২
শাকিল ইসাসিন সাহেবের বাসা থেকে শাহজাহানপুরে গুলজারের বাসায় এল। গুলজার বন্ধু হলেও ছোট বোনের স্বামী। বোনের স্বামী হলেও দুজন বন্ধুর মতো ব্যবহার করে। বিয়ের পর প্রথম দিকে গুলজার শাকিলকে স্ত্রীর বড় ভাই হিসাবে সম্মান দিয়ে কথা বলত। একদিন শাকিল তাকে বলল, দেখ আমার বোনকে বিয়ে করেছিস বলে আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে তোকে কে বলেছে? আমরা আগে যেমন বন্ধু ছিলাম, সেরকম চিরকাল থাকব। তারপর থেকে নিজের বাড়িতে বা শ্বশুর বাড়িতে যখন যায় তখন ছাড়া সবখানে সব সময় বন্ধুর মতো ব্যবহার করে। গুলজার বিয়ের দু’মাস পরে আনিসাকে নিয়ে শাহজাহানপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে আছে। স্কুল বন্ধ থাকায় বোনের বাসায় তিন চার দিন থেকে শাকিল বাড়ি ফিরতে চাইলে গুলজার বলল, পরশু দিন আবাহনি ও মোহামেডানের ফুটবল লীগের ফাইনাল খেলা আছে, দেখে তারপর যাস। আনিসাও ভাইয়াকে থাকার জন্য বলল। শেষে বাধ্য হয়ে শাকিলকে থাকতে হল।
খেলার দিন কাউন্টারে প্রচণ্ড ভীড় দেখে শাকিল গুলজারকে বলল, দরকার নেই খেলা দেখে, ফিরে যাই চল।
গুলজার বলল আরে তুই কি? চেহারাখানা তো খাসা, ভীড়কে ভয় করছিস কেন? কাউন্টারে টিকিট কাটতে না পেরে শেষে ব্ল্যাকে টিকিট কেটে তারা ভিতরে এসে মোহামেডানের গ্যালারীতে বসল। সবখানে বেশ কিছু মেয়ে দেখে শাকিল গুলজারকে বলল, মেয়েরা যে খেলা দেখতে এসেছে, যদি গোলমাল হয়ে মারামারি আরম্ভ হয়, তা হলে মেয়েদের অবস্থা কি হবে তা কি ওরা ভেবে দেখে নি?
গুলজার বলল, সে কথা ভাবলে কি আর খেলা দেখতে আসত?
আধ ঘণ্টা খেলার পর মোহামেডান আবাহনিকে একটা গোল দিল। সেই গোলটা নিয়ে গোলমাল শুরু হল। রেফারী অফসাইড দেখিয়ে গোলটা নাকচ করে দিয়েছে। মোহামেডানের সাপোর্টাররা রেফারীর উপর ক্ষেপে আগুন। তারা বলতে গালল, শালা কুত্তার বাচ্চা রেফারী, আবাহনির কাছ থেকে ঘুষ খেয়ে গোলটা নাকচ করে দিল। এক সময় তারা গ্যালারী থেকে নেমে রেফারীকে মারার জন্য মাঠে ঢুকে পড়তে আবাহনির
গ্যালারী থেকে তাদের সাপোর্টাররাও মাঠে ঢুকে তাদের সঙ্গে মারামারী আরম্ভ করে দিল। পুলিশ বাধা দিয়ে কিছু করতে না পেরে কাঁদুনে গ্যাস ছাড়তে শুরু করল। উভয় দলের সাপোর্টাররা তখন পুলিশের উপর চড়াও হল। দর্শকদের মধ্য থেকে কয়েকটা বোমা ফাটাতে সমস্ত দর্শকরা বন্যার পানির স্রোতের মতো গ্যালারী থেকে নেমে পালাতে লাগল। কে কার আগে নামবে সেই চেষ্টাতে ভীষণ ধাক্কাধাক্কী হয়ে কে কোথায় ছিটকে পড়ছে তার হিসাব নেই। শাকিলের মনে হল, যেন যুদ্ধ লেগে গেছে।
গুলজার শাকিলের একটা হাত ধরে টানতে টানতে নামছিল। শাকিল পা ফসকে একটা মেয়ের সঙ্গে ধাক্কা খেল।
মেয়েটা শাকিলকে দুহাতে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল, ননসেন্স, অভদ্র, ইতর কোথাকার। মেয়েছেলে দেখলেই গায়ে হাত দিতে ইচ্ছা করে, না? যত সব ছোটলোক…কথাটা সে আর শেষ করতে পারল না। ভীড়ের ধাক্কায় তার তখন চিড়ে চ্যাপ্টা হবার উপক্রম।
ভীড়ের চাপে গুলজারও শাকিলের কাছ থেকে কোথায় চলে গেছে। শাকিল গালাগালি শুনেও মেয়েটার দিকে তাকিয়ে তার মনে করুনার উদ্রেক হল। মেয়েটা ভীড়ের মধ্যে পড়ে হিমশিম খাচ্ছে। ভয়ে তার মুখটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। শাকিল তাড়াতাড়ি ভীড় ঠেলে এগিয়ে এসে মেয়েটাকে আগলে রেখে বলল, আপনি আমার সঙ্গে আসুন।
শাকিলা এক পলক শাকিলের দিকে চেয়ে বেশ অবাক হয়ে চিন্তা করল, যাকে ঐ ভাবে অপমান করলাম,সে কিনা… ভীড়ের ধাক্কায় শাকিলার চিন্তা ছুটে গেল। সে তখন কিছুটা দূরে সরে গেছে।
শাকিল এগিয়ে গিয়ে তার একটা হাত ধরে একপাশে নিয়ে বলল, ভীড়টা একটু কমুক, নচেৎ ভীড়ের মধ্যে বার হওয়া খুব কষ্টকর হবে। কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ অনেকটা সামাল দিয়েছে।
ভীড় কমার পর শাকিল বলল এবার চলুন যাওয়া যাক। স্টেডিয়ামের বাইরে এসে শাকিলা মাথা নিচু করে বলল, ভুল বুঝে আপনার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করে ফেললাম। সে জন্যে ক্ষমা চাইছি।
শাকিল বলল, ঐ রকম অবস্থায় কারোরই হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আমি যেমন আপনাকে অনিচ্ছাকৃত ধাক্কা দিয়েছি, তেমনি আপনিও আমাকে ঐ রকম বলেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে এটাই স্বাভাবিক। আমি কিছু মনে করিনি।
তা হোক, তবু আপনি বলুন ক্ষমা করেছেন?
তা হলে তো আমাকেই প্রথমে ক্ষমা চাইতে হয়। অন্যায় আগে আমি করেছি।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল। একটা রেস্টুরেন্ট দেখতে পেয়ে শাকিল বলল, চলুন একটু গলা ভেজান যাক।
শাকিলা না করতে পারল না। কারণ একটু আগে যা ঘটনা ঘটে গেল, তাতে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কিছু না বলে তার সাথে রেস্টুরেন্টে এসে চুপ করে বসে। রইল। তখনও তার মন থেকে স্টেডিয়ামের ভিতরের ঘটনাটা যাচ্ছে না। ভাবল, ছেলেটা ওরকমভাবে অপমানিত হয়েও আমার বিপদ দেখে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। মনে মনে ধন্যবাদ জানাল।
শাকিল রেয়ারাকে কেক ও ফান্টার অর্ডার দিল। শাকিলাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল, কি ব্যাপার কিছু বলছেন না যে?
শাকিলা বলল, আগে বলুন ক্ষমা করেছেন।
শাকিল মৃদু হেসে বলল, আপনি এখনও সে কথা ভাবছেন। বললাম না, ঘটনাটা যাই ঘটুক না কেন, দুজনেরই অনিচ্ছাকৃত অবস্থায় ঘটেছে? সে কথা ভেবে মন খারাপ করছেন কেন? কয়েক সেকেণ্ড বিরতি দিয়ে তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমার মনে হয়, আমরা দুজন দুজনকে ক্ষমা করেছি।
শাকিলা শাকিলের মুখের দিকে তাকিয়েছিল। ফলে দুজনের চোখে চোখ পড়ল। কয়েক মুহূর্ত কিছু বলতে পারল না।
শাকিল বলল, আমি কি ঠিক বলিনি?
শাকিলা দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বলল, হ্যাঁ ঠিক বলেছেন।
এমন সময় বেয়ারা অর্ডার মতো সব কিছু দিয়ে চলে গেলে শাকিল বলল, নিন শুরু করুন। তারপর একপীস কেক খেয়ে ফান্টার পাইপে একটা টান দিয়ে বলল, অদ্ৰতা হলেও আপনার নামটা জানতে ইচ্ছে করছে।
শাকিলার মুখে তখন কেক। সেটা গলাধঃকরণ করে বলল, অভদ্রতা হবে কেন? আমার নাম শাকিলা।
শাকিল মৃদু হেসে উঠল।
নাম শুনে হাসলেন যে?
হাসি পেল তাই হাসলাম।
হাসির পেছনে কোন কারণ থাকে। ঐ নামে নিশ্চয় আপনার কোন আপনজন আছে?
না নেই। তবে… বলে থেমে গেল।
কি হল থামলেন কেন?
শুনলে আপনি মাইণ্ড করবেন।
মাইণ্ড করার কি আছে; আপনি বলুন।
আমার নাম শাকিল।
নাম শুনে শাকিলা বেশ অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকাতেই দেখল, সেও তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ কোন কথা বলতে পারল না। শাকিলার মনে হল শাকিলের চোখের দৃষ্টি তাকে যেন অনেক কিছু বলতে চায়। দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে হাসি, মুখে বলল, তাই?
হ্যাঁ তাই। আপনি একা এসেছেন?
সঙ্গে ড্রাইভার ও এক বান্ধবী ছিল। ভীড়ের মধ্যে তাদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। তারা হয়তো এতক্ষণ আমাকে খুঁজে না পেয়ে গাড়ির কাছে অপেক্ষা করছে।
রেষ্টুরেন্ট থেকে বের হতে হতে শাকিলা বলল, আমাদের বাসায় চলুন না, বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব?।
আমিও আমার বন্ধুর সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছিলাম। ভীড়ের মধ্যে তাকে হারিয়েছি। সে হয়তো এতক্ষণ ধরে আমাকে খোঁজাখুঁজি করছে।
শাকিলা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে কাগজ কলম বের করে ঠিকানা লিখে শাকিলের হাতে দেয়ার সময় বলল, তা হলে সময় করে একদিন আসবেন।
শাকিল ঠিকানাটা না দেখে পকেটে রাখতে রাখতে বলল, তাও বোধ হয় সম্ভব হবে না।
কেন?
কাল বাড়ি চলে যাব।
বাড়ি কোথায়?
কুষ্টিয়ায়।
আমার বাবাও অনেকদিন কুষ্টিয়ায় ছিলেন। কুষ্টিয়ায় কোথায় আপনাদের বাড়ি?
শহরতলীতে।
এবার কি বলবে ঠিক করতে না পেরে শাকিলা চুপ করে রইল।
শাকিল তা বুঝতে পেরে বলল, ঠিকানা তো রইল, আল্লাহ রাজি থাকলে আবার যখন আসব তখন যাওয়ার চেষ্টা করবো। এখন আসি, আল্লাহ হাফেজ বলে সে গুলজারকে খুঁজতে চলে গেল।
শাকিলাও অস্ফুট স্বরে আল্লাহ হাফেজ বলে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর সে যখন দৃষ্টির বাইরে চলে গেল তখন নিজে গাড়ির দিকে এগোল।
গাড়ির কাছে এলে বান্ধবী চৈতী বলল, কিরে, এতক্ষণ কোথায় ছিলি? এদিকে আমরা তোকে খুঁজে না পেয়ে চিন্তা করছি।
শাকিলা ব্যাপারটা চেপে গিয়ে বলল, আমি তোমাদেরকে খুঁজে না পেয়ে একটু গলা ভিজিয়ে এলাম।
সেদিন বাসায় শাকিলার মনে শুধু একটা কথা মনে পড়তে লাগল, ছেলেটাকে ঐভাবে অপমান করলাম, তারপরও সে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এল। ছেলেটা নিশ্চয় অন্য দশটা ছেলের মতো নয়। তার নাম শাকিল মনে হতে শাকিলার মনের মধ্যে এক রকমের আনন্দের স্রোত বইতে লাগল। ভাবল, ছেলেটা আবার ঢাকায় এলে আমাদের বাসায় কি আসবে? বাড়ি বলল কুষ্টিয়ার শহরতলীতে। ঠিকানা নিলে ভাল হত। কিন্তু সেটা চাওয়া কি উচিত হত?
শাকিল গুলজারকে খুঁজে না পেয়ে বাসায় ফিরে এসে মেয়েটার ঠিকানা পড়ে চমকে উঠল। শাকিলা তা হলে আব্বার বন্ধুর মেয়ে। ঐ দিন ওরই বিয়ে ভেঙে যেতে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে আব্বার বন্ধু চেয়েছিলেন।
পরের দিন শাকিল বাড়ি ফিরে এসে আব্বা আম্মাকে আনিসা ও গুলজার ভাল আছে জানাল। তারপর আব্বাকে বলল, আপনার বন্ধুর দলিলপত্র এখান থেকে যেদিন গেলাম, ঐ দিনই ওনার হাতে দিয়েছি।
রেদওয়ান জিঞ্জেস করলেন, ওরা কেমন আছে।
শাকিল বলল, ভাল আছেন। তারপর শাকিলার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কথা বলে ইয়াসিন সাহেবের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলল।
সুরাইয়া খাতুন সেখানে ছিলেন। শুনে তার পুরান কথা মনের পর্দায় ভেসে উঠল। স্বামী কিছু বলার আগে খুব রেগে গিয়ে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, তুই তখন কি বললি?
শাকিল মায়ের রেগে যাওয়ার কারণ বুঝতে পারল না। ভয়ে ভয়ে বলল, তোমাদের মতের উপর নির্ভর করছে বলে কাটিয়ে দিয়েছি।
সুরাইয়া খাতুন ছেলের মাথায় চুমো খেয়ে বললেন, এটাই আমি আশা করেছিলাম। একটা কথা মনে রাখবি, বড়লোকের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা গেলেও তাদের সঙ্গে আত্মিয়তা করা যায় না। তারপর একটা খাম ছেলের হাতে দিয়ে বললেন, গত পরশু এসেছে।
স্কুলে মাস্টারী করে আর্থিক উন্নতি করতে পারবে না ভেবে শাকিল প্রতিদিন খবরের কাগজে কর্মখালি বিজ্ঞাপন দেখে পছন্দমতো কিছু পেলে দরখাস্ত পাঠায়। সব জায়গা থেকে না হলেও কোন কোন জায়গা থেকে ইন্টারভিউ লেটার পায়। সে সব জায়গায় ইন্টারভিউও দিয়েছে; কিন্তু কোন ফল হয় নি। দিন পনের আগে মেহেরপুর চৌধুরী স্টেটে ম্যানেজার পদের জন্য একজন লোকের দরকার দেখে দরখাস্ত করেছিল। মায়ের হাত থেকে খামটা নিয়ে ঠিকানা পড়ে বুঝতে পারল, সেখান থেকে এসেছে। তারপর খাম থেকে চিঠিটা বের করে পড়ে বলল, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখে মেহেরপুর চৌধুরী স্টেটের ম্যানেজার পদের জন্য দরখাস্থ করেছিলাম। ইন্টারভিউ দিতে ডেকেছে।
ছেলের কথা শুনে রেদওয়ান এখনও কিছু বললেন না। শুধু ওনার কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠল।
সুরাইয়া খাতুন স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে তা বুঝতে পেরে ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, মাস্টারীর চেয়ে ওটা কি ভালো হবে?
আগে ইন্টারভিউ দিয়ে এলাউ হই। তারপর সব কিছু দেখে শুনে যদি ভালো মনে করি, তা হলে করবো, নচেৎ মাস্টারী করবো।
ইন্টারভিউ এর তারিখ কবে? আগামীকাল।
আব্বা কিছুকছেনা দেখে জিজ্ঞেসকরুল, আপনি কিছুকছেনা কেন?
রেদওয়ান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কি আর বলবো বাবা, তুমি যা ভাল বুঝ করবে। শাকিল বড় হওয়ার পর থেকে রেদওয়ান তার সঙ্গে তুমি সম্বোধনে কথা বলেন। আর শাকিল ছোটবেলা থেকে আব্বাকে আপনি করে বলে।
নির্দিষ্ট দিনে শাকিল আব্বা আম্মাকে কদমবুসি করে দাদিকেও করতে গেলে ফৌজিয়া খাতুন নাতির মাথায় চুমো খেয়ে দোয়া করলেন, “আল্লাহ তোকে সহিসালামতে রাখুক, তোর মনস্কামনা পূরণ করুক।”
শাকিল বাসে করে যেখানে নামল, সেখান থেকে আরো তিন মাইল হেঁটে অথবা রিক্সা করে যেতে হবে। রিক্সা ভাড়া পনের টাকা শুনে হাঁটতে শুরু করল। শাকিল ছোটবেলা থেকে সংসারের সব কাজ কর্ম করে। নিজেদের যতটুকু ক্ষেত খামার আছে, সেগুলোতে নিজেই চাষাবাদ করে। খুব দরকার মনে করলে দু একজন কামলা সঙ্গে নেয়। এখন সে মাস্টারী করলেও সেসব কাজও করে। খুব হিসাবী ছেলে। তার আব্বার মতো মিতব্যয়ী। মাত্র তিন মাইলের জন্য পনের টাকা ভাড়া দিতে তার মন চাইল না। তাই সে হেঁটে চলল।
গ্রামের কাছাকাছি এসে দূর থেকে বিরাট অট্টালিকা দেখে বুঝতে পারল, এটাই চৌধুরী বাড়ি। শাকিল দাদির কাছে চৌধুরী বাড়ির অনেক সুনাম দুর্ণাম শুনেছে। এ বাড়ির অনেক আশ্চর্য আশ্চর্য গল্পও শুনেছে। আজ সেই চৌধুরী বাড়িতে চাকরি করার জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছে। হঠাৎ তার আব্বার কথা মনে পড়ল,-কিভাবে আব্বার বন্ধু ইয়াসিন সাহেব চৌধুরী বংশের ছেলে হয়েও ঐ সম্পত্তি থেকে নামাহরুম হলেন এবং কেন তিনি ঐ বাড়ি থেকে ওনার মাকে নিয়ে আমাদের এখানে চলে এসেছিলেন। তারপর কিভাবে ব্যবসা করে বড়লোক হলেন, সব কথা একের পর এক তার মনের পাতায় ভেসে উঠতে লাগল। কাছে এসে গেট দেখে সে খুব অবাক হয়ে গেল। পাঁচটনি ট্রাক অনায়াসে যেতে পারবে। গেটের পাশে একজন আধা বয়সী ইয়া গোঁফওয়ালা লম্বা চওড়া লোক টুলে বসে আছে। তার পাশে পাঁচ হাতি একটা তেল চিকচিকে বাঁশের লাঠি গেটের দরজায় ঠেক দেয়া। শাকিল এগিয়ে এসে তাকে সালাম দিল।
বর্তমানে এই ষ্টেটের যিনি মালিক তাঁর নাম মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী। দাদা গাফফার চৌধুরী একবার আগ্রার তাজমহল দেখতে এবং আজমীর শরীফে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে দিল্লী পাটনাতে কয়েকদিন অবস্থান করেন। সেই সময় পাটনা থেকে দারোয়ানী করার জন্য একজনকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। তারই নাতি ফুল মিয়া। ফুলমিয়ার বাবাও দারোয়ানী করেছে। তার মৃত্যুর পর ফুল মিয়া আজ পনের বছর যাবৎ দারোয়ানী করছে। এর মধ্যে কোনো ভদ্রলোক তাকে সালাম দেয়নি। বরং সে-ই সবাইকে দিয়ে এসেছে। আজ একজন খুবসুরত জোওয়ান ভদ্রলোককে সালাম দিতে দেখে খুব অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে সালামের জবাব দিয়ে বলল, কি জন্য এসেছেন বাবু?
শাকিল বলল, এখানকার মালিক ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য আমাকে চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন।
ফুল মিয়া বলল, যান বাবু সোজা ভিতরে চলে যান। সামনে কাঁচারি বাড়ির অফিস। ওখানে সাহেবের লোক আছে।
শাকিল ভিতরে ঢুকে আরো অবাক হল। পাঁচিলের ভিতর বিরাট এলাকা। নানারকম ফলের গাছ। এক সাইডে পাঁচিলের গা ঘেষে বেশ কয়েকটা পাকা রুম। গেট থেকে কাঁচারি পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে কয়েক রকম পাতাবাহার ফুলের গাছ। রাজবাড়ির মতো বাড়িটা ঠিক মাঝখানে। পশ্চিম দিকে বেশ বড় একটা পুকুর। পুকুরের তিন দিকের পাড়ে অনেক গাছ পালা। পূর্ব দিকে সান বাঁধান ঘাট। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল, বহুকাল আগের বাড়ি। সংস্কারের অভাবে আগের সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। শাকিলের মনে হল, বাড়িটার পিছনের দিকেও অনেক জায়গা আছে। সে এই সব দেখতে দেখতে যখন কাঁচারি বাড়ির বারান্দায় উঠল তখন একজন লোক এগিয়ে এসে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, আপনি কি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন?
শাকিল সালামের উত্তর দিয়ে বলল, জি।
লোকটা তাকে সঙ্গে করে একটা রুমে ঢুকে বলল, এখানে বসুন। সময় মতো আমি ডেকে নিয়ে যাব। তারপর লোকটা পাশের রুমে চলে গেল। শাকিল রুমে তার মতো আট দশ জন ছেলেকে বসে থাকতে দেখে সালাম জানিয়ে বলল, আপনারাও কি ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন।
তাদের মধ্যে কয়েকজন সালামের জবাব দেওয়ার পর একজন বলল, হ্যাঁ ভাই ঠিকই অনুমান করেছেন। তাদের সঙ্গে আলাপ করে শাকিল জানতে পারল, ঢাকা থেকেও দুজন এসেছেন। কিছুক্ষণ পর পর সেই লোকটা এসে এক একজনকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে। দশ পনের মিনিট পর আগের জনকে সঙ্গে করে ফেরৎ এনে অন্যজনকে নিয়ে যাচ্ছে। সব শেষে শাকিলের ডাক পড়ল।
শাকিল ঢুকেই সালাম দিয়ে সকলের দিকে একবার চোখ বুলাতে গিয়ে একজন প্রৌঢ় সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান লোকের দিকে চেয়ে অনুমান করল, ইনিই চৌধুরী স্টেটের মালিক। আরো যারা তিন চারজন রয়েছেন, তাদের সঙ্গে ওনার বেশ কিছু তফাৎলক্ষ্য করুল।
মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী এতক্ষণ অন্যান্য ছেলেদের ইন্টারভিউর সময় শুধু এক পলক তাদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে চুপ করে থেকেছেন, যা জিজ্ঞেস করার অন্যান্য লোক যারা রয়েছেন, তারা করেছেন। তিনি কাউকে কিছু প্রশ্নও করেননি। তাই দেখে কর্মচারীরা বুঝেছেন, তাদের কাউকে মালিকের পছন্দ হয়নি। এই ছেলেটার দিকে চৌধুরী সাহেবকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নায়েব জমিরুদ্দিন সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, দাঁড়িয়ে আছেন কেন বসুন। শাকিল দৃষ্টি সরিয়ে ওনার পাশে দাঁড়ান একজন চল্লিশোর্ধ দীর্ঘ ও বলিস্ট চেহারার লোকের দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে একটা চেয়ারে বসল। মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী তখনও শাকিলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। বসার পর জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম?
শাকিল আহম্মদ।
বাড়ি?
কুষ্টিয়া।
বাবার নাম?
রেদওয়ান আহম্মদ।
লেখাপড়া?
বি.এ.।
মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী নায়েবের দিকে তাকিয়ে বললেন, আর কেউ বাকি আছে?
জি না।
মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী আর কিছু না বলে ভিতর বাড়িতে চলে গেলেন। নায়েব। জমিরুদ্দিনের বয়স পঞ্চাশের উপর। তিনি যৌবন বয়স থেকে এখানে নায়েবি করছেন। মালিকের মনমেজাজ, স্বভাব-চরিত্র সব কিছু জানেন। মালিক চলে যাওয়ার পর সরকার নাদের আলিকে বললেন, এই ছেলেকে কাজে বহাল করার ব্যবস্থা করুণ।
নাদের আলির বয়সও নায়েবের কাছাকাছি। তিনিও অনেক দিন হল এখানে কাজ করছেন। মালিকের সব কিছু জানেন। বললেন, আমিও বুঝতে পেরেছি। তারপর শাকিলের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার আগে যারা ইন্টারভিউ দিল, তাদের মধ্যে চার জন এম. এ. ছিল। আপনার ভাগ্য খুব ভালো।
শাকিল মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি ফুটিয়ে বলল, সবই আল্লাহপাকের মর্জি।
নায়েব এতক্ষণ শাকিলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত লক্ষ্য করছিলেন। তার কথা শুনে বললেন, আল্লাহ’র মর্জির সঙ্গে সঙ্গে নিজেকেও তদবীর করতে হয়।
নাদের আলি সেই দিনই শাকিলকে নিয়োগ পত্র দিয়ে তার কাজ কিছু কিছু বুঝিয়ে দিলেন।
কাঁচারিতে যারা কাজ করে সকলের খাবার চৌধুরী বাড়ি থেকে আসে। দুপুরের খাওয়ার পর শাকিল নায়েবকে বলল, নামায পড়ব কোথায়?
নায়েব কয়েক সেকেণ্ড তার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, এখানে তো কেউ নামায পড়ে না। তাই নামায পড়ার ব্যবস্থা নেই। আপাততঃ আপনি পুকুর ঘাট থেকে অযু করে এসে একটা বেঞ্চের উপর পড়ন, পরে ব্যবস্থা করা যাবে।
শাকিল সান বাঁধান ঘাট থেকে অযু করে এসে জোহরের নামায পড়ল। পরের দিন মাগরিবের নামায শাকিল সান বাঁধান ঘাটে বসবার জন্য যে পাকা রক আছে, তাতে পড়ল। তারপর কাঁচারিতে ফিরে এল। এমন সময় একটা চাকর এসে বলল, ম্যানেজার সাহেবকে মালিক ডাকছেন।
নায়েব শাকিলকে বললেন, আপনি ওর সঙ্গে যান। চাকরটা শাকিলকে সঙ্গে করে কাঁচারি বাড়ির ভিতরের দিকের দরজা দিয়ে নিয়ে যেতে লাগল। দরজা পার হয়ে অনেকখানি লম্বা বারান্দা। বারান্দার শেষ প্রান্তে একটা দরজার পর্দা ঠেলে ভিতরে ঢুকে চাকরটা বলল, আপনি বসুন, মালিক আসবেন। তারপর সে ঐ রুমের এক পাশের সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে গেল।
শাকিল একটা সোফায় বসে রুমটার চারদিকে দেখতে লাগল, বেশীরভাগ আসবাব পত্র পুরানো আমলের। কিছু কিছু নতুনও রয়েছে। দুপাশের দেয়ালে চারটে বড় অয়েল পেন্টিং। বুঝতে পারল, এটা ভিতর বাড়ির বৈঠকখানা। ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে তার মনে হল, এগুলো চৌধুরী সাহেবের পূর্ব পুরুষদের ছবি। সিঁড়িতে ভারী পায়ের শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখল, লুঙ্গী ও পাঞ্জাবী পরে চৌধুরী সাহেব নামছেন। শাকিল দাঁড়িয়ে পড়ল। নিচে নেমে এলে সালাম দিল।
চৌধুরী সাহেব সালামের উত্তরে মুখে কিছু না বলে শুধু ডান হাতটা একটু উপরে তুলে বসতে বলে নিজেও বসলেন। তারপর জিঞ্জেস করলেন, কাজ কর্ম দেখে কি মনে হচ্ছে, পারবে?
শাকিল ধীর ও স্বরে বলল, কাজতো মানুষই করে। কাজকে যারা ভয় পায়, তারাই অকৃতকার্য হয়।
তোমাকে যে কাজের জন্য নেয়া হয়েছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত যা করছ। করে যাও। পরে আমি তোমাকে ধীরে ধীরে সে সব বুঝিয়ে বলবো। একটা কথা শুধু মনে রাখবে, আমার কথা বলে হিরু যদি কোনো কিছু করতে বলে, বিনা দ্বিধায় তা করে যাবে।
জি করব। আমি দু এক দিনের মধ্যে বাড়ি যেতে চাই। বাড়িতে সবাই চিন্তা করছেন। ওনারা জানেন, আমি শুধু ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।
তোমার কে কে আছে?
আব্বা আম্মা ও দাদি আছেন। একটা বোন ছিল তার বিয়ে হয়ে গেছে।
ইন্টারভিউর সময় চৌধুরী সাহেব শাকিলের বাবার নাম ও বাড়ির ঠিকানা. শুনে। চাচাতো ভাই ইয়াসিনের কথা মনে পড়েছিল। এই ছেলে তা হলে ইয়াসিনের বন্ধুর ছেলে। এদের বাড়িতেই ইয়াসিন চাচিআম্মাকে নিয়ে উঠেছিল এবং অনেকদিন সেখানে ছিল? এখন জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি তোমার বাবার কাছে আমাদের কিছু কথা শুনেছ?
জি শুনেছি। তবে বেশি কিছু উনি বলেন নি। শুধু বলেছিলেন, আপনাদের বংশের একজন ওনার বন্ধু ছিলেন। তিনি এখন ঢাকায় থাকেন।
চৌধুরী সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, ঠিক আছে, তুমি এখন যাও। আমি নায়েবকে বলে দেব, তুমি বাড়ি যেতে চাও। কথা শেষ করে তিনি উপরে চলে গেলেন।
শাকিল ফিরে এলে নায়েব জিজ্ঞেস করলেন, চৌধুরী সাহেব ডেকে ছিলেন কেন?
কাজকর্ম মন দিয়ে করতে বললেন। আমি দু একদিনের জন্যে বাড়ি যাওয়ার কথা বলতে আপনাকে বলে যেতে বললেন।
কবে যেতে চান।
আগামীকাল।
তাই যাবেন।
.
শাকিল বাড়িতে এসে আব্বা আম্মাকে সবকিছু জানাল।
সুরাইয়া খাতুন বিয়ের আগে যখন ইয়াসিন সাহেবের সঙ্গে মেলামেশা করতেন তখন ওনার কাছে চৌধুরী বাড়ির কথা কিছু কিছু শুনেছিলেন। বিয়ের পর স্বামী ও শাশুড়ীর কাছে চৌধুরী বাড়ির বর্তমান মালিকের যৌবন বয়সের অনেক কুকীর্তির কথাও শুনেছেন। সেই বংশের ছেলে ইয়াসিন সাহেব তাকে ভালবেসে বিট্রে করেছে, সে কথা মনে পড়লে খুব কষ্ট অনুভব করেন। এখন ছেলে সেখানে চাকরি করবে শুনে শংকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোকে কি কাজ করতে হবে?
আপাতত হিসাব পত্র দেখতে হবে। তবে চৌধুরী সাহেব বললেন, আরো কি করতে হবে, তা পরে জানাবেন।
বেতন কত দেবে ঠিক হয়েছে?
থাকা খাওয়া কাপড় চোপড় ফ্রি। বেতন চার হাজার।
তুই কি চিন্তা করেছিস? করবি?
তোমাদের অনুমতি পেলে করবো।
আমি একটা শর্তে অনুমতি দিতে পারি, চৌধুরী সাহেবের কথায় কোনোদিন কোনো অন্যায় কাজ করবি না।
তাতো নিশ্চয়। তুমি না বললেও করতাম না।
সে বিশ্বাস আমাদের আছে। তবু মা হয়ে যা কর্তব্য তাই বললাম। রেদওয়ান এমনি গম্ভীর ধরনের লোক। অসুস্থ হবার পর আরো গম্ভীর হয়ে গেছেন। স্বামী কিছু বলছে না দেখে সুরাইয়া খাতুন তাকে বললেন, তুমি কিছু বলছ না কেন?
যা কিছু বলার তুমি তো বললে। আমারও ঐ একই কথা।
শাকিল বলল, আপনি দোয়া করুন আব্বা, আমি যেন আপনাদের কথামতো এবং আল্লাহ ও তার রসুল (দঃ) এর প্রদর্শিত পথে আমরণ চলতে পারি।
রেদওয়ান ছলছল নয়নে বললেন, সেই দোয়া সব সময় করে আসছি। যাও তোমার দাদির কাছে দোয়া নাও।
শাকিল দাদিকে চাকরির কথা বলে দোয়া করতে বলল।
ফৌজিয়া খাতুন দোয়া করে বললেন, সব সময় আল্লাহকে স্মরন রাখবি। কোনো কারণেই নামায রোযা কাযা করবি না। ছোটদের স্নেহ এবং বড়দের সম্মান করবি। জান গেলেও মিথ্যা বলবি না। কারো মনে কষ্ট দিবি না। আর ছোট হোক বড় হোক, কোনো অন্যায় করবি না।
শাকিল বলল, দোয়া করুন, আল্লাহপাক যেন আপনার উপদেশ আমাকে মেনে চলার তওফিক এনায়েত করেন।
ফৌজিয়া খাতুন দোয়া করে সুরাইয়া খাতুনকে ডেকে বললেন, বৌমা, আমার দাদু ভাইয়ের বয়স কত হল বলতো?
এ বছর পঁচিশে পড়েছে।
তা হলে এবার নাত বৌ এর ব্যবস্থা কর। তোমার শ্বশুর বলতেন, ছেলেদের বিয়ে পঁচিশ থেকে আঠাশের মধ্যে এবং মেয়েদের পনের থেকে আঠারোর মধ্যে দেওয়া উচিত।
আমি ওর বিয়ের কথা আপনার ছেলেকে বলেছি। এখন আল্লাহপাকের হুকুম।
নিজেদেরকেও চেষ্টা করতে হয়।
তাতো করবই।
বিয়ের কথা শুনে শাকিল লজ্জা পেয়ে তাদের অলক্ষ্যে পালিয়ে এসে ঘর থেকে বেরিয়ে আনিসাদের বাড়িতে রওয়ানা দিল। ঢাকা থেকে ফেরার সময় গুলজার তার.. হাতে বাড়ির জন্যে কিছু টাকা পাঠিয়েছে। ঢাকা থেকে আসার পরের দিন সে। ইন্টারভিউ দিতে মেহেরপুর চলে গিয়েছিল বলে টাকাগুলি দেওয়া হয়নি।
গুলজাররা দু’ভাই দু’বোন। বড় দু’বোনের পর গুলজার। সব থেকে ছোট ফরিদ। সে ক্লাস টেনে পড়ে। বড় দু’বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
শাকিল যখন তাদের বাড়ির কাছে পৌঁছল তখন ফরিদ স্কুল থেকে ফিরছিল। সে। শাকিলকে বড় ভাইয়ের বন্ধু হিসাবে ভাইয়া বলে ডাকতো। এখন ভাবির ভাই হিসাবে বেয়াই হলেও আগের মতো ভাইয়া বলেই ডাকে। তাকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, ভাইয়া কেমন আছেন?
শাকিল সালামের উত্তর দিয়ে বলল ভালো। তুমি ভালো আছ?
জি ভালো আছি। চলুন বাড়িতে চলুন।
ফরিদকে সঙ্গে করে শাকিল তাদের বাড়িতে এসে তালই মাওইকে সালাম দিয়ে কদমবুসি করে কুশল জিজ্ঞেস করল।
ওনারা সালামের উত্তর দিয়ে দোয়া করেবললেন, আল্লাহর রহমতে ভালো আছি বাবা।
শাকিল তালইয়ের হাতে টাকা দিয়ে বলল, আমি ঢাকা গিয়েছিলাম। গুলজার এগুলো পাঠিয়েছে। ওরা ভালো আছে।
ওনারা তাকে থাকতে বললেন।
শাকিল চাকরিতে যেতে হবে বলে নাস্তা খেয়ে বাড়ি ফিরে এল। দু’দিন বাড়িতে থেকে শাকিল মেহেরপুরে ফিরে এল।