৩০
জাফরের সাথে মুনিয়ার সম্পর্কটা ঝগড়ার নয়, সম্প্রীতিরও নয়। একটা ঢেউহীন, বাঁকহীন মৃতপ্রায় নদীর মতোন। বয়ে যেতে হবে বলে বয়ে যাচ্ছে। সেখানে জোয়ার যেমন নেই, ভাটাও নেই। তবে সেই সম্পর্কে হঠাৎ করেই এমন ঝড় উঠবে তা কেউই ভাবেনি। জাফর কিংবা মুনিয়াও না। অতি তুচ্ছ এক বিষয় নিয়ে যে ঝগড়ার শুরু তা সেখানেই মিটে যেতে পারতো। হয়তো মিটে গিয়েওছিল। ঝগড়ার পরের কয়েকদিনও চুপচাপ কেটে যাচ্ছিল। রাতে অফিস থেকে ফিরে আগের মতোই চুপচাপ শুয়ে পড়ত জাফর। মুনিয়া তার কাজ গোছাতে মাঝরাত অবধি জেগে থাকত। তারপর ঘুমাতে যেত। সকালে উঠেই আবার সেই একই রুটিন। তবে রাফির সাথে তার যোগাযোগটা কমে গিয়েছিল। এ সময়ে একটা পরিবর্তন অবশ্য হয়েছিল। জাফর যেন ঋদ্ধিকে একটু সময় দেয়ার চেষ্টা করল। যদিও ঋদ্ধি তাতে কতটা খুশি হলো তা বোঝার উপায় নেই। সে বরং আরো চুপচাপ হয়ে গেল। তবে মনে মনে সে মাকেই চাইতো। কিন্তু মায়ের সাথেও একটা অদৃশ্য দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল তার।
ঘটনার কিছুদিন বাদে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় মুনিয়া হঠাৎ ঋদ্ধিকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘বাবার সাথে কী নিয়ে কথা হচ্ছিল সেদিন?’
‘কোনদিন মা?’
‘শুক্রবার ভোরে? তোর বাবা বলছিল তোর নাকি মন খারাপ?’
‘তেমন কিছু না মা। আমার পড়াশোনা নিয়ে হঠাৎ জানতে চাইছিল।’
‘তুই কী বললি?’
‘বললাম সব ঠিকঠাক।’
‘আর কিছু?’
‘না মা। আর কিছু না।’
‘কিচ্ছু না?’
‘উহু।’
মুনিয়া ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘তুই তাহলে এবার সত্যি সত্যিই বড় হচ্ছিস!’
ঋদ্ধি মার দিকে তাকাল, ‘কেন মা?’
‘বড় হলে মানুষ খুব সহজে মিথ্যে বলতে শুরু করে।’
‘আমি মিথ্যে বললাম?’
‘নয়তো কী? তোর বাবা বলল তোর সাথে কথা বলে তার মনে হয়েছে কিছু নিয়ে তোর মন খারাপ। কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সেই সমস্যা আমাকে না জানিয়ে বাবাকে জানাতে হলো কেন?’
‘তুমি শুধু শুধু সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছো মা।’
‘হ্যাঁ, আমার সবকিছুই শুধু শুধু। এই যে তোকে নিয়ে আমার এই যুদ্ধ, এই যুদ্ধটাও শুধু শুধু? কই, এই এত বছরে কখনোতো তোর কী লাগবে, কখন জ্বর হলো, কখন ডাক্তার লাগল এসব কেউ জিজ্ঞেস করতে আসেনি! আজ হঠাৎ মন খারাপের খবর অবধি জানতে হচ্ছে?’
‘মা। বাবা অতকিছু ভেবে হয়তো বলেনি। আমরা জাস্ট এমনি এমনিই কথা বলছিলাম। তুমি এটাকে…।’
মুনিয়ার সবকিছু খুব অসহ্য লাগছে। তার এখন মনে হচ্ছে ঋদ্ধির কাছেও সে গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়। বরং এই যে এ কদিনে জাফর বারকয়েক ঋদ্ধির খবর নিল, এটা-সেটা কিনে দিল, তাতেই যেন বাবার প্রতি আলাদা একটা টান তৈরি হয়েছে তার। এই নিয়ে মুনিয়ার যে খুব আপত্তি রয়েছে তা নয়। কিন্তু কোথায় যেন নিজের এতদিনকার কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার একটা শঙ্কা। একটা অদ্ভুত টানাপড়েন। মনে মনে নিজের ওপর এতদিন যে বিশ্বাস তার ছিল, তা যেন হঠাৎ করেই বড়োসড়ো এক প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সে ভাবত বাইরে যে যাই বলুক, যতই তাকে অপছন্দ করুক, অন্তত ভেতরে ভেতরে এ বাড়ির সবাই কম বেশি তার প্রতি কৃতজ্ঞই বোধ করে। তারা নিশ্চয়ই এটুকু অনুভব করে যে আর সবকিছু সামলে এ বাড়ির সবার জন্য, সংসারের জন্য মুনিয়া যা করেছে তা নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য। এতদিন এই ছিল মুনিয়ার দৃঢ় বিশ্বাস।
কিন্তু সেদিন জাফর তার সকল বিশ্বাস ভেঙে দিল। মুনিয়া ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি যে জাফর সবকিছু এমন অবলীলায় অস্বীকার করতে পারে। শুধু তা-ই নয়, জাফর বরং এটাও ভাবে যে, মুনিয়ার জন্য সেও কম কিছু করেনি! উল্টো মুনিয়ারই তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
বিষয়টা ভাবলেই রাগে, ক্ষোভে, অক্ষম আক্রোশে মুনিয়ার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মানুষ এমন অকৃতজ্ঞ, এমন উপলব্ধিহীন কী করে হয় সে ভেবে পায় না। এই বাড়ির জন্য, এই বাড়ির মানুষের জন্য কী করেনি সে! নিজের সবটুকু নিংড়ে দিয়েছে। বিনিময়ে কারো কাছে কখনোই কিছু চায়নি মুনিয়া। সে শুধু এটুকু ভেবেই সন্তুষ্ট ছিল যে এই মানুষগুলো তার এই ত্যাগটা অন্তত বুঝতে পারবে। অন্তত এটুকু উপলব্ধি করতে পারবে যে চাকরি করা নিয়ে দিনের পর দিন তার সাথে যে ভয়াবহ অন্যায়টা তারা করেছিল, তাও সে নীরবেই সহ্য করেছিল। এমনকি সময় ও সুযোগ পেয়ে কোনো প্রতিশোধও সে নেয়নি। বরং যতটা সম্ভব পেছনের আঘাত ভুলে নিজেকে উজাড় করেই দিয়েছিল সে।
কিন্তু এতদিন পরে এসে মুনিয়ার মনে হলো, এ বাড়ির আর সকলেই হয়তো জাফরের মতো একইরকম চিন্তা করে। তারাও হয়তো ভাবে, মুনিয়া নয়, উল্টো তারাই মুনিয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে। বিষয়টা কোনোভাবেই মাথা থেকে তাড়াতে পারছে না মুনিয়া। নিজেকে তার প্রতারিত, প্রবঞ্চিত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এতকাল আকাশ ভেবে সে আসলে ছুঁয়ে ছিল বায়বীয় মেঘ।
অনেকক্ষণ পর ঋদ্ধির কথার জবাব দিয়েছিল মুনিয়া, ‘বাবা তাহলে কতটুকু ভেবে বলেছিল?’
‘তুমি এভাবে কথা বলছো কেন মা?’
‘কীভাবে কথা বলছি?’
ঋদ্ধি বুঝতে পারছিল মা রেগে যাচ্ছে। সে তাই সামলানোর চেষ্টা করল। বলল, ‘বাবা অনেক ভালো মা। তুমি শুধু শুধু তাকে ভুল বুঝছো। আর বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে মা।’
মুনিয়া ঝট করে ঋদ্ধির দিকে ফিরে তাকিয়েছিল। তারপর জিভের আগায় আসা কথাটাকেও একদম শেষ মুহূর্তে গিলে ফেলেছিল সে। বাকিটা পথ আর একটা কথাও বলেনি।
পরদিন ভোরে মায়ের বাড়ি চলে এলো মুনিয়া। কাজটা যে খুব ছেলেমানুষি হয়ে যাচ্ছে তা সেও জানে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল তার। কোনো কিছুর ওপরই আর নিয়ন্ত্রণ থাকছিল না। বেশ কিছুদিন ধরে ভেতরে ভেতরে ভয়াবহ এক মানসিক দুশ্চিন্তা, অবর্ণনীয় এক আতঙ্ক যেন সে বয়ে বেড়াচ্ছে। সেই গোপন ত তঙ্ক আর প্রবল মানসিক চাপেই সে শেষ অবধি এমন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল কী না কে জানে! না হলে মুনিয়ার এত এমন প্রখর ব্যক্তিত্বের একজন মানুষের হঠাৎ করেই এতটা অসহিষ্ণু হয়ে ওঠার কথা না।
মুনিয়ার মা অবশ্য কিছু জিজ্ঞেস করেননি। এতদিন পরে মেয়েকে কাছে পেয়ে তিনি বরং দারুণ উচ্ছ্বসিতই হলেন। মাঝখানে ঋদ্ধির কথা একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন। মুনিয়া বলেছিল, ‘ওর পরীক্ষা চলছে মা।’
এই কথাটা বলতে গিয়েও মুনিয়ার বুক ভেঙে কান্না আসছিল। সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না, খাদ্ধিও শেষ অবধি তার বাবার হয়ে কথা বলছে। তাহলে এতদিন যে সে ভাবতো, তার চারপাশের সবার কাছে সে খুব প্রিয়, সেটা আসলে ভুল? সে কি তাহলে কে। সকলের প্রয়োজনই মিটিয়ে গেছে, কখনো কারো প্রিয়জন হতে পারেনি?
