অপরাধী পলাতক

অপরাধী পলাতক 

আনমনে বাড়ির বাঁকে পা দিতেই আঁতকে উঠল শুক্তি। আজ আবার একটা বেড়াল চাপা পড়েছে। ইস, পেটের কাছটা থেঁতলে গেছে একেবারে। এই গলির বাঁকটা বড্ড বিপজ্জনক। উলটোদিক থেকে গাড়ি এলেও দেখা যায় না। প্রায়ই কুকুর বেড়ালগুলো এর বলি হয়। গাড়িগুলোও আছে! একটু আস্তে চললেই পারে এই রাস্তায়। মনে মনে গজগজ করতে করতে বাড়িতে ঢুকল শুক্তি। যদিও তার মনটা আজকে বেশ ভালো ছিল। কারণ প্রায় চারবছর ভাড়াবাড়িতে থাকার পর নিজের রোজগারের টাকায় নতুন বাড়ি কিনল শুক্তি। আজই রেজিস্ট্রি হল তার নামে। ছোটখাটো ছিমছাম দেড়তলা বাড়ি। সামনে এক চিলতে বাগান। এক দেখায় পছন্দ হয়ে গিয়েছিল তার। একটু মফঃস্বল এলাকা বটে, কিন্তু তার অফিস খুব দূরে নয়। তাই রোজকার যাতায়াতে সমস্যা হবে না। তবে সেকেন্ড হ্যান্ড বাড়ি, তাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে সপ্তাখানেক সময় লাগবে। 

শুক্তিরও এদিককার পাট তোলার আগে গোছগাছের জন্য সময় চাই। একটা বেশ বড় মাপের এন.জি.ও-তে চাকরি করে শুক্তি। ওদের সংস্থা শিশুদের নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ যেসব শিশুরা পরিবার অথবা অন্য কোথাও শোষিত বঞ্চিত, তাদের উদ্ধার করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তারা। বহু ধনী পরিবার আজকাল এগিয়ে আসছে এ ধরনের শিশুদের সাহায্য করতে। অনেকসময় তারা দত্তক নেয় এদের। সবসময় যে পরিবারের সঙ্গে রাখে তা নয়, শিশুটি হয়তো হোমেই থাকে, কিন্তু তার সব খরচ বহন করে সেই পরিবার। শুক্তি তাদের হোমে যে শিশুরা থাকে, তাদের সঙ্গে এই পরিবারগুলির যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত। 

সারাদিন কাজের পর ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে ফিরে রাতে বেশিক্ষণ জাগতে পারে না শুক্তি। খুব বেশি হলে দশটার মধ্যে বিছানায় যায় সে। আর শোয়ামাত্রই ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়। কিন্তু এখন হাতে গোছগাছের সময় খুব কম বলে বাধ্য হয়ে রাত জাগতে হচ্ছে তাকে। গত দু’দিন রাত প্রায় দেড়টা-দুটো পর্যন্ত জেগেছে। তার পরদিন এমন ঘুমিয়ে পড়ল সে, যে সকালে যখন ঘুম ভাঙল, তখন বেলা প্রায় সাড়ে ন-টা। অগত্যা সেদিনের মতো অফিস যাওয়ার সম্ভাবনায় ইতি। আর সেদিনই ঘটল ঘটনাটা। 

এ বাড়িতে সে ভাড়া আছে গত দেড় বছর। তার আগে যেখানে থাকত, সেখানে বাড়িওয়ালার সঙ্গে আর বনিবনা হচ্ছিল না। তাই এখানকার পরিবেশ খুব পছন্দের না-হলেও সাত তাড়াতাড়ি উঠে এসেছিল এই বাড়িতে। জায়গাটায় একটু নিম্নবিত্ত পরিবারের বাস। উদ্বাস্তু কলোনি ধরনের। বেশিরভাগ মানুষ দিন আনে, দিন খায়। শুক্তির তাতে সমস্যা হয়নি। কারণ পেশার খাতিরে সব ধরনের সামাজিক স্তরের মানুষের সঙ্গেই ওঠাবসা করতে হয় তাকে। সে যে বাড়িতে থাকে, তার পিছনেই একটা একচালা বাড়ি। গত দেড় বছরে ঐ বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে খুব একটা ঘনিষ্ঠতা জন্মায়নি শুক্তির। খুব অদ্ভুত একটা পরিবার। বাবা-মা আর একটা ছোট মেয়ে। মেয়েটির বয়স বছর বারো। রোগা টিংটিঙে কালোকুলো চেহারা, শরীরে অপুষ্টির লক্ষণ স্পষ্ট। শুকনো মুখে বড় বড় দুটো চোখ 

শুক্তি একদিন বেশ উৎসাহ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিল মেয়েটির মায়ের সঙ্গে। যদি মেয়েটির পড়াশোনা বা খাওয়া-দাওয়ার কোনও দায়িত্ব নিতে পারত শুক্তি, তাহলে তার ভালো লাগত। এই ভেবে একদিন সে নিজে থেকে গিয়েছিল ওদের বাড়িতে। এর আগে শুধুই বাড়ির জানলা দিয়ে বাচ্চা মেয়েটির বড় বড় চোখে নির্নিমেষ চেয়ে-থাকা দেখে ভারী মায়া লাগত শুক্তির। 

টিনের চালের বাড়ি। এক চিলতে বারান্দার এক কোণে রান্নার ব্যবস্থা। সেখানে উবু হয়ে বসে কাঠের জ্বালে রান্না করছিল মেয়েটির মা। মেয়ের মতোই রোগা ভোগা চেহারা, কণ্ঠার হাড় ঠেলে বেরিয়ে এসেছে, চোখের কোলে পুরু কালি। পরনের জীর্ণ শাড়িটার রং একসময় লাল বা গোলাপি কিছু একটা ছিল। এখন আর বোঝা সম্ভব নয়। ব্লাউজের একটা কাঁধ ঢলে পড়েছে বাহুর উপর। কাজ করতে করতে মাঝে মাঝেই সেটা টেনে তুলছে সে। কিন্তু অবাধ্য ছাত্রের মতো বার বার আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। কাঠের আগুনের ধোঁয়ায় মাঝে মাঝেই মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কেশে উঠছে মহিলা। প্রায় চোখের জলে নাকের জলে হয়ে সামান্য রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত সে। শুক্তিকে দেখে চোখে অবাক দৃষ্টি ফুটে উঠল। উবু হয়ে বসা অবস্থাতেই সামান্য বাঁ দিকে ঘুরে কর্কশ স্বরে প্রশ্ন করল, “কাকে চাই?” একটু অপ্রস্তুত হলেও নিজেকে সামলে নিল শুক্তি। তাদের প্রায়ই এমন আপ্যায়নের মুখোমুখি হতে হয়। 

“নমস্কার। আমার নাম শুক্তি সেন। আমি আপনার মেয়ের ব্যাপারে একটু কথা বলতে চাই।” এবার উঠে দাঁড়াল শাড়ি জড়ানো পোড়া কাঠের মতো চেহারাটা। ঢোঁক গেলার সঙ্গে সঙ্গে গলার কাছটা ওঠানামা করল দু বার। তারপর হঠাৎ ক্ষিপ্র পদে এগিয়ে ঘরের দরজা দিয়ে মাথাটা ঢুকিয়ে একবার কী যেন দেখে নিল। তারপর দু’হাত বাড়িয়ে দরজার পাল্লা দুটো বাইরে থেকে টেনে বন্ধ করে দিল সে। এবার এগিয়ে এল শুক্তির দিকে। ভাঙা গালের উপরে কোটর থেকে জ্বলজ্বল করে উঠল দুটো চোখ 

“চলে যান এখান থেকে। আমি আপনার সঙ্গে কোনও কথা বলতে চাই না।” শুক্তি একটু বিরক্ত হল। এই মহিলা তো কিছু শোনারই প্রয়োজন বোধ করছে না। খানিকটা সন্দিহান হয়ে উঠল সে। বাচ্চা মেয়েটার উপর কোনও নির্যাতন চলছে না তো? সে আবার বলে উঠল, “আপনি ভুল বুঝছেন। আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই।” 

“আমাদের কোনও সাহায্য চাই না। কেউ কোনও সাহায্য করতেও পারবে না আমাদের।” একটু যেন ম্রিয়মান লাগল মহিলাকে। 

“এভাবেই মরণ হবে আমাদের।” 

“মানে?” শুক্তি আরও একটু এগিয়ে গেল মহিলার দিকে। তার চোখ কিন্তু খুঁজে চলেছে বাচ্চা মেয়েটিকে। 

“কী সমস্যা আপনার? আমাকে বলতে পারেন। আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।” 

কোনও সমস্যা নেই। আপনি এবার আসুন।” দুমদাম পা ফেলে সে ফিরে গেল আবার উনুনের পাশে। দু’মিনিট দাঁড়িয়ে সেখান থেকে চলে এসেছিল শুক্তি। মনে অনেক প্রশ্ন নিয়ে। তাহলে কি বাচ্চা মেয়েটার বাবা ওদের উপর কোনওভাবে অত্যাচার চালায়? মা মেয়ে ভাগ্যের উপর দোষ দিয়ে হয়তো সেসব মেনে নিচ্ছে। মেয়েটিকে কখনো বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেনি শুক্তি। তাহলে কি স্কুলে যাওয়া বা সাধারণ শিশুসুলভ জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত সে? যদিও সপ্তাহের কাজের দিনগুলোতে বাড়িতে থাকা হয় না শুক্তির। তাই ও স্কুলে যায় কিনা, তা দেখতে পায়নি সে। তবু… খটকা যায়নি মন থেকে। আশেপাশের বাড়ির কারও সাথেই ওদের মিশতে দেখা যায় না। শুক্তির বাড়িতে প্রতিদিনের কাজ করতে আসে যে মহিলা, সেও এই এলাকারই বাসিন্দা। তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে শুক্তি। কেউই কিছু বলতে পারেনি ওই পরিবার সম্পর্কে। শুধু জানা গেল, বাচ্চা মেয়েটার বাবা ভ্যান চালায়। খুব দারিদ্র্যের সংসার। সেটা ওদের ঘর বাড়ি দেখেই বুঝেছে শুক্তি। মোটের উপর, ওদের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো বন্ধ করতে হল তাকে। বাবা মায়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না থাকলে আগ বাড়িয়ে কিছু করা সম্ভব নয়। 

এর মধ্যে মাঝে মাঝে জানলায় মেয়েটিকে দেখতে পাওয়া ছাড়া শুক্তি ওদের ব্যাপারে কোনও খোঁজ খবর করেনি। তার সঙ্গে চোখাচোখি হলে একটা ম্লান হাসি খেলে যায় মেয়েটির মুখে। শুক্তির মনটা মায়ায় ভরে যায়। একবার… মাত্র একবার যদি কথা বলা যেত ওর সঙ্গে! আস্তে আস্তে এই অপারগতা মেনে নিয়েই দিন কাটছিল শুক্তির। তার মধ্যেই ঘটে গেল ঘটনাটা। 

সেদিন অনেক বেলা করে ঘুম ভাঙল তার। তাও একটা চেঁচামেচিতে। আওয়াজটা তার বাড়ির পেছন থেকে আসছে। নাইটির উপর একটা হাউসকোট চাপিয়ে পিছনের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল শুক্তি। বেশ কিছু লোক ভিড় করেছে ঐ বাড়ির সামনে। কয়েকজন মহিলা পুরুষের উত্তেজিত গলার আওয়াজ, পাশে দাঁড়ানো পুলিশ ভ্যান শুক্তির মনে এক অজানা আশঙ্কার জন্ম দিল। দ্রুত পায়ে সে বারান্দা থেকে নেমে এসে দাঁড়াল ভিড়টার পাশে। মোটামুটি যা জানা গেল, বাসন্তী, মানে মুনিয়ার মা মারা গেছে। নামগুলো প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আজই প্রথম জানতে পারল শুক্তি। আজ ভোরে একজন বয়স্ক মহিলা কাজে বেরিয়ে ওদের ঘরের দরজা খোলা দেখে কৌতূহলবশত প্রথমে বাসন্তীর নাম ধরে ডাকেন, তাতে উত্তর না পেয়ে ঘরের মধ্যে উঁকি দিতেই বীভৎস দৃশ্য। বাসন্তী হাত-পা ছড়িয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। কেউ বা কারা কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পেট দু’ফাঁক করে দিয়েছে। ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মুনিয়াও কিছুদূরে পড়ে রয়েছে মেঝের উপর। রক্তে মাখামাখি তারও সারা শরীর। প্রথমে তাকেও মৃত মনে করেছিল সকলে। তবে পরে পুলিশ এসে আবিষ্কার করে মুনিয়া সম্পূৰ্ণ সুস্থ। কিন্তু অচেতন। হয়তো এই নৃশংস খুনের সাক্ষী সে। এত নৃশংসতা তার শিশু মন নিতে পারেনি। পুলিশ তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু মুনিয়ার বাবার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এমনিতে সকাল আটটার আগে সে ভ্যান নিয়ে বের হয় না। আজ ভ্যান বাড়ির বাইরেই চেন দিয়ে বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে। বাসন্তীর দেহ আবিষ্কারের সময় থেকে এখনও কেউ তাকে দেখতে পায়নি। কাজেই পুলিশ এবং প্রতিবেশীরা সকলেই এই খুনের পেছনে তার হাত আছে বলেই সন্দেহ করছে। 

শুক্তির খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই ব্যাপারটা সে আগেই সন্দেহ করেছিল। শুধু নিজেকে অপমানিত হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য সে মা-মেয়েকে বিপদের মুখে ফেলে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল, এ ব্যাপারটা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিল না সে। একটু যদি উদ্যোগ নিয়ে বিষয়টার খোঁজখবর করার চেষ্টা করত, তাহলে নিশ্চয়ই এই দিনটা দেখতে হত না। বাসন্তীর এই মর্মান্তিক মৃত্যু, মুনিয়ার মানসিক ধকল, এইসব কোনও কিছুই হয়তো ঘটত না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হতে লাগল শুক্তির। এ জীবনে কি আর এই বীভৎস ট্রমা থেকে বেরোতে পারবে মেয়েটা! 

পুলিশের লোক একটা স্ট্রেচারে করে মুনিয়ার মায়ের মৃতদেহ বের করে আনছে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো পলিথিনে জড়ানো, দড়ি দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা সেদিনের বিরক্তিতে ভরা মুখটা বার বার শুক্তির চৈতন্যকে গ্রাস করে ফেলতে লাগল। পুলিশ মুনিয়াদের বাড়িটা সিল করে চলে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ জটলাটা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল। শুক্তিও জানার চেষ্টা করছিল হঠাৎ করে মুনিয়ার বাবা কেন এমন ঘটনা ঘটাল। 

“মেয়েটা একটু বড় হওয়া ইস্তক যেন চক্ষুশূল হয়েছিল বাপের। রোজই মারধর করত মেয়েকে। ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিত। আমরা কিছু বলতে গেলে যা তা গালিগালাজ করত। তাই আমরা আর কেউ যেতাম না ওদের ব্যাপারে। এমনকি বাসন্তী অবধি বলত, আমার স্বামীকে শাসন করার কী অধিকার আছে তোমাদের? কে আর বাপু যেচে অপমানিত হতে যাবে বল? কিন্তু স্বামী-স্ত্রীতে তো ভালোই বনিবনা ছিল বলেই মনে হত। কে জানে, হয়তো মেয়ে না হয়ে একটা ছেলে হলে এই দিন দেখতে হত না।” পাড়ার কাকি-জেঠি-মাসিদের সমবেত বক্তব্য থেকে এই সারাংশটুকু আবিষ্কার করা গেল। ঘরের মেঝেতে রক্তে ভেজা একটা বড় রামপুরি চাকু পাওয়া গেছে। এগজিবিট হিসেবে সেটা নিয়ে গেছে পুলিশ। ওটাই সম্ভাব্য মার্ডার ওয়েপন। 

ঘরে ফিরে সবার আগে শুক্তি ফোন করল তাদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অশ্বিনী ম্যামকে। ওঁর অনেক বড় বড় জায়গায় চেনা আছে। মুনিয়ার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে। মুনিয়াকে যদি তাদের এন.জি.ও-র আওতায় এনে ফেলা যায়, তবে ওর একটা ভালো ভবিষ্যতের আয়োজন করে দেবে শুক্তি। কেন যেন মেয়েটার প্রতি একটা দায়িত্ববোধ কাজ করছিল তার। অশ্বিনী ম্যাম সব শুনে নিজেও খুব কৌতূহলী হয়ে পড়লেন মুনিয়ার ব্যাপারে। কথা দিলেন, তিনি বিষয়টা দেখবেন। পরবর্তী দু’দিনের মধ্যে ভালো খবরটা পেয়ে গেল শুক্তি। সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে। মুনিয়া হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে তাদের এন.জি.ও-র অধীনস্থ হোমেই থাকবে। কাজেই শুক্তি তার মনের মতো কোনও অভিভাবক জুটিয়ে দিতে চাইলে দিতেই পারে। যতদিন না হয়, ততদিন মুনিয়ার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব তাদেরই। 

শুক্তির মন থেকে একটা অপরাধবোধের ভার যেন সম্পূর্ণ না-হলেও বেশ কিছুটা হালকা হয়ে গেল। এদিকে তার বাড়ি পালটানোর দিনও এসে পড়ল প্ৰায়। শুক্তি ঠিক করল, সে যাবে হাসপাতালে মুনিয়াকে নিয়ে আসতে। পরের দিন বেলা এগারোটা নাগাদ সে গিয়ে উপস্থিত হল হাসপাতালে। আগে থেকে সব জানানোই ছিল সেখানে। কাজেই বিশেষ সমস্যা হল না। সব কাগজপত্রের কাজ শেষ করে শুক্তি গেল মুনিয়ার কাছে। বাচ্চা মেয়েটা তখন বেডের উপর পা গুটিয়ে বসে এক মনে কী যেন ভেবে চলেছে। উমরো ঝুমরো চুলগুলো বোধহয় কোনও সিস্টার দিদিই দু’দিকে বিনুনি করে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে। তাতে ছোট্ট মুখটা আরও ছোট লাগছে। শুক্তি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই বড় বড় চোখদুটো তুলে তাকাল তার দিকে। শুক্তি হাসার চেষ্টা করল। যার বাবা তার চোখের সামনে তার মাকে খুন করে ফেরার, সেই বারো বছরের চোখদুটো প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি কিছু দেখে ফেলেছে। শরীরের বয়সের তুলনায় তার মনের বয়স অনেক বেড়ে গেছে নিশ্চয়ই। তার সঙ্গে শিশুদের মতো ব্যবহার করলে চলবে কিনা, সে বিষয়ে সংশয়ে ভুগছিল শুক্তি। তবু ইতস্তত করে মুখ খুলল সে, “কেমন আছ মুনিয়া? এখন শরীর ভালো তো?” 

নির্লিপ্ত মুখটা তুলে শুক্তির দিকে চাইল মুনিয়া। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বড় বড় চোখ দুটো জলে ভরে এল। পাতলা ঠোঁটদুটো কাঁপতে লাগল থর থর করে। উপচে-পড়া অশ্রু গড়িয়ে এল গাল বেয়ে। শুক্তির ভেতরটা কেমন হু হু করে উঠল। সে গিয়ে জড়িয়ে ধরল মুনিয়াকে। মুনিয়াও সরু সরু হাত দুটো দিয়ে যতটা সম্ভব আঁকড়ে ধরল তাকে। 

মাতৃত্ব নিয়ে তেমন কোনও ট্যাবু নেই শুক্তির মধ্যে। সে মনে করে মাতৃত্ব একটা সাধারণ শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া। আবেগ বা স্নেহ এসব সবার মধ্যেই আছে, তার সঙ্গে বায়োলজিক্যাল মাদার হওয়া বা না-হওয়ার কোনও যোগ নেই। এই ধারণাটা তার মধ্যে আরও বেশি করে বদ্ধমূল হয়ে উঠতে শুরু করল এর পর থেকে। মুনিয়া তাদের হোমে বাস করতে শুরু করার দু-চারদিনের মধ্যেই শুক্তিকে দু’দিন ছুটি নিতে হল বাড়ি পালটানোর জন্য। এই দু’দিন তার মুখ তোলার সময় ছিল না। একা একা সমস্ত কিছু করা, এমনকি গৃহপ্রবেশের পুজোর আয়োজন পর্যন্ত। আজন্ম দেখে আসা মায়ের সংস্কার কিছুতেই ঝেড়ে ফেলা যায় না। নিজে পুজো আৰ্চা তেমন না করলেও নিজের প্রথম বাড়িতে পুজো না করে ঢুকতে পারল না শুক্তি। নিজেদের অগোচরেই কত কিছু যে লালন করে বেড়ায় মানুষ! পুজোর দিন অফিসের জনা পাঁচেক বন্ধুকে ডেকেছিল সে। তাদের মধ্যেই একজন নীরা। নীরা হোমের দায়িত্বে আছে। ও রেসিডেন্সিয়াল স্টাফ। হোমেরই একটা ঘরে থাকে। নীরাকে দেখে মুনিয়ার কথা জানতে ইচ্ছে করল শুক্তির। 

“শরীর তো ঠিকই আছে। তবে বড্ড বেয়াড়া মেয়েটা। এক কথা ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে। আবার কোনও কাজ একবার বললে করবে না।” নীরার মুখে স্পষ্ট বিরক্তি লক্ষ্য করল শুক্তি। তার একটু খারাপই লাগল। 

“ওভাবে বোলো না নীরা। ওইটুকু মেয়ের উপর দিয়ে কী ঝড় গেছে তা তো তুমি জানো। ওর মানসিক পরিস্থিতি ঠিক হতে সময় লাগবে।” 

নীরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। তারপর বলল, “হ্যাঁ সেটা ঠিকই। কিন্তু ওর মধ্যে কিছু একটা অসামঞ্জস্য রয়েছে। মেয়েটার উপস্থিতিটা ভালো লাগে না। অস্বস্তিকর, খুব অস্বস্তিকর।” এবার একটু রাগ হতে শুরু করল শুক্তির। নীরা তাদের এন.জি.ও-র পুরনো স্টাফ। অন্তত বছর দশেক কাজ করছে এই ধরনের শিশুদের নিয়ে। ওর মুখে এসব কথা একেবারেই বেমানান, সেটা ওর বোঝা উচিত। তবে নিজের বাড়িতে অতিথি হয়ে এসেছে বলে আর কিছু বলল না সে। আরও একদিন পর অফিসে জয়েন করল শুক্তি। দু-তিনদিন অফিসে না আসায় বেশ কিছু কাজ জমে ছিল। সেসব মিটিয়ে লাঞ্চের পর একবার হোমে গেল শুক্তি। হোমের সামনে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই সে পা চালিয়ে ভেতরে গেল। অফিস রুমে দু-জন অফিসার চেয়ারে বসে। সামনে একটা ছোট টুলে জড়সড় হয়ে বসে আছে মুনিয়া। পিছনে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে নীরা আর আরও কয়েকজন। দু-একটি বাচ্চা মাঝে মাঝে উঁকি ঝুঁকি দিতে এসে বকা খেয়ে সরে যাচ্ছে। কিন্তু খুব বেশি দূর যাচ্ছে না। সুযোগ পেলেই আবার এগিয়ে আসছে কৌতূহলবশত। একজন অফিসার একটু ঝুঁকে বসে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মুনিয়াকে। শুক্তির মনে হল, এই সময়ে এই জিজ্ঞাসাবাদ বাচ্চাটির মানসিক স্থিতির পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। কিন্তু যেহেতু সে মনোচিকিৎসক নয়, আর বিষয়টাও খুনের তদন্তের সঙ্গে জড়িত, তাই সে চুপ করে থাকল। শুক্তি সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেই নীরা ওর হাত ধরে টেনে ঘরের বাইরে নিয়ে এল। তারপর ফিসফিস করে বলে উঠল, “আমি বলেছিলাম না, মেয়েটা যেন কেমন! ওর মায়ের মার্ডার ওয়েপনে ওর আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।” 

“কী!” প্রায় চিৎকার করে উঠল শুক্তি। 

“পুলিশ কি ওকে অ্যারেস্ট করতে এসেছে? মানে ওকে নিয়ে এখন টানাটানি হবে? আর দে ম্যাড? আঙুলের ছাপ থাকা মানেই ও খুন করেছে সেটা তো নাও হতে পারে।” 

“কাম ডাউন ম্যাম।” পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন একজন পুলিশ অফিসার। 

‘এইটুকু শিশুকে শুধুমাত্র আঙুলের ছাপের ভিত্তিতে আমরা অ্যারেস্ট করতে পারি না, সেটুকু আইনি জ্ঞান আমাদের আছে। আর যেখানে শুধু ওর নয়, ছুরিতে ওর বাবার আঙুলের ছাপও আছে। হতে পারে ওর বাবা ওর মাকে খুন করার পর মেয়েটি ছুরিটা ধরেছিল। তবে যেহেতু ও একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী, তাই ওর সাক্ষ্য এ কেসে অত্যন্ত মূল্যবান।” একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শুক্তি। 

“আই অ্যাম সরি অফিসার। আসলে নীরার কাছে শুনে খুব অসহায় লাগছিল। তা মুনিয়া কিছু বলল, কী হয়েছিল সেই রাত্রে?” 

“সেটাই তো মুশকিল ম্যাডাম। মেয়েটা এখনও এত ঘাবড়ে আছে, কিছুই মনে করতে পারছে না। যেটুকু বলছে তাও অসংলগ্ন। এই মুহূর্তে যা বলছে, পরের মুহূর্তে অন্য কথা বলছে। দেখি, একজন মনস্তত্ত্ববিদের সাহায্য নেওয়া যায় কিনা! আপনি এক কাজ করুন তো। আমার মোবাইল নাম্বারটা নোট করুন। যদি ও নিজে থেকে কিছু বলে আপনাদের, তাহলে একবার কল করবেন প্লিজ।” 

পুলিশ অফিসাররা বিদায় নিলে মুনিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেল শুক্তি। মুনিয়া ওর ছোট্ট ঘরে লিজির সঙ্গে বসেছিল। লিজি একটা নেড়ি কুকুরের বাচ্চা। ওর মা হোমের সামনের রাস্তায় অ্যাক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিল। লিজি আর ওর দুটো ভাই তখন একদম গুড়ি গুড়ি। হোমের বাচ্চারাই ওদের খাওয়াত। কিন্তু লিজি ছাড়া বাকি দুটো বাচ্চা বাঁচেনি। আর সেই থেকে লিজি থেকে গেছে এখানেই। একদমই বাইরে যায় না কুকুরটা। হোমের বাচ্চাদের জ্যান্ত খেলনা ও। মুনিয়ার কোলে শুয়ে পরম আরামে আদর খাচ্ছিল। শুক্তিকে দেখেই লিজিকে কোল থেকে নামিয়ে ছুটে এল মুনিয়া। কেন জানি না মেয়েটা তার মধ্যে আশ্রয়ের খোঁজ পেয়েছে। এমনও হতে পারে শুক্তিই এখানে তার একমাত্র চেনা মুখ। এসেই বলে উঠল, “তুমি এতদিন আসোনি কেন?” বলতে বলতেই শুক্তির হাতের কবজি চেপে ধরল সে। শুক্তি বলতেই যাচ্ছিল সে কেন আসতে পারেনি, কিন্তু কব্জিতে একটা তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হতেই ‘উফ’ বলে হাত ছাড়িয়ে নিল সে। কি কঠিন মুঠো মেয়েটার! বিস্ময়ে হতবাক হয়ে অন্য হাত দিয়ে কব্জিতে হাত বুলাতে লাগল শুক্তি। মুনিয়া সঙ্গে সঙ্গে, “লাগল তোমার? কই দেখি, আমি হাত বুলিয়ে দিই।” বলে আবার টেনে নিল শুক্তির হাতটা। শুক্তি ভাবল, শক্ত শক্ত হাড়সর্বস্ব হাত দিয়ে চেপে ধরাতেই বেকায়দায় জোরে লেগে গেছে হয়তো। অনেকক্ষণ পাশাপাশি বসে গল্প করল দু’জনে। তারপর যখন চলে আসার জন্য উঠে দাঁড়াল শুক্তি, আচমকাই তাকে জড়িয়ে ধরল মুনিয়া। 

“আমাকে তোমার সঙ্গে নিয়ে যাবে গো? আমার এখানে ভালো লাগে না। বিশ্বাস কর, তুমি যা বলবে আমি তাই করব। পড়াশুনা করব, স্কুলে যাব, শুধু তোমার সঙ্গে থাকব। নিয়ে যাবে?” মুহূর্তের জন্য একটু আবেগে ভেসে গিয়েছিল শুক্তি। তারপর বাস্তবটা চিন্তা করল সে। সে একা। সারাদিন অফিসে ব্যস্ত থাকে। আর একজনের দায়িত্ব নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তার নয়। কাজেই বাধ্য হয়ে মন ভাঙতে হল মুনিয়ার। 

“না মুনিয়া, তা সম্ভব নয়।” 

“কেন সম্ভব নয়? বল না, কেন সম্ভব নয়? আমি তো বলছি আমি তোমার সব কথা শুনব। তাহলে কেন সম্ভব নয়?” 

“আমি বলেছি তো সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমার একটা সুন্দর ভবিষ্যতের ব্যবস্থা আমি করে দেব।” আরও কয়েকবার একই কথা বলে ঘ্যানঘ্যান করতে লাগল মুনিয়া। শুক্তি খুব বেশি পাত্তা না দিয়ে ব্যাগ থেকে ওর জন্য আনা চকোলেটের বারটা বের করে ওর হাতে দিল। চোখ চকচক করে উঠল মুনিয়ার। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতেও থমকে দাঁড়িয়ে ঘুরে তাকাল শুক্তি। পিছনে মুনিয়া দৃঢ় অথচ চাপা গলায় বলে চলেছে, “আমি তোমার সঙ্গে থাকব, তোমার সঙ্গে, তোমার সঙ্গে…” 

কয়েকদিন পরের কথা। এ ক’দিন রোজই মুনিয়া একই কথা বলেছে শুক্তিকে। শুক্তির মনটা গলে গেলেও বাস্তব পরিস্থিতি চিন্তা করে সে কোনওভাবেই রাজি হয়নি মুনিয়ার প্রস্তাবে। নীরাকে এ কথা বলতে বেশ রেগে গেল সে। বলল, “দেখলে তো, তোমাকে বলেছিলাম না, মেয়েটা ভীষণ ঘ্যানঘ্যানে আর অস্বস্তিকর। যত তাড়াতাড়ি পারো ওর একটা হিল্লে কর দেখি।” 

শুক্তি বুঝিয়েছিল নীরাকে, “দেখো, ওর মায়ের কেসটা সলভ না-হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মনে হয় না ওকে এখান থেকে কোথাও যাওয়ার পারমিশন দেবে। তাছাড়া মেয়েটা ততটাও খারাপ নয় যতটা তুমি মনে করছ।” 

শুক্তির কথায় নীরার ধারণা এতটুকুও পালটেছে বলে মনে হয়নি শুক্তির। তবে মুনিয়ার উপর স্নেহটা যে তার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে তা সে বেশ বুঝতে পারছে। এরকমই একদিন অফিসে এসে সবে গুছিয়ে বসেছে শুক্তি, এমন সময় তার টেবিলের উপর ফোনটা কর্কশ শব্দে বেজে উঠল। ওপারে নীরা। চাপা গলায় বলে উঠল, “শুক্তি, একবার আসতে পারবে হোমে? একটু দরকার ছিল।” নীরার গলায় কিছু একটা ছিল। শুক্তি ফোনটা রেখেই দৌড়লো। হোমে ঢোকার আগেই বাচ্চাদের সমস্বরে একটা কান্নাকাটির শব্দ কানে এল। উদ্বেগটা বেড়ে গেল। নীরা শুক্তিকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল। 

“কী হয়েছে? বাচ্চারা কাঁদছে কেন?” শুক্তির প্রশ্নের উত্তরে নীরা বলল, “আজ সকালে লিজিকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।” 

“কী! মানে কীভাবে?” শুক্তির কথার উত্তর না দিয়ে নীরা তার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে চলল হোমের ভেতরে। উপরে যাওয়ার সিঁড়ির ল্যান্ডিং এ ছড়িয়ে আছে রক্ত। দেখেই গা শিরশির করে উঠল শুক্তির। 

“এ সব কি! লিজি…” 

“হ্যাঁ, লিজি। বীভৎস মৃত্যু শুক্তি। চোখে দেখা যায় না। অবোলা প্রাণীটার গলার নলি কেটে…“ 

“কী বলছ নীরা! কে করতে পারে এসব? তাহলে কি বাইরে থেকে কোনও চোর ছ্যাঁচোর ঢুকেছিল নাকি? লিজি চিৎকার করতে পারে, সেই ভয়ে…” জোর করে একটু হাসল নীরা। 

“তোমার মনে হয়, হোমে চোর আসবে? কতগুলো হাড়হাভাতে বাচ্চা যেখানে থাকে, সেখানে কী সম্পত্তির লোভে চোর আসবে?” শুক্তি নীরার কথায় সায় না দিয়ে পারল না। 

“তাহলে? তাহলে একটা কুকুরকে কে এভাবে খুন করতে যাবে?”

নীরা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল শুক্তির মুখের দিকে। তারপর আস্তে আস্তে বলল, “কাল রাতে আমি টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠেছিলাম শুক্তি। আমি কিছু দেখেছি।” ভ্রূ কুঁচকে তাকাল শুক্তি। নীরা বলে চলল, “আমি রাতে টয়লেটে উঠলে একবার সব বাচ্চাদের ঘরে উঁকি মেরে দেখে নিই সব ঠিক আছে কিনা। কালও তাই করছিলাম। তুমি তো জানো মুনিয়া যে ঘরে থাকে সেই ঘরে এখন ও ছাড়া আর কেউ নেই। বাকি দুটো বেড খালি পড়ে আছে। তাই ওর জন্য চিন্তাটা একটু বেশি থাকে। রাতে ভয় টয় না পায়! কাল ওর ঘরে উঁকি দিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। ও ঘরে নেই। আমি এদিক ওদিক দেখতে দেখতে ও এসে ঘরে ঢুকল। আমাকে দেখেই চমকে উঠল। তারপর নিজে থেকেই বলল ও নাকি টয়লেটে গিয়েছিল।” 

“হ্যাঁ, তো এতে অবাক হওয়ার কী আছে? যেতেই পারে।” 

“তুমি ভুলে যাচ্ছ শুক্তি তখনই আমি টয়লেট থেকেই ফিরেছি। মুনিয়া সেখানে ছিল না। আর তাছাড়া ও যখন ঘরে ঢুকছিল, আমি খেয়াল করেছি। ও টয়লেটের দিক থেকে আসেনি, এসেছিল সিঁড়ির দিক থেকে।” 

“এটা কিন্তু একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে নীরা। তুমি কি বলতে চাইছ লিজিকে মুনিয়া মেরেছে? অমন নিষ্ঠুরভাবে একটা প্রাণীকে খুন করা, ওইটুকু মেয়ের পক্ষে সম্ভব? আর ও লিজিকে কতটা ভালোবাসত সেটা তুমি দেখনি? না না, তোমার এই কথাটা আমার একেবারেই ভালো লাগল না।” 

অপ্রস্তুত নীরাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসে শুক্তি। হোমের গেট দিয়ে বেরনোর সময় পেছন থেকে বাধা পেয়ে থমকে দাঁড়াল শুক্তি। মুনিয়া ওর শাড়ির আঁচল চেপে ধরেছে। শুক্তি ওর দিকে ঘুরে তাকাতেই ফিসফিস করে বলে উঠল, “এইজন্যই আমি তোমাকে এত্ত ভালোবাসি।” 

শুক্তি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে কিছু বলার ভাগেই এক ছুটে ভেতরে ঢুকে গেল মুনিয়া 

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল শুক্তির। একটা দমবন্ধ করা অনুভূতি হচ্ছে। এমনিতেও বেশ গরম পড়েছে কয়েকদিন ধরে। তার উপর ঘোর শীতেও জানলা না খুলে শুতে পারে না শুক্তি। তাই ঘুম ভাঙতেই প্রথমেই জানলার দিকে চোখ গেল তার। আরে! বন্ধ হল কী করে জানলাটা? নিশ্চয়ই পাল্লাগুলো হাতলের হুকে আটকে দিতে ভুলে গিয়েছিল শোবার আগে, হাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। আর তাই এমন দমবন্ধ লাগছে ঘরের ভেতরটা। 

বিছানা ছেড়ে উঠে জানলার পাল্লাগুলো টানটান করে খুলে দিল সে। বাইরের তাজা হাওয়া প্রাণ ভরে সারা শরীরে মেখে নিতে নিতে বিছানায় উঠতে যাবে, এমন সময় ক্যাঁচ করে একটা শব্দ কানে এল তার। খুব জোরে নয়, তবে পরিচিত শব্দ বলেই অবাক হল শুক্তি। শোবার ঘর রান্নাঘর আর ড্রয়িংরুম ছাড়া যে একটিমাত্র ছোট ঘর আছে এই বাড়িতে, সেই ঘরে তার মায়ের ব্যবহার করা কাঠের বহু পুরনো আলমারিটা রাখা আছে। মায়ের স্মৃতি বলেই শুক্তি ওটাকে এখনও বয়ে বেড়ায়। কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা থাকে ওতে। তাই তালা দেওয়ার দরকার পড়ে না। অনেক পুরনো কব্জাগুলো আস্তে আস্তে জবাব দিতে শুরু করেছে। পাল্লা খুলতে গেলেই একটা ক্যাঁচ করে শব্দ হয়। 

এত রাতে একা বাড়িতে পাশের ঘর থেকে এই চিরপরিচিত শব্দটা বুক কাঁপিয়ে দিল শুক্তির। উপায় নেই, যতই ভয় লাগুক, তাকে উঠতেই হবে দেখতে। নইলে ঘুম আসা সম্ভব নয়। পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে পাশে রান্নাঘর থেকে সবজি কাটা ছুরিটা নিয়ে হাতে শক্ত করে ধরে এগোতে থাকে শুক্তি। ইচ্ছে করেই ঘরের লাইট জ্বালাল না শুক্তি। যদি সত্যিই কোনও চোর ডাকাত ঢুকে থাকে, তাকে সতর্ক করে দিতে চাইছিল না সে। বাইরের থেকে রাস্তার আলো যেটুকু এসে ঢুকছিল, সেটাই তার পক্ষে যথেষ্ট। কাঠের আলমারিটা যে ঘরে আছে, তার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরটা দেখতে চাইল শুক্তি। আলমারির একটা পাল্লা আধখোলা। সে নিজে গত দু তিনদিনের মধ্যে আলমারিটা খোলেনি। আর ওটার পাল্লাগুলো পুরনো বলে বেশ শক্ত। কাজেই ওটা খোলা থাকা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাহলে কি কেউ লুকিয়েছে ওর ভেতরে? 

ডানহাতে ছুরিটা বাগিয়ে ধরে বাঁ হাত দিয়ে এক টানে খুলে ফেলল পাল্লাটা। কেউ নেই। একদম ফাঁকা ভেতরটা। অল্প কিছু অপ্রয়োজনীয় জামা কাপড়, বেডশিট, পরদা ছাড়া আর কিছুই নেই। বুক চিরে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল শুক্তির। কিন্তু তা স্থায়ী হল না। আলমারির পাল্লাটা ভালো করে বন্ধ করে পিছন ফিরেই চমকে উঠল সে। হাত থেকে ছুরিটা খসে পড়ল। দরজার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা অবয়ব। উচ্চতা দেখেই শুক্তির মনে একটা সন্দেহ প্রবল হয়ে উঠল। দেয়ালের গায়ের সুইচ টিপে আলো জ্বালতেই সে নিশ্চিত হয়ে গেল যে তার সন্দেহটা সম্পূর্ণ সঠিক। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুনিয়া। বড় বড় চোখদুটোর দৃষ্টি তার দিকেই নিবদ্ধ। এখন আর মুনিয়াকে দেখে স্নেহ ভালোবাসার অনুভূতি আসছিল না শুক্তির। মুনিয়ার দৃষ্টিতে একটা অজ্ঞাত অভিব্যক্তি। শুক্তি জানে না তাতে কী রয়েছে! ব্যঙ্গ, নাকি শুক্তির ভয়টাকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছে সে! হ্যাঁ, শুক্তি ভয় পাচ্ছে এই একরত্তি মেয়ের অদ্ভুত চাহনিকে। 

“মুনিয়া! তুমি এত রাতে আমার বাড়িতে কী করছ? আর এলেই বা কী করে? ঢুকলে কী করে বাড়িতে?” ভয়ে বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল শুক্তি। সামান্য হাসি খেলে গেল মুনিয়ার চোখে-মুখে। কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী হল সেই হাসি। তারপর চোয়াল কঠিন হয়ে উঠল তার। শুক্তির দিকে এগিয়ে এসে বলল, “বলেছিলাম না, আমাকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে?” মাথাটা চট করে গরম হয়ে গেল শুক্তির। নীরা ঠিকই বলেছিল। এ মেয়েকে বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। সে রুক্ষ কণ্ঠে বলে উঠল, “এত সাহস তোর! আমি নিয়ে আসিনি বলে এত রাতে চোরের মতো ঢুকবি বাড়িতে? দাঁড়া আমি এক্ষুনি নীরাকে ফোন করে বলছি কয়েকজন লোক নিয়ে এসে তোকে এখান থেকে নিয়ে যেতে।” 

মুনিয়ার পাশ কাটিয়ে এসে নিজের শোবার ঘরে ঢুকল শুক্তি। এখনও তার মাথায় আসছে না, মেয়েটা এত রাতে কীভাবে এল। যদিও তার এই বাড়ি থেকে অফিসের দূরত্ব বেশি নয়, তবু এত রাতে বাস বা অন্য কিছু পাওয়া তো সম্ভব নয়। তাছাড়া হোমের গেটে রাতে পাহারা থাকে। সবটাই কেমন ধোঁয়াশা লাগছে শুক্তির কাছে। মনে মনে এসব চিন্তা করতে করতেই সে ফোন করল নীরার নম্বরে। আচমকা হাতের উপর এসে পড়া একটা সপাট থাপ্পড়ে হাত থেকে ছিটকে পড়ল ফোন। টাল সামলাতে না পেরে শুক্তি এসে পড়ল মেঝেতে। তার হাত থেকে পড়ে যাওয়া ছুরিটা কখন যেন উঠে এসেছে মুনিয়ার হাতে। দু’হাতে ভর করে একটু একটু করে পিছতে শুরু করল শুক্তি। মুনিয়া মেঝের উপর হামাগুড়ি দেওয়ার মতো করে এগিয়ে এল একদম শুক্তির মুখের সামনে। 

“আমি তো হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছি এখানে। তুমি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগেই ওই আলমারিতে ঢুকে চুপ করে বসেছিলাম। কাউকে ডেকো না তুমি। আমাকে থাকতে দাও না তোমার কাছে। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো, তাই না বল? আমাকে যারা ভালোবাসে আমি তাদের কিচ্ছু করি না। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই আমাকে ভালোবাসে না। দেখো না, ওই কুকুর বেড়ালগুলো! আমি কত্ত ভালোবাসতাম ওদের সবাইকে। শুধু বলতাম আমার কাছে থাক। তা না, খালি আমাকে ছেড়ে এ বাড়ি সে বাড়ি ঘুরত। আমার এত রাগ হয়! ওই যে তোমাদের লিজি, আমার কোল ছেড়ে উঠে দৌড়ত অন্য মেয়েগুলোর কাছে। তাই দিলাম আমার ভাঙা আয়নার কাচ দিয়ে ওর গলার নলিটা কেটে। যখন বাবা মায়ের কাছে থাকতাম, কুকুর বেড়ালগুলোকে বাবা রাত্রিবেলায় রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসত। সবাই ভাবত গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মরেছে। বেওয়ারিশ কুকুর বেড়ালের মৃত্যু নিয়ে কে আর মাথা ঘামায় বল? কিন্তু লিজিকে আর কে ফেলে দিয়ে আসবে? তাই জানাজানি হয়ে গেল। যদিও কেউ বোঝেনি কে করেছে!” 

শুক্তি কাঠ হয়ে বসে মুনিয়ার কথা শুনছিল আর অপেক্ষা করছিল কখন ওর হাতের ছুরির ফলা এফোঁড় ওফোঁড় করে দেবে তার হৃৎপিণ্ড। এতদিনে তার কাছে স্পষ্ট হল তার আগের ভাড়া বাড়ির সামনের রাস্তায় প্রায়ই বেড়াল কুকুরের ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে থাকার রহস্য। আর একটা সন্দেহ মাথা চাড়া দিচ্ছিল শুক্তির মনে। খুব শিগগীর তারও উত্তর মিলল। 

“আমার বাবা-মা আমাকে পছন্দ করত না। খালি আমাকে ঘরে বন্ধ করে রাখতে চাইত। সেদিন রাতে মা-টাকে মারলাম, বাবাটাকেও শেষ করে দিতাম। কিন্তু আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে কোথায় যেন পালিয়ে গেল। আমি মাথায় লেগে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। নাহলে….।” শুক্তি বুঝতে পারছিল সে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে মুনিয়াকে চিনতে। খুব সাধারণ দেখতে স্নেহকাড়া শিশুসুলভ চেহারার পিছনে যে লুকিয়ে রয়েছে এক নৃশংস সোশিওপ্যাথ, তা ঘুণাক্ষরে টের পায়নি সে। আজ তার কাছে মুনিয়ার মায়ের কথাগুলোর পিছনে লুকোনো যন্ত্রণা ধরা দিচ্ছিল। কিন্তু সে কি আর সুযোগ পাবে, ভুল শুধরে নেওয়ার? শেষবারের জন্য একটা চেষ্টা করল শুক্তি। 

“দেখ মুনিয়া, আমার কোনও ক্ষতি হলে নীরা, অশ্বিনী ম্যাম ওরা কিন্তু তোকে ছেড়ে দেবে না। বরং তুই আমার কথা শোন। তোর চিকিৎসা দরকার। তুই ছোট। তোর কোনও শাস্তি হবে না। দেখিস, তুই একদম ভালো হয়ে যাবি। তারপর তোকে আমি আমার কাছে এনে রাখব। কথা দিচ্ছি। আমাকে একটা ফোন করতে দে। প্লিজ।” কথা বলতে বলতেই মাটিতে ছিটকে পড়া ফোনের দিকে হাত বাড়াল শুক্তি। মেঝেতে চুপ করে থেবড়ে বসে ছিল মুনিয়া। শুক্তি ফোনটা হাতে তুলে নিয়ে নম্বর ডায়াল করছে দেখেও কিছু বলল না। শুক্তির মনে হল, হয়তো তার প্রস্তাব মনে ধরেছে মুনিয়ার। সে ফোনটা কানে ধরল। ওপাশে রিং হচ্ছে। কয়েক সেকেন্ড পর আবার মুখ খুলল মুনিয়া। 

“নীরা মাসি ফোন ধরছে না, না? যাক, তাহলে শান্তিতেই যেতে পেরেছে।” শুক্তির চোখ বড় বড় হয়ে ওঠে। 

“কী? কী বলছিস তুই?” 

“হ্যাঁ গো, যাই বল বাপু, ওই মহিলা কিন্তু তোমার মতো আমায় ভালোবাসত না। খালি আমার দিকে কেমন সন্দেহের চোখে চাইত। আজকে যখন চুপি চুপি হোমের পিছনের পাঁচিল টপকে বেরচ্ছি, আমার জামা টেনে নামিয়ে আনল। বলে কিনা, আমাকে সরকারি হোমে পাঠিয়ে দেবে। যতই বলি আমি তোমার কাছে যাব, ততই…। শেষ অবধি আমাকে নিজের ঘরে বসিয়ে কাকে যেন ফোন করছিল। পিতলের ফুলদানিটা দিলাম কয়েকবার মাথার পিছনে বসিয়ে। খুব ছটফট করছিল। তাই বললাম, এতক্ষণে শান্তি পেয়েছে তাহলে। কই, এখনও ফোনটা কানে নিয়ে আছ কেন? এবার কাটো ফোনটা। আমাকে কিছু খেতে দাও দিকি। খুব খিদে পেয়েছে। আর একটা জামা দিতে পারো? এই ফ্রকটাতে মাসির রক্ত ছিটকে লেগেছে। কই চলো।” যন্ত্রচালিত পুতুলের মতো উঠে দাঁড়াল শুক্তি। মুনিয়া এসে তার হাত ধরল। 

“ওই ছোট ঘরটাতে আমার থাকার জায়গা করে দিও। আর এই ছুরিটা আমি রাখছি। না না, তোমার কোনও ভয় নেই। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো। তাই না মাসি?” উপরে নীচে মাথা নাড়ল শুক্তি। তারপর নিজের একটা পুরনো কামিজ বের করে মুনিয়ার হাতে দিল। 

“এটা পর।” 

মুনিয়া কামিজটা নিয়ে বলল, “আরে বাবা তোমার বাথরুমটা কোনদিকে সেটা বলবে তো!” নিঃশব্দে হাত দিয়ে বাথরুমের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিল শুক্তি। মুনিয়া এগিয়ে যেতে যেতে বলল, “আমার এই ফ্রকটা কেচে দিও তো মাসি। নাহলে কাল আবার চান করে পরব কি?” মুনিয়ার এক হাতে এখনও ছুরিটা ধরা। অন্য হাতে জামা আর শুক্তির ফোন। থমকে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে আবার বলল, “আমার সঙ্গে চালাকি করো না কিন্তু মাসি। তুমি তো জানোই আমার শাস্তি হবে না। আমি আবার ফিরে আসব তোমার কাছে। আর সেদিন…” বাথরুমের দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হতেই পায়ে পায়ে শুক্তি এগোল সদর দরজার দিকে। নিঃশব্দে ভেতর থেকে খুলে রাখল ছিটকিনি। সেদিন পুলিশ অফিসার নির্মল ঘোষালের ফোন নম্বরটা ভাগ্যিস সেভ করা ছিল ফোনে। তাই নীরাকে ফোন করার অছিলায় তাঁর নম্বরে ফোন করার কথা মাথায় এসে গিয়েছিল তক্ষুনি। মুনিয়া যখন কথা বলছিল, উনি লাইনে ছিলেন। সবই শুনেছেন। যে কোনও সময়ে এসে পড়বেন দলবল নিয়ে। নিজের উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ না করে পারল না শুক্তি। ঘরে ফিরেই আসছিল। কিন্তু সে বোঝেনি ঈশ্বর তার চেয়েও বেশি উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে তৈরি করেছেন মুনিয়াকে। শুক্তির ডায়ালড নম্বরের লিস্টে ‘নির্মল ঘোষাল, যাদবনগর পুলিশ স্টেশন’ নামটা সবার উপরে দেখেই সে যা বোঝার বুঝে গিয়েছিল। 

নীরা আর শুক্তির রক্তে মাখা ফ্রকটা ওই বাড়িতেই ছেড়ে রেখে শুক্তির কামিজ পরে রাস্তায় নামল মুনিয়া। নির্মল ঘোষাল এসে যখন ছুরিতে কোপানো শুক্তির রক্তাক্ত প্রাণহীন দেহটা আবিষ্কার করলেন, ততক্ষণে মুনিয়া কতদূর গেছে, কে জানে? 

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *