অভিশপ্ত তলোয়ার – পার্থ সারথি পরামানিক

অভিশপ্ত তলোয়ার – পার্থ সারথি পরামানিক

তলোয়ার‌টা বারবার হাতে নিয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখতে লাগলেন অজিত‌বাবু । স্ফটিকের মতো ঝকঝকে ফলা – মনে হয় যেন অনায়াসে এক কোপে আস্ত একটা মহিষের মাথা খুচ করে কেটে ধড় থেকে নামিয়ে দিতে পারে । হাতলটা মসৃণ কোন ধাতু দিয়ে মোড়া আর স্থানে স্থানে নানা রঙের চকচকে ছোট ছোট পাথর বসানো এবং ইসলামি যুগের কারুকার্য করা । খাপটাও অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর । প্রচুর রত্ন বসানো আর একইরকম কারুকার্য করা । তলোয়ারটা দেখেই চোখ চিকচিক করে ওঠে অজিতবাবুর । “কোথা থেকে কিনলেন এটা ? এ তো দুষ্প্রাপ্য জিনিষ মশাই ।”

“দিল্লী থেকে । তবে দুষ্প্রাপ্য কি না তা আমি ঠিক বলতে পারবো না । তাই তো আপনাকে দেখালুম । আমায় বলে কিনা এটা মুঘল যুগের তলোয়ার ! ..” চায়ের কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন প্রশান্তবাবু।

“দেখে তো তাই মনে হচ্ছে হে । যে ধরণের কারুকার্য দেখছি তা তো মুঘল যুগের বলেই ঠাওর হচ্ছে। তবে ফলাটা দেখে আমার কেমন সন্দেহ হয় – এত বছর আগের অথচ এমন দাগহীন, মরচেহীন, ঝকঝকে আছে যেন এখনও নিত্য ব্যবহৃত হয় এই তলোয়ার ।”

“ও হয়তো বেচার জন্য ওরাই পালিশ–টালিশ করে রেখেছে ।”

“হবে হয়তো । তা আপনি এটা পেলেন কোথায় ?”

“গত সপ্তাহে দিল্লি গেছিলুম । ওখানেই একটা অনামী অ্যান্টিক শপ থেকে । বলে কিনা এটা সম্রাট ঔরঙ্গজে‌বের তলোয়ার ! যুবক ঔরঙ্গজেব নাকি তাঁর এক সৈনিককে এই তলোয়ারটা দিয়ে বলেছিলেন বন্দী দারা শিকোর মস্তক ছিন্ন করে পিতা শাহজাহানকে ভেট দিতে । …এই সেই তলোয়ার যা দিয়ে কাটা হয়েছিল দারা শিকোর মস্তক ।”

“বলেন কি !!”

“আর‌ও শুনুন । যদিও এর সত্যাসত্য আমি জানি না, তবে গল্পটা বেশ । এই তলোয়ারটা ঔরঙ্গজেব সেই সৈনিককেই পুরস্কার সরূপ প্রদান করেন । দারা শিকো খুবই ধর্মপরায়ণ ছিলেন । হিন্দু ধর্ম ও মুসলিম ধর্মের মধ্যে একটা সেতু নির্মাণের চেষ্টা করেছিলেন তিনি । তিনি নাকি গীতা, উপনিষদ ফারসি ভাষায় অনুবাদ করা শুরুও করেছিলেন । এ হেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের রক্ত পান করে এই তলোয়ারটা নাকি অভিশপ্ত হয়ে পড়ে আর সেই সৈনিকটাও কেমন উন্মাদ হয়ে যান । পরে তিনি আবার তাঁর এক আত্মীয়কে তলোয়ারটা দিয়ে দেন । এবং শোনা যায় তারপরেই কোন‌ও অজানা কারণে সেই ব্যক্তি ওই তলোয়ার দিয়েই বাড়ির সকলকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন । তারপর থেকে আর ওই তলোয়ারের কোন‌ও খোঁজ ছিল না । গত মাসে এক মুসলিম ছোকরা দাবী করে তাদের বাড়িতে একটা টিনের বাক্সে বহু বছর ধরে কিছু পুরনো জিনিসের সাথে এটাও পড়ে ছিল । তাদের বংশের কেউ ওই সৈনিক বা রাজপরিবারের সাথে যুক্ত কিনা বা কিভাবে তাদের কাছে ওই তলোয়ারটি পৌঁছাল তার সদুত্তর‌ সে দিতে পারে নি । তবে তলোয়ারের সাথে উর্দুতে লেখা একটা পুরনো চিঠি পাওয়া গেছে যাতে বোঝা যায় এটা সেই অভিশপ্ত তলোয়ার ! ভয়ে কেউ ওটি ছুত না । ছেলেটি অবশ্য এতো কিছু জানত না । তার খুব অর্থের প্রয়োজন, দাদু হাসপাতালে ভর্তি । তাই ওই অ্যান্টিক শপে গিয়ে তলোয়ারটা বিক্রি করে দেয় । কিন্তু এই সব কারনেই তলোয়ারটা কেউ কিনতে চাইছিল না, অনেকে আবার এই সব গালগল্প বিশ্বাস করতেও চায় নি । এই সময় আমি পৌঁছাই । তুমি তো জান, ইতিহাস নিয়ে আমার কোন‌ও মাথা ব্যথা নেই । আমার যথেচ্ছ টাকা আছে তাই এই সব আমি কিনি – ঘরে সাজাই । আপনাদের দেখাই তাতেই আমার আনন্দ । আর এই তলোয়ারটা আমার বেশ লেগেছে । দেখুন বার করে, হাতলটা একবার ধরে দেখুন ।”

“না, না তাহলে কাজটা আপনি মোটেও ভালো করেন নি ।”

“এই এতো বড় বাড়িতে একা থাকি । ছেলে-মেয়ে তো বিদেশে । ওই জনাকয়েক চাকর-বাকর আছে এই যা । দিন দিন যা চোর ডাকাতের উপদ্রব বাড়ছে তাতে আমার শখের অ্যান্টিক পিস‌গুলো আর কতদিন বাঁচিয়ে রাখতে পারব বলা যায় না । তাই এই রকম একটা অস্ত্র হাতের কাছে থাকাটা মন্দ কি !” বলে হাসতে লাগলেন প্রশান্তবাবু ।

অজিতবাবু তলোয়ারটা ময়ান থেকে বার করে এক নিমিষে বেশ কায়দা করে তুলে ধরলেন ।

“আপনি তো দেখছি অসি চালনায় বেশ পারদর্শী, মশাই !”

অজিতবাবু কোন‌ও কিছু উত্তর না দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে বার কয়েক শূন্যে তলোয়ারটা ঘুরিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন প্রশান্তবাবুর দিকে । প্রশান্তবাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজিতবাবু তলোয়ার উঁচু করলেন আর এক কোপ বসাতে গেলেন প্রশান্তবাবুর ঘাড়ে । প্রশান্তবাবু প্রাণ বাঁচাতে চেয়ার থেকে লাফিয়ে পড়লেন ।

অজিতবাবু সাথে সাথে হো হো করে হেসে উঠলেন । “কোন উজবুকে আপনাকে কি বুঝিয়ে দিল আর আপনিও সেটা বিশ্বাস করে নিলেন । ধন্যি মশাই আপনি ! এই তলোয়ারটা খুব সুন্দর এবং মনোহারী… এবং খুব সম্ভবত মুঘল আমলেরই কিন্তু তা বলে এটা সেই তলোয়ার যা দিয়ে শাহজাদা দারা শিকোর মস্তক কাটা হয়েছিল তা মানতে পারলুম না । আজ চলি । সাবধানে থাকবেন আর এসব নিয়ে একদম বেশি ভাববেন না ।”

***

দিন কয়েক পর । রাতে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল প্রশান্তবাবুর, কানে এলো একসাথে অনেক জনের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ । তিনি বিছানায় উঠে বসলেন, না, স্বপ্ন নয় – তখনও কানে আসছে চাপা কান্নার আওয়াজ । কান্নাটা এ ঘর থেকেই আসছে কিন্তু খুব ক্ষীণ ভাবে । প্রশান্তবাবু কিছু খুঁজে পেলেন না । তিনি আবার শুয়ে পড়লেন । এরকম পরপর দু’তিন দিন ঘটল । প্রশান্তবাবু ভাবলেন কেউ নিশ্চয় তাঁকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে । তাই তিনি তলোয়ারটা শো-কেস থেকে বার করে হাতের কাছে একটা টেবিলের উপর রাখলেন ।

রাত তখন বারটা হবে । অমাবস্যার রাত, বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার । হঠাৎ প্রশান্তবাবুর কানে এলো সেই একই রকম কান্নার শব্দ । তিনি বিছানায় উঠে বসলেন তখন‌ও কানে আসছে সেই চাপা কান্নার আওয়াজ । এবার যেন অনেক সামনে থেকে । তিনি টেবিলের উপর রাখা তলোয়ারটা ধরলেন তারপর এক নিমিষে ময়ান থেকে নগ্ন তলোয়ারটা বার করলেন । সাথে সাথে যেন একটা বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলে গেল তার সারা শরীরে । তিনি কেমন বিভোর হয়ে তলোয়ার উঁচিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলেন । কে যেন তাঁকে ফিসফিসিয়ে বলতে লাগল “রক্ত দাও । আমায় রক্ত দাও । বহু দিন আমি রক্ত পান করি নি ।”

প্রশান্তবাবু এক‌ই‌রকম ভাবে চলতে লাগলেন । বাইরে বেরিয়ে দেখলেন, পোষা কুকুরটা সিঁড়ির এককোনে শুয়ে রয়েছে । প্রশান্তবাবু তার কাছে যেতেই সে কুঁই কুঁই করতে লাগলো । প্রশান্তবাবুর মাথায় তখন আগুন জ্বলছে আর তাঁর কানে জোরে জোরে বাজ‌ছে এক নির্মম আকুতি “দাও… আমায় রক্ত দাও … বহু দিন আমি রক্ত পান করি নি” ।

প্রশান্তবাবু যন্ত্রচালিতের মতো তলোয়ারের এক কোপ বসালেন, সাথে সাথে কুকুরটার মাথাটা ধড় থেকে আলাদা হয়ে গেল । আর তারপরেই একটা পরিতৃপ্তির শব্দ এল তাঁর কানে “আঃ …” । মুণ্ডহীন দেহটা খানিকক্ষণ ছটফট করে শান্ত হয়ে পড়ল ।

তারপর হঠাৎ যেমন শুরু হয়ে ছিল তেমনি বন্ধ হয়ে গেল সেই সমবেত ক্রন্দন … সেই আকুতি । প্রশান্তবাবু আবার ঘরে গিয়ে তলোয়ারটা আগের মতোই ময়ানের ভিতর ভরে দিয়ে শুয়ে পড়লেন ।

***

চাকরদের সমবেত চিৎকারে সকাল বেলায় ঘুম ভাঙল প্রশান্তবাবুর । উঠে দেখলেন পোষা কুকুরটাকে কে যেন তলোয়ারের এক কোপে দু’টুকরো করে দিয়েছে । তিনি জোর দিয়ে মনে করার চেষ্টা করতে লাগলেন কিন্তু সেই কান্নার শব্দ শুনে জেগে যাওয়ার পর ঠিক কি ঘটেছিল আর মনে করতে পারলেন না । যেটা আন্দাজ করছেন সেটা আদৌ সত্যি ছিল, নাকি স্বপ্ন ছিল তাও ঠাওর করতে পারলেন না । তবু সন্দেহ যে ওই তলোয়ারের দিকেই যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । প্রশান্তবাবু ছুটে গেলেন টেবিলটার কাছে । তারপর তলোয়ারটা খাপ থেকে বার করে জানালা দিয়ে আসা রোদের উপর ধরলেন । স্ফটিকের মতো ফলাটা রোদে ঝলমল করে উঠল । কিন্তু তাতে এক ফোঁটা রক্তের কোন‌ও দাগ নেই । তাহলে কে এবং কি দিয়ে হত্যা করল ওই অবলা প্রানীটাকে ! আর কেনই বা করল ! কোন‌ও উত্তর খুঁজে পেলেন না তিনি ।

পাঁচ-কান হ‌ওয়ার আগেই চাকর-বাকরদের দিয়ে মৃতদেহটার সৎকারের বন্দোবস্ত করালেন প্রশান্তবাবু

কিন্তু তাঁর মনটা খচখচ করতেই লাগলো । তাঁর বারবার মনে হতে লাগলো এটা ওই তলোয়ারটা দিয়েই কাটা হয়েছে । কিন্তু কে এভাবে হত্যা করল কুকুরটাকে ! তবে কি তিনি নিজেই !!! না, না তা কি করে সম্ভব ! তলোয়ারটা তিনি কিনেছেন বটে কিন্তু ওই সাজিয়ে রাখার জন্য বা দু’এক জনকে ডেকে দেখানোর জন্য, ওটা দিয়ে কার‌ও খুন করার মতো সাহস এবং শক্তি দুটোই তাঁর নেই । তবে !!!

যথারীতি দিনের পর রাত্রি এলো । মাঝরাতে আবার সেই একসাথে অনেক জনের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ তাঁর কানে এল । প্রশান্তবাবু থর থর করে কাঁপতে লাগলেন । বুঝলেন আবার হয়তো সেই তলোয়ারটা তাঁকে ডাকবে । তার সেই হৃদয় বিদীর্ণ করা আহ্বান “এসো… আমায় রক্ত দাও…আমায় পরিতৃপ্ত কর“ যেন তাঁর কানে বাজতে লাগল । তিনি জোর করে বালিশে মুখ গুঁজে থাকলেন । তারপর আর তাঁর কিছু মনে নেই ।

ভোর হতেই ঘরে ঢুকল কাজের ছেলে রঘুবীর আর দারোয়ান ভীমসেন । রাতে এরাই এ বাড়িতে থাকে বাকিরা সন্ধ্যের আগেই চলে যায় । এরপর তারা যা শোনাল তাতে মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড় প্রশান্তবাবুর ।

প্রশান্তবাবু মাঝরাতে তলোয়ারটা নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামেন । ভীমসেন তখন একটু বাথরুমে গেছিল । এই ফাঁকে তিনি বাইরের গেট খুলে বেরিয়ে যেতে থাকেন ভীমসেন প্রশান্তবাবুকে পিছু থেকে হাঁক দেয় । কিন্তু তিনি উন্মত্তের মতো তলোয়ারটা হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়েন । তারপর রাস্তার উপর ইতস্তত ঘোরাঘুরি করতে করতে হঠাৎ রাস্তার পাশে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত অন্ধ ভিখারিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ান তারপর নিমেষে তার গলায় এক কোপ বসান । সাথে সাথে তার মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায় । মুণ্ডহীন রক্তাক্ত দেহটা খানিকক্ষণ ছটফট করতে করতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে । তারপর তিনি আবার বাড়ি ফিরে এসে তলোয়ারটা যথাস্থানে রেখে শুয়ে পড়েন । রাতে ভয়ে আর প্রশান্তবাবুর কাছে আসার মতো সাহস জোটাতে পারে নি ভীমসেন । সে সব কথা রঘুবীরকে জানায় তারপর এখন দুজন মিলে তাঁর ঘরে এসেছে ।

প্রশান্তবাবু রাস্তার দিকের জানালা ফাঁক করে দেখলেন রাস্তার ওপাশে ল্যাম্পপোস্টের নীচে তখনও একটা লোকের দু’টুকরো দেহ পড়ে রয়েছে । তিনি সাথে সাথে লকারের চাবিটা ভীমসেনের হাতে দিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে বললেন “যত টাকা লাগে নিয়ে নাও কিন্তু আমাকে এ যাত্রা তোমরা বাঁচাও । লাশটার কিছু ব্যবস্থা কর ।“

কিন্তু লাভের লাভ কিছু হল না । একটা পুলিশের গাড়ি তক্ষুনি এসে থামল লাশটার সামনে । যেহেতু ওখান থেকে প্রশান্তবাবুর বাড়িটাই সবচেয়ে সামনে আর আসেপাশে বিশেষ কোনও বাড়ি নেই তাই অবধারিত ভাবে প্রথম টোকাটা তাঁর বাড়িতেই পড়ল ।

প্রশান্তবাবু হাত জোড় করে বললেন “প্লিজ, পুলিশকে কিছু বোলো না । তোমাদের টাকার অভাব হবে না । … হায় ভগবান ! কি কুক্ষণে যে এই অভিশপ্ত তলোয়ারটা কিনেছিলাম !”

***

তাই হল । রঘুবীর আর ভীমসেন পুলিশকে কিছু জানালে না । তবে কথায় আছে ‘পুলিশের চোখ’ ! সাব ইন্সপেক্টর হীরালালবাবু আর একজন কনস্টেবল সব ঘরগুলো ঘুরে দেখতে দেখতে প্রশান্তবাবুর শোবার ঘরে এলেন । সেখানে তখনও টেবিলের উপর খাপবদ্ধ তলোয়ারটা নামানো । হীরালালবাবুর চোখ ঝলমল করে উঠল । যেন এই জিনিসটিই তিনি এতক্ষণ খুঁজছিলেন । তিনি পকেট থেকে রুমালটা বার করে টেবিল থেকে তুলে ময়ান থেকে ঝকঝকে তলোয়ারটা বার করে প্রশান্তবাবুর সম্মুখে তুলে ধরে বললেন “এটা আপনার !”

প্রশান্তবাবু থতমত খেয়ে বললেন “হ্যাঁ, অ্যান্টিক পিস । দিল্লি থেকে কিনেছি । কাগজ আছে ।“

“আচ্ছা ! কিন্তু এসব জিনিষ তো বাড়ি সাজাবার জিনিষ নয়, প্রশান্তবাবু”

প্রশান্তবাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তাঁকে কোনও সুযোগ না দিয়েই হীরালালবাবু আবার বললেন “বডিটা কি দেখেছেন ? প্রাথমিক অনুমান গলাটা কিন্তু এরকম কোনও অস্ত্র দিয়েই এক কোপে কাটা হয়েছে । তাই আপনিও সন্দেহের বাইরে নন ।“

“দেখুন আপনি কিন্তু মিথ্যে দোষারোপ করছেন । অযথা একটা ভিকিরিকে মেরে আমার কি লাভ ! আর আমি খুন করলে কি খুনের অস্ত্র এভাবে টেবিলে সবার সম্মুখে সাজিয়ে রাখতুম, না আমি এভাবে বসে থাকতুম ! …আমার বাড়ির সামনে খুন হলে যে সবার আগে আমার দিকেই সন্দেহ যাবে এটা না বোঝার মত বাচ্চা আমি নই নিশ্চয় !” আমতা আমতা করে বললেন প্রশান্তবাবু ।

“গুড পয়েন্ট ! কিন্তু লাভ কিছু হবে না মিস্টার চৌধুরী । খুনিকে আমি খুঁজে বার করবই । বাই দ্য ওয়ে, আপনি ডকুমেন্টগুলো দিন আর এটা ফরেনসিক টেস্টের জন্য নিয়ে চললাম । … জানি আপনার টাকা আছে এবং উপর মহল পর্যন্ত পরিচয়ও আছে । কিন্তু যে খুন হয়েছে তার না টাকা আছে না পরিজন তবে আপনাকে আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি খুনিকে আমি খুঁজে বার করবই । প্রমিস । আর হ্যাঁ, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত না জানিয়ে কেউ কোত্থাও যাবেন না ।“

বলে হীরালালবাবু চলে গেলেন ।

***

দিন কয়েক পর । বাগানের পাশে বসে চা খাচ্ছিলেন প্রশান্তবাবু আর অজিতবাবু । “যাই বলুন ওই তলোয়ারটা কিন্তু অভিশপ্ত … এই ক’দিন তলোয়ারটা নেই আমার ঘুমে কিন্তু কোনও ব্যাঘাত ঘটে নি । আর কারও রক্তপাতও ঘটে নি ।“ বললেন প্রশান্তবাবু ।

“আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি এসব আপনার মনের ভুল । একটা প্রাণহীন জড়পদার্থ নিজে থেকে কাউকে দিয়ে কিছু করাতে পারে না, প্রশান্তবাবু ! মনকে শক্ত করুন ।”

“আপনি যাই বলুন ওই তলোয়ার আর আমি ফেরত চাই না । এই বেশ আছি । তবে ওদিকটা একটু দেখবেন । এ যাত্রা আপনারা আমাকে বাঁচান ।“

“দেখুন কমিশনারসাহেব আমার বাল্যবন্ধু ঠিকই কিন্তু তিনি অন্যায় কিছু করবেন না । তবু আমি আপনার কথা কিছুটা বলেছি । এইসব ভৌতিক ব্যাপার–সেপার তো ওনারা বিশ্বাস করবেন না তাই আমি একটু অন্যভাবে জানিয়েছি… চিন্তা করবেন না । একটা ভিকিরিকে নিয়ে আশা করি বেশি জল ঘোলা হবে না…”

এমন সময় একজন কনস্টেবল নিয়ে সাব ইন্সপেক্টর হীরালালবাবু প্রবেশ করলেন । “গুড মর্নিং ।“ তারপর অজিতবাবুকে দেখে বললেন “ও আপনিও এখানে ! হোয়াট এ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ ! তা ভালো আছেন তো !”

“হ্যাঁ । ভালো । বসুন ।“

প্রশান্তবাবু কেমন যেন চুপসে গেলেন । “কি মিস্টার চৌধুরী । চা বলবেন না !”

“সরি ।” বলে রঘুবীরকে চা আনতে বললেন ।

“এই নিন আপনার অ্যান্টিক পিস । সাবধানে রাখবেন । খুব মূল্যবান আর দুষ্প্রাপ্য জিনিষ । তবে রক্তের কোনও ট্রেস পাওয়া যায় নি । একেবারে নিট অ্যান্ড ক্লিন ।“ বলতে বলতে ইশারায় কনস্টেবলটিকে কাছে ডাকলেন এবং টেবিলে নামিয়ে দিলেন ময়ান-সুদ্ধ তলোয়ারটা । “তবে… আপনাকে এখনও সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখা যাচ্ছে না । সরি ।“

প্রশান্তবাবু তবু কিছুটা স্বাস্তি পেলেন । হীরালালবাবু চা শেষ করে বিদায় নিলেন ।

“আর আমি এটা বাড়িতে ঢোকাতে চাই না ।“ হীরালালবাবু চলে যেতেই বললেন প্রশান্তবাবু ।

“কি অবান্তর কথা বলছেন !“

“না, অবান্তর নয় । ওটা বড় সাঙ্ঘাতিক জিনিষ । আপনি জানেন না ।“

“আচ্ছা কেমন সাঙ্ঘাতিক জিনিষ তা একবার আমি নিয়ে গিয়ে দেখতে পারি কি !”

“দেখুন আমি আপনাকে বিপদে ফেলতে চাই না । তবু যদি সাহসে কুলোয় তো আমার আপত্তি নেই । আর ওর মুখ দেখতে আমি চাই নে ।“

“আচ্ছা বেশ । তাহলে আমিও একবার পরখ করে দেখি । আপনার কথা সত্যি না মিথ্যে !“

যাবার সময় অজিতবাবু তলোয়ারটা হাতে নিয়ে নিজের গাড়িতে উঠলেন ।

***

দিন কয়েক কোনও খারাপ খবর এল না । ওই অন্ধ ভিখারিটির খুনিও ধরা পড়ল । একটা পাগল গোছের লোক । সাজানো কি সত্যি তা প্রশান্তবাবু জানেন না তবে তিনি নিশ্চিন্ত হলেন । রঘুবীর আর ভীমসেনকে টাকা-কড়ি দিয়ে বাড়ি চলে যেতে বললেন । তারা মনের আনন্দে প্রশান্তবাবুর বাড়ি ছেড়ে চলে গেল ।

হঠাৎ ওই সোয়া বারটার দিকে সাব ইন্সপেক্টর হীরালালবাবুর একটা ফোন এল । “নমস্কার । খবর নিশ্চয় শুনেছেন … খুনি ধরা পড়েছে । এবার আপনারা ফ্রি … তবে আমি স্যাটিস্ফায়েড নই । আমার সন্দেহ যার প্রতি তিনি এই সব চুনোপুঁটি নন … একেবারে রাঘব বোয়াল ! অফিসিয়ালি হয়তো কেসটা খুব তাড়াতাড়ি ক্লোজড হয়ে যাবে কিন্তু আমি এত সহজে কেসটা ক্লোজ করছি না । অপরাধীকে উচিত শিক্ষা না দিয়ে আমি ক্ষান্ত হচ্ছি না । যাই হোক, আপনার জন্য একটা খবর আছে …”

“আমার জন্য ! কি খবর !” অবাক হয়ে বললেন প্রশান্তবাবু ।

“খবরটা আপনাকে নিজেকেই সংগ্রহ করতে হবে আমি শুধু ঠিকানাটা জানিয়ে দিচ্ছি … মিলেনিয়াম পার্ক… টাইম দুপুর একটা … বাই ।“

প্রশান্তবাবু হতভম্ব হয়ে খানিকক্ষণ ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকলেন । কি খবর আর দিতে চাইছেন হীরালালবাবু ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলেন ১২:৩০ । তিনি আর কাল বিলম্ব না করে গাড়ি বার করলেন । তারপর মিলেনিয়াম পার্কে গিয়ে দেখলেন পার্ক মোটামুটি ফাঁকা গুটিকতক লোক গাছের ছায়ায় চেয়ারের উপর বসে রয়েছে । হঠাৎ তাঁর চোখ পড়ল কোণার একটা চেয়ারের দিকে ! দেখলেন রঘুবীর আর ভীমসেন বসে । এরা এখানে কি করছে ! এদের তো সোজা বাড়ি যাওয়ার কথা ! ব্যাপারটা জানার জন্য সন্তর্পণে এগিয়ে গেলেন তিনি । তারপর বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে দেখলেন সেখানে হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ করলেন অজিতবাবু ! তিনি তাদের হাতে বেশ কিছু টাকা দিলেন তারপর আবার যেমন এসেছিলেন তেমনি চলে গেলেন ।

প্রশান্তবাবু কিছু বুঝতে পারলেন না । তাঁর বাড়ির কর্মচারীদের লুকিয়ে অজিতবাবু কেন টাকা দিচ্ছেন ! কি করাতে চাইছেন উনি ! তবে কি আবার তাঁকে পুলিশের জালে ফেলতে চান !

প্রশান্তবাবু রঘুবীর আর ভীমসেনের পথ আগলে দাঁড়ালেন । “অনেক হয়েছে … সব কথা আমাকে খুলে বল… আমি সব জানতে চাই …নইলে … “ বলে একটা ছোট্ট পিস্তল বার করলেন তিনি ।

তারপর তিনি যা শুনলেন তাতে তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে যাওয়ার জোগাড় ! এ যেন কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যের থেকে কোনও অংশে কম নয় ! তাঁর সাথে যেটা ঘটেছে সেটা ওই তলোয়ারটার অলৌকিক কাণ্ড নয় অজিতবাবুর শয়তানি ! রঘুবীর আর ভীমসেনকে হাত করে মাকড়সার মতো জাল বুনেছেন অজিতবাবু আর তিনি অসহায় পতঙ্গের মতো সে জালে আটকা পড়েছেন । তলোয়ারটা দেখার সাথে সাথেই যে অজিতবাবুর চোখ চিক চিক করে উঠেছিল তা তাঁর চোখকেও ফাঁকি দিতে পারে নি । কিন্তু এতো বড়ো প্রতারণা তিনি করতে পারলেন তাঁর সাথে !

সে তলোয়ার হয়তো আর তিনি ফেরত পাবেন না । আর পেতেও চান না । তলোয়ারটা সত্যিই অভিশপ্ত এতদিনের বন্ধুত্ব এক নিমেষে কেমন ছিন্ন করে দিল !

তবু একবার অজিতবাবুর মুখ থেকেই সব কথা জানার জন্য ফোন করলেন তিনি । নম্বর ডায়েল করতেই শুনলেন “দিস নম্বর ডাজ নট এগজিস্ট …” ।

প্রশান্তবাবু গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন । মনটা বড় ভারাক্রান্ত । দেশের মাটি, দেশের পরিচিত মানুষজনদের ছেড়ে তিনি ছেলে–মেয়েদের সাথে বিদেশ- বিভুঁয়ে যেতে চান নি । অথচ এরাই তাঁর সাথে এমন ব্যবহার করল ! শুধু তলোয়ারটা নয়, যে মানসিক চাপের মধ্যে তিনি গেলেন তাতে তো যেকোনও সময় একটা কিছু ঘটে যেতে পারত !

তাহলে, সেই ভিকিরিটাকে কে খুন করল ? অজিতবাবু ! হীরালালবাবু কি তবে সব জানতে পেরেছেন ! তাই কি তিনি রাঘব বোয়ালের কথা বললেন ! মাথাটা যেন চক্কর দিতে লাগল প্রশান্তবাবুর ।

গাড়ি পার্ক করে ঘরে ঢুকতেই নতুন কাজের ছেলেটি বলল “দুজন লোক আপনার সাথে দেখা করতে এসেছেন ।“

প্রশান্তবাবু দেখলেন কাল আলখাল্লা জাতীয় পোশাক-পরা একজন বয়স্ক মুসলিম ভদ্রলোক আর একজন কম বয়স্ক ছেলে খুব সম্ভবত সেও মুসলিম । পরনের জামা কাপড় অত্যন্ত সাধারণ ।

“হ্যাঁ, বলুন কি বলবেন ?”

“আপনি আমাদের চিনবেন না । আমরা দিল্লী থেকে আসছি । সেই তলোয়ারটা কোথায় !” ভাঙ্গা বাংলায় বললেন ভদ্রলোক ।

“কোন তলোয়ার ?”

“কেন বুঝেও না বোঝার ভান করছেন । ওটা সাংঘাতিক জিনিষ আছে ! দয়া করে ওটা আমায় ফেরত দিন”

“দেখুন আপনাদের জারি-জুরি সব ধরা পড়ে গেছে । অজিতবাবু আমায় ধোঁকা দিয়ে তলোয়ারটা নিয়ে গেছেন । হয়তো এতদিনে বেচেও ফেলেছেন । আমি সব জেনে গেছি এখন আর এসব করে কি লাভ !“

“অজিতবাবু ! তিনি আবার কে ? …আজকে তলোয়ারটা আমায় পেতেই হবে । নইলে অনর্থ হবে ।“

“কেন আর নাটক করছেন !”

“নাটক নয় সত্যি ঘটনা । জানেন বোধহয়, এই তলোয়ারটা ঔরঙ্গজেব বাদশাহের । এটা সেই অভিশপ্ত তলোয়ার যা দিয়ে কাটা হয়েছিল মহাপ্রাণ দারা শিকোহর মস্তক । এটা বহু বছর ধরে আমাদের ঘরেই ছিল । আমার আব্বা বলে গেছিলেন এ বড় ভয়ঙ্কর জিনিষ কারও হাতে এটা যেন না পড়ে । মিহাকের সময় যখন আকাশে চাঁদ দেখা যায় না তখন এ জেগে ওঠে, রক্ত চায় । সেদিন কেউ এটা হাতে নিলে যেকোনও ভাবে এটা তাকে দিয়ে খুন করাবেই । এ জিনিষ ফেলে দেওয়াও যায় না আবার রাখাও কঠিন । তবু সামলে রেখেছিলাম । কিন্তু হঠাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পড়ায় চিকিৎসার জন্য আমার পৌতা নিজাম ওটা বিক্রি করে বসে । আমি সুস্থ হয়ে সব জানতে পারি । কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । আমরা সেই দোকানে যাই । বিল ভাউচারে আপনার নাম ঠিকানা লেখা ছিল । খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসেছি আর নিরাশ করবেন না । টাকা আপনার ফেরত দিতে পারব না । কারণ নিজাম যেটুকু টাকা পেয়েছিল আমার চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে ফেলেছে ।“

“আমি জানি না আপনি সত্যি বলছেন কি না । তবে এখন আর আমার কিচ্ছু করার নেই । তলোয়ারটা আর আমার কাছে নেই ।“

“দেরি করবেন না । তবে তাঁর কাছেই চলুন । আজ মিহাকের সময় আবার সে রক্ত চাইবে … আবার কারও মৃত্যু নিশ্চিত । গত মাসে অমাবস্যার সময় ওটা আপনাকে দিয়ে কি করিয়েছিল মনে নেই !”

“এ সব মিথ্যে ! আমি কিছু করি নি ।“ চিৎকার করে উঠলেন প্রশান্তবাবু ।

“আমি সব জেনেছি । কুকুরটার মৃত্যু কিন্তু আপনার হাতেই হয়েছিল । সেদিনও অমাবস্যা ছিল । মনে করার চেষ্টা করুন । ওটা কোনও ছল–চাতুরি ছিল না । হওয়া সম্ভবই নয় । চলুন, আমাকে আপনার সেই বন্ধুর কাছে নিয়ে চলুন ।“

ভদ্রলোকের কথায় একটা আলাদা তেজ ছিল প্রশান্তবাবু তাকে না করতে পারলেন না । গাড়ি বার করে অজিতবাবুর ঘরের দিকে রওনা দিলেন । কিন্তু বাড়ি পৌঁছে নিরাশ হয়ে দেখলেন দরজায় তালা দেওয়া । ফোন নং তো আগে থেকেই বন্ধ ।

আর কোনও উপায় নেই । জানি না কাল সকালের নতুন সূর্য কি খবর বয়ে আনবে !

***

পরদিন বিকেলের সংবাদপত্রটা উল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা জায়গায় প্রশান্তবাবুর চোখ আটকে গেল । “নামকরা ইতিহাসবিদ অজিতেশ সরকারের রহস্য মৃত্যু”

তিনি খবরটা ভালো করে পড়তে লাগলেন । কলকাতার এক নামকরা হোটেলের কামরা থেকে সকালে অজিতবাবুর দ্বিখণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার হয় । কেউ যেন ধারল তলোয়ারের এক কোপে তাঁর মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দিয়েছে । কিন্তু ঘর থেকে কোনও তলোয়ার বা এ জাতীয় কিছু উদ্ধার হয় নি । এমন কি সি. সি. টিভি ফুটেজ থেকেও কিছু পাওয়া যায় নি । ঘটনার সময় তাঁর রুম থেকে কাউকে ঢুকতে বা বেরোতেও দেখা যায় নি । ঘরে তিনি একাই ছিলেন । পুলিশের অনুমান তিনি আত্মহত্যা করেছেন । তবে সেক্ষেত্রে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ওখানেই পড়ে থাকার কথা । রহস্য এখানেই ।

প্রশান্তবাবুর পায়ের তলার মাটিটা যেন হঠাৎ কেঁপে উঠল । তিনি ধপ করে চেয়ারটায় বসে পড়লেন । তবে কি ওই বয়স্ক মুসলিম লোকটি ঠিক কথাই বলছিলেন ! তাহলে ওই অভিশপ্ত তলোয়ারটা গেল কোথায় ! তবে কি আবার কেউ !!!

নাকি কেউ এই সবের মধ্যে অজিতবাবুকে তাঁর কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে গেলেন !

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *