অমৃত কুম্ভের সন্ধানে – ১৯

১৯

প্যাসেঞ্জার গাড়ি। ঠেকতে ঠেকতে পরদিন সকালে বর্ধমান পৌঁছল। প্রায় পুরো চল্লিশ ঘণ্টা। নতুন গাড়ি ধরতে হবে। লক্ষ্মীদাসীও নেমে গেল। পায়ে হাত দিয়ে বললো, ‘ঠাকুর!’

তাড়াতড়ি পা ছাড়িয়ে বললাম, ‘বলো।’

আশ্চর্য! সে গান গেয়ে উঠলো। এমন মিষ্টি গলাটি লক্ষ্মীদাসীর! তাই তো! সে যে বলরামের গুরু। গুনগুন করে গাইল—

‘মনের আগুন কেউ দেখলো না।
তোমার বাঁশির সুরে বাতাস আগুন।
য্যাখন ত্যাখন আইসে ফাগুন।।
বাজাইয়ে ফিরলে বন্ধু,
আমার মন দেখলো না।’

সে চোখ বুজে গাইতে লাগল। দু’-চোখ দিয়ে নেমে এলো জলের ধারা। মন্দিরে রাধারানী আজ মূল গায়েনের অভাবে নিজে গেয়ে কাঁদছে। তার সঙ্গীরা ঘিরে দাঁড়িয়ে রইলো।

আমার গাড়ি এলো। চলে গেলাম। অমৃতের সন্ধানে গিয়েছিলাম। কী নিয়ে ফিরে এলাম জানি নে। কেবল যেদিকেই ফিরি, সেদিকেই বড় ভারী। সকলের কথা, সকলের মুখগুলি একে একে মনে পড়ছে।

সেই চেনা মিছিলের মধ্যে দিয়েই দ্বিপ্রহরের নিরালা গ্রামের পথে চলেছি ঘরে। বাগদিপাড়ায় ঢুকে মোড় নিতে গেলাম। কে বললো, ‘ফিরে এলেন গো বাবা? একটু দাঁড়ান।’

কে? বুড়ি অবলা বাগদিনি। সে কেন দাঁড়াতে বললো? আর পথে দাঁড়াতে পারি নে। সে কথা বলে। কিন্তু ঘোমটা তেকে মুখ দেখায় না। মস্ত একটি ঘোমটা টেনে কলসী কাঁখে ফিরে এলো। বললো, ‘জুতা খোলেন।’

‘কেন?’

‘খোলেন না।’

খুললাম। এক কলসী জল পায়ে ঢেলে দিয়ে বললো, ‘তীত্থিখেত্তর থেকে এলেন। পা ধুইয়ে দিতে হয় যে। নিয়ম কিনা!’

ঠাণ্ডা স্পর্শে সমস্ত শরীরটা যেন জুড়িয়ে গেল। আর এতক্ষণে সব ঝাপ্‌সা হয়ে এলো চোখের সামনে।

যাত্রার শেষ কোথায়? ঘরের কাছে এসে বুড়ি অবলা বাগদিনী আমাকে নতুন অমৃত-সন্ধানের জলধারা দিল পায়ে! সন্ধানের শেষ নেই।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *