বোধিসত্ত্বাবদান-কল্পলতা সন্ন্যাসী উপগুপ্ত মথুরাপুরীর প্রাচীরের তলে একদা ছিলেন সুপ্ত — নগরীর দীপ নিবেছে পবনে , দুয়ার রুদ্ধ পৌর ভবনে , নিশীথের তারা শ্রাবণগগনে ঘন মেঘে অবলুপ্ত । কাহার নূপুরশিঞ্জিত পদ সহসা বাজিল বক্ষে ! সন্ন্যাসীবর চমকি জাগিল , স্বপ্নজড়িমা পলকে ভাগিল , রূঢ় দীপের আলোক লাগিল ক্ষমাসুন্দর চক্ষে । নগরীর নটী চলে অভিসারে যৌবনমদে মত্তা । অঙ্গে আঁচল সুনীল বরন , রুনুঝুনু রবে বাজে আভরণ — সন্ন্যাসী - গায়ে পড়িতে চরণ থামিল বাসবদত্তা । প্রদীপ ধরিয়া হেরিল তাঁহার নবীন গৌরকান্তি — সৌম্য সহাস তরুণ বয়ান , করুণাকিরণে বিকচ নয়ান , শুভ্র ললাটে ইন্দুসমান ভাতিছে স্নিগ্ধ শান্তি । কহিল রমণী ললিত কণ্ঠে , নয়নে জড়িত লজ্জা , ক্ষমা করো মোরে কুমার কিশোর , দয়া করো যদি গৃহে চলো মোর , এ ধরণীতল কঠিন কঠোর এ নহে তোমার শয্যা ।' সন্ন্যাসী কহে করুণ বচনে , ‘ অয়ি লাবণ্যপুঞ্জে , এখনো আমার সময় হয় নি , যেথায় চলেছ যাও তুমি ধনী , সময় যেদিন আসিবে আপনি যাইব তোমার কুঞ্জে । ' সহসা ঝঞ্ঝা তড়িৎশিখায় মেলিল বিপুল আস্য । রমণী কাঁপিয়া উঠিল তরাসে , প্রলয়শঙ্খ বাজিল বাতাসে , আকাশে বজ্র ঘোর পরিহাসে হাসিল অট্টহাস্য । ... বর্ষ তখনো হয় নাই শেষ , এসেছে চৈত্রসন্ধ্যা । বাতাস হয়েছে উতলা আকুল , পথতরুশাখে ধরেছে মুকুল , রাজার কাননে ফুটেছে বকুল পারুল রজনীগন্ধা । অতি দূর হতে আসিছে পবনে বাঁশির মদির মন্দ্র । জনহীন পুরী , পুরবাসী সবে গেছে মধুবনে ফুল - উৎসবে — শূন্য নগরী নিরখি নীরবে হাসিছে পূর্ণচন্দ্র । নির্জন পথে জ্যোৎস্না - আলোতে সন্ন্যাসী একা যাত্রী । মাথার উপরে তরুবীথিকার কোকিল কুহরি উঠে বারবার , এতদিন পরে এসেছে কি তাঁর আজি অভিসাররাত্রি ? নগর ছাড়ায়ে গেলেন দণ্ডী বাহিরপ্রাচীরপ্রান্তে । দাঁড়ালেন আসি পরিখার পারে — আম্রবনের ছায়ার আঁধারে কে ওই রমণী প ' ড়ে এক ধারে তাঁহার চরণোপ্রান্তে ! নিদারুণ রোগে মারীগুটিকায় ভরে গেছে তার অঙ্গ — রোগমসীঢালা কালী তনু তার লয়ে প্রজাগণে পুরপরিখার বাহিরে ফেলেছে , করি' পরিহার বিষাক্ত তার সঙ্গ । সন্ন্যাসী বসি আড়ষ্ট শির তুলি নিল নিজ অঙ্ক — ঢালি দিল জল শুষ্ক অধরে , মন্ত্র পড়িয়া দিল শির - ' পরে , লেপি দিল দেহ আপনার করে শীতচন্দনপঙ্ক । ঝরিছে মুকুল , কূজিছে কোকিল , যামিনী জোছনামত্তা । ‘ কে এসেছ তুমি ওগো দয়াময় ' শুধাইল নারী , সন্ন্যাসী কয় — ‘ আজি রজনীতে হয়েছে সময় , এসেছি বাসবদত্তা ! '
খুব সুন্দর। যখন যেখানে যাই, সাথে থাকেন কবিগুরু – একাধারে ঠাকুর, বন্ধু, গুরু, রবি ইন্দ্র নাথ ঠাকুর। আর কী চাই? ‘তৃষ্ণার শান্তি, সুন্দর কান্তি।’