ঋদ্ধি একবারও মায়ের সাথে আসতে চায়নি। মুনিয়াও ইচ্ছে করেই তাকে সাধেনি। সে ভেবেছিল, শেষ মুহূর্তে ঋদ্ধি বলবে, ‘আমিও তোমার সাথে যাব মা।’ কিন্তু তার কিছুই হয়নি। বরং ভোরবেলা মুনিয়া যখন চলে যাচ্ছিল, ঋদ্ধি গম্ভীর মুখে বলেছিল, ‘এভাবে যেও না মা, বাড়ির সবাই কী বলবে?’
মুনিয়া বলেছিল, ‘আমি আমার মায়ের বাড়ি যাব, তাতেও লোকজন কী বলবে!’
‘তুমিতো নরমালি যাচ্ছো না মা।’
‘নরমাল যাওয়া আর এবনরমাল যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?
ঋদ্ধি আজকাল মায়ের সাথে কথা বলতে ভয় পায়। মুনিয়া যখন তখন রেগে যায়। তবুও সে বলল, ‘এই যে বাবা বাসায় নেই। বাবা আসলে না হয় যেও।’
‘কেন, তোর বাবার পার্মিশান ছাড়া আমি কোথাও যেতে পারব না?’ ঋদ্ধি আর কথা বাড়ায়নি। কেবল জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তুমি আবার কবে আসবে?’
মুনিয়া এই প্রশ্নের জবাব দেননি। উল্টো একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল, ‘তুই স্কুলে যাবি কী করে?’
মুনিয়া ভেবেছিল এই প্রশ্নের উত্তরে ঋদ্ধি হয়তো বলবে, ‘তাইতো! দাঁড়াও মা, আমিও রেডি হয়ে আসি। তোমকে ছাড়া আমি একা থাকব কী করে!’
কিন্তু ঋদ্ধি তার কিছুই করেনি। সে বরং গম্ভীর মুখে বলেছিল, ‘সমস্যা নেই মা। বাবা বা দিপু চাচ্চুতো আছেই! সলিনা ফুপিও আছে।’
মুনিয়া যখন সিঁড়ি বেয়ে নামছিল, যখন গেট খুলছিল, যখন উবার ডেকে গাড়িতে উঠছিল, যখন একবারও পেছন ফিরে না তাকিয়ে সোজা তাকিয়ে ছিল সামনের রাস্তায়, তখনো তার চোখের কোণে একটুও জল জমেনি। তবু সবকিছু কেমন ঝাপসা লাগছিল তার। আর মনে হচ্ছিল একের পর এক তীব্র ঢেউ এসে বুকের পাড় ভেঙে জগৎসংসারটাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে তার।
মুনিয়া টানা কয়েকদিন স্কুলে গেল না। তবে বেশ কদিন পর রাফির সাথে সে দেখা করল। রাফিকে দেখে চমকে উঠল মুনিয়া। মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। উশকোখুশকো চুল। কেমন একটা বিচলিত, বিভ্রান্ত, দিশেহারা ভাব। তার মুখ থেকে ভক ভক করে মদের গন্ধ বের হচ্ছে। সে কথাও বলছে এলোমেলো ভঙ্গিতে। মুনিয়া বলল, ‘এখনো তোমার ঘুম হচ্ছে না?
রাফি উদ্ভ্রান্তের মতো বলল, ‘নাহ।’
‘কেন? দুঃস্বপ্ন দেখছো?’
‘ঘুম না হলে দুঃস্বপ্ন দেখব কেমন করে?’
তাহলে রাত জেগে জেগে কী করছো?’
‘কবিতা লিখছি।’
‘কী কবিতা?’
‘কবিতার নাম ‘আমার কোনো বন্ধু নেই।’
‘তোমার কোনো বন্ধু নেই?’ মুনিয়া উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল।
‘উহু, নেই।’
‘আমি তাহলে কী?’ প্রশ্নটা করেই থমকে গেল মুনিয়া। এই প্রশ্ন তার করার কথা না। সম্পর্কে হঠাৎ অস্তিত্ব সংকটে ভোগা কোনো মানুষ এমন প্রশ্ন করে। কিন্তু এই অনুভূতিটা হঠাৎ কেন হলো মুনিয়ার? সেও কি তাহলে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে? সেদিন জাফরের কথাগুলো শোনার পর সে কি নতুন করে সবখানে তার পরিচয়ের সন্ধানে নেমেছে?
রাফি বলল, ‘তুমি?’
‘হুম।’
‘তুমি… এই, এটাতো আগে কখনো ভাবিনি!’ রাফি যেন গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। খানিক চুপ করে বলল, ‘তুমিতো আমার প্রেমিকা। তাই না?’
কথাটা খট করে কানে লাগল মুনিয়ার। আসলেইতো, কী অদ্ভুত এক সম্পর্ক তাদের! এই সম্পর্কের স্পষ্ট কোনো নাম নেই, গন্তব্য নেই। পরিণতিও নেই। তাহলে কী আছে? কেবলই এক সম্পর্ক ও সময়ের সংকটে অন্য এক ভালো লাগা?
‘প্রেমিকা কি বন্ধু নয়?’ মুনিয়া জিজ্ঞেস করল।
রাফি বলল, ‘একটু, তবে পুরোপুরি নয়।’
‘কেন?’
‘কারণ বন্ধুর কাছে জগতের সব কথা বলা যায়, কিন্তু প্রেমিকা বা স্ত্রীর কাছে যায় না।’
মুনিয়া জবাব দিল না। তার মনে হলো হঠাৎ করেই সে তার সকল সম্পর্কের শেকড় খুঁড়ে খুঁড়ে দেখছে। নতুন করে আবিষ্কার করছে কঠিন সব সত্য। সেখানে তার এতদিনকার ভাবনা, বিশ্বাস, আস্থা ক্রমশই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
রাফি হাই তুলতে তুলতে বলল, ‘এসব নিয়ে কথা বলতে ভাল্লাগছে না। তোমাকে বরং কবিতাটা শোনাই?’
‘হুম। শোনাও।’
রাফির ভরাট গলা। সে সেই ভরাট গলায় কবিতাটা শোনাল মুনিয়াকে।
‘আমার কোনো বন্ধু নেই,
যার কাছে আমি নিজেকে ভেঙেচুরে, খুচরো পয়সার মতো জমা রাখতে পারি।
যে আমাকে যত্ন করে সঞ্চয় করবে, প্রয়োজনে ফিরিয়ে দেবে একটা একটা আধুলি।
সত্যি বলতে আমার কোনো বন্ধু নেই।‘
রাফির কবিতা পড়া শেষ হলেও মুনিয়া কোনো কথা বলল না। শেষ বিকেলের আলোয় একটা কাক দাঁড়িয়ে ছিল ইলেক্ট্রিকের তারের ওপর। তার মাথার ওপর বিশাল বিষণ্ণ এক আকাশ। সেই আকাশে ভেসে যাচ্ছে রঙিন মেঘ। কাকটার চারধারে একটা ময়লার ভাগাড়জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে আরো অসংখ্য কাক। কিন্তু তারপরও ওই কাকটা কী ভীষণ একা। কী ভীষণ বিষণ্ণ।
মুনিয়ার আচমকা মনে হলো রাফি কোনো এক আশ্চর্য উপায়ে তার বুকের ভেতরটা দেখতে পায়। পড়তে পারে। না হলে এমন একটা কবিতা সে লিখল কী করে! এই কবিতার প্রতিটি কথা যেন তার। এই কবিতার ওই একা নিঃসঙ্গ মানুষটা যেন সে।