অর্জুন ও তাঁর পত্নী সুভদ্রার (কৃষ্ণের বৈমাত্রেয় ভগিনী) পুত্র । বিরাটরাজের কন্যা উত্তরার স্বামী ও পরীক্ষিতের পিতা। কৃষ্ণের বিশেষ স্নেহভাজন সুদর্শন,বিদ্বান ও সচ্চরিত্র অভিমন্যু বালক বয়স থেকেই অস্ত্রবিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী হন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর আগে ভীষ্ম দুর্যোধনকে বলেছিলেন যে, দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রই মহারথ, কিন্তু অভিমন্যু হচ্ছেন অধিরত, অর্থাৎ মহারথেরও অধিক। যুদ্ধের তেরো দিনের দিন দ্রোণ চক্রব্যূহের আকারে সেনাসন্নিবেশ করে সেই ব্যূহের মধ্যে কর্ণ, দুঃশাসন কৃপাচার্য, দুর্যোধন, অশ্বত্থমা ও জয়দ্রথকে নিয়ে প্রবল বেগে পাণ্ডবদের সৈন্য সংহার শুরু করলেন। অর্জুন তখন যুদ্ধক্ষেত্রের অন্যপ্রান্তে সংশপ্তকগণের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যাপৃত। এই জটিল চক্রব্যূহ ভেদ করতে জানতেন একমাত্র অর্জুন, কৃষ্ণ, প্রদ্যুন্ম আর অভিমন্যু। কিন্তু অভিমন্যু সঙ্কটমুহূর্তে ব্যূহ থেকে নির্গত হওয়ার কৌশলটা জানতেন না। যুধিষ্ঠির ও ভীম অভিমন্যুকে অভয় দিয়ে বললেন যে, অভিমন্যু ব্যূহে প্রবেশ করলেই ওঁরাও অভিমন্যুকে অনুসরণ করবেন। জ্যেষ্ঠতাতদের আশ্বাসে অভিমন্যু চকিতে ব্যূহ ভেদ করে ঢুকলেন। ব্যূহের দ্বার রক্ষা করছিলেন জয়দ্রথ। মহাদেবের বরে সেদিন তিনি ছিলেন অজেয়। তাই ভীম সাত্যকি ইত্যাদি বীররা প্রাণপন চেষ্টা করেও তাঁকে অতিক্রম করতে পারলেন না। অভিমন্যু প্রবল বিক্রমে অসংখ্য সৈন্যকে হত্যা করলেন। কৌরবদের সপ্তরথীর প্রত্যেকেই ওঁর ক্ষিপ্রতায় বিপন্ন হলেন। পরে ওঁরা সবাই মিলে একই সঙ্গে রণক্লান্ত অভিমন্যুকে আক্রমণ করলেন। চারিদিক থেকে এইভাবে আক্রান্ত হওয়ায় অভিমন্যুর বর্ম, ধনু ও অন্যান্য অস্ত্রাদি ধবংসপ্রাপ্ত হল। দুঃশাসনপুত্র এই সুযোগে গদা দিয়ে ওঁর সারথি ও অশ্বগুলিকে মারার পর ওঁকেও গদাঘাতে নিহত করলেন। পূর্ব জন্মে অভিমন্যু ছিলেন দেবতা সোমের পুত্র বর্চ্চাঃ। সোমদেব বর্চ্চাঃকে মাত্র ষোল বছরের জন্য মর্তে পাঠাতে রাজি হয়েছিলেন। তাই ষোল বছর পূর্ণ হবার আগেই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ওঁর মৃত্যু হল।