৫০
মুনিয়ার সামনে বসে আছেন আতাহার মিয়া। তার মুখ থমথমে। মুনিয়া বলল, ‘কোনো সমস্যা ওসি সাহেব?’
আতাহার মিয়া হাসার চেষ্টা করলেন, ‘নাহ। কী খবর আপনার বলুন?’
‘এইতো। দুঃস্বপ্নের মতো সময় কাটাচ্ছি। আপনিতো জানেন সবই।’
‘হুম।’ বলে দীর্ঘক্ষণ চুপ করে রইলেন আতাহার মিয়া। তারপর বললেন, ‘এই সময়ে কোনোভাবেই আপনাকে বিরক্ত করা ঠিক হচ্ছে না। তারপরও বুঝতেই পারছেন। এটা আমাদের ডিউটি।’
‘জি। আসলে কোনোকিছুর জন্যইতো পৃথিবী থেমে থাকে না। শো মাস্ট গো অন। বলুন আপনি।’
‘আকবর আলীর সাথে ঠিক কি ধরনের ঝামেলা ছিল রফিকুল আলমের?’
‘আমিতো আপনাকে আগেই বলেছি, এসব বিষয়ে আমার খুব একটা কিছু জানা নেই। উনারা স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য। আমি সামান্য এমপ্লয়ী। সো খুব ফর্মাল কথাবার্তা ছাড়াতো আমাদের তেমন কিছু জানার সুযোগ নেই।’
আতাহার মিয়া খানিক চুপ করে থেকে হঠাৎ বললেন, ‘কিন্তু শোনা যায় পরিচালনা পরিষদের কারো কারো সাথে আপনার ইনফর্মাল যোগাযোগও ছিল?’
‘মানে!’ চমকে ওঠা গলায় বলল মুনিয়া।
মানে রফিকুল আলমের সাথে আপনার একটা ঘনিষ্ঠতার কথা বিভিন্ন সময়ে আমরা শুনেছি। তা সেটা হতেই পারে। একজায়গায় কাজ করলে সবার সাথেতো সবার সমান যোগাযোগ বা সম্পর্ক থাকবে না। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেই বিষয়টা আপনি কেন কখনোই স্বীকার করতে চান না?
মুনিয়া নিজেকে যতটা সম্ভব সামলে নিলো। তারপর বলল, ‘দেখুন, আপনি কী শুনেছেন আমি জানি না। এটা এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা উল্লেখ করার মতো বিষয় ছিল না যে সেটা কাউকে আলাদা করে বলতে হবে।’
‘সেই অনুল্লেখযোগ্য এবং অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাই যদি আপনি আমাকে বলতেন?’
মুনিয়া সামান্য কেশে গলার শ্লেষ্মা পরিষ্কার করল। তারপর বলল,
‘আমি এখানে আসার আগে অন্য একটি স্কুলে ছিলাম। সেখানে একটা প্রোগ্রামে উনি চিফ গেস্ট ছিলেন। তখনই ওনার সাথে আমার পরিচয়। প্রোগ্রাম শেষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আমার একটা স্পিস ছিল। উনি সেই স্পিস শুনে খুবই মুগ্ধ হলেন। পরে কারও কাছ থেকে আমার ফোন নম্বরও নিলেন।’
‘তারপর?’
‘তারপর একদিন আমাকে ফোন করে বললেন উনি এই টুমরো’স গ্লোরি স্কুলের গভর্নিং বড়িতে আছেন। সেদিনের প্রোগ্রামের পরই আমার সম্পর্কে ওনার আগ্রহ তৈরি হয়। ফলে খোঁজখবরও নিয়েছিলেন তিনি। ওনার মনে হয়েছে আমি এখানে এলে এই স্কুলের জন্য সেটি ভালো হবে। ইনফ্যাক্ট এই স্কুলে তখন নতুন শিক্ষক নিয়োগ চলছিল।।
‘আচ্ছা।’
‘তো অফারটা আমার জন্য খুবই লোভনীয় ছিল। কারণ আমার আগের স্কুলের তুলনায় এই স্কুলটা বাসা থেকে অনেক কাছে। তা ছাড়া এটি অনেক রিনাউনড একটি স্কুল। সো খুব স্বাভাবিকভাবেই ওনার অফারটা গ্রহণ না করার কোনো কারণ ছিল না। আমি জয়েন করে ফেললাম।’
‘অন্যদের কোনো মতামত দরকার হয়নি? বা কোনো ভাইভা বা অন্যকিছু?’
‘সবকিছুই দরকার হয়েছে। উনি একাতো আর আমাকে এখানে রিক্রুট করার ক্ষমতা রাখেন না তাই না?’
‘তো তখন সবাই রাজি ছিলেন?’
‘রাজি না থাকারতো কোনো কারণ নেই। আমিতো প্রচলিত সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে, পরীক্ষা দিয়েই এসেছি। এমনতো নয় যে কোনো কিছু ছাড়াই আমাকে সরাসরি এখানে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে।’
‘তাহলে আপনার রিক্রুটমেন্টের বিষয়ে রফিকুল আলমকে জড়িয়ে এত ফিসফাস কেন?’
‘কী জানি! হয়তো সবার কাছে উনি আগ বাড়িয়ে আমার নাম প্রপোজ করেছেন বলে।’
‘আপনার কি মনে হয়, যতটা সহজে আপনি এখানে চাকরি পেয়েছেন, অন্য সবাই-ই তত সহজে পায়? এখানে চাকরি পেতে অনেক বড় বড় লবিং লাগে বলেও আমরা শুনেছি। ডোনেশনের কথাও কম-বেশি সবারই জানা। আপনি কীভাবে সেসব কিছু ছাড়াই এখানে এলেন আর জব পেয়ে গেলেন? নাকি রফিকুল আলমই আপনার লবিং ছিলেন?’
‘আই ডোন্ট নো। উনার সাথে এসব বিষয়ে আমার কখনো কোনো কথা হয়নি।’
‘হুম।’ খানিক গম্ভীর হয়ে গেলেন আতাহার মিয়া। তারপর বললেন, ‘ওয়েল, ধরে নিলাম আপনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই চাকরিটা পেয়েছেন। কিন্তু চাকরি পাওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই আপনি কী করে অনেক সিনিয়র শিক্ষককে টপকে দুম করে প্রধান শিক্ষক হয়ে গেলেন? এটাকেও কি আপনি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশই বলবেন?’
এই কথায় যেন খানিক থমকে গেল মুনিয়া। তারপর বলল, ‘এটার আমি কি ব্যাখ্যা দেব জানি না। কারণ আমার ব্যাখ্যা এখানে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়। কিন্তু স্কুল অথোরিটির আমার ওপর এই দায়িত্বটা অর্পণ করার পেছনে নিশ্চয় লজিক্যাল কারণ ছিল।’
‘সেই কারণটা কী?’
‘সেটা স্কুল অথোরিটিই ভালো বলতে পারবেন।’
‘কিন্তু অনেকেই বলছেন এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছেন রফিকুল আলম। তখন রাজনীতিতে ওনার প্রভাবটাও ছিল অন্যদের চেয়ে বেশি। যা পরবর্তীতে নানা কারণে কমে এসেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে কী এমন কারণ যে কারণে রফিকুল আলম বারবার আপনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছেন?’
মুনিয়া শান্ত গলায় বলল, ‘এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। আমার কাছে কখনোই অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি।’
‘কিন্তু অন্য অনেকের কাছেই বিষয়টা অস্বাভাবিক।’
‘আমি এটার উত্তর দিতে পারব না, সরি। আসলে আমার কাছে এর উত্তর নেই।’
আতাহার মিয়া সাথে সাথেই আর কোনো কথা বললেন না। তবে মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন, ‘তবে এবার আপনাকে আমি একটা প্রশ্ন করব, আমার বিশ্বাস সেই প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে আছে।’
মুনিয়া চোখ তুলে তাকাল। আতাহার মিয়া ধীরে ধীরে আলাদা উচ্চারণে স্পষ্ট করে মুখস্থ একটা ফোন নম্বর বললেন। তারপর মুনিয়ার চোখের দিকে স্থির তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ফোন নম্বরটা আপনি চেনেন?’
মুনিয়া খানিক ভেবে ডানে-বায়ে মাথা নাড়াল, ‘মনে পড়ছে না। সব নম্বর আমার পক্ষে মুখস্থ রাখা সম্ভব নয়।’
আতাহার মিয়া একইভাবে বললেন, ‘আপনার মনে পড়ছে না, অথচ এমন একটা ফোন নম্বর আপনি আপনার ফোন থেকে ব্লক করে রেখেছেন। বিষয়টা অদ্ভুত না?’
মুনিয়া এই প্রথম যেন বিচলিত হলো। তার চোখের পাতা সামান্য কাঁপল। আতাহার মিয়া বললেন, ‘রফিকুল আলমের কাছে এই গোপন ফোনটা পাওয়া গেছে। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই নম্বর থেকে কেবল আপনার নম্বরে কোনো ফোন ঢুকছে না। আর সকল নম্বরে ফোন ঢুকছে।’
মুনিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া গলায় বলল, ‘আমি ঠিক জানি না, অনেক আননোন নম্বর থেকে হয়তো অকারণে ডিস্টার্ব করা হয়। তখন সেগুলো ব্লক করে থাকতে পারি।
‘রফিকুল আলম কেন তার কোনো গোপন ফোন থেকে আপনাকে ডিস্টার্ব করবেন? আপনাদের মধ্যে কি এমন কোনো বিশেষ সম্পর্ক বা শত্রুতা ছিল যে রফিক সাহেব তার আননোন নম্বর থেকে আপনাকে ডিস্টার্ব করবেন?’
মুনিয়া যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেই বলল, ‘সরি, এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আই ক্যান্ট হেল্প ইউ।’
আতাহার মিয়া মৃদু হাসলেন, ‘অফকোর্স ইউ ক্যান হেল্প মি। শুধু রফিকুল আলমের এই গোপন নম্বরটিই নয়, তিনি সবসময় যেই নম্বরটি ব্যবহার করতেন সেই নম্বরটিও আপনার ফোন থেকে ব্লক করা। সচরাচর যে নম্বরটি ব্যবহার করতেন সেটি থেকেও এবং এই গোপন নম্বরটি থেকেও। আমি গতকালই বিষয়টা পরীক্ষা করে দেখেছি। তার দুটো নম্বরই আপনার ফোন থেকে ব্লক করা। বিষয়টা আশ্চর্যজনক না ম্যাডাম?’
মুনিয়া আঁতিপাতি করেও এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না। আতাহার মিয়া বললেন, ‘আপনার সাথে কী এমন সম্পর্ক ছিল রফিকুল আলমের যে তিনি আপনার জন্য এতকিছু করলেন, সবার বিরুদ্ধে গিয়ে আপনাকে এই স্কুলের চাকরি দিলেন, হেডমিস্ট্রেস বানালেন, অথচ তারপর সেই আপনিই তার সব ফোন নম্বর আপনার ফোনে ব্লক করে রাখলেন?’
মুনিয়া বিচলিত ভঙ্গিতে বলল, ‘মেয়েদের নানা পার্সোনাল ইস্যুজ থাকে। আশা করি এটা আপনি বুঝবেন।’
‘নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনিও নিশ্চয়ই এটা বুঝবেন যে বিষয়গুলো এই মুহূর্তে আমার জানা খুব দরকার! হয়তো সেটা আপনার জন্যও ভালো। আপনি যে খাদের একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে আছেন, আশা করি সেটি আপনি বুঝতে পারছেন।’
মুনিয়া কথা বলল না। দীর্ঘসময় চুপ করে রইলো। তারপর বলল, ‘উনি আমাকে অন্যভাবে পছন্দ করতেন। স্কুলে আসার আগে সেটা আমি সেভাবে বুঝিনি। তখন ভেবেছিলাম হয়তো ভালো শিক্ষক হিসেবেই উনি আমাকে এখানে চাইতেন। কিন্তু এখানে জয়েন করার পর বিষয়টা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথম দিকে আমি তাকে নানাভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু উনি বুঝতে চাইতেন না। শেষের দিকে খুব উত্ত্যক্ত করতেন। তখন আমি ফোনে ওনার নম্বর ব্লক করে দিয়েছিলাম।
‘এটা কতদিন আগের ঘটনা?’
‘কোনটি?’
‘ফোনে নম্বর ব্লক করে দেয়ার ঘটনা?’
‘বছরখানেক বা তার চেয়ে কিছু বেশি।’
‘ওহ। এ কারণেই ওনার দুটো ফোনের কোনোটির কল লিস্ট বা কল রেকর্ডে গত বছরখানেকের মধ্যে আপনার নম্বর আমাদের চোখে পড়েনি। আচ্ছা, কিন্তু বিষয়টা আপনি স্কুল অথোরিটিকে কেন জানাননি?’
‘ভয় পাচ্ছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে উনি খুব ইনফ্লুয়েন্সিয়াল লোক ছিলেন।’
‘কিন্তু স্রেফ ফোন নম্বর ব্লক করে দিলেই কি এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সুযোগ ছিল? উনি আপনাকে অন্য নম্বর থেকে ফোন করতে পারতেন। ফোনের বাইরে আপনাকে বিরক্ত করতে পারতেন। পারতেন না?’
‘উনি অন্য অনেক নম্বর থেকেই চেষ্টা করতেন। কিন্তু আমি অপরিচিত নম্বর থেকে আসা ফোন ধরা বন্ধ করে দিলাম। আর স্কুলে যেহেতু তখন অন্যান্য পলিটিক্যাল ইস্যুজ, ওনাদের নিজেদের মধ্যে নানা ঝামেলা শুরু হলো, তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই উনি অন্তত স্কুলে আমার সাথে কিছু করার সাহস পেতেন না।’
‘হুম। কিন্তু একটা বিষয়। আপনি স্কুলে আসার কিছুদিন পরই যখন টের পেলেন যে উনি নানাভাবে এটা বোঝাতে চাইছেন যে আপনাকে উনি পছন্দ করেন, তারপরও আপনি ওনার ফেভার নিয়ে হেডমিস্ট্রেস হলেন, বিষয়টা কেমন না? নাকি ওনার সাথে আপনার একটা সম্পর্কই ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অন্য কোনো বিশেষ কারণে সেই সম্পর্কটা আপনি আর কন্টিন্যু করতে চাননি?’
মুনিয়া এই প্রশ্নের জবাব দিল না। সে দু হাতে মাথা চেপে ধরে বলল, ‘আপনি কিছু মনে না করলে আমি অন্য একদিন আপনার সাথে কথা বলি? আমার শরীরটা খারাপ লাগছে।
আতাহার মিয়া সচকিত হয়ে বললেন, ‘নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। কিন্তু শেষ একটা প্রশ্ন ম্যাডাম।‘
‘জি?’ মুনিয়া দু হাতে মাথা চেপে ধরেই চোখ তুলে তাকাল।
‘আপনি কি রাফি নামের কাউকে চেনেন?
‘কেন!’ ঝট করে সোজা হয়ে গেল মুনিয়া।
আতাহার মিয়া শান্ত কণ্ঠে বললেন, ‘রফিকুল আলমের এই গোপন ফোন থেকে একটি মাত্র নম্বরে নিয়মিত ফোন করা হতো। মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই অন্য নম্বরটিও রফিকুল আলমের নিজেরই কেনা। বিষয়টা অদ্ভুত না? তিনি কেন দুটো সিম কিনে একটি থেকে অন্যটিতে কথা বলবেন? তার মানে নিজে কিনলেও একটি সিম অন্য কাউকে দিয়েছিলেন তিনি, তাইনা?’
মুনিয়া কথা বললো না। আতাহার মিয়া বললেন, ‘আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, রফিকুল আলম নিজের কেনা দুটো সিম থেকে একটি সিম যাকে দিয়েছিলেন, সেই মানুষটি সেই সিম থেকে রফিকুল আলম ছাড়াও অন্য একজনের সাথে দুয়েকবার কথা বলেছিলেন। সেই অন্য একজনটা হচ্ছে রাফি। আমরা তার নম্বরের মাধ্যমে তাকেও ট্র্যাক করতে পেরেছি। এবং পুলিশের দুজন সোর্সের একজন বলছে, এই রাফিকে মাঝেমধ্যেই রাতের বেলায় আপনার বাড়ির আশেপাশে দেখা গেছে।
মুনিয়া কী বলবে জানে না। এয়ারকন্ডিশনড রুমেও সে দরদর করে ঘামছে। আতাহার মিয়া বললেন, ‘আমার ধারণা রফিকুল আলমের সাথে আপনার দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ কোনো সম্পর্ক ছিল। এবং ওই সময়ে আপনারা নিজেদের মধ্যে লম্বা সময় ধরে ফোনে কথা বলতেন। কিন্তু যেহেতু আপনারা দুজনই ম্যারেড, ফলে আপনাদের মূল ফোন নম্বর থেকে অত দীর্ঘসময় কথা বলাটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। আর এ কারণেই গোপনীয়তা রক্ষার্থে আপনারা দুজনই আলাদা ফোন ইউজ করা শুরু করলেন। রফিক সাহেব তখন দুটো সিম কিনে একটি আপনাকে দিলেন, আর অন্যটি তিনি নিজে রাখলেন। অবশ্য সিম দুটো তিনি কিনিয়েছিলেন তার অফিসের তৎকালীন পিওন মধু মিয়াকে দিয়ে। তাই না?’
মুনিয়া কোনো কথা বলল না। আতাহার মিয়া বললেন, ‘তবে পরবর্তীতে কোনো কারণে রফিকুল আলমের সাথে আপনার সমস্যা হয়, আর আপনি সিমটি ব্যবহার বন্ধ করে দেন। শুধু যে বন্ধ করে দেন তা-ই না, আপনি আপনার ফোন থেকে রফিকুল আলমের সব নম্বর ব্লক করে দেন। আমার অনুমান কি ঠিক?’
মুনিয়া জবাব দিল না। তবে সেই মুহূর্তে তার মনে হলো, রফিকুল আলম তাকে যেই গোপন ফোন নম্বরটি দিয়েছিলেন তার সাথে কথা বলার জন্য, সেই নম্বরটি থেকে প্রথম দিকে হয়তো ভুলক্রমেই দুয়েকবার সে রাফিকে ফোন করেছিল! হঠাৎই মুনিয়ার শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ের এক তীব্র শিতল স্রোত নেমে গেল।