১১
আতাহার মিয়া মোহাম্মদপুর থানার ওসি। তার কানের কাছে জুলফির দিকে চুলে পাক ধরেছে। পঞ্চাশের এত বয়স। তবে এখনো সপ্রতিভ। ধীর, স্থিরও। সহজে রেগে যান না। তিনি বসে আছেন তার রুমে। তার সামনে বসে আছেন টুমরো’স গ্লোরি স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতি আকবর আলী। প্রায় মাসখানেক হয়েছে রফিকুল আলম খুন হয়েছেন। এখনো হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা হয়নি। আতাহার মিয়া বললেন, ‘আপনি নিশ্চিত, ফজলে নূরই?’
আকবর আলী বললেন, ‘আপনি নিশ্চিত না?’
‘আপনি বললে নিশ্চিত না হয়ে উপায় কী?’
‘এভাবে বলবেন না ওসি সাহেব। আপনি এতদিন ধরে আমাকে চেনেন, আপনার কী আমাকে ওরকম মানুষ বলে মনে হয় যে আমি মামলার তদন্তকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করব?’
‘সত্য বলব, না মিথ্যা বলব?’ আতাহার মিয়া সশব্দে হাসলেন।
আকবর আলীও তার হাসিতে যোগ দিলেন। বললেন, ‘মিথ্যা বলবেন কেন?’
‘মানুষ মিথ্যে কেন বলে? নিজেকে রক্ষা করার জন্য। যখন সত্য বলার সাহস থাকে না তখন।’
আকবর আলী হাত বাড়িয়ে টেবিলে রাখা আতাহার মিয়ার হাতখানা ছুঁয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার সামনে আপনার ভয় কী? আপনিতো আমার আপন মানুষ। এইজন্য হয়তো মাঝে মধ্যে ছোটখাটো কিছু বিষয়ে আপনার নানা সাহায্য সহযোগিতা নিয়েছি। কিন্তু এটাতো আর ছোটখাটো কোনো ঘটনা না। এটা একটা মার্ডার কেস।’
‘হুম। কিন্তু কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া স্রেফ রফিকুল আলমের সাথে সম্পর্ক খারাপ ছিল বলেই ফজলে নূর তাকে খুন করেছেন- এটা ধরে নেয়াটা কি ঠিক হবে?
‘বিষয়টা এমন না আতাহার সাহেব। ফজলে নূরের আপন বড় ভাই কিন্তু নির্বাচিত কমিশনার। অথচ তিনি সরকারি দলের লোক না। আর তার সাথে ইলেকশন করেই রফিকুল আলম হেরেছিলেন।’
‘তা জানি।’ আতাহার মিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন। এইসব যুক্তি গত একমাসে তিনি বহুবার শুনেছেন।
আকবর আলী বললেন, ‘মাত্র দেড় শ ভোটে হেরেছিলেন রফিকুল আলম। কিন্তু সরকারি দলের নেতা হওয়ার কারণে নির্বাচনে হেরেও এলাকার সব কাজকর্মে কমিশনারের চেয়ে তার প্রভাবই ছিল বেশি।’
‘শুধু এই কারণে বিরোধী দলে থেকে সরকারি দলের এমন প্রভাবশালী কাউকে খুন করার মতো এত বড় রিস্ক কি তিনি নেবেন বলে আপনার মনে হয়?’
‘নেবেন। তা ছাড়া ফজলে নূরের সাথেও তার ঝামেলা ছিল। তাদের দু ভাইয়েরই আক্রোশ ছিল রফিকুল আলমের ওপর।’
‘হুম। কিন্তু হত্যাকাণ্ডটি আমাদের কাছে পরিকল্পিত মনে হয়নি। মনে হয়েছে হঠাৎ ঘটে গেছে। শক্ত কিছু দিয়ে কানের কাছে বাড়ি দেয়ার সাথে সাথে ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ে সে মারা গেছে।’
‘তাহলে ফরেনসিকে খুনির হাতের ছাপ পাওয়া গেল না কেন?’
আতাহার মিয়া চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, ‘হুম। এটাই কনফিউজিং। এবং লাশটি অন্য কোথাও থেকে এনে ওখানে রাখা হয়েছে। কিন্তু সেটাও ট্রেস করা
যাচ্ছে না। ওই রাস্তায় হাজার হাজার লোক চলাচল করছে সারাক্ষণ। ফলে আলাদা কোনো ক্লু পাওয়াও সম্ভব হয়নি। এমনকি নো ফুট প্রিন্ট। আর ওই রাস্তাটায় কোনো সিসিটিভি ক্যামেরাও ছিল না।’
‘তাহলে?’
‘এই জন্যইতো সবাই থমকে গেছে।’
‘তদন্তের যদি কোনো ব্লুই না পাওয়া যায়…।’
‘হুম। সেক্ষেত্রে আমরা সন্দেহের ভিত্তিতে ফজলে নূরকে গ্রেপ্তার করতে পারি। তাইতো?’
‘সেটা আপনাদের সিদ্ধান্ত।’
আতাহার মিয়া হাসলেন, ‘পুলিশের নিজেদের আসলে কোনো সিদ্ধান্ত থাকে না। তারা কেবল ঊর্ধ্বতনদের হুকুম পালন করেন। এখন আপনারাই চাইছেন ফজলে নূরকে গ্রেপ্তার করা হোক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্বয়ং রফিকুল আলমের ফ্যামিলির লোকজন বলছেন, নিজের দলের মধ্যেই নাকি তার অনেক শত্রু ছিল?’
‘সেটাও তো সন্দেহই, তাই না? প্রমাণিত কিছুতো আর না?’
‘তা ঠিক। আর এ কারণেই কিন্তু আমরা সন্দেহটা দূর করতে চাই। তা ছাড়া রফিকুল আলমের পরিবারও চায় এর একটা সুষ্ঠু তদন্ত হোক। স্রেফ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলেই যেন ফজলে নূর বা অন্য কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা না হয়।’
আকবর আলী ভেতরে ভেতরে প্রচণ্ড বিরক্ত বোধ করছেন। কিন্তু সেটি তিনি প্রকাশ করছেন না। চায়ের কাপে লম্বা চুমুক দিয়েই মুখ বিকৃত হয়ে গেল তার। এতক্ষণে বরফের মতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে চা। তিনি কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন, রফিকুল আলমের ফোনেও কিচ্ছু পাওয়া যায়নি?’
‘ফোনের কল রেকর্ড থেকেও সন্দেহজনক কিছু আমরা পাইনি। আর রোজ অসংখ্য মানুষের সাথে উনি কথা বলতেন। গত বেশ কিছুদিনের ফোন কলেও সন্দেহ করা যায়, এমন কিছু আমরা পাইনি।’
‘আমার কাছে কিন্তু কিছু রেকর্ড আছে।’
‘আপনার কাছে?’ আতাহার মিয়া এবার চমকালেন।
হ্যাঁ। এই কিছুদিন আগেই, রফিকুল আলম খুন হওয়ার দিন কয়েক আগে ফজলে নূরের সাথে তার সিরিয়াস ধরনের ঝামেলা হয়েছিল। আমি সভাপতি বলেই আমাকে ফোন করে রফিকুল আলম সম্পর্কে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ফজলে নূর। তখন ইনডিরেক্টলি শাসিয়েওছিলেন তিনি রফিকুল আলমকে।’
‘কিন্তু সেটা আপনি রেকর্ড করে রেখেছিলেন কেন?’ কৌতূহলী ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন আতাহার মিয়া।
হঠাৎ করা প্রশ্নটিতে খানিক থতমত খেয়ে গেলেন আকবর আলী। তিনি বললেন, ‘আসলে অনেকদিন থেকেই ফজলে নূরকে আমার সন্দেহ হচ্ছিল। বিপজ্জনক লোক মনে হচ্ছিল। তাই যখনই ওনার সাথে আমার কোনো কথা হতো, আমি একটা রেকর্ড রেখে দেয়ার চেষ্টা করতাম।’
‘ওহ।’ তখনো ভ্রু কুঁচকে আছে আতাহার মিয়ার। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তিনি বললেন, ‘রেকর্ডটা আপনার সঙ্গে আছে?’
‘জি আছে।’ পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে আতাহার মিয়াকে দিলেন আকবর আলী। পেনড্রাইভ থেকে ফাইলটা কপি করতে করতে আতাহার মিয়া বললেন, ‘আপনিতো দেখি একদম প্রস্তুত হয়েই এসেছেন আকবর সাহেব।
আকবর আলী হাসলেন, ‘না না, তা না। আসলে কী এটাতো যেই-সেই মার্ডার না। রফিকুল আলম সরকারি দলের এত বড় নেতা। তার হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠ, সঠিক তদন্ততো আমাদের নিজেদের জন্যই দরকার। তাই না? সরকারি দলে থেকেও যদি আমাদের সেফটি না থাকে। ন্যায় বিচার না পাই, তাহলে আর রাজনীতি করে কী লাভ বলেন?’
‘তা ঠিক। তা ঠিক।’ আতাহার মিয়া চিন্তিত ভঙ্গিতে রেকর্ডটা শুনতে লাগলেন। আকবর আলীকে বিদায় দেয়ার পরও সারাদিনে বেশ কবার তিনি রেকর্ডটা শুনলেন। কথোপকথনে ফজলে নূর নানা ধরনের বিষোদগার করেছেন রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে। হুমকিধামকিও দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে এই কথোপকথন নিঃসন্দেহে গুরুতর এক সূত্র। যদিও ফজলে নূরকে যেকোনো উপায়ে দোষী সাব্যস্ত করার প্রতি আকবর আলী যে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখাচ্ছেন তা তাকে সন্দিগ্ধ করে তুলছে।
পরদিন বিকেলে হুট করেই টুমরো’স গ্লোরিতে গিয়ে উপস্থিত হলেন আতাহার মিয়া। আতাহার মিয়াকে একা দেখে মুনিয়া খানিক অবাকই হলো। কারণ এর আগে যতবারই তিনি স্কুলে এসেছিলেন, প্রতিবারই তার সাথে ছিলেন স্কুল সভাপতি আকবর আলী। আতাহার মিয়াকে দেখে শশব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল মুনিয়া। আতাহার মিয়া বসতে বসতে বললেন, ‘খুব ব্যস্ততা যাচ্ছে, তাই না?’
‘তা যাচ্ছে। সামনে বাচ্চাদের পরীক্ষা। তারপর ভর্তি। নানান কিছু।’
‘আমি বেশি সময় নেবো না। এমনিতেই এ কদিনে আপনার অনেক সময় নষ্ট করেছি।’
‘ধুর, কী যে বলেন!’ মুনিয়া হেসে পিয়নকে ডাকল। দু কাপ চায়ের কথা জানিয়ে বলল, ‘কী অবস্থা বলুনতো ওসি সাহেব?’
‘আমরা আসলে পাজলড হয়ে আছি। কিছুই বুঝতে পারছি না। তার মধ্যে ইনভেস্টিগেশনকে বারবার বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে নানা জায়গা থেকে।’
মুনিয়া জানে এখন তার প্রতিটি বক্তব্যই মূলত পুলিশের কাছে একেকটা তথ্য। ফলে তাকে কথা বলতে হবে খুবই সাবধানে। কোনোভাবেই এমন কিছু বলা যাবে না, যা তাকে কোনো পক্ষের কাছেই দোষী করে ফেলে। সে সতর্ক ভঙ্গিতে বলল, ‘তাহলে তো সমস্যা।’
‘হুম। খুবই সমস্যা।’
‘আসলে সবকিছুই কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। একটা অস্থির সময়ে বাস করছি আমরা। মাঝে মাঝে খুব দমবন্ধ লাগে।’ বলল মুনিয়া।
‘আপনারা না হয় দমবন্ধ লাগে বলে নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে বসবাস করতে পারেন। কিন্তু আমরা কী করব বলুন? আমাদেরতো এগুলো নিয়েই কাজ।’ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আতাহার মিয়া। তারপর বললেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতিটা সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। আর মাঝখান থেকে বলির পাঠা হচ্ছি আমরা। যা-ই হচ্ছে, ব্লেমটা নিতে হয় আমাদের। কিন্তু ধরুন সব সিদ্ধান্ত নেয়ার একক ক্ষমতা কি আমাদের হাতে থাকে? আমরা বরং পাপেট শোর পুতুলের মতো। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্ডার ফলো করি। যিনি অর্ডার দিচ্ছেন মানুষতো আর তাকে দেখে না, মানুষ দেখে যে অর্ডার পালন করছে তাকে। সো যত দোষ, নন্দ ঘোষ।’
চা চলে এসেছে। মুনিয়া চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘তা হঠাৎ করে কিছু না জানিয়ে এই সময়ে?’
আতাহার মিয়া এবার সরাসরি আলোচনায় চলে গেলেন, ‘রফিকুল আলমের সাথে আকবর আলীর সম্পর্ক কেমন ছিল?’
প্রশ্নটা শুনে খানিক চমকাল মুনিয়া। এর আগে যতবারই আতাহার মিয়া এসেছেন, ততবারই মূলত স্কুল সেক্রেটারি ফজলে নূরের বিষয়েই নানা কিছু জানতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু আজই প্রথম আকবর আলীর সম্পর্কে জানতে চাইলেন। ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে, বুঝতে পারল না মুনিয়া। সে সতর্ক গলায় বলল, ‘ভালোই তো ছিল। উনারা দুজনতো একই দল করেন।’
‘না না। আমি সে কথা বলছি না। জাস্ট জানতে চাইছি, অনেক সময় এমন হয়না যে নিজেদের মধ্যেও নানা ভুল বোঝাবুঝি থাকে।’
‘তাতো থাকেই। তবে তেমন কিছুতো আর আমাদের জানার কথা না।’
‘যা জানেন, তাই বলুন।’
মুনিয়া প্রমাদ গুনলো। তারপর বলল, ‘একসাথে কাজ করতে গেলে নানা সময়ে নানান সমস্যা আমাদের সবার মধ্যেই হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো ছিল।’
কিন্তু কমিশনার নির্বাচনের সময় নিজের দলের হওয়া সত্ত্বেও আকবর আলী নাকি রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়েছিলেন। যাতে দলের ভেতরেই তার ভোট কমে যায়?’
‘এটা আমার জানা নেই। আমিতো রাজনীতির মানুষ নই। কোনো খোঁজখবরও রাখি না।’
‘কিন্তু আমরা রাখি। তো সেই ক্ষোভেই রফিকুল আলম নাকি গোপনে গোপনে চাইছিলেন স্কুলের গভর্নিং বডির প্রেসিডেন্টের পদ থেকে আকবর আলীকে সরিয়ে দিতে?
মুনিয়া বুঝতে পারছিল না ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে। সে খানিক চুপ করে থেকে বলল, ‘বিষয়টা আসলে তেমন নয়। সভাপতি সাহেব একবার দেশের বাইরে ছিলেন, তখন রফিকুল আলম হঠাৎই শিক্ষক আর কিছু অভিভাবকদের নিয়ে একটা মিটিং ডেকেছিলেন, সেখানে সরাসরি কিছু না বললেও একটা ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন যে তিনি নিজে গভর্নিং বডির প্রধান হতে চান।’
‘আকবর সাহেব দেশে ফেরার পর এটা নিয়ে আর কিছু হয়নি?’
‘আমাদের সাথে এ নিয়ে আর তারা কেউ কিছু শেয়ার করেননি।’
‘কিন্তু রফিকুল আলমের সাথে তো আপনার একটা ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল বলে আমরা জানি।’
‘আকবর সাহেবের সাথেও আমার ভালো সম্পর্ক। ফজলে নূর সাহেবের সাথেও। আসলে আমি এখানে সামান্য চাকরি করি। মাস শেষে বেতন নেই। এইতো। উনাদের ইন্টারনাল বিষয়ে আমার কখনোই আগ্রহ ছিল না। কথায় আছে না, আদার ব্যাপারির জাহাজের খবর দিয়ে কাজ কী!‘
‘জাহাজটা যদি আদা বহনকারী হয় তাহলে?’
‘মানে?’ মুনিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকাল।
আতাহার মিয়া হাসলেন, ‘আপনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তবে অন্য প্রধান শিক্ষকদের চেয়ে আপনার কিন্তু আলাদা একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সবাই আপনাকে একটু বেশিই গুরুত্ব দেয়। তাই না?
‘সেটা হয়তো দেয়। আর এইজন্য দায়িত্বটাও বোধহয় আমাকে একটু বেশি রেসপন্সিবিলিটি নিয়েই পালন করতে হয়। যাতে আমার প্রতি অন্যদের এই আস্থাটা ধরে রাখতে পারি। যাতে কেউ কোনো অভিযোগ করতে না পারে।’
‘হ্যাঁ এটাই আসল। হয়তো এই দায়িত্ববোধের কারণেই আপনি অনেক তাড়াতাড়িই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বটা পেয়ে গেছেন।’
‘হয়তো। তবে সেটা অন্যরা ভালো বলতে পারবেন, কতটা দায়িত্ব পালন করতে পারছি, আর কতটা পারছি না।’
‘এনি ওয়ে, আপনার বয়স কি আসলেই কম?’ খানিক তরল ভঙ্গিতে কথাটা বললেন আতাহার মিয়া, ‘মানে যতটা কম আপনাকে দেখায়? নাকি নিজেকে ওয়েল মেইনটেইন্ড রাখছেন বলে বয়সের তুলনায় ইয়াং লাগে আপনাকে?’
প্রশ্নটা শুনে মুনিয়া হকচকিয়ে গেল। এই ধরনের প্রশ্ন সে আতাহার মিয়ার কাছ থেকে আশা করেনি। বলার ভঙ্গিটাও পছন্দ হয়নি তার। একটু বিরক্তও লাগল। তারপরও জোর করে হাসল সে। তারপর প্রসঙ্গ পাল্টাল, স্কুল ছুটির সময় হয়ে গেছে। আমরা কি আরো কিছুক্ষণ বসব?’
আতাহার মিয়া টেবিলের ওপর থেকে তার ক্যাপটা মাথায় পরতে পরতে বললেন, ‘আপনার ব্যস্ততা থাকলে আমি আরেকদিন আসি।’
‘আসলে তা নয়, আমি ঠিক জানি না কীভাবে আপনাকে হেল্প করতে পারি। এ কদিনে মনে হয় না একবারও কোনোভাবে তথ্য দিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে পেরেছি আমি।’
‘উহু, ঠিক না। আসলে কোন তথ্যটা পুলিশের কাজে লাগবে, সেটা শুধু পুলিশই বুঝতে পারবে। অন্য কেউ না। হয়তো এর মধ্যেই এমন অনেক কিছু আপনি বলেছেন, যা আমাদের হেল্প করবে।
‘হয়তো।’
আতাহার মিয়া থানায় ফিরে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলেন। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট পথ ধরে তিনি এগোতে পারছেন না। তার ওপর নানাজন নানা জায়গা থেকে বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। যা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সবচেয়ে বাজে দিক। বিষয়টি নিয়ে তিনি বিরক্ত। কিন্তু এর থেকে মুক্তির কোনো উপায়ও তার জানা নেই।
পরদিন দুপুরে অবশ্য ফোনটা এলো। এসপি সাহেব ফোন করে বললেন ফজলে নূরকে গ্রেপ্তার করতে। নির্দেশে বলা হলো, রফিকুল আলম হত্যাকাণ্ডের মূল সন্দেহভাজনকে বাইরে রেখে তদন্ত করলে তা তদন্ত কাজকে প্রভাবিত করবে। ফলে তাকে অতিসত্বর গ্রেপ্তার করতে হবে।