1 of 2

অর্ধবৃত্ত – ৫

মুনিয়া ফিসফিস করে বলল, ‘তুমি দেয়ালে ওটা কী লিখেছ?’

রাফি হাসল, ‘তুমি দেখতে পাচ্ছো না? আমি কি একটু সরে দাঁড়াবো?

রাফি দাঁড়িয়ে আছে ফুটপাতের সেই জায়গাটিতে, যেখানে তার পেছনে সাদা চুনকাম করা দেয়াল। দেয়ালের গায়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা,

‘আমি একদিন নিখোঁজ হবো, উধাও হবো রাত প্রহরে,
সড়ক বাতির আবছা আলোয়, খুঁজবে না কেউ এই শহরে।
ভাববে না কেউ, কাঁপবে না কেউ, কাঁদবে না কেউ একলা একা,
এই শহরের দেয়ালগুলোয়, প্রেমহীনতার গল্প লেখা।’

মুনিয়া অন্ধকার বারান্দায় দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে কথা বলছে। জাফর ভেতরে ঘুমাচ্ছে। মিহি সুরে তার নাক ডাকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘড়িতে এখন রাত তিনটা। মুনিয়া বলল, ‘তুমি খুব বেশি পাগলামি করো রাফি।’

‘তোমার পাগলামি ভালো লাগে না?’

‘লাগে।’

‘তাহলে?’

‘কিন্তু ভয়ওতো হয়। তুমি যে বেপরোয়া, কখন কী বিপদ হয়ে যায় কে জানে!’

‘আমিতো কেবল লেখাটাই লিখেছি। আমার কিংবা তোমার নামতো লিখিনি। ওটা লিখলে কিন্তু ভালো হতো।’

মুনিয়া এবার কঠিন হলো, ‘পাগলামি করো না প্লিজ।’

‘পাগলামি না করলে আমাকে ভালোবাসতে?’

এই প্রশ্নে থমকে গেল মুনিয়া। কে জানে, হয়তো রাফির কথাই ঠিক। সে এমন পাগলামি না করলে, এমন ক্ষ্যাপাটে না হলে, হয়তো কখনোই তার সাথে রাফির এই অস্বাভাবিক, এই আপত্তিকর, দৃষ্টিকটু সম্পর্কটা হতো না। সে নিজেও ভাবেনি, তার জীবনে কখনো এমন কিছু হতে পারে। কিন্তু রাফি এক সর্বপ্লাবী ঢেউয়ের মতো। সেই ঢেউয়ে সব কিছু ভেসে যায়। সব বাঁধ ভেঙে গুঁড়িয়ে যায়। মুনিয়ার সাধ্য ছিল না তা রুখবার। রোজ গভীর রাতে অচেনা নম্বর থেকে ফোনে কবিতা লিখে মেসেজ পাঠাত রাফি। রাতের পর রাত। প্রথম দিকে ভীষণ বিরক্তই হয়েছিল মুনিয়া। কিন্তু রোজ ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখতো, ঠিক রাত তিনটা এক মিনিটে একটা মেসেজ তার ফোনে। দুই লাইনের কবিতা। সেই কবিতা কী যে সুন্দর! প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ফোন খুলে ওই মেসেজ দেখাটা তার অভ্যাস হয়ে গেল। তারপর কীভাবে কীভাবে যেন প্রথম দিকের সেই বিরক্তিকর অনুভূতিটা হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে থাকল। আর তার জায়গায় ক্রমশই উঁকি দিতে থাকল প্ৰবল ভালো লাগা। নিজের অজান্তেই প্রতিরাতে অপেক্ষায় থাকা শুরু হলো তার।

ব্যক্তিগত, পারিবারিক আর পেশাগত জীবনের নানান ঝামেলা, সংকট, সমস্যায় জর্জরিত মুনিয়া কখন যে প্রতি মাঝরাতে আসা ওই দু লাইনের একটা কবিতার ভেতর নিজের নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা খুঁজে পেতে শুরু করল, তা সে নিজেই জানে না। সেই মেসেজ মানেই মন ভালো করে দেয়া কবিতা। বুকের ভেতর অবচেতনেই শিরশির করে কাঁপিয়ে দেয়া কবিতা।

‘যতদূর চোখ যায়, যতদূর যায় না,
সবখানে অদ্ভুত, তুমিময় আয়না।

কিংবা

‘কোথায় যাবে তোমার মানুষ রেখে?
মানুষ কেন হারিয়ে গেলে শেষে, মানুষ পাওয়া শেখে!’

কিংবা

‘রাতের আকাশ জানে, একাকী সে তারা, আঁধারেই খসে পড়ে, খসুক।
নির্ঘুম রাত জানে, চোখের পাতায় জমে, তোমাকে দেখার অসুখ!’

কিংবা

‘সে এসে বসুক পাশে, যেভাবে অসুখ আসে,
তারপর হয়ে যাক যন্ত্রণা অনায়াসে।
তবুও আসুক সে,
জানুক, প্রিয়তম অসুখ সে!’

তারপর একদিন ফোনে কথা। মুনিয়া অবাক হয়ে আবিষ্কার করল, ফোনের ওপারের মানুষটা তাকে খুব কাছ থেকে চেনে। রোজ দেখে। তার প্রায় সবটাই জানে। এই বিষয়টা ভয় পাইয়ে দিয়েছিল মুনিয়াকে। সে সতর্কও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মানুষটাকে জানার এক দুর্নিবার কৌতূহল অন্যদিকে হারানোর একটা ভয়ও ভেতরে ভেতরে পেয়ে বসেছিল তাকে। সেই কৌতূহল আর ভয়ের কাছেই শেষ অবধি হার মেনেছে সে। যখন প্রথম জেনেছে মানুষটা রাফি, কিছুতেই বিশ্বাস হতে চায়নি মুনিয়ার। যদিও ফোনে রাফি বারবারই বলেছে মুনিয়ার চেয়ে বয়সে অনেক ছোটই হবে সে, কিন্তু তারপরও রাফি যে ঋদ্ধির বান্ধবী রথির বড় ভাই, সেটি হজম করতে কষ্ট হয়েছে মুনিয়ার। জাফরের ছোট ভাই দিপুর ইউনিভার্সিটির বন্ধুও সে।

এসব জানার পর দীর্ঘ এক বিরতি। প্রচণ্ড বাজে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল মুনিয়া। রাফি অবশ্য কিছুই বলেনি। একদম চুপ হয়ে গিয়েছিল। তবে মাঝে মাঝে বাড়ির উল্টোদিকের ওই ফুটপাতে তাকে দেখা যেত, গভীর রাতে একা একা বসে আছে সে। তারপর কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কী এক অদ্ভুত, ব্যাখ্যাহীন মায়া এসে বুকের ভেতরটা এলোমেলো করে দিল মুনিয়া জানে না। আজকাল আর জানতেও চায় না। চাইলেই বরং ভয় হয়। নিজেকে কেমন নীতিভ্রষ্ট, ভয়ানক অপরাধী এক মানুষ মনে হয়। তারপর নিজের পক্ষে নানা যুক্তি খোঁজে সে। সেইসব যুক্তি কখনো কখনো নিজেকে বোঝায়। কখনো কখনো বোঝাতে পারে না। তখন খুব দিশেহারা আর অস্থির লাগে তার।

গত কিছুদিন যেমন লাগছে। তবে সেই অস্থিরতা ঋদ্ধিকে নিয়ে। মুনিয়া স্পষ্ট টের পাচ্ছে, ঋদ্ধির চোখে মুখে কোথায় যেন সারাক্ষণ মৃদু এক অস্থিরতা। রাফির যেকোনো ধরনের উপস্থিতি সেই অস্থিরতায় তীব্র কম্পন হয়ে ধরা দেয়। তার এই বয়সটাই হয়তো এমন। হঠাৎ হঠাৎ চোখ আটকে যায় কোথাও, মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, বুকে যখন-তখন দলা পাকায় তীব্র কষ্ট, আবার ভালো লাগাও। মুনিয়া বিষয়টা নিয়ে ক্রমশই ভীত হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে জানে না, এই সংকট থেকে মুক্তির উপায় কী! যদিও তার দৃঢ় বিশ্বাস, ঋদ্ধির বিষয়টি এখনো বুঝতে পারেনি রাফি।

রাফি বলল,’কী হলো? উত্তর দিলে না যে!

‘কীসের উত্তর?’ মুনিয়ার যেন সম্বিৎ ফিরল।

‘অমন পাগলামি না করলে আমাকে কখনো ভালোবাসতে?’

মুনিয়া বলল, ‘কিন্তু আমিতো কোনো পাগলামি করিনি, তাহলে আমাকে কেন ভালোবাসলে তুমি?’

‘ভালোবাসা কি কারণ বা যুক্তি মেপে হয়?’

মুনিয়া হাসল, তাহলে আর কী! নিজের প্রশ্নের উত্তরতো নিজেই দিয়ে দিলে।’

রাফি জবাব দিল না। মুনিয়াই বলল, ‘তবে তোমার কথা ঠিক না। ভালোবাসাই বরং কারণ বা যুক্তি মেপেই হয়। কিন্তু আমরা যখন কাউকে ভালোবাসি, তখন সেই কারণ বা যুক্তিটা আর খুঁজতে যাই না। কিন্তু ভালোবাসা ফুরিয়ে গেলে সেই কারণ বা যুক্তির হিসেব নিকেশ করতে বসে যাই। তখন মনে হয়, হায়, এত সমস্যা থাকার পরও কোন যুক্তিতে তাকে আমি ভালোবেসেছিলাম!’

রাফি প্রসঙ্গ পাল্টাল, ‘আচ্ছা, তুমি কি কোনো কারণে ঋদ্ধির ওপর বিরক্ত?’ মুনিয়া চমকাল, ‘কেন?’

‘নাহ, সেদিন স্কুলের গেটে তোমাকে ওভাবে রিয়্যাক্ট করতে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম

মুনিয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘তেমন কিছু না। ওর পড়াশোনা নিয়ে একটু টেনসড আমি।’

‘কিন্তু ওর রেজাল্টতো ভালো।’

‘কে বলল তোমাকে? ঋদ্ধি?’ মুনিয়ার কণ্ঠে অনুসন্ধিৎসা।

‘উহু। রথি।’

মুনিয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল রাফিকে জিজ্ঞেস করতে যে সে কেন রথির কাছে ঋদ্ধির রেজাল্টের কথা জানতে চেয়েছে! রথির সাথে ঋদ্ধিকে নিয়ে আর কী কী কথা হয় তার? রাফি কি কোনোভাবে ঋদ্ধির প্রতি কৌতূহলী? কিন্তু এই প্রশ্নগুলো যে করা যায় না তা মুনিয়া বোঝে। ঋদ্ধি কে নিয়ে সে যে ভেতরে ভেতরে একটু বেশিই প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যাচ্ছে, তাও টের পাচ্ছে সে। কিন্তু চেষ্টা করেও বিষয়টা মাথা থেকে তাড়াতে পারছে না মুনিয়া।

মুনিয়া বলল, ‘রেজাল্ট ভালো হওয়া আর পড়াশোনায় ভালো হওয়াটাতো এক নয়, না? সারাক্ষণ টেলিভিশন, সিনেমা, কবিতা, গান নিয়ে পড়ে থাকছে। তারওপর এই বন্ধু, সেই বন্ধু…।

‘কিন্তু এটাইতো সময়। তা ছাড়া ওর বয়সী কটা ছেলে-মেয়ে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়েও বাংলা কবিতা, উপন্যাস, সিনেমার প্রতি আগ্রহ দেখায়?’

তুমি কী করে জানলে যে সে বাংলা কবিতা, উপন্যাস পড়ে?’

‘কেন, তুমি জানো না? আমাকে দেখলেই সে কবিতা লিখে দেয়ার জন্য বায়না ধরে। না লিখে দেয়া অবধি আর শান্তি নেই।’

‘তা দিয়েছো লিখে?’

যখন তখন কি আর কবিতা লেখা যায়? তাও যেখানে-সেখানে বসে! তারপরও একটা লিখে দিয়েছিলাম, কিন্তু সেই কবিতা নাকি তার পছন্দ হয়নি।’

‘কেন? পছন্দ হয়নি কেন?’ রাফিকে জিজ্ঞেস করলেও এই প্রশ্নের উত্তরটা জানে মুনিয়া। তারপরও সে রাফির মুখ থেকে শুনতে চাইছে।

রাফি হাসতে হাসতে বলল, ‘ওটা নাকি বাচ্চাদের কবিতা। ওর বাচ্চাদের কবিতা ভালো লাগে না। ও নাকি বড় হয়ে গেছে।’

‘হুম।’ মুনিয়া গম্ভীর হয়ে গেল। রাফি বলল, ‘ওর কবিতার আগ্রহ দেখেতো আমি মুগ্ধ। তোমার মতোই হয়েছে! মায়েরও যা পছন্দ, মেয়েরও।’

কথাটা হয়তো রাফি কিছু ভেবে বলেনি। কথাটা হয়তো খুবই স্বাভাবিক, আর দশটা কথার মতোই সাধারণ। কিন্তু তারপরও বাক্যটা মুনিয়ার মাথায় গেঁথে গেল, ‘মায়েরও যা পছন্দ, মেয়েরও।’

যতবার সে কথাটা ভাবল, ততবারই তার তীব্র এক অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে লাগল। এক ধরনের গা ঘিনঘিনে অনুভূতি। সে জানে, রাফি হয়তো একদম কিছু না ভেবেই কথাটা বলেছে। কিন্তু তারপরও এই অতি সামান্য অথচ তার কাছে হঠাৎই বিশাল অর্থবহ হয়ে ওঠা কথাটা সে মাথা থেকে তাড়াতে পারল না।

বাকি সময়টা রাফির সাথে আর তেমন কোনো কথা হলো না তার। রাফি বুঝতে পারল না মুনিয়া হঠাৎই কেন এমন নিষ্প্রভ হয়ে গেল! কেন এমন চুপচাপ, শান্ত হয়ে গেল।

সে বলল, ‘কিছু হয়েছে?’

‘উহু।’

‘তাহলে?’

‘তাহলে কী?’

‘তুমি হঠাৎই এমন চুপচাপ হয়ে গেলে কেন? কী হয়েছে বলো?’

মুনিয়া বুঝতে পারছে, সে চেষ্টা করেও তার নিজের ভেতরে দলা পাকিয়ে ওঠা নানা জটিল চিন্তা, হিসেব-নিকেশ, সমীকরণ, সংশয় ও সঙ্কোচ সে আড়াল করতে পারছে না। তার আচরণে, কথায় তা ক্রমাগত প্রতিভাত হচ্ছে।

তবুও চেষ্টা করল সে। যেন প্রসঙ্গ পাল্টাতেই বলল, ‘আমি কিছু কারণে খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছি রাফি।’

‘ঋদ্ধি সংক্রান্ত?’

‘উহু।’

‘তাহলে?’

‘স্কুলের বিষয়ে।’

‘স্কুলে আবার কী হয়েছে?’

মুনিয়া সামান্য ভেবে বলল, ‘আমার কেন যেন মনে হচ্ছে বড় কোনো ঝামেলা হবে স্কুলে।

‘কী ঝামেলা?’

‘তাতো জানি না। তবে পরিস্থিতি ভালো ঠেকছে না। আজও সেক্রেটারি স্যারের সাথে রফিকুল আলমের বাগবিতণ্ডা হয়ে গেল।’

‘আবারো!’

‘হুম। তবে এবার আর আগের মতো নয়। কেন যেন মনে হচ্ছে রফিকুল আলম ভেতরে ভেতরে একটু বেশিই ক্ষেপে আছেন। যেকোনো সময় যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।’

‘কী বলছো?’

‘হুম। এবং তিনি স্বাভাবিকও ছিলেন না। আমার কাছাকাছি বসেছিলেন, এমনকি ওই দিনে-দুপুরেও তার মুখ থেকে ভকভক করে মদের গন্ধ বের হচ্ছিল। অনেকটা মাতালের মতো কথাও বলছিলেন খুব উত্তেজিত ভঙ্গিতে।’

রাফি চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল, ‘অন্য কোনো সমস্যা নয়তো?’

‘কী জানি!’ মুনিয়া অনিশ্চিত ভঙ্গিতে বলল। ‘তবে মিটিং শেষে হঠাৎ আমাকে

ডাকলেন।

‘তোমাকে!’

‘হুম।’

‘তারপর?’

কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন।’

‘কী বললেন?’

‘আমি শুনিনি।’

‘কেন?’

‘অনেক কারণ আছে। তা ছাড়া তুমিতো জানোই, স্কুলের যা পরিস্থিতি। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের আচরণ, কথাবার্তা পর্যন্ত সন্দেহের চোখে দেখছে। আমি চাই না এই পরিস্থিতিতে আমার অবস্থানটা কারো কাছে বিতর্কিত হোক। তা ছাড়া…।’

‘তা ছাড়া কী?’

‘একপক্ষ ঠারেঠোরে বোঝানোর চেষ্টা করছে অন্যপক্ষের প্রতি বায়াজড আমি। এমনকি তাদের ধারণা, আমি হেড মিস্ট্রেসও হয়েছি সেই অন্যপক্ষের ফেভারে। না হলে এত তাড়াতাড়ি আমার হেড মিস্ট্রেস হওয়ার কথা ছিল না। আর এ কারণেই সেই পক্ষের হয়ে কাজ করছি আমি।’

‘ওহ। তাহলে?’

‘সেটাইতো বুঝতে পারছি না। খুব টেনশন হচ্ছে। ভয়ও হচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে বড়োসড়ো কোনো একটা বিপদ ঘটবে স্কুলে।’

সেই রাতে আর কথা এগুলো না মুনিয়া আর রাফির। নিচে গেটে মৃদু ঢংঢং শব্দ হচ্ছে। মুনিয়াদের গেটের বাইরে অতিরিক্ত একটা আংটা ঝুলে থাকে। কেউ অসাবধানতাবশত সেটা বাইরের দিকে ঝুলিয়ে রাখলে একটু বাতাসেই গেটের সাথে বাড়ি লেগে একটানা শব্দ হতে থাকে। সেই মৃদু শব্দটা এই শেষ রাতের নিস্তব্ধতায় কেমন অদ্ভুত লাগছে! রাত প্রায় শেষ হয়ে আসছে। দূরে কোথাও একটানা কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। দল বেঁধে কী এক তীক্ষ্ণ সকরুণ ডাক ডেকে যাচ্ছে কুকুরগুলো। সুনসান রাত্রির বাতাসে ভেসে আসা সেই শব্দ ঢুকে যাচ্ছে বুকের ভেতর। মুনিয়ার আচমকা খুব ভয় করতে লাগল। হলদে আলোর নিচে নির্জন ফুটপাতে একা দাঁড়িয়ে থাকা রাফির জন্য তার ভয় হতে লাগল। সে ফিসফিস করে বলল, ‘ভোর হয়ে আসছে রাফি, বাড়ি চলে যাও।’

রাফির যেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু মুনিয়ার গলায় কিছু একটা ছিল। সে নিঃশব্দে বাড়ির পথ ধরল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *