃ ব্রাউন্‌লো টেবিলের ওপর তাঁর ঘড়ি রেখে বললেন, “কুড়ি মিনিটের মধ্যেই অলিভার ফিরে আসবে।” 

মিঃ গ্রীমউইগ্ বললেন : “তুমি কি সত্যিসত্যিই আশা করো, ছোকরাটা আবার ফিরে আসবে? এক-সেট নতুন জামা-কাপড় পেয়েছে, এক বান্ডিল দামী বই আর পাঁচ পাউন্ড হাতিয়েছে, এখন ও সিধে গিয়ে ওর পুরোনো বন্ধুদের দলে মিশে তোমাকে উপহাস করবে। ও ছোকরা যদি কখনো এ-বাড়িতে ফিরে আসে তো আমি আমার মাথা খাবো।” 

তারপরেই দুই বন্ধুতে টেবিলের ঘড়ির দিকে চেয়ে নীরবে মুখোমুখি বসে রইলেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। তবুও দু’বন্ধুতে তেমনি ঠায় বসে। তাঁদের নজর ঘড়ির কাঁটার দিকে। কোথায় অলিভার? 

ভর সন্ধ্যেবেলায় আলো জ্বেলে সদর দরজা খুলে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে মিসেস্ বেডুইন্। ভৃত্যেরা বিশবার ছুটে গেছে রাস্তায় অলিভারের খোঁজে, কিন্তু কোথাও তাকে দেখতে পায়নি। বইয়ের দোকানদারও হলফ করে বলেছে যে অলিভার একবারও তার দোকানে আসেনি—বই ফেরত দেওয়া তো দূরের কথা। 

এদিকে দুই বুড়ো সমানে বসে অলিভারের জন্য অপেক্ষা করছেন ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ রেখে। 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *