অলকা
(মেঘদূত)
ওগো জলধর, তোমারই মতো সে কাম্য অলকাপুরী,
বিদ্যুৎসম ললিত ললনা শোভে তার বুক জুড়ি!
ইন্দ্রচাপের মতো বিরাজিছে চিত্ৰসৌধরাশি,
মেঘবারিসীম স্বচ্ছ মানিক ওঠে। সেথা পরকাশি!
প্রাসাদকক্ষে সংগীতধ্বনি মেঘমৃদঙ্গসম,
আকাশচুম্বী অভ্রেরই মতো সে পুরী তুঙ্গতম!
সেথা, নারীর হন্তে লীলাউৎপল, চিকুরে কুন্দকুল,
কৰ্ণে তাদের শোভে নিরুপম শিরীষ-কুসুম-দুল!
আনন তাহার করিছে শুভ্ৰ লোধুরেণুকা মাখি
মাধবীবনের নব কুরুবকে চূড়াপাশ দেছে ঢাকি!
সীঁথিসীমন্ত সাজায়েছে বালা হেম কদম্ব দিয়া,
প্রিয়ের সঙ্গে বিহার করিছে সেথায় যক্ষপ্রিয়া!
তরুরাজি সদা পুষ্পফুল্ল–মহবিহ্বল আলি!
মধুগুঞ্জনে নিত্য রহিছে মুখর বনস্থলী,
সেই অলকার সরোরূহে সদা কমল রয়েছে ফুটে,
মেখলার মতো চারুচঞ্চল মরাল যেতেছে ছুটে!
মনোরম সেথা ময়ূরকলাপ—পোষা ময়ূরের কেকা—
তিমিরবিহীন যামিনী জুড়িয়া জ্যোৎস্না দিতেছে দেখা!
অশ্রু সেথায় ক্ষরে আনন্দে, নাহিকো বিষাদাভার,
মদনশরের দাহন ব্যতীত পীড়ন নাহি রে আর!
প্রণয়কলহ ব্যতীত সেথায় বিরহ কভু না ঘটে,
সেই সে সুদূর কামনার পুর–কল্পলোকের তটে!
জরার প্রহারে অঙ্গ কখনও জর্জর নাহি হয়—
নরনারী সেথা প্রমোদমুখর–চিরযৌবনময়!