অর্থমর্থম
বিশ্বের অন্যতম অসাধারণ লেখক, প্রত্নতাত্তিক, যোদ্ধা টমাস এডওয়ার্ড লরনস (Lawrence) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আরব জগতে যে সুখ্যাতি অর্জন করেন তার কিংবদন্তি আজও সে অঞ্চলে সুপ্রচলিত। সে যুদ্ধের সময় তুর্কি রাষ্ট্রের পরাধীন আরবভূমি তুর্কির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ মনোভাব দেখালে পর তাঁর ওপর ভার পড়ে আরবদের গেরিলা ও সাবোতাজ কর্মে পাকাপোক্ত করে তোলার। …একদা তুর্কি থেকে বেরিয়ে একখানা হজযাত্রী ট্রেন মদিনা যাবে। ওটাকে বিস্ফোরক দিয়ে কী করে ওড়াতে হয় তারই তালিম দিচ্ছেন লরন আরবদের। আসলে নিরীহ যাত্রীবাহী গাড়ি চুরমার করতে তাঁর মন মানছিল না কিন্তু নবগীতায় নাকি সান্ধ্যসংস্কৃতে আছে রণে চ প্রেমে চ দাক্ষিণ্য নৈব নৈব চ। এন্তের তোড়জোড় করে লরনস তো রেললাইনের তলায় বিস্ফোরক পোতার কায়দাকেতা আরবদের শেখালেন বিশেষজ্ঞের গাম্ভীর্য ও তাচ্ছিল্য সহকারে। তার পর সবাই বিস্ফোরকের আওতার বাইরে এসে আশ্রয় নিলেন মরুভূমির একটা বালির ঢিপির পিছনে। দেখা গেল, দূর থেকে আসছে খেলনার গাড়ির মতো হেলেদুলে মান্ধাতার আমলের ধাপামার্কা যাত্রীগাড়ি। সক্কলের চোখ গাড়িটার ওপর ডাকটিকিটের মতো সাঁটা। এই এল– এই এল– এই এসে গেল বিস্ফোরকের ভিসুভিয়াসটার উপর ওইয্য- কোথায়। কী! গাড়িখানা দিব্য ঝ্যাক ঝাক করে কাশতে কাশতে ফাঁড়াটা মোলায়েমসে পেরিয়ে গেল।… আরবরা বিশেষজ্ঞের দিকে আড়নয়নে তাকিয়ে মুচকি হেসেছিল কি না বলতে পারব না। লস্ বলেছেন, দ্য আরটিসট ইন মি ওয়োজ ফুরিয়স, দ্য ম্যান ইন মি ওয়োজ হ্যাপি। ইংরেজিটা আমার হুবহু মনে নেই, কিন্তু এটা পরিষ্কার এখনও যেন কানে বাজছে, ভাষাটি তাঁর ছিল চমৎকার আর বলার ধরনটি সরেসেরও সরেস।… যেখানে লরস হুনুরির মতো ফাঁদ পাতছেন সেখানে তিনি আরটিস্ট পার-একসেলাস, সেখানে বেবাক বন্দোবস্ত বরবাদ-ভণ্ডুল হলে ভিতরকার আবৃটিস সত্তা তো চটে যাবেই। কিন্তু সেই আরটিসটের পাশেই যে দরদী মাটির মানুষটি রয়েছে সে তো কতকগুলো নিরীহ বালবৃদ্ধকে খুন করতে চায়নি। সে তখন বগল বাজিয়ে নৃত্য করছে।
ঘটনাটি যে এতখানি ফলিয়ে বললুম তার কারণ, এ ব্যাপারটা একটুখানি ভোল বদলে আমাদের জীবনে নিতা নিত্য ঘটে। যেমন মনে করুন, আপনি উদ্ভিদবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ, তদুপরি শখের বাগান করেছেন বহু বহু বছর ধরে। আপনার প্রতিবেশী একটা আস্ত জানোয়ার পাড়াটা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আপনি একদিন দেখেন, পন্টকটার প্রাণে শখ জেগেছে, কোত্থেকে একটি অতি সুন্দর কামিনীর চারা জোগাড় করে সেটা পুঁততে যাচ্ছে এমনভাবে যে, সজ্ঞানে চেষ্টা করলেও এর চেয়ে বেশি ভুল করা যায় না। জায়গাটা বাছাই করেছে ভুল, গর্ত যা করেছে এবং সেটাতে জল আর কাঁচা গোবর যা রেখেছে তাতে দিল্লির মিঞা কুবৃমিনার একবার পা হড়কে পড়ে গেলে কাগজে বেরুবে মিঞা কুত্ত্ব জলে ডুবে আত্মহত্যা করেছেন। পূর্বেই বলেছি– না বলিনি? –ফাঁসুড়েটার আশু পঞ্চত্ব কামনা করে আপনি কালীঘাটে শির্নি মানত করেছেন।… কিন্তু তখন আপনি আর থাকতে পারবেন না। আপনার ভিতরে যে হুনুরি, যে আটিস্ট ঘুমিয়ে আছে সে মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠে চিৎকার করে বলবে, ওরে, ও আহাম্মুখ, কামিনী এভাবে পেতে?– তার পর ইস্পাইট অব ইওর সেল অর্থাৎ আপনার ভিতরকার হুনুরি আপনার ভিতরকার দুশমন মানুষটাকে পরোয়া না করে তাকে বাৎলে দেবে চারা পোঁতার কায়দাকেতা!!!
ভূমিকাটা মাত্রাধিক দীর্ঘ হয়ে গেল; তা হবেই। কথায় বলে
বাইরে যাদের লম্বা কোঁচা
ঘরেতে চড়ে না হাঁড়ি।
খেতে মাখতে তেল জোটে না।
কেরোসিনে বাগায় তেড়ি।
কালোবাজারিকে আমি আমার দুশমন বলে বিবেচনা করি। কালোবাজারি মাত্রই ক্যাপিটালিস্ট; অবশ্য সর্ব ক্যাপিটালিস্টুই কালোবাজারি নয়। কম্যুনিসট্রা আবার সর্ব ক্যাপিটালিসটকেই দুশমন সমঝেন। অর্থাৎ কম্যুনিস্টরা আমার দুশমনের দুশমন। ফারসিতেও বলে,
দোসৎনিস্ত (নাস্তি), দুশমন-ই দুশমন অসৎ (অস্তি)- দোস্ত নয়, কিন্তু আমার দুশমনের দুশমন!…
পূর্বেই বয়ান দিয়েছি, মানুষের ভিতরকার আটিস্ট দুশমনকেও সাহায্য করে, আর আমি দুশমনের দুশমনকে করব না? কারণ আমার ভিতরেও একটা আবৃটিটু রয়েছে। আত্মশ্লাঘা? আদৌ না। কোন মানুষের রক্তে আটিসৃটের ছোঁয়াচ বিলকুল লাগেনি বলতে পারেন? এমনকি আমরা যাকে অভদ্র ভাষায় মিথ্যুক বলি সে-ও তো বেচারা সুযোগ থেকে বঞ্চিত-ইংরেজিতে যেমন দড়কচ্চা-মারা গাছের বেলা বলে এটার গ্রোৎ স্টানটিড়- ঔপন্যাসিক, কবি, এক, কথায়, আরটিস। নোট যে লোক জাল করে সে-ও সুযোগ থেকে বঞ্চিত রবিবর্মা।
অতএব আমি যখন কম্যুনিস্ট ভায়াদের সদুপদেশ দিই তখন সেটা দম্ভজনিত আত্মশ্লাঘাবশত নয়। অবশ্য তারা সেটা নেবেন কি না, সেটা নিতান্তই তাদের বিবেচ্য। এবং আমি মনের কোণে এ আশাও পোষণ করি যে তথাকথিত ধর্মভীরুজনও এদিকে খেয়াল করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। অর্থনীতিবিদ শুমপেটার বলেছেন :- মার যখন বিশ্বশ্রমিক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন তখন অনুমান করতে পারেননি যে, পৃথিবীর যে কোনও স্থলে প্রথম ইনকিলাবের ফলস্বরূপ প্রথম প্রলেতারিয়া-রাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়া মাত্রই অন্যান্য দেশের ক্যাপিটালিস্ট্রা সেটা দেখে তার থেকে লে ড্র করে নিজেদের সেই অনুযায়ী এজাস্ট করে নেবে, মানিয়ে নেবে।(১) অর্থাৎ এযাবৎ যে যে বেধড়ক শোষণনীতি চালিয়েছে সেটাকে মডিফাই করে প্রলেতারিয়াকে কিছু পরিমাণে ব্যবসাতে হক দিয়ে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শেয়ার, পেনশন, বেকারির সময় ডোল, চিকিৎসার ব্যবস্থা, নানাবিধ ইনসিওরেনস দিয়ে এমনই তার স্বার্থ নিজের স্বার্থে জড়িয়ে ফেলবে যে একদিন সে দেখবে, হি হ্যাঁজ মোর টু লুজ দ্যান মিয়ারলি ফেটারজ অর্থাৎ ইনকিলাব এনে সে অর্থনৈতিক পায়ের বেড়ি হাতের কড়ার দাসত্ব থেকে মুক্তি পাবে বটে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার ইনসিওরেনসের সুবিধাও হারাবে। নবীন প্রলেতারিয়া রাষ্ট্র বিনা মেহন্নতে ফোকটে পয়সা কামানোটা বিলকুল বরদাস্ত করে না। ক্যাপিটালিস্টদের এই এড়জাস্ট করে নেওয়াটাকে শুমপেটার তুলনা করেছেন রোগের বীজাণুর সঙ্গে; তারা যেরকম প্রাণঘাতী ওষুধের ইনজেকশন খেয়ে খেয়ে কালক্রমে ওষুধের সঙ্গে নিজেদের এজাসট করে নেয় তার পর সহজে নি মূল হতে চায় না।
প্রশ্ন উঠবে, আমি কি তবে কম্যুনিস্ট ভায়াদের লেলিয়ে দিচ্ছি ধর্মের পিছনে, আর ওদিকে ধর্মানুরাগীজনকে বলছি, সাধু সাবধান!?
পাঠক যদি অনুমতি দেন, তবে এ প্রশ্নের উত্তরটি আমি উপস্থিত মুলতবি রাখব। কারণ শুধু এরই জন্য আমাকে পুরো এক কিস্তি পঞ্চতন্ত্র লিখতে হবে। উপস্থিত যেটা লিখছি তাতে এর স্থান সঙ্কুলান হবে না।
***
কম্যুনিসটা একটি মোক্ষম তত্ত্ব-কথা বলেন যেটা সকলেরই বিচার করে দেখা উচিত। বস্তুত এ অধম এ বাবদে গত ত্রিশ বছর ধরে চিন্তা করেছে, দলিল-দস্তাবেজ সন্ধান করেছে, ফের চিন্তা করেছে, এখনও করছে, উপকৃত হয়েছে ও হচ্ছে।
তাঁরা বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব প্রগতিশীল আন্দোলন–ইনকিলাব– যুগান্তকারী পরিবর্তন দেখতে পাই তার পিছনে থাকে অর্থনৈতিক কারণ– ইকনমি কনডিশন্।(২)
সকলেই স্বীকার করবেন, পৃথিবীতে সাতটি বড় বড় আন্দোলন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। তার ফলে সাতটি প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়, এবং তার পাঁচটি এখনও পৃথিবীতে নানা আলোড়ন সৃষ্টি করে।
সে সাতটি সচরাচর ধর্ম নামে পরিচিত। ধর্মের নাম শুনে পাঠক অসহিষ্ণু হবে না। আগে কহি।
তার তিনটির জন্ম এদেশে হিন্দু (সনাতন), বৌদ্ধ, জৈন। এ তিনটি আর্যধর্ম। শেষের জৈনধর্ম এখন পৃথিবীর নাট্যমঞ্চে আর প্রায় দৃষ্টিগোচর হয় না। বৌদ্ধধর্মের রঙ্গভূমি বহু যুগ ধরে ভারতের বাইরে।
আর তিনটি আরব-প্যালেস্টাইন নিয়ে যে সেমিতি (সেমেটিক) ভূমি সেখানে : ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমান ধর্ম (ইসলাম)। এ তিনটি সেমিতি ধর্ম। ইহুদিধর্মের বিশ্বাসীজন প্রায় দু হাজার বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর অধুনা সগৌরবে রঙ্গভূমিতে অবতীর্ণ হয়েছেন, বিশ্বলোক ভাবিছে বিস্ময়ে, যাহার পতাকা/ অম্বর আচ্ছন্ন করে, এতকাল এত ক্ষুদ্র হয়ে কোথায় ছিল ঢাকা।
সপ্তমটির জন্মস্থল ভারত এবং সেমিতি ভূখন্ত্রে মাঝখানে। এটিও খাঁটি আর্যধর্ম। প্রাচীন ইরানে এর জন্ম ও জরথুস্ত্রী বা জরথুস্ত্রের ধর্ম নামে পরিচিত। লোকমুখে এরা অগ্নি-উপাসক আখ্যায় পরিচিত। ভারতবর্ষে এখন এই পারসিদের একমাত্র না হলেও-প্রধান নিবাসস্থল। ইহুদিদের সাতশো বছর পূর্বে এঁরা রঙ্গভূমি থেকে বিদায় নেন। কিন্তু আজ যদি এঁরাও ইহুদিদের মতো দুই সেন– মারকিন জনসেন আর ইংরেজ উইলসেনকে হাত করে প্রাচীন ইরানে অধুনা আফগানিস্তানে অবতীর্ণ হয়ে বলুখ (সংস্কৃতে হিল) বদখশান দখল করে আরিয়ানা (আর্য) রাষ্ট্র প্রবর্তন করেন তবে অন্তত আমরা আশ্চর্য হব না। বলশ্য অঞ্চল রুশ সীমান্তের এ-পারে– মাঝখানে মাত্র আমুদরিয়া (নদী) এবং এশিয়ার বুকের মধ্যিখানে। এখানে মারকিন-ইংরেজের একটি কলোনি বা ঘাটির বড়ই প্রয়োজন!… লাওৎসে, কনফুৎসর নীতিবাদ ধর্ম নামে পরিচিত হয় না।
যে অর্থনৈতিক বাতাবরণের দরুন নবীন ধর্ম সৃষ্টি হয় তার অনুসন্ধান করতে গেলে ইসলাম নিয়ে আরম্ভ করাই প্রশস্ততম, কারণ এটি সর্বাপেক্ষা নবীন এবং ইসলামের পরে আর কোনও বিশ্বধর্ম জন্মগ্রহণ করেনি। তদুপরি আরবরা গোড়ার থেকেই জাত-ঐতিহাসিক। তারা হজরত সম্বন্ধে যতখানি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখে গেছে তার তুলনায় খ্রিস্ট বা বুদ্ধের জীবনী অনেক কাঁচা হাতে মহাপুরুষদের তিরোধানের প্রচুর সময়ের ব্যবধানে লেখা হয়েছে। ফলে তাঁদের ছবিগুলো আইডিয়ালাইজড– আরটিসট কল্পনার ওপর নির্ভর করেছেন বিস্তর।(৩)
হজরত যখন মক্কায় একেশ্বরবাদ প্রচার করলেন তখন মক্কাবাসী সাড়ে তিনশো দেবতা স্বীকার করত। আরেকটি বাড়লে আপত্তিটা কী? আর নামাজ-রোজাতেই-বা কী? পুজোপাট তারাও করে, আর উপোসটাও স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যুত্তম প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু যেই তিনি প্রচার করলেন, ধনীর উপর ট্যাকশো বসিয়ে সে ধন তিনি গরিবদের, হ্যাভনটদের মধ্যে বিলিয়ে দেবেন তখনই লাগল গণ্ডগোল। ওদিকে হ্যাভনটরা জুটল তার চতুর্দিকে টাকাকড়ি নয়া করে ভাগাভাগি হলে তারাই হবে লাভবান! ধনী আদর্শবাদী জুটলেন অত্যল্পই, মক্কাবাসীরা তখন স্থির করল, একে খুন না করে নিষ্কৃতি নেই।
খ্রিস্টের বেলাও তাই।
তিনিও তার প্রচারকার্য আরম্ভ করেছিলেন সমাজের দরিদ্রতম স্তরের গরিব জেলেদের নিয়ে। আধ্যাত্ম জগৎ তথা নীতিশাস্ত্র সম্বন্ধে যেসব উপদেশ তিনি দিলেন সেগুলো আজও পূর্ণ জীবন্ত কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলছেন, কেউ তোমার জামাটি অন্যায়ভাবে কেড়ে নিলে তাকে স্বেচ্ছায় জোব্বাটিও দিয়ে দিয়ে। এক পুণ্যশীল ধনীকে বলছেন, তোমরা সব কিছু বেচে ফেলে গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়ে দাও।
জেরুসলমের ইহুদি পুঁজিপতির দল তবু এসব গ্রাহ্য করেনি। ইতোমধ্যে সুলেমানমন্দিরের ভগ্নস্তূপের উপর রাজা হেরড দ্য গ্রেট নির্মাণ করেছেন এক বিরাট নবীন ঐশ্বর্যমণ্ডিত য়াহতে-মন্দির। কিন্তু মন্দির হোক আর সিনাগগই হোক, জাত-ইহুদি ওটাকে দু দিন যেতে না যেতেই ব্যবসায়ের কেন্দ্রভূমি করে তুলেছে। সেখানে চলেছে গরু-বলদের কেনাবেচা এবং তার চেয়েও মারাত্মক সুদখোর ইহুদি মহাজনরা সেখানে চালিয়েছে টাকার লেনদেন, সররাফের (ক্ষুদে ক্ষুদে ব্যাঙ্কারের) বাট্টা নিয়ে টাকাকড়ির বদলাবদলি। বস্তুত এইসব পুঁজিপতিরাই তখন পুণ্যভূমির অধিকাংশ তাদের টাকার জোরে কজায় এনে ফেলেছে।
ইহুদিভূমির প্রত্যন্ত-প্রদেশ থেকে সহস্র-সহস্র শিষ্যশিষ্যা, বিশ্বাসী গ্রামবাসী অনুগতজনকে নিয়ে প্রভু যিশু সগৌরবে প্রবেশ করলেন জেরুসলমে। সেখানে গেলেন সেই সর্বজনমান্য মন্দিরে। ব্যবসায়ীদের কারবার দেখে তিনি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন কি না বলা কঠিন, তবে তার আচরণ থেকে কিছুটা অনুমান করা যায়।
মহাজন, ক্রেতা-বিক্রেতাদের তিনি ঝেটিয়ে বের করে দিলেন মন্দিরের বাইরে। চতুর্থ সুসমাচার-লেখক সেন্ট-জন্ বলছেন (St. John) তিনি সুতোর দড়ি পাকিয়ে চাবুক বানিয়ে তাদের চাবকাতে চাবকাতে সেখান থেকে তাড়ালেন। টাকার থলেগুলো উজাড় করে ঢেলে দিলেন মাটিতে, ব্যাঙ্কারদের টেবিল করে দিলেন চিৎপাত। বললেন, শাস্ত্রে আছে : আমার ভবনের নাম হবে উপাসনা ভবন; আর তোরা এটাকে করে তুলেছিস চোরের আড্ডা (ডেন্ অব থিভজ )।
সেই সময়েই স্থির করল পুঁজিপতি ও তাদের ইয়ার যাজকসম্প্রদায়– যিশুকে বিনষ্ট করতে হবে, ক্রুশবিদ্ধ করে মারতে হবে।
***
ধনদৌলত-টাকাকড়ি।
অর্থমনর্থম্ বলেন গুণীজন। কিন্তু এ-ও সত্য– অর্থের সন্ধানে বেরুলে অর্থ (টাকাকড়ি) না-ও পেতে পারেন, কিন্তু অর্থ পেয়ে যাবেন অর্থাৎ অর্থটা– মানেটা বুঝে যাবেন। তাই অর্থমর্থমও বটে।
১. আমার বাড়ির সামনে দিয়ে গত সপ্তাহে বিড়িওলাদের মিছিল গেল– বিড়ির পুঁজিপতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে। তারা ইনকিলাব দোহাই পেড়ে বলছিল ইনক্লাব জিন্দা বাদ। শিক্ষিত লোককেও আমি ইনক্লাব উচ্চারণ করতে শুনেছি। আসল উচ্চারণ ইনকিলাব। –লাটা যতদূর চান দীর্ঘ করবেন। তার পর জিন্দাটা হ্রম্বে হ্রস্বে সারবেন। তার পর বাদটা বাদ যতদূর খুশি দীর্ঘ। অর্থাৎ ইন্। কী লা। ব!! জি। দা। বা। দ ॥
২. সর্ব ইনকিলাবের পিছনে যে অর্থনৈতিক কারণ থাকে সেটাই বিপ্লবের একমাত্র কারণ কি না, কিংবা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কারণ কি না, সে আলোচনা এস্থলে থাক।
৩. আমি এস্থলে বুদ্ধ-যিশুর একমাত্র চিন্ময় রূপের মধ্যেই (অর্থাৎ আমরা যে কল্পনার বা আইডিয়ালাইজড বর্ণনার বুদ্ধ-যিশুর ধারণা করি) নিজেকে সীমাবদ্ধ করছি। ওয়েস্ মৃন্ময় দিকটা নিয়ে মন্তব্য করেছেন—
Jesus was a penniless teacher, who wandered about the dusty sun-bit conutry of Judea, living upon casual gifts of food; yet he is always represented as clean, combed and sleek in spotless raiment, erect and with something motionless about him as though he was gliding through the air. এর পর ওয়েলস্ দেখাচ্ছেন, এই মৃন্ময় ছবির ওপরও চিন্ময় ছবির প্রভাব ফেলেছে This alone has made him unreal and incredible to many people who cannot distinguish the core of the story from the omamental and unwise additions of the unintelligently devout. বুদ্ধের সম্বন্ধেও তিনি অনুরূপ মন্তব্য করেছেন। এ বাবদে হজরত অতিশয় সাবধান ছিলেন